Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
গল্পের মত বাস্তব
আমার অবস্থাটা আন্দাজ করেই হয়ত উনি একটু সুর নরম করে বললেন........ 

- কি হল উত্তর দিলে না?? আমায় তোমার খুব ভয় করে, খারাপ লাগে না?? 

- ইয়ে.... মানে ভয় করবে কেন..... 

- তাহলে তো নিশ্চয়ই খারাপ লাগে!! 

- আরে, না না খারাপ লাগবে কেন!!! আপনার মত এত বড় মনের মানুষ আমি দুটো দেখিনি, আপনাকে তো আমার খুবই ভালো....... মানে, ইয়ে..... ওই আপনি...... 

আমার আরও কাছাকাছি ঝুঁকে এসে মুখের ওপর পড়া ভিজে চুল গুলো আলতো হাতে কানের পাশ থেকে সরিয়ে মুখটা নামিয়ে বললেন...... 

- ভয় যদি নাই পাও তাহলে এত তোতলাচ্ছ কেন?? বল.... কি আমি???

আমার গালের ওপর ওনার উষ্ণ নি:শ্বাসের ওঠানামা, ওনার ওই আঙুলের ছোঁয়ায় আমার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হল | কথা বলার শক্তি তো আমি অনেক আগেই হারিয়েছি, এবার বোধ হয় মাথা ঘুরে পড়েই যাব | তবু বহু কষ্টে মুখটা নামিয়ে নিয়ে বললাম........ 

- আপনি চা...... 

চকিতে সোজা হয়ে বললেন........ 

- কি??!! আমি চা??!!!

- না মানে আপনি, মানে আপনার চা টা ঠান্ডা হয়ে গেল | আমি বরং গরম করে আনছি |

বলেই ওনার সামনে থেকে ছুটে পালালাম |

সত্যিই মেয়েটা পুরো পাগলী | নিজে তো পাগলই, এবার দেখছি আমায় পাগল করে ছাড়বে | শেষমেষ কিনা আমার এই ছবি!!! এত্তবড় গোল মুখ, ইয়াব্বড় একটা নাক, বড় বড় দুটো চৌকো চোখ, না না হয়ত চশমা বানাতে গিয়েছিল শেষ করেনি | তার ওপর আবার মাথায় বিশাল একটা টিকি??!!! এতদিন লোকের কাছে কম বেশি সুপুরুষ বলেই পরিচিত ছিলাম, শেষে আমার কিনা এই পরিণতি??!! ভগবান আমি সত্যিই বুঝতে পারি না যে এই মেয়েটাকে নিয়ে কি করবো | ওর পড়া ফাঁকি দেওয়ার জন্য বকবো, না ওর ছেলেমানুষি গুলোর কথা ভেবে হাসবো, নাকি ওর ওই লাজুক মুখটা দেখে আরও আরও বেশি করে ভালোবাসবো!!! 

**********************************

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে | মনে হল সকালের মিঠে রোদ যেন আমায় কিছু বলতে চায়, তাই বিছানা থেকে উঠে আস্তে করে বারান্দার দরজা টা খুলে দিলাম আর আর হুড়মুড় করে একঝলক ঠান্ডা হাওয়া হাজির হল মিঠে রোদের সাথে আমায় সকালের শুভেচ্ছা জানাতে | এই বারান্দা টা আমার বেশ পছন্দের জায়গা | বাড়ির সামনের এই কৃষ্ণচূড়া গাছটা বেশির ভাগ সময়ই ফুলে ভরে থাকে আর এই গাছে থাকা হরেক রকমের পাখি, কাঠবিড়ালি এরা হল আমার মনের সঙ্গী | না, ভাষাটা হয়ত বুঝতে পারে না, তবু এদের সাথে সুখ দু:খ ভাগ করে নিতে আমার বেশ লাগে | যখন হাওয়ায় গাছের পাতা গুলো দুলে ওঠে, দেখে মনে হয় যেন আমার কথায় ওরা সম্মতি জানাচ্ছে | আজ আবার কলেজে নাকি বিশেষ একজন অতিথি শিক্ষক আসবেন, তাই সকলকে সময়ের মধ্যে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে | তার আগে একবার অয়নের সাথেও কথা বলতে হবে ওই বিষয়টা নিয়ে....... এত সহজে তো আর সম্পর্কটা ভেঙে দিতে দেওয়া যায় না | এসব এলোমেলো ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, হায় ভগবান!! ৮টা বেজে গিয়েছে যে বুঝতেই পারিনি | এত অল্প সময়ে সবকিছু গুছিয়ে কি করে সাড়ে দশটার মধ্যে কলেজে ঢুকব কে জানে!!! বাড়ি থেকে কলেজে যেতে আসতেই তো প্রায় এক ঘন্টার কাছে সময় লাগে, আজ নির্ঘাত দেরি হবে |

কোনো রকমে চান সেরে কুর্তিটা গলিয়ে বাইরে এসে দেখি স্যার তৈরি | ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন | কিন্তু আজ যে আমি ওনার সাথে কলেজে যাব না, সেটা ওনাকে বলি কি করে!!! 

- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত ভাবনা চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি বরং জলখাবার টা খেয়ে নাও | তোমার তো আজ আবার তাড়া আছে |

- হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন বড্ড দেরি হয়ে গেল....... 
এক মিনিট, আপনি কি করে জানলেন আজ আমার তাড়া আছে??!!! 

- তুমি তো আমার সাথেই কলেজে যাবে, গেলেই জানতে পারবে কি করে আমি জানলাম যে তোমার আজ তাড়া আছে |

- ইয়ে..... মানে, আপনাকে একটা কথা বলার ছিল | মানে....... 

- কি মানে মানে করছো, তুমি কবে থেকে এত ভেবেচিন্তে কথা বলা শুরু করলে?? উন্নতি হয়েছে দেখছি |

কোনো রকমে চোখ বন্ধ করে বলে দিলাম........ 

- আজ আমি আপনার সাথে কলেজে যেতে পারব না, একটু কাজ আছে |

- কি??!!! তাহলে কলেজ যাবে কি করে???!!! 

- আসলে অয়নের সাথে একটু অন্য দরকার আছে, তাই আমি অয়ন কে আসতে বলেছি | কলেজেও আমি ওর সাথেই বাইকে......... 

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অয়ন এসে বাইকের হর্ন দিতে আমিও আসছি বলতে বলতে ছুট লাগালাম | স্যার নিশ্চয়ই খুব রেগে যাবেন কিন্তু আমার হাতে এখন একদম সময় নেই, ফিরে এসে ওনার রাগ সামলানো যাবে | এতদিনে ওনার রাগ সামলানোর অভ্যাস আমার হয়ে গিয়েছে |

************************************

কি হল ব্যাপারটা!!! আঁখি কলেজে আমার সাথে না গিয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য অয়ন কে বাইক নিয়ে আসতে বলেছে..... আর কি বলল অয়নের সাথে দরকার আছে??!! সারাদিন তো কলেজে একসাথেই থাকে, এমন কি দরকার যার জন্য ওকে আলাদা করে দেখা করতে হবে!!! কি এমন কথা আছে যেটা কলেজে বলা সম্ভব না??!!! এখন আমার থেকে অয়ন ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল!!! আমি যে ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি তাতে ওর কিছুই আসে যায় না??!!! এত তাড়াতাড়ি যে আজ ঠিক মতো বসে জলখাবারটাও খেতে পারল না | কি এমন আছে অয়নের মধ্যে যে আমার থেকে ওর প্রাধান্য আঁখির কাছে বেশি হয়ে গেল, এটা তো আমায় জানতেই হবে | 

- আরে, আরে দাদাবাবু, জলখাবারটা তো খেয়ে যান........ 

- আমার খিদে নেই, আমি বেরচ্ছি | আপনি কাজ হলে সব গুছিয়ে চলে যাবেন |

- ওই দেখ দিকিনি কান্ড, এই বলল তাড়াতাড়ি খাবার বাড়তে খিদে পেয়েছে, হঠাৎ যে কি হল কিছু মুখে না দিয়েই বেরিয়ে গেল | এদিকে নতুন দিদিমণি খেতে বসেও কিছু খেল না, বুঝি না বাপু এদের মতিগতি |
বলি এতই যখন পীড়িত তখন মুখ ফুটে বল না কেন!!! এ বলবে দাদাবাবুর পছন্দের জিনিষ বানাতে, উনি বলবেন দিদিমণির কি পছন্দ সেই বুঝে কাজ করো | আমার হয়েছে জ্বালা, উফফফ!!! এখন আবার সব গুছোতে হবে |

**********************************

- তুই ঠিক সময়মত এসে বাঁচিয়ে নিলি | জানিস, নাহলে আজ স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই দেরি হয়ে যেত | 

- আমি বাঁচালাম তোকে না তুই আমাকে বাঁচালি!!! কেউ যে আমার জন্য এত কিছু করবে কোনো দিন ভাবিনি | সেখানে ভগবান আমাকে উপহার দিলেন তোকে | তোকে পাশে পাওয়া যে কত বড় পাওনা, এটা তোকে সারা জীবন বলেও বোঝাতে পারব না |

- হয়েছে আমার প্রশংসা, বাকি টা পরে করিস | এবার কলেজের দিকে এগোনো যাক | আজ কিন্তু গেস্ট লেকচারার আসছেন, দেরি করে ঢুকলে আর রক্ষে থাকবে না |

- ওহ:, হ্যাঁ হ্যাঁ চল | তুই ঠিক করে বসিস আমি কিন্তু একটু জোরে চালাবো, না হলে সময়মত ঢুকতে পারব না |

- হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে | যত জোরে ইচ্ছে চালা, ব্যাস হাত পা গুলো যাতে গোটা থাকে এইটুকু খেয়াল রাখিস |

- হে হে তুই যে কি বলিস না, আমি থাকতে তোর কিছু হবে ভাবলি কি করে !!!

- হুমমম, বুঝলাম | এবার চল |

কোনো রকমে কলেজে ঢুকে হাঁফাতে হাঁফাতে ছুটলাম ক্লাসের দিকে | ঠিক যেটা ভেবেছিলাম, রুমের দরজা বন্ধ মানে গেস্ট লেকচারার এসে গিয়েছেন | এবার কি করি, এই ক্লাস মিস করার তো প্রশ্নই ওঠে না | কিন্তু ঢুকব কি করে!!! দুজনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, অয়ন বলল......... 

- দেখ এত ভেবে লাভ নেই | ক্লাস যখন করতেই হবে আর দেরি যখন হয়েই ছে, তখন বকাও আমাদের খেতেই হবে | আর তাতে অন্তত পড়াটা মিস হবে না | সুতরাং আর দেরি না করে চল |

- ইয়ে, মানে, বলছি তুই আগে ঢুকবি!!প্লিজ!!! 

- আচ্ছা ঠিক আছে...... 

বলে একটু নক করে দরজা টা ফাঁক করতেই দেখি অয়ন হা করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল | 

আমি ওর এহেন আচরণ দেখে, পাশের পাল্লাটা খুলে তো ভিরমি খাওয়ার জোগার | ইনি আজকের গেস্ট লেকচারার!!! মানে অনিরুদ্ধ স্যার!!!! তাই তখন বললেন কলেজে গেলেই জানতে পারবে সবকিছু | হে ভগবান, আজই এমনটা হওয়ার ছিল!!!! 

আমি আর অয়ন দুজনে পাশাপাশি হা করে দাঁড়িয়ে আছি দেখে অনিরুদ্ধ স্যার বেশ রাগী স্বরে বলে উঠলেন......... 

- এটা তোমাদের ক্লাসে আসার সময়?? পড়াশোনার ইচ্ছে না থাকলে রাস্তায় রাস্তায় বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ালেই পারো, অন্তত তোমাদের দেরি করে আসার ফলে বাকিদের বিরক্ত তো হতে হবে না | কোথায় ছিলে এতক্ষন দুজনে??? 

আমার মুখে তো কথাই সরছে না দেখে অয়নই তাড়াতাড়ি বলল........ 

- আসলে ট্রাফিকে আটকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে স্যার | আগে কোনো দিনও এমন হয়নি, আর ভবিষ্যতেও এমন কখনও হবে না | আমরা আপনার ক্লাস করার জন্য খুবই আগ্রহী | অন্তত শেষবারের মত ক্ষমা করে দিন আমাদের |

- আমাদের??? কেন ও কি কথা বলতে পারে না, নাকি তোমার........ 

আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম........ 

- না স্যার..... মানে হ্যাঁ স্যার, আমারও ভুল হয়ে গিয়েছে | দয়া করে এবারের মতন ক্লাস করার অনুমতি দিন |

তখনকার মত মুখে ক্লাস করার অনুমতি দিলেও আমার ওপর নিবদ্ধ ছিল ওনার স্থির দৃষ্টি | ওনার ওই অগ্নি দৃষ্টির সম্মুখে বসে পড়াশোনায় মন বসানো যে কি মুশকিল, সেটা একমাত্র আমিই বুঝতে পারছি | আমি জানি ওনার মনে এখন হাজার প্রশ্ন | কেন আমি অয়নের সাথে বেরলাম, কেন কলেজে আসতে এত দেরি হল, ইত্যাদি ইত্যাদি | দেবো দেবো, আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেবো | একবার বাড়ি যাই, তখন সব বুঝিয়ে বলব আপনাকে |

দেড় ঘন্টার ক্লাস হওয়ার পর আমাদের একটু টিফিনের জন্য ব্রেক দেওয়া হয়েছে বলে সবাই এসে ক্যান্টিনে জড়ো হয়েছি | টুকটাক হাসি মজা চলছে | কিন্তু আমার যে টেনশনে মুড অফ হয়ে আছে | আর আমাদের ক্লাসের মেয়ে গুলোও বটে, এমনিতে তো সবার দুটো তিনটে করে বয়ফ্রেন্ড আছে, তবু অনিরুদ্ধ স্যারকে দেখে এমন করছে যেন কোনোদিন ছেলে দেখেনি | বেশ বিরক্তই লাগছিল | উঠতে যাব, দেখি অনিরুদ্ধ স্যার এদিকেই আসছেন | আমি কিছু বলার আগেই বাকি মেয়ে গুলো পড়া জানবার বাহানায় ওনাকে গিয়ে ঘিরে ধরল | সারা বছর এরা বই খাতা ছুঁয়েও দেখে না, আর আজ দেখো...... আমি দূরে দাঁড়িয়ে আছি, ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে অথচ একবার তাকাচ্ছেন না | আমিও রাগ করে অয়নের পাশে বসে পড়লাম |

- তোমাদের মত ছাত্র ছাত্রীদের পেয়ে আমার ভীষন ভালো লাগছে | তোমরা পড়াশোনা নিয়ে কত সিরিয়াস, না হলে এখানে এমন অনেকে আছে যারা কলেজে আসে শুধু ঘুরতে, গল্প করতে | যতই তাদের পড়াশোনার সুযোগ করে দাও না কেন, তারা কলেজে আসে শুধু বড়লোকের ছেলে পটাতে, আড্ডা দিতে | পড়াশোনা টা তো শুধু বাহানা লোক দেখানোর জন্য, বাড়ি থেকে ফাঁকি মেরে বাইরে বেড়ানোর জন্য |

অনিরুদ্ধ স্যার কথা গুলো এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন যে মোটামুটি সেখানে উপস্থিত কারোরই বুঝতে বাকি রইল না যে কথা গুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা | কিন্তু উনি একবারও আমার সাথে কথা না বলে এভাবে আমাকে সবার সামনে অপমান করতে পারলেন!!! একবারও বাঁধল না!!! মানছি দোষ আমার, ওনাকে আগে থেকে সব কিছু বলিনি, তাই বলে উনি সবার সামনে আমাকে এইভাবে ছোটো করবেন!!! শেষমেষ উনিও আমাকেই ভুল বুঝলেন, মিলিয়ে ফেললেন বাকিদের সাথে | এতদিন এত কাছে থেকেও আমায় চিনলেন না | হয়ত ভুলটা আমারই, আমিই ওনার দয়া টাকে ওনার ভালোবাসা ভাবার ভুল করেছি | আজ যা হল খুব ভালোই হল | এটা দরকার ছিল আমার ভুলটা ভাঙার জন্য | শুধু কষ্ট হচ্ছে একটা কথা ভেবে যে........ আমি আবারও হেরে গেলাম, ঠকে গেলাম কঠোর বাস্তবের কাছে!!!!!
[+] 2 users Like eklasayan's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গল্পের মত বাস্তব - by eklasayan - 01-05-2020, 04:24 AM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)