Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
গল্পের মত বাস্তব
আজকাল প্রায়ই দেখি আঁখি অয়নের বাইকে করেই বাড়ি ফেরে | দু একবার জিজ্ঞেস ও করেছিলাম যে হরেন দা কি তোমায় সময় মত আনতে যায় না......... 

- না না উনি সময় মত গেলেও আজকাল কলেজে একটু এক্সট্রা ক্লাস চলায় আমারই দেরি হয়ে যাচ্ছে | এবার হরেন দা ই বা কতক্ষন অপেক্ষা করবেন, তাই আমিই ওনাকে না করেছি | আর অয়ন তো আমাকে বাইকে করে পৌঁছেই দেয়, আপনি চিন্তা করবেন না, কোনো অসুবিধা হবে না |

- হুমমমম, অয়ন এদিকেই থাকে বুঝি যে রোজ তোমাকে ড্রপ করতে ওর কোনো অসুবিধা হয় না??? 

- আরে না না স্যার, ও তো সম্পূর্ণ উল্টো দিকে থাকে | কিন্তু আপনি তো অয়ন কে চেনেন, আর ওর মতন দায়িত্বশীল, ভালো মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি | সে কলেজ কামাই হলে নোটস দিয়েই হোক বা কলেজ থেকে বেরোতে দেরি হলেই হোক, অয়ন দায়িত্ব নিয়ে হাসি মুখে সব সামলে নেয় | যত যাই হোক, ওর মুখে সবসময় হাসি | আর এটাই আমার সবচেয়ে ভালো লাগে জানেন...!! 

- হুমমমম, বুঝলাম |

ভগবানই জানেন কি বুঝলেন, না হলে কিছু মানুষ এমন আছে যাদের দেখে মনে হয় হাসতে গেলেও ট্যাক্স দিতে হয় | হি হি হি হি!!!! 

- কি, কি বিড়বিড় করো বল তো সবসময়??!!! 

- কে, মানে কই, কিছু না তো |

- তা সারাক্ষন এখানে বসে অয়নের গুনগান করলে চলবে নাকি বই খাতা নিয়েও বসা হবে?? 

উফফফফ!! ব্যস শুরু হয়ে গেল | পড়াশোনা ছাড়া কোনো দিন কিছু ভেবেছেন কিনা ভগবানই জানেন | দুটো কথা বলতে গেলেই বলবে বাজে বকে সময় নষ্ট না করে পড়তে বসো | হ্যাঁ আমিও পড়াশোনা ভালোবাসি, তাই বলে সবসময় বই মুখে বসে থাকতে ভালো লাগে না |

- কি হল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো..... যাও!! 

- না মানে কালই তো টেস্ট পরীক্ষা শেষ হল | মানে......... 

- কি মানে, টেস্ট শেষ হয়েছে, ফাইনাল তো বাকি |

- হুমমমম, ঠিক আছে যাচ্ছি |

উফফফ!! এরপর ওনাকে কিছু বলতে যাওয়াই বৃথা | সবে কাল পরীক্ষা শেষ হল, তার ওপর বাইরের ওয়েদারটা এত সুন্দর | গোধূলি বেলায় মেঘলা আকাশে যেন কেউ মুঠো মুঠো লাল আবির ছড়িয়ে দিয়েছে | ঠান্ডা হাওয়ায় ভেসে আসছে বৃষ্টির সোঁদা সোঁদা গন্ধ | আর এমন একটা পরিবেশে বই নিয়ে ঘরে বসে থাকতে মন চায়??!!! কিন্তু ঘরে না গিয়েও কোনো উপায় নেই |

বইটা সামনে খুলে বসে থাকলেও মনটা বারবার উড়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়ায় | সারাদিন সূর্যের চোখ রাঙানী সহ্য করার পর যখন এমন মন ভালো করা ঠান্ডা হাওয়া বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে, তখন যে পাষাণ ও শীতল হয় | কিন্তু এখন যদি গিয়ে বলি পড়তে ইচ্ছে করছে না, তাহলেই হাজারটা বকুনি শুনতে হবে | সুতরাং খাতা খুলে বসলাম বাকি লেখাটা শেষ করতে | কিন্তু পড়ায় মন না থাকলে যা হয়, দু লাইন লেখার পরই বসে পড়লাম স্যারের কার্টুন বানাতে | মিনিট পনেরোর কঠোর পরিশ্রমের ফসল স্বরুপ যে চিত্রটি প্রস্তুত হয়েছে, সেটা দেখে রামগরুরের ছানার মুখেও হাসি দেখা যাবে | তবে এটা যদি স্যারের হাতে পরে তাহলে কি যে হতে পারে ভাবলেই জ্বর এসে যাবে | কারন এর মধ্যে একবার এসে দেখে গিয়েছেন পড়ছি কিনা, খাতায় মুখ গুঁজে থাকায় হয়ত ভেবেছেন পড়ছি, তাই আর ডাকেন নি | কিন্তু এখন একটা মুশকিল হল ছবিটা আঁকা শেষ হতে খেয়াল হল আমি এটা পেন দিয়ে এঁকে ফেলেছি, মুছে ফেলার কোনো উপায় নেই, সুতরাং এটাকে লোপাট করে ফেলতে হবে | টেবিলে বসে বসে যখন খাতা লোপাট করার ফন্দি আঁটছি তখন বারান্দা দিয়ে ধেয়ে আসা ঝোড়ো হাওয়া আর অল্প অল্প জলের ছাঁটে বৃষ্টির খবর নিয়ে এল আর ব্যাস, বই খাতা উঠল মাথায় | একবার যদি স্যারের চোখ এড়িয়ে কোনোরকমে ছাদে যেতে পারি ব্যাস, আর পায় কে | যেই ভাবা সেই কাজ, চুড়িদারের ওড়না টা কোমড়ে বেশ করে বেঁধে চুপি চুপি দরজাটা ফাঁক করে দেখি আপাতত বাইরের ঘরে কেউ নেই | আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেড়িয়েছি, এখন স্যারের ঘরের দরজাটা কোনো মতে পেরোতে পারলেই আর বুঝতে পারবেন না | আমি ওনার জানার আগেই ছাদ থেকে ঘুরে চলে আসব | এসব ভাবতে ভাবতেই খেলাম ধাক্কা সামনের টেবিলটায় | ভাজ্ঞিস ফুলদানিটা পড়তে পড়তে ধরে ফেলেছি!!! উফফফ!!! হাঁটুটায় একটু লেগেওছে, তবে ভালো খবর হল ঝড়ের শব্দে স্যার বোধ হয় বুঝতে পারেন নি | না হলে সামান্যতম জিনিষও ওনার নজর এড়ায় না |

ছাদে এসে সত্যিই প্রাণটা জুড়িয়ে গেল | দিনের তাপদাহের পর ভগবান যেন শীতল স্নেহের পরশে প্রকৃতির মানভঞ্জনের খেলায় মেতেছেন | তৃষ্ণার্ত পৃথিবী যেন তৃপ্ত হচ্ছে বৃষ্টির ভালোবাসায় | 

আজ অনেকদিন, অনেকবছর পর নিজের ইচ্ছেতে খুশি মনে বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ হল | না এর আগেও বহুবার বৃষ্টিতে ভিজেছি, বলা ভালো রোজগারের জন্য পথে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজতে বাধ্য হয়েছি | তবে এ বৃষ্টি যে আনন্দের বৃষ্টি, কোনো বাধানিষেধ ছাড়া মন খুলে ভিজতে পারার যে কি আনন্দ তা না অনুভব করলে মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয় | ঝোড়ো হাওয়ায় ভর করে ধেয়ে আসা ঠান্ডা জলের ফোঁটা গুলোয় সারা শরীর শিহরিত হয়ে উঠছে | কখন যে বেখেয়ালে গেয়ে উঠেছি........ 

"এই মেঘলা দিনে একলা
  ঘরে থাকে না তো মন,
  কাছে যাব কবে পাব
  ও গো তোমার নিমন্ত্রণ |"

*************************************

বাবা আজ আঁখির কি হল!!! অন্যদিন এতক্ষণে তো অন্তত দু-তিন বার এ ঘরে আসবেই পড়া বুঝতে পারছিনা বলে | এমনকি আজ যখন ঘরে গেলাম, দেখি ঝুঁকে পড়ে খাতায় কি করছে, তাই আর ডাকি নি | তবে এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে তো ও নয়, কিছু শরীর খারাপ হল না তো??!!! একবার গিয়ে দেখে আসি |

এ কি!! ঘরের দরজাটা ভেজানো কেন??!!! এই তো দেখে গেলাম খোলাই ছিল | আঁখি, আঁখি.... আঁখি তুমি ঠিক আছো, আমি কিন্তু ভিতরে আসছি বলে ঘরের দরজাটা খুলে দেখি বারান্দার দরজাটা খোলা | বৃষ্টির ছাঁট এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে | কিন্তু বই খাতা এমন খোলা রেখে মেয়েটা গেল কোথায়??!!! 

এঘর ওঘর করে সারা বাড়ি খুঁজে ফেললাম, আঁখি কোথাও নেই | এবার শুধু ছাদটা দেখাই বাকি | কিন্তু এই বৃষ্টিতে ও ছাদে কেন যাবে!! তবু একবার গিয়ে দেখি, ছাদের দরজাটাও খোলা মনে হচ্ছে | হয়ত ও বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে |

দরজাটা বন্ধ করতে যাব হঠাৎ মনে হল ছাদে যেন কেউ রয়েছে | চোর টোর নয় তো??!! বৃষ্টিতে এসে লুকিয়েছে, পরে সুযোগ বুঝে...... পা টিপে টিপে ছাদে গিয়ে দেখি আঁখি, আপনমনে একের পর এক গান গেয়ে চলেছে | চুপি চুপি আসায় হয়ত ও বুঝতে পারে নি, তাই নিজেকে একটু আড়াল করে নিলাম | মেয়েটা যে এত মিষ্টি গাইতে পারে কখনও ভাবিই নি | গানের তালে তালে দুলে ওঠা ওর শরীরী ভঙ্গিমা দেখে স্বর্গের অপ্সরা রাও থমকে যাবে | 

বৃষ্টির জলে ভিজে গায়ে জড়িয়ে থাকা সাদা চুরিদারটা ওর প্রতিটি শরীরী বিহঙ্গকে যেন আরও মোহময়ী করে তুলেছে | মাতাল হাওয়ায় এলোমেলো ভিজে চুল গুলো এসে যখন ওর মুখটাকে আড়াল করছে, তখন খুব ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে দুহাতে ওর মুখটা আড়াল করে রাখি | হয়ত আমার নিজের অনুভূতি গুলোকে সংবরণ করে এখনই এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত, কিন্তু খুব ইচ্ছে করছে ওর ওই গোলাপি ঠোঁট ছুঁয়ে নেমে আসা জলের ফোঁটা গুলো চিবুক ছোঁয়ার আগেই শুষে নিতে | খুব ইচ্ছে করছে ওর সাথে হাতে হাত রেখে ভিজতে | খুব ইচ্ছে করছে যখন ঠান্ডা হাওয়ায় ওর সারা শরীর শিহরিত হয়ে উঠছে, তখন ওকে নিজের বুকের মাঝে ভালোবাসার উষ্ণ পরশে জড়িয়ে রাখতে |

এসব ভাবনার মাঝে আমিও যে কখন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ওর এতটা কাছে চলে এসেছি, বুঝতেই পারি নি | ওর ওই ভিজে চুল গুলো মুখের ওপর এসে পড়ায় খেয়াল হল | এমন আচমকা আমার উপস্থিতিতে আঁখিও বেশ হকচকিয়ে গিয়েছে | বিস্ময় মিশ্রিত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে, এমন আশাতীত ঘটনা ও হয়ত স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি | কিন্তু আমি যে ওর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছি না | কোনো প্রসাধন, কোনো রকম মূল্যবান অলঙ্কার ছাড়াও যে কারোর এত মোহময়ী রুপ হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না | ঠান্ডায় তিরতির করে কাঁপা গোলাপি ঠোঁট গুলোয় যেন কত কথা জমে আছে | সারা গায়ে ছড়িয়ে থাকা ভিজে চুল গুলো থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের ফোঁটায় ভিজে ওঠা দীর্ঘ আঁখিপল্লব জোড়ার দিকে তাকিয়ে আমি সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারি | আমার এই মুগ্ধতার দৃষ্টি ওর অস্বস্তির কারণ হলেও, আমি অক্ষম নিজের দৃষ্টি অবরুদ্ধ করতে | হঠাৎ করে খুব জোড়ে বিদ্যুতের ঝলকানিতে চমকে উঠে আঁখি নিচে পালাতে গেলেও আমি ওর হাতটা ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে নিয়ে এলাম | লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে চোখ বন্ধ করে মুখ নামিয়ে আমার বাহুবন্ধনে আবিষ্ট হয়ে ভয়ে ভয়ে বলল, আর হবে না, ভুল হয়ে গিয়েছে, দয়া করে ছেড়ে দিন!!! 

বৃষ্টির অত শব্দের মাঝেও ওর ভয়ার্ত গলার স্বরের কম্পন বসন্তের কোকিলের কুহুতানকেও হার মানায় | নিজেকে সংযত করতে না পেরে কপালে একটা স্নেহের পরশ দিতেই লজ্জায় ছুটে পালাল |
[+] 5 users Like eklasayan's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গল্পের মত বাস্তব - by eklasayan - 28-04-2020, 03:34 AM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)