27-04-2020, 10:40 PM
১.১০
রাজ্যের মন্ত্রী জাফর। সে দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে শাহরাজাদ (আরিয়া) আর ছোট মেয়ে দুনিয়াজাদ (নাদিয়া)
উভয়েই রূপে-গুণে কেউ কারো থেকে কম না। আরিয়া ইতিহাসে অনেক পারদর্শী। ওই সময়ের প্রচুর গল্প কাহিনী পড়েছে সে। সব তার মুখস্ত। সে আবার গানও গাইতে পারে। তার সুমধুর কন্ঠের গান শুনে সকলে অভিভূত হয়ে যায়।
আরিয়া তার বাবাকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করলো: কি হয়েছে বাবা? সারাদিন তোমার কোন আওয়াজ নেই। তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? কোন বিপদ হয়েছে কি?
মন্ত্রী বলল: বাদশার আদেশ, তার জন্য কুমারী মেয়ে লাগবে। কিন্তু দেশে কোথাও কুমারী মেয়ে নেই।
আরিয়া বলল: ও এই কথা। এক কাজ করো আমাকে বাদশার নিকট পাঠিয়ে দাও। আমি ওনাকে বিয়ে করব।
বাবা বলল: তুমি একি বলছো মা। তুমি জানো না বাদশা কত ভয়ঙ্কর। বাদশা প্রতি রাতেই কুমারী মেয়েদের কে ভোগ করে তারপর হত্যা করে। আমি নিজে এই মেয়েদেরকে তার কাছে নিয়ে গেছি। বাদশার সাথে বিয়ে হলে তোমাকেও সে ছাড়বে না। আমার জীবন থাকতে তোমাদের এই ক্ষতি হতে দিব না।
আরিয়া বললো: চিন্তা করো না বাবা। আমার কিছু হবে না। যদিও কিছু হয়, তোমার জীবন বাঁচাতে আমি এতোটুকু করতে পারি। তুমি বাদশাহকে গিয়ে আমার কথা জানিয়ে দাও।
মন্ত্রী বলল: আচ্ছা ঠিক আছে। তবে একটা কথা মনে রাখবে। তুমি যে আমার মেয়ে, এই কথা বাদশাকে জানাবে না। তারপর মন্ত্রী বাদশাকে খবর দেওয়ার জন্য চলে গেল।
নাদিয়া এতক্ষণ চুপচাপ বাবা আর বোনের কথা শুনছিল। এবার সে বোনকে জিজ্ঞেস করল: আচ্ছা আপু তুমি কি সত্যি বাদশা কে বিয়ে করবে? বিয়ে করলেও কেন বাদশাকে তোমার আসল পরিচয় জানাবে না?
তখন আরিয়া বলল: তবে শোন, তোকে একটা গল্প বলি।
ষাঁড়, গাধা ও তাদের মালিকের গল্প:
একদিন বিকেলে ষাঁড়টা কাজ থেকে ফিরে এসে গোয়ালঘরে ঢুকে দেখে, গাধাটা খেয়েদেয়ে দিব্যি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। সে গাধার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো: ভাই তোমার তো অনেক আরামের জীবন। ভালো ভালো খাবার খাও। কোন কাজ করা লাগেনা। শুধু মাঝেমধ্যে মালিকের মন চাইলে তোমার পিঠে চড়ে বাহির থেকে ঘুরে আসে। এর বাইরে সারাদিন শুয়ে বসে খাও আর ঘুমাও।
মালিক ওদিক দিয়ে যাওয়ার সময় ষাঁড়টার কথা শুনে সেখানে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের কথায় কান পেতে রইল।
ষাঁড়টা আবার বলতে লাগলো: তোমার ভাগ্য যেমন ভালো, আমার ভাগ্য তেমন খারাপ। সারাদিন খাটতে খাটতে শরীরে আর কোন শক্তি নাই। ভালো কোন খাবারও খেতে পাই না। খেটে-খেটে আমার জান কয়লা হয়ে গেছে। ভোর হওয়ার আগেই জোয়াল কাঁধে নিয়ে আমার মাঠে বেরিয়ে পড়তে হয়। সারাদিন খেটে সন্ধ্যার সময় ঘরে আসি।
ষারের কথা শুনে গাধার মন গলে গেল। সে বলল: ভাই তোমার দুঃখের কথা শুনে আমার কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।
তোমাকে আমি একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দেই। কাল সকালে যখন চাকরটা তোমাকে নিতে আসবে, তুমি চুপচাপ শক্ত হয়ে শুয়ে থাকবে। তোমাকে উঠানোর জন্য চাকর মারধর করবে। যতই মারুক, তুমি উঠবে না। টেনে-হিঁচড়ে যদিও মাঠে নিয়ে যায়, তখনও কোন কাজ করবে না। এতে তারা মনে করবে যে তোমার কোন অসুখ হয়েছে। তখন আর তোমাকে দিয়ে কাজ করাবে না।
মালিক তাদের কথা মন দিয়ে শুনে সেখান থেকে চলে গেল।
সকালবেলা খেয়াল করলো গাধার বুদ্ধি অনুযায়ী ষাঁড়টা অসুস্থ সেজে শুয়ে হয়ে আছে। কিছুতেই উঠছে না।
মালিক তখন চাকরকে বলল: এক কাজ কর, ষাঁড়টাকে গোয়ালে রেখে গাধার ঘাড়ে কাঁধে লাঙ্গল চাপিয়ে দে।মালিকের নির্দেশে এবার গাধার ঘাড়ে লাঙ্গল জুড়ে দিল। সারাদিন তাকে দিয়ে জমি চাষ করাল।
গাধা দিনের শেষে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে গোয়ালঘরে আসল। তাকে দেখে ষাঁড় বলল: ভাই তোমাকে হাজার ধন্যবাদ। কতকাল পর আজ সারাদিন শান্তিতে বিশ্রাম নিলাম। তুমি এসেছো, ভালোই হয়েছে। চলো একটু গল্প করি।
গাধাটা মনে মনে বলল: এই শালা বলদ, তোর উপকার করতে গিয়ে এখন আর জান বের হয়ে যাচ্ছে। দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
মুখে বলল: ভাই গল্প করার মুড নাই তোমার দুঃখের কথা ভেবেই আমার মনটা কান্নায় ভরে উঠছে। মালিকের কথা শুনে যা বুঝলাম, মালিক তোমাকে আর রাখবে না!
ষাঁড়: এটা কি বললে ভাই? আমাকে রাখবে না মানে কি? মেরে ফেলবে নাকি!
গাধা: না ভাই মারবে না। তবে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেবে। চাকরকে বলছিল, ষাঁড়টা তো অসুস্থ হয়ে গেলে। এখন যদি মারা যায় তাহলে অনেক টাকার লস হবে। তারচেয়ে বরং বেঁচে থাকতে থাকতে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিই। ভালো দাম পাওয়া যাবে।
তো ভাই আমি ভাবছি তোমাকে বিক্রি করে দিলে, এত বড় ঘরে গোয়ালে আমি একা থাকবো কি করে। তোমাকে অনেক মিস করবো ভাই।
তোমার তো আজকেই শেষ দিন তুমি ভালো করে খাও ঘুমাও। অসুস্থ সেজে থাকো। আর কাজে যাওয়া লাগবে না। তোমার হালচাষের কাজ আমি করে দিব।
ষাঁড় মনে মনে বলল: খেয়েদেয়ে তো আর কোন কাজ নেই। আমি অসুস্থ সেজে থাকি, আর মালিক আমাকে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিক। কসাইয়ের হাতে মরি আরকি!
মুখে বলল: আমার জন্য তোমার এত চিন্তা! তোমাকে ছেড়ে তো আমিও থাকতে পারবোনা। কালকে থেকে আর তোমার কাজ করা লাগবে না। আমিই মাঠে যাব।
মালিক সেদিনও তাদের সব কথা শুনে সেখান থেকে চলে গেল।
পরদিন সকালে চাকরটা গাধাকে নিতে আসলো। তখন ষাঁড় নিজে থেকে উঠে চাকরের কাছে চলে আসলো। ষাঁড়টাকে সুস্থ দেখে চাকর তার কাঁধে লাঙ্গল চাপিয়ে মাঠে নিয়ে গেল। মালিক ষাঁড়কে মাঠে যেতে দেখে মিটিমিটি হাসল। বুঝলো কেন ষাঁড় আজকে সুস্থ হয়ে গেল।
গাধা আর ষারের ব্যাপারটাতে মালিক মনে মনে অনেক মজা পেল। সে তার স্ত্রীকে ডেকে আনল। ষাঁড়টার দিকে দেখালো যে, কিভাবে জোর গতিতে কাজ করে যাচ্ছে।
এটা দেখিয়েই মালিক জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
বউ এবার জিজ্ঞেস করল: কি ব্যাপার, কি হয়েছে তোমার? এত হাসির কি আছে? সত্যি করে বলতো, আমাকে দেখে হাসতেছো নাকি?
মালিক: আরে কি যে বল না বউ, তোমাকে নিয়ে আজকে এত বছর সংসার করতেছি। তোমাকে দেখে কেন হাসবো!
বউ: তাহলে কি হয়েছে বল।
মালিক: এখন আর হাসির জন্য বলতে পারছিনা। চলো আগে ঘরে যাই পরে সব বলব।