27-04-2020, 07:30 PM
পর্ব-২৫
দু’দিন পরে পুবালী দুর্গাপুর চলে যায়, স্যামন্তক সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসে। দিদিকে তো সবসময়ে কাছে পাবে, যাকে পাবে না সে হচ্ছে বন্দনা। এই ছয় দিনে মনে হয় যেন সবসময় ওর সাথে কাটায়, কিন্তু বাড়ি বলে কথা আছে, সেখানে ও সময় দিতে হয়। রবিবার বিকেলের ফ্লাইট দিল্লী ফিরে যাবার, পুবালী শনিবার সকালবেলা কোলকাতা ফিরে আসবে।
ঠিক শুক্রবার বিকেলে দেখা করে স্যামন্তক আর বন্দনা। বন্দনাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের একটি বড় রেস্টুরেন্টে খেতে ঢোকে স্যামন্তক। আঙটিটা হাতে ঝলমল করছে, নরম আঙ্গুলে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় স্যামন্তক।
একটা কথা বেশ কিছুদিন ধরে স্যামন্তকের মাথার মধ্যে ঘুরছিল, কি করে বলে সেই কথা। স্যামন্তকের ইতস্তত ভাব দেখে বন্দনা জিজ্ঞেস করে “কি গো কিছু বলবে?”
স্যামন্তক কে চুপ করে থাকতে দেখে, বন্দনার বুক আবার করে কেঁপে ওঠে, সেই পুরনো জায়গা যেখানে দিল্লী যাবার আগে নিয়ে এসেছিল স্যামন্তক। আবার কি বলতে চায় ও, সেবার বলেছিল যে কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী যাচ্ছে, এবারে কি বলবে, দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে? না, তাতে কি আসে যায়, এই শর্মাকে ফিরে তো আসতে হবে এই কোলে। ভাবতে ভাবতে হেসে ফেলে বন্দনা “এবারে তুমি নিশ্চয় বলবে যে তুমি বিদেশ যাচ্ছ।”
স্যামন্তক এক দৃষ্টিতে বন্দনার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে, গোলাপি ঠোঁট দুটি যেন ডাকছে। “হ্যাঁ কিছু বলার আছে আমার।” বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, একটু খানি এদিক ওদিক চেয়ে দেখে “বিয়ে করবে আমাকে?”
তিনটে শব্দ শুনে যেন ভেতর থেকে কেঁপে ওঠে বন্দনা, খুশী তে যেন পাগল হয়ে যাবার যোগাড়। নিচের ঠোঁট চেপে আলতো করে মাথা নাড়িয়ে বলে “যদি না করি, তাহলে…”
“তাহলে চুরি করে নিয়ে যাবো।”
“বাঃবা, মনে তো হয় না সেই টুকু ক্ষমতা আছে তোমার।”
“হুম, এখন বলছ যে ক্ষমতা নেই” চোখ টিপে ইশারা করে যে ‘একবার কোলে এস বলে দিচ্ছি কার কি ক্ষমতা।’ কিছুক্ষণ থেমে বলে “বনা, আমার কিছু বলার আছে।”
ধুক করে ওঠে আবার বন্দনার প্রান, আবার কি নতুন কথা বলবে স্যামন্তকে “এবারে সত্যি আমার ভয় করছে।”
“না না এটা ভয়ের কথা নয়। আমার মনে হয় বিয়ের আগে আমার ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড তোমার যেনে নেওয়া উচিৎ।”
অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দনা, স্যামন্তকের দিকে “হ্যাঁ বল, আমি শুনছি।”
“আমার বাবা, জ্যাঠা দু’জনে আমার অনেক কাছের মানুষ। আমি একমাত্র ছেলে দুই পরিবারের মধ্যে। আমাকে নিয়ে ওদের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। আমি কোনদিন কোলকাতা বা দুর্গাপুরের বাইরে পা রাখিনি, এই প্রথমবার কর্মসুত্রে দিল্লী গেছি।” মন দিয়ে শুনে যায় বন্দনা, ঠিক করে বুঝে উঠতে চেষ্টা করে যে কথাটা ঠিক কোন দিকে মোড় নেবে। “ভবিষ্যতে আমাকে আমার বাবা মা, জেঠু জেঠিমা কে দেখতে হবে, হয়তো এখন নয় কিন্তু কিছু বছর পরে।”
“হুম, তুমি কি বলতে চাইছ যে আমি বিয়ের পরে কোলকাতা থাকবো।” বন্দনার মনের কোনে একটা অজানা শঙ্কা ভর করে, বিয়ের আগেই কি স্যামন্তক ওকে ভয় দেখাচ্ছে আজ থেকে দশ বছর পরে শ্বশুর শ্বাশুরি নিয়ে কি করে ঘর করতে হবে সেটার। ও যে এত কোনদিন ভেবে দেখেনি, ও ভেবেছিল যে স্যামন্তক নিয়ে ek নতুন সংসার গড়বে।
“না এখন নয়, তবে হয়ত ভবিষ্যতে থাকতে হতে পারে।”
এত খোলামেলা জীবনের ছবি যে বন্দনাকে এত তাড়াতাড়ি দেখিয়ে দেবে স্যামন্তক, সেটা ও স্বপ্নেও ভাবেনি। হটাৎ করে মনে হল, যে জীবনটা অনেক প্যাঁচালো, অনেক জটিল এই সংসার ধর্ম। জিজ্ঞেস করে “আমাকে কি করতে হবে?” মনে মনে ভাবে আমি কি এখনি এর হাতের খেলার পুতুল হয়ে গেলাম।
“জাস্ট বি নাইস টুঁ মাই পেরেন্টস, আর কিছু না।”
প্রশ্ন করে বন্দনা, সব থেকে বড় প্রশ্ন “আমাকে বিয়ে তো করবে, বাবা মা কে সেটা জানিয়েছ তুমি? তুমি যেরকম কথা বললে সেটা শুনে তো মনে হচ্ছেনা যে তোমার ফ্যামিলি আমাকে বউ হিসাবে কোনদিন মেনে নেবে। যদি না মেনে নেয় তাহলে তুমি কি করবে?”
স্যামন্তক ভাবেনি এই কথা কোনদিন, কি করবে যদি ওর পরিবার ওদের সম্পর্ক মেনে না নেয়। অনেক কঠিন প্রশ্ন, বাবার চেয়ে জেঠু অনেক কঠোর আর ঋজু স্বভাবের মানুষ। কি করবে ও? বুকের মাঝে বারংবার জেগে ওঠে প্রশ্ন, জেঠু যদি না মানেন তাহলে তো বিয়ে করা যাবেনা, কি করে বঝাবে।
উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বন্দনা “কি হল, বল, কি করবে তখন? শুধু মুখের বলা ভালোবাসা নিয়ে ভুলে চলে যাবে তুমি, তাইতো।”
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক “দিদি নিশ্চয় কিছু একটা ঠিক করে দেবে।”
মাথায় রক্ত চড়ে যায় বন্দনার, এই ছেলেটার কি নিজের কোন মেরুদন্ড নেই, নিজে কিছু করতে পারেনা, সবসময়ে দিদির আঁচলের তলায় কি নিজের জীবন কাটিয়ে যাবে? এই করলে তো বিয়ের পরে ওদের জীবনে পুবালীর হস্তক্ষেপ অনিবার্য, তখন কি হবে। ঝাঁজিয়ে ওঠে বন্দনা “তোমার নিজের কি কিছু ক্ষমতা নেই করার, সব সময়ে তোমার কি দিদিকে চাই? দিদি বলবে, দিদি করবে। হ্যাঁ।”
কথাটা ঠিক ভাবে হজম করতে পারেনা স্যামন্তক “আমার দিদির নামে কিছু বলার আগে একটু ভেবে বল।”
মাথা ঠিক থাকেনা বন্দনার, এমন ছেলে কে ভালবেসেছে যে কিনা মেরুদণ্ড হীন “ঠিক আছে, বেশ। আগে তুমি তোমার পরিবারের সাথে কথা বল, সবাই মত দিক, তারপরে তুমি আমার সাথে কথা বল।” চোখ জ্বালা করে বন্দনার, দৃষ্টি ঝাপ্সা হয়ে আসে চোখের সামনে। ভালবাসার মানুষ টাকে আবার হারাতে হবে ভেবে “কি হবে তোমাকে ভালবেসে, তুমি তো জাননা ঠিক করে যে আমাদের ভবিষ্যৎ কি। আমিকি শুধু মাত্র একটি খেলার পুতুল, তুমি ডাক দেবে আমি দিল্লী যাবো, আমার শরীর টাকে নিয়ে খেলবে আর আমি কিছুদিন পরে বাড়ি ফিরে আসবো? এই জীবন হবে আমাদের?”
উত্তর খুঁজে পায়না স্যামন্তক, একদিকে ওর পরিবার, একদিকে ওর বুকভরা ভালোবাসা। বাড়ির সাথে কথা বলার মতন সাহস ওর নেই, তাহলে কি হারিয়ে দেবে ওর প্রানের বনা কে? না কিছু একটা উপায় খুঁজতে হবে ওকে।
উত্তর না পেয়ে ধরা গলায় বলে বন্দনা “আমি বাড়ি যাবো। এখানে আমার বসার এর একটুকু ইচ্ছে নেই।” উঠে দাঁড়ায় বন্দনা, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে স্যামন্তক মাথা নিচু করে বসে আছে। আবার বলে “আমাকে যদি বাড়ি ছাড়তে ইচ্ছে না করে সেটা বলে দাও, আমি একা একা ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেতে পারবো।”
অস্ফুট স্বরে বলে স্যামন্তক “থাম একটু, শোন আমার কথা। আমি সবকিছু ঠিক করে দেব।”
অসীম বেদনায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে বন্দনার, চোখে জল, ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি নিয়ে বলে “যেদিন নিজে থেকে বুক ঠুকে আমাকে নিয়ে যাবার সাহস হবে, সেদিন এস আমার কাছে। আমি সানন্দে তোমার সাথে এক কাপড়ে বিয়ে করব।” আঙ্গুল থেকে আংটিটা খুলে নিয়ে হাতের মুঠোর মধ্যে রেখে দিল, ফিরিয়ে দিতে মন করলনা, একরকম ফিরিয়ে এনেছে স্যামন্তক। কিছু একটা নিয়েই বেঁচে থাকুক বন্দনা “আংটি টা আমি খুলে রাখছি, দেব না তোমাকে। যদি মনে হয় কোনদিন পড়িয়ে দিও আমাকে, এই আংটিটা। আমার হাত না হলে চির জীবন খালি থাকবে।”
“দাঁড়াও একটু, আমার কথা শন বনা।” কাতর স্বরে ককিয়ে ওঠে স্যামন্তক।
বনা নাম শুনে কেঁদে ফেলে বন্দনা, ডান হাতের মুঠোতে শক্ত করে ধরে থাকা আংটি, দু’চোখে অবিশ্রান্ত বয়ে চলে অশ্রু, প্রেমের কি গভীর বেদনা “আমার কাছে সেদিন এস, যেদিন নিজে থেকে বলবে যে আমাকে নিয়ে যেতে এসেছ। আমি আজ চললাম, পুবালী কে বল যে আমি ওকে খুব মিস করব, কিন্তু একটি বারের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার চেষ্টা কর সামু।” তারপরে আর পেছন দিকে তাকায় না, বন্দনা। নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে, বাইরে বেড়িয়ে ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি।
বাড়ির নিচে পৌঁছে চোখ মুছে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ঘরে ঢোকে। ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করেন যে কি রে কেমন কাটল, হেসে বলে বন্দনা ভালো কেটেছে, নিচে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেছে স্যামন্তক। কাল বাদে পরশু দিন দিল্লী ফিরে যাবে, হাতে শুধু মাত্র দু’দিন দেখা যাক কি করে। বুক ফেটে হাজার টুকরো হয়ে গেছে বন্দনার, এযে ধাক্কা নয়, এযে প্রতারণা নয়, এযে ভালবাসার মাঝে একটা বেড় যেটা লঙ্ঘন করতে শুধু স্যামন্তক পারে। নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পরে বন্দনা, এই কান্নার কোন ওষুধ ওর জানা নেই, কি বলে বুঝাবে নিজের মনকে, স্যামন্তক তো ওকে ভালবাসে, যদি না বাসত ভালো তাহলে না হয় অন্য কথা ছিল, নিজেকে বুঝিয়ে উঠতে পারত। কিন্তু এমত অবস্থায় কি নিয়ে বেঁচে থাকবে। মনে হয়, সেই দুর্যোগের রাতে কেন মৃত্যু হল না ওর।
চলবে......
দু’দিন পরে পুবালী দুর্গাপুর চলে যায়, স্যামন্তক সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসে। দিদিকে তো সবসময়ে কাছে পাবে, যাকে পাবে না সে হচ্ছে বন্দনা। এই ছয় দিনে মনে হয় যেন সবসময় ওর সাথে কাটায়, কিন্তু বাড়ি বলে কথা আছে, সেখানে ও সময় দিতে হয়। রবিবার বিকেলের ফ্লাইট দিল্লী ফিরে যাবার, পুবালী শনিবার সকালবেলা কোলকাতা ফিরে আসবে।
ঠিক শুক্রবার বিকেলে দেখা করে স্যামন্তক আর বন্দনা। বন্দনাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের একটি বড় রেস্টুরেন্টে খেতে ঢোকে স্যামন্তক। আঙটিটা হাতে ঝলমল করছে, নরম আঙ্গুলে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় স্যামন্তক।
একটা কথা বেশ কিছুদিন ধরে স্যামন্তকের মাথার মধ্যে ঘুরছিল, কি করে বলে সেই কথা। স্যামন্তকের ইতস্তত ভাব দেখে বন্দনা জিজ্ঞেস করে “কি গো কিছু বলবে?”
স্যামন্তক কে চুপ করে থাকতে দেখে, বন্দনার বুক আবার করে কেঁপে ওঠে, সেই পুরনো জায়গা যেখানে দিল্লী যাবার আগে নিয়ে এসেছিল স্যামন্তক। আবার কি বলতে চায় ও, সেবার বলেছিল যে কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী যাচ্ছে, এবারে কি বলবে, দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে? না, তাতে কি আসে যায়, এই শর্মাকে ফিরে তো আসতে হবে এই কোলে। ভাবতে ভাবতে হেসে ফেলে বন্দনা “এবারে তুমি নিশ্চয় বলবে যে তুমি বিদেশ যাচ্ছ।”
স্যামন্তক এক দৃষ্টিতে বন্দনার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে, গোলাপি ঠোঁট দুটি যেন ডাকছে। “হ্যাঁ কিছু বলার আছে আমার।” বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, একটু খানি এদিক ওদিক চেয়ে দেখে “বিয়ে করবে আমাকে?”
তিনটে শব্দ শুনে যেন ভেতর থেকে কেঁপে ওঠে বন্দনা, খুশী তে যেন পাগল হয়ে যাবার যোগাড়। নিচের ঠোঁট চেপে আলতো করে মাথা নাড়িয়ে বলে “যদি না করি, তাহলে…”
“তাহলে চুরি করে নিয়ে যাবো।”
“বাঃবা, মনে তো হয় না সেই টুকু ক্ষমতা আছে তোমার।”
“হুম, এখন বলছ যে ক্ষমতা নেই” চোখ টিপে ইশারা করে যে ‘একবার কোলে এস বলে দিচ্ছি কার কি ক্ষমতা।’ কিছুক্ষণ থেমে বলে “বনা, আমার কিছু বলার আছে।”
ধুক করে ওঠে আবার বন্দনার প্রান, আবার কি নতুন কথা বলবে স্যামন্তকে “এবারে সত্যি আমার ভয় করছে।”
“না না এটা ভয়ের কথা নয়। আমার মনে হয় বিয়ের আগে আমার ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড তোমার যেনে নেওয়া উচিৎ।”
অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দনা, স্যামন্তকের দিকে “হ্যাঁ বল, আমি শুনছি।”
“আমার বাবা, জ্যাঠা দু’জনে আমার অনেক কাছের মানুষ। আমি একমাত্র ছেলে দুই পরিবারের মধ্যে। আমাকে নিয়ে ওদের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। আমি কোনদিন কোলকাতা বা দুর্গাপুরের বাইরে পা রাখিনি, এই প্রথমবার কর্মসুত্রে দিল্লী গেছি।” মন দিয়ে শুনে যায় বন্দনা, ঠিক করে বুঝে উঠতে চেষ্টা করে যে কথাটা ঠিক কোন দিকে মোড় নেবে। “ভবিষ্যতে আমাকে আমার বাবা মা, জেঠু জেঠিমা কে দেখতে হবে, হয়তো এখন নয় কিন্তু কিছু বছর পরে।”
“হুম, তুমি কি বলতে চাইছ যে আমি বিয়ের পরে কোলকাতা থাকবো।” বন্দনার মনের কোনে একটা অজানা শঙ্কা ভর করে, বিয়ের আগেই কি স্যামন্তক ওকে ভয় দেখাচ্ছে আজ থেকে দশ বছর পরে শ্বশুর শ্বাশুরি নিয়ে কি করে ঘর করতে হবে সেটার। ও যে এত কোনদিন ভেবে দেখেনি, ও ভেবেছিল যে স্যামন্তক নিয়ে ek নতুন সংসার গড়বে।
“না এখন নয়, তবে হয়ত ভবিষ্যতে থাকতে হতে পারে।”
এত খোলামেলা জীবনের ছবি যে বন্দনাকে এত তাড়াতাড়ি দেখিয়ে দেবে স্যামন্তক, সেটা ও স্বপ্নেও ভাবেনি। হটাৎ করে মনে হল, যে জীবনটা অনেক প্যাঁচালো, অনেক জটিল এই সংসার ধর্ম। জিজ্ঞেস করে “আমাকে কি করতে হবে?” মনে মনে ভাবে আমি কি এখনি এর হাতের খেলার পুতুল হয়ে গেলাম।
“জাস্ট বি নাইস টুঁ মাই পেরেন্টস, আর কিছু না।”
প্রশ্ন করে বন্দনা, সব থেকে বড় প্রশ্ন “আমাকে বিয়ে তো করবে, বাবা মা কে সেটা জানিয়েছ তুমি? তুমি যেরকম কথা বললে সেটা শুনে তো মনে হচ্ছেনা যে তোমার ফ্যামিলি আমাকে বউ হিসাবে কোনদিন মেনে নেবে। যদি না মেনে নেয় তাহলে তুমি কি করবে?”
স্যামন্তক ভাবেনি এই কথা কোনদিন, কি করবে যদি ওর পরিবার ওদের সম্পর্ক মেনে না নেয়। অনেক কঠিন প্রশ্ন, বাবার চেয়ে জেঠু অনেক কঠোর আর ঋজু স্বভাবের মানুষ। কি করবে ও? বুকের মাঝে বারংবার জেগে ওঠে প্রশ্ন, জেঠু যদি না মানেন তাহলে তো বিয়ে করা যাবেনা, কি করে বঝাবে।
উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করে বন্দনা “কি হল, বল, কি করবে তখন? শুধু মুখের বলা ভালোবাসা নিয়ে ভুলে চলে যাবে তুমি, তাইতো।”
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক “দিদি নিশ্চয় কিছু একটা ঠিক করে দেবে।”
মাথায় রক্ত চড়ে যায় বন্দনার, এই ছেলেটার কি নিজের কোন মেরুদন্ড নেই, নিজে কিছু করতে পারেনা, সবসময়ে দিদির আঁচলের তলায় কি নিজের জীবন কাটিয়ে যাবে? এই করলে তো বিয়ের পরে ওদের জীবনে পুবালীর হস্তক্ষেপ অনিবার্য, তখন কি হবে। ঝাঁজিয়ে ওঠে বন্দনা “তোমার নিজের কি কিছু ক্ষমতা নেই করার, সব সময়ে তোমার কি দিদিকে চাই? দিদি বলবে, দিদি করবে। হ্যাঁ।”
কথাটা ঠিক ভাবে হজম করতে পারেনা স্যামন্তক “আমার দিদির নামে কিছু বলার আগে একটু ভেবে বল।”
মাথা ঠিক থাকেনা বন্দনার, এমন ছেলে কে ভালবেসেছে যে কিনা মেরুদণ্ড হীন “ঠিক আছে, বেশ। আগে তুমি তোমার পরিবারের সাথে কথা বল, সবাই মত দিক, তারপরে তুমি আমার সাথে কথা বল।” চোখ জ্বালা করে বন্দনার, দৃষ্টি ঝাপ্সা হয়ে আসে চোখের সামনে। ভালবাসার মানুষ টাকে আবার হারাতে হবে ভেবে “কি হবে তোমাকে ভালবেসে, তুমি তো জাননা ঠিক করে যে আমাদের ভবিষ্যৎ কি। আমিকি শুধু মাত্র একটি খেলার পুতুল, তুমি ডাক দেবে আমি দিল্লী যাবো, আমার শরীর টাকে নিয়ে খেলবে আর আমি কিছুদিন পরে বাড়ি ফিরে আসবো? এই জীবন হবে আমাদের?”
উত্তর খুঁজে পায়না স্যামন্তক, একদিকে ওর পরিবার, একদিকে ওর বুকভরা ভালোবাসা। বাড়ির সাথে কথা বলার মতন সাহস ওর নেই, তাহলে কি হারিয়ে দেবে ওর প্রানের বনা কে? না কিছু একটা উপায় খুঁজতে হবে ওকে।
উত্তর না পেয়ে ধরা গলায় বলে বন্দনা “আমি বাড়ি যাবো। এখানে আমার বসার এর একটুকু ইচ্ছে নেই।” উঠে দাঁড়ায় বন্দনা, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে স্যামন্তক মাথা নিচু করে বসে আছে। আবার বলে “আমাকে যদি বাড়ি ছাড়তে ইচ্ছে না করে সেটা বলে দাও, আমি একা একা ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেতে পারবো।”
অস্ফুট স্বরে বলে স্যামন্তক “থাম একটু, শোন আমার কথা। আমি সবকিছু ঠিক করে দেব।”
অসীম বেদনায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে বন্দনার, চোখে জল, ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি নিয়ে বলে “যেদিন নিজে থেকে বুক ঠুকে আমাকে নিয়ে যাবার সাহস হবে, সেদিন এস আমার কাছে। আমি সানন্দে তোমার সাথে এক কাপড়ে বিয়ে করব।” আঙ্গুল থেকে আংটিটা খুলে নিয়ে হাতের মুঠোর মধ্যে রেখে দিল, ফিরিয়ে দিতে মন করলনা, একরকম ফিরিয়ে এনেছে স্যামন্তক। কিছু একটা নিয়েই বেঁচে থাকুক বন্দনা “আংটি টা আমি খুলে রাখছি, দেব না তোমাকে। যদি মনে হয় কোনদিন পড়িয়ে দিও আমাকে, এই আংটিটা। আমার হাত না হলে চির জীবন খালি থাকবে।”
“দাঁড়াও একটু, আমার কথা শন বনা।” কাতর স্বরে ককিয়ে ওঠে স্যামন্তক।
বনা নাম শুনে কেঁদে ফেলে বন্দনা, ডান হাতের মুঠোতে শক্ত করে ধরে থাকা আংটি, দু’চোখে অবিশ্রান্ত বয়ে চলে অশ্রু, প্রেমের কি গভীর বেদনা “আমার কাছে সেদিন এস, যেদিন নিজে থেকে বলবে যে আমাকে নিয়ে যেতে এসেছ। আমি আজ চললাম, পুবালী কে বল যে আমি ওকে খুব মিস করব, কিন্তু একটি বারের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার চেষ্টা কর সামু।” তারপরে আর পেছন দিকে তাকায় না, বন্দনা। নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে, বাইরে বেড়িয়ে ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি।
বাড়ির নিচে পৌঁছে চোখ মুছে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ঘরে ঢোকে। ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করেন যে কি রে কেমন কাটল, হেসে বলে বন্দনা ভালো কেটেছে, নিচে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেছে স্যামন্তক। কাল বাদে পরশু দিন দিল্লী ফিরে যাবে, হাতে শুধু মাত্র দু’দিন দেখা যাক কি করে। বুক ফেটে হাজার টুকরো হয়ে গেছে বন্দনার, এযে ধাক্কা নয়, এযে প্রতারণা নয়, এযে ভালবাসার মাঝে একটা বেড় যেটা লঙ্ঘন করতে শুধু স্যামন্তক পারে। নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পরে বন্দনা, এই কান্নার কোন ওষুধ ওর জানা নেই, কি বলে বুঝাবে নিজের মনকে, স্যামন্তক তো ওকে ভালবাসে, যদি না বাসত ভালো তাহলে না হয় অন্য কথা ছিল, নিজেকে বুঝিয়ে উঠতে পারত। কিন্তু এমত অবস্থায় কি নিয়ে বেঁচে থাকবে। মনে হয়, সেই দুর্যোগের রাতে কেন মৃত্যু হল না ওর।
চলবে......