20-04-2020, 03:55 AM
ঝটপট ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখি এ তো এলাহী আয়োজন | ফুলকো ফুলকো লুচি, সাদা আলুর তরকারি, বেগুন ভাজা, মিষ্টি | অঞ্জলি চলে যাওয়ার পর এইসব রান্না, জলখাবার প্রায় ভুলেই গিয়েছি | আজ এত সুন্দর করে টেবিল সাজানো দেখে এক মূহুর্তে পুরোনো কথা গুলো মনে পড়ে গেল | আগে ছুটির দিনে সকালে রান্না ঘরে মা ব্যস্ত থাকতো লুচি ভাজতে, আমি আর বাবা টেবিলে বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম আর মা আগে কাকে দেবে সেটা নিয়ে বেশ একটা ছোটো খাটো ডিবেটই হয়ে যেত | কিন্তু আমাদের কাউকেই জিততে না দিয়ে প্রতিবারই মা লুচির প্লেট দুজনকে একসাথেই দিত | আর খাবার থালায় বসে হার জিত নিয়ে সময় নষ্ট না করে লুচিতে মনোনিবেশ করাই বাঙালির পরম ধর্ম বলে মনে করায় সেদিনের মত বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটত |
- আরে কি মুশকিল, তখন থেকে লুচি গুলোর দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন বলুন তো? ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না তো, শুরু করুন |
- ওহ: হ্যাঁ হ্যাঁ....... এই তো...... বাব্বা আজ তো মাসি অনেক জলখাবার বানিয়েছে দেখছি | কি তুমি মেনু ঠিক করে দিলে বুঝি? নাহলে তো পাউরুটি মাখন ছাড়া কপালে আর কিছু জোটে না |
- হুমমমম বুঝলাম....... কিন্তু হঠাৎ এই মাসি, আপনার রান্না ঘরে তো অন্য কারোর প্রবেশ নিষেধ | এমনকি আমাকেও কোনোদিন...........
- আরে তেমন কিছু না | ওই কয়েকদিন তোমার ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় এদিকে সময় করে উঠতে পারছিলাম না | বাইরেও থাকতে হত, তাই আরকি দেখাশোনা করার জন্য........ আর তোমাকে কাজ করতে না দেওয়ার ব্যাপারটা অন্য, তুমি এখানে আসতে পড়তে আমার কাজের জন্য না |
- হুমমমম, আচ্ছা ঠিক আছে এবার তাড়াতাড়ি শুরু করুন | সব জুড়িয়ে গেল |
- বিমলা দির হাতের রান্না এত ভালো আগে জানতাম না তো!!!! অন্য সময় তো খাবার মুখে তোলাই যেত না | তা বিমলা দি গেল কোথায়, দেখছি না!!!!!
- হুমমমমম, বিমলা দির রান্না কেমন জানি না কারণ আজ তো উনি আসেন নি |
- কি: !!!!!! তাহলে এতসব করলো কে????!!!!
- কে আবার আমি | এমন করে বলছেন যেন জীবনে প্রথমবার রান্না ঘরে গিয়েছি | হ্যাঁ তফাত শুধু একটাই, আগে ওই বাড়িতে বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হত আর আজ আপনার জন্য ইচ্ছে হল তাই | কেন খেতে বুঝি ভালো হয় নি???!!!
আর যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলবো বিমলা মাসিকে আর আসতে বলার কোনো দরকার নেই | আর আমি থাকতে আপনার কোনো অসুবিধা হবে না আশা করি |
- না........ একদম না | ভুলে যেও না, তুমি পড়াশোনা করতে চাও আর ও বাড়িতে থেকে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই তোমাকে এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছি | আমার সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য না | নিজের মত থাকবে, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো | আর আমার সুবিধা যদি একান্তই করতে চাও তাহলে আমার থেকে দূরে থেকো |
একটা সামান্য কথায় কারোর থেকে এমন উত্তর হয়ত আশা করা যায় না | তাই আগের দিনের মানুষটার সাথে আজকের এই কথা গুলো, এই মানুষটাকে মেলাতে গিয়ে ভাবনার তার গুলো কেমন যেন একটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল | আরও একবার প্রমাণিত হল আমি মানুষ চিনতে এখনও শিখিনি | মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করে ঠকলেও অবিশ্বাস করতে শিখিনি | এটা ঠিক যে আমার মতন সহায়সম্বল হীন একটা মেয়েকে করুণা করলেও আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না |
কলিং বেলের আওয়াজে হুঁশ ফিরতে ঝটপট নিজেকে সামলে নিলাম | ছোটো বেলা থেকেই একলা নিজের চোখের জল মুছে অভ্যস্ত, তাই আজ কাল আর বিশেষ অসুবিধে হয় না | খাওয়ার ইচ্ছেটা অনেকক্ষণই চলে গিয়েছে, তাই তাড়াতাড়ি খাবার গুলো ঢাকা দিয়ে দরজা টা খুলতে এসে দেখি বাইরের ঘরে কাকু আর কাকীমা বসে আছেন আর সামনে অনিরুদ্ধ স্যার | আমাকে দেখে স্মিত হেসে বললেন,
- নিজের জিনিষ ভালো করে দেখে বুঝে নাও | না হলে পরে আবার আমাকে...........
- না না, চিন্তা করবেন না | আপনাকে বেশি বিরক্ত করবো না | একটু সময় লাগবে কিন্তু সব শিখে যাবো | আর শিখে তো নিতেই হবে |
**********************************
কাকীমারা চলে যেতেই ঘরে চলে এসেছি | বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ছে, আজ ওঁরা থাকলে এত কষ্ট হয়ত সহ্য করতে হত না | শুনেছি মা মাথায় বুলিয়ে দিলে নাকি সব কষ্ট কমে যায়, সব দু:খ মুছে যায় | একা একা থাকতে তো শিখছিলাম | কষ্ট গুলোই ভবিতব্য বলে মেনেই নিয়েছিলাম, কিন্তু একটা ঝোড়ো হাওয়ার মত এসে উনি যে আমার সুপ্ত বাসনা গুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছেন | অবশ্য ভুলটা আমারই | উনি শুধু আমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি সবকিছু জেনে বুঝেও ছুটে গিয়েছি | হয়ত বা নিজেকে সংবরণ করার ক্ষমতা ছিল না | তবু তো সেদিন রাতের ঘটনাটার পর অনেক কষ্টে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম | দূরে চলে যেতে চেয়েছিলাম সে যেভাবেই হোক না কেন | কিন্তু উনিই তো আবার কালবৈশাখীর মতন ধেয়ে এসে সমস্ত বন্ধ জানলা গুলো খুলে দিয়ে, এলোমেলো করে দিলেন আমার লুকিয়ে রাখা ইচ্ছে গুলোকে | বাধ্য করলেন কল্পনার জাল বুনতে | সেদিন ওনার চোখের ভাষা, ওই অধিকার মিশ্রিত আদেশ, সবকিছু কত কাছের মনে হয়েছিল | কিন্তু ভাবনার সাথে যে বাস্তবের কোনো মিল হয় না তা আজকে আবারও প্রমাণিত হল |
সকলের জীবনে ভালোবাসা পূর্নতা পায় না | হয়ত আমারও পেল না, তাই বলে এত দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না | আর তাছাড়া উনি তো ভালোবাসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন | আমিই ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি | আর সেখানে তো কোনো শর্ত ছিল না যে উনিও আমাকে সমান ভাবে ভালোবাসবেন | সুতরাং নিজের অনুভূতি গুলো মনের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে ওনার সাহায্যের মর্যাদা রাখাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত |
- আরে কি মুশকিল, তখন থেকে লুচি গুলোর দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন বলুন তো? ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না তো, শুরু করুন |
- ওহ: হ্যাঁ হ্যাঁ....... এই তো...... বাব্বা আজ তো মাসি অনেক জলখাবার বানিয়েছে দেখছি | কি তুমি মেনু ঠিক করে দিলে বুঝি? নাহলে তো পাউরুটি মাখন ছাড়া কপালে আর কিছু জোটে না |
- হুমমমম বুঝলাম....... কিন্তু হঠাৎ এই মাসি, আপনার রান্না ঘরে তো অন্য কারোর প্রবেশ নিষেধ | এমনকি আমাকেও কোনোদিন...........
- আরে তেমন কিছু না | ওই কয়েকদিন তোমার ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় এদিকে সময় করে উঠতে পারছিলাম না | বাইরেও থাকতে হত, তাই আরকি দেখাশোনা করার জন্য........ আর তোমাকে কাজ করতে না দেওয়ার ব্যাপারটা অন্য, তুমি এখানে আসতে পড়তে আমার কাজের জন্য না |
- হুমমমম, আচ্ছা ঠিক আছে এবার তাড়াতাড়ি শুরু করুন | সব জুড়িয়ে গেল |
- বিমলা দির হাতের রান্না এত ভালো আগে জানতাম না তো!!!! অন্য সময় তো খাবার মুখে তোলাই যেত না | তা বিমলা দি গেল কোথায়, দেখছি না!!!!!
- হুমমমমম, বিমলা দির রান্না কেমন জানি না কারণ আজ তো উনি আসেন নি |
- কি: !!!!!! তাহলে এতসব করলো কে????!!!!
- কে আবার আমি | এমন করে বলছেন যেন জীবনে প্রথমবার রান্না ঘরে গিয়েছি | হ্যাঁ তফাত শুধু একটাই, আগে ওই বাড়িতে বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হত আর আজ আপনার জন্য ইচ্ছে হল তাই | কেন খেতে বুঝি ভালো হয় নি???!!!
আর যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলবো বিমলা মাসিকে আর আসতে বলার কোনো দরকার নেই | আর আমি থাকতে আপনার কোনো অসুবিধা হবে না আশা করি |
- না........ একদম না | ভুলে যেও না, তুমি পড়াশোনা করতে চাও আর ও বাড়িতে থেকে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই তোমাকে এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছি | আমার সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য না | নিজের মত থাকবে, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো | আর আমার সুবিধা যদি একান্তই করতে চাও তাহলে আমার থেকে দূরে থেকো |
একটা সামান্য কথায় কারোর থেকে এমন উত্তর হয়ত আশা করা যায় না | তাই আগের দিনের মানুষটার সাথে আজকের এই কথা গুলো, এই মানুষটাকে মেলাতে গিয়ে ভাবনার তার গুলো কেমন যেন একটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল | আরও একবার প্রমাণিত হল আমি মানুষ চিনতে এখনও শিখিনি | মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করে ঠকলেও অবিশ্বাস করতে শিখিনি | এটা ঠিক যে আমার মতন সহায়সম্বল হীন একটা মেয়েকে করুণা করলেও আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না |
কলিং বেলের আওয়াজে হুঁশ ফিরতে ঝটপট নিজেকে সামলে নিলাম | ছোটো বেলা থেকেই একলা নিজের চোখের জল মুছে অভ্যস্ত, তাই আজ কাল আর বিশেষ অসুবিধে হয় না | খাওয়ার ইচ্ছেটা অনেকক্ষণই চলে গিয়েছে, তাই তাড়াতাড়ি খাবার গুলো ঢাকা দিয়ে দরজা টা খুলতে এসে দেখি বাইরের ঘরে কাকু আর কাকীমা বসে আছেন আর সামনে অনিরুদ্ধ স্যার | আমাকে দেখে স্মিত হেসে বললেন,
- নিজের জিনিষ ভালো করে দেখে বুঝে নাও | না হলে পরে আবার আমাকে...........
- না না, চিন্তা করবেন না | আপনাকে বেশি বিরক্ত করবো না | একটু সময় লাগবে কিন্তু সব শিখে যাবো | আর শিখে তো নিতেই হবে |
**********************************
কাকীমারা চলে যেতেই ঘরে চলে এসেছি | বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ছে, আজ ওঁরা থাকলে এত কষ্ট হয়ত সহ্য করতে হত না | শুনেছি মা মাথায় বুলিয়ে দিলে নাকি সব কষ্ট কমে যায়, সব দু:খ মুছে যায় | একা একা থাকতে তো শিখছিলাম | কষ্ট গুলোই ভবিতব্য বলে মেনেই নিয়েছিলাম, কিন্তু একটা ঝোড়ো হাওয়ার মত এসে উনি যে আমার সুপ্ত বাসনা গুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছেন | অবশ্য ভুলটা আমারই | উনি শুধু আমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি সবকিছু জেনে বুঝেও ছুটে গিয়েছি | হয়ত বা নিজেকে সংবরণ করার ক্ষমতা ছিল না | তবু তো সেদিন রাতের ঘটনাটার পর অনেক কষ্টে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম | দূরে চলে যেতে চেয়েছিলাম সে যেভাবেই হোক না কেন | কিন্তু উনিই তো আবার কালবৈশাখীর মতন ধেয়ে এসে সমস্ত বন্ধ জানলা গুলো খুলে দিয়ে, এলোমেলো করে দিলেন আমার লুকিয়ে রাখা ইচ্ছে গুলোকে | বাধ্য করলেন কল্পনার জাল বুনতে | সেদিন ওনার চোখের ভাষা, ওই অধিকার মিশ্রিত আদেশ, সবকিছু কত কাছের মনে হয়েছিল | কিন্তু ভাবনার সাথে যে বাস্তবের কোনো মিল হয় না তা আজকে আবারও প্রমাণিত হল |
সকলের জীবনে ভালোবাসা পূর্নতা পায় না | হয়ত আমারও পেল না, তাই বলে এত দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না | আর তাছাড়া উনি তো ভালোবাসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন | আমিই ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি | আর সেখানে তো কোনো শর্ত ছিল না যে উনিও আমাকে সমান ভাবে ভালোবাসবেন | সুতরাং নিজের অনুভূতি গুলো মনের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে ওনার সাহায্যের মর্যাদা রাখাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত |