Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
গল্পের মত বাস্তব
#65
হ্যাঁ আঁখি তুমি ঠিকই শুনেছ | আজকের মত পরিস্থিতি অন্য কারোর সাথে হলেও আমি এমনভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়তাম মানবিকতার খাতিরে, কিন্তু আমি এটাও স্বীকার করতে বাধ্য যে তোমার জন্য যা করেছি তা শুধু মানবিকতার খাতিরেই নয়........ এই কয়েকদিনেই তুমি আমার বাইরের শক্ত আবরণটা ভেঙে অনেকটা ভেতরে ঢুকে পড়েছ | তোমার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে নিজেই কখন তোমাকে নিজের এতটা কাছের করে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি | আমি জানি আমার তোমাকে ওইভাবে বলায় তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ, আমায় ভুল বুঝো না আঁখি | আমার যে আর কিছু করার ছিলো না | তোমায় এখন পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজের স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে হবে | তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমি তোমার স্বপ্ন গুলোকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না |

আর তাছাড়া তোমার আমার বয়সের তফাতের জন্য সমাজ এই সম্পর্কটাকে ভালো চোখে মেনেও নেবে না | হয়ত বা ভাবতে পারে যে তোমার সম্পত্তির লোভে তোমাকে....... আমার একলা বে-রঙ জীবনকে রঙীন করে তোলার জন্য আমি তোমার কাছে চির ঋণী | সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পর তোমার ওই চিঠিটা পড়ে নিজের আবেগটা নিয়ন্ত্রণ করা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছিল | তুমি যে আমার কাছে কি সেটা কয়েকদিনে তোমার অনুপস্থিতিতেই বেশ বুঝতে পেরেছি | যখন আমার সামনে রাঘব তোমার সাথে অমন ব্যবহার করত তখন নিজের রাগটা সংযত করা কতটা কষ্টের বলে বোঝাতে পারব না, ইচ্ছে হত এক চড়ে ওর গাল লাল করে দিই | কিন্তু তাই বলে স্বার্থপরের মত এখনই যদি তোমাকে মনের কথা বলে দিই তাহলে তুমি নিজের স্বপ্ন গুলো ভুলে আমায় নিয়ে আমার স্বপ্ন গুলো নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়বে | ভুলে যাবে নিজের কথা নিজের স্বপ্ন গুলোর কথা, জড়িয়ে পড়বে সংসারের বাঁধনে | 

অনেক তো অন্যের কথা ভাবলে আঁখি, এবার আমি চাই তুমি তোমার মত বাঁচো | নিজের জন্য নিজের মত করে | তোমার পথের সমস্ত বাঁধা সরিয়ে দেব আমি, তুমি শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলবে |

******************************

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নিলাম | জামা কাপড় তো তাড়াতাড়ি তে কিছুই আনতে পারি নি তাই পড়নের বেনারসিটাই ঠিক করে পড়ে নিলাম | এখানে যখন থাকতেই হবে তাই এখন প্রধান কাজ হল স্যার ওঠার আগে একটু পরিষ্কার করে নেওয়া আর সেই ফাঁকে ওনার দেখার আগেই যে ওই চিঠিটাও খুঁজে বের করতে হবে | না হলে লজ্জায় ওনার সামনে দাঁড়াব কি করে!!!! উনি মানবিকতার খাতিরে এত কিছু করছেন | আমায় বিশ্বাস করে লোকের কথা সমাজের কথা উপেক্ষা করেও নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন | আমার পড়াশোনার ব্যবস্থা করছেন আর সেখানে কি না আমি ওনাকে নিয়ে........ ছি: !!! ওনার সামনে দাঁড়ানোর কোনো যোগ্যতাই নেই সেখানে আমি কি করে বলি ওনাকে মনের কথাটা |

ঘরের কাজ করার অভ্যাস আমার ছিলই কিছুটা সখে বেশিরভাগটাই দায়ে পরে | তবে যাই হোক এখানে কাজ করতে কেমন একটা অন্যরকম লাগছে | কোনো বাঁধা নিষেধ ছাড়া, স্বাধীন ভাবেই নিজের স্বাচ্ছন্দ্য মত কাজ করলে যেন বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই | হ্যাঁ আগেও আমি এ বাড়িতে এসেছি, টুকটাক কাজও করেছি, তবে কালকে স্যারের ওই কথা গুলো বলার পর থেকে কেমন যেন একটা অলিখিত দায়িত্ব অধিকারবোধ জন্মে গিয়েছে | যখন উনি আমাকে শোয়ার ঘর দেখিয়ে বললেন, এটাকে নিজের বাড়ি বলেই মনে করো আঁখি | বাইরের লোকের ভাবনা বাইরের লোককেই ভাবতে দিও | তুমি এখানে নিজের মত স্বাধীন ভাবে থেকো, কোনো রকম সঙ্কোচ মনে রেখো না | এখানের প্রতিটা জিনিষের ওপর তোমার অধিকার আছে | কাল যখন উনি অমনভাবে অধিকারের কথাটা বলছিলেন........ তখন ওনার চোখের ভাষায় ছিল আপনজনকে ফিরে পাওয়ার ব্যাকুলতা, একাকিত্ব মোচনের আনন্দ | হাজার লুকানোর চেষ্টা করেও ওনার অব্যক্ত চোখের ভাষা আমার থেকে আড়াল করতে পারেন নি | আচ্ছা আমি কিছু ভুল করছি না তো??? উনি হয়ত আমার জন্য বিশেষ কিছু অনুভব করেন কিন্তু সঙ্কোচের জন্য বলে উঠতে পারছেন না | হয়ত উনিও আমাকে........ নাহ: একবার চেষ্টা করে দেখা উচিত, যদি ওনাকে নিয়ে আমার পূর্ব অনুমান ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না | এমন কি আমিও চাই ভুল প্রমাণিত হতে |

******************************

পাশ ফিরে শুতে গিয়েই খেয়াল হল, আরে আমি তো সোফায় শুয়ে | কাল বোধ হয় অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই ঘরে না গিয়ে এখানেই........ নাহ: আর শোবো না বেলা ও অনেক হল | ভাগ্যিস আজ ছুটির দিন তাড়াতাড়ি নেই, বেকার রান্না করে সময় নষ্ট না করে এই ফাঁকে খাতা গুলো দেখে নি, না হলে কাল আর সময় মত খাতা গুলো জমা দিতে পারবো না |

এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে আমার চক্ষু চড়ক গাছ | এ কি দেখছি, এটা কার ঘর!!!!! মানে কাল অবধি তো আমার মানে, এখনও বোধ হয়........ কিন্তু এরম ভোল বদল কে ঘটালো | এতদিন শুধু বই খাতা, আসবাবপত্র ছড়ানো ছিটানোই দেখে অভ্যস্ত | আজ সবকিছু কেমন নিজের যায়গায় | বিছানায় টানটান করে চাদর পাতা, জানলার পর্দা গুলোও কে যেন পাল্টে দিয়েছে | দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ঘরটাকে দেখছিলাম থুড়ি চেনার চেষ্টা করছিলাম |

- আরে তখন থেকে ডাকছি, ঘরে না ঢুকে দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি এত ভাবছেন বলুন তো??? সরুন দেখি আমাকে হাতের ফুল গুলো রাখতে দিন, মেলা কাজ পরে আছে |

- ওহ তুমি, তা এই ফুল কোথা থেকে পেলে শুনি??? 

- আরে বারান্দায় গিয়েছিলাম, সেখানেই | তা গাছ গুলোকে এত যত্ন করেন, নিজের দিকেও একটু খেয়াল দিতে পারেন |

- হুমমমমম, তাই ভাবি এত সব কে করলো, এতসব কিছুর কোনো দরকার ছিলো না কিন্তু | শুধু শুধু........... 

- উফফফফ, ঘুম থেকে উঠে দেখছি সবই ভুলে গিয়েছেন | কাল রাতেই বললেন এটাকে নিজের বাড়ি ভেবে থাকতে আর এখন বলছেন কি দরকার, তা আমি কি এই রকম অগোছালো ভাবে থাকবো নাকি??!!!!! 

- না মানে আসলে, এতদিন পর নিজের ঘরটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখে........... 

- হুমমমমম, বুঝলাম, এবার যান দেখি ঝটপট ফ্রেশ হয়ে আসুন | আমি যাই ঝটপট লুচি গুলো ভেজে ফেলি |

********************************

বাব্বা আঁখি তো দেখছি পাক্কা গিন্নীদের মত করে কথা বলছে | এক বেলার মধ্যেই সবকিছু কত সুন্দর ভাবে বদলে দিয়েছে | ওর হাতের ছোঁয়ায় বাড়িটা যেন আবার প্রাণ ফিরে পেল | সদ্যস্নাতা আঁখি যখন হাতে ফুল গুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, ওর গা থেকে ভেসে আসা ভিজে সুগন্ধে কেমন যেন আবিষ্ট হয়ে পড়ছিলাম | ওর ওই চোখের চাহনি, চোখের ওপর আসা অবাধ্য ভিজে চুল থেকে চুঁইয়ে জল পরে যখন ওর কথা বলতে ব্যাস্ত ঠোঁট গুলোর তৃষ্ণা মেটাতে উদ্যত, তখন আমার ও ইচ্ছে হচ্ছিল ওই ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অমৃত সুধা পান করতে |
[+] 2 users Like eklasayan's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গল্পের মত বাস্তব - by eklasayan - 19-04-2020, 03:02 AM



Users browsing this thread: