19-04-2020, 02:39 AM
(This post was last modified: 30-11-2023, 10:29 AM by naag.champa. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
অধ্যায় ১
আমার নাম সন্ধ্যা নাগ, বাড়িতে আমাকে সবাই খুকু বলে ডাকে- হাজার হোক, বিয়ের অনেক দিন পরে অনেক মানত পূজা ইত্যাদির করার পরে আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর একটা নামও আছে যেটা নাকি আমার চেনা প্রচিত অথবা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউই জানে না- সেটা হল গিয়ে ‘আঁধারী’। আমার এই নাম কি করে হল তার পিছনে একটা রয়েছে একটি জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া ঘটনা।
ছোটবেলার থেকেই আমার জ্যোতিষিবিদ্যার একটি শখ ছিল, তাই খুব অল্প বয়েস থেকেই আমি অনেক কয়টা বইও পড়েছি এই বিষয় আর গণনা ও ভবিষ্যৎবাণী করে বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছি। আমার এই শখ বড় হতে হতে আমাকে জাদু বিদ্যা, তন্ত্র- মন্ত্র দিকে আমাকে কৌতূহলী করে দেয়।
কলেজ ফাইনাল আর পরে Chartered Accountancy পরীক্ষার চাপে আমার এই জ্যোতিষিবিদ্যার শখ আর জাদু বিদ্যা, তন্ত্র- মন্ত্র দিকে আমার কৌতূহল যেন একটু বাধা পেয়েছিল কিন্তু গত তিন বৎসর আগে সান্রাইজ ফাইনানশিয়াল কন্সাল্টান্সী’ (Sunrise Financial Consultancy) তে, একটি জুনিয়ার অডিটারের চাকরী পাওয়ার পর থেকেই যখনি আমি সময় পেতাম- আমি নিজের শখ আর কৌতূহল কে প্রশ্রয় দিতাম।
***
পুরো ঘটনাটার সূত্রপাত কবে থেকে যে হয়েছে, সেটা আমি সঠিক ভাবে জানি না- তবে এটা আজ থেকে প্রায় দু বছর আগেকার কথা। আমি চাকরী পাবার পর থেকে একা সহরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি, বাবা অসুস্থতার কারণে তাড়াতাড়ি রিটায়ার করেছেন, বাবা মা থাকেন গ্রামাঞ্চলের আমাদের আদি বাড়িতে। বাবার পেনশন আর আমার পাঠান টাকায় সংসার বেশ ভালই চলছে। হাজার হোক আমি মা বাবার একটি মাত্র সন্তান।
এই ঘটনাচক্রে একটি বড় ভূমিকায় ছিল এক মাঝ- বয়েসি মহিলা, ওকে দেখতে মোটা না হলেও বেশ গোল গাল চেহারা। সে বাসস্ট্যান্ডের কাছে ফুটপাতে একটা প্লাস্টিক পেতে বসে নানান রকমের জ্যোতিষ আর তন্ত্রমন্ত্রের পুরনো বই বিক্রি করতো, এছাড়া ও অভিমন্ত্রিত তাবিজ এবং মাদুলি বিক্রি করতো| ওর কাছ থেকে মাঝে মাঝে আমি জ্যোতিষী এবং তন্ত্র- মন্ত্রের চটি- চটি বই গুলি কিনতাম। সে এক গ্রাম থেকে আসত আর আমি যেই বাস স্ট্যান্ড থেকে অফিস যাবার জন্য বাস ধরতাম, সে সেখানেই একটা গাছের তলায় বসে একটা প্লাস্টিকের ওপরে তার দোকান লাগাত। তার কাছে অনেক চটি চটি বই ছাড়া থাকত বিভিন্ন রকমের তাবিজ এবং মাদুলি। মাঝে মাঝে আমি আমি দেখতাম যে কাছের বস্তির মহিলারা ওই মাঝ বয়েসি মহিলার কাছে হাত দেখাতে আর নিজের ভবিষ্যৎ জানতে আসে। আমি অনুমান করেছিলাম যে উনি কোন জ্যোতিষী অথবা তন্ত্র সাধিকা হবেন- এবং আমার এই আন্দাজ ছিল একেবারে ঠিক ছিল।
যেহেতু আমি প্রায়ই ওনার কাছ থেকে বই পত্র কিনে থাকতাম তাই আমার একটা পরিচয় মত হয়ে গেছিল ওনার সাথে আর উনি বলেছিলেন ওনার নাম হুলা - আমি ওনাকে হুলা মাসী বলে ডাকতাম আর এই পরিচয়ের সুত্রে আমি ওনাকে নিজের ফোন নাম্বারও দিয়েছিলাম। এমন কি ওনার গ্রামের বাড়িতে পূজো হলে উনি আমাকে তার প্রসাদও দিতেন- এমন সুস্বাসদু প্রসাদের পেঁড়া এই শহরে পাওয়া যায় না...
এক দিন বাসের অপেক্ষা করেতে করতে আমি দেখলাম যে আমার কাছে খুচরো পয়সা নেই, সব কটাই একশ আর একটা পাঁচশ টাকার নোট। কি করি? আমি ভাবলাম যে হুলা মাসীর কাছ থেকে তাকা ভাঙ্গিয়ে নেব... ওনার দোকানে গিয়ে দেখি যে উনি ঠিক সেই ভাবেই দোকান সাজিয়ে বসে আছেন। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম, “কেমন আছ, হুলা মাসী?”
-“ভাল আছি, রি সন্ধ্যা... আজ অনেক দিন পরে এলি, তুই ভাল আছিস ত?”
“হ্যাঁ... খুব ব্যস্ত ছিলাম, তা কি নতুন বই এনেছ?”
-“এই বইটা বেশ ভাল”, বলে হুলা মাসী আমার হাতে একটা বাঁধান পুরনো মোটা দেখে বই তুলে দিলেন। বইটার নামছিল –“প্রাচীন গুপ্ত বিদ্যা”
বইটা দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে সেটি কারুর ব্যবহৃত বই, কিন্তু আমি মলাটের পাতা উলটে একটু অবাক হয়ে গেলাম কারণ সে বইটি মুদ্রিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল (ইং) ১৮৯২ সালে, মানে বইটি প্রায় একশ বছরেরও বেশি পুরনো কিন্তু বইটী নিজের প্রাচীনত্বের তুলনায় বেশ চমৎকার অবস্থায় ছিল।
সঠিক বাজেরে এই বইএর দর প্রায় হাজার হাজার টাকায় হতে পারে সেটা আমি জানতাম। কারণ আমাদের ফার্ম (Firm) হালেই একটি অকশান হাউসের (Auction House), যেখানে নাকি নানা প্রাচীন মূর্তি, আসবাবপত্র আদি ইত্যাদি নিলাম করা হয়ে; তাহাদের হিসাবনিকাশ করেছিল...
-“অত ভাবনা চিন্তা না করে এই বইটি কিনে নে... আমি বইটা পেয়েই তোর কথা ভাবছিলাম আর দেখ, তুইও আজই এসে গেলি...”, হুলা মাসীর স্বর যেন আমাকে নিজের চিন্তার জগত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।
“কিন্তু...”
-“কিন্তু, আবার কি? আমি বইটা পড়ে দেখেছি... এতে কয়েকটা ‘বৃদ্ধি মন্ত্রও’ আছে, ২৭০’ এর পাতায় যে মন্ত্রটা আছে ওটার নিয়ম মেনে রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে উচ্চারণ করে শুবি, দেখবি একবারে দুর্দান্ত এবং অব্যর্থ কাজ হবে...”
“কিন্তু আমি কিসের বৃধির কামনা করব?”
-“কেন তোর বাড়িতে গাছ পালা নেই? যেমন গোলাপ গাছ... যদি সেটা শুকিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেখবি যেন এই মন্ত্রের প্রভাবে ঐ গাছের বাড় বৃদ্ধি কেমন সুন্দর ভাবে হয়ে... তা ছাড়া এই মন্ত্রে মেয়েদের চুল ঘন আর লম্বা করার জন্যেও ব্যবহার করা যায়... ”
তা ঠিক, আমার গাছ পালার খুব শখ আমি যেখানে ভাড়া থাকি সেই ফ্লাটের বারান্দায় আমি বেশ কয়েকটা টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছিলাম কিন্তু আমার প্রিয় গোলাপ গাছটা যেন কেমন মরা মরা হয়েই থাকত... সার জল নিয়মিত দেবার পরেও কোন লাভ হয়ে নি... তাছাড়া আমার ছোট বেলার থেকেই লম্বা চুলেরও খুব শখ... কিন্তু হাজার রকমের তেল, ঔষধ, কেশ চর্চা করার পরেও আমার চুলও যেন ঠিক মনোমত ভাবে বাড়ে না... কিন্তু হুলা মাসী আমার এই কথা গুলি জানল কি করে? হয়ত এটা একটা নিছিক কাকতালীয়।
কেন জানি না হুলা মাসী যেন আমার মনের কথা পড়ে ফেলে বললেন, “ভাবছিস কি- আগে নিজের গোলাপ গাছের উপরে পরীক্ষা করে দেখ তারপরে নয় নিজের চুল আরও লম্বা, ঘন আর রেশমি করে তুলবি- এখনো তোর চুল বেশ সুন্দর কিন্তু তোর কনুই অবধি লম্বা- দেখে নিস দু মাসের মধ্যে তোর চুল আরও ঘন আর রেশমি পাছার নীচ অবধি লম্বা হয়ে যাবে... তুই আমাকে এই বইটার জন্য ষাট টাকা দে...”
আমি যেন লক্ষ করলাম যে হুলা মাসীর বয়েস অনুযায়ী ওনার স্বাস্থ আর চুল বেশ সুন্দরই আছে, ওনার খোঁপা দেখে মনে হয় যে ওনারও কাঁচা পাকা চুল বেশ ঘন আর প্রায় ওনার পাছা অবধি লম্বা হবে... নিজের বয়সকালে উনি বেশ সুন্দরী ছিলেন- এটা কি মন্ত্রের প্রভাব নাকি বংশগত জানি না... আমি আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি বইটার ২৭০ এর পাতা খুলে দেখলাম, আমার নজর পড়ল সেই বৃদ্ধি মন্ত্রের উপরে- মন্ত্রটা বাংলায় লেখা তবে ভাষাটা কেমন যেন অদ্ভুত-
আমি আর কিছু না ভেবে নিজের ব্যাগে বইটা পুরে হুলা মাসীকে একটা একশ টাকার নোট দিলাম। হুলা মাসী বলল, “এই যা! আমার কাছে ত এত খুচরা টাকা নেই...”
“ও মা! আমি ভাবছিলাম বাস ভাড়ার জন্য তোমার কাছ থেকে খুচরো করাব...”
“এই নে দশ টাকা, তুই বইটা এখন নিয়ে যা... তুই আমাকে পরে নেহাত বইয়ের দাম সহ দশ টাকা বেশি দিয়ে যাস...”
আমি রোজ এই পথে জাওয়া আসা করি- তাই অসুবিধে নেই। কথা বাত্রা বলতে বলতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি তাড়াতাড়ি পঞ্চাশ টাকাটা নিয়ে আবার বাস স্ট্যান্ডে ফিরে গেলাম, আর ভাবছিলাম যে আজ আবার খুচরো টাকার জন্যে চ্যাংড়া কন্ডাক্টরের কাছে দু চারটে কথা শুনতে হবে... হ্যাঁ কি যেন মন্ত্রটা? ‘কো রেইয়া টোকু পুকু’ না কি?... অফিসের পরে বাড়ি গিয়ে ২৭০নম্বর পাতাটা ভাল করে পড়তে হবে। আমি ভাল করে জানতাম যে এবারে আজ আর অফিসে আমার মন লাগবে না। তবে তখন আমি ভাবতেই পারিনি যে আমার এই নিরীহ জ্যোতিষবিদ্যার শখ এবং তন্ত্র মন্ত্রের কৌতূহল আর এই বইয়ের মন্ত্র গুলি অবশেষে আমাকে ধুমিয়া গ্রামের আঁধারী করে তুলবে।
ক্রমশঃ
আমার নাম সন্ধ্যা নাগ, বাড়িতে আমাকে সবাই খুকু বলে ডাকে- হাজার হোক, বিয়ের অনেক দিন পরে অনেক মানত পূজা ইত্যাদির করার পরে আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর একটা নামও আছে যেটা নাকি আমার চেনা প্রচিত অথবা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউই জানে না- সেটা হল গিয়ে ‘আঁধারী’। আমার এই নাম কি করে হল তার পিছনে একটা রয়েছে একটি জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া ঘটনা।
ছোটবেলার থেকেই আমার জ্যোতিষিবিদ্যার একটি শখ ছিল, তাই খুব অল্প বয়েস থেকেই আমি অনেক কয়টা বইও পড়েছি এই বিষয় আর গণনা ও ভবিষ্যৎবাণী করে বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছি। আমার এই শখ বড় হতে হতে আমাকে জাদু বিদ্যা, তন্ত্র- মন্ত্র দিকে আমাকে কৌতূহলী করে দেয়।
কলেজ ফাইনাল আর পরে Chartered Accountancy পরীক্ষার চাপে আমার এই জ্যোতিষিবিদ্যার শখ আর জাদু বিদ্যা, তন্ত্র- মন্ত্র দিকে আমার কৌতূহল যেন একটু বাধা পেয়েছিল কিন্তু গত তিন বৎসর আগে সান্রাইজ ফাইনানশিয়াল কন্সাল্টান্সী’ (Sunrise Financial Consultancy) তে, একটি জুনিয়ার অডিটারের চাকরী পাওয়ার পর থেকেই যখনি আমি সময় পেতাম- আমি নিজের শখ আর কৌতূহল কে প্রশ্রয় দিতাম।
***
পুরো ঘটনাটার সূত্রপাত কবে থেকে যে হয়েছে, সেটা আমি সঠিক ভাবে জানি না- তবে এটা আজ থেকে প্রায় দু বছর আগেকার কথা। আমি চাকরী পাবার পর থেকে একা সহরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি, বাবা অসুস্থতার কারণে তাড়াতাড়ি রিটায়ার করেছেন, বাবা মা থাকেন গ্রামাঞ্চলের আমাদের আদি বাড়িতে। বাবার পেনশন আর আমার পাঠান টাকায় সংসার বেশ ভালই চলছে। হাজার হোক আমি মা বাবার একটি মাত্র সন্তান।
এই ঘটনাচক্রে একটি বড় ভূমিকায় ছিল এক মাঝ- বয়েসি মহিলা, ওকে দেখতে মোটা না হলেও বেশ গোল গাল চেহারা। সে বাসস্ট্যান্ডের কাছে ফুটপাতে একটা প্লাস্টিক পেতে বসে নানান রকমের জ্যোতিষ আর তন্ত্রমন্ত্রের পুরনো বই বিক্রি করতো, এছাড়া ও অভিমন্ত্রিত তাবিজ এবং মাদুলি বিক্রি করতো| ওর কাছ থেকে মাঝে মাঝে আমি জ্যোতিষী এবং তন্ত্র- মন্ত্রের চটি- চটি বই গুলি কিনতাম। সে এক গ্রাম থেকে আসত আর আমি যেই বাস স্ট্যান্ড থেকে অফিস যাবার জন্য বাস ধরতাম, সে সেখানেই একটা গাছের তলায় বসে একটা প্লাস্টিকের ওপরে তার দোকান লাগাত। তার কাছে অনেক চটি চটি বই ছাড়া থাকত বিভিন্ন রকমের তাবিজ এবং মাদুলি। মাঝে মাঝে আমি আমি দেখতাম যে কাছের বস্তির মহিলারা ওই মাঝ বয়েসি মহিলার কাছে হাত দেখাতে আর নিজের ভবিষ্যৎ জানতে আসে। আমি অনুমান করেছিলাম যে উনি কোন জ্যোতিষী অথবা তন্ত্র সাধিকা হবেন- এবং আমার এই আন্দাজ ছিল একেবারে ঠিক ছিল।
যেহেতু আমি প্রায়ই ওনার কাছ থেকে বই পত্র কিনে থাকতাম তাই আমার একটা পরিচয় মত হয়ে গেছিল ওনার সাথে আর উনি বলেছিলেন ওনার নাম হুলা - আমি ওনাকে হুলা মাসী বলে ডাকতাম আর এই পরিচয়ের সুত্রে আমি ওনাকে নিজের ফোন নাম্বারও দিয়েছিলাম। এমন কি ওনার গ্রামের বাড়িতে পূজো হলে উনি আমাকে তার প্রসাদও দিতেন- এমন সুস্বাসদু প্রসাদের পেঁড়া এই শহরে পাওয়া যায় না...
এক দিন বাসের অপেক্ষা করেতে করতে আমি দেখলাম যে আমার কাছে খুচরো পয়সা নেই, সব কটাই একশ আর একটা পাঁচশ টাকার নোট। কি করি? আমি ভাবলাম যে হুলা মাসীর কাছ থেকে তাকা ভাঙ্গিয়ে নেব... ওনার দোকানে গিয়ে দেখি যে উনি ঠিক সেই ভাবেই দোকান সাজিয়ে বসে আছেন। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম, “কেমন আছ, হুলা মাসী?”
-“ভাল আছি, রি সন্ধ্যা... আজ অনেক দিন পরে এলি, তুই ভাল আছিস ত?”
“হ্যাঁ... খুব ব্যস্ত ছিলাম, তা কি নতুন বই এনেছ?”
-“এই বইটা বেশ ভাল”, বলে হুলা মাসী আমার হাতে একটা বাঁধান পুরনো মোটা দেখে বই তুলে দিলেন। বইটার নামছিল –“প্রাচীন গুপ্ত বিদ্যা”
বইটা দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে সেটি কারুর ব্যবহৃত বই, কিন্তু আমি মলাটের পাতা উলটে একটু অবাক হয়ে গেলাম কারণ সে বইটি মুদ্রিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল (ইং) ১৮৯২ সালে, মানে বইটি প্রায় একশ বছরেরও বেশি পুরনো কিন্তু বইটী নিজের প্রাচীনত্বের তুলনায় বেশ চমৎকার অবস্থায় ছিল।
সঠিক বাজেরে এই বইএর দর প্রায় হাজার হাজার টাকায় হতে পারে সেটা আমি জানতাম। কারণ আমাদের ফার্ম (Firm) হালেই একটি অকশান হাউসের (Auction House), যেখানে নাকি নানা প্রাচীন মূর্তি, আসবাবপত্র আদি ইত্যাদি নিলাম করা হয়ে; তাহাদের হিসাবনিকাশ করেছিল...
-“অত ভাবনা চিন্তা না করে এই বইটি কিনে নে... আমি বইটা পেয়েই তোর কথা ভাবছিলাম আর দেখ, তুইও আজই এসে গেলি...”, হুলা মাসীর স্বর যেন আমাকে নিজের চিন্তার জগত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।
“কিন্তু...”
-“কিন্তু, আবার কি? আমি বইটা পড়ে দেখেছি... এতে কয়েকটা ‘বৃদ্ধি মন্ত্রও’ আছে, ২৭০’ এর পাতায় যে মন্ত্রটা আছে ওটার নিয়ম মেনে রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে উচ্চারণ করে শুবি, দেখবি একবারে দুর্দান্ত এবং অব্যর্থ কাজ হবে...”
“কিন্তু আমি কিসের বৃধির কামনা করব?”
-“কেন তোর বাড়িতে গাছ পালা নেই? যেমন গোলাপ গাছ... যদি সেটা শুকিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেখবি যেন এই মন্ত্রের প্রভাবে ঐ গাছের বাড় বৃদ্ধি কেমন সুন্দর ভাবে হয়ে... তা ছাড়া এই মন্ত্রে মেয়েদের চুল ঘন আর লম্বা করার জন্যেও ব্যবহার করা যায়... ”
তা ঠিক, আমার গাছ পালার খুব শখ আমি যেখানে ভাড়া থাকি সেই ফ্লাটের বারান্দায় আমি বেশ কয়েকটা টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছিলাম কিন্তু আমার প্রিয় গোলাপ গাছটা যেন কেমন মরা মরা হয়েই থাকত... সার জল নিয়মিত দেবার পরেও কোন লাভ হয়ে নি... তাছাড়া আমার ছোট বেলার থেকেই লম্বা চুলেরও খুব শখ... কিন্তু হাজার রকমের তেল, ঔষধ, কেশ চর্চা করার পরেও আমার চুলও যেন ঠিক মনোমত ভাবে বাড়ে না... কিন্তু হুলা মাসী আমার এই কথা গুলি জানল কি করে? হয়ত এটা একটা নিছিক কাকতালীয়।
কেন জানি না হুলা মাসী যেন আমার মনের কথা পড়ে ফেলে বললেন, “ভাবছিস কি- আগে নিজের গোলাপ গাছের উপরে পরীক্ষা করে দেখ তারপরে নয় নিজের চুল আরও লম্বা, ঘন আর রেশমি করে তুলবি- এখনো তোর চুল বেশ সুন্দর কিন্তু তোর কনুই অবধি লম্বা- দেখে নিস দু মাসের মধ্যে তোর চুল আরও ঘন আর রেশমি পাছার নীচ অবধি লম্বা হয়ে যাবে... তুই আমাকে এই বইটার জন্য ষাট টাকা দে...”
আমি যেন লক্ষ করলাম যে হুলা মাসীর বয়েস অনুযায়ী ওনার স্বাস্থ আর চুল বেশ সুন্দরই আছে, ওনার খোঁপা দেখে মনে হয় যে ওনারও কাঁচা পাকা চুল বেশ ঘন আর প্রায় ওনার পাছা অবধি লম্বা হবে... নিজের বয়সকালে উনি বেশ সুন্দরী ছিলেন- এটা কি মন্ত্রের প্রভাব নাকি বংশগত জানি না... আমি আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি বইটার ২৭০ এর পাতা খুলে দেখলাম, আমার নজর পড়ল সেই বৃদ্ধি মন্ত্রের উপরে- মন্ত্রটা বাংলায় লেখা তবে ভাষাটা কেমন যেন অদ্ভুত-
বৃদ্ধি মন্ত্রও
কারোপিকো আহাঊ,আহাঊ,আহাঊ
কো রেইয়া টোকু হিয়া হিয়া ঈঙ্গা
আনা আহাঊ কীটূ টুকু টুপু উঙ্গা
(নিজের ইচ্ছা জাহির করুন)
হিয়াহিয়াটিয়া আনা ভাকারিটি ই
আমি আর কিছু না ভেবে নিজের ব্যাগে বইটা পুরে হুলা মাসীকে একটা একশ টাকার নোট দিলাম। হুলা মাসী বলল, “এই যা! আমার কাছে ত এত খুচরা টাকা নেই...”
“ও মা! আমি ভাবছিলাম বাস ভাড়ার জন্য তোমার কাছ থেকে খুচরো করাব...”
“এই নে দশ টাকা, তুই বইটা এখন নিয়ে যা... তুই আমাকে পরে নেহাত বইয়ের দাম সহ দশ টাকা বেশি দিয়ে যাস...”
আমি রোজ এই পথে জাওয়া আসা করি- তাই অসুবিধে নেই। কথা বাত্রা বলতে বলতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি তাড়াতাড়ি পঞ্চাশ টাকাটা নিয়ে আবার বাস স্ট্যান্ডে ফিরে গেলাম, আর ভাবছিলাম যে আজ আবার খুচরো টাকার জন্যে চ্যাংড়া কন্ডাক্টরের কাছে দু চারটে কথা শুনতে হবে... হ্যাঁ কি যেন মন্ত্রটা? ‘কো রেইয়া টোকু পুকু’ না কি?... অফিসের পরে বাড়ি গিয়ে ২৭০নম্বর পাতাটা ভাল করে পড়তে হবে। আমি ভাল করে জানতাম যে এবারে আজ আর অফিসে আমার মন লাগবে না। তবে তখন আমি ভাবতেই পারিনি যে আমার এই নিরীহ জ্যোতিষবিদ্যার শখ এবং তন্ত্র মন্ত্রের কৌতূহল আর এই বইয়ের মন্ত্র গুলি অবশেষে আমাকে ধুমিয়া গ্রামের আঁধারী করে তুলবে।
ক্রমশঃ
![[Image: Xossip-Signature-2.gif]](https://i.ibb.co/8KbKxms/Xossip-Signature-2.gif)
*Stories-Index* New Story: উওমণ্ডলীর লৌন্ডিয়া