Thread Rating:
  • 25 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব
#23
।।৯।।


     মলিনাবৌদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে কেমন বিস্বাদ লাগলো। আমি কি বলেন্দ্র মোহন হয়ে যাচ্ছি?বাবার কথাই কি ঠিক,রক্তের দোষ?মেয়েদের সঙ্গে জবরদস্তি করতে পারি না একী আমার দুর্বলতা নাকি ভাবের ঘরে চুরি? দময়ন্তী ঠিক বলেছে কেউ ডাকলেই যেতে হবে? একটা চিন্তা মনের মধ্যে বুজকুড়ি কাটে, বুকে অনন্ত পিপাসা--মুখে না বাবা,ওসব পাপ। সেদিক দিয়ে মলিনাবৌদির মধ্যে কোন ভণ্ডামি নেই।মানুষের ক্ষিধে পায় ঘুম পায় কান্না পায় --তখন খাই-ঘুমোই-কাঁদি। আর ওটা পেলে, না বাবা ওসব করেনা ! লোকে মন্দ বলবে।ছিঃ তুমি না ভাল মেয়ে।এসব ভাবছি কিন্তু ভিতরে ভিতরে এক গুরু মশায় চোখ পাকিয়ে বলবে, এটা সিতা  সাবিত্রীর দেশ--এখানে ওসব চলবে  না   পরকালে  গিয়ে  প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।  বোজোদির শেখানো  মন্ত্র কিছুকাল জপ করা হচ্ছেনা। আমার ইচ্ছাশক্তি প্রখর  এই শক্তিবলে অসাধ্য সাধন করতে পারি।
বোজোদির ভরে দেওয়া গোয়ার গোবিন্দটা গর্জে ওঠে, প্রায়শ্চিত্ত না ছাই করতে হবে। ওসব পরকাল দেখা  যাবে পরকালে। ধূমকেতুর মত ভোলা এসে হাজির, মনাদা তোমাকে কল্যানদা দেখা করতে বলেছে।
--আমার এখন সময় নেই। কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।
--মনাদা তোমাকে একটা কথা বলি,কাউকে বোলনা। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলে ভোলা, পার্টি-ফার্টি তোমার মত ভাল মানুষের কাজ না।
--তুই কি খারাপ  মানুষ?
--আমার  কথা ছাড়ো, আমি তো শালা মানুষই না।ভোলা চলে গেল।
হাটতে হাটতে স্টেশনের কাছে চলে এসেছি। একটা ট্রেন ঢুকেছে পিল পিল করে লোক বেরোচ্ছে,রিক্সাওলারা ভেঁপু বাজাচ্ছে।
হিজলতলি সেই আগের মত নেই।ভেবেছিলাম দময়ন্তী হয়ত এই ট্রেনে আসতে পারে, ভীড়ে  দময়ন্তীকে দেখলাম না। বাড়ির পথ ধরি।হঠাৎ কানে এল, কিরে মনা।
তাকিয়ে দেখলাম,মানিকদা দোকান থেকে ডাকছে। মানিকদা গ্রাজুয়েশন করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করেছেন চাকরির চেষ্টায়। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে রাস্তার ধারে এই দোকান খুলে বসেছেন।
--মানিকদা কেমন আছো?
-- মাসিমা কেমন আছেন?
--মা? আছে  একরকম।
--সরোজ আর ফিরবে না?
--কি করে বলবো--কারো মনের কথা কি বলা সম্ভব?
ভুটভুট করে কেলোর বাইক এসে থামে। কেলোর পরনে ছোপ ছোপ হাফ প্যান্ট আর টি শার্ট।দোকানে এসে বলল, পান পরাগ দু-পাতা।
পান পরাগের পাউচ ছিড়ে মুখে ফেলে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। মানিকদা একবার আমাকে একবার কেলোকে  দেখেন।ব্যাটা ছেদো মস্তান আমার মধ্যে আতঙ্ক চারিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। জিজ্ঞেস করলাম, কিছু  বলবে?
--বেশসি বাড় বেড়-ওনা--।আঙ্গুল তুলে ঘাড় নাড়িয়ে বলে কেলো।
--এ্যাই কেলো শুনে রাখো আমি কারো হুকুমের গোলাম নই।
--যাঃ বাবা এসব কথা আমাকে বলছ কেন? আমি তোমাকে কোন হুকুম করেছি?
 দোকানের সামনে ভীড় জমতে থাকে সেদিকে তাকিয়ে কেলো বলে, কি  চাই এখানে? পাতলা হও পাতলা হও।
 ভীড় নড়ে না।বাইকে উঠে ফটফটিয়ে চলে গেল কেলো। মানিকদা বলল, কাজটা ভাল করলিনা।
কি করে বোঝাবো মানিকদাকে আমি কিছু করিনি।বোজোদি ভরে দিয়ে গেছে আমার মধ্যে এই গোয়ার গোবিন্দকে।ব্যাটা বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ চাগাড় দিয়ে ওঠে। দোকান থেকে বেরোচ্ছি অনুরাধাদির সঙ্গে দেখা।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,তুই মনোজ মানে মনা না?
--তুমি তো অনুদি ফেমাস লোক,কবি অনুরাধা বসুকে কে না চেনে?
--খুব পাকা হয়েছিস।মাসিমা কেমন আছেন? খাসা চেহারা করেছিস। তোর কথাই ভাবছিলাম,দাড়া কথা আছে।
মানিকদার দোকান থেকে কি যেন কিনল।তারপর দোকান থেকে বেরিয়ে বলল,তোর কোন কাজ নেই তো?চল হাটতে হাটতে কথা বলি।
দাদার বন্ধু সুগতদার বোন এই অনুরাধাদি।বাড়িতে যাতায়াত ছিল একসময়।সেই সূত্রে দাদার সঙ্গে একটা রিলেশন গড়ে উঠেছিল।কিম্বা অনুরাধাদিই দাদার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।সুগতদা অঙ্কে দাদার চেয়েও ভাল ছিল। দাদার একটা ক্ষমতা ছিল কোথাও প্রয়োজনীয় কিছু পেলে ব্লটিং পেপারের মত শুষে নিতে পারতো।সুগতদার কাছ থেকে অঙ্কের জটিল রহস্য তার কিশোরী বোনের সান্নিধ্য দাদা ব্লট  করে নিয়েছিল।অনুদি ভেবেছিল তার দেওয়া সব যেন স্থায়ী আমানত পরে সুদে আসলে দশ গুণ হয়ে ফিরে আসবে।দাদা  কলকাতায় কলেজে পড়তে যাবার পর সেই আমানত লিকুইডেশনে চলে গেল। দাদার ডায়েরিতে পড়েছি দাদা লিখেছিল,ভালবাসা-টাসার চেয়ে জীবনে সফল হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটাই জরুরি।ভালবাসা তখন আপনি ধরা দেবে।ভাববাদী চিন্তায় মশগুল থাকতে ভালবাসে কবিরা--শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে জীবনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে যারা পারিজাত ফুলের পকোড়া ভেজে খায়। কেউ যদি মুখের কথায় ভর করে আকাশ কুসুম রচনা করে সে দায় অন্যে বইবে কেন?কথা বলে কোনোদিন মনে হয়নি দাদার প্রতি কোনো অভিমান অনুদির মনের মধ্যে লালিত হচ্ছে। দাদার সঙ্গে যাই হোক ছোটবেলা থেকেই অনুদি আমাকে বেশ ভালবাসত।বীণাপাণি গার্লস স্কুলের ইতিহাসের দিদিমণি।বিয়ে-থা করেনি 'জীবনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে' কবিতা লেখে। খান পাঁচেক বই বেরিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা বের হয়।
--শুনেছি গ্রাজুয়েশন করেছিস আর পড়লি না কেন?
--কলকাতায় গিয়ে পড়া বুঝতেই পারছো--এখন কি সে অবস্থা আছে?
--চাকরি-বাকরির চেষ্টা করছিস না?মাসিমা আছেন,তোর ভবিষ্যৎ আছে।
--চাকরি পেতে গেলে যে ক্যালি দরকার,আমার তা নেই।
--কি করে বুঝলি,চেষ্টা করেছিস?
--বার কয়েক ভাইবা-তে চান্স পেয়েওছিলাম।
--তাহলে আটকালো কোথায়?
--যা সব প্রশ্ন করে তার মানেই বুঝতে পারিনা। চাকরি করতে চাও কেন? কি বলবো ? চাকরি নাহলে বিয়ে হবে না।
রিনরিন করে হেসে ওঠে অনুদি,তোর যা চেহারা চাকরি না করলেও অনেক মেয়েই তোকে বিয়ে করবে।
মেয়েদের এত নির্বোধ ভাবিনা অনুদিকে বললাম, এসব শুনে শুনে এখন আর ভাল লাগেনা।
--কি ভাল লাগে তোর?
--এইযে তোমার সঙ্গে কথা বলছি বেশ ভাল লাগছে।
অনুদি গম্ভীর হয়ে গেল।চুপচাপ হাটতে থাকি এক সময় বলে,তুই আমার দুটো কাজ করে দিবি?
আমাকে দেখলে কি সবার কাজের কথা মনে পড়ে? ভাবে হয়তো বেকার হাবাগোবা টাইপ একটু খাটিয়ে নেওয়া যাক।
--কি কাজ খুব শক্ত কিছু নয়তো?
--তা একটু শক্ত বইকি? মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। আমাকে একটু এগিয়ে দে।
--কি কাজ বললে না তো?
--তুই অন্য রকম সহজ সরল।
অনুদি কি দাদার কথা ভেবে বলল?বললাম, বোকাও বলে অনেকে।
--আমি তা মনে করিনা।
--বললে নাতো কি কাজ?
--হ্যাঁ কাল বিকেলে আয় তখন বলবো। বাড়ি চিনিস তো?
বাসায় ফিরে ঘরে এসে বসলাম।লাইট জ্বালতে ইচ্ছে করল না।মলিনাবৌদির ব্যাপারটা পাঁকের মত গায়ে জড়িয়ে আছে।বোজোদির কথা মনে পড়ল।চোখ বুজে বসে আছে আমি যেতেই চোখ খুলে বলল,গোসাইয়ের ধ্যান করতেই গোসাই হাজির।
--বোজোদি তুমি এখানে একা একা থাকো তোমার ভয় করে না?
--একা কোথায় সে আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। 
--সে কে?
--আমার মনের মানুষ,যার সাধনায় পড়ে আছি।
--তুমি কার সাধনা করো?
ব্রজবালা আমার চিবুক ছুয়ে গান ধরল,তুমি আমার জীবন মরণ/তুমি আমার সাধন ভজন/আমার ঠাই তোমার ছিরি চরণে।
--ধ্যেৎ।আমি ত মানুষ।মানুষের কেউ সাধনা করে নাকি?
খিল খিল করে হেসে উঠল বোজোদি।হাসি থামিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমার বলদা গোসাই।মানুষের সাধনা করব কেন?তুমার মধ্যে আমার মনের মানুষের সন্ধান পেয়েছি গো।
--চোর ডাকাত আসলে তোমাকে মনের মানুষ রক্ষা করতে পারবে?
--কি চুরি করবে?আমার আছে কি?সব তো তুমার জিম্মায় দিয়ে ফেলেছি গুসাই।
--তুমি মেয়ে মানুষ--।
--বুঝিছি গুসাই তুমার কিসির ভয়?বেড়া ভেঙ্গে শরীর পেতি পারে কিন্তু মনের বেড়া ভাঙ্গবে সাধ্য কার,সে চাবি গুসাই ছাড়া কেউ খুলতে পারবে না গো।
বোজোদি এক মুহুর্ত কিভাবে তারপর বলল,দ্যাখো গুসাই শরীর নষ্ট হয় না,নষ্ট হয় মন।মন নষ্ট হলে তা ধুয়ে আর সাফ করা যায় না।
--তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারি না।
--তুমার বুঝে দরকার নাই।যতদিন বাঁচি শুধু একবার দেখা দিয়ে যেও,তাহলিই আমার শান্তি।বুকের কাপড় সরিয়ে আমার মাথা চেপে ধরল।শরীর নষ্ট হয় না নষ্ট হয় মন।কথাটা ভেবে এই মুহুর্তে মনের গ্লানি কিছুটা দূর হয়।জানোয়ারগুলো বোজোদির শরীর ছিড়ে খুড়ে খেয়েছে কিন্তু কে জানে মনটাকে স্পর্শ করতে পারেনি হয়তো?
ঘরে ঢুকে লাইট জ্বেলে মা জিজ্ঞেস করে,অন্ধকারে বসে কি ভাবছিস?সারাদিন কোথায় থাকিস?লোকজন এসে ফিরে যায়।
--কে এসেছিল?
--অতুল এসেছিল ওর বউ বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। ভেবেছিল এখানে এসে থাকতে পারে।
--রেবতিবৌদি চলে গেছে?
--বেশ মেয়েটা কেন যে চলে গেল? বিজুর যা মুখ একটু মানিয়ে চলতে কি হয়?
বৌদির কথাটা মনে পড়ল,আমি তো মানুষ।কোথায় গেল কার পাল্লায় পড়ল কে জানে?বাবা বলত এই সমাজে একা মেয়েমানুষ নিরাপদ নয়।
[+] 9 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - by kumdev - 17-04-2020, 08:46 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)