Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব
#18
।।৭।।


       রেবাবৌদি একাই সামলাচ্ছে সংসার।মাকে কোন কাজ করতে দিচ্ছেনা। কত আর বয়স হবে সমবয়সী কি এক-আধ বছরের বড়। মায়ের চুল বেধে দেওয়া সন্ধ্যে বেলা মায়ের সঙ্গে বসে টিভি দেখা।সব দিকে নজর।বিজুমাসী দেখতে পারেনা। আমার ঘরে  ডায়েরি নিয়ে বসেছি। বলেন্দ্র মোহনকে চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। সন্তপর্নে ডায়েরির পাতা।শুকনো পাতার মত কড়কড়ে হলদেটে হয়ে এসেছে কাগজ।...আমি বলেন্দ্র মোহন লোকের কাছে নাম বলা। গ্রামের লোকজন বলত ছোট কর্তা।....লক্ষ্মীর অঢেল কৃপা থাকিলেও সরস্বতীর সহিত খুব একটা বনিবনা ছিল না। বৌ-ঝিরা আমার উৎপাতে তটস্থ। সেজন্য সকাল সকাল আমার বিবাহ দেওয়া হইল। যাহা আছে তাহা হইতে  যাহা নাই তাহার প্রতি ছিল বেশি ঝোঁক। ....শুনিয়াছি আমার বউ দামিনী নাকি হাইকলেজের গণ্ডি পার হইয়াছে। কিন্তু আমার কাছে মেয়ে মানে মেয়ে....রমণের পাত্রী বলিয়াই তাহাদিগকে বলা হয় রমণী।....পুকুর ধারে জঙ্গলের মধ্যে বসিয়া থাকিতাম  জলকেলি রত রমণীদের অনাবৃত অংশ কখন একপলক দেখিতে পাইবো? মেয়েদের শরীর দেখিতে এবং  ছানিতে খুব আমোদ পাইতাম। ধরা পড়িলেও কাহারো বাবার নিকট অভিযোগ জানাইবার মত দুঃসাহস  ছিল না।...বাবা গজেন্দ্র মোহন ছিলেন ডাকসাইটে জমিদার।...গজেন্দ্র মোহনের এককথা না দেখাইলে বলা দেখিবে কি রূপে? এই অকাট্য যুক্তির সামনে অসহায় হইয়া অধোবদনে বাড়ি   ফিরিয়া যাইতে হইত....একদিনের ঘটনা  মনে আছে...ঘরে ঢুকিতে   আমার পতিব্রতা স্ত্রী দামিনী চাপা গলায় বলিয়াছিল, লজ্জা  করেনা  আপনার অন্যের বউ-ঝিদের বিরক্ত করতে.... সেই সময় গজেন্দ্র মোহন পাশ দিয়া যাইতেছিলেন....বউমা তুমি মেয়েছেলে পুরুষদের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাইবার কি আবশ্যক....।"
বাবা কথায় কথায় কেন বলতেন "রক্তের দোষ" এখন বুঝতে পারছি। টিভি দেখতে দেখতে উঠে চা নিয়ে এল রেবতী  চা  নামিয়ে  রেখে দাঁড়িয়ে আছে জিজ্ঞেস করি,কিছু বলবে?
ডায়েরির পাতা উলটে দিয়ে বলে, সারাক্ষণ খালি বই মুখে বসে থাকা।ঘরে আরো  লোক আছে সেদিকে একটু খেয়াল করতে নেই?
আর একটু হলে ছিঁড়তো, ডায়েরিটা সরিয়ে রেখে রেবতীর দিকে তাকালাম।জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ির জন্য মন কেমন করছে?
--বাড়িতে আছে টা কে শুনি?
--কেন অতুলদা।
--ঐ ধ্বজভঙ্গর কথা বোলো না ঠাকুরপো। জীবনটা আমার ঝালাপালা করে দিল।
বুঝতে পারলাম বেশিক্ষণ কথা বললে আর বেশি বিষ উদ্গার হবে। ডায়েরিটা তুলে রেখে বেরিয়ে পড়লাম।কদমের মত রোয়া উঠেছে মাথায়। কিছুক্ষণ লাইব্রেরিতে  কাটিয়ে বাড়ি ফিরছি ভোলা এসে বলল, মনাদা তোমাকে কল্যানদা ডাকছে।ভোলা সব সময় পার্টি অফিসে কল্যানদার ফাইফরমাশ খাটে। আশা যদি কল্যানদা একটা চাকরি জুটিয়ে দেয়। পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকে দেখলাম, দশ-বারোজন কমরেড বসে আছে আর কমরেড কল্যানদা ক্লাস নিচ্ছেন।আমাকে দেখে ইঙ্গিতে বসতে বললেন। 
কমরেড শুধু কোয়াণ্টিটি দিয়ে হবেনা  কোয়ালিটি চাই। শিক্ষিত ছেলেদের বেশি বেশি করে পার্টির ছত্রছায়ায় আনতে হবে। তোমরা হচ্ছ ভ্যানগার্ড অফ দি পিউপল। যথেষ্ট বড় হয়েছে পার্টি, বড় হলেই হবেনা হেলদি হতে হবে। মনোজের মত ছেলেরা অনেক কিছু করতে  পারে। অঞ্চলে ওর বাবার একটা সুনাম ছিল। মণিদা আমাদের পার্টির ওয়েল উইশার ছিলেন। 
দাতে যেন কাঁকড় বিধল,বাবা ওয়েল উইশার?
হঠাৎ আমার দিকে নজর পড়তে কল্যানদা  বলেন, মনা তুই কিছু বলছিস নাতো?
--দাদা আমি কিছু বুঝতে পারি না।
কল্যানদার মুখে গর্বের হাসি ফোটে বলেন, মার্ক্সবাদ আমি একদিনে আয়ত্ত করিনি। দীর্ঘ অনুশীলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। যোগাযোগ রাখিস ধীরে ধীরে আয়ত্ত হবে। হাবু সবাইকে চা দে।
ভাড়ে চা দিল চুমুক দিতে থাকি।কল্যাণদা বলল,মনাকে দেখতে একেবারে চৈতণ্যদেবের মত লাগছে,কপালে তিলক দিলেই হল।এদেশে চৈতণ্যদেব প্রথম মাস মুভমেণ্ট করেছিলেন।বুঝতে পারি ন্যাড়া মাথার জন্য বললেন।চা শেষ করে বললাম,কল্যাণদা আসি?
বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া করে ডায়েরি নিয়ে বসলাম।"মনি আমাদের বংশে প্রথম গ্রাজুয়েট। কলেজের পরীক্ষায় পাশ করিয়া কলকাতায় চলিয়া গেল পড়িতে,বাবার আপত্তি ছিল কিন্তু দামিনীর জেদের নিকট হার মানিতে হইয়াছিল। মনি বি. এ. পাস করিলো এবং কাহাকেও না বলিয়া  একটা হাঘরে কন্যাকে বিবাহ করিল....বাড়ী  আসিতে গজেন্দ্র মোহনের সাফ কথা হয় ওই মেয়েকে ত্যাগ করো অন্যথায় এই বাড়ী-সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করিতে হইবে।দামিনী কত হাতে পায়ে ধরিল কিছুতেই গজেন্দ্র মোহন টলিলেন না।....মনির মাথায় কিছু নেই...না হইলে একটা মেয়ের জন্য এই বিশাল সম্পত্তি কেউ কদাপি ত্যাগ করে?"
হাঘরে কন্যা আমার মা।তার মানে ঠাকুরদা মাকে ত্যাগ করতে বলেছিলেন।রাত বাড়ছে চোখের পাতে বুজে আসছে। তবু ডায়েরি হতে মন ফেরাতে পারছি না।রাত গভীর হতে থাকে দূরে কোথাও শিয়াল ডাকছে। "......সারারাত দামিনী কাঁদিল ...কামার বউয়ের বিশাল গামলার মত পাচ্ছা আমাকে টানিতেছে... জানলা  দিয়ে  উকি  মারিয়া  দেখিলাম ..কামার বউ একা কাপড় হাঁটুর উপর উঠিয়া গিয়াছে...ঈশ আর একটু উঠিলে  রসের খনি উন্মুক্ত হইয়া যাইত.... হুড়কো খুলিয়া বুকের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িলাম.....ছোট কত্তা ...কি করেন...দম বের হয়ে আসছে...কামারের আসবার সময় হইছে...আমি হাসিয়া বলিলাম,প্রাণের মায়া থাকিলে সে হারামজাদা পুনরায় গ্রামে প্রবেশ করিবেনা।...কামার বউরে জাটাইয়া ধরিয়া ঠাপাইতে লাগিলাম..।"
আমার বুকের মধ্যে হাঁসফাঁস করছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা ভারি বস্তার মত জিনিস যেন বুকের উপর।কে বলেন্দ্রমোহন নাকি? প্রাণপণে সরাতে চেষ্টা করছি। মুখ দিয়ে বোধহয় গোঁগোঁ শব্দ বের হয়ে থাকবে .....ঘুম ভেঙ্গে গেল।পড়তে  পড়তে  ঘুমিয়ে  পড়েছিলাম?
অন্ধকারে কে যেন ফিসফিস করে বলল,চুপ! শব্দ কোরনা,আমি!চুপচাপ শুয়ে থাকো ভয় নেই।
বুঝলাম রেবতী বৌদি।বললাম বৌদি তুমি?
রেবতী বৌদি নীচে হয়ে মুখ দিয়ে আমার ঠোট কামড়ে ধরল।উর্ধাঙ্গ অনাবৃত পিঠ ভিজে গেছে ঘামে, কোমরের কাছে সায়াটা দড়ির মত পাকিয়ে আছে।ভারি বুক দুটো চেপে বসেছে আমার গলার কাছে। চেতনা ফিরতে শরীরটা যেন লোহার মত শক্ত হয়ে গেল।নিজেকে বিপুলভাবে আন্দোলিত করতে করতে রেবা বৌদি ফিস ফিস করে বলল,আমি জীবনে কিছু পাইনি.. আমারে নিরাশ কোর না.শক্ত হয়ে আছো কেন...তাল দেও....ক্যাবলা  কোথাকার ...তুমি পুরুষ মানুষ না।
--অতুলদা...।
--তার কথা ছাড়ান দেও।দাড় করাতে পারে না।আমি তো একটা মানুষ...করো--করো ..হ্যা   এইভাবে....এইভাবে   ....মনা তুমি কি সুখ দিচ্ছ...আঃ আআআ আআ ...উরে...উরে...কি সুখ...কি সুখ... আমার বুকের উপর নেতিয়ে পড়ল রেবাবৌদি।
বেলায় ঘুম ভাঙ্গল।চোখেমুখে জল দিয়ে বসে আছি চুপচাপ।রেবাবৌদি চা নিয়ে এল।ভোরবেলা স্নান করে মার একটা  তুতে রঙের শাড়ি পরেছে,আধভেজা চুল কালো মেঘের মত ছড়িয়ে আছে পিঠের উপর।ওর চোখের দিকে  তাকাতে  পারছিলাম না।চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে চাপা গলায় বলল, এমন কিছু চুরি-ডাকাতি করনি যে অমন চোর-চোর ভাব করে থাকতে হবে।কি হল আমার দিকে তাকাও তুমি ত জোর করে কিছু নেওনি। আমি যেচে তোমাকে দিয়েছি। রেবাবৌদির গলা  ধরে  এল, কেন দেবো না? চিরকাল ঐ ধ্বজভঙ্গকে নিয়ে থাকতে হবে?কতকাল পরে কলসী ভরে নিলাম।রেবাবৌদি চলে গেল।
 ঢলঢলে ভরা যৌবন অথচ....? রেবাবৌদির অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হল। মনে পড়ল বাবা বলতেন, রক্তের দোষ! তাই কি? কিন্তু আমি তো বলেন্দ্র মোহনের মত জোর খাটাই নি।ঘরে বসে দেখতে থাকি মায়ের সঙ্গে সংসারের কাজ করে চলেছে স্বাভাবিক ছন্দে।আচার আচরনে কাল রাতের কোনো ছাপ নেই।
অতীত স্মৃতি হাতড়াতে থাকি।আমার বাবা অত্যন্ত শান্ত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ হিসেবেই দেখেছি।আজ জানলাম সব সম্পত্তি জমিদারীর মায়া ত্যাগ করে একদিন মাকে নিয়ে গৃহত্যাগী হয়েছিলেন।ঠাকুর্দার চরিত্রের কোন ছাপ পড়েনি বরং  ঠাকুরমা দামিনী তাকে বেশী প্রভাবিত করেছিল।  
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - by kumdev - 17-04-2020, 03:49 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)