Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব
#13

 ।।৬।।



        বাড়ী  বাড়ি ঘুরে কার্ড বিলি শেষ করেছি খান কয়েক কার্ড বাকি। কলকাতায় গিয়ে বাবার অফিসেও নেমতন্ন সেরে এসেছি। দময়ন্তীর সঙ্গে পথে দেখা,কিছু বলার আগেই বলল, আমাকে কার্ড দিতে হবেনা, আমি যাবনা।
খুব খারাপ লাগল বললাম, খুব বিরাট কিছু আয়োজন করিনি কিন্তু যতটুকু করছি আন্তরিকভাবেই করছি।
--রাগ কোরনা, এরকম অবস্থায় কারো বাড়ী গিয়ে একপেট খাওয়া আমার ভাল লাগে না। মাসীমাকে বোলো পরে একদিন যাবো।  
--সে তুমি যা ভাল বোঝো করবে।
দময়ন্তী অনেক করেছে সে জন্য রাগ হলনা।এক সময় বছর খানেক একসঙ্গে পড়েছি তাও যা করেছে কোনোদিন ভুলব না।
অবশিষ্ট কার্ডগুলোয় চোখ বোলাতে দেখি বিজয়া। ওহো ছেড়ে এসেছি বিজয়ামাসী মানে মায়ের দুরসম্পর্কের মামাতো বোন। যোগাযোগ তেমন নেই।মার কাছে গল্প শুনেছি মহিলা খাণ্ডারনি টাইপ।আবার পিছন দিকে যেতে হল। বেড়া  দিয়ে  ঘেরা দোচালা টিনের বাড়ি। বেড়ার দরজা ঠেলে ঢুকতে গিয়ে কানে এল দুই মহিলার গলা। একটি বাজখাই আর একটি শান্ত।
বাজখাইঃফের মুখে মুখে চোপা? যমের অরুচি বাজা মাগি--মর মর।
শান্তঃ মরার বয়স তো আপনার ভরা যৌবন আমার  কোন দুঃখে মরতে যাবো আমি?
বাজখাইঃ তাহলে আশনাই করতে সুবিধে খানকি মাগি কোথাকার--।
শান্তঃ সকাল বেলা মুখ খারাপ করবেন না বলে দিচ্ছি।
বাজখাইঃ কেনরে তোর ভয়ে?
বিজয়ামাসির ছেলে অতুলদার বড়বাজারে কাপড়ের দোকান আছে বলে ভাল ঘরে  বিয়ে দিয়েছিল। পরে জানাজানি হয় দোকান নিজের  নয় কাপড়ের দোকানের মাইনে করা কর্মচারি। তাই নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। বৌদির ভাইরা ষণ্ডাগণ্ডা টাইপ বলেছিল হেপো  রোগীটাকে  মেরে  বোনের আবার বিয়ে দেবে।অতুলদার বুকের হাড়পাঁজরা বের করা পেটটা ব্লাডারের মত ফুলে আছে  খাটাখাটনি করলে ফ্যস ফ্যস হাঁপাতে থাকে।    
ভিতরে ঢুকবো কিনা ভাবছি নাকি ফিরে যাবো? মায়ের আদেশ সবাইকে কার্ড দিবি তোর বাবার মঙ্গলের কথা  মনে  রাখবি বাবা।গলা খাঁকারি দিয়ে হাঁক দিলাম, অতুলদা-আ---।
ভিতরে বচসা থেমে গেল।বিজয়ামাসি কর্কশ গলায় বলেন,ক্যারা ভর দুপুরবেলা চিল্লাচিল্লি করে?
--আমি হিজলতিলির মনা।
মাসী বেরিয়ে এসে আমাকে আপাদ মস্তক দেখে বলল,তুই হেমের ব্যাটা না? কে মরল রে?
--তোমাকে বললাম না মণিমেশোর কথা? অতুলদা বেরিয়ে এসে বলে। কলকাতা যাবে বলে তৈরি হয়ে এসেছে।
--অ।কবে মল্লো র‍্যা?হেমাটা বেধবা হয়ে গেল।
দরজার আড়াল থেকে একটা মুখ সরে গেল। ডাগর চোখ মেলে আমাকে দেখছিল। অতুলদা বলল, চলিরে মনা ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। তুই এবার পরীক্ষা দিয়েছিস না?
--হ্যাঁ ,যেও অতুলদা মা বারবার করে বলে দিয়েছে।
--হ্যা-হ্যা তুই বস আমি আসি।
অতুদা চলে গেল। মাসিকে বললাম, আমি আর বসবো না অনেক কাজ পড়ে আছে।
--হ্যাঁরে হেমের আর একটা ছেলে কি যেন নাম? সে কোথায়?
--সরোজ বিদেশে থাকে আসার অসুবিধে আছে।আসি--তোমরা যেও।
বাড়ী  থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেছি কানে এল,ঠাকুর-পো। বেড়ার ধারে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অতুলদার বউ রেবতী। সত্যি ভরা যৌবন পানের মত মুখাকৃতি ঢলঢলে চোখ। এগিয়ে গিয়ে বললাম, মাসিকে নিয়ে আসা চাই কিন্তু বউদি।
--তোমার মাসির কথা  জানিনা। তুমি যখন বলেছ আমি নিশ্চয়ই যাবো।
বাড়ি ফিরে মার মুখে শুনলাম, দময়ন্তী এসেছিল একটু আগে। এক কাপ চা ছাড়া কিছু খায়নি। অনেক্ষন ছিল মায়ের সঙ্গে গল্প করেছে। মা খুব খুশি,অত বড় ঘরের মেয়ে একফোঁটা দেমাক নেই। খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল কিভাবে  কি করছি। বড় লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে।
দময়ন্তী এসেছিল? অদ্ভুত লাগে ওর আচরণ। সবাই ওকে ভাল বলে তাহলে বাবা-মার সঙ্গে অমন আচরণ করে কেন?কি ছটফটে জলি মেয়ে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙ্গাচোরা।
আত্মীয়স্বজন আসতে  শুরু করেছে।রেবতী বৌদিকে নিয়ে বিজয়া মাসিও এসে পড়েছে। অতুলদা কলকাতায় গেছে  সন্ধ্যেবেলা আসবে। দুহাতের অনামিকায় কুশাঙ্গুরীয় পরে পুরোহিত মশায়ের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করছি। রান্না ঘরের দায়িত্ব সামলাচ্ছে রেবতী বউদি।একফাকে আমাকে কালো চা দিয়ে গেছে।মা অতিথি আপ্যায়ন করছে। সুগতদা-রিনাবোউদি অনুদি  আশুস্যর পাড়ার অনেকেই এসেছেন।বাবার অফিসের কলিগরা ওবেলা আসবে। পিণ্ডদানের সময় পুরোহিত জিজ্ঞেস করেন,সাত পুরুষের নাম জানা আছে?
মা এসে বলল, চার পুরুষ জানা আছে।
--ব্যস ব্যস ওতেই হবে। যথা নামে দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি।
বরেনদা এসেছিল,যাবার আগে বলল,পড়াশুনাটা ছাড়িস না।
খাওয়া দাওয়া সারতে সারতে বেশ রাত হল। হ্যাজাক এনে রাখা হয়েছিল বিদ্যুতে ভরসা নেই।আত্মীয় স্বজন কিছু রাতে ছিল তারাও পরের দিন বিদায় নিল একে একে।অতুলদা রাতে এসেছিল বাড়ীতে কেউ নেই রাতেই চলে গেছে।  দুপুর বেলা বিজয়া মাসি ফেরার তোড়জোড় করছেন মা বলল, বিজুদি রেবাকে কদিন আমার কাছে রেখে যাও।কতকাজ পড়ে আছে একা-একা--।আগে তো কোনদিন একা থাকিনি।তোমার অসুবিধে হবে?
--নাহ অসুবিধের কি আছে।তবে ঘরে তোর আইবুড়ো দামড়া আছে,একটু চোখে-চোখে রাখিস। বউমার আবার হাড়ীমারা অভ্যেস আছে।
মা একটু ইতস্তত করে কি বলবে বুঝতে পারেনা। এই ধরনের আলাপে অভ্যস্ত নয়।বিজয়া মাসি বলেন, বিষের পুটুলি নিয়ে ঘর করছি, কদিন থাক বুঝতে পারবি কি জ্বালায় জ্বলছি।তোরা কেবল আমার দোষ দেখিস।
মাসিও চলে গেলেন,পিছন থেকে ভেংচি কাটে রেবতী।পুটুলির কথায় মনে পড়ল মলিনাবোউদির কথা। পুটুলিটা ফেরত দেওয়া হয়নি।কাজ মিটেছে এবার একদিন সময় করে পুটুলিটা দিয়ে আসতে হবে।আর একটা কৌতূহল আমাকে টানছে।অবসর পেয়ে বাবার আলমারি ঘাটতে ঘাটতে একটা পুরানো ডায়েরি পাওয়া গেল।অনেক দিনের কৌতূহল কি আছে ওখানে? মনে হল  ঠাকুরদা বলেন্দ্র মোহনের ডায়েরী। বাধানো মোটা পাতাগুলো লালচে হয়ে এসেছে। হয়তো আমাদের বংশের পুরানো কথা কিছু জানা যাবে। জ্ঞান হওয়া অবধি পুর্ব পুরুষ বাবা-মা ছাড়া আর কাউকে দেখিনি,কেবল তাদের কথা শুনেছি।ওদের কাউকে বলা হয়নি বাবার নিষেধ ছিল।
[+] 11 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - by kumdev - 17-04-2020, 12:00 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)