Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব
#12
।।৫।।


                পরীক্ষার জন্য লাইব্রেরিতে যাওয়া হয়নি। ওষুধের জন্য খরচ প্রভাব ফেলেছে সংসারে। দাদার সঙ্গে অনেক কষ্টে যোগাযোগ করেছিলাম। খুব দুঃখ করলেও দাদার পক্ষে এ সময় আসা অসম্ভব,চেষ্টা করছে যে করেই হোক টাকা পাঠাবার। মনটা ভাল নেই সন্ধ্যেবেলা ভাবলাম লাইব্রেরিতে ঘুরে আসি। পথে অনুদির সঙ্গে দেখা জিজ্ঞেস করল,হ্যাঁরে মনু তোর বাবা কেমন আছেন?
--ঐএক রকম।
--মেশোমশায়ের কথা তোর দাদা জানে?
--ফোন করে বলেছি।
--তোর পরীক্ষা কেমন হল?
--হল এক রকম।
--দরকার হলে বলিস।আসি রে--।
অনুরাধাদি শিক্ষিকা সম্ভবত কলেজ থেকে ফিরছিল। বাবার খোঁজখবর নিল ভাল লাগল। লাইব্রেরিতে ঢুকতে বরেনদা বললেন, কিরে কোথায় ছিলি এতদিন? তোর বাবা অসুস্থ বলিস নিতো?
--পরীক্ষা ছিল।
--ডাক্তার বাবুর মেয়ের কাছে শুনলাম মনিদার শরীর ভাল নেই।
--কে দময়ন্তী?
--ডাক্তারি পড়লেও সাহিত্যের প্রতি বেশ ঝোঁক, প্রায়ই বই নিয়ে যায়।
একটা বই নিয়ে লাইব্রেরি হতে ফিরছি একটা সাইকেল রিক্সা ঘ্যাঁচ করে পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিক্সায় বসেছিলেন কল্যাণঘোষ জিজ্ঞেস করলেন,তুমি মনিদার ছেলে না?
কমরেড কল্যাণ ঘোষ যার অনুগ্রহ বা নিগ্রহ অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন তিনি আমাকে দেখে রিক্সা থামিয়ে আলাপ করছেন ভেবে অবাক লাগে।
--হ্যাঁ আমি মনোজ।
--কি করো?
--বি এ পরীক্ষা দিলাম। 
ইঙ্গিত পেয়ে রিক্সা চলতে শুরু করে। পিছনে বাইক নিয়ে কেলো আমাকে আড়চোখে দেখে রিক্সাকে অনুসরণ করে।  
বাসায় ফিরতেই মা উত্তেজিত ভাবে বলে,মনু একবার ডাক্তারকে খবর দে তোর বাবা কেমন করছে।
হায় ভগবান ঐ অবস্থায় ছুটলাম ডাক্তার সেনের চেম্বারে। ডাক্তার সেন হাসপাতালে রেফার করলেন। দময়ন্তী নীচে নেমে এসেছিল বলল, তুমি ন্যাশনালে নিয়ে এসো,আমি থাকবো।
অনেক ধকল করে বাবাকে নিয়ে ন্যাশনালে পৌছালাম, দময়ন্তী আগেই ব্যাবস্থা করেছিল ভর্তি করতে অসুবিধে হল না।পরের দিন মাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে,মাকে দেখে বাবার মুখে হাসি ফোটে, জিজ্ঞেস করেন,কেমন আছো?
--এ সময় যেমন থাকার। উদাসীন গলায় মা বলে। বাবার হাত চেপে ধরে নিচু হয়ে মা জিজ্ঞেস করে, তুমি কিছু বলবে?
বাবা আড়চোখে আমাকে দেখলেন। মনে হল বাবা কিছু বলতে চান।আমি একটু নিচু হলাম,তোকে অনেক গালমন্দ করেছি মাকে দেখিস।
--ও আবার কি কথা? মা বলে।
বাবা চোখ বুজে হাসলেন,তারপর চোখ খুলে বললেন,এবার যাও অনেকদূর যেতে হবে।
যে বাবার কাছে কত পিটুনি খেয়েছি সেই বাবার কথা ভেবে খুব অসহায় বোধ করি।কাছ থেকে বোঝা যায় না দূর থেকে বোঝা যায়, বরেনদার কথাটা মনে পড়ল।মাকে দেখলাম কেমন নির্বিকার চুপচাপ আমার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে।বাসায় ফিরে রান্না করল খেতে দিল।মা একবারও বাবার কথা তুলল না।বললাম,মা কাল তোমার যাবার দরকার নেই।
--তা বললে কি হয়।তুই চৌকির নীচ থেকে টিফিন কেরিয়ারটা বের করে রাখিস।কি সব ছাইপাশ দেয়।
বুঝলাম কাল মা খাবার তৈরী করে নিয়ে যাবে।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে অবাক হলাম দময়ন্তীকে দেখে। সাত সকালে দময়ন্তী আমাদের বাড়িতে কি মনে করে?
দ্রুত ঘরে ঢুকে একটা জামা গায়ে দিলাম।ঘরদোরের যা অবস্থা কোথায় বসতে বলি।বেরিয়ে বললাম,এসো।
--বসব  না তুমি আমার সঙ্গে চলো।
--কোথায়?
মা হয়তো অনুমান করেছে কিছু একটা আমাকে বলল, মনু তুই যা।
ভূতগ্রস্তের মত দময়ন্তীকে অনুসরণ করি। হাসপাতালে পৌঁছে বুঝতে পারি কি সর্বোনাশ হয়ে গেছে সাদা  কাপড়ে  ঢেকে রেখেছে বাবাকে। দময়ন্তী আমার সঙ্গে ছিল সারাক্ষণ আশপাশে তাকিয়ে দেখি দময়ন্তী নেই। নিজেকে ভীষণ একাকী বোধ করি। একটু আড়ালে  গিয়ে  নিজেকে সামলাতে পারিনা ফুঁপিয়ে কেদে ফেললাম। কে যেন একটা রুমাল এগিয়ে দিল তাকিয়ে দেখলাম দময়ন্তী।
--ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেদো নাতো--কথায় কথায় কান্না পছন্দ করিনা।
কান্না থেমে যায়। অবাক হয়ে ভাবি কি বলছে কি বাবা মারা গেলে কাদবো না? 'তোমার পছন্দ-অপছন্দে কি এসে যায়' কথাটা  ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারিনা।
অক্লান্ত ধারায় বয়ে চলেছে রুপাই। রুপাইয়ের পাড়ে বাবাকে দাহ করা হল।বেচে থাকলে বোঝা যায়না। একজন যে এতখানি শূন্যতা উপহার দিতে পারে জানা ছিলনা।দুটো ভাই আমরা ,দাদার দিনরাত্রি  সময়টুকু আজ আমাদের থেকে আলাদা।বাবার শরীর ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল,চিতায় জল ঢেলে  পিছনে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলাম শ্মশান ছেড়ে। দাদার বন্ধু সুগতদা আমার সঙ্গে ছিলেন ছায়ার মত সারাক্ষণ। বাবার অফিস-কলিগ কেউ কেউ এসেছিলেন।তাদের কাছে শুনলাম,মণিদা ছিলেন অন্য রকম। মা কাঁদেনি বোবা দৃষ্টি মেলে কি যেন ভাবছে যেন ডুবে আছে কোন অচিন জগতে।
অফিস কলিগদের সাহায্য মায়ের পেনশন ধার্য হল সাড়ে-ছ হাজার টাকা।এই খড়কুটো আমাদের কাছে সাত রাজার ধন মানিক। দাদার পাঠানো টাকা আসেনি। কদিন পর কল্যাণ ঘোষ এসেছিলেন।সঙ্গে ছিল শিবে আর কেলো।আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,মণিদা ছিলেন অজাত শত্রু, আজীবন সংগ্রামী। তারপর কেলোকে ইশারা করতে শিবে কাঁচকলার ছড়া আর চাল নামিয়ে রাখল। আমার দিকে ফিরে বললেন, আজ আসিরে। কাজ মিটে গেলে একবার আসিস পার্টি অফিসে।মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আসি বউদি।
 তারপর মোটরবাইক ফটফটিয়ে সবাই চলে গেল।
জীবনের উপর দিয়ে এতবড় একটা ঝড় বয়ে গেল মাকে দেখলে মনেই হয়না। নির্বিকারভাবে ডুবে আছে দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততায়। বরেনদার কথা মনে পড়ল ভাল-মন্দ সব ঘটনাকে সহজভাবে দেখবি,কোন কিছুই আকস্মিক নয়। স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে। পরশুদিন ঘাট কাজ উঠোনে ত্রিপল দিয়ে চালা করা হয়েছে। মা বলল,মনা, লিস্ট মিলিয়ে সবাইকে বলবি,কেউ যেন বাদ না যায়।
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - by kumdev - 17-04-2020, 11:26 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)