14-04-2020, 05:25 AM
আচার অনুষ্ঠান নম নম করে সেরে ফেললেও, গায়ে হলুদ পর্ব নিয়ে সবাই খুব মাতামাতি করছে দেখে শত কষ্টেও হাসি পেয়ে গেল | কথায় বলে না "কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ", আজ কথাটার বাস্তবায়ন স্বচক্ষে দেখলাম | আজকের পর আর কোনোদিন এ বাড়ি আসব কিনা, কোনোদিন পুরোনো বন্ধু গুলোর, চেনা মানুষ গুলোর...... কলেজের দারোয়ান দাদা, মালি ভাই যারা পর হয়েও আপন ছিল, তাদের মুখ আর কোনোদিন দেখতে পাবো কিনা...... বিশেষ করে স্যার, অনিরুদ্ধ স্যার কে দেখতে পাবো কিনা জানি না | জানি না এই দম বন্ধ করা পরিস্থিতিতে কতদিন বেঁচে থাকব তবু, তবু আমার হাসি পেলো এদের আনন্দ করার বহর দেখে |
এ সবের মাঝে সময়ের নিয়মেই সন্ধ্যে নামল, ঘনিয়ে এলো অন্ধকার | সারা বাড়ি ঝলমল করে উঠলো আলোয়, ভরে উঠলো ফুলের সুবাসে | লাল বেনারসি, ফুলের মালা চন্দনে সাজিয়ে আমাকে বসিয়ে রাখা কোনো এক দোকান থেকে কেনা পুতুলের মত, যাকে নিয়ে যখন ইচ্ছে খেলা করা যায়...... আবার প্রয়োজন ফুরোলে ছুঁড়ে ফেলতেও কেউ দ্বিধা করে না | তবু এসবের মধ্যে বড় পাওয়া আমার মায়ের হাতের শেষ বালা জোড়া, মায়ের বাকি সমস্ত গয়না গুলো কাকীমা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন, যদি বিয়ের ঝঞ্ঝাটে আমি হারিয়ে ফেলি সেই অজুহাতে | বিয়ের পর নাকি দিয়ে দেবেন | যাই হোক, অবশ্য ওই সব নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই না | জীবনটাই যেখানে...... হুহু:, সেখানে গয়না দিয়ে কি করবো |
বিয়েটা আমার, তবু আমাকে নিয়ে বিশেষ কারোর মাথা ব্যাথা নেই | সবাই নিজের মতন আনন্দ করতেই ব্যাস্ত | হাজার লোকের ভিড়ের মাঝেও আমি একলা | খুব খুব ইচ্ছে করছে আজ একবার অনিরুদ্ধ স্যারকে দেখতে | যদি একবার, একবার যদি দেখতে পেতাম | ভাবতে ভাবতেই সামনে দেখি অনিরুদ্ধ স্যার, হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন | আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? ভালো করে চোখ রগড়ে দেখলাম, না: ভুল দেখিনি | উনি সত্যিই, কিন্তু কে বললো ওনাকে আজ? ভাবতে ভাবতে দেখি রুপসা দি কোথা থেকে এসে হাসি মুখে ওনার হাত ধরে আমার সামনে নিয়ে এলো |
- কেমন আছো? বিয়ে করছো, বললে না তো!!??
- না মানে...... আমি, আসলে এত তাড়াতাড়ি.........
- হুমমমমম | যাই হোক, শুভেচ্ছা রইলো |
- দ্যাখ আঁখি অনি কত বড় মনের মানুষ, তুই ওনার ক্ষতি করা সত্ত্বেও উনি তোকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে | অবশ্য তুই এসব বুঝবি না, পেটে তো বিদ্যা বুদ্ধি নেই | তুই ফাঁসাবি অনিরুদ্ধ কে!!!!! শখ কতো | ভাবলি কি করে তুই, যে রুপসা থাকতে তুই কিছু করবি!!!! নেহাত উনি ভালো মানুষ তাই কয়েকদিন তোর ঢঙে বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন | তবে স্ট্যান্ডার্ড বলে একটা কথা আছে না | হুহু: যা যা বিয়ে করে এখন বিদায় হ তো, আমাদের একটু শান্তি দে |
এতক্ষণ অনিরুদ্ধ স্যারের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলাম | মানুষের মধ্যে কত দ্রুত কত বড় পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা খুব কঠিন |
যে মানুষটা কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সৎ পথে চলার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কথা....... মাথা উঁচু করে বাঁচার কথা বলতো, যে একটা অপরিচিত মেয়ের থেকে কোনো কিছু আশা না করে নিজের দায়িত্বে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, নতুন করে বাঁচার আশা দেখিয়েছিলেন....... সেই মানুষটার এরুপ পরিবর্তন কানে শুনলে বিশ্বাস করা আমার পক্ষে অসম্ভব হত | সেই অনিরুদ্ধ স্যার যখন সবকিছু জানা সত্ত্বেও রুপসা দির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, প্রতিবাদ না করে যখন মৌনভাবে সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন, তখন আমার চেনা অনিরুদ্ধ স্যার আর আজকের অনিরুদ্ধ স্যারকে কেমন যেন মেলাতে পারছি না | তবে সবকিছু অচেনা ঠেকলেও ওনার ওই চোখ, ওই চোখ দুটো বড্ড চেনা | বড্ড কাছের, বড্ড আপন | উনি সবকিছু বদলে ফেললেও ওনার চোখ দুটো আজও বড্ড স্বচ্ছ | এইসব ভাবনার মাঝে রব উঠলো বর এসেছে, আর তো কিছুক্ষনের ব্যাপার, তাই পুরোনো কথা ভেবে লাভ কি | তাই স্যারের চোখে চোখ রেখেই বললাম ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য | আপনার ঋণ শোধ করা আমার মত সামান্য মেয়ের সাধ্য নয় | নিজের অজান্তে যদি কিছু ভুল করে থাকি, অশিক্ষিত অযোগ্য ভেবেই না হয় ক্ষমা করে দেবেন |
আমার কথার উত্তরে হয়তো উনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু বাজে সময় নষ্ট না করার অজুহাতে রুপসা দি ওনাকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে নিয়ে চলে গেলেন | হয়তো এটাই ঠিক, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে | অনিশ্চয়তার পথে যখন পা বাড়িয়েছি, সুতরাং ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে কি লাভ |
সময় যেন ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে, একটু পরেই সবাই এসে পড়লো আমাকে শুভদৃষ্টির জন্য নিয়ে যেতে | পিঁড়ি তে বসিয়ে, পান পাতায় মুখ ঢাকিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল | যে মানুষ মেয়েদের সম্মান করতে পারে না তার সাথে নাকি আবার শুভদৃষ্টি | এমন একজন নোংরা চরিত্রের দৃষ্টি নাকি শুভ, হুহু: | পান পাতার আড়ালে আমার চোখ দুটো খুঁজছিলো অন্য কাউকে | কই আসে পাশে দেখছি না তো, অবশ্য আমাকে নিয়ে চিন্তা বা মাথা ব্যাথা আমার কাছের লোক গুলোরই কোনোদিন ছিলো না, আর ওনার সাথে তো মাত্র দু'দিনের পরিচয় | তবু আজ আমার চোখ দুটো ব্যাকুল ভাবে ওনাকে খুঁজছে, পেতে চাইছে একান্ত আপন করে | কিন্তু হায়, হায় রে আমার অদৃষ্ট, কোনো দিনই নিজের ইচ্ছে মত কিছু পেলাম না, আর আজ........ হুহু: |
তবে খুব খুব মনে পড়ছে মা বাবা কে, হয়ত ওনারা থাকলে আজকের দিনটা আমার জীবনে অন্যরকম হত | আর পাঁচটা মেয়ের মত বিশাল ভাবে না হলেও অন্তত আমার খুশির খেয়ালটা থাকত | আমিও একটু আনন্দ করতে পেতাম | দেখতে দেখতে শুভ দৃষ্টিও হয়ে গেলো, ওই নোংরা লোকটার মুখের দিকে তাকাতে না ইচ্ছে হলেও এখন আমি নিরুপায় | বিয়ের কাজও শুরু হয়ে গেলো | না: আর কষ্ট হচ্ছে না, কিছু অনুভূত হচ্ছে না | চোখের জল যে আজ শুকিয়ে গিয়েছে, তারাও আজ বড় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত |
এ সবের মাঝে সময়ের নিয়মেই সন্ধ্যে নামল, ঘনিয়ে এলো অন্ধকার | সারা বাড়ি ঝলমল করে উঠলো আলোয়, ভরে উঠলো ফুলের সুবাসে | লাল বেনারসি, ফুলের মালা চন্দনে সাজিয়ে আমাকে বসিয়ে রাখা কোনো এক দোকান থেকে কেনা পুতুলের মত, যাকে নিয়ে যখন ইচ্ছে খেলা করা যায়...... আবার প্রয়োজন ফুরোলে ছুঁড়ে ফেলতেও কেউ দ্বিধা করে না | তবু এসবের মধ্যে বড় পাওয়া আমার মায়ের হাতের শেষ বালা জোড়া, মায়ের বাকি সমস্ত গয়না গুলো কাকীমা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন, যদি বিয়ের ঝঞ্ঝাটে আমি হারিয়ে ফেলি সেই অজুহাতে | বিয়ের পর নাকি দিয়ে দেবেন | যাই হোক, অবশ্য ওই সব নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই না | জীবনটাই যেখানে...... হুহু:, সেখানে গয়না দিয়ে কি করবো |
বিয়েটা আমার, তবু আমাকে নিয়ে বিশেষ কারোর মাথা ব্যাথা নেই | সবাই নিজের মতন আনন্দ করতেই ব্যাস্ত | হাজার লোকের ভিড়ের মাঝেও আমি একলা | খুব খুব ইচ্ছে করছে আজ একবার অনিরুদ্ধ স্যারকে দেখতে | যদি একবার, একবার যদি দেখতে পেতাম | ভাবতে ভাবতেই সামনে দেখি অনিরুদ্ধ স্যার, হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন | আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? ভালো করে চোখ রগড়ে দেখলাম, না: ভুল দেখিনি | উনি সত্যিই, কিন্তু কে বললো ওনাকে আজ? ভাবতে ভাবতে দেখি রুপসা দি কোথা থেকে এসে হাসি মুখে ওনার হাত ধরে আমার সামনে নিয়ে এলো |
- কেমন আছো? বিয়ে করছো, বললে না তো!!??
- না মানে...... আমি, আসলে এত তাড়াতাড়ি.........
- হুমমমমম | যাই হোক, শুভেচ্ছা রইলো |
- দ্যাখ আঁখি অনি কত বড় মনের মানুষ, তুই ওনার ক্ষতি করা সত্ত্বেও উনি তোকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে | অবশ্য তুই এসব বুঝবি না, পেটে তো বিদ্যা বুদ্ধি নেই | তুই ফাঁসাবি অনিরুদ্ধ কে!!!!! শখ কতো | ভাবলি কি করে তুই, যে রুপসা থাকতে তুই কিছু করবি!!!! নেহাত উনি ভালো মানুষ তাই কয়েকদিন তোর ঢঙে বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন | তবে স্ট্যান্ডার্ড বলে একটা কথা আছে না | হুহু: যা যা বিয়ে করে এখন বিদায় হ তো, আমাদের একটু শান্তি দে |
এতক্ষণ অনিরুদ্ধ স্যারের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলাম | মানুষের মধ্যে কত দ্রুত কত বড় পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা খুব কঠিন |
যে মানুষটা কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সৎ পথে চলার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কথা....... মাথা উঁচু করে বাঁচার কথা বলতো, যে একটা অপরিচিত মেয়ের থেকে কোনো কিছু আশা না করে নিজের দায়িত্বে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, নতুন করে বাঁচার আশা দেখিয়েছিলেন....... সেই মানুষটার এরুপ পরিবর্তন কানে শুনলে বিশ্বাস করা আমার পক্ষে অসম্ভব হত | সেই অনিরুদ্ধ স্যার যখন সবকিছু জানা সত্ত্বেও রুপসা দির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, প্রতিবাদ না করে যখন মৌনভাবে সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন, তখন আমার চেনা অনিরুদ্ধ স্যার আর আজকের অনিরুদ্ধ স্যারকে কেমন যেন মেলাতে পারছি না | তবে সবকিছু অচেনা ঠেকলেও ওনার ওই চোখ, ওই চোখ দুটো বড্ড চেনা | বড্ড কাছের, বড্ড আপন | উনি সবকিছু বদলে ফেললেও ওনার চোখ দুটো আজও বড্ড স্বচ্ছ | এইসব ভাবনার মাঝে রব উঠলো বর এসেছে, আর তো কিছুক্ষনের ব্যাপার, তাই পুরোনো কথা ভেবে লাভ কি | তাই স্যারের চোখে চোখ রেখেই বললাম ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য | আপনার ঋণ শোধ করা আমার মত সামান্য মেয়ের সাধ্য নয় | নিজের অজান্তে যদি কিছু ভুল করে থাকি, অশিক্ষিত অযোগ্য ভেবেই না হয় ক্ষমা করে দেবেন |
আমার কথার উত্তরে হয়তো উনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু বাজে সময় নষ্ট না করার অজুহাতে রুপসা দি ওনাকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে নিয়ে চলে গেলেন | হয়তো এটাই ঠিক, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে | অনিশ্চয়তার পথে যখন পা বাড়িয়েছি, সুতরাং ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে কি লাভ |
সময় যেন ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে, একটু পরেই সবাই এসে পড়লো আমাকে শুভদৃষ্টির জন্য নিয়ে যেতে | পিঁড়ি তে বসিয়ে, পান পাতায় মুখ ঢাকিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল | যে মানুষ মেয়েদের সম্মান করতে পারে না তার সাথে নাকি আবার শুভদৃষ্টি | এমন একজন নোংরা চরিত্রের দৃষ্টি নাকি শুভ, হুহু: | পান পাতার আড়ালে আমার চোখ দুটো খুঁজছিলো অন্য কাউকে | কই আসে পাশে দেখছি না তো, অবশ্য আমাকে নিয়ে চিন্তা বা মাথা ব্যাথা আমার কাছের লোক গুলোরই কোনোদিন ছিলো না, আর ওনার সাথে তো মাত্র দু'দিনের পরিচয় | তবু আজ আমার চোখ দুটো ব্যাকুল ভাবে ওনাকে খুঁজছে, পেতে চাইছে একান্ত আপন করে | কিন্তু হায়, হায় রে আমার অদৃষ্ট, কোনো দিনই নিজের ইচ্ছে মত কিছু পেলাম না, আর আজ........ হুহু: |
তবে খুব খুব মনে পড়ছে মা বাবা কে, হয়ত ওনারা থাকলে আজকের দিনটা আমার জীবনে অন্যরকম হত | আর পাঁচটা মেয়ের মত বিশাল ভাবে না হলেও অন্তত আমার খুশির খেয়ালটা থাকত | আমিও একটু আনন্দ করতে পেতাম | দেখতে দেখতে শুভ দৃষ্টিও হয়ে গেলো, ওই নোংরা লোকটার মুখের দিকে তাকাতে না ইচ্ছে হলেও এখন আমি নিরুপায় | বিয়ের কাজও শুরু হয়ে গেলো | না: আর কষ্ট হচ্ছে না, কিছু অনুভূত হচ্ছে না | চোখের জল যে আজ শুকিয়ে গিয়েছে, তারাও আজ বড় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত |