07-04-2020, 05:26 PM
(This post was last modified: 07-04-2020, 05:33 PM by eklasayan. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আজ সারাদিন খুব খাটা খাটনি গিয়েছে জানো তো মা, আজ রুপসাদির কলেজের বন্ধুরা এসেছিল তো তাই এত বিশাল আয়োজন | সবাই কি সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পড়েছিল, কি সুন্দর করে সব ছবি তুলছিল | আচ্ছা বাবা, বইতে যে লেখা থাকে কোনো কাজ ছোট বড় হয় না, সব মানুষ সমান, তাহলে ওরা আমাকে দেখে অমন করে মজা করে কেন? আমার হাতের ছোঁয়া লেগে গেলে নোংরা বলে কেন?
ওদের মত আমিও তো কলেজে যাই, তবে একটু তফাৎ আছে | ওরা যায় পড়াশোনা করতে আর আমি, আমি যাই কলেজে ঝাড়ু দেওয়া, লাইব্রেরীতে বই পরিস্কার করা এইসব কাজ করতে | রোজ সকালে উঠে বাড়ির সমস্ত কাজ সামলে, তবে অনুমতি মেলে বাইরে যাওয়ার | তবে কলেজে যেতে, কাজ করতে আমার খারাপ লাগে না | কারণ কাজের ফাঁকে যখন সময় পাই বেশ লাগে বাইরে থেকে ইংলিশ ক্লাসের লেকচারগুলো শুনতে | অবসর পেলেই লাইব্রেরীতে নতুন বই গুলোর পাতা ওল্টাতে | সেদিনও অমন কাজের ফাঁকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম, তন্ময় হয়ে শুনছিলাম | ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি বরাবরই একটা অজানা আকর্ষণ অনুভব করি বলেই কিনা জানিনা এর আগেও দু-একবার শেক্সপীয়ারের দি The Taming of the Shrew পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে | তবে ওনার বাচনশৈলীর জন্যই হোক বা ওনার ব্যক্তিত্বের আকর্ষণেই হোক ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম | কিন্তু ভাগ্যদেবতা বরাবরই আমার বিরুপ তাই স্যারের নজর পড়তেই নিজেকে আড়াল করতে বাধ্য হলাম |
পরে শুনেছিলাম সবেমাত্র দুদিন হল উনি এই কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছেন | সৌম্য দর্শন সুপুরুষ হিসাবে ও তার বিশ্লেষণী ক্ষমতার জন্য প্রফেসর অনিরুদ্ধ রায় ছাত্র বিশেষ করে ছাত্রী মহলে বেশ খ্যাত | তবে তার রুপের মোহে আকৃষ্ট হয়ে যারাই তার সান্নিধ্য লাভে অসফল হয়েছিল, তারা ওনার এই ব্যক্তিগত একাকিত্বের জীবনের জন্য তার স্বল্পভাষী গাম্ভীর্যতাপূর্ণ স্বভাবকেই দায়ী করে থাকে | অনেকে তো তাকে আবার রাগী, অহংকারী, নাক উঁচু বলেও মনে করে | উনি হয়ত বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না কিন্তু ওনার ওই বুদ্ধিদীপ্ত চোখের গভীরতায় আমি যেন কেমন হারিয়ে যাই | কতটা একাকীত্ব বোধ করলে এমন কারোর চোখে এতটা স্থিরতা, তা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় | সেদিনের পরও আরও দু-একবার ওনার পড়ানো শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি | উনি দেখে ফেলার আগেই সরে আসতে হত যে | যদি আমার এই লুকিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যায়, না জানি দেখে ফেললে আবার কত অপমানিত হতে হয় |
এই দুপুরের সময়টা এদিকে বিশেষ কেউ আসে না, তাই সেদিন লাইব্রেরীতে কাজ করার ফাঁকে সবার আড়ালে একটু বইটা খুলে সবে দুটো পাতা পড়েছি কি দেখি সামনে অনিরুদ্ধ স্যার |
- আ...আ, আমি মানে...বইটা পরিষ্কার করছিলাম, হয়ে গিয়েছে, আসছি |
- দাঁড়াও, আমি কি তোমায় যেতে বলেছি যে চলে যাচ্ছো? অনেকদিন ধরে তোমায় দেখছি, কিন্তু ধরতে পারছিলাম না | আজ...
- আর কোনো দিনও হবে না স্যার, আপনি দয়া করে কাউকে কিছু বলবেন না, প্লীজ প্লীজ |
- হুমম, তা তুমি ক্লাসের ভিতরে বসেই পড়া শুনতে পারো, এত লুকোচুরির কি আছে?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, এমন সময় লাইব্রেরীয়ান এসে ধমকের সুরে আমাকে বলল....
- তোমাকে তখন থেকে ডাকছি কানে শুনতে পাচ্ছো না? মেঝেয় জল পড়ে আছে তাড়াতাড়ি মুছে নাও |
একবার আড়চোখে স্যারের দিকে তাকিয়েই মুখটা নামিয়ে নিলাম | এই প্রথম খুব লজ্জা করছিল | আর দাঁড়াই নি, বইটা জায়গায় রেখে ছুটে চলে গিয়েছিলাম |
সেই ঘটনার পর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে, সেদিন করিডোরে ঝাঁট দিচ্ছিলাম,পিয়ন এসে বলল....
- তোমাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন |
ঠিক যা ভেবেছিলাম, অনিরুদ্ধ স্যার নিশ্চই প্রিন্সিপাল স্যারকে সব বলে দিয়েছেন যে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করার চেষ্টা করি, লাইব্রেরীতে লুকিয়ে বই পড়ি | রুমে ঢুকতেই স্যার বলে উঠলেন....
- আমি অনিরুদ্ধর থেকে সব শুনেছি, এখন তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো, না হলে....
- (আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম) আমায় দয়া করে ক্ষমা করে দিন, আমি পড়াশোনা করতে খুব ভালোবাসি, ইচ্ছে ছিল ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে বড় লেখিকা হব, কিন্তু আমার পোড়া কপাল ৯০% নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেও কলেজে ভর্তির ব্যয়ভার কাকু কাকীমা বহন করতে চাইলেন না | কিন্তু কপালক্রমে এই কলেজে ঝাড়পোছ করার কাজটি পেয়ে যাই | কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে তাই আড়াল থেকে ক্লাস গুলো শোনার চেষ্টা করতাম, লাইব্রেরীতে সবার নজর এড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম | এমনই একদিন স্যার আমাকে দেখে ফ্যালেন, শেষবারের মত ক্ষমা করে দিন...আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবেন না দয়া করে, তাহলে কাকু কাকীমা হয়ত....প্লীজ প্লীজ, হাতজোড় করছি স্যার ক্ষমা করে দিন |
ওদের মত আমিও তো কলেজে যাই, তবে একটু তফাৎ আছে | ওরা যায় পড়াশোনা করতে আর আমি, আমি যাই কলেজে ঝাড়ু দেওয়া, লাইব্রেরীতে বই পরিস্কার করা এইসব কাজ করতে | রোজ সকালে উঠে বাড়ির সমস্ত কাজ সামলে, তবে অনুমতি মেলে বাইরে যাওয়ার | তবে কলেজে যেতে, কাজ করতে আমার খারাপ লাগে না | কারণ কাজের ফাঁকে যখন সময় পাই বেশ লাগে বাইরে থেকে ইংলিশ ক্লাসের লেকচারগুলো শুনতে | অবসর পেলেই লাইব্রেরীতে নতুন বই গুলোর পাতা ওল্টাতে | সেদিনও অমন কাজের ফাঁকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম, তন্ময় হয়ে শুনছিলাম | ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি বরাবরই একটা অজানা আকর্ষণ অনুভব করি বলেই কিনা জানিনা এর আগেও দু-একবার শেক্সপীয়ারের দি The Taming of the Shrew পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে | তবে ওনার বাচনশৈলীর জন্যই হোক বা ওনার ব্যক্তিত্বের আকর্ষণেই হোক ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম | কিন্তু ভাগ্যদেবতা বরাবরই আমার বিরুপ তাই স্যারের নজর পড়তেই নিজেকে আড়াল করতে বাধ্য হলাম |
পরে শুনেছিলাম সবেমাত্র দুদিন হল উনি এই কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছেন | সৌম্য দর্শন সুপুরুষ হিসাবে ও তার বিশ্লেষণী ক্ষমতার জন্য প্রফেসর অনিরুদ্ধ রায় ছাত্র বিশেষ করে ছাত্রী মহলে বেশ খ্যাত | তবে তার রুপের মোহে আকৃষ্ট হয়ে যারাই তার সান্নিধ্য লাভে অসফল হয়েছিল, তারা ওনার এই ব্যক্তিগত একাকিত্বের জীবনের জন্য তার স্বল্পভাষী গাম্ভীর্যতাপূর্ণ স্বভাবকেই দায়ী করে থাকে | অনেকে তো তাকে আবার রাগী, অহংকারী, নাক উঁচু বলেও মনে করে | উনি হয়ত বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না কিন্তু ওনার ওই বুদ্ধিদীপ্ত চোখের গভীরতায় আমি যেন কেমন হারিয়ে যাই | কতটা একাকীত্ব বোধ করলে এমন কারোর চোখে এতটা স্থিরতা, তা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় | সেদিনের পরও আরও দু-একবার ওনার পড়ানো শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি | উনি দেখে ফেলার আগেই সরে আসতে হত যে | যদি আমার এই লুকিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যায়, না জানি দেখে ফেললে আবার কত অপমানিত হতে হয় |
এই দুপুরের সময়টা এদিকে বিশেষ কেউ আসে না, তাই সেদিন লাইব্রেরীতে কাজ করার ফাঁকে সবার আড়ালে একটু বইটা খুলে সবে দুটো পাতা পড়েছি কি দেখি সামনে অনিরুদ্ধ স্যার |
- আ...আ, আমি মানে...বইটা পরিষ্কার করছিলাম, হয়ে গিয়েছে, আসছি |
- দাঁড়াও, আমি কি তোমায় যেতে বলেছি যে চলে যাচ্ছো? অনেকদিন ধরে তোমায় দেখছি, কিন্তু ধরতে পারছিলাম না | আজ...
- আর কোনো দিনও হবে না স্যার, আপনি দয়া করে কাউকে কিছু বলবেন না, প্লীজ প্লীজ |
- হুমম, তা তুমি ক্লাসের ভিতরে বসেই পড়া শুনতে পারো, এত লুকোচুরির কি আছে?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, এমন সময় লাইব্রেরীয়ান এসে ধমকের সুরে আমাকে বলল....
- তোমাকে তখন থেকে ডাকছি কানে শুনতে পাচ্ছো না? মেঝেয় জল পড়ে আছে তাড়াতাড়ি মুছে নাও |
একবার আড়চোখে স্যারের দিকে তাকিয়েই মুখটা নামিয়ে নিলাম | এই প্রথম খুব লজ্জা করছিল | আর দাঁড়াই নি, বইটা জায়গায় রেখে ছুটে চলে গিয়েছিলাম |
সেই ঘটনার পর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে, সেদিন করিডোরে ঝাঁট দিচ্ছিলাম,পিয়ন এসে বলল....
- তোমাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন |
ঠিক যা ভেবেছিলাম, অনিরুদ্ধ স্যার নিশ্চই প্রিন্সিপাল স্যারকে সব বলে দিয়েছেন যে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করার চেষ্টা করি, লাইব্রেরীতে লুকিয়ে বই পড়ি | রুমে ঢুকতেই স্যার বলে উঠলেন....
- আমি অনিরুদ্ধর থেকে সব শুনেছি, এখন তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো, না হলে....
- (আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম) আমায় দয়া করে ক্ষমা করে দিন, আমি পড়াশোনা করতে খুব ভালোবাসি, ইচ্ছে ছিল ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে বড় লেখিকা হব, কিন্তু আমার পোড়া কপাল ৯০% নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেও কলেজে ভর্তির ব্যয়ভার কাকু কাকীমা বহন করতে চাইলেন না | কিন্তু কপালক্রমে এই কলেজে ঝাড়পোছ করার কাজটি পেয়ে যাই | কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে তাই আড়াল থেকে ক্লাস গুলো শোনার চেষ্টা করতাম, লাইব্রেরীতে সবার নজর এড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম | এমনই একদিন স্যার আমাকে দেখে ফ্যালেন, শেষবারের মত ক্ষমা করে দিন...আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবেন না দয়া করে, তাহলে কাকু কাকীমা হয়ত....প্লীজ প্লীজ, হাতজোড় করছি স্যার ক্ষমা করে দিন |