07-04-2020, 12:08 PM
দহন
https://ibb.co/SBbvgY9][/url]
রঞ্জন অফিস থেকে ফিরে দেখল সুছন্দা এখনো ফেরেনি।ছেলের এখন কলেজ ছুটি পড়েছে সবে।আইপিএলের স্কোর বোর্ডে নাইট রাইডার্স তখন ১৪৮/৩।একবার স্কোর বোর্ডে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রঞ্জন বলল---কি রে তোর মা আসেনি?
---না, ফোন করেছিল দেরী হবে।
রঞ্জনের আজকাল সুছন্দার এই অফিস থেকে ফিরতে দেরী হওয়াটা পছন্দ হয় না।এ নিয়ে খটমট লেগেই থাকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রঞ্জন বসে পড়ল অর্কের পাশে।ঘড়িতে তখন সাতটা।
সুছন্দা ঢুকল ঠিক সাতটা দশে।ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে, ঘড়িটা খুলে রেখে ঢুকে গেল বাথরুমে।শাওয়ার ছাড়ার শব্দ হল।
স্নান করে বেরলো একটা নাইটি পরে।রঞ্জন বলল---আজকাল তোমার বেশ দেরী হচ্ছে?
সুছন্দা চুলটা আয়নার সামনে চিরুনি দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল---হবে না, এমনিতেই এখন মাসের পিক টাইম।এটা তোমার ব্যাঙ্ক নয়, পোস্টাপিস, এখানে কতরকমের লোক আসে জানো?
---তা বলে সাড়ে সাতটা?
---সাড়ে সাতটা তো এই বাজল।
রঞ্জন আর কিছু বলল না।অর্ক চিৎকার করে উঠল---সিক্স!
রঞ্জন দেখলো তরবারির মত ব্যাট ঘোরাচ্ছে আন্দ্রে রাসেল।
কিচেনে চলে গেল সুছন্দা।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুছন্দা রঞ্জনের গা ঘেঁষে বসল।
রঞ্জন বলল---কাল থেকে ছুটি।
---ছুটি মানে?
---ছুটি নিলাম।
---এখন ছুটি নিলে?
---কি করব ছুটি গুলো নষ্ট হচ্ছে।আর ক'দিন পরই তো ট্রান্সফার।
সুছন্দা রঞ্জনের গা থেকে ঠেস ছেড়ে বলল---আরে জমিয়ে রাখলে তো ভালো হত।এবার বেড়াতে যাবার সময়...
রঞ্জন বলল---ওই তো কদিন আগে আলিপুর দুয়ার বেরিয়ে এলাম।
অর্ক টিপ্পনি কেটে বলল---কদিন না বাপি পুরো ছ মাস !
রঞ্জনকে ছেলের কাছে জব্দ হতে দেখে সুছন্দা হেসে বলল---বুড়ো হয়ে যাচ্ছো বুঝলে রঞ্জন মৈত্র?
রঞ্জন সত্যি এত দিন-মাসের হিসেব মনে রাখতে পারে না।আলিপুদুয়ার থেকে ফেরার পর গত ছ'মাস তারও অফিসের চাপ কম যায়নি।
রঞ্জন বলল---কাল তুমিও ছুটি নাও।একটা দিন হলেও কোথা থেকে ঘুরে আসা যাবে।
সুছন্দা চুলটা ক্লিপে আটকে নিয়ে বলল---আমার অত সহজে ছুটি মেলে না গো, এটা যদি তোমার মত চাকরী হত...
---আঃ সুছন্দা, তুমি ট্রান্সফার নিচ্ছ না কেন?
সুছন্দা চা শেষ করে উঠতে উঠতে বলল---ট্রান্সফারটি নিলেই তো হচ্ছে না।কলকাতার যেখানেই ট্রান্সফার নাও ঝামেলা একই থাকবে।
---রুরালে নাও।
---তারপর তোমাদের ছেড়ে...এমনিতে একটা দিন ছেড়ে তোমাদের যাবার জো নেই, বাপ-ব্যাটাতে ঘরের অবস্থা যা করো।
রঞ্জন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল---সে টি আর হচ্ছে না।মনে হয় ট্রান্সফারটি এবার স্টেটের বাইরে দেবে।
সুছন্দা বলে উঠল---ওমা! তা হলে তো বিরাট সমস্যা! ওপর মহলকে জানিয়ে দেখো না...
---হবে না।অম্লান বক্সীর ট্রান্সফার হল মহারাষ্ট্র।রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের চাকরী এক বছরের জন্য হলেও স্টেটের বাইরে যেতে হবে।তোমার পোস্ট অফিসের চাকরী না যে যাই হোক না কেন স্টেটেই দেবে।
---সে সকলেই মনে করে অন্যের চাকরীতে যত সুবিধা মেলে।এদিকে তোমার যে যখন তখন ছুটি পাচ্ছো, আমার বেলায় তা নেই।সারাক্ষণ লোকের ভিড় সামলাতে হয় নানাবিধ কাজ নিয়ে আসে লোকে।
রঞ্জন এবার ছেলের দিকে চোখ টিপে বলল---বেশ! তুমি অফিস করো।আমরা বাপ-ছেলেটে ক'টা দিন ঘুরে আসি।
অর্ক চেঁচিয়ে বলল---চল তাহলে বাবা, আলিপুরদুয়ার!
সুছন্দা রান্না ঘরে আনাজ কুচোতে কুচোতে বলল---আবার আলিপুরদুয়ার!
রঞ্জন হেসে বলল---তোমার ইচ্ছে না হলে যেও না।
সুছন্দা বলল---পুজোর সময় ছুটি নেব।তখন আবার আলিপুরদুয়ার যাওয়া যাবে।
রাসেল আউট! স্কোর দাঁড়ালো ১৯ ওভারে ২০২/৫, লাস্ট ওভারে কত রান হয় দেখবার জন্য রঞ্জন আর অর্ক টিভিতে মনোযোগ দিল।
(চলবে)
https://ibb.co/SBbvgY9][/url]
রঞ্জন অফিস থেকে ফিরে দেখল সুছন্দা এখনো ফেরেনি।ছেলের এখন কলেজ ছুটি পড়েছে সবে।আইপিএলের স্কোর বোর্ডে নাইট রাইডার্স তখন ১৪৮/৩।একবার স্কোর বোর্ডে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রঞ্জন বলল---কি রে তোর মা আসেনি?
---না, ফোন করেছিল দেরী হবে।
রঞ্জনের আজকাল সুছন্দার এই অফিস থেকে ফিরতে দেরী হওয়াটা পছন্দ হয় না।এ নিয়ে খটমট লেগেই থাকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রঞ্জন বসে পড়ল অর্কের পাশে।ঘড়িতে তখন সাতটা।
সুছন্দা ঢুকল ঠিক সাতটা দশে।ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে, ঘড়িটা খুলে রেখে ঢুকে গেল বাথরুমে।শাওয়ার ছাড়ার শব্দ হল।
স্নান করে বেরলো একটা নাইটি পরে।রঞ্জন বলল---আজকাল তোমার বেশ দেরী হচ্ছে?
সুছন্দা চুলটা আয়নার সামনে চিরুনি দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল---হবে না, এমনিতেই এখন মাসের পিক টাইম।এটা তোমার ব্যাঙ্ক নয়, পোস্টাপিস, এখানে কতরকমের লোক আসে জানো?
---তা বলে সাড়ে সাতটা?
---সাড়ে সাতটা তো এই বাজল।
রঞ্জন আর কিছু বলল না।অর্ক চিৎকার করে উঠল---সিক্স!
রঞ্জন দেখলো তরবারির মত ব্যাট ঘোরাচ্ছে আন্দ্রে রাসেল।
কিচেনে চলে গেল সুছন্দা।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুছন্দা রঞ্জনের গা ঘেঁষে বসল।
রঞ্জন বলল---কাল থেকে ছুটি।
---ছুটি মানে?
---ছুটি নিলাম।
---এখন ছুটি নিলে?
---কি করব ছুটি গুলো নষ্ট হচ্ছে।আর ক'দিন পরই তো ট্রান্সফার।
সুছন্দা রঞ্জনের গা থেকে ঠেস ছেড়ে বলল---আরে জমিয়ে রাখলে তো ভালো হত।এবার বেড়াতে যাবার সময়...
রঞ্জন বলল---ওই তো কদিন আগে আলিপুর দুয়ার বেরিয়ে এলাম।
অর্ক টিপ্পনি কেটে বলল---কদিন না বাপি পুরো ছ মাস !
রঞ্জনকে ছেলের কাছে জব্দ হতে দেখে সুছন্দা হেসে বলল---বুড়ো হয়ে যাচ্ছো বুঝলে রঞ্জন মৈত্র?
রঞ্জন সত্যি এত দিন-মাসের হিসেব মনে রাখতে পারে না।আলিপুদুয়ার থেকে ফেরার পর গত ছ'মাস তারও অফিসের চাপ কম যায়নি।
রঞ্জন বলল---কাল তুমিও ছুটি নাও।একটা দিন হলেও কোথা থেকে ঘুরে আসা যাবে।
সুছন্দা চুলটা ক্লিপে আটকে নিয়ে বলল---আমার অত সহজে ছুটি মেলে না গো, এটা যদি তোমার মত চাকরী হত...
---আঃ সুছন্দা, তুমি ট্রান্সফার নিচ্ছ না কেন?
সুছন্দা চা শেষ করে উঠতে উঠতে বলল---ট্রান্সফারটি নিলেই তো হচ্ছে না।কলকাতার যেখানেই ট্রান্সফার নাও ঝামেলা একই থাকবে।
---রুরালে নাও।
---তারপর তোমাদের ছেড়ে...এমনিতে একটা দিন ছেড়ে তোমাদের যাবার জো নেই, বাপ-ব্যাটাতে ঘরের অবস্থা যা করো।
রঞ্জন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল---সে টি আর হচ্ছে না।মনে হয় ট্রান্সফারটি এবার স্টেটের বাইরে দেবে।
সুছন্দা বলে উঠল---ওমা! তা হলে তো বিরাট সমস্যা! ওপর মহলকে জানিয়ে দেখো না...
---হবে না।অম্লান বক্সীর ট্রান্সফার হল মহারাষ্ট্র।রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের চাকরী এক বছরের জন্য হলেও স্টেটের বাইরে যেতে হবে।তোমার পোস্ট অফিসের চাকরী না যে যাই হোক না কেন স্টেটেই দেবে।
---সে সকলেই মনে করে অন্যের চাকরীতে যত সুবিধা মেলে।এদিকে তোমার যে যখন তখন ছুটি পাচ্ছো, আমার বেলায় তা নেই।সারাক্ষণ লোকের ভিড় সামলাতে হয় নানাবিধ কাজ নিয়ে আসে লোকে।
রঞ্জন এবার ছেলের দিকে চোখ টিপে বলল---বেশ! তুমি অফিস করো।আমরা বাপ-ছেলেটে ক'টা দিন ঘুরে আসি।
অর্ক চেঁচিয়ে বলল---চল তাহলে বাবা, আলিপুরদুয়ার!
সুছন্দা রান্না ঘরে আনাজ কুচোতে কুচোতে বলল---আবার আলিপুরদুয়ার!
রঞ্জন হেসে বলল---তোমার ইচ্ছে না হলে যেও না।
সুছন্দা বলল---পুজোর সময় ছুটি নেব।তখন আবার আলিপুরদুয়ার যাওয়া যাবে।
রাসেল আউট! স্কোর দাঁড়ালো ১৯ ওভারে ২০২/৫, লাস্ট ওভারে কত রান হয় দেখবার জন্য রঞ্জন আর অর্ক টিভিতে মনোযোগ দিল।
(চলবে)