01-04-2020, 11:59 AM
[৮৪]
ড্যাফোডিল গাড়ীতে পনেরো-কুড়ি মিনিটের পথ। এ্যাম্বুলেন্সে পরমিতের কোলে মাথা রেখে অর্ধ চেতন যশ বিন্দার।পরমিত বোনের গাল ধরে নাড়তে নাড়তে ডাকে,বিল্লু বিল্লু তুই ঠিক আছিস?
যশবিন্দার ধীরে ধীরে চোখ মেলে।কতকাল পরে এই নামে প্রাজী ডাকলো।এই নামেই সবাই ডাকত, ঠোটের কোলে হাসি ফুটল,প্রাজী জেন ঠিক আছে?
মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,সব ঠিক আছ,তুই কথা বলিস না।স্বস্তি বোধ করে পরমিত।
ড্যাফোডিল প্রস্তুত ছিল।হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে একজন নার্স। এ্যাম্বুলেন্স থামতে পরমিত বিল্লুকে কোলে নিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিতে ওরা ভিতরে নিয়ে গেল।কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ঘর থেকে একজন ডাক্তার বেরিয়ে আসতে পরমিত এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,ডাক্তার সাব?
--ডোন্ট ওরি সর্দারজী শি ইজ ভেরি স্ট্রং এ্যাণ্ড আ ডকটর আলসো।
মা-যাবো মা-যাব করে এমন হাত-পা ছুড়ছে মিতা মাসী সামলাতে পারছেনা।সোনা-মনা করে এত বোঝাচ্ছে কিছুতেই শুনছে না রেগে গিয়ে এক চড় কষিয়ে দিল।ব্যাস চুপ।মুহূর্তকাল পরে খেয়াল হয় বুকের উপর নেতিয়ে পড়েছে জেসমিন।তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাকাডাকি শুরু করল,জেন জেন।কোনো সাড়া নেই।একী বিপদে পড়ল।চোখেমুখে জলের ছিটে দেয় তাও মেয়ে চোখ খোলে না।কি করবে এখন।দ্রুত সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল,তাড়াহুড়ায় দরজা বন্ধ না করেই নীচে নেমে এসেছে। মেয়েকে ডেকে আনতে বাসার দিকে ছুটলো কিছুটা গিয়ে মত বদলে দিলীপের ফ্লাটে।দিলীপ সব শুনে একটা জামা গলিয়ে মিতামাসীকে অনুসরন করে।বৌদি নেই?দিলীপ জিজ্ঞেস করে। মিতা সব খুলে বলল।
দিলীপ বলল,একী দরজা হাট খোলা?
--তাড়াতাড়িতে মাথার ঠিক নেই।
জেসমিনকে কোলে নিয়ে নীচে নেমে এল।একটা রিক্সায় একেবারে মুনলাইট নার্সিং হোম।ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করেন,কিভাবে হল?
মিতা থতমত খেয়ে বলল,হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।
লেক ভিউ হতে নীচে নেমে ড সোম ড্রাইভারের খোজ করেন।একজন বলল,মোহন লাল কাছেই হাওয়া ভরতে গেছে।
ওহ গড একী ঝড়ের পূর্বাভাষ?ভিতরে ঢুকে ফোন করল,রিং হচ্ছে,রিসিভার কানে লাগিয়ে ভাবে শুনতে পারছে না নাকি কেউ?বাজতে বাজতে কেটে গেল।ড সোম ঘামছে।মোহন লাল চলে এসেছে,ড সোম গাড়ীতে উঠে বলল,শেষ সময়ে মনে পড়ল হাওয়া নেই?
মোহন লালের অবাক লাগে,সাহেবকে এভাবে আগে রাগতে দেখেনি।ড সোমের খেয়াল হল ব্যাপারটা মাম্মীকে জানিয়ে এলে ভাল হতো।বাবাজী আউরতের কথা বলেছিল।আজকেই এত রাত হয়ে গেল?সব কি পূর্ব নির্দিষ্ট?পাড়ায় ঢোকার মুখে ড সোম সোজা হয়ে বসল।রাস্তায় লোকজন নেই।লাইট পোস্টে আলোগুলো ঝিমোচ্ছে।বাসার প্রায় কাছাকাছি আসতে
ড সোম বলল,গাড়ী থামাও।
জানলা দিয়ে মুখে বের করে জিজ্ঞেস করে,মাসী তুমি?বৌদি কোথায়?
--ছোড়দা তুমি এসেছো?বৌদি নার্সিং হোমে।
--কে নিয়ে গেল?
--ওনার দাদা এসেছিল।
--মোহনজী ড্যাফোডিল চলুন।গাড়ী বাক নেয়,মিতামাসী ছোড়দা বলে ডাকলো।ইঞ্জিনের শব্দের সে ডাক চাপা পড়ে গেল।
সুমন পাশ ফিরে শুয়ে আছে।কদিন করতে পারেনি সেজন্য রেগে নেইতো?সোমালি কোমরের উপর দিয়ে হাতটা সুমনের বাড়া চেপে ধরে।
--কি হচ্ছে কি?
--রাগ করেছো সোনা?
--কটা বাজে দেখেছো?
টেনে ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,এদিকে ফিরে বলো।
--আজ তোমার কি হল?
--রোজই তো ঘুমোচ্ছো,বিয়ের পর প্রথম প্রথম কত কথা--।
--বলো কি বলবে?সুমন হাতের উপর মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল।
--থাক তুমি ঘুমাও।সোমালির গলায় অভিমান।
--জাগিয়ে দিয়ে এখন বলছো ঘুমাও।সোমার হাত নিয়ে বাড়ার উপর রাখে।
হাত দিয়ে সোমালি বুঝতে পারে বাছাধন ফুসছে।সুমনকে বুকের কাছে টেনে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আমাকে দেখতে গিয়ে তোমার কেমন মনে হয়েছিল?
সুমন ভ্রু কুচকায় জিজ্ঞেস করে,এতদিন তা প্রায় এক যুগ পরে হঠাৎ আজ একথা জিজ্ঞেস করছো?
--আহা বলোনা আগে কি জিজ্ঞেস করেছি?
--কেমন আবার, দেখেছি তারপর খোজ খবর নিয়েছি--।
--খোজ খবর মানে?
--বাদ দাওতো ওসব।
--লক্ষীটি বল নাগো?
সুমন কয়েক মুহূর্ত ভাবে ঐসব কথা বলে একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।এড়িয়ে যাবার জন্য বলল,যেমন সবাই খোজ নেয়--ছাড়োতো।
কি এমন খোজ নিয়েছে যা বলতে চাইছে না।সোমালির জিদ চেপে যায় বলল,বল না সত্যি বলছি আমি কিছু মনে করব না।তাছাড়া আমাদের ভালবাসা কি এতই ঠূনকো যে--।
--শোনো আজকাল ওসব কিছু ব্যাপার নয়।বিয়ের আগে ঘাটলে সকলেই একটু-আধটু ওরকম বেরোবে।
--কি রকম?
সুমন বিরক্ত হয়ে বলল, কি শুরু করলে বলতো?
বিয়ের আগে যা হয়েছে বুক অবধি তার নীচে কাউকে নামতে দেয়নি।ওরকম সুমনেরও কিছু হয়ে থাকতে পারে।সোমালি কাপড় হাটু অবধি তুলে বলল,করলে তাড়াতাড়ি করো।
সুমন উঠে বসে পায়জামা খুলে ঘেষটে নিজেকে সোমার পাছার কাছে নিয়ে গেল।
ড্যাফোডিলের নীচে গাড়ী থামতে ড সোমের বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।কেমন যেন নৈশঃব্দ চারদিকে।একী ঝড় নাকি ঝড়ের পূর্বাভাষ?দরজা খুলে টলতে টলতে নামলো ড সোম।
--কনগ্রাচুলেশন ড সোম।
ড সোম তাকিয়ে দেখলেন,ড চৌধুরী হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছেন।
ড সোমের ঠোট কাপছে।অঞ্জনার অপারেশনের দিন ইনি ছিলেন না,ভাল সার্জেন।
ড চৌধুরী হাত চেপে ধরে বললেন,এই সুযোগে আপনার পদধুলি পড়ল।
--ম্যাডাম সোম?
--মম বেবি বোথ আর সেফ এ্যাণ্ড কোয়াইট ওকে,আসুন।
ড চৌধুরীর সঙ্গে এগোতে থাকে,দোতলায় উঠে একটা কেবিনের দরজায় নিয়ে বললেন,যান।
সারা শরীর চাদরে ঢাকা কেবল মাথাটা বেরিয়ে কি যেন ভাবছে যশ।বুজ্রুকটার কথায় বড় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল।
ড সোমকে দেখে বলল, এতক্ষনে সময় হল?
--স্যরি মানে--।
--তোমার পিটাই হবে।
পরমিত অবাক বিল্লুর ব্যবহারে।ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ড সোম জিজ্ঞেস করল,বাচ্চা?
যশবিন্দার বুকের কাপড় সরাতে দেখা গেল একটি শিশু বুকের উপর মাকড়সার মত সেটে আছে।যশ জিজ্ঞেস করল,জেন কেমন আছে?
--ভালো।
--তুমি খেয়েছো?
--গিয়ে খাবো।
যশ গলা চড়িয়ে ডাকলো,প্রাজী-ই-ই।
পরমিত ঢুকতে বলল,এই আমার বড়া ভাই।তোমার সঙ্গে ওকে নিয়ে যাও।বহুত মেহনত করেছে।
--ওর দাদা মানে সম্পর্কে আমারও দাদা।
--কাল সকাল সকাল আসবে।মনে হয় কালই দিসচার্জ হয়ে যাবে।যশ বলল।
ঘর থেকে বেরোতে ড চৌধুরী এগিয়ে এলেন।ড সোম বলল,অনেক ধন্যবাদ খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।জানেন তো একবার--।
--স্যরি সেদিন জরুরী কাজে আটকে গেছিলাম--মিসেস সোম জানেন।।ভেরি স্যরি।
ছোড়দা বাড়ী আসবে তাই মিতা মাসী বাড়ীতে এসে বসে আছে।জেন ঘুমোচ্ছে দেখে এসেছে।নার্স আছে পাশে।
ড সোম আর পরমিত পিছনে বসে।পরমিত ডাক্তার সাবকে আড়চোখে দেখে।নার্সিং হোমে যেমন খাতির করছিল তাতে অনুমান বেশ নামজাদা ডাক্তার।বিল্লু সেই একই রকম সারারাতি আছে।পিটাই হবে যেমন বলছিল সোউভাগ্য কই বাহার কে আদমী নেহি থি।
গাড়ী থেকে নেমে ড সোম বলল,মোহন জী কাল একটু সকাল-সকাল এসো।
--জি সাব।গাড়ী চলে গেল।
--আপনি না থকলে আজ কি যে হতো ভাবছি।ড সোম বলল।
--বিল্লু ছোটো থেকে বহুত সারারাতি একটু শাসন করবেন।
--করি তো।এখন কিছু বললাম না।
পরমিত অনেক কষ্টে হাসি দমন করে।
মিতা মাসী দরজা খুলে দিল।পল্টূ বলল,বৌদির ছেলে হয়েছে।জেন কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
মিতামাসী কি বলবে বুঝতে পারেনা।ছোড়দা কিছুই জানে না?
পরমিতকে জিজ্ঞেস করে,আপনি খেয়েছেন?
--হ্যা আমার খাওয়া হয়েছে।
--মাসী আমাকে খেতে দাও।অনেক রাত হল কাল তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
--জেন নারসিন হোমে।মিতামাসী লজ্জিত গলায় বলল। চমকে উঠল পল্টু,নার্সিং হোমে কেন?
--বৌদি চলে যাবার পর অজ্ঞান হয়ে গেছিল।দিলীপকে খবর দিলাম ও এসে নারসিন হোমে নিয়ে গেল।
আগে বলবে তো,মোহন জী চলে গেছে।
--আমি গাড়ী চালাতে পারি চিন্তা করবেন না।আপনি একবার ফোন করে জানুন।
--গুড সাজেশন।পল্টূ ফোন ঘোরালো,ড সোম স্পিকিং..ঘুমোচ্ছে?....কি হয়েছিল...সিবিসি টেস্ট কেন...খারাপ কিছু?
ফোন রেখে ওহ গড! বলে বসে পড়ে।পরমিত জিজ্ঞেস করে,কি বলল?
--ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছে।এখন গিয়ে কি করব?আপনি যশকে কিছু বলবেন না।
দেবব্রত চিত হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,পাশে শুয়ে আছে ওনার হুশ নেই বাসন্তীর রাগ হয়।এক সময় ধৈর্য হারিয়ে বলল,তখন থেকে কি ভাবছো বলতো?
--ভাবনার কি আর শেষ আছে?
স্বামীর তলপেটের নীচে হাত দিয়ে মুঠোয় ধরে বলল,ইনিও তো শুয়ে পড়েছেন।
--কেন গরজ শুধু আমার?ঠিক আছে করতে হবে না।বাসন্তী পাশ ফিরে শোয়।
দেবব্রত ঘুরে বউকে জড়িয়ে ধরে বলল,রাগ করো কেন?কথায় কথায় রাগ করলে হয়?
--থাক আর ঢং করতে হবে না।কবে থেকে শুনছি এই বাড়ী ছেড়ে ফ্লাটে যাব--।
--সেই কথাই তো ভাবছিলাম।
--ভাবতে ভাবতে সারা জীবন কেটে গেল,ওদিকে হাসি-খুশি লকলকিয়ে বড় হচ্ছে একবার চোখ তুলে দেখেছো?দেখলে কারো মাথার ঠিক থাকে--শেষে একটা অঘটন ঘটিয়ে বসলে টের পাবে।
--আজই টাকা দেবার কথা ছিল--।
--দিলনা কেন?
--নার্সিং হোমে ভর্তি হল কখন দেবে?
--কার কথা বলছো?
--ম্যাডাম বলেছিল পল্টুকে না বলতে--।
--ঐ পাঞ্জাবীটার কাছেও টাকা চেয়েছো?কাউকে ছাড়লে না দেখছি।কি করছো কি বাল ছাড়ো ব্যথা লাগেনা বুঝি?করলে করো।
দেবব্রত বাল ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে।মনের ইচ্ছে হলেই হয়না শরীরের ক্ষমতা থাকতে হবে।বয়স তো কম হলনা।
পল্টু নাম মাত্র খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে।পরমিত পাশের ঘরে শুয়েছে।সিবিসি টেস্ট করতে দিল কেন?চিন্তাটা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না।ডাক্তার কি অনুমান করছেন?ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়নি একজন স্টাফের কাছে শুনলো।এখন মনে হচ্ছে জেন দিন দিন কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিল।বাবাজীর কথা মনে পড়ল,যশের চিন্তায় ঝড়ের গতি বুঝতে পারেনি।কাউকে চেনে না জানেনা চোখের দেখাও কোনোদিন হয় নি এভাবে কেউ বলতে পারে কিভাবে? যশ জানতে পারলে কি হবে ভেবে অন্ধকার দেখে।বাচ্চাটা ভাল করে দেখা হয়নি,মাথাভরা চুল মায়ের বুকে সেটে আছে।পরমিত বলছিল ওদের বাড়ীর সব ছেলে একমাত্র যশ মেয়ে তাই খুব প্রশ্রয়ে বড় হয়েছে।কি যেন নাম বলছিল?একসময় মনে পড়ে বিল্লু।এবার থেকে বিল্লু বলে ডাকবে।
ড্যাফোডিল গাড়ীতে পনেরো-কুড়ি মিনিটের পথ। এ্যাম্বুলেন্সে পরমিতের কোলে মাথা রেখে অর্ধ চেতন যশ বিন্দার।পরমিত বোনের গাল ধরে নাড়তে নাড়তে ডাকে,বিল্লু বিল্লু তুই ঠিক আছিস?
যশবিন্দার ধীরে ধীরে চোখ মেলে।কতকাল পরে এই নামে প্রাজী ডাকলো।এই নামেই সবাই ডাকত, ঠোটের কোলে হাসি ফুটল,প্রাজী জেন ঠিক আছে?
মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,সব ঠিক আছ,তুই কথা বলিস না।স্বস্তি বোধ করে পরমিত।
ড্যাফোডিল প্রস্তুত ছিল।হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে একজন নার্স। এ্যাম্বুলেন্স থামতে পরমিত বিল্লুকে কোলে নিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিতে ওরা ভিতরে নিয়ে গেল।কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ঘর থেকে একজন ডাক্তার বেরিয়ে আসতে পরমিত এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,ডাক্তার সাব?
--ডোন্ট ওরি সর্দারজী শি ইজ ভেরি স্ট্রং এ্যাণ্ড আ ডকটর আলসো।
মা-যাবো মা-যাব করে এমন হাত-পা ছুড়ছে মিতা মাসী সামলাতে পারছেনা।সোনা-মনা করে এত বোঝাচ্ছে কিছুতেই শুনছে না রেগে গিয়ে এক চড় কষিয়ে দিল।ব্যাস চুপ।মুহূর্তকাল পরে খেয়াল হয় বুকের উপর নেতিয়ে পড়েছে জেসমিন।তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাকাডাকি শুরু করল,জেন জেন।কোনো সাড়া নেই।একী বিপদে পড়ল।চোখেমুখে জলের ছিটে দেয় তাও মেয়ে চোখ খোলে না।কি করবে এখন।দ্রুত সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল,তাড়াহুড়ায় দরজা বন্ধ না করেই নীচে নেমে এসেছে। মেয়েকে ডেকে আনতে বাসার দিকে ছুটলো কিছুটা গিয়ে মত বদলে দিলীপের ফ্লাটে।দিলীপ সব শুনে একটা জামা গলিয়ে মিতামাসীকে অনুসরন করে।বৌদি নেই?দিলীপ জিজ্ঞেস করে। মিতা সব খুলে বলল।
দিলীপ বলল,একী দরজা হাট খোলা?
--তাড়াতাড়িতে মাথার ঠিক নেই।
জেসমিনকে কোলে নিয়ে নীচে নেমে এল।একটা রিক্সায় একেবারে মুনলাইট নার্সিং হোম।ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করেন,কিভাবে হল?
মিতা থতমত খেয়ে বলল,হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।
লেক ভিউ হতে নীচে নেমে ড সোম ড্রাইভারের খোজ করেন।একজন বলল,মোহন লাল কাছেই হাওয়া ভরতে গেছে।
ওহ গড একী ঝড়ের পূর্বাভাষ?ভিতরে ঢুকে ফোন করল,রিং হচ্ছে,রিসিভার কানে লাগিয়ে ভাবে শুনতে পারছে না নাকি কেউ?বাজতে বাজতে কেটে গেল।ড সোম ঘামছে।মোহন লাল চলে এসেছে,ড সোম গাড়ীতে উঠে বলল,শেষ সময়ে মনে পড়ল হাওয়া নেই?
মোহন লালের অবাক লাগে,সাহেবকে এভাবে আগে রাগতে দেখেনি।ড সোমের খেয়াল হল ব্যাপারটা মাম্মীকে জানিয়ে এলে ভাল হতো।বাবাজী আউরতের কথা বলেছিল।আজকেই এত রাত হয়ে গেল?সব কি পূর্ব নির্দিষ্ট?পাড়ায় ঢোকার মুখে ড সোম সোজা হয়ে বসল।রাস্তায় লোকজন নেই।লাইট পোস্টে আলোগুলো ঝিমোচ্ছে।বাসার প্রায় কাছাকাছি আসতে
ড সোম বলল,গাড়ী থামাও।
জানলা দিয়ে মুখে বের করে জিজ্ঞেস করে,মাসী তুমি?বৌদি কোথায়?
--ছোড়দা তুমি এসেছো?বৌদি নার্সিং হোমে।
--কে নিয়ে গেল?
--ওনার দাদা এসেছিল।
--মোহনজী ড্যাফোডিল চলুন।গাড়ী বাক নেয়,মিতামাসী ছোড়দা বলে ডাকলো।ইঞ্জিনের শব্দের সে ডাক চাপা পড়ে গেল।
সুমন পাশ ফিরে শুয়ে আছে।কদিন করতে পারেনি সেজন্য রেগে নেইতো?সোমালি কোমরের উপর দিয়ে হাতটা সুমনের বাড়া চেপে ধরে।
--কি হচ্ছে কি?
--রাগ করেছো সোনা?
--কটা বাজে দেখেছো?
টেনে ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,এদিকে ফিরে বলো।
--আজ তোমার কি হল?
--রোজই তো ঘুমোচ্ছো,বিয়ের পর প্রথম প্রথম কত কথা--।
--বলো কি বলবে?সুমন হাতের উপর মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল।
--থাক তুমি ঘুমাও।সোমালির গলায় অভিমান।
--জাগিয়ে দিয়ে এখন বলছো ঘুমাও।সোমার হাত নিয়ে বাড়ার উপর রাখে।
হাত দিয়ে সোমালি বুঝতে পারে বাছাধন ফুসছে।সুমনকে বুকের কাছে টেনে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আমাকে দেখতে গিয়ে তোমার কেমন মনে হয়েছিল?
সুমন ভ্রু কুচকায় জিজ্ঞেস করে,এতদিন তা প্রায় এক যুগ পরে হঠাৎ আজ একথা জিজ্ঞেস করছো?
--আহা বলোনা আগে কি জিজ্ঞেস করেছি?
--কেমন আবার, দেখেছি তারপর খোজ খবর নিয়েছি--।
--খোজ খবর মানে?
--বাদ দাওতো ওসব।
--লক্ষীটি বল নাগো?
সুমন কয়েক মুহূর্ত ভাবে ঐসব কথা বলে একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।এড়িয়ে যাবার জন্য বলল,যেমন সবাই খোজ নেয়--ছাড়োতো।
কি এমন খোজ নিয়েছে যা বলতে চাইছে না।সোমালির জিদ চেপে যায় বলল,বল না সত্যি বলছি আমি কিছু মনে করব না।তাছাড়া আমাদের ভালবাসা কি এতই ঠূনকো যে--।
--শোনো আজকাল ওসব কিছু ব্যাপার নয়।বিয়ের আগে ঘাটলে সকলেই একটু-আধটু ওরকম বেরোবে।
--কি রকম?
সুমন বিরক্ত হয়ে বলল, কি শুরু করলে বলতো?
বিয়ের আগে যা হয়েছে বুক অবধি তার নীচে কাউকে নামতে দেয়নি।ওরকম সুমনেরও কিছু হয়ে থাকতে পারে।সোমালি কাপড় হাটু অবধি তুলে বলল,করলে তাড়াতাড়ি করো।
সুমন উঠে বসে পায়জামা খুলে ঘেষটে নিজেকে সোমার পাছার কাছে নিয়ে গেল।
ড্যাফোডিলের নীচে গাড়ী থামতে ড সোমের বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।কেমন যেন নৈশঃব্দ চারদিকে।একী ঝড় নাকি ঝড়ের পূর্বাভাষ?দরজা খুলে টলতে টলতে নামলো ড সোম।
--কনগ্রাচুলেশন ড সোম।
ড সোম তাকিয়ে দেখলেন,ড চৌধুরী হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছেন।
ড সোমের ঠোট কাপছে।অঞ্জনার অপারেশনের দিন ইনি ছিলেন না,ভাল সার্জেন।
ড চৌধুরী হাত চেপে ধরে বললেন,এই সুযোগে আপনার পদধুলি পড়ল।
--ম্যাডাম সোম?
--মম বেবি বোথ আর সেফ এ্যাণ্ড কোয়াইট ওকে,আসুন।
ড চৌধুরীর সঙ্গে এগোতে থাকে,দোতলায় উঠে একটা কেবিনের দরজায় নিয়ে বললেন,যান।
সারা শরীর চাদরে ঢাকা কেবল মাথাটা বেরিয়ে কি যেন ভাবছে যশ।বুজ্রুকটার কথায় বড় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল।
ড সোমকে দেখে বলল, এতক্ষনে সময় হল?
--স্যরি মানে--।
--তোমার পিটাই হবে।
পরমিত অবাক বিল্লুর ব্যবহারে।ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ড সোম জিজ্ঞেস করল,বাচ্চা?
যশবিন্দার বুকের কাপড় সরাতে দেখা গেল একটি শিশু বুকের উপর মাকড়সার মত সেটে আছে।যশ জিজ্ঞেস করল,জেন কেমন আছে?
--ভালো।
--তুমি খেয়েছো?
--গিয়ে খাবো।
যশ গলা চড়িয়ে ডাকলো,প্রাজী-ই-ই।
পরমিত ঢুকতে বলল,এই আমার বড়া ভাই।তোমার সঙ্গে ওকে নিয়ে যাও।বহুত মেহনত করেছে।
--ওর দাদা মানে সম্পর্কে আমারও দাদা।
--কাল সকাল সকাল আসবে।মনে হয় কালই দিসচার্জ হয়ে যাবে।যশ বলল।
ঘর থেকে বেরোতে ড চৌধুরী এগিয়ে এলেন।ড সোম বলল,অনেক ধন্যবাদ খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।জানেন তো একবার--।
--স্যরি সেদিন জরুরী কাজে আটকে গেছিলাম--মিসেস সোম জানেন।।ভেরি স্যরি।
ছোড়দা বাড়ী আসবে তাই মিতা মাসী বাড়ীতে এসে বসে আছে।জেন ঘুমোচ্ছে দেখে এসেছে।নার্স আছে পাশে।
ড সোম আর পরমিত পিছনে বসে।পরমিত ডাক্তার সাবকে আড়চোখে দেখে।নার্সিং হোমে যেমন খাতির করছিল তাতে অনুমান বেশ নামজাদা ডাক্তার।বিল্লু সেই একই রকম সারারাতি আছে।পিটাই হবে যেমন বলছিল সোউভাগ্য কই বাহার কে আদমী নেহি থি।
গাড়ী থেকে নেমে ড সোম বলল,মোহন জী কাল একটু সকাল-সকাল এসো।
--জি সাব।গাড়ী চলে গেল।
--আপনি না থকলে আজ কি যে হতো ভাবছি।ড সোম বলল।
--বিল্লু ছোটো থেকে বহুত সারারাতি একটু শাসন করবেন।
--করি তো।এখন কিছু বললাম না।
পরমিত অনেক কষ্টে হাসি দমন করে।
মিতা মাসী দরজা খুলে দিল।পল্টূ বলল,বৌদির ছেলে হয়েছে।জেন কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
মিতামাসী কি বলবে বুঝতে পারেনা।ছোড়দা কিছুই জানে না?
পরমিতকে জিজ্ঞেস করে,আপনি খেয়েছেন?
--হ্যা আমার খাওয়া হয়েছে।
--মাসী আমাকে খেতে দাও।অনেক রাত হল কাল তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
--জেন নারসিন হোমে।মিতামাসী লজ্জিত গলায় বলল। চমকে উঠল পল্টু,নার্সিং হোমে কেন?
--বৌদি চলে যাবার পর অজ্ঞান হয়ে গেছিল।দিলীপকে খবর দিলাম ও এসে নারসিন হোমে নিয়ে গেল।
আগে বলবে তো,মোহন জী চলে গেছে।
--আমি গাড়ী চালাতে পারি চিন্তা করবেন না।আপনি একবার ফোন করে জানুন।
--গুড সাজেশন।পল্টূ ফোন ঘোরালো,ড সোম স্পিকিং..ঘুমোচ্ছে?....কি হয়েছিল...সিবিসি টেস্ট কেন...খারাপ কিছু?
ফোন রেখে ওহ গড! বলে বসে পড়ে।পরমিত জিজ্ঞেস করে,কি বলল?
--ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছে।এখন গিয়ে কি করব?আপনি যশকে কিছু বলবেন না।
দেবব্রত চিত হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,পাশে শুয়ে আছে ওনার হুশ নেই বাসন্তীর রাগ হয়।এক সময় ধৈর্য হারিয়ে বলল,তখন থেকে কি ভাবছো বলতো?
--ভাবনার কি আর শেষ আছে?
স্বামীর তলপেটের নীচে হাত দিয়ে মুঠোয় ধরে বলল,ইনিও তো শুয়ে পড়েছেন।
--কেন গরজ শুধু আমার?ঠিক আছে করতে হবে না।বাসন্তী পাশ ফিরে শোয়।
দেবব্রত ঘুরে বউকে জড়িয়ে ধরে বলল,রাগ করো কেন?কথায় কথায় রাগ করলে হয়?
--থাক আর ঢং করতে হবে না।কবে থেকে শুনছি এই বাড়ী ছেড়ে ফ্লাটে যাব--।
--সেই কথাই তো ভাবছিলাম।
--ভাবতে ভাবতে সারা জীবন কেটে গেল,ওদিকে হাসি-খুশি লকলকিয়ে বড় হচ্ছে একবার চোখ তুলে দেখেছো?দেখলে কারো মাথার ঠিক থাকে--শেষে একটা অঘটন ঘটিয়ে বসলে টের পাবে।
--আজই টাকা দেবার কথা ছিল--।
--দিলনা কেন?
--নার্সিং হোমে ভর্তি হল কখন দেবে?
--কার কথা বলছো?
--ম্যাডাম বলেছিল পল্টুকে না বলতে--।
--ঐ পাঞ্জাবীটার কাছেও টাকা চেয়েছো?কাউকে ছাড়লে না দেখছি।কি করছো কি বাল ছাড়ো ব্যথা লাগেনা বুঝি?করলে করো।
দেবব্রত বাল ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে।মনের ইচ্ছে হলেই হয়না শরীরের ক্ষমতা থাকতে হবে।বয়স তো কম হলনা।
পল্টু নাম মাত্র খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে।পরমিত পাশের ঘরে শুয়েছে।সিবিসি টেস্ট করতে দিল কেন?চিন্তাটা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না।ডাক্তার কি অনুমান করছেন?ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়নি একজন স্টাফের কাছে শুনলো।এখন মনে হচ্ছে জেন দিন দিন কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিল।বাবাজীর কথা মনে পড়ল,যশের চিন্তায় ঝড়ের গতি বুঝতে পারেনি।কাউকে চেনে না জানেনা চোখের দেখাও কোনোদিন হয় নি এভাবে কেউ বলতে পারে কিভাবে? যশ জানতে পারলে কি হবে ভেবে অন্ধকার দেখে।বাচ্চাটা ভাল করে দেখা হয়নি,মাথাভরা চুল মায়ের বুকে সেটে আছে।পরমিত বলছিল ওদের বাড়ীর সব ছেলে একমাত্র যশ মেয়ে তাই খুব প্রশ্রয়ে বড় হয়েছে।কি যেন নাম বলছিল?একসময় মনে পড়ে বিল্লু।এবার থেকে বিল্লু বলে ডাকবে।