Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 250)

শ্যামলেন্দুবাবু বেশ কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও তোতলাতে তোতলাতে বললেন, “আসলে আমি তো রোডওয়েজের ব্যবসা করি। ড্রাইভার আর খালাসীদের মুখে মুখে অনেক রকম খবরই তো ঘোরাফেরা করে। তাদের মুখেই আমি বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারটার আঁচ পেয়েছি। এতদিন তো তোমার সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। তবে এখন তো তোমাকে আমাদের বড় আপন, বড় কাছের বলে মনে হচ্ছে। তাই ভাবলুম তোমাকে এ ব্যাপারে একটু সাবধান করে দেওয়া উচিৎ। তাই .....”

সীমন্তিনী তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই মিষ্টি হেসে বলল, “আপনাদের মত হিতৈষী পাওয়াও বড় ভাগ্যের ব্যাপার বড়দা। আপনাকে তাই আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আর আমার সুরক্ষার কথা ভেবে আমাকে বা পরিকে কোনও কিছু জানাবার চেষ্টাও করবেন না দয়া করে। কথাটা অন্যভাবে নেবেন না প্লীজ, কিন্তু সত্যি বলছি বড়দা, তাতে আপনারই বিপদ হতে পারে। জানেন তো যারা পুলিশ বা আর্মির সহায়তা করে তাদের ওপরেও কিন্তু উগ্রপন্থীদের নজর থাকে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি চাইনা আপনার বা আপনাদের পরিবারের কোন ক্ষতি হোক। আর জানেনই তো আমাদের কাজটাই এমন। সব সময় প্রাণটাকে হাতের মুঠোয় নিয়েই আমাদের চলতে হয়। এছাড়া তো আর উপায় নেই। তবে যথাসম্ভব সাবধান থাকবার চেষ্টাই করি। আর সে জন্যেই তো এখন ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমি আপনাদের ছাড়তে সেই লজে যেতে পাচ্ছি না। আচ্ছা, সে’কথা ছেড়ে এবার বরং গাড়িতে গিয়ে উঠুন। অনেক রাত হয়ে গেল। আর বড়দা, আপনাদের গাড়ি গুলো ওখানে রেখেই আপনাদের ড্রাইভারেরা কিন্তু এখানে ফিরে আসবে নীতার সাথে। কাল সকালে ওরা গিয়ে আপনাদের নিয়ে আসবে। ভাববেন না। রাতে সেখানে কোনরকম অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করবেন। আর একটা কথা, সকালে এখানে সবাই মিলে জল খাবার খেয়ে নেবার পরই কিন্তু আপনারা রওনা দিতে পারবেন। তার আগে নয়। এ’কথাটা অন্যান্য সবাইকে জানিয়ে দেবেন প্লীজ। কাল সকাল সাতটার মধ্যেই আপনাদের ড্রাইভারেরা সেখানে পৌঁছে যাবে। আপনারা তৈরী হয়ে থাকবেন প্লীজ” বলে গাড়ির কাছে আসতেই শ্যামলেন্দু গাড়িতে উঠে বসতে সীমন্তিনী আবার নবনীতাকে বলল, “রামসিং ওখানে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে নীতা। তাই ওখানে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর দেরী করবি না। তাড়াতাড়ি চলে আসবি। তুই এলেই কিন্তু আমরা খেতে বসব, ঠিক আছে”?

নবনীতা “হ্যাঁ দিদি, ঠিক আছে, আসছি তাহলে আমরা” বলতেই সীমন্তিনী ঈশারা করতেই গাড়ি দুটো গেটের দিকে এগিয়ে গেল। সীমন্তিনী একটু সাইডে এসে গেটের দিকে পরিস্কার নজর ফেলল। শ্যামলেন্দু বাবুদের গাড়ি দুটো বেরিয়ে যাবার পর পরই পুলিশের একটা পেট্রোলিং জীপকে যেতে দেখে মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে মোবাইলে সময় দেখে সে ঘরের দিকে চলল।

তখন ডাইনিং টেবিলে নিরঞ্জনবাবু, হৈমবতীদেবী, সরলাদেবী, আর চন্দ্রকান্তবাবু খাচ্ছিলেন। সীমন্তিনী লক্ষ্মীকে আগে থেকেই এমন নির্দেশ রেখেছিল। কিন্তু সুলোচনাদেবীকে সেখানে না দেখে লক্ষ্মীকে জিজ্ঞেস করল, “বড়বৌদি বসেননি? তিনি কোথায়”?

লক্ষ্মী কিছু বলবার আগেই হৈমবতীদেবী বললেন, “ও’ঘরে অর্চু একা বসে আছে দেখে বড়বৌমা ওর কাছে গিয়ে বসেছে। বলল তোমাদের সাথে পরে একসাথে বসবে খেতে” বলে অর্চনাদের থাকবার ঘরের দিকে ঈশারা করলেন।

সীমন্তিনী তাদের সাথে টুকটাক দু’একটা কথা বলে অর্চনার ঘরে গিয়ে চুপিচুপি উঁকি মেরে দেখে যে সুলোচনাদেবী অর্চনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন। অর্চনার মুখটা উল্টোদিকে ছিল বলে দড়জা থেকে দেখা যাচ্ছিল না। সীমন্তিনী তখন ঘরের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সুলোচনাদেবীকে উদ্দেশ্য করে বলল, “বড়বৌদি, তুমিও তো মা-পিসিদের সাথে বসে যেতে .......”

কিন্তু তার কথা শেষ হবার আগেই অর্চনা এক ঝটকায় সুলোচনাদেবীর বুক থেকে উঠে সীমন্তিনীর ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে জোরে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে ‘হাউ হাউ’ করে কেঁদে উঠল। সীমন্তিনী তার অবস্থা দেখে হকচকিয়ে উঠে তাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে সোনা? এমন করছিস কেন রে? এভাবে কাঁদছিস কেন”?

অর্চনা কোনও কথা না বলে একভাবে কেঁদেই যেতে লাগল। সীমন্তিনী অর্চনার কাঁধে পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে চোখের ঈশারায় সুলোচনাদেবীকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, “আমিও তো কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা মন্তি। তুমি ওদেরকে নিয়ে বেরিয়ে যাবার পরেই ও একা একা এ ঘরে চলে এসেছিল। আমি তোমাদের সাথে খাবো শুনে মা বললেন অর্চুর কাছে এসে বসতে। আমি এ’ঘরে ঢুকে দেখি ও হাঁটুতে থুতনী চেপে বসে বসে কাঁদছে। আমি বারবার জিজ্ঞেস করা সত্বেও কিছু বলছে না। তারপর আমি জোর করে ওর মুখটা টেনে তুলতেই আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে একনাগাড়ে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। কিন্তু কিচ্ছুটি বলছে না”।
 

সীমন্তিনী সুলোচনাদেবীর কথা শুনে তাকে চোখের ঈশারায় করে চুপ করতে বলে আবার অর্চনার কাঁধে পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আচ্ছা বোন, তুই তো সেদিন আমার কাছে নিজেই স্বীকার করলি যে পরিকে তুই মনে মনে ভালবেসে ফেলেছিস। আজ আমরা তোদের দু’জনের বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেললাম। তোর তো এখন খুশীতে ময়ুরের মত পেখম তুলে নাচ করবার কথা! আর তুই কাঁদছিস? তোর মনে কিসের এত দুঃখ জেগে উঠল বল তো? তুই কি এ বিয়েতে রাজি নোস? আর যদি সেটাই হয়, তবে খুলে বল আমাকে। আমি এখনই এ বিয়ে নাকচ করে দেব। আমি বেঁচে থাকতে তোর ইচ্ছের বিরূদ্ধে কেউ কারো সাথে তোর বিয়ে দিতে পারবে না”।

এবার অর্চনা হঠাৎ করেই নিজেকে সীমন্তিনীর হাতের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঝুপ করে তার পায়ের ওপর মুখে চেপে দু’হাতে সীমন্তিনীর দুটো পা জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কেঁদে উঠল। সীমন্তিনী অর্চনার এমন আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ল। ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতেই কয়েকটা মূহুর্ত চলে গেল। ততক্ষণে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসা সকলেই অর্চনার কান্না শুনে ছুটে এসেছে। লক্ষ্মীও এসে পড়েছিল। সীমন্তিনী তখন নিচু হয়ে অর্চনার দুটো হাত ধরে তাকে টেনে তুলবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু অর্চনা একটা ছোট জেদী বাচ্চার মত দু’হাতের সর্বশক্তি দিয়ে সীমন্তিনীর পা দুটো আঁকড়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছিল। এদিকে দড়জার কাছে ভিড় করে থাকা সকলেই ‘কি হয়েছে, কি হল’ বলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সীমন্তিনী তাদের সকলকে চোখের ঈশারায় বুঝিয়ে জোর করে অর্চনাকে মাটি থেকে টেনে তুলে বলল, “এ কি করছিস অর্চু। তোকে না কতদিন বলেছি তোরা কেউ আমার পায়ে হাত দিবি না। সে’কথা তুই ভুলে গেলি কি করে রে? কী হয়েছে, সেটা তো বলবি”।
 

অর্চনা ছোট বাচ্চার মত আবার সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারব না দিদিভাই। কিছুতেই পারব না। সাতটা বছর আমি মা বাবা ভাই বোনকে ছেড়ে নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছি। ভগবান চাইলে আমায় সারাজীবন আবার অমন শাস্তি দিন। যত কষ্টই হোক আমার, আমি মুখ বুজে সয়ে যাব। কিন্তু তোমায় ছেড়ে আমি বাঁচতে পারব না দিদিভাই। আমি মরে যাব”।

অর্চনার মনের কথা শুনতে পেয়ে সকলেই আশ্বস্ত হলেও প্রত্যেকের মুখেই সমবেদনা মিশ্রিত হাসি ফুটে উঠল। সীমন্তিনী বাইরের সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, “বড়মা, তোমরা গিয়ে খাওয়াটা শেষ করো। কিছু যে হয়নি সেটা তো বুঝতেই পারছ তোমরা। আমি ওকে সামলাচ্ছি, তোমরা যাও”।

বেশ কিছুক্ষণ অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে, বাইরের সবাই ডাইনিং টেবিলের দিকে ফিরে যেতে, সীমন্তিনী অর্চনাকে নিয়ে ধীরে ধীরে একটা জানালার পাশে গিয়ে পর্দা সরিয়ে খোলা আকাশের দিকে দেখিয়ে বলল, “দ্যাখ অর্চু, ওই আকাশের দিকে একটু তাকিয়ে দ্যাখ। কত তারার ভিড় ওখানে, কত গ্রহ নক্ষত্র উপগ্রহে ভরা। এ সব কিছুই তো ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমাদের এই পৃথিবী, পৃথিবীর বুকের সমস্ত কিছু, এসবও সেই ভগবানেরই সৃষ্টি। তোকে, আমাকে, এই বড়বৌদিকে, আর এমন প্রত্যেককটা লোককে সেই একই ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষ প্রত্যেকটা জীব আর প্রতিটা স্থাবর অস্থাবর সব কিছুই নিজের নিজের আলাদা আলাদা পথে চলে। পুরোপুরি এক পথে কিন্তু দুটো মানুষ বা দুটো বস্তু কখনোই চলতে পারে না। ওই যে দেখছিস সপ্তর্ষি মন্ডল। সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্নের আকার দিয়ে সাতটা নক্ষত্র আছে। ওদের সাতজনকে একটা পরিবারে ভগবান সৃষ্টি করেছেন। তাই ওই পরিবারের নিজস্ব নাম দেওয়া হয়েছে সপ্তর্ষি মন্ডল। এখন ধর ওই সাতটা নক্ষত্রের প্রথমটা মেসো, পরেরটা মাসি, তার পরেরটা তুই, তার পরেরটা রচু, তারপর ভাই, পরেরটা ধর তোর রতুদা, আর সব শেষেরটা ধর আমাদের পরি কিংবা তুই আমাকেও ধরতে পারিস। দুর থেকে সকলেই এটাকে সপ্তর্ষি মন্ডল পরিবার বলেই চেনে। কিন্তু এই সাতজনের কেউই কিন্তু একসাথে থাকে না, বা একসঙ্গে পথ চলে না। প্রত্যেকের গতিপথ কিন্তু আলাদা। তার মানে বুঝতে পারছিস, কেউ কারো হাত ধরে পাশাপাশি চলতে পারে না। একেকজনের নির্দিষ্ট পথে একেক জনকে চলতে হয়। এক পরিবারের সদস্য হলেও কিন্তু প্রত্যেকের গতিপথ বা যাত্রাপথ আলাদা। আমাদের পৃথিবীর প্রত্যেকটা পরিবারও কিন্তু একই নিয়মে চলে। স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা, ভাই বোন সাময়িকভাবে জীবনের কিছুটা সময় পাশাপাশি থাকতে পারে। যেমন দুটো নক্ষত্র, গ্রহ বা উপগ্রহ তাদের নিজ নিজ গতিপথে থেকেও একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসে কোন কোন সময়। কিন্তু কেউই একসাথে চলতে পারে না সারাজীবন। তাই কেউ কাউকে সারাজীবন আঁকড়ে ধরে থাকতেও পারেনা। সবাইকেই কোন না কোন সময় তাদের প্রিয়জনের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে হয়। ভগবানের প্রতিটা সৃষ্ট বস্তুই কিন্ত এই একই নিয়মে চলে। আর এ নিয়ম ভাঙবার শক্তি বা সামর্থ্য কারোরই নেই। আমার বা তোরও সে ক্ষমতা নেই। তাই আমরাও সেই একই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি যে দুর থেকে ওই সপ্তর্ষি মন্ডলটাকে যেমন দেখতে লাগে, আমাদেরকেও যেন তেমন এক পরিবারভুক্ত মনে হয়। তুই ভাবছিস পরির সাথে বিয়ে হলে তুই আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাবি। কিন্তু তা নয়রে বোন। সেটা কিছুতেই হতে পারে না। আমি যে নিজেকে মনে প্রাণে তোদের পরিবারের একজন বলেই ভাবি রে বোন। রচুকেও আমি এমন একটা কথা বলেছিলাম ওদের বিয়ের আগেই। আজ তোকেও বলছি সোনা। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, যতদিন আমার শ্বাস প্রশ্বাস চলতে থাকবে, ততদিন আমি তোদের পাশে এভাবেই থাকব। দুরে থেকেও আমি তোদের সকলকে আগলে রাখব। যেদিন সেটা পারব না সেদিন বুঝে নিবি, সপ্তর্ষি মন্ডলের শেষ নক্ষত্রটা তার গতিপথ থেকে খসে পড়ে গে...”।

অর্চনা “দিদিভাই” বলে চিৎকার করে সীমন্তিনীর মুখে হাত চাপা দিয়ে তার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, “এ’সব কি বলছ দিদিভাই? আবার আমাকে কাঁদাতে চাইছ, না”?
 

সীমন্তিনী অর্চনার কথার জবাবে কিছু বলবার আগেই তার হাতের মোবাইলটা বেজে উঠল। নীতা কলিং দেখে সে সাথে সাথে কল রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ নীতা, বল। ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে তো? কখন ফিরছিস তোরা”?

নবনীতা ও’পাশ থেকে জবাব দিল, “এদিকে সব কিছু ঠিক আছে দিদি। ম্যাম আগে থেকেই সবকিছু রেডি করে রেখেছিলেন। আমরা ফিরছি এখন”।

সীমন্তিনী আশ্বস্ত সুরে বলল, “ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি চলে আয় তুই। তুই এলে আমরা একসাথে খেতে বসব” বলে ফোন কেটে দিল।
 

সুলোচনাদেবী মুগ্ধ দৃষ্টিতে সীমন্তিনীর দিকে দেখতে দেখতে অর্চনাকে নিয়ে বিছানায় বসাতে বসাতে বললেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে বোন। কিচ্ছুটি ভাবিস না। বিয়ে যখন স্থির হয়ে যায় তখন নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনদের ছেড়ে যাবার কথা মনে এলেই সব মেয়ের বুকের ভেতরটাই এমন যন্ত্রণায়, এমন কান্নায় ভরে ওঠে রে। কিন্তু কী করার আছে বল। এটাই যে আমাদের সমাজের রীতি। সব মেয়েকেই যে বুকে পাথর চেপে রেখে মুখ বুজে এ’সব মেনে নিতেই হয়। আর জানিসই তো, মেয়েদের জীবনে তিনটে ধাপ আছে। কন্যা, জায়া আর জননী। কন্যা তো সকলে জন্মগত ভাবেই হয়ে যায়। তবে প্রকৃত জায়া আর জননী হয়ে ওঠা কিন্তু খুব সহজ ব্যাপার নয়। বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে যারা সে নতুন অজানা বাড়িটাকে নিজের বলে মেনে নিতে পারে, অচেনা শ্বশুরবাড়ির সকলকে যখন শ্রদ্ধা, স্নেহ ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়ে আপন করে নিতে পারে, তারা তখন কন্যা থেকে হয়ে ওঠে জায়া। এতে আন্তরিক প্রচেষ্টা আর সদিচ্ছার সাথে সাথে অনেক ধৈর্য্যেরও খুবই প্রয়োজন হয়। আর জননী হয়ে ওঠা তো আরও কঠিন। স্বামীর যথার্থ প্রেমিকা হয়ে ওঠবার পর ভগবানের আশিস পেলে তবেই একমাত্র একটা মেয়ে জায়া থেকে জননী হয়ে উঠতে পারে রে বোন। তবে আমার মনে হয় তুই যেমন মা-বাবার ঘরে জন্মেছিস তাতে এ’সব ব্যাপারে তুই যথার্থ শিক্ষা অনেক আগেই পেয়েছিস নিশ্চয়ই। সে বিষয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আর তুই আর ভাইদা যে একে অপরকে নিয়ে খুব সুখী হবি এ বিষয়েও আমরা সবাই নিশ্চিত। আর এ বিশ্বাসও আমার মনে আছে যে তুই স্বার্থক কন্যার সাথে সাথে প্রকৃত অর্থেই যথাসময়ে স্বার্থক জায়া আর স্বার্থক জননীও হয়ে উঠবি। আর তোর দিদিভাইয়ের সাথে সাথে আমরাও সকলে সে’সব দু’চোখ ভরে তা দেখব। আর তোদের পাশে থাকব”।

নির্ধারিত দিনে রাজগঞ্জের বাড়িতে নির্বিঘ্নে পরিতোষ আর অর্চনার বিয়ে সম্পন্ন হল। পরিতোষ আর অর্চনার বিয়ের সময় সীমন্তিনী আর নবনীতার দেখা পেয়ে মহিমা আর বীথিকার আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের অন্ত ছিল না। সীমন্তিনী আর পরিতোষের আমন্ত্রণে কলকাতা থেকে মহিমা, বীথিকা, রেস্টুরেন্ট মালিক দীপুদা, ডঃ দিব্যেন্দু, তার স্ত্রী দীপা, মেয়ে আকাঙ্ক্ষা, বিট্টু, শেখর, বিপ্লব, প্রণব, আব্দুল, প্রীতি আর বিট্টুর কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হৈমন্তী ম্যাডাম ছাড়াও পরিতোষের পাঁচ ছ’জন কলিগ সে বিয়েতে এসেছিল। কালচিনি হাসপাতালের ডঃ সোম এবং তার পরিবারের চার জন, কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায় ও তার পরিবারের তিন জন, কালচিনি হাসপাতালের তিনজন নার্স যারা অর্চনাকে শুশ্রূষা করেছিল, নাগরাকাটার অধিকারী কনস্ট্রাকশনের মালিক তরফের চার জন, নাগরাকাটা থানার সীমন্তিনীর কলিগ এবং তাদের পরিবারের ন’ জন, জয়া ম্যাডামের পরিবারের তিন জন, নীতার সহকর্মী ছ’জন, রামসিং, লক্ষ্মী এরা সকলেই সেই বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল। এছাড়া কালচিনি ও রাজগঞ্জের বাড়ির সকলে ছাড়াও রতিকান্তবাবুদের খুব ঘণিষ্ঠ আট দশ জন কন্যাপক্ষের নিমন্ত্রিত হিসেবে ছিল। বরপক্ষের তরফ থেকে নিরঞ্জনবাবুদের পুরো পরিবার ছাড়াও তার দুই মেয়ের পরিবারের সকলে, আর মালবাজারের মিঃ বক্সী এবং তার দলবলের ছ’জন উপস্থিত ছিল।

আমন্ত্রিত নিমন্ত্রিত আর দু’পক্ষের সমস্ত আত্মীয় স্বজনেরা নব দম্পতীকে প্রাণভরা শুভেচ্ছা, ভালবাসা আর আশীর্বাদ দিয়ে আশাতীত হর্ষোল্লাসের সাথে বিয়েটা সুসম্পন্ন করেছিল।


*****************
 
(To be cont'd ......)
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 30-03-2020, 11:17 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)