Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 248)

সিকদারবাবু একটু হতাশ গলায় জবাব দিলেন, “একেবারেই না ম্যাম। আমাদের গেস্ট হাউসের যে কী অবস্থা তা আপনি নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। বাইরের অফিসারেরা এসে সেখানে যেসব কীর্তিকলাপ করে তাতে সেটা ভদ্রলোকদের থাকবার মত উপযুক্ত থাকে না। এমনিতে চৌকিদার আর সুইপারেরা সাফ সুতরোই রাখে। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই দুর্গন্ধে বমি এসে যায় প্রায়। ম্যাট্রেস, মশারী আর বালিশ ফালিশের যা অবস্থা। একেবারে যাচ্ছে তাই। বালিশে মাথা রাখলেই নাকে দুর্গন্ধ ঢোকে। সেখানে কোনও ভদ্রলোকের পক্ষে থাকা অসম্ভব”।

সীমন্তিনী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, “ওঃ, বুঝেছি। কিন্তু অল্টারনেটিভ কী করা যায়, এ ব্যাপারে কিছু সাজেশান দিতে পারেন আপনি”?

সিকদারবাবু কয়েক মূহুর্ত ভেবে বললেন, “এত ভাববেন না ম্যাম। অল্টারনেটিভ অ্যারেঞ্জমেন্ট কিছু না কিছু হয়েই যাবে। আপনার কোয়ার্টারে কয়েকটা এক্সট্রা বেডের বন্দোবস্ত করে দিতে খুব মুস্কিল কিছু হবে না। তবে আর একটা অপশন একটু ভেবে দেখি। আপনাকে একটু পরেই সেটা জানাচ্ছি। আমি আগে একটু খবর নিয়ে নিই”।

সীমন্তিনী আর দেরী না করে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ সিকদারবাবু। আপনি প্লীজ একটু দেখুন ব্যাপারটা। আমি চেম্বারে আছি। আর হ্যাঁ, কোনও রিকুইজিশন বা অর্ডার আছে আমার জন্যে আজ”?
 

সিকদারবাবু জবাব দিলেন, “না ম্যাম, নতুন কিছু আর নেই”।

সীমন্তিনী সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের চেম্বারে ঢুকতে না ঢুকতেই পর পর দু’বার তার পার্সোনাল মোবাইলে দুটো মেসেজ ঢোকবার শব্দ পাওয়া গেল। নিজের চেম্বারের চেয়ারে বসে প্রথমে ব্যাগের ভেতর থেকে নিজের পার্সোনাল মোবাইলটা বের করে ইনবক্স মেসেজদুটো দেখল। প্রথম মেসেজটা কিংশুকের। লিখেছে “প্রণাম নিও দিদিভাই”। মেসেজটা পড়ে সীমন্তিনী একটু অবাকই হল। কিংশুকের এমন মেসেজের অর্থ কালচিনির বাড়িতে আসল খবরটা পৌঁছে গেছে! কে জানাল? রচনা, রতীশ, নীতা, অর্চনা আর পরিতোষ নিজেও যে সীমন্তিনীর কথার অন্যথা করে তাদেরকে এ খবরটা দেয়নি, এ ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ নেই। তাহলে কি বড়মা জানালেন? না কি নিরঞ্জনবাবুদের কেউই সেটা জানালেন। দ্বিতীয় মেসেজটা পরিতোষের। লিখেছে “ফীল ফ্রি টু কল মি এনি টাইম। নীতা কল্ড মি। থ্যাঙ্কস টু গড। ধর্ম সঙ্কটে পড়তে হয়নি আমাকে। আই অ্যাম হ্যাপি। কালচিনিতে কখন কিভাবে জানাবে, ইটস আপ টু ইউ। বি কেয়ারফুল টু ফিক্স দা ডেট অ্যান্ড লোকেশান। তোমাকে আর নীতাকে কিন্তু আমার বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে আর সমস্ত লৌকিকতায় হাজির থাকতে হবেই। অ্যাট এনি কস্ট। রেস্ট ইগনোরেবল”।

পরিতোষের মেসেজটাতে “আই অ্যাম হ্যাপি” দেখে সীমন্তিনী খুব খুশী হল। পরিতোষ যে অর্চনাকে বিয়ে করতে রাজী আছে, তার মনে যে কোনরকম সংশয় নেই, এতে আর কোনও সন্দেহ রইল না। খুশী মনে নিজের ড্রয়ারগুলো খুলে স্টীল কেবিনেট থেকে কয়েকটা ফাইল বের করে আবার চেয়ারে বসতে না বসতেই ওসি মিঃ সিকদার দরজায় নক করে বললেন, “ম্যাম, আসব”?

সীমন্তিনী অনুমতি দিতেই সিকদারবাবু ঘরে ঢুকে বললেন, “ম্যাম, শুনলাম বসাক গারমেন্টসের মালিক মিসেস জয়া বসাকের সাথে আপনার জানাশুনো আছে”।

সীমন্তিনী একটু কৌতূহলী দৃষ্টিতে সিকদারবাবুর দিকে তাকিয়ে জবাব দিল, “হ্যাঁ, তা আছে। কিন্তু তার আবার কী হল সিকদারবাবু? বসুন। বসে বলুন তো কি ব্যাপার? বসাক গারমেন্টসে কিছু হয়েছে নাকি”?

সিকদারবাবু উল্টোদিকের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, “না না ম্যাম, সেখানে কিছু হয়নি। আসলে বসাক গারমেন্টসের যে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটটা আছে তাদের বাড়ির পাশে। সেখানে একটা সর্ট অফ লজ আছে। যেটার মালিকও ওই জয়া বসাকই। তাদের বাইরের দামী ক্লায়েন্টরা বা মহাজনেরা যখন এখানে এসে রাত কাটাতে বাধ্য হয় তখন তাদের অ্যাকোমোডেট করবার জন্যেই খানিকটা লজের মত করে একটা তিন রুমের ঘর বানিয়েছেন। প্রত্যেকটা রুমেই অ্যাটাচ বাথরুমও আছে। আমি তাদের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানতে পারলুম যে আজ তাদের ওই লজে থাকবার মত কেউ নেই। আর ওই ম্যানেজারবাবুই বললেন যে যদিও বাইরের লোকদের ব্যবহারের জন্য সেটা দেওয়া হয় না, তবে আপনার সাথে জয়া বসাকের যেমন হৃদ্যতা আছে, তাতে আপনি নিজে তাকে একটু অনুরোধ করলেই উনি সেখানে আপনার গেস্টদের নিশ্চয়ই থাকতে দেবেন। আর সেখানে রুম বাথরুম, বিছানাপত্র নাকি খুবই সাফ সুতরো। জল, আলো, পাখা, মশারী সবকিছুই একদম ঠিকঠাক আছে। সেটা শুনেই আমি নিজে আর জয়া বসাকের সাথে কোন যোগাযোগ না করে আগে আপনাকেই কথাটা জানাতে এলাম। আপনি চাইলে তার সাথে একটু কথা বলে দেখতে পারেন”।

সীমন্তিনী সিকদারবাবুর কথা শুনে খুব খুশী হয়ে বলল, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সিকদারবাবু। আমার কাছে তার নাম্বার আছে। আমি তার সাথে কথা বলে নেব’খন। আর হ্যাঁ, সুখেন্দু এসেছে কি? ও এসে থাকলে ওকে একটু আমার সাথে দেখা করতে বলে দেবেন প্লীজ”।

সিকদারবাবু “ঠিক আছে ম্যাম, আমি সুখেন্দুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে জয়া বসাকের কাছ থেকে সাহায্য না পেলে আমাকে জানাবেন কিন্তু। তখন আমি আপনার কোয়ার্টারে এক্সট্রা খাট বিছানা পাঠাবার ব্যবস্থা করব” বলে বেরিয়ে গেলেন।

সীমন্তিনী দুটো ফাইল মন দিয়ে দেখতে দেখতেই একজন তার চেম্বারের দরজায় নক করে বলল, “ম্যাম, আপনি আমায় ডেকেছিলেন”?

সীমন্তিনী দড়জার দিকে চেয়ে বলল, “হ্যাঁ সুখেন্দু এস প্লীজ। বোসো”।

সুখেন্দুর সাথে সমস্ত দরকারী কথা বলে তাকে কিছু নির্দেশ দিয়ে সীমন্তিনী আবার কাজে ডুবে গেল। কিছুক্ষণ টেবিলে বসে কাজ করবার পর ফাইলগুলো টেবিলের ওপর গুছিয়ে রেখে সে তার চেম্বারের কোনায় রাখা ডেস্কটপ কম্পিউটারটা চালু করল। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ন চিঠির জবাব টাইপ করে ই মেইল করে দিল। এক সময় তার ব্যাগের ভেতরে রাখা ফোনটা বেজে উঠতেই সীমন্তিনী কম্পিউটার টেবিল থেকে সরে এসে ফোনটা ধরল। অন্যপাশ থেকে নিরঞ্জনবাবু জানালেন যে তার ছেলেরা আর অন্যান্যরা সবাই বেলা একটার সময় আলিপুরদুয়ার থেকে রওনা হয়েছে। দুটো গাড়িতে তারা আসছেন শুনে সীমন্তিনী সেই গাড়িগুলোর নাম্বার জেনে নিল। কথা শেষ করে দেখল বেলা তখন একটা কুড়ি। তাই আর সময় নষ্ট না করে সে কম্পিউটার বন্ধ করতে গিয়েই তার নজরে পড়ল পরিতোষ একটা ই-মেইল পাঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি ই মেইলটা পড়েই সে কম্পিউটার বন্ধ করে নিজের ফাইলপত্র গুছিয়ে ড্রয়ারে আর কেবিনেটে রেখে সব কিছু চাবি মেরে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়ল।

সীমন্তিনী বাড়ি এসে পৌঁছলো প্রায় সওয়া দুটো নাগাদ। অফিস থেকে জয়া বসাকের সাথে দেখা করতে যাবার সময়েই পরিতোষ তাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল যে তার পাঠানো ই-মেইলটা সে পড়েছে কি না। সীমন্তিনী মেইলটা পড়েছে বলতেই পরিতোষ বলেছিল ‘নির্দেশগুলো মেনে চলো’। আর বেশী কোন কথা বলেনি। সীমন্তিনী জয়া বসাকের সাথে আলোচনা করে তার গেস্টরুমে সমস্ত ব্যবস্থা পাকা করে সেখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেবার আগেই নীতাকে ফোন করে জেনে নিয়েছিল যে বাড়িতে সকলের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। তখন সে নীতাকে জানিয়ে দিয়েছিল যে সে মিনিট পনেরোর ভেতরেই পৌঁছে যাবে, আর সে বাড়ি গিয়ে লাঞ্চ করবে। আর কোয়ার্টারের কম্পাউন্ডে ঢুকে গার্ডদের কেবিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আর তার ড্রাইভার রামসিংকে কিছু বিশেষ নির্দেশ দিয়ে সে ঘরে এসে কলিং বেল বাজাতেই আজ অর্চনা, নবনীতা বা লক্ষ্মীর পরিবর্তে সুলোচনা দড়জা খুলে দিতে সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ওমা, তুমি কেন দড়জা খুলে দিতে এলে বড়বৌদি? নীতা অর্চু ওরা সব কোথায় গেল”?

সুলোচনা সীমন্তিনীকে ভেতরে টেনে নিয়ে দড়জা বন্ধ করতে করতে জবাব দিলেন, “মা ওই দুই জনকে নিজের দু’বগল দাবা করে রেখেছেন। তাদের এক মূহুর্তের জন্যেও ছাড়তে চাইছেন না। আর তোমার এখনও খাওয়া হয়নি বলে লক্ষ্মীদি তোমার জন্যে খাবার গরম করছে। তাই আমি খুললাম” বলে একটু থেমে সীমন্তিনীর দিকে ভরপূর দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে বললেন, “তোমাকে পুলিশের এই পোশাকে, কী যে দারুণ লাগছে না মন্তি, কী বলব”।
 

সীমন্তিনী একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “কি যে বলছ না তুমি বড়বৌদি, ধ্যাত। আচ্ছা, তোমরা সবাই খেয়ে নিয়েছ তো”?

সুলোচনা জবাব দিলেন, “হ্যাঁগো, আমাদের সকলেরই খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। তুমি যে বাড়ি এসে খাবে সেটা তো আগে কেউ বলেনি। নইলে আমি অন্ততঃ তোমার জন্যে অপেক্ষা করতুম”।

সীমন্তিনী বলল, “এমা না না, তুমি কেন আমার জন্যে .... আচ্ছা সে যাই হোক, আমি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি বরং সকলে যেখানে আছেন সেখানেই গিয়ে গল্প কর। আমি আসছি এক্ষুনি” বলে তার কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল।

মিনিট দশেক বাদে হাতমুখ ধুয়ে শালোয়ার কামিজ পড়ে সীমন্তিনী প্রথমে রান্নাঘরে এসে দেখে লক্ষ্মী তিনটে প্লেটে খাবার সাজাচ্ছে। সেটা দেখে অবাক হয়ে সে জিজ্ঞেস করল, “একি গো লক্ষ্মীদি? একটু আগেই না শুনলুম যে সকলের খাওয়া হয়ে গেছে। তাহলে আর তিনটে থালা সাজাচ্ছ কেন তুমি? আমি একাই তো শুধু খাব এখন, না কি”?
 

লক্ষ্মী মুচকি হেসে উত্তর দিল, “একবার গেস্টরুম থেকে ঘুরে এস দিদিমণি, তাহলেই বুঝতে পারবে”।
 

সীমন্তিনী আর কোন কথা না বলে গেস্টরুমে গিয়ে ঢুকতেই সেখানে বাকি সকলের সাথে চন্দ্রকান্তবাবু আর সরলাদেবীকে দেখে অপ্রত্যাশিত আনন্দে চমকে প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “বড়মা, কাকু? তোমরা? তোমরা কখন এলে? আমি তো কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনে। কী করে এটা সম্ভব হল” বলতে বলতে চন্দ্রকান্তবাবুকে প্রণাম করল। তারপর সরলাদেবীকে প্রণাম করতেই সরলাদেবী সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মুখটা চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে দিতে বললেন, “সোনা মা আমার, নিজের প্রতি কি একেবারেই যত্ন নিস না নাকি রে? এত শুকিয়ে গেছিস কেন রে মা? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস না বুঝি, তাই না”?
 

সরলাদেবীর স্নেহের আলিঙ্গনে সীমন্তিনীর দু’চোখ জলে ভরে যাচ্ছিল। তার গলা রুদ্ধ হয়ে গেল। ঘরের বাকি সবাই চুপ করে তাদের দুজনকেই দেখে যাচ্ছিল। বেশ কয়েক মূহুর্তের পর হাসি হাসি মুখে নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে সীমন্তিনী বলল, “আমি ঠিক আছি বড়মা। একদম ঠিক আছি। কিন্তু তোমরা এভাবে কোন খবরাখবর না দিয়েই হঠাৎ করে এসে পড়লে যে? আমাকে তো একটু ফোন করে জানিয়ে দিতে পারতে অন্ততঃ”।

সরলাদেবী সীমন্তিনীর গালে কপালে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “আমরা তোর কেউ নই জানি রে মা। কিন্তু তুই তো আমাদের মেয়ে। মেয়ের বাড়িতে আসতে হলে কোন মায়ের যদি মেয়ের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হয়, তাহলে সে মায়ের বেঁচে থাকার চাইতে ম......”

সীমন্তিনী সাথে সাথে সরলাদেবীর মুখে হাত চেপে ধরে অভিমানী গলায় বলল, “বড়মা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি। ও’সব অলক্ষুণে কথা বোল না প্লীজ। তোমরা তো জান না, কাল রাত থেকে তোমার আর কাকুর কথা খুব মনে পড়ছিল আমার। মনে হচ্ছিল আজ যদি তোমরা দু’জনও আমাদের সাথে আলোচনায় থাকতে পারতে তাহলে খুব ভাল হত। কিন্তু কাজে কাজে আর বিভিন্ন চিন্তায় এতটাই ডুবে গিয়েছিলুম যে একটা ফোনও করতে পারিনি। তাই তো রচুকেই সে দায়িত্বটা দিয়েছিলুম। আর তাছাড়া, আগে থেকে কোন খবর না দিয়ে হুট করে তোমাদের আসতে বললেও তো তোমরা আসতে পারতে না। তাই আর .... কিন্তু.... আচ্ছা সে যাই হোক। তোমরা এসেছ কখন বল তো? আর এনাদের সাথে পরিচয় নিশ্চয়ই হয়ে গেছে এতক্ষণে”?
 

এবার চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “আমরা তো এই মাত্র মিনিট পনেরো আগে এসেছি রে মা। আর এসেই তো এনাদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। তুই যখন নীতাকে ফোন করেছিলিস তার বোধহয় মিনিট দুয়েক বাদেই আমরা এসে পৌঁছেছি। তুই লাঞ্চ করিসনি শুনে, অর্চু নীতা ওরা বারবার খেতে বলা সত্বেও আমরা তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছিলাম তুই এলে তিনজনে একসঙ্গে বসে খাব। কতদিন তোর সাথে একসাথে বসে খাইনি। আজ এমন একটা সুযোগ পেয়ে আর সেটা হাতছাড়া করতে পারলুম না রে মা”।
 

সরলাদেবী একইভাবে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরেই দাঁড়িয়েছিলেন। লক্ষ্মী তাদের খেতে ডাকতে এসেও দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপলক নয়নে সেই দু’জনকে দেখে যাচ্ছিল। এমন সময় হৈমবতীদেবী বললেন, “মন্তি মা, যাও, আর দেরী না করে তোমার কাকু আর বড়মাকে সঙ্গে নিয়ে খেয়ে এস। ওরাও হয়ত আর এক বা সওয়া ঘন্টার মধ্যে এসে পড়বে। তার আগে খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম নাও মা। তোমার ওপর দিয়ে তো কম ধকল যাচ্ছে না”।
 

সীমন্তিনী সকলের কাছ থেকে দৃষ্টির মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে সরলাদেবী আর চন্দ্রকান্তবাবুকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসল। নীতা আর সুলোচনাদেবীও তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইল। অর্চনাকে হৈমবতীদেবী নিজের পাশেই বসিয়ে রাখলেন। খেতে খেতে সরলাদেবী আর চন্দ্রকান্তবাবু সীমন্তিনীকে জানালেন যে সকালে রচনা তাদের বাড়িতে সুখবরটা দেবার সাথে সাথেই রতিকান্তবাবু তার ছোটভাই আর স্ত্রীকে এখানে আসবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর বিয়ের ব্যাপারে তাদের কিছু নির্দেশ আর উপদেশও দিয়ে পাঠিয়েছেন। তাই তারা দেরী না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ধরে সোজা নাগরাকাটা চলে এসেছেন।

সীমন্তিনী খুশীতে উচ্ছ্বল হয়ে বলল, “তোমরা আসাতে আমি সত্যি খুব খুশী হয়েছি কাকু। নীতা আর অর্চুকে নিয়ে রাজগঞ্জ থেকে ঘুরে আসবার পর এই ক’টা দিনে এত দ্রুত এতসব ঘটণা ঘটে গেছে যে আমি নিজেই ঠিক বুঝে উঠতে পাচ্ছিলুম না কি করা উচিৎ বা কোনটা অনুচিত। আমি ভেবেছিলুম যে পাকা কথার ব্যাপারটা কালচিনির বাড়িতে হলেই সবথেকে ভাল হত। কারন মাসি মেসোরও তো কিছু আশা থাকতে পারে। কিন্তু কালচিনি বাড়ির যা অবস্থা তাতে সেখানে সকলকে ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসতেও অসুবিধে হত। আর এ ছাড়াও ', ঘরের বিধবা মেয়ের আবার বিয়ে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা পাড়া পড়শীরা আগে থেকে জেনে গেলে নানারকম কথাও সেখানে উঠত। মাসি মেসোরা হয়তো সে’সব সহ্য করতে পারতেন না। আর পিসি পিসোরা গতকাল এমন হঠাৎ করে এখানে এসে পড়লেন যে কাল দুপুর পর্যন্ত আমি এর বিন্দু বিসর্গও জানতে পারিনি। তাই ওই মূহুর্তে কাকে ডাকবো, কাকে খবর দেব এসব ভাবনা দুরে রেখে আগে আমি তাদের অভ্যর্থনার দিকেই জোর দিয়েছিলুম বেশী। আর সত্যি বলতে তো তখন তারাও কেউ আমাকে এটা বুঝতে দেন নি যে তারা পরি আর অর্চুর বিয়ের কথা ভেবেই এখানে আসছেন। তাই কাউকে এ বিষয়ে আর কি করে কী জানাব বল। অর্চুকে তারা তো এক কথায় পছন্দ করে ফেলেছেন। কিন্তু কাল রাত প্রায় বারোটা অব্দি অনেক বিষয়ে কথা হলেও বিয়ের দিন ক্ষণ বা অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে সেভাবে কোন কথাই হয় নি। তাছাড়া মাসি মেসো তো তখনও জানতেন না যে পিসি পিসোরা পরির সাথে অর্চুর বিয়ে দিতে রাজী আছেন। আজ সকালেই পিসি পিসোরা জানালেন যে বিয়ের আয়োজন নিয়ে পাকাপাকি সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন বলে পরির অন্যান্য দাদাবৌদিরাও আজই আসছেন। কিন্তু এমন তাড়াহুড়োর মধ্যে তোমাদেরকে ডেকে পাঠাবার মত সময়ও হাতে ছিল না। আবার এতগুলো লোকের রাতে থাকবার ব্যবস্থার জন্যেও কিছুটা ছোটাছুটি করতে হল। তাই বেশ চাপেই ছিলুম আমি। তবু মনের ভেতরে একটা কাঁটা যেন কিছুটা খচখচ করছিল। মাসি মেসোর অনুপস্থিতিতে তাদের বড়মেয়ের বিয়ের সবকিছু ঠিক করে ফেলা আমার পক্ষে হয়ত অনুচিতই হবে। আর রাজগঞ্জের বাড়ির সকলেও বিয়ের আয়োজনটা সেখানেই করা হবে বলে সকলেই খুব খুশী ছিলেন। কিন্তু পিসি পিসোরা তাতে মত দেবেন কিনা সেটা নিয়েও মনে সন্দেহ আছে। আমি সত্যি বুঝে উঠতে পারছিলুম না কারো সাথে পরামর্শ না করেই এ’সব আয়োজনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা সত্যিই আমার পক্ষে উচিৎ হচ্ছে কি না। ফোন করে ডেকে পাঠালেও মাসি মেসোরা বা রাজগঞ্জের বাড়ির কেউ, হুট করেই তো এখানে আসতে পারবেন না। অন্ততঃ চব্বিশ ঘন্টা আগেও যদি তোমাদের সবাইকে কথাটা জানাতে পারতুম, তাহলেও না হয় একটা কথা ছিল। তবে তোমরা এভাবে এসে পড়াতে আমি অনেকটাই স্বস্তি পেলুম গো বড়মা। যদি কালচিনি থেকে মাসি মেসোরাও এভাবে চলে আসত, তাহলেই ষোলকলা পূর্ণ হত। জানিনা তারা আমার এ কাজে সত্যি কোন মনঃকষ্ট পাবেন কি না”।
 

সীমন্তিনীর পেছনে দাঁড়ানো সুলোচনাদেবী সীমন্তিনীর কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন, “সত্যি মন্তি, তোমাকে যত দেখছি, তত অবাক হচ্ছি আমি ভাই। এমন একজন যদি পাশে থাকে তাহলে একটা খোঁড়া লোকও অনায়াসে এভারেস্টে উঠে যেতে পারবে। তবে ভাই, তোমার দুশ্চিন্তা কম করবার জন্যে বলছি, কালচিনির বাড়ির কাউকে নিয়ে তোমাকে এ ব্যাপারে না ভাবলেও চলবে। বিধুমামু, মামী আর ভাই তাদের সকলকেই আজ সকালেই এ’সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুমি অফিসে চলে যাবার সাথে সাথেই মা নিজে বিধুমামুকে ফোন করেছিলেন। মা বাবা দু’জনেই গতকাল এখানে যা যা আলোচনা হয়েছে সবকিছু তাদের খুলে বলে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। আর তারাও সকলেই আমাদের সিদ্ধান্তটাকে খুশী মনে মেনে নিয়েছেন। যদিও তাদের পক্ষে হুট করে আজই এখানে চলে আসা সম্ভব ছিল না, তবু বাবা আর মা তাদের আসতে বলেছিলেন। হাজার হলেও তাদের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আমরা পাকাপাকিভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করতে যাচ্ছি। কিন্তু মামী আর বিধুমামু দু’জনেই কী বলেছেন জানো? তারা এক সুরে বলেছেন, তাদের ‘মা অন্নপূর্ণা’ যেখানে আছেন সেখানে তাদের উপস্থিতি অনুপস্থিতিতে কিছুই এসে যায় না। তাদের ‘মা অন্নপূর্ণা’ যা বলবেন, ঠিক তাই হবে। তাই বুঝতেই পাচ্ছ, তুমি তাদের সকলের পক্ষ থেকে একেবারে সুপ্রীম অথরিটি পেয়ে গেছ। আর নিশ্চয়ই তোমার মনে কোন দ্বিধা রইল না। তবে একটা কথা না বলে পারছি না ভাই। ভাইদাকে ফিরে পাবার অনেক আগে থেকেই তোমার নামে অনেক কিছু শুনেছি আমার স্বামী শ্বশুর আর দেওরদের কাছ থেকে। আর সেসব শুনে আমরা সকলেই তোমার প্রশংসা করতুম। কিন্তু তোমাকে যে কোনদিন এত কাছ থেকে দেখতে পাবো, এ আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। তোমাকে দেখেছি এখনও চব্বিশটা ঘন্টাও কাটেনি। কিন্তু এটুকু সময়েই আমার মনটাও বলতে শুরু করেছে সেই একই কথা। তুমি সত্যি ‘মা অন্নপূর্ণা’ গো। তোমার তুলনা শুধু তোমার সাথেই করা সম্ভব” বলতে বলতে চেয়ারের পেছন থেকেই সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে তার মাথার চুলে মুখ ডুবিয়ে একটা স্নেহের চুমু খেলেন।

সীমন্তিনী বাম হাতে সুলোচনাদেবীর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “বৌদি প্লীজ, তুমিও অন্যান্যদের মত একই কথা বলে আমাকে লজ্জা দিও না গো” বলেই কথা পাল্টাবার উদ্দেশ্যে নবনীতাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আচ্ছা নীতা, গেস্টরুমে তো এখনই আর বসবার জায়গা নেই। আর কিছুক্ষণ বাদেই তো দাদাবৌদিরাও এসে পড়বেন। বাচ্চারা হয়ত বাইরে খেলাধুলো করে বা বসবার ঘরে টিভি দেখে যেতে পারবে। কিন্তু বড়রা সকলে মিলে একসাথে কোথায় বসা যায় ভেবেছিস”?

নবনীতা জবাবে বলল, “দিদি তোমার ঘরটাই তো সবচেয়ে বড়। তাই পিসো আর কাকু বলছিলেন যে তোমার ঘরেই বিছানা আর সোফায় যে ক’জন বসতে পারে বসিয়ে মেঝেয় কার্পেট বা শতরঞ্চি পেতে দিলেই সকলে মিলে বসতে পারবে। কিন্তু দিদি, ঘরে তো তেমন কার্পেট বা শতরঞ্চি নেই”।

সীমন্তিনী একটু ভেবে জবাব দিল, “এক কাজ কর নীতা। আমার বিছানার নিচে যে বক্সটা আছে না? সেখানে কয়েকটা পুরনো ব্লাঙ্কেট রাখা আছে। সেগুলো বের করে দেখ তো কী অবস্থা। ওগুলো পেতে ওপরে বেডশীট বিছিয়ে মেঝেয় বসবার বন্দোবস্ত করা যায় কি না দেখ। তাড়াতাড়ি গিয়ে এখনই দেখ। নইলে আমাকে কাউকে ফোন করে কিছু আনতে বলতে হবে”।


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 30-03-2020, 11:15 AM



Users browsing this thread: