Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 247)

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “এমা, ছিঃছিঃ পিসি। এভাবে বলে আমাকে পাপের ভাগী কোর না প্লীজ। আমি আর এমন কী করেছি বলো? আমি তো শুধু আমার আশাপাশের লোকগুলোকে ভাল রাখবার জন্যে নিজের সাধ্যমত একটু চেষ্টাই করি। আর যার যার ভাগ্য, তার তার। সে সব তো বিধাতাই সকলের কপালে লিখে দিয়েছেন। আমাকে তোমরা প্লীজ কোন দেবীর আসনে বসিও না”।

নিরঞ্জনবাবুও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “ঠিক বলেছ তুমি মা। যার যার ভাগ্য তার তার। বিধাতাই সকলের কপালে সে’সব লিখে দিয়েছেন। আমাদের মন চাইলেও বাস্তবে তোমাকে দেবীর আসনে বসাতে পারব না। আর সে চেষ্টা করে তোমাকে লজ্জিতও করব না। কিন্তু বিধাতা যে আমাদের কপালেও তোমার সাহচর্যে আসবার কথাটা লিখে দিয়েছিলেন, এ জন্যে তার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ”।

হৈমবতীদেবী আবার সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বললেন, “তুমি মা আমার অনেক চিন্তাই লাঘব করে দিয়েছ। তবু একটা কথা জিজ্ঞেস করছি মা। এ বিয়েটা হবে তো? মানে অন্য কোনদিক থেকে আর কোন বাঁধা বিপত্তি আসবে না তো”?
 

সীমন্তিনীও হৈমবতীদেবীর হাত ধরে মিষ্টি গলায় জবাব দিল, “পিসি, তুমি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো এ ব্যাপারে। মাসি মেসো রাজী, তোমরা সকলে রাজী, পাত্র-পাত্রী রাজি, এমনকি মাসি মেসোর বেয়াই বেয়ানরাও রাজী। তাহলে আর বাঁধা দেবে কে? তবু আমি তোমার গা ছুঁয়ে শপথ করছি, কোন বাঁধা বিপত্তি এলেও আমি একাই তার মোকাবেলা করব। তোমরা শুধু আমার পাশে থেক। অর্চু আর পরির সংসারের সূচনা আমি নিজে হাতে করব”।
 

হৈমবতীদেবী সীমন্তিনীর মাথায় হাত রেখে বলল, “বেঁচে থাকো মা। সুখে থাকো। ও বাবা, তুমি এত লম্বা! একটু নীচু হও না মা”।

সীমন্তিনী একটু হেসে খানিকটা ঝুঁকে দাঁড়াতে হৈমবতীদেবী সীমন্তিনীর কপালে আদরের চুমু খেয়ে বললেন, “এ জনমে তো আর হবার নয়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি পরের জন্মে যেন তোমার মত একটা মেয়ে পেটে ধরতে পারি আমি”।
 

সীমন্তিনী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল, “নীতা, তুই তোদের ঘরে যা। আর শোবার আগে মনে করে অর্চুকে ওষুধ খেতে বলিস। আমি চট করে এ বিছানাটা পরিপাটি করে দিচ্ছি”।

নীতা বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, “ঠিক আছে দিদি, যাচ্ছি। কিন্তু তোমার ক্যাম্প খাটটা পেতে দিয়ে যাই” বলে আলমাড়ির পেছনে গুটিয়ে রাখা ফোল্ডিং ক্যাম্প খাটটাকে বের করতে যেতেই সুলোচনা বলে উঠলেন, “থাক না নীতা। ওটা বের করতে হবে না। এ খাটটা তো বেশ বড়ই আছে। আমরা দু’জন না’হয় একসাথে এই খাটেই শোব” বলেই সীমন্তিনীর উদ্দেশ্যে বললেন, “অবশ্য মন্তির অসুবিধে হবে কিনা জানিনা”।

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “তোমার অসুবিধে না হলে, আমারও কোন অসুবিধে হবে না বৌদি” বলে বিছানার চাদরটা উঠিয়ে নিতে নিতেই নিরঞ্জনবাবু আর হৈমবতীদেবীকে তখনও ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “পিসি, পিসো। তোমরা কি আর কিছু বলবে”?

নিরঞ্জনবাবু জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবার ছিল মা। আসলে তুমি তো সকালেই অফিসে চলে যাবে। সকালে তোমার সাথে আর কতটুকু সময় কথা বলতে পারব তা তো জানি না। তাই ভাবছিলাম .......”

সীমন্তিনী একটা নতুন চাদর বিছানায় পাততে পাততে বলল, “পিসো, আজ আর কোন কথা নয়। অনেক রাত হয়েছে। আমার মনে হয় এখন আর দেরী না করে তোমাদের শুয়ে পড়া উচিৎ। কালকের কথা কাল দেখা যাবে’খন। তবে একটা কথা আমি এখনই তোমাদের তিনজনকে পরিস্কার বলে দিচ্ছি। তোমরা যদি ভেবে থাকো যে কালই তোমরা এখান থেকে চলে যাবে, সেটি কিন্তু হচ্ছে না। কারন তোমাদের কাছ থেকে আমার এখনও অনেক কিছু জানবার আছে। অনেক কিছু পরামর্শ করবার আছে। সকালে তো আমাকে অফিসে যেতেই হবে। রবিবার বলে আমাদের জীবনে কিছু নেই। তবে আমি দুপুরেই ফিরে আসব। তারপর তোমাদের সাথে বাকি কথা বলব। তোমরা অর্চুর সাথে কথা বলেই সকালটা কাটিয়ে দিও। অবশ্য কাল তো নীতাও বাড়িতেই থাকবে। ওদের দু’জনের সাথে কথা বলেই একটা বেলা কোনরকমে কাটিয়ে দিও তোমরা। আমিও একটা দেড়টার ভেতরেই চলে আসব”।

নিরঞ্জনবাবু ‘আ হা হা’ করে কিছু বলতে যেতেই সীমন্তিনী দু’হাতে নিরঞ্জনবাবু আর হৈমবতীদেবীকে ঠেলে ঘরের দড়জার দিকে এগোতে এগোতে বলল, “আর কোন কথা নয় পিসো। তোমাদের ছেলের বিয়ে বলে কথা। এক কথাতেই কি বিয়ে সমাধা হয় নাকি? তার জন্যে অনেক তোড়জোড় অনেক আয়োজন করতে হয়। অনেক শলা পরামর্শ করতে হয়। আর সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলতে হবে না? তাই কালই আমরা বাকি আলোচনা গুলো সেরে ফেলব। এখন যেটুকু রাত বাকি আছে, একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে নাও তো”।
 

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্টের সময়ে নিরঞ্জনবাবু সীমন্তিনীকে বললেন, “মন্তি মা, কাল রাতে কথা শেষ করবার সময় তুমি যে আমাদের বলেছিলে আজ তোমার এখানে থেকে যেতে, সেটা বোধহয় সম্ভব হচ্ছে না মা। আজ রাতে বোধহয় আমাদের পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব হবে না”।
 

সীমন্তিনী খেতে খেতেই জবাব দিল, “পিসো, আমি জানি তোমাদের খুব বড় ব্যবসা। তোমরা আর দাদারা সকলেই খুব ব্যস্ত থাক সারা দিন। গল্প গুজব করে কাটাবার মত সময় তোমাদের কারো হাতে থাকে না। তবু আমি তোমাদের কোন কথা কিন্তু শুনব না। তোমরা আজ এখানেই থাকছ। আজ রবিবার। নীতাও সারাদিন বাড়ি থাকবে। আমার অবশ্য রবিবার বলে কোন ব্যাপার নেই। নর্থের চার খানা জেলায় আমাকে ছুটোছুটি করতে হয়। সাতদিন চব্বিশ ঘন্টাই আমাদের ডিউটি। তবু আমি দুপুরেই বাড়ি চলে আসবার চেষ্টা করব। তারপর এ বিয়ের ব্যাপারে বাকি সমস্ত শলা পরামর্শগুলো আজ রাতেই সেরে ফেলব আমরা। তবে হ্যাঁ, কথা দিচ্ছি, কাল আর তোমাদের এখানে আঁটকে রাখব না”।

নিরঞ্জনবাবু আবার বললেন, “না মা, তুমি ভুল বুঝছ। আমাদের যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, পরির জন্য আমাদের হাতে সময়ের অভাব কখনও হবে না। আর তোমার এখানে আজ থেকে যেতেও আমাদের খুব একটা সমস্যা হত না। কিন্তু আসল সমস্যাটা অন্য জায়গায়”।
 

সীমন্তিনী এবার মুখ তুলে তার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “অন্য কী সমস্যা পিসো”?
 

এবার হৈমবতীদেবী বললেন, “আজ সকালে বাড়িতে ফোন করে এদিকের সমস্ত খবরাখবর জানাতেই বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গেছে মা। তুমি আমাদের তিনজনকে এখানে থেকে যেতে বলছ। কিন্তু ওদিকে আমাদের বাকি দুই বৌমা আর ছেলেরাও সকলে আজই এখানে আসতে চাইছে অর্চুকে আর তোমাকে দেখবার জন্য। বাচ্চা কাচ্চাগুলোও নাকি বায়না করছে আসবার জন্য। আজ রবিবার বলেই আমাদের ছেলেরা আসতে পারছে। ওদের সকলেরই তো দোকান বন্ধ থাকে রবিবারে, তাই। আর এ’সব শুনে বাচ্চারাও বায়না ধরেছে আসবে বলে। কিন্তু তোমার এখানে যে এতগুলো লোকের স্থান সংকুলান করা সম্ভব নয় সেটা কাউকে বোঝাতেই পারছি না। শামু, বিমু, অমু, মেজবৌমা, ছোটবৌমা, সাথে আবার পাঁচ পাঁচটে ছেলে মেয়ে। কি করি বল তো মা”?
 

সীমন্তিনীর সাথে সাথে নবনীতা আর অর্চুও হৈমবতীদেবীর কথা শুনে কম অবাক হল না। সীমন্তিনী খাওয়া থামিয়ে ভাবতে ভাবতে বলল, “তারা সকলে যে আসতে চাইছেন, এ তো আমাদের পরম সৌভাগ্য পিসি। তবে তুমি যেটা বললে, সেটাও তো সত্যি কথা। কাল রাতে তো বড়বৌদিরই বোধহয় ঘুমোতে অসুবিধে হচ্ছিল। আমি তো ক্যাম্পখাটে শুতে চেয়েছিলুম। কিন্তু বড়বৌদির কথাতেই তার সাথেই আমাকে শুতে হয়েছিল। বাড়তি তেমন কোনও বিছানাপত্রও বাড়িতে নেই যে মেঝেতে ঢালাও বিছানা করে দেব। আসলে আমার এখানে তো এতদিন অব্দি বেশী কেউ আসেনি। তাই বাড়তি বিছানা রাখবার প্রয়োজনও পড়েনি কখনও। এখানে ভাল কোনও হোটেলও নেই। আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা গেস্ট হাউস অবশ্য আছে। আমাদের থানার পাশেই। সেটা আমি নিজে কখনও দেখিনি। অবশ্য অফিসের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোক ছাড়া অন্য কেউ সেখানে থাকতে পারে না। আর তাছাড়া সেখানে থাকা বা শোয়ার বন্দোবস্ত কতটুকু বা কেমন, কিংবা ক’জন থাকতে পারে, সেটাও ঠিক জানা নেই আমার। তবে ঠিক আছে, আমি অফিসে গিয়েই সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তোমাদের নাহয় ফোনেই জানিয়ে দেব। তোমরা এ নিয়ে ভেবো না। কোথাও কিছু বন্দোবস্ত না হলে কিছু বিছানা, মশারী আর বালিশ ভাড়া করে আনব” বলে লক্ষ্মীকে ডেকে বলল, “লক্ষ্মীদি, আরও দশজন অতিথি আসছেন আজ। তাদের সকলকে তুমি সামাল দিতে পারবে তো”?
 

লক্ষ্মী জবাবে বলল, “ও নিয়ে তুমি ভেবো না দিদিমণি। তুমি বেরিয়ে গেলেই আমি বাজারে চলে যাব। আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসেই কোমর বেঁধে কাজে লেগে যাব। আমার সোনাদির বিয়ে বলে কথা। এ’টুকু কাজ দেখেই ঘাবড়ে গেলে চলবে”?
 

নিরঞ্জনবাবু বললেন, “না মন্তিমা, তুমি অযথাই এত চিন্তা কোর না। ওরা বলেছে যে ওরা দুপুরের খাবার খেয়েই ওখান থেকে রওনা হবে। তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যে এখানে পৌঁছোবে। আর সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ আমরা এখান থেকে রওনা হয়ে গেলে রাত আটটার মধ্যেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যাব”।

সীমন্তিনী মুচকি হেসে অর্চনার দিকে তাকিয়ে বলল, “বুঝেছিস অর্চু? তোর পিসিশাশুড়ি, পিসেশশুর আর ভাশুর জায়েরা আমাদের ঘরের রান্না খাবেনই না। কালও তারা সকলের খাবার সাথে নিয়ে এসেছিলেন। আবার আজও প্রায় সেই একই কাজ করতে চাইছেন। তারা ওখানে লাঞ্চ সেরে রওনা হবেন, আর এখানে শুধু চা খেয়েই আবার সন্ধ্যের আগেই সবাই মিলে ফিরে যাবেন”।

অর্চনা সীমন্তিনীর কথা শুনে লজ্জায় দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। কিন্তু হৈমবতীদেবী বললেন, “না গো মা, অমন করে ব্যাপারটাকে দেখো না তুমি। আসলে আজ রবিবার বলেই ওরা আসতে চাইছে। আর তোমার ঘরেও তো এতগুলো লোকের শোবার জায়গা হবে না”।

সীমন্তিনী নিজের খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “থাকবার ব্যবস্থা হয়ে যাবে পিসি। যেভাবেই হোক, যে করেই হোক, আমি সেটা সামলে নেব। কিন্তু আমাকে এখনই বেরোতে হবে। তোমরা সকলেই আজ নাগরাকাটাতেই থাকছ। বাকি কথা অফিস থেকে ফিরে এসে আলোচনা করব” বলে নবনীতার উদ্দেশ্যে বলল, “নীতা, এনাদের কারো যেন কোনরকম অসুবিধে না হয়, এবেলায় সেটা দেখা কিন্তু তোর দায়িত্ব, বুঝলি তো”?

অফিসে বেরোবার আগে সীমন্তিনী নবনীতা আর অর্চনাকে আলাদা ঘরে নিয়ে জানিয়ে দিল যে সে নিজে দুপুর পর্যন্ত খুব ব্যস্ত থাকবে। তাই তার পক্ষে হয়তো পরিতোষকে ফোন করা সম্ভব নাও হতে পারে। ওরা দু’জন যেন পরিতোষ আর রচনাকে এদিকের সমস্ত ঘটণা জানিয়ে দেয়, কিন্তু কালচিনির বাড়িতে এ বিয়ে পাকা হবার ব্যাপারে যেন এখনই কাউকে কিছু না জানায়। কারন সীমন্তিনীর ইচ্ছে যে পরিতোষের পিসি পিসোরাই যেন সে খবরটা তাদেরকে জানায়। তারপর বিধুবাবু আর বিভাদেবী নিশ্চয়ই অর্চনা, নীতা বা সীমন্তিনীকে ফোন করবেন। তখন তাদের বিশদভাবে সব কিছু বলে দেওয়া যাবে।
 

সীমন্তিনী বাড়ি থেকে বেড়িয়েই সবার আগে রচনাকে ফোন করে আগেরদিন রাত অব্দি পরিতোষের পিসি পিসো আর বৌদির সাথে যা যা আলোচনা হয়েছে, সব সংক্ষেপে জানিয়ে দিল। আরও জানাল যে আজ বিকেলে পরিতোষের দাদারা তিনজন আর অন্য বৌদিরাও তাদের বাচ্চা কাচ্চাদের নিয়ে সীমন্তিনীর এখানে আসছেন। বিয়ের দিনক্ষণ স্থানের ব্যাপারে আজ বিকেল থেকে আলোচনায় বসে সব স্থির করা হবে। রচনা সে’সব শুনে খুশীতে যেন পাগল হয়ে গেল। সে তখনই সীমন্তিনীকে বলল যে সে রাজগঞ্জ আর কালচিনির সবাইকে সু’খবরটা জানিয়ে দেবে। কিন্তু সীমন্তিনী রচনার উচ্ছ্বাসে বাঁধা দিয়ে তাকে জানিয়ে দিল যে রচনা যেন কালচিনির বাড়িতে কাউকে এখনই খবরটা না জানায়। এতে পরির পিসি পিসেমশাইরা একটু মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন। কিন্তু রচনা চাইলে রাজগঞ্জের বাড়িতে সুখবরটা জানাতেই পারে। তবে রাজগঞ্জের বাড়ির কেউ যেন আবার কালচিনির বাড়িতে খবরটা না জানায় সেদিকে নজর রাখতে বলল।
 

তারপর পরিতোষের মোবাইলে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠাল “অফুলি বিজি টুডে। কনভে এনি আর্জেন্ট মেসেজ টু নীতা। উইল ট্রাই টু কল ইউ অ্যাট লেট নাইট অর টুমরো মর্নিং”।
 

অফিসে ঢুকে নিজের চেম্বারে ঢোকবার আগে সে ওসির চেম্বারে উঁকি দিল। ওসি মিঃ সিকদারের সাথে চোখাচোখি হতেই সিকদার বললেন, “গুড মর্নিং ম্যাম। কিছু বলবেন”?

সীমন্তিনী ওসির ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “গুড মর্নিং সিকদারবাবু। আপনার কাছে ছোট্ট একটা ব্যাপারে কিছু আলাপ করতে চাইছি। আপনি কি ব্যস্ত আছেন”?

সিকদারবাবু বললেন, “আমার ব্যস্ততা তেমন নেই এ মূহুর্তে। বসুন প্লীজ। আর বলুন তো, কী ব্যাপার”?

সীমন্তিনী সিকদারবাবুর চেয়ারের উল্টোদিকের একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, “আসল আমি একটা ছোট্ট সমস্যায় পড়েছি সিকদারবাবু। আপনাকে তো কালই বলেছিলুম যে আমার ঘরে কয়েকজন গেস্ট আসছেন। সে জন্যেই আমাকে কাল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। আপনি নিশ্চয়ই মিঃ পরিতোষ সান্যালের নাম শুনেছেন”?

সিকদারবাবু চোখ বড় বড় করে বললেন, “পরিতোষ সান্যাল? মানে আপনি কি আমাদের সেই বিখ্যাত পুলিশ রবিনহুডের কথা বলছেন ম্যাম”?

সীমন্তিনী সামান্য হেসে জবাব দিল, “হ্যাঁ সিকদারবাবু, তার কথাই বলছি আমি। গতকাল মিঃ সান্যালের পিসি, পিসো আর এক বৌদি আমার কাছে এসেছেন। মিঃ সান্যালের বিয়ের ব্যাপারে আমার সাথে কিছু পরামর্শ করতে। আলোচনার রেজাল্ট পজিটিভ হলেও, কাল রাত বারোটা অব্দি ডিসকাস করবার পরেও কিছু কিছু ব্যাপারে এখনও আলোচনা করা বাকি রয়ে গেছে। ওনারা সকলেই চাইছেন ওই বাকি আলোচনা গুলোও আজই করবেন। তাই আজ আবার মিঃ সান্যালের তিন পিসতুতো দাদা, দু’ বৌদি আর পাঁচজন ভাইপো ভাইঝিরা আসছে আমার কাছে। খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ও’সব আমার ওখানেই হয়ে যাবে। কিন্তু আমার কোয়ার্টারে তো এতগুলো লোকের থাকবার জায়গার বন্দোবস্ত করা প্রায় অসম্ভব। আর এখানে তো ভাল কোন হোটেল টোটেলও নেই। আমাদের তো একটা গেস্ট হাউস আছে, তাই না? সেটার কেমন অবস্থা সিকদারবাবু? মানে মিঃ সান্যালের মত সিনিয়র আইপিএস অফিসারের আত্মীয়রা কি সেখানে থাকতে পারবেন রাতে”?

সিকদারবাবু বললেন, “কিন্তু ম্যাম, আমি তো এতদিন শুনেছি যে মিঃ সান্যালের নিজের বলতে কেউই নেই এ পৃথিবীতে। আর কোনও পিছুটান নেই বলেই তো তিনি এমন ডেয়ারিং সব কাণ্ড কীর্তি করে যেতে পারেন অনায়াসে”।

সীমন্তিনী এবারে একটু হেসে জবাব দিল, “আপনার ইনফর্মেশন ভুল নয় সিকদারবাবু, বরং বলা ভাল, ভুল ছিল না। আপনি হয়ত জানেন না, আমি যখন আইপিএস ট্রেনী ছিলাম তখনই মিঃ সান্যালের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, হায়দ্রাবাদে। আর এতদিনে তার সাথে আমার বেশ ভাল বন্ধুত্বও হয়েছে। আর আপনি হয়তো এটাও জানেন না যে মিঃ সান্যাল গত ঊণিশ তারিখে আমাদের নাগরাকাটায় এসেছিলেন। আমাদের থানার এদিকটাতেও তিনি এসেছিলেন”।

এ’কথা শুনেই সিকদারবাবু নিজের চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে বললেন, “কী বলছেন ম্যাম? মিঃ সান্যাল আমাদের থানাতে এসেছিলেন! ঈশ, একবার তাকে দেখতে পেলাম না আমি! এটা কি ঠিক হল ম্যাম? অমন একজন দুঁদে আইপিএস অফিসারকে একটু দেখবার সুযোগ দিলেন না আপনি”?
 

সীমন্তিনী হেসে হাত তুলে সিকদারবাবুকে চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করে বলল, “আপনি যা ভাবছেন, তেমন কিছু হয়নি সিকদারবাবু। উনি সেদিন আমাদের থানায় ঢোকেন নি। উনি একটা ব্যক্তিগত কাজে তিন চারদিনের ছুটিতে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। আর আমি নিজেও ওই মূহুর্তে ব্যাপারটা জানতুম না যে তিনি বিকেলে আমাদের থানার সামনে এসেছিলেন। তিনি তো তখন আমাকেও সেটা জানান নি। সেদিন রাতে আমি জানতে পেরেছি যে উনি ওইদিন একটা অটোতে চেপে আমাদের থানা পর্যন্ত এসেছিলেন। তারপর অন্যত্র কোথাও গিয়েছিলেন”।

সিকদারবাবু একটু হতাশভাবে বললেন, “ও, সরি ম্যাম। আমি তো তাহলে মিছেমিছিই আপনার ওপর হতাশ হয়েছি। তা উনি কি এই বিয়ের ব্যাপারেই এখানে এসেছিলেন নাকি”?

সীমন্তিনী আবার হেসে জবাব দিল, “না সিকদারবাবু, আমি তো আগেই আপনাকে বললুম যে উনি ওনার ব্যক্তিগত কোনও কাজে এসেছিলেন। আমার সঙ্গে শুধু দেখা করবার জন্যই এখানে এসেছিলেন। পরদিন খুব সকালেই উনি চলে গিয়েছিলেন কালচিনি। সেখান থেকে আলিপুরদুয়ার, মালবাজার হয়ে কলকাতা ফিরে গেছেন। কিন্তু যেদিন আমার এখান থেকে চলে গেলেন, সেদিনই প্রথমে তিনি কালচিনিতে আমার মেসোর সাথে দেখা করতে গিয়ে জানতে পারলেন যে আমার ওই মেসো তার বাবার ছোটবেলার প্রিয় বন্ধু ছিলেন। আর মেসোর কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলেন যে তার বাবার মায়ের পেটের দিদি মানে তার আপন পিসি এখনও বেঁচে আছেন, আর তারা আলিপুরদুয়ারে আছেন। সেদিনই তিনি আলিপুরদুয়ারে গিয়ে তার পিসিকে খুঁজে পেয়েছেন। এর আগে পর্যন্ত উনি নিজেকে পুরোপুরি অনাথ বলেই জানতেন”।

সিকদারবাবু এবার শ্বাস ছেড়ে বললেন, “ও, এই কথা। খুবই ভাল খবর ইনডিড। কনগ্রেচুলেশন ম্যাম। আপনার মত একজনের অমন স্বামীই হওয়া উচিৎ। কিন্তু উনিও কি হাইটের দিক থেকে .........”

সীমন্তিনী মুচকি হেসে মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আপনি যা ভাবছেন, তা নয় সিকদারবাবু। তিনি হাইটে প্রায় আমার সমান সমান হলেও আমরা দু’জন কিন্তু কেবলই বন্ধু, আর কিছুই নই। তবে বলতে পারেন উনি আমার গুরু হবার সাথে সাথে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ফিলজফার অ্যান্ড গাইডও। আর তার সাথে আপনার দেখা না হবার দুঃখ হয়ত খুব বেশীদিন থাকবে না। ওনার বিয়েতে আমার তরফ থেকে আপনার নিমন্ত্রন অবশ্যই থাকবে। তখন চাক্ষুষ তাকে নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন। আমার মাসতুতো বোনের সাথে ওর বিয়ে পাকা হল গতকাল। বিয়ের আনুষঙ্গিক কথাবার্তাগুলো ফাইনাল করবার জন্যেই আজ ওর দাদা-বৌদিরা আসছেন। তাই তাদের রাতে থাকবার বন্দোবস্ত করতে হিমশিম খাচ্ছি। সে জন্যেই আপনার কাছে জানতে চাইছি সিকদারবাবু, আমাদের গেস্ট হাউসটার অবস্থা কেমন? তাতে ওই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলারা একটা রাত কাটাতে পারবেন কি? আর তার চেয়ে বড় কথা তারা কি সেখানে থাকবার সুযোগ পেতে পারেন”?


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 30-03-2020, 11:14 AM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)