29-03-2020, 11:35 AM
(Update No. 240)
সীমন্তিনী মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “নীতার ব্যাপারেও সবকিছুই খুলে বলেছ? ওর ওই সাতটা বছরের কথাও বলেছ”?
পরিতোষ একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ মন্তি, সে’সব কথাও বলতে বাধ্য হয়েছি। আসলে মেজ বৌদি আর ছোট বৌদি এমনভাবে জেরা করছিলেন যে না বলে পারিনি। তবে তাদের সকলকেই আমি বারবার করে অনুরোধ করেছি যে এ’সব কথা যেন তারা অন্য কাউকে না জানান। আর এমন কথাও বলেছি যে তোমাদের সম্পর্কে বলা কথাগুলো যদি তারা অন্য কারো সাথে শেয়ার করেন, তবে আমি বুঝব যে তারা আমার মঙ্গল চান না। তাই আমার মনে হয়না তোমার বা নীতার ব্যাপারে তারা আর কাউকে কিছু বলবেন”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আর তুমি যে আমার আর নীতার ওপর তোমার জন্য পাত্রী পছন্দ করবার দায়িত্ব দিয়েছিলে, এ’কথাও কি তারা জানেন”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ সেটা তো প্রথম দিনই বলেছি। আমি জানি মন্তি, তুমি বা নীতা এ’সব কথা শুনে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হতেই পার। কিন্তু আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না, ওই তিন চারটে দিন আমি যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আসলে ছোটবেলা থেকে বাবা ছাড়া আর কাউকে তো কাছে পাইনি। আর বাবা চলে যাবার পর তো একেবারে অনাথই হয়ে গিয়েছিলাম। তাই জীবনের এতগুলো বছর পার করে দেবার পর যে মূহুর্তে নিজের এতগুলো আত্মীয় প্রিয়জনকে কাছে পেয়েছিলাম আমি যেন আনন্দে সত্যিই আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। কারো কোন প্রশ্নের জবাবে মিথ্যে বলতে পারছিলাম না। অবশ্য সে ঘোর যে আমার এখন পুরোপুরি কেটে গেছে সেটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। তবে অমন আত্মহারা পরিস্থিতিতেও তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি ভুলিনি। এখনও বৌদিরা আর পিসি যখন ফোন করেন আমার মনে হয় ফোনে নয় আমি যেন তাদের মুখোমুখি বসে কথা বলছি। পিসি যেন আমার হাতের ওপর তার রেখে আমাকে ঠিক তার পাশটিতে বসিয়ে রেখেছেন। এতগুলো আপনজনের স্নেহ ভালবাসা পাবার সৌভাগ্য যে আমার কখনো হতে পারে, এ তো কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমি মন্তি”।
সীমন্তিনী মোলায়েম স্বরে বলল, “জানো পরি, ক’দিন আগে রাস্তার পাশে একটা দোকানে একটা গান বাজতে শুনেছিলাম। ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’। আজ গানের কথাগুলো তোমার জীবনে সত্যি হল। আচ্ছা পরি, এখন তুমি কোথায় আছ বল তো? আর আজ তোমার আর কি কি কাজ আছে”?
পরিতোষ নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “এখন আমি অফিসেই আছি। তবে তেমন কোন কাজ আপাততঃ হাতে নেই আমার। অফিস থেকে বেরিয়েও তেমন কোন কাজ নেই আজ। আসলে কাজে মন বসাতেও পারছি না। কিন্তু বাড়িতে গিয়েও আজ মন শান্ত রাখতে পারব না। তোমার ওখানে পিসিদের সাথে তোমাদের কার কী কথা হচ্ছে না হচ্ছে এ’সব ভাবতে ভাবতেই আজ অস্থির হয়ে থাকব। তোমাকে দুটো অনুরোধ করব, রাখবে মন্তি”?
সীমন্তিনী মনে মনে ভীষণ অবাক হয়ে বলল, “এভাবে কথা বলছ কেন পরি? কেন এত অস্থির হচ্ছ তুমি? তুমি আমার সাথে কথা বলছ পরি। তোমার মুন ডার্লিংএর সাথে কথা বলছ তুমি। অনুরোধ উপরোধের এত কথা তুলছ কেন। বলো কী বলবে”?
পরিতোষ অসহায়ের মত বলল, “সরি মন্তি, আমার মাথা এখন সত্যি কাজ করছে না। তবু বলছি, পিসি পিসেমশাইয়ের তোমার ওখানে যাবার আসল উদ্দেশ্যটা জানতে পারলে, আজ রাতে সম্ভব না হলেও কাল সকালে অবশ্যই জানাবে আমাকে প্লীজ। তোমাদের কাছ থেকে সেটা না জানা পর্যন্ত আমার উদ্বেগ কিন্তু কিছুতেই কমবে না। আজ সারাটা রাত বোধহয় আমি ঘুমোতেও পারব না। তাই ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি জানতে চাই। আর দ্বিতীয় অনুরোধটা, পিসি পিসেমশাইরা আমাদের আগের জেনারেশনের লোক। তাদের ভাবনা চিন্তা বা মানসিকতা আমাদের থেকে কিছুটা হলেও পুরোনপন্থী হবেই। আমার ওপর ভালবাসায় অন্ধ হয়ে তারা যদি তোমাদের কারো কাছে কোনও অন্যায় আবদার করে বসেন কিংবা গর্হিত কিছু করে বসেন অথবা যদি কোনও আনএক্সেপ্টেবল কথা বলে বসেন, তাহলে কষ্ট হলেও তোমরা একটু মানিয়ে নিও প্লীজ। তাদের কাউকে কোন কটূকথা বোলো না। কোনরকম অসম্মান কোরোনা। প্লীজ মন্তি, তুমি আমার এ অনুরোধটা রাখবে তো”?
সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “তোমার প্রথম অনুরোধের ব্যাপারে বলি, তাদের সাথে আমাদের কি কি কথা হয়, তাদের আসবার আসল উদ্দেশ্য কি, এ’সব তোমাকে অবশ্যই জানাব পরি। যদি আজ রাতেই সেটা আমরা জানতে পারি তাহলে সম্ভব হলে আজ রাতেই জানাব। নইলে কাল সকালে তোমাকে অবশ্যই জানাব। আর এমন যদি হয় যে আমি তাদের ছেড়ে উঠতেই পাচ্ছি না তবে নীতাকে বলব তোমাকে সেটা জানিয়ে দিতে। আর তোমার দ্বিতীয় অনুরোধের ব্যাপারে শুধু একটা কথাই বলব। আমার ওপর তোমার ভরসা যদি কমে গিয়ে না থাকে, তাহলে কোনরকম দুশ্চিন্তাই তুমি কোরো না। আমি বা নীতা কেউই এমন কিছু করব না যাতে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে বলে তোমাকে তাদের কাছে লজ্জিত হতে হয়। বুঝেছ তো? এবার একটু শান্ত হয়ে আমার ক’টা কথা তুমি মন দিয়ে শোনো পরি। তোমার পিসি আর পিসেমশাই যদি সত্যিই তোমার জন্যে কোনও মেয়ে পছন্দ করে থাকেন, আর সেই পাত্রীটিকে যদি তোমারও পছন্দ হয় তাহলে আমার মনে হয় তাকেই তোমার বিয়ে করা উচিৎ। নইলে এতগুলো বছর পর তোমার যে আত্মীয়দের তুমি খুঁজে পেয়েছ, তাদের হয়ত তুমি আবার হারিয়ে ফেলবে। তাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ছিন্ন হোক বা না হোক তোমার প্রতি তাদের আন্তরিকতায় কিন্তু কিছুটা হলেও ঘাটতি হবেই। আর এ ক্ষেত্রে আরও দুটো কথা মনে রেখো তুমি। এক, তোমার পিসি আর পিসেমশাইয়ের কিন্তু বয়স হয়েছে, আর তোমার পিসি হাই ব্লাড প্রেসারের পেশেন্ট। আর দুই, একটা বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়েই কিন্তু তোমার পিসি তোমার দাদু ঠাকুমা আর বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে প্রাণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে তোমার আর তাদের সম্পর্ক যেন চিরকাল অটুট থাকে। আর তোমাদের পিসি-ভাইপোর অমন স্নেহ ভালবাসা আর শ্রদ্ধার সম্পর্কের কাছে তুমি আমাদের হাতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলে, সেটা নিছকই ঠুনকো। আর সেদিন আমরাও যে এ দায়িত্ব নিয়েছিলাম তার পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারন ছিল যে তুমি তখন একা ছিলে। তোমার পাশে দাঁড়াবার মত, তোমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মত একটা লোকও ছিল না। কিন্তু আজ পরিস্থিতিটা বদলে গেছে। ঠাকুরের আশীর্বাদে আজ তোমার পাশে দাঁড়াবার মত, তোমার দায়িত্ব নেবার মত অনেকগুলো লোক তোমার চারপাশ ঘিরে আছেন। তারা সকলেই কিন্তু তোমার গুরুজন আর তারা সকলেই কিন্তু তোমাকে আন্তরিক ভাবেই গ্রহণ করেছেন এবং ভালবাসেন। তাই আমাদের দেওয়া তোমার ওই প্রতিশ্রুতিটুকু তোমার অতগুলো আত্মীয় পরিজনদের ভালবাসার তুলনায় একেবারেই নগণ্য, একেবারেই মূল্যহীন। তাই তুমি ওই ধর্ম সঙ্কট টঙ্কটের কথা একেবারেই মাথায় এনো না। আর ঠিক তেমনটাই যদি হয়, তাহলে দেখবে আমি আর নীতাও কিন্তু মহানন্দে তোমার বিয়েতে উপস্থিত থাকব। আর আমাদের সাথে তোমার সম্পর্ক আজ যেমন আছে চিরটা কালই ঠিক তেমনটাই থাকবে। আমি নিশ্চিত নীতাও ঠিক একই কথা বলবে। আর আমার দাদাভাই আর রচুও। তাই তুমি অহেতুক ভেবে ভেবে নিজেকে দুর্বল করে ফেল না। আর, আরেকটা সাজেশান দিতে চাই। যদিও সেটা সম্ভব হবে কিনা তা তুমিই বলতে পারবে। আমার মনে হয় আজ রাতটা নিজের বাড়িতে একা একা না কাটিয়ে যদি তুমি তোমার কোন বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে থাকতে পারো, তাহলে খুব ভাল হত। তুমি যদি আমার দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটে আজ রাতটা কাটাতে চাও তাহলে আমি এখনই ওদের ফোন করে সেটা জানিয়ে দিতে পারি। নইলে তোমার পছন্দের অন্য কারো কাছেও যেতে পার। তবে তুমি তো জানোই, দাদাভাইদের ওয়ান বেডরুমের ফ্ল্যাট। সেখানে গেলে কিন্তু তোমাকে লিভিং রুমের সোফাতেই শুতে হবে। আমি দাদাভাইকে ফোন করে বলে দিই তাহলে”?
পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই বলল, “না না মন্তি, প্লীজ ওটা কোরো না। আমি আজ রচুর মুখোমুখি হতে চাই না একেবারেই। তবে তোমার সাজেশানটা ভেবে দেখব। দেখি কী করা যায়। তুমি কিন্তু আমার কথাটা মনে রেখ। তুমি কারনটা জানবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে কিন্তু সেটা জানিয়ে দেবে প্লীজ”।
গাড়ি তখন কোয়ার্টারের গেটের কাছে এসে থেমেছে দেখে সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে পরি। আমি তোমাকে সে’ভাবেই জানিয়ে দেব। আর শোনো, আমি কোয়ার্টারে পৌঁছে গিয়েছি। তাই এখন কথা বন্ধ করছি। তুমি আমার সাজেশান মত আজ রাতটা অন্য কোথাও কাটিয়ে দিও প্লীজ”।
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছে মন্তি। আমি সেটা দেখছি। আর তুমি সাবধানে থেক। পিসিরা আসছেন বলে কোন আয়োজন করবার প্রয়োজন হলে নিজেই হুটহাট করে বেরিয়ে পড়ো না যেন। বাইরে কোথাও যেতে হলে লক্ষ্মীদি বা অন্য কাউকে পাঠিও”।
সীমন্তিনীর গাড়ি ততক্ষণে গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সীমন্তিনী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গাড়ির দড়জা খুলে নামতে নামতে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছে। ছাড়ছি তাহলে এখন। আমার কথাটা মনে রেখ” বলে ফোন কেটে দিল।
গাড়ি থেকে নেমেই রামসিং এর হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে তাকে বাজার থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস, দুধ আর দই আনতে পাঠিয়ে দিয়ে গেটের দিকেই সিকিউরিটি গার্ডদের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। গার্ডদের টিম লিডার সীমন্তিনীকে তাদের দিকে আসতে দেখে রুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে একটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “গুড ইভিনিং ম্যাডাম, কিছু বলবেন”?
সীমন্তিনী নিজের হাতের মোবাইলটা দেখতে দেখতে বলল, “একটা গাড়ির নাম্বার নোট করে রাখো। এই যে এই নাম্বারটা” বলে মোবাইলটা গার্ডের দিকে এগিয়ে দিল। লোকটা সাথে সাথে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে নাম্বারটা নোট করে নেবার পর সীমন্তিনী বলল, “ছ’টা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এ গাড়িটা আসবে। তাতে আমার তিনজন আত্মীয় আসছেন। দু’জন মহিলা আর একজন বয়স্ক পুরুষ। সঙ্গে তো ড্রাইভার অবশ্যই থাকবে। তাদের ভেতরে ঢুকতে দেবে। গাড়ি সহ ঢুকতে দেবে। ওনারা আজ রাতে আমাদের কোয়ার্টারেই থাকবেন। আর গাড়িটাও এ’ কম্পাউন্ডের ভেতরেই থাকবে রাতে। ড্রাইভারকে একটা উপযুক্ত জায়গা দেখিয়ে দিও গাড়িটা রাখবার। আর গাড়িতে কিছু প্যাকেট বা কন্টেনার বা ওই জাতীয় কিছু থাকবে যাতে কিছু খাবার জিনিস নিয়ে আসবেন তারা। আর তাদের জামা কাপড়ের ব্যাগও দু’ একটা নিশ্চয়ই থাকবে। গাড়ি সার্চ করবার সময় একটু সাবধান থেকো। ওই জিনিসগুলোর যেন কোন ক্ষতি না হয়। অবশ্য আমি নিজেও টের পেলে তখন বেরিয়ে আসব। তবে আমি যদি আসতে না-ও পারি, তুমি নিজে ব্যাপারটা দেখবে। তাদের যেন কোনভাবে হেনস্থা না করা হয়। ঠিক আছে”?
গার্ডটা আরেকটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি নিজে ব্যাপারটা দেখব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন”।
সীমন্তিনী আর দেরী না করে ত্রস্ত পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কলিং বেল বাজাতেই অর্চনা এসে দড়জা খুলে তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, “একি দিদিভাই? তুমি এত তাড়াতাড়ি এসে পড়লে”!
সীমন্তিনী হেসে অর্চনার চিবুক ধরে নাড়িয়ে দিয়ে আদর করে বলল, “মনটা তোকে দেখবার জন্য বড্ড ছটফট করছিলরে সোনা। তাই চলে এলুম। আচ্ছা আগে বল তো, গেস্টরুমটা গোছানো হয়ে গেছে তো”?
অর্চনা একটু হেসে দড়জা বন্ধ করতে করতে বলল, “হ্যাঁগো দিদিভাই। সব গোছানো হয়ে গেছে। তা কারা আসছেন গো”?
সীমন্তিনী তার কথার সোজা জবাব না দিয়ে বলল, “বলছি দাঁড়া। কিন্তু লক্ষ্মীদি কোথায় রে”?
অর্চনা সীমন্তিনীর কাঁধ থেকে তার ব্যাগটা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল, “লক্ষ্মীদি তো রান্না ঘরেই আছে দিদিভাই”।
সীমন্তিনী রান্না ঘরের দড়জার সামনে গিয়ে ভেতরে উঁকি মেরে লক্ষ্মীকে দেখে বলল, “লক্ষ্মীদি, তোমার কোল্ড ড্রিঙ্কস, দুধ আর দই আনবার জন্যে তো রামসিংকে পাঠিয়েছি বাজারে। আর কিছু লাগবে? লাগলে এক্ষুনি বলে দাও, ফোন করে রামসিংকে বলে দিই”।
লক্ষ্মী সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “না দিদিভাই আজ ওই হলেই চলে যাবে। যারা আসছেন তারা যখন রাতের খাবার নিয়েই আসছেন তাহলে আজ আর সব্জি টব্জি না আনলেও চলবে। কাল সকালে তো আমি নিজেই বাজারে যাব। তা হ্যাঁ গো দিদিমণি, কারা আসছেন গো? তোমার বাড়ি থেকে কেউ আসছেন বুঝি”?
সীমন্তিনী বসবার ঘরের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি, তোমার এই মুখপুড়ি দিদিমণিকে তার বাড়ি থেকে কেউ দেখতে আসবে, এত ভাগ্য তার কপালে ভগবান লেখেন নি। তবে যারা আসছেন, তাদের কাউকেই আমি আগে কখনও দেখিনি। তারা তোমার বড়দার আত্মীয় স্বজন সবাই”।
লক্ষ্মী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “বড়দার আত্মীয় স্বজন? এতদিন তো তিনকুলে তার কেউ নেই বলেই শুনেছিলুম। অবশ্য সাত আটদিন আগেই তো শুনলুম আলিপুরদুয়ারে নাকি তিনি তার এক পিসিকে খুঁজে পেয়েছেন। তারাই কি আসছেন নাকি”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ গো লক্ষ্মীদি। পরির পিসি, পিসেমশাই আর তার তার বড় পিসতুতো দাদার বৌ এনারা তিনজন আসছেন। তাই তাদের খাতিরদারিতে যেন কোন খামতি না থাকে দেখো। নইলে কিন্তু আমাদের সাথে সাথে তোমার বড়দার মান সম্মানও যাবে। আর শোনো, আমি তো আগে ভেবেছিলুম তারা পাঁচটা সাড়ে পাঁচটার ভেতরেই এখানে পৌঁছে যাবেন। তাই একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিলুম। কিন্তু বাড়ি আসবার পথেই শুনলুম তাদের পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে ছ’টা সাড়ে ছ’টা হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের তাড়াহুড়ো করবার কিছু নেই। তুমি ধীরে সুস্থে তাদের তিনজনের জলখাবার বানাও। আর তাদের রাতের খাবারের ব্যাপারে আমাদের কোন আয়োজনই করতে হবে না। পরির পিসির সখ হয়েছে আমাদের সবাইকে নিজের বাড়ির রান্না খাবার খাওয়াবেন। তাই পরির তিন বৌদি মিলেই নাকি আমাদের সকলের জন্য রাতের খাবার বানিয়ে তাদের সঙ্গেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওনারা নিজেদের গাড়িতেই আসছেন। তবে তোমাকে কিন্তু কষ্ট করে খাবারগুলো তাদের গাড়ি থেকে ঘরে নিয়ে আসতে হবে। আর কাল তারা চলে যাবার আগে বাসনগুলো ধুয়ে মুছে আবার তাদের গাড়িতে তুলে দিতে হবে”।
লক্ষ্মী বলল, “সে নিয়ে তুমি ভেবো না দিদিমণি। আমি সব সামলে নেব’খন। কিন্তু দিদিমণি তারা তো তিনজন আসছেন। সঙ্গে তো বোধহয় তাদের গাড়ির ড্রাইভারও থাকবেন। বড়দার পিসি পিসেমশাইয়ের শোবার জায়গা তো গেস্ট রুমে করেছি। কিন্তু তার বৌদি আর তাদের গাড়ির ড্রাইভারটাকে কোথায় শুতে দেবে”?
সীমন্তিনী বলল, “বৌদিকে আমার বিছানায় শুতে দেব। আমি ক্যাম্প খাটটা পেতে শুয়ে পড়ব’খন। তবে ভাল কথাই মনে করিয়ে দিয়েছ তুমি আমাকে লক্ষ্মীদি। ড্রাইভারের শোবার জায়গা নিয়ে আমি একেবারেই ভাবিনি গো। আচ্ছা শোনো, রামসিং যখন বাজার থেকে ফিরে জিনিসগুলো ঘরে নিয়ে আসবে তখন তার সাথে কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে। আমি ভুলে গেলে আমাকে একটু মনে করিয়ে দিও। অর্চু তুইও কথাটা মাথায় রাখিস। আমাকে মনে করিয়ে দিস। আর লক্ষ্মীদি এখন আর আমাদের জন্যে জলখাবার বানিও না। ওনারা এলে বরং একসাথেই খাব আমরা সবাই। তুমি এখন আমাদের দু’জনকে শুধু দু’কাপ চা বানিয়ে দিও। না কি বলিস অর্চু”?
অর্চনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, সেটাই ভাল হবে। কিন্তু দিদিভাই ওনারা ......”
অর্চনাকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই সীমন্তিনী তার হাত ধরে নিজের ঘরের দিকে টানতে টানতে বলল, “চল, ঘরে গিয়ে কথা বলি আমরা” বলেই আবার লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে বলল, “রামসিং এলে ওকে কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে বোলো কিন্তু লক্ষ্মীদি”।
নিজের ঘরে এসে সীমন্তিনী আগে বাথরুমে ঢুকল। অর্চনা সীমন্তিনীর ব্যাগটা কোনের টেবিলের ওপর জায়গা মত রেখে দিয়ে সীমন্তিনীর বিছানার এক কোনায় বসে অনাগত অতিথিদের কথা ভাবতে লাগল। মিনিট দশেক বাদে সীমন্তিনী ঘরের পোশাকে বাথরুম থেকে বের হতেই লক্ষ্মী তাদের জন্যে চা নিয়ে এল। চা খেতে খেতে সীমন্তিনী অর্চনাকে বলল, “ওহ, একটা কথা তো ভুলেই গিয়েছি রে। দাঁড়া, বলে চায়ের কাপটা বিছানায় রেখেই সীমন্তিনী উঠে নিজের অফিসের ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তার ভেতর থেকে দুটো ওষুধের পাতা বের করে অর্চনাকে দিয়ে বলল, “তোর ওষুধটা রাখ। রাতে তো খেতে হবে। ওনারা এলে তাদের সাথে সাথে কথায় কথায় আমি হয়ত ভুলেই যাব” বলে অর্চনার পাশে বসে নিজের চায়ের কাপ হাতে তুলে একটা চুমুক দিতেই অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার বন্ধুর পিসি পিসেমশাইরা তোমার এখানে আসছেন কেন আজ দিদিভাই”?
সীমন্তিনী মনে মনে ভাবতে ভাবতে বলল, “শোন, হাতে যখন সময় আছে, তাহলে তোকে ব্যাপারটা খুলেই বলি”।
এই বলে গোটা ব্যাপারটাই তাকে খুলে বলল। তার বলা শেষ হতে না হতেই কলিং বেলের আওয়াজ হল। আর প্রায় সাথে সাথেই লক্ষ্মীর গলা শোনা গেল, “দিদিমণি, রামসিং এসেছে গো”।
দু’জনেরই ততক্ষণে চা খাওয়া শেষ হয়েছে। লক্ষ্মীর গলা শুনেই সীমন্তিনী ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর রামসিংকে তার কথা বলতেই রামসিং বলল, “ম্যাডাম, আপনি একদম ভাববেন না। আমার রুমের পাশের রুমটা তো খালিই আছে। দেবেন তো ছুটিতে আছে। ওর রুমেই ড্রাইভারের থাকবার বন্দোবস্ত করে দেব আমি। আর সেখানে সব বন্দোবস্ত আমিই করে দেব। আপনি ব্যস্ত হবেন না”।
রামসিং বাজার ফেরত পয়সা সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে চলে যেতেই সীমন্তিনী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা চল্লিশ। সে অর্চনাকে বলল, “অর্চু সময় তো প্রায় হয়ে এল রে। তুই এক কাজ কর না বোন। একটু নীতাকে ফোন করে দ্যাখ তো ধরে কি না। ধরলে ওকে সংক্ষেপে কথাটা জানিয়ে দে। তবে ওকে বুঝিয়ে দিস দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওনারা তো পুরো রাতই এখানে থাকছেন। তাই ওকে তাড়াহুড়ো করে আগে চলে আসতে হবে না। আমি চট করে রচুর সাথে একটু কথা বলে নিই। ওনারা চলে এলে আর কাউকে ফোন করতে পারব না হয়ত” বলে রান্নাঘরের দড়জার সামনে গিয়ে লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি একটু গেটের দিকে নজর রেখ তো। গেটের কাছে কোনও গাড়ি আসতে দেখলে আমাকে বোলো” বলে নিজের ঘরে চলে এল।
______________________________
সীমন্তিনী মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “নীতার ব্যাপারেও সবকিছুই খুলে বলেছ? ওর ওই সাতটা বছরের কথাও বলেছ”?
পরিতোষ একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ মন্তি, সে’সব কথাও বলতে বাধ্য হয়েছি। আসলে মেজ বৌদি আর ছোট বৌদি এমনভাবে জেরা করছিলেন যে না বলে পারিনি। তবে তাদের সকলকেই আমি বারবার করে অনুরোধ করেছি যে এ’সব কথা যেন তারা অন্য কাউকে না জানান। আর এমন কথাও বলেছি যে তোমাদের সম্পর্কে বলা কথাগুলো যদি তারা অন্য কারো সাথে শেয়ার করেন, তবে আমি বুঝব যে তারা আমার মঙ্গল চান না। তাই আমার মনে হয়না তোমার বা নীতার ব্যাপারে তারা আর কাউকে কিছু বলবেন”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আর তুমি যে আমার আর নীতার ওপর তোমার জন্য পাত্রী পছন্দ করবার দায়িত্ব দিয়েছিলে, এ’কথাও কি তারা জানেন”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ সেটা তো প্রথম দিনই বলেছি। আমি জানি মন্তি, তুমি বা নীতা এ’সব কথা শুনে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হতেই পার। কিন্তু আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না, ওই তিন চারটে দিন আমি যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আসলে ছোটবেলা থেকে বাবা ছাড়া আর কাউকে তো কাছে পাইনি। আর বাবা চলে যাবার পর তো একেবারে অনাথই হয়ে গিয়েছিলাম। তাই জীবনের এতগুলো বছর পার করে দেবার পর যে মূহুর্তে নিজের এতগুলো আত্মীয় প্রিয়জনকে কাছে পেয়েছিলাম আমি যেন আনন্দে সত্যিই আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। কারো কোন প্রশ্নের জবাবে মিথ্যে বলতে পারছিলাম না। অবশ্য সে ঘোর যে আমার এখন পুরোপুরি কেটে গেছে সেটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। তবে অমন আত্মহারা পরিস্থিতিতেও তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি ভুলিনি। এখনও বৌদিরা আর পিসি যখন ফোন করেন আমার মনে হয় ফোনে নয় আমি যেন তাদের মুখোমুখি বসে কথা বলছি। পিসি যেন আমার হাতের ওপর তার রেখে আমাকে ঠিক তার পাশটিতে বসিয়ে রেখেছেন। এতগুলো আপনজনের স্নেহ ভালবাসা পাবার সৌভাগ্য যে আমার কখনো হতে পারে, এ তো কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমি মন্তি”।
সীমন্তিনী মোলায়েম স্বরে বলল, “জানো পরি, ক’দিন আগে রাস্তার পাশে একটা দোকানে একটা গান বাজতে শুনেছিলাম। ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’। আজ গানের কথাগুলো তোমার জীবনে সত্যি হল। আচ্ছা পরি, এখন তুমি কোথায় আছ বল তো? আর আজ তোমার আর কি কি কাজ আছে”?
পরিতোষ নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “এখন আমি অফিসেই আছি। তবে তেমন কোন কাজ আপাততঃ হাতে নেই আমার। অফিস থেকে বেরিয়েও তেমন কোন কাজ নেই আজ। আসলে কাজে মন বসাতেও পারছি না। কিন্তু বাড়িতে গিয়েও আজ মন শান্ত রাখতে পারব না। তোমার ওখানে পিসিদের সাথে তোমাদের কার কী কথা হচ্ছে না হচ্ছে এ’সব ভাবতে ভাবতেই আজ অস্থির হয়ে থাকব। তোমাকে দুটো অনুরোধ করব, রাখবে মন্তি”?
সীমন্তিনী মনে মনে ভীষণ অবাক হয়ে বলল, “এভাবে কথা বলছ কেন পরি? কেন এত অস্থির হচ্ছ তুমি? তুমি আমার সাথে কথা বলছ পরি। তোমার মুন ডার্লিংএর সাথে কথা বলছ তুমি। অনুরোধ উপরোধের এত কথা তুলছ কেন। বলো কী বলবে”?
পরিতোষ অসহায়ের মত বলল, “সরি মন্তি, আমার মাথা এখন সত্যি কাজ করছে না। তবু বলছি, পিসি পিসেমশাইয়ের তোমার ওখানে যাবার আসল উদ্দেশ্যটা জানতে পারলে, আজ রাতে সম্ভব না হলেও কাল সকালে অবশ্যই জানাবে আমাকে প্লীজ। তোমাদের কাছ থেকে সেটা না জানা পর্যন্ত আমার উদ্বেগ কিন্তু কিছুতেই কমবে না। আজ সারাটা রাত বোধহয় আমি ঘুমোতেও পারব না। তাই ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি জানতে চাই। আর দ্বিতীয় অনুরোধটা, পিসি পিসেমশাইরা আমাদের আগের জেনারেশনের লোক। তাদের ভাবনা চিন্তা বা মানসিকতা আমাদের থেকে কিছুটা হলেও পুরোনপন্থী হবেই। আমার ওপর ভালবাসায় অন্ধ হয়ে তারা যদি তোমাদের কারো কাছে কোনও অন্যায় আবদার করে বসেন কিংবা গর্হিত কিছু করে বসেন অথবা যদি কোনও আনএক্সেপ্টেবল কথা বলে বসেন, তাহলে কষ্ট হলেও তোমরা একটু মানিয়ে নিও প্লীজ। তাদের কাউকে কোন কটূকথা বোলো না। কোনরকম অসম্মান কোরোনা। প্লীজ মন্তি, তুমি আমার এ অনুরোধটা রাখবে তো”?
সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “তোমার প্রথম অনুরোধের ব্যাপারে বলি, তাদের সাথে আমাদের কি কি কথা হয়, তাদের আসবার আসল উদ্দেশ্য কি, এ’সব তোমাকে অবশ্যই জানাব পরি। যদি আজ রাতেই সেটা আমরা জানতে পারি তাহলে সম্ভব হলে আজ রাতেই জানাব। নইলে কাল সকালে তোমাকে অবশ্যই জানাব। আর এমন যদি হয় যে আমি তাদের ছেড়ে উঠতেই পাচ্ছি না তবে নীতাকে বলব তোমাকে সেটা জানিয়ে দিতে। আর তোমার দ্বিতীয় অনুরোধের ব্যাপারে শুধু একটা কথাই বলব। আমার ওপর তোমার ভরসা যদি কমে গিয়ে না থাকে, তাহলে কোনরকম দুশ্চিন্তাই তুমি কোরো না। আমি বা নীতা কেউই এমন কিছু করব না যাতে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে বলে তোমাকে তাদের কাছে লজ্জিত হতে হয়। বুঝেছ তো? এবার একটু শান্ত হয়ে আমার ক’টা কথা তুমি মন দিয়ে শোনো পরি। তোমার পিসি আর পিসেমশাই যদি সত্যিই তোমার জন্যে কোনও মেয়ে পছন্দ করে থাকেন, আর সেই পাত্রীটিকে যদি তোমারও পছন্দ হয় তাহলে আমার মনে হয় তাকেই তোমার বিয়ে করা উচিৎ। নইলে এতগুলো বছর পর তোমার যে আত্মীয়দের তুমি খুঁজে পেয়েছ, তাদের হয়ত তুমি আবার হারিয়ে ফেলবে। তাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ছিন্ন হোক বা না হোক তোমার প্রতি তাদের আন্তরিকতায় কিন্তু কিছুটা হলেও ঘাটতি হবেই। আর এ ক্ষেত্রে আরও দুটো কথা মনে রেখো তুমি। এক, তোমার পিসি আর পিসেমশাইয়ের কিন্তু বয়স হয়েছে, আর তোমার পিসি হাই ব্লাড প্রেসারের পেশেন্ট। আর দুই, একটা বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়েই কিন্তু তোমার পিসি তোমার দাদু ঠাকুমা আর বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে প্রাণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে তোমার আর তাদের সম্পর্ক যেন চিরকাল অটুট থাকে। আর তোমাদের পিসি-ভাইপোর অমন স্নেহ ভালবাসা আর শ্রদ্ধার সম্পর্কের কাছে তুমি আমাদের হাতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলে, সেটা নিছকই ঠুনকো। আর সেদিন আমরাও যে এ দায়িত্ব নিয়েছিলাম তার পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারন ছিল যে তুমি তখন একা ছিলে। তোমার পাশে দাঁড়াবার মত, তোমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মত একটা লোকও ছিল না। কিন্তু আজ পরিস্থিতিটা বদলে গেছে। ঠাকুরের আশীর্বাদে আজ তোমার পাশে দাঁড়াবার মত, তোমার দায়িত্ব নেবার মত অনেকগুলো লোক তোমার চারপাশ ঘিরে আছেন। তারা সকলেই কিন্তু তোমার গুরুজন আর তারা সকলেই কিন্তু তোমাকে আন্তরিক ভাবেই গ্রহণ করেছেন এবং ভালবাসেন। তাই আমাদের দেওয়া তোমার ওই প্রতিশ্রুতিটুকু তোমার অতগুলো আত্মীয় পরিজনদের ভালবাসার তুলনায় একেবারেই নগণ্য, একেবারেই মূল্যহীন। তাই তুমি ওই ধর্ম সঙ্কট টঙ্কটের কথা একেবারেই মাথায় এনো না। আর ঠিক তেমনটাই যদি হয়, তাহলে দেখবে আমি আর নীতাও কিন্তু মহানন্দে তোমার বিয়েতে উপস্থিত থাকব। আর আমাদের সাথে তোমার সম্পর্ক আজ যেমন আছে চিরটা কালই ঠিক তেমনটাই থাকবে। আমি নিশ্চিত নীতাও ঠিক একই কথা বলবে। আর আমার দাদাভাই আর রচুও। তাই তুমি অহেতুক ভেবে ভেবে নিজেকে দুর্বল করে ফেল না। আর, আরেকটা সাজেশান দিতে চাই। যদিও সেটা সম্ভব হবে কিনা তা তুমিই বলতে পারবে। আমার মনে হয় আজ রাতটা নিজের বাড়িতে একা একা না কাটিয়ে যদি তুমি তোমার কোন বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে থাকতে পারো, তাহলে খুব ভাল হত। তুমি যদি আমার দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটে আজ রাতটা কাটাতে চাও তাহলে আমি এখনই ওদের ফোন করে সেটা জানিয়ে দিতে পারি। নইলে তোমার পছন্দের অন্য কারো কাছেও যেতে পার। তবে তুমি তো জানোই, দাদাভাইদের ওয়ান বেডরুমের ফ্ল্যাট। সেখানে গেলে কিন্তু তোমাকে লিভিং রুমের সোফাতেই শুতে হবে। আমি দাদাভাইকে ফোন করে বলে দিই তাহলে”?
পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই বলল, “না না মন্তি, প্লীজ ওটা কোরো না। আমি আজ রচুর মুখোমুখি হতে চাই না একেবারেই। তবে তোমার সাজেশানটা ভেবে দেখব। দেখি কী করা যায়। তুমি কিন্তু আমার কথাটা মনে রেখ। তুমি কারনটা জানবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে কিন্তু সেটা জানিয়ে দেবে প্লীজ”।
গাড়ি তখন কোয়ার্টারের গেটের কাছে এসে থেমেছে দেখে সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে পরি। আমি তোমাকে সে’ভাবেই জানিয়ে দেব। আর শোনো, আমি কোয়ার্টারে পৌঁছে গিয়েছি। তাই এখন কথা বন্ধ করছি। তুমি আমার সাজেশান মত আজ রাতটা অন্য কোথাও কাটিয়ে দিও প্লীজ”।
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছে মন্তি। আমি সেটা দেখছি। আর তুমি সাবধানে থেক। পিসিরা আসছেন বলে কোন আয়োজন করবার প্রয়োজন হলে নিজেই হুটহাট করে বেরিয়ে পড়ো না যেন। বাইরে কোথাও যেতে হলে লক্ষ্মীদি বা অন্য কাউকে পাঠিও”।
সীমন্তিনীর গাড়ি ততক্ষণে গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সীমন্তিনী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গাড়ির দড়জা খুলে নামতে নামতে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছে। ছাড়ছি তাহলে এখন। আমার কথাটা মনে রেখ” বলে ফোন কেটে দিল।
গাড়ি থেকে নেমেই রামসিং এর হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে তাকে বাজার থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস, দুধ আর দই আনতে পাঠিয়ে দিয়ে গেটের দিকেই সিকিউরিটি গার্ডদের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। গার্ডদের টিম লিডার সীমন্তিনীকে তাদের দিকে আসতে দেখে রুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে একটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “গুড ইভিনিং ম্যাডাম, কিছু বলবেন”?
সীমন্তিনী নিজের হাতের মোবাইলটা দেখতে দেখতে বলল, “একটা গাড়ির নাম্বার নোট করে রাখো। এই যে এই নাম্বারটা” বলে মোবাইলটা গার্ডের দিকে এগিয়ে দিল। লোকটা সাথে সাথে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে নাম্বারটা নোট করে নেবার পর সীমন্তিনী বলল, “ছ’টা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এ গাড়িটা আসবে। তাতে আমার তিনজন আত্মীয় আসছেন। দু’জন মহিলা আর একজন বয়স্ক পুরুষ। সঙ্গে তো ড্রাইভার অবশ্যই থাকবে। তাদের ভেতরে ঢুকতে দেবে। গাড়ি সহ ঢুকতে দেবে। ওনারা আজ রাতে আমাদের কোয়ার্টারেই থাকবেন। আর গাড়িটাও এ’ কম্পাউন্ডের ভেতরেই থাকবে রাতে। ড্রাইভারকে একটা উপযুক্ত জায়গা দেখিয়ে দিও গাড়িটা রাখবার। আর গাড়িতে কিছু প্যাকেট বা কন্টেনার বা ওই জাতীয় কিছু থাকবে যাতে কিছু খাবার জিনিস নিয়ে আসবেন তারা। আর তাদের জামা কাপড়ের ব্যাগও দু’ একটা নিশ্চয়ই থাকবে। গাড়ি সার্চ করবার সময় একটু সাবধান থেকো। ওই জিনিসগুলোর যেন কোন ক্ষতি না হয়। অবশ্য আমি নিজেও টের পেলে তখন বেরিয়ে আসব। তবে আমি যদি আসতে না-ও পারি, তুমি নিজে ব্যাপারটা দেখবে। তাদের যেন কোনভাবে হেনস্থা না করা হয়। ঠিক আছে”?
গার্ডটা আরেকটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি নিজে ব্যাপারটা দেখব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন”।
সীমন্তিনী আর দেরী না করে ত্রস্ত পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কলিং বেল বাজাতেই অর্চনা এসে দড়জা খুলে তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, “একি দিদিভাই? তুমি এত তাড়াতাড়ি এসে পড়লে”!
সীমন্তিনী হেসে অর্চনার চিবুক ধরে নাড়িয়ে দিয়ে আদর করে বলল, “মনটা তোকে দেখবার জন্য বড্ড ছটফট করছিলরে সোনা। তাই চলে এলুম। আচ্ছা আগে বল তো, গেস্টরুমটা গোছানো হয়ে গেছে তো”?
অর্চনা একটু হেসে দড়জা বন্ধ করতে করতে বলল, “হ্যাঁগো দিদিভাই। সব গোছানো হয়ে গেছে। তা কারা আসছেন গো”?
সীমন্তিনী তার কথার সোজা জবাব না দিয়ে বলল, “বলছি দাঁড়া। কিন্তু লক্ষ্মীদি কোথায় রে”?
অর্চনা সীমন্তিনীর কাঁধ থেকে তার ব্যাগটা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল, “লক্ষ্মীদি তো রান্না ঘরেই আছে দিদিভাই”।
সীমন্তিনী রান্না ঘরের দড়জার সামনে গিয়ে ভেতরে উঁকি মেরে লক্ষ্মীকে দেখে বলল, “লক্ষ্মীদি, তোমার কোল্ড ড্রিঙ্কস, দুধ আর দই আনবার জন্যে তো রামসিংকে পাঠিয়েছি বাজারে। আর কিছু লাগবে? লাগলে এক্ষুনি বলে দাও, ফোন করে রামসিংকে বলে দিই”।
লক্ষ্মী সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “না দিদিভাই আজ ওই হলেই চলে যাবে। যারা আসছেন তারা যখন রাতের খাবার নিয়েই আসছেন তাহলে আজ আর সব্জি টব্জি না আনলেও চলবে। কাল সকালে তো আমি নিজেই বাজারে যাব। তা হ্যাঁ গো দিদিমণি, কারা আসছেন গো? তোমার বাড়ি থেকে কেউ আসছেন বুঝি”?
সীমন্তিনী বসবার ঘরের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি, তোমার এই মুখপুড়ি দিদিমণিকে তার বাড়ি থেকে কেউ দেখতে আসবে, এত ভাগ্য তার কপালে ভগবান লেখেন নি। তবে যারা আসছেন, তাদের কাউকেই আমি আগে কখনও দেখিনি। তারা তোমার বড়দার আত্মীয় স্বজন সবাই”।
লক্ষ্মী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “বড়দার আত্মীয় স্বজন? এতদিন তো তিনকুলে তার কেউ নেই বলেই শুনেছিলুম। অবশ্য সাত আটদিন আগেই তো শুনলুম আলিপুরদুয়ারে নাকি তিনি তার এক পিসিকে খুঁজে পেয়েছেন। তারাই কি আসছেন নাকি”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ গো লক্ষ্মীদি। পরির পিসি, পিসেমশাই আর তার তার বড় পিসতুতো দাদার বৌ এনারা তিনজন আসছেন। তাই তাদের খাতিরদারিতে যেন কোন খামতি না থাকে দেখো। নইলে কিন্তু আমাদের সাথে সাথে তোমার বড়দার মান সম্মানও যাবে। আর শোনো, আমি তো আগে ভেবেছিলুম তারা পাঁচটা সাড়ে পাঁচটার ভেতরেই এখানে পৌঁছে যাবেন। তাই একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিলুম। কিন্তু বাড়ি আসবার পথেই শুনলুম তাদের পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে ছ’টা সাড়ে ছ’টা হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের তাড়াহুড়ো করবার কিছু নেই। তুমি ধীরে সুস্থে তাদের তিনজনের জলখাবার বানাও। আর তাদের রাতের খাবারের ব্যাপারে আমাদের কোন আয়োজনই করতে হবে না। পরির পিসির সখ হয়েছে আমাদের সবাইকে নিজের বাড়ির রান্না খাবার খাওয়াবেন। তাই পরির তিন বৌদি মিলেই নাকি আমাদের সকলের জন্য রাতের খাবার বানিয়ে তাদের সঙ্গেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওনারা নিজেদের গাড়িতেই আসছেন। তবে তোমাকে কিন্তু কষ্ট করে খাবারগুলো তাদের গাড়ি থেকে ঘরে নিয়ে আসতে হবে। আর কাল তারা চলে যাবার আগে বাসনগুলো ধুয়ে মুছে আবার তাদের গাড়িতে তুলে দিতে হবে”।
লক্ষ্মী বলল, “সে নিয়ে তুমি ভেবো না দিদিমণি। আমি সব সামলে নেব’খন। কিন্তু দিদিমণি তারা তো তিনজন আসছেন। সঙ্গে তো বোধহয় তাদের গাড়ির ড্রাইভারও থাকবেন। বড়দার পিসি পিসেমশাইয়ের শোবার জায়গা তো গেস্ট রুমে করেছি। কিন্তু তার বৌদি আর তাদের গাড়ির ড্রাইভারটাকে কোথায় শুতে দেবে”?
সীমন্তিনী বলল, “বৌদিকে আমার বিছানায় শুতে দেব। আমি ক্যাম্প খাটটা পেতে শুয়ে পড়ব’খন। তবে ভাল কথাই মনে করিয়ে দিয়েছ তুমি আমাকে লক্ষ্মীদি। ড্রাইভারের শোবার জায়গা নিয়ে আমি একেবারেই ভাবিনি গো। আচ্ছা শোনো, রামসিং যখন বাজার থেকে ফিরে জিনিসগুলো ঘরে নিয়ে আসবে তখন তার সাথে কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে। আমি ভুলে গেলে আমাকে একটু মনে করিয়ে দিও। অর্চু তুইও কথাটা মাথায় রাখিস। আমাকে মনে করিয়ে দিস। আর লক্ষ্মীদি এখন আর আমাদের জন্যে জলখাবার বানিও না। ওনারা এলে বরং একসাথেই খাব আমরা সবাই। তুমি এখন আমাদের দু’জনকে শুধু দু’কাপ চা বানিয়ে দিও। না কি বলিস অর্চু”?
অর্চনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, সেটাই ভাল হবে। কিন্তু দিদিভাই ওনারা ......”
অর্চনাকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই সীমন্তিনী তার হাত ধরে নিজের ঘরের দিকে টানতে টানতে বলল, “চল, ঘরে গিয়ে কথা বলি আমরা” বলেই আবার লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে বলল, “রামসিং এলে ওকে কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে বোলো কিন্তু লক্ষ্মীদি”।
নিজের ঘরে এসে সীমন্তিনী আগে বাথরুমে ঢুকল। অর্চনা সীমন্তিনীর ব্যাগটা কোনের টেবিলের ওপর জায়গা মত রেখে দিয়ে সীমন্তিনীর বিছানার এক কোনায় বসে অনাগত অতিথিদের কথা ভাবতে লাগল। মিনিট দশেক বাদে সীমন্তিনী ঘরের পোশাকে বাথরুম থেকে বের হতেই লক্ষ্মী তাদের জন্যে চা নিয়ে এল। চা খেতে খেতে সীমন্তিনী অর্চনাকে বলল, “ওহ, একটা কথা তো ভুলেই গিয়েছি রে। দাঁড়া, বলে চায়ের কাপটা বিছানায় রেখেই সীমন্তিনী উঠে নিজের অফিসের ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তার ভেতর থেকে দুটো ওষুধের পাতা বের করে অর্চনাকে দিয়ে বলল, “তোর ওষুধটা রাখ। রাতে তো খেতে হবে। ওনারা এলে তাদের সাথে সাথে কথায় কথায় আমি হয়ত ভুলেই যাব” বলে অর্চনার পাশে বসে নিজের চায়ের কাপ হাতে তুলে একটা চুমুক দিতেই অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার বন্ধুর পিসি পিসেমশাইরা তোমার এখানে আসছেন কেন আজ দিদিভাই”?
সীমন্তিনী মনে মনে ভাবতে ভাবতে বলল, “শোন, হাতে যখন সময় আছে, তাহলে তোকে ব্যাপারটা খুলেই বলি”।
এই বলে গোটা ব্যাপারটাই তাকে খুলে বলল। তার বলা শেষ হতে না হতেই কলিং বেলের আওয়াজ হল। আর প্রায় সাথে সাথেই লক্ষ্মীর গলা শোনা গেল, “দিদিমণি, রামসিং এসেছে গো”।
দু’জনেরই ততক্ষণে চা খাওয়া শেষ হয়েছে। লক্ষ্মীর গলা শুনেই সীমন্তিনী ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর রামসিংকে তার কথা বলতেই রামসিং বলল, “ম্যাডাম, আপনি একদম ভাববেন না। আমার রুমের পাশের রুমটা তো খালিই আছে। দেবেন তো ছুটিতে আছে। ওর রুমেই ড্রাইভারের থাকবার বন্দোবস্ত করে দেব আমি। আর সেখানে সব বন্দোবস্ত আমিই করে দেব। আপনি ব্যস্ত হবেন না”।
রামসিং বাজার ফেরত পয়সা সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে চলে যেতেই সীমন্তিনী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা চল্লিশ। সে অর্চনাকে বলল, “অর্চু সময় তো প্রায় হয়ে এল রে। তুই এক কাজ কর না বোন। একটু নীতাকে ফোন করে দ্যাখ তো ধরে কি না। ধরলে ওকে সংক্ষেপে কথাটা জানিয়ে দে। তবে ওকে বুঝিয়ে দিস দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওনারা তো পুরো রাতই এখানে থাকছেন। তাই ওকে তাড়াহুড়ো করে আগে চলে আসতে হবে না। আমি চট করে রচুর সাথে একটু কথা বলে নিই। ওনারা চলে এলে আর কাউকে ফোন করতে পারব না হয়ত” বলে রান্নাঘরের দড়জার সামনে গিয়ে লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি একটু গেটের দিকে নজর রেখ তো। গেটের কাছে কোনও গাড়ি আসতে দেখলে আমাকে বোলো” বলে নিজের ঘরে চলে এল।
______________________________