29-03-2020, 12:20 AM
(Update No. 234)
হৈমবতীদেবী খুশী মুখে বললেন, “ঠিক বলেছ বড়বৌমা। পরিতোষ তো আমাদের কাছে সত্যিই হীরের চেয়েও দামী। তাহলে, তোমাদের মন যখন চাইছে, তোমরা ওকে ওই নামেই ডেকো। তবে একটা কথা আমি বা তোমাদের শ্বশুর মশাই নিজেদের মধ্য বলাবলি করলেও, কোনদিন তোমাদের কাছে প্রকাশ করিনি। আজ বলছি। আমি আর তোমার শ্বশুর মশাই মাঝেমধ্যেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি যে অনেক পূণ্যের ফলে তোমাদের মত তিনটে পুত্রবধূ আমরা পেয়েছি। আজ সেটা আবার প্রমাণিত করলে তোমরা সবাই। তবে সম্ভাষণ আর সম্মোধনটাই তো বড় কথা নয় বৌমারা। এ ছেলেটাকে তোমরা স্নেহ মমতা দিতে কার্পণ্য কোর না। বেচারা জ্ঞান হবার পর থেকে এক বাবা ছাড়া আর কাউকে সেভাবে কাছে পায়নি। আর গত সাতটা বছর ধরে তো পুরোপুরি অনাথই ভেবেছে নিজেকে। জানি ওকে আমরা ধরে বেঁধে এখানে আটকে রাখতে পারব না। ওকে তো কলকাতাতেই ফিরে যেতে হবে। সেখানেই তো ওর কাজ। আর আমাদের দিন তো প্রায় ফুরিয়ে এল। তাই বলছি, শুধু মুখে ভাইদা বলেই নিজেদের কর্তব্য করছ বলে ভেবো না তোমরা। ভাইয়ের মত ওকে আজীবন ভালবেসো তোমরা। ওর পাশে যে কেউ নেই। ও যেন আজকের পর থেকে নিজেকে আর কখনও অনাথ বলে না ভাবতে পারে”।
বড়বৌ সুলোচনা মেজবৌ আর ছোটবৌকে হাত ধরে হৈমবতী দেবীর কাছে এনে বললেন, “মা, আমরা সবাই তো তোমার কাছেই সবকিছু শিখেছি। এতদিনে তো আশাকরি এ বাড়ির সবাই বুঝতে পেরেছেন যে আমরা তিন জা নই, আমরা তিন বোন হয়ে গেছি। এই তিন বোনের হয়ে আমি আজ তোমার কাছে শপথ করে বলছি মা। আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, ভাইদাকে নিজের ভাইয়ের মতই স্নেহ ভালবাসা দিয়ে যাব। জানি ও হয়ত কোনদিনই আমাদের সাথে একসাথে থাকতে পারবে না। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থেক মা, আজকের পর থেকে ওর সমস্ত ভাল মন্দে সবরকম দুঃখে সুখে আমরা সবসময় ওর পাশে থাকবার চেষ্টা করব”।
মেজবৌ আর ছোটবৌও তাদের শাশুড়ির হাত ধরে বললেন, “হ্যাঁ মা, বড়দি যা বললেন, আজ থেকে আমরা ঠিক তাই করব। ও আমাদের কাছ থেকে দুরে থাকলেও আমরা সব সময় ওর সমস্ত খবরাখবর রাখব। আমরা ওর এই তিন বৌদি, তিন দিদি হয়ে সব সময় ওর পাশে থাকব”।
ছোটবৌ দেবিকা বলল, “আর এখন আমাদের সামনে প্রথম দায়িত্ব হল ভাইদার জন্য সুন্দর একটা বৌ যোগাড় করা”।
এতক্ষণ শাশুড়ি আর তিনবৌয়ের কথাবার্তা শুনতে শুনতে পরিতোষের মনটা খুশীতে ভেতরে ভেতরে কাঁদছিল যেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বসেছিল সে। রচনাকে ফোন করাটা আর হয়েই ওঠেনি। এবারে তার যেন হঠাতই আবার সে’কথা মনে হল। তাই সে গলা পরিস্কার করে বলল, “পিসি, আমি একটু বাইরে থেকে আসি? আসলে একজনকে এখনই আমার ফোন করা উচিৎ”।
হৈমবতীদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবি বাবা? বাইরে কেন যেতে চাইছিস আবার? এখানে অসুবিধে হলে না হয় পাশের ঘরে গিয়ে ফোনটা কর”।
ছোটবৌ দেবিকা পরিতোষের কাছে এসে তার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তা এই মূহুর্তেই ফোনটা কাকে করা হবে, সেটা জানতে পারি? নিশ্চয়ই তোমার প্রেমিকা, তাই না ভাইদা”?
পরিতোষ হেসে বলল, “না ছোটবৌদি, এক্কেবারেই তা নয়। তবে তাকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে পিসির সাথে দেখা হবার পরেই তাকে ফোন করব। এতক্ষণেও সেটা আর হয়ে ওঠেনি। ও বেচারী হয়ত এখনও তার ঠাকুরের কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করেই চলেছে”।
বলে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বাইরে যাবার উদ্দ্যোগ করতেই হৈমবতীদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “তোর জন্যে সে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে, মানে”?
পরিতোষ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “আসলে পিসি, আমি তো নিচে তোমাদের গদিতে অনেকক্ষণ আগেই এসে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু সকলে মিলেই দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে আমার সঙ্গে দেখা হবার পর মা-বাবা, ঠাকুমা আর দাদুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তুমি হয়ত সহ্য করতে পারবে না। একটা বিপদ টিপদ ঘটে যেতে পারে। তাই তো ডাক্তার ডেকে এনে সবকিছু পরামর্শ করেছেন সকলে মিলে। তখনই ওর সাথে ফোনে আমার কথা হয়। তোমার যাতে কোন বিপদ না হয়, আর আমিও যেন জীবনে প্রথমবার তোমাকে দেখতে পারি, এই জন্য ও ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা শুরু করেছিল। আর তখনই আমাকে বলেছিল যে, তোমার সাথে দেখা হবার পরই তোমার সুস্থতার খবরটা যেন আমি ওকে জানাই। আর আমি ফোন না করা পর্যন্ত ও প্রার্থনা করতেই থাকবে। এতক্ষণেও ফোনটা করতে পারিনি। এখন ফোনটা না করলে ওর ওপর খুব অন্যায় করা হবে গো”।
হৈমবতীদেবী সহ ঘরের বাকি তিন মহিলাও অবাক বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে পরিতোষের দিকে তাকালেন। হৈমবতীদেবী নিজের কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে বললেন, “একি বলছিস তুই বাবা? এমন মেয়েও এ দুনিয়ায় আছে? আমাকে চেনে না, জানে না, এমন কেউ আমার সুস্থতার জন্যে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনায় বসেছে”?
বড়বৌ সুলোচনা পরিতোষের একটা হাত ধরে বিস্ময় ভরা গলায় বললেন, “হ্যাঁ ভাইদা, এ তো সত্যিই খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। তোমার পিসিকে তো তখনও তুমি নিজেই দেখ নি। আর সেও নিশ্চয়ই দেখে নি মাকে। শুধু তোমার পিসি বলেই মা-র জন্যে সে প্রার্থনা করছে? এ-ও কি সম্ভব”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “সে তোমরা সবাই যতই অবাক হও না কেন বড়বৌদি, আমি একেবারেই বানিয়ে বা বাড়িয়ে কিছু বলছি না। আসলে মেয়েটা অমনই। ও সকলের থেকে আলাদা”।
মেজবৌ রুমা বললেন, “মেয়ে? তাহলে সে নির্ঘাত তোমার প্রেমিকা না হয়ে যায় না। এই ভাইদা, সত্যি করে বলো তো, মেয়েটা কে? তোমাদের সম্পর্ক কতদিন ধরে চলছে”?
ছোটবৌ দেবিকা একেবারে পরিতোষের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ ভাইদা, প্লীজ বলো না। আমারও খুব জানতে ইচ্ছে করছে গো”।
বড়বৌদি আর পিসির দিকে তাকিয়ে পরিতোষ বুঝতে পারল তাদের মনেও একই প্রশ্ন। তাই সে মনে মনে এক মূহুর্ত ভেবে বলল, “আচ্ছা বেশ, দাঁড়াও। আমি তোমাদের সামনে থেকেই তাকে ফোন করছি। আর ফোনের স্পীকারও অন করে দিচ্ছি। আমাদের দু’জনের সব কথাই তোমরা সবাই শুনতে পারবে। তাহলেই তোমাদের সকল প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে তোমরা, ঠিক আছে”?
বলে রচনার নাম্বার ডায়াল করে ফোন স্পীকারে দিল। ছোটবৌ দেবিকা পরিতোষের কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “সাবধান, ভাইদা। আগে থেকেই তাকে সতর্ক করে দিও কিন্তু। স্পীকার অন করে রেখে সবার সামনে চুমু টুমু খেয়ে বোসো না যেন তোমরা আবার”।
পরিতোষ তার দিকে চেয়ে মুচকি হাসতেই ও’পাশ থেকে রতীশের গলা শোনা গেল, “হ্যাঁ পরিদা, বলো। ওদিকের খবর কি? আমরা তো এতক্ষণেও তোমার ফোন না পেয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি গো”।
পরিতোষ বলল, “এদিকের খবর খুব ভাল রতু। তা রচু কোথায়? ফোনটা একটু ওকে দাও না ভাই”।
ওদিক থেকে রতীশ জবাব দিল, “রচু তো সেই তখন থেকেই ঠাকুরের সামনে বসে প্রার্থনা করে যাচ্ছে তোমাদের জন্য। দাঁড়াও, একটু ধরো। আমি ওকে ফোন দিচ্ছি”।
পরিতোষের আশেপাশে তিন জা ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে এক পুরুষ কন্ঠ শুনতে পাবে, এ ধারণা তারা কেউই করতে পারেনি। একে অপরের মুখ দেখাদেখি করছিল। ওদিকে ফোনের ও’পাশ থেকে আগের সেই পুরুষ কন্ঠের কথা শোনা গেল। সে কাউকে বলছে “এই রচু, এই দেখো পরিদা ফোন করেছেন। তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন। নাও ফোনটা ধরো। উনি লাইনে আছেন”।
কিছু সময় বাদে সুমিষ্ট অথচ উদ্বেগ ভরা মেয়েলী গলায় রচনা বলল, “পরিদা, কী হয়েছে গো? সব ঠিক আছে তো? তোমার পিসেমশাই আর পিসতুতো দাদারা সকলে তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করেছেন তো? আর তোমার পিসি? উনি সুস্থ আছেন তো? তোমাকে আদর করে তার কাছে টেনে নিয়েছেন তো? নাকি কোনও আপদ বিপদ কিছু হয়েছে? ডাক্তার কী বলছেন”?
পরিতোষ আগে থেকেই ধারণা করে রেখেছিল যে প্রথমেই এমন একগুচ্ছ প্রশ্নের ঝড় তুলে দেবে রচনা। এবার রচনা থামতে সে বলল, “রচু সোনা বোন আমার। একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দেব বলো তো? তবে প্রথমে এক কথায় তোমার সব প্রশ্নের একটাই উত্তর দিচ্ছি, এদিকে সব কিছু ঠিকঠাক আছে। আর সব কিছু মানে সব কিছু। তুমি আমার হয়ে, পিসির হয়ে আর এ বাড়ির সকলের উদ্দেশ্যে ঠাকুরের কাছে যা যা প্রার্থনা করেছ এতক্ষণ ধরে, তোমার ঠাকুর তোমার সব প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। পিসেমশাই আর দাদাদের কথা তো আগেই বলেছি। তিন তিনটে মিষ্টি বৌদি আর পাঁচটা মিষ্টি মিষ্টি ছোট ছোট ভাইপো ভাইঝি আর নিজের রক্তের সম্পর্কের পিসিকে পেয়ে আমি তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছি বোন। তাই তো তোমাকে ফোন করবার কথাটাও এতক্ষণ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা কোরো বোন। তোমাকে ফোনটা আরও অন্ততঃ আধঘণ্টা আগেই আমার করা উচিৎ ছিল। কিন্তু নতুন নতুন এতগুলো আপনজনকে কাছে পেয়ে আমি যেন নিজেকেই হারিয়ে বসে ছিলাম এতক্ষণ .......”
পরিতোষের কথা শেষ হবার আগেই ও’দিক থেকে রচনা বলল, “পরিদা, এক মিনিট। একটু লাইনে
থাকো। আমি ঠাকুরকে একবার প্রণাম করে নিই। তারপর কথা বলছি”।
পরিতোষ কিছু না বলে ঘরের সকলের মুখের দিকে দেখতে লাগল। সবাই যে রীতিমত বিস্মিত, এ’কথা বলাই বাহুল্য। সকলের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা সকলেই যেন অপ্রত্যাশিত একটা ধাক্কা খেয়েছেন। কেবলমাত্র হৈমবতীদেবীর মুখের ভাবটাই একটু অন্যরকম। তিনি ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভাবছেন মনে হল।
খানিক বাদে ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “হ্যাঁ পরিদা ফিরে এসেছি। আসলে তুমি যখন বললে যে ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন, সে’কথা শোনবার পর ঠাকুরকে একটা প্রণাম না করলে চলে বলো? নইলে তো স্বার্থপর হয়ে যাব। শুধু বিপদের সময় ঠাকুরকে ডাকব, আর বিপদ কাটলেই ঠাকুরকে ভুলে যাব, এমনটা করলে ঠাকুর কি আর আমার প্রার্থনা আর কখনও রাখবেন? তাই ঠাকুরকে প্রণামের সাথে সাথে ধন্যবাদও জানিয়ে এলুম। হ্যাঁ এবার বলো তো, কী কী হল”?
পরিতোষ মোলায়েম স্বরে বলল, “আমি পিসির সামনে আসবার আগেই ডাক্তারবাবু নিজেই আমার মা-বাবা দাদু আর ঠাকুমার ব্যাপারে পিসিকে সবটা খুলে বলেছিলেন। তারপর আমি যখন সামনে এলাম তখন পিসি আমাকে দেখবার পর একটু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তারবাবু আগে থেকেই তৈরী ছিলেন। তার চিকিৎসায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিসি আবার সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন তো পিসি আর তিন বৌদির সাথে গল্প করতে করতে আমি উঠে বাইরে গিয়ে তোমাকে ফোন করতে চাইছিলাম। কিন্তু এনারা কেউ আমাকে বাইরে যেতে দিতে চাইছিলেন না। তাই তাদের সাথে বসেই তোমাকে ফোন করছি”।
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “আচ্ছা বাবা যাক, দুশ্চিন্তাটা কাটল। তা কালচিনিতে আর দিদিভাইকে এ’সব খবর জানিয়েছ? ওখানেও যে সবাই চিন্তায় আছে”।
পরিতোষ একটু আমতা আমতা করে বলল, “না রচু, সেটা আর করে উঠতে পারিনি। তবে পিসি নিজেই একটু আগে কালচিনির বাড়িতে ফোন করেছিলেন। তোমার বাবার সাথে কথা বলেছেন। কালচিনির বাড়ির সকলকেই আগামীকাল সকালে এখানে চলে আসতে বলেছেন। তাই কালচিনিতে সবাই ব্যাপারটা জেনে গেছেন। কিন্তু মন্তিকে এখনও জানানো হয়নি। একটু পরে আমি ওকে বা নীতাকে ফোন করব। কিন্তু এখানে বৌদিদের আর পিসির সাথে এত কথা বলতে ইচ্ছে করছে যে আদৌ ওদের সাথে শোবার আগে আর ফোনে কথা বলতে পারব কিনা বলা মুস্কিল। এতক্ষণ তো ফোন সুইচ অফ করেই রেখেছিলাম। জানিনা ওরা কেউ ফোন করেছিল কি না। ওদের হয়ত আমার ওপর রাগই হচ্ছে”।
ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “পরিদা, ও’সব নিয়ে ভেবনা তুমি। তোমার জীবনের এই খুশীর মূহুর্তটাকে মনে প্রাণে উপভোগ কর তুমি। দিদিভাই আর নীতাদিকে আমি এখনই সবটা জানিয়ে দিচ্ছি। ওরা তোমার ওপর রেগে থাকতে পারেন এ’কথা ঠিক। তবে আমি জানি, তোমার জীবনের এতবড় একটা খুশীর খবর শুনে তাদের সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে যাবে। আমি এখনই দিদিভাইকে ফোন করছি। আচ্ছা আমি বরং এখন রাখছি পরিদা। তবে আমার তরফ থেকে তোমার পিসি, পিসেমশাই, দাদা বৌদিদের আর সব ভাইপো ভাইঝিদের প্রণাম আর ভালবাসা জানিও”।
পরিতোষ কিছু বলবার আগেই কেউ একজন তার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিল যেন। পরিতোষ দেখল, হৈমবতীদেবী। হৈমবতীদেবী তখন ফোনে বলছেন, “তোমার প্রণাম আমি সাদরে গ্রহণ করলুম মা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তোমার হাতের শাঁখা সিঁদুর অক্ষয় হোক। তুমি যেন তোমার স্বামী সংসার নিয়ে চিরসুখে থাকো”।
ও’পাশ থেকে রচনা একটু থতমত খেয়ে বলল, “ক-কে ক-কে বলছেন? আ-আপনি কি পরিদার পিসি”?
হৈমবতীদেবী শান্ত স্নিগ্ধ স্বরে জবাব দিলেন, “শুধু তোর পরিদার পিসি কেন বলছিস রে মা? আমি যে তোরও পিসি। তোর বাবা বিধুও যে আমার একটা ভাই রে। আমার ছেলেরা, ছেলের বৌয়েরা সবাই তোর বাবাকে বিধুমামু বলে ডাকে। আমি ছোটবেলায় তোর বাবাকে ভাইফোঁটা দিতুম। তাহলে আমি তোর পিসি হলুম না”?
রচনা এবার একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ, আজ সন্ধ্যের সময়ই বাবার মুখে সে’কথা শুনলুম যে তিনি তোমায় হিমুদি বলে ডাকেন। আর তোমার ছোট ভাই বাবার প্রিয় বন্ধু ছিলেন। পরিদার সাথে কয়েক মাস আগেই আমাদের পরিচয় হয়েছে। উনি আমার দিদিভাই মানে আমার বরের বোনের বন্ধু। আমাদের খুব স্নেহ করেন। কিন্তু তার বাবার নামটা জানবার বা শোনবার মত পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়ি নি। আর দুর্গাকাকুকে কখনও চোখে না দেখলেও তার নামটা ছোটবেলায় মাঝে মধ্যে বাবার মুখে শুনেছি। কিন্তু বাবার মুখে তোমার কথা আগে কোনদিন শুনেছি বলে মনে পড়ছে না”।
হৈমবতীদেবী জবাবে বললেন, “কিকরে শুনবি রে মা। আমি অভাগী যে ছোট বয়সেই সব্বাইকে হারিয়ে ফেলেছিলুম। তোর বাবাকে প্রায় চুয়াল্লিশ বছর বাদে এই তো সেদিন মাত্র মাস খানেক বা মাস দেড়েক আগে আবার দেখতে পেলুম। সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমি এক হারিয়ে যাওয়া নিধি ফিরে পেয়েছি। তোর বাবাকে এর আগে শেষ দেখেছিলুম যখন ওর বয়স দশ এগারো বছর। আমি তখন সবে ষোল সতের বছরের এক কিশোরী। ওই বয়সেই মা-বাবার অমতে অ', এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলুম বলেই বাবা সেদিন আমাকে মৃতা বলে ঘোষণা করেছিলেন। আমাকে ত্যজ্য করে আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবেন না বলেই বাবা ভিটে বাড়ি বিক্রী করে মা আর ভাইকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই বাপের বাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক চিরতরে ঘুচে গিয়েছিল। তোর বাবা, বিধু ছিল আমার ছোট ভাই দুর্গার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। আমাকে হিমুদি বলে ডাকত। আমার পুরো নাম তো হৈমবতী। তবে আমাদের বিয়ের প্রায় বছর দুয়েক বাদে একদিন বিধুদের বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। বাড়ি ঘর সবকিছু একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তারপর শুনেছিলুম ওরা সেই জমি বিক্রী করে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিল। তারপর ও বাড়ির কাউকে আর কোনদিন দেখিনি। আর কথাতেই তো আছে যে চোখের আড়াল হলেই ধীরে ধীরে মানুষ মনের আড়ালেও চলে যায়। তোর বাবা নিজেও বুঝি আমার মা বাবা ভাইদের মতই আমাকে ভুলে গিয়েছিল। আর আমার ভাই দুর্গাই তোর এই পরিদার বাবা। এবার বুঝলি আমি তোর পিসি হলুম কিভাবে”?
হৈমবতীদেবী থামতে রচনা বলল, “হ্যাঁ পিসি, পরিদাই যে আমাদের দুর্গাকাকুর ছেলে সে’কথা আমরা আজই জানতে পারলুম। বাবা তো আজ তার বন্ধুর ছেলেকে পেয়ে খুশীতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন। আর বারবার শুধু দিদিভাইয়ের কথা বলছেন। দিদিভাইয়ের সাথে পরিচয় নাহলে পরিদার সাথে তো আমাদের পরিচয়ই হত না। আর দিদিভাই তো আমার মা বাবা দিদি ভাই, এমনকি আমার জন্যেও কত কী করেছেন গত কয়েকটা বছরে”।
হৈমবতীদেবী একটু হেসে বললেন, “তোদের কাউকেই তো আমার দেখা হয়নি। তবে তোরা যে দু’বোন একভাই, এ’কথা বিধুর মুখে শুনেছি। তোর আর অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু কিছু কথাও শুনেছি। বিধুর মুখে শুনেছি ও একটা মেয়েকে মন্তিমা বলে ডাকে। সে নাকি ওর মা অন্নপূর্ণা। তা সেই মেয়েটিই কি তোর এই দিদিভাই নাকিরে মা”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁগো পিসি, আমার ওই দিদিভাইই তো আমার মা বাবার মা অন্নপূর্ণা আর মা দুর্গা। সে আমার বরের ছ’মাসের ছোট খুড়তুতো বোন। সম্পর্কে আমার ননদ হলেও বয়সে সে তো আমার থেকে অনেক বড়। আর আমার বিয়ের এক দেড় বছর আগে থেকেই দিদিভাইয়ের সাথে আমার আর আমাদের পরিবারের সকলের পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকেই তার মিষ্টি স্বভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকে আমি দিদিভাই বলে ডাকতে শুরু করেছি। আমাদের বিয়েটাও তার জন্যেই হয়েছিল। তারপর আমাদের ভাইয়ের পড়াশোনা, বাবার চিকিৎসা, তার নতুন ব্যবসা, বড়দিকে ফিরে পাওয়া, এমনকি কালচিনির বাড়িতে নতুন ঘর বানাবার যে কাজ চলছে, এ সব কিছুই দিদিভাই করেছেন। আমরা দু’জন যে গত চার পাঁচ মাস ধরে কলকাতায় আছি, আমাদের সব খবরাখবর দিদিভাই রাখেন। রোজ দিনে দু’ থেকে তিনবার আমাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়”।
হৈমবতীদেবী খুব মন দিয়ে রচনার কথাগুলো শুনে বললেন, “হ্যাঁরে মা, বিধুর মুখে মেয়েটার খুব প্রশংসা শুনেছি আমিও। এখন তোর কথা শুনেও তাকে একটিবার চোখে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে রে। কিন্তু এর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই কি পরিতোষ বিধুর কাছে এসেছে”?
রচনা সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ গো পিসি। আগেই বললুম না? পরিতোষদা তো আমার দিদিভাইয়ের বন্ধু। আমার দিদিভাইয়ের সাথে দেখা করতেই তো পরিদা নাগরাকাটা গিয়েছিল। সেখানে নীতাদি আর আমার বড়দিও আছে এখন। তাদের সাথে কথা বলার পরই তো পরিদা কালচিনি গিয়ে বাবার সাথে দেখা করতে চাইছিলেন। আজই সকালে পরিদা আমাদের কালচিনির বাড়িতে গিয়েছিলেন। আর মা বাবার সাথে কথায় কথায় পুরনো সম্পর্কের কথা বেরিয়ে পড়তেই সেই সূতোর টানেই তো তিনি তোমার কাছে গিয়ে পৌছলেন। তাই তো বাবা আরেকবার নতুন করে দিদিভাইয়ের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন”।
হৈমবতীদেবী এবার বললেন, “ঠিক বলেছিস মা। আমি তো খানিকক্ষণ আগেও ভাবছিলুম যে বিধু আমাকে সারা জীবনের জন্য ঋণী বানিয়ে দিল। কিন্তু এখন তোর কথা শুনে বুঝতে পারছি, শুধু বিধু নয়। আরেক জনের কাছেও আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। সে তোর ওই দিদিভাই। তার সাথে দেখা করবার ইচ্ছেটা আমার আরও প্রবল হয়ে উঠল। তবে, তোর সাথে আমি আজ রাতে আরও একটু কথা বলতে চাই। তুই তাতে বিরক্ত হবি না তো মা”?
______________________________
হৈমবতীদেবী খুশী মুখে বললেন, “ঠিক বলেছ বড়বৌমা। পরিতোষ তো আমাদের কাছে সত্যিই হীরের চেয়েও দামী। তাহলে, তোমাদের মন যখন চাইছে, তোমরা ওকে ওই নামেই ডেকো। তবে একটা কথা আমি বা তোমাদের শ্বশুর মশাই নিজেদের মধ্য বলাবলি করলেও, কোনদিন তোমাদের কাছে প্রকাশ করিনি। আজ বলছি। আমি আর তোমার শ্বশুর মশাই মাঝেমধ্যেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি যে অনেক পূণ্যের ফলে তোমাদের মত তিনটে পুত্রবধূ আমরা পেয়েছি। আজ সেটা আবার প্রমাণিত করলে তোমরা সবাই। তবে সম্ভাষণ আর সম্মোধনটাই তো বড় কথা নয় বৌমারা। এ ছেলেটাকে তোমরা স্নেহ মমতা দিতে কার্পণ্য কোর না। বেচারা জ্ঞান হবার পর থেকে এক বাবা ছাড়া আর কাউকে সেভাবে কাছে পায়নি। আর গত সাতটা বছর ধরে তো পুরোপুরি অনাথই ভেবেছে নিজেকে। জানি ওকে আমরা ধরে বেঁধে এখানে আটকে রাখতে পারব না। ওকে তো কলকাতাতেই ফিরে যেতে হবে। সেখানেই তো ওর কাজ। আর আমাদের দিন তো প্রায় ফুরিয়ে এল। তাই বলছি, শুধু মুখে ভাইদা বলেই নিজেদের কর্তব্য করছ বলে ভেবো না তোমরা। ভাইয়ের মত ওকে আজীবন ভালবেসো তোমরা। ওর পাশে যে কেউ নেই। ও যেন আজকের পর থেকে নিজেকে আর কখনও অনাথ বলে না ভাবতে পারে”।
বড়বৌ সুলোচনা মেজবৌ আর ছোটবৌকে হাত ধরে হৈমবতী দেবীর কাছে এনে বললেন, “মা, আমরা সবাই তো তোমার কাছেই সবকিছু শিখেছি। এতদিনে তো আশাকরি এ বাড়ির সবাই বুঝতে পেরেছেন যে আমরা তিন জা নই, আমরা তিন বোন হয়ে গেছি। এই তিন বোনের হয়ে আমি আজ তোমার কাছে শপথ করে বলছি মা। আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, ভাইদাকে নিজের ভাইয়ের মতই স্নেহ ভালবাসা দিয়ে যাব। জানি ও হয়ত কোনদিনই আমাদের সাথে একসাথে থাকতে পারবে না। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থেক মা, আজকের পর থেকে ওর সমস্ত ভাল মন্দে সবরকম দুঃখে সুখে আমরা সবসময় ওর পাশে থাকবার চেষ্টা করব”।
মেজবৌ আর ছোটবৌও তাদের শাশুড়ির হাত ধরে বললেন, “হ্যাঁ মা, বড়দি যা বললেন, আজ থেকে আমরা ঠিক তাই করব। ও আমাদের কাছ থেকে দুরে থাকলেও আমরা সব সময় ওর সমস্ত খবরাখবর রাখব। আমরা ওর এই তিন বৌদি, তিন দিদি হয়ে সব সময় ওর পাশে থাকব”।
ছোটবৌ দেবিকা বলল, “আর এখন আমাদের সামনে প্রথম দায়িত্ব হল ভাইদার জন্য সুন্দর একটা বৌ যোগাড় করা”।
এতক্ষণ শাশুড়ি আর তিনবৌয়ের কথাবার্তা শুনতে শুনতে পরিতোষের মনটা খুশীতে ভেতরে ভেতরে কাঁদছিল যেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বসেছিল সে। রচনাকে ফোন করাটা আর হয়েই ওঠেনি। এবারে তার যেন হঠাতই আবার সে’কথা মনে হল। তাই সে গলা পরিস্কার করে বলল, “পিসি, আমি একটু বাইরে থেকে আসি? আসলে একজনকে এখনই আমার ফোন করা উচিৎ”।
হৈমবতীদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবি বাবা? বাইরে কেন যেতে চাইছিস আবার? এখানে অসুবিধে হলে না হয় পাশের ঘরে গিয়ে ফোনটা কর”।
ছোটবৌ দেবিকা পরিতোষের কাছে এসে তার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তা এই মূহুর্তেই ফোনটা কাকে করা হবে, সেটা জানতে পারি? নিশ্চয়ই তোমার প্রেমিকা, তাই না ভাইদা”?
পরিতোষ হেসে বলল, “না ছোটবৌদি, এক্কেবারেই তা নয়। তবে তাকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে পিসির সাথে দেখা হবার পরেই তাকে ফোন করব। এতক্ষণেও সেটা আর হয়ে ওঠেনি। ও বেচারী হয়ত এখনও তার ঠাকুরের কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করেই চলেছে”।
বলে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বাইরে যাবার উদ্দ্যোগ করতেই হৈমবতীদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “তোর জন্যে সে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে, মানে”?
পরিতোষ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “আসলে পিসি, আমি তো নিচে তোমাদের গদিতে অনেকক্ষণ আগেই এসে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু সকলে মিলেই দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে আমার সঙ্গে দেখা হবার পর মা-বাবা, ঠাকুমা আর দাদুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তুমি হয়ত সহ্য করতে পারবে না। একটা বিপদ টিপদ ঘটে যেতে পারে। তাই তো ডাক্তার ডেকে এনে সবকিছু পরামর্শ করেছেন সকলে মিলে। তখনই ওর সাথে ফোনে আমার কথা হয়। তোমার যাতে কোন বিপদ না হয়, আর আমিও যেন জীবনে প্রথমবার তোমাকে দেখতে পারি, এই জন্য ও ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা শুরু করেছিল। আর তখনই আমাকে বলেছিল যে, তোমার সাথে দেখা হবার পরই তোমার সুস্থতার খবরটা যেন আমি ওকে জানাই। আর আমি ফোন না করা পর্যন্ত ও প্রার্থনা করতেই থাকবে। এতক্ষণেও ফোনটা করতে পারিনি। এখন ফোনটা না করলে ওর ওপর খুব অন্যায় করা হবে গো”।
হৈমবতীদেবী সহ ঘরের বাকি তিন মহিলাও অবাক বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে পরিতোষের দিকে তাকালেন। হৈমবতীদেবী নিজের কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে বললেন, “একি বলছিস তুই বাবা? এমন মেয়েও এ দুনিয়ায় আছে? আমাকে চেনে না, জানে না, এমন কেউ আমার সুস্থতার জন্যে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনায় বসেছে”?
বড়বৌ সুলোচনা পরিতোষের একটা হাত ধরে বিস্ময় ভরা গলায় বললেন, “হ্যাঁ ভাইদা, এ তো সত্যিই খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। তোমার পিসিকে তো তখনও তুমি নিজেই দেখ নি। আর সেও নিশ্চয়ই দেখে নি মাকে। শুধু তোমার পিসি বলেই মা-র জন্যে সে প্রার্থনা করছে? এ-ও কি সম্ভব”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “সে তোমরা সবাই যতই অবাক হও না কেন বড়বৌদি, আমি একেবারেই বানিয়ে বা বাড়িয়ে কিছু বলছি না। আসলে মেয়েটা অমনই। ও সকলের থেকে আলাদা”।
মেজবৌ রুমা বললেন, “মেয়ে? তাহলে সে নির্ঘাত তোমার প্রেমিকা না হয়ে যায় না। এই ভাইদা, সত্যি করে বলো তো, মেয়েটা কে? তোমাদের সম্পর্ক কতদিন ধরে চলছে”?
ছোটবৌ দেবিকা একেবারে পরিতোষের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ ভাইদা, প্লীজ বলো না। আমারও খুব জানতে ইচ্ছে করছে গো”।
বড়বৌদি আর পিসির দিকে তাকিয়ে পরিতোষ বুঝতে পারল তাদের মনেও একই প্রশ্ন। তাই সে মনে মনে এক মূহুর্ত ভেবে বলল, “আচ্ছা বেশ, দাঁড়াও। আমি তোমাদের সামনে থেকেই তাকে ফোন করছি। আর ফোনের স্পীকারও অন করে দিচ্ছি। আমাদের দু’জনের সব কথাই তোমরা সবাই শুনতে পারবে। তাহলেই তোমাদের সকল প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে তোমরা, ঠিক আছে”?
বলে রচনার নাম্বার ডায়াল করে ফোন স্পীকারে দিল। ছোটবৌ দেবিকা পরিতোষের কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “সাবধান, ভাইদা। আগে থেকেই তাকে সতর্ক করে দিও কিন্তু। স্পীকার অন করে রেখে সবার সামনে চুমু টুমু খেয়ে বোসো না যেন তোমরা আবার”।
পরিতোষ তার দিকে চেয়ে মুচকি হাসতেই ও’পাশ থেকে রতীশের গলা শোনা গেল, “হ্যাঁ পরিদা, বলো। ওদিকের খবর কি? আমরা তো এতক্ষণেও তোমার ফোন না পেয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি গো”।
পরিতোষ বলল, “এদিকের খবর খুব ভাল রতু। তা রচু কোথায়? ফোনটা একটু ওকে দাও না ভাই”।
ওদিক থেকে রতীশ জবাব দিল, “রচু তো সেই তখন থেকেই ঠাকুরের সামনে বসে প্রার্থনা করে যাচ্ছে তোমাদের জন্য। দাঁড়াও, একটু ধরো। আমি ওকে ফোন দিচ্ছি”।
পরিতোষের আশেপাশে তিন জা ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে এক পুরুষ কন্ঠ শুনতে পাবে, এ ধারণা তারা কেউই করতে পারেনি। একে অপরের মুখ দেখাদেখি করছিল। ওদিকে ফোনের ও’পাশ থেকে আগের সেই পুরুষ কন্ঠের কথা শোনা গেল। সে কাউকে বলছে “এই রচু, এই দেখো পরিদা ফোন করেছেন। তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন। নাও ফোনটা ধরো। উনি লাইনে আছেন”।
কিছু সময় বাদে সুমিষ্ট অথচ উদ্বেগ ভরা মেয়েলী গলায় রচনা বলল, “পরিদা, কী হয়েছে গো? সব ঠিক আছে তো? তোমার পিসেমশাই আর পিসতুতো দাদারা সকলে তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করেছেন তো? আর তোমার পিসি? উনি সুস্থ আছেন তো? তোমাকে আদর করে তার কাছে টেনে নিয়েছেন তো? নাকি কোনও আপদ বিপদ কিছু হয়েছে? ডাক্তার কী বলছেন”?
পরিতোষ আগে থেকেই ধারণা করে রেখেছিল যে প্রথমেই এমন একগুচ্ছ প্রশ্নের ঝড় তুলে দেবে রচনা। এবার রচনা থামতে সে বলল, “রচু সোনা বোন আমার। একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দেব বলো তো? তবে প্রথমে এক কথায় তোমার সব প্রশ্নের একটাই উত্তর দিচ্ছি, এদিকে সব কিছু ঠিকঠাক আছে। আর সব কিছু মানে সব কিছু। তুমি আমার হয়ে, পিসির হয়ে আর এ বাড়ির সকলের উদ্দেশ্যে ঠাকুরের কাছে যা যা প্রার্থনা করেছ এতক্ষণ ধরে, তোমার ঠাকুর তোমার সব প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। পিসেমশাই আর দাদাদের কথা তো আগেই বলেছি। তিন তিনটে মিষ্টি বৌদি আর পাঁচটা মিষ্টি মিষ্টি ছোট ছোট ভাইপো ভাইঝি আর নিজের রক্তের সম্পর্কের পিসিকে পেয়ে আমি তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছি বোন। তাই তো তোমাকে ফোন করবার কথাটাও এতক্ষণ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা কোরো বোন। তোমাকে ফোনটা আরও অন্ততঃ আধঘণ্টা আগেই আমার করা উচিৎ ছিল। কিন্তু নতুন নতুন এতগুলো আপনজনকে কাছে পেয়ে আমি যেন নিজেকেই হারিয়ে বসে ছিলাম এতক্ষণ .......”
পরিতোষের কথা শেষ হবার আগেই ও’দিক থেকে রচনা বলল, “পরিদা, এক মিনিট। একটু লাইনে
থাকো। আমি ঠাকুরকে একবার প্রণাম করে নিই। তারপর কথা বলছি”।
পরিতোষ কিছু না বলে ঘরের সকলের মুখের দিকে দেখতে লাগল। সবাই যে রীতিমত বিস্মিত, এ’কথা বলাই বাহুল্য। সকলের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা সকলেই যেন অপ্রত্যাশিত একটা ধাক্কা খেয়েছেন। কেবলমাত্র হৈমবতীদেবীর মুখের ভাবটাই একটু অন্যরকম। তিনি ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভাবছেন মনে হল।
খানিক বাদে ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “হ্যাঁ পরিদা ফিরে এসেছি। আসলে তুমি যখন বললে যে ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন, সে’কথা শোনবার পর ঠাকুরকে একটা প্রণাম না করলে চলে বলো? নইলে তো স্বার্থপর হয়ে যাব। শুধু বিপদের সময় ঠাকুরকে ডাকব, আর বিপদ কাটলেই ঠাকুরকে ভুলে যাব, এমনটা করলে ঠাকুর কি আর আমার প্রার্থনা আর কখনও রাখবেন? তাই ঠাকুরকে প্রণামের সাথে সাথে ধন্যবাদও জানিয়ে এলুম। হ্যাঁ এবার বলো তো, কী কী হল”?
পরিতোষ মোলায়েম স্বরে বলল, “আমি পিসির সামনে আসবার আগেই ডাক্তারবাবু নিজেই আমার মা-বাবা দাদু আর ঠাকুমার ব্যাপারে পিসিকে সবটা খুলে বলেছিলেন। তারপর আমি যখন সামনে এলাম তখন পিসি আমাকে দেখবার পর একটু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তারবাবু আগে থেকেই তৈরী ছিলেন। তার চিকিৎসায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিসি আবার সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন তো পিসি আর তিন বৌদির সাথে গল্প করতে করতে আমি উঠে বাইরে গিয়ে তোমাকে ফোন করতে চাইছিলাম। কিন্তু এনারা কেউ আমাকে বাইরে যেতে দিতে চাইছিলেন না। তাই তাদের সাথে বসেই তোমাকে ফোন করছি”।
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “আচ্ছা বাবা যাক, দুশ্চিন্তাটা কাটল। তা কালচিনিতে আর দিদিভাইকে এ’সব খবর জানিয়েছ? ওখানেও যে সবাই চিন্তায় আছে”।
পরিতোষ একটু আমতা আমতা করে বলল, “না রচু, সেটা আর করে উঠতে পারিনি। তবে পিসি নিজেই একটু আগে কালচিনির বাড়িতে ফোন করেছিলেন। তোমার বাবার সাথে কথা বলেছেন। কালচিনির বাড়ির সকলকেই আগামীকাল সকালে এখানে চলে আসতে বলেছেন। তাই কালচিনিতে সবাই ব্যাপারটা জেনে গেছেন। কিন্তু মন্তিকে এখনও জানানো হয়নি। একটু পরে আমি ওকে বা নীতাকে ফোন করব। কিন্তু এখানে বৌদিদের আর পিসির সাথে এত কথা বলতে ইচ্ছে করছে যে আদৌ ওদের সাথে শোবার আগে আর ফোনে কথা বলতে পারব কিনা বলা মুস্কিল। এতক্ষণ তো ফোন সুইচ অফ করেই রেখেছিলাম। জানিনা ওরা কেউ ফোন করেছিল কি না। ওদের হয়ত আমার ওপর রাগই হচ্ছে”।
ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “পরিদা, ও’সব নিয়ে ভেবনা তুমি। তোমার জীবনের এই খুশীর মূহুর্তটাকে মনে প্রাণে উপভোগ কর তুমি। দিদিভাই আর নীতাদিকে আমি এখনই সবটা জানিয়ে দিচ্ছি। ওরা তোমার ওপর রেগে থাকতে পারেন এ’কথা ঠিক। তবে আমি জানি, তোমার জীবনের এতবড় একটা খুশীর খবর শুনে তাদের সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে যাবে। আমি এখনই দিদিভাইকে ফোন করছি। আচ্ছা আমি বরং এখন রাখছি পরিদা। তবে আমার তরফ থেকে তোমার পিসি, পিসেমশাই, দাদা বৌদিদের আর সব ভাইপো ভাইঝিদের প্রণাম আর ভালবাসা জানিও”।
পরিতোষ কিছু বলবার আগেই কেউ একজন তার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিল যেন। পরিতোষ দেখল, হৈমবতীদেবী। হৈমবতীদেবী তখন ফোনে বলছেন, “তোমার প্রণাম আমি সাদরে গ্রহণ করলুম মা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তোমার হাতের শাঁখা সিঁদুর অক্ষয় হোক। তুমি যেন তোমার স্বামী সংসার নিয়ে চিরসুখে থাকো”।
ও’পাশ থেকে রচনা একটু থতমত খেয়ে বলল, “ক-কে ক-কে বলছেন? আ-আপনি কি পরিদার পিসি”?
হৈমবতীদেবী শান্ত স্নিগ্ধ স্বরে জবাব দিলেন, “শুধু তোর পরিদার পিসি কেন বলছিস রে মা? আমি যে তোরও পিসি। তোর বাবা বিধুও যে আমার একটা ভাই রে। আমার ছেলেরা, ছেলের বৌয়েরা সবাই তোর বাবাকে বিধুমামু বলে ডাকে। আমি ছোটবেলায় তোর বাবাকে ভাইফোঁটা দিতুম। তাহলে আমি তোর পিসি হলুম না”?
রচনা এবার একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ, আজ সন্ধ্যের সময়ই বাবার মুখে সে’কথা শুনলুম যে তিনি তোমায় হিমুদি বলে ডাকেন। আর তোমার ছোট ভাই বাবার প্রিয় বন্ধু ছিলেন। পরিদার সাথে কয়েক মাস আগেই আমাদের পরিচয় হয়েছে। উনি আমার দিদিভাই মানে আমার বরের বোনের বন্ধু। আমাদের খুব স্নেহ করেন। কিন্তু তার বাবার নামটা জানবার বা শোনবার মত পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়ি নি। আর দুর্গাকাকুকে কখনও চোখে না দেখলেও তার নামটা ছোটবেলায় মাঝে মধ্যে বাবার মুখে শুনেছি। কিন্তু বাবার মুখে তোমার কথা আগে কোনদিন শুনেছি বলে মনে পড়ছে না”।
হৈমবতীদেবী জবাবে বললেন, “কিকরে শুনবি রে মা। আমি অভাগী যে ছোট বয়সেই সব্বাইকে হারিয়ে ফেলেছিলুম। তোর বাবাকে প্রায় চুয়াল্লিশ বছর বাদে এই তো সেদিন মাত্র মাস খানেক বা মাস দেড়েক আগে আবার দেখতে পেলুম। সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমি এক হারিয়ে যাওয়া নিধি ফিরে পেয়েছি। তোর বাবাকে এর আগে শেষ দেখেছিলুম যখন ওর বয়স দশ এগারো বছর। আমি তখন সবে ষোল সতের বছরের এক কিশোরী। ওই বয়সেই মা-বাবার অমতে অ', এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলুম বলেই বাবা সেদিন আমাকে মৃতা বলে ঘোষণা করেছিলেন। আমাকে ত্যজ্য করে আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবেন না বলেই বাবা ভিটে বাড়ি বিক্রী করে মা আর ভাইকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই বাপের বাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক চিরতরে ঘুচে গিয়েছিল। তোর বাবা, বিধু ছিল আমার ছোট ভাই দুর্গার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। আমাকে হিমুদি বলে ডাকত। আমার পুরো নাম তো হৈমবতী। তবে আমাদের বিয়ের প্রায় বছর দুয়েক বাদে একদিন বিধুদের বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। বাড়ি ঘর সবকিছু একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তারপর শুনেছিলুম ওরা সেই জমি বিক্রী করে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিল। তারপর ও বাড়ির কাউকে আর কোনদিন দেখিনি। আর কথাতেই তো আছে যে চোখের আড়াল হলেই ধীরে ধীরে মানুষ মনের আড়ালেও চলে যায়। তোর বাবা নিজেও বুঝি আমার মা বাবা ভাইদের মতই আমাকে ভুলে গিয়েছিল। আর আমার ভাই দুর্গাই তোর এই পরিদার বাবা। এবার বুঝলি আমি তোর পিসি হলুম কিভাবে”?
হৈমবতীদেবী থামতে রচনা বলল, “হ্যাঁ পিসি, পরিদাই যে আমাদের দুর্গাকাকুর ছেলে সে’কথা আমরা আজই জানতে পারলুম। বাবা তো আজ তার বন্ধুর ছেলেকে পেয়ে খুশীতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন। আর বারবার শুধু দিদিভাইয়ের কথা বলছেন। দিদিভাইয়ের সাথে পরিচয় নাহলে পরিদার সাথে তো আমাদের পরিচয়ই হত না। আর দিদিভাই তো আমার মা বাবা দিদি ভাই, এমনকি আমার জন্যেও কত কী করেছেন গত কয়েকটা বছরে”।
হৈমবতীদেবী একটু হেসে বললেন, “তোদের কাউকেই তো আমার দেখা হয়নি। তবে তোরা যে দু’বোন একভাই, এ’কথা বিধুর মুখে শুনেছি। তোর আর অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু কিছু কথাও শুনেছি। বিধুর মুখে শুনেছি ও একটা মেয়েকে মন্তিমা বলে ডাকে। সে নাকি ওর মা অন্নপূর্ণা। তা সেই মেয়েটিই কি তোর এই দিদিভাই নাকিরে মা”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁগো পিসি, আমার ওই দিদিভাইই তো আমার মা বাবার মা অন্নপূর্ণা আর মা দুর্গা। সে আমার বরের ছ’মাসের ছোট খুড়তুতো বোন। সম্পর্কে আমার ননদ হলেও বয়সে সে তো আমার থেকে অনেক বড়। আর আমার বিয়ের এক দেড় বছর আগে থেকেই দিদিভাইয়ের সাথে আমার আর আমাদের পরিবারের সকলের পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকেই তার মিষ্টি স্বভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকে আমি দিদিভাই বলে ডাকতে শুরু করেছি। আমাদের বিয়েটাও তার জন্যেই হয়েছিল। তারপর আমাদের ভাইয়ের পড়াশোনা, বাবার চিকিৎসা, তার নতুন ব্যবসা, বড়দিকে ফিরে পাওয়া, এমনকি কালচিনির বাড়িতে নতুন ঘর বানাবার যে কাজ চলছে, এ সব কিছুই দিদিভাই করেছেন। আমরা দু’জন যে গত চার পাঁচ মাস ধরে কলকাতায় আছি, আমাদের সব খবরাখবর দিদিভাই রাখেন। রোজ দিনে দু’ থেকে তিনবার আমাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়”।
হৈমবতীদেবী খুব মন দিয়ে রচনার কথাগুলো শুনে বললেন, “হ্যাঁরে মা, বিধুর মুখে মেয়েটার খুব প্রশংসা শুনেছি আমিও। এখন তোর কথা শুনেও তাকে একটিবার চোখে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে রে। কিন্তু এর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই কি পরিতোষ বিধুর কাছে এসেছে”?
রচনা সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ গো পিসি। আগেই বললুম না? পরিতোষদা তো আমার দিদিভাইয়ের বন্ধু। আমার দিদিভাইয়ের সাথে দেখা করতেই তো পরিদা নাগরাকাটা গিয়েছিল। সেখানে নীতাদি আর আমার বড়দিও আছে এখন। তাদের সাথে কথা বলার পরই তো পরিদা কালচিনি গিয়ে বাবার সাথে দেখা করতে চাইছিলেন। আজই সকালে পরিদা আমাদের কালচিনির বাড়িতে গিয়েছিলেন। আর মা বাবার সাথে কথায় কথায় পুরনো সম্পর্কের কথা বেরিয়ে পড়তেই সেই সূতোর টানেই তো তিনি তোমার কাছে গিয়ে পৌছলেন। তাই তো বাবা আরেকবার নতুন করে দিদিভাইয়ের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন”।
হৈমবতীদেবী এবার বললেন, “ঠিক বলেছিস মা। আমি তো খানিকক্ষণ আগেও ভাবছিলুম যে বিধু আমাকে সারা জীবনের জন্য ঋণী বানিয়ে দিল। কিন্তু এখন তোর কথা শুনে বুঝতে পারছি, শুধু বিধু নয়। আরেক জনের কাছেও আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। সে তোর ওই দিদিভাই। তার সাথে দেখা করবার ইচ্ছেটা আমার আরও প্রবল হয়ে উঠল। তবে, তোর সাথে আমি আজ রাতে আরও একটু কথা বলতে চাই। তুই তাতে বিরক্ত হবি না তো মা”?
______________________________