Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 227)

অর্চনা প্যাকেটটা হাতে নিয়েই পরিতোষের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলল, “আমাদের মা বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবাইকে শিখিয়েছেন যে বড়রা কেউ কোন উপহার দিলে তাকে প্রণাম করতে হয়। আমরাও ছোটবেলা থেকেই তেমন করতে অভ্যস্ত। তাই বারণ করবেন না প্লীজ”।

পরিতোষ আবার কিছু বলে উঠবার আগেই অর্চনা নিচু হয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ফেলল। সাথে সাথে সীমন্তিনী বলল, “কী বলেছিলুম না? এবার আমি ওকে বাঁধা দিলেও ওকে মানাতে পারতুম না। কিন্তু স্যার, কেউ প্রণাম করলে তাকে যে আশীর্বাদ দিতে হয়, সেটাও কি আপনি জানেন না”?

পরিতোষ এবার বিপাকে পড়ে জানতে চাইল, “কী আশীর্বাদ দেব আমি? জীবনে ও’সব কখনও করেছি নাকি আমি”?

সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “ওর মঙ্গল কামনা করে যা কিছু একটা বললেই হল। আর কিছুই যদি ভেবে না পাও, তাহলে এটা বলেই সারতে পার যে ‘ভগবান তোমার মঙ্গল করুন’।

পরিতোষ সাথে সাথে বলে উঠল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ভগবান তোমার মঙ্গল করুন”।

পরিতোষের বলার ভঙ্গী দেখে সীমন্তিনী আর নবনীতার সাথে অর্চনাও হেসে ফেলল। সীমন্তিনী হাসতে হাসতেই বলল, “বাব্বা, আশীর্বাদ করার কি ছিড়ি। যেন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, হাঃ হাঃ হাঃ”।

পরিতোষ লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু অর্চনা শান্ত স্বরে বলল, “আশীর্বাদ তো উনি আগেই দিয়ে দিয়েছেন দিদিভাই। রচু যে আজ বিপদমুক্ত এ তো এনারই আশীর্বাদ”।

নবনীতা লক্ষ্মীকে ডেকে পরিতোষের দেওয়া উপহার তার হাতে তুলে দিতে লক্ষ্মী পরিতোষকে বলল, “ও’ঘর থেকেই শুনতে পেয়েছি ছোড়দির প্রণাম নিতে চাও নি তুমি। আমিও তাই প্রণাম করে তোমাকে বিব্রত করতে চাইনে বড়দা। তবে ভগবানের কাছেই প্রার্থনা জানাচ্ছি, তিনি যেন তোমাকে সব সময় সুখে রাখেন”।
 

পরিতোষ খুব খুশী হয়ে বলল, “আমাকে বাঁচালে তুমি লক্ষ্মীদি”।

নবনীতা তারপর সীমন্তিনীর শাড়িটা তার হাতে তুলে দিয়ে নিজের শাড়িটা দেখিয়ে বলল, “এটা আমাকে দিয়েছে দ্যাখ”।

পরিতোষ ততক্ষণে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেস্টরুম থেকে নিজের সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাই নিয়ে মূল দড়জা খুলে একেবারে বাইরে বেরিয়ে গেছে।
 

সকলের জন্যে কেনা সমস্ত পোশাকগুলো দেখে সীমন্তিনী আর অর্চনা দু’জনেই খুব প্রশংসা করল।
 

******************

পরদিন সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা নাগাদ পরিতোষ কালচিনি পৌঁছল। তার পরনে তখন সিভিল ড্রেস। ষ্টেশন চত্বর থেকে বেড়িয়েই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে একদিকে কয়েকটা অটোরিক্সা দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু কয়েক পা যেতেই পেছন থেকে কেউ একজন যেন বলে উঠল, “স্যার, একটু শুনবেন প্লীজ”।

পরিতোষ থমকে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে দেখে সতেরো আঠারো বছরের একটা কমবয়সী ছেলে তাকেই ডাকছে। ছেলেটার মুখের দিকে চেয়েই তার মনে হল, এ নিশ্চয়ই রচু আর অর্চুর ছোটভাই। রচনার মুখের সাথে বেশ সাদৃশ্য আছে ছেলেটির। নিশ্চয়ই সীমন্তিনী বা অর্চনা কেউ ফোন করে তার আসবার কথা বলে দিয়েছে। তবু পরিতোষ এমনভাবে তাকিয়ে রইল যেন সে কিছু বুঝতে পারছে না। কিংশুক ততক্ষণে তার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “স্যার, আপনিই কি পরিদা, মানে পরিতোষ সান্যাল”?

পরিতোষ এবার আর অভিনয় না করে একটু হেসে বলল, “তুমি নিশ্চয়ই রচনার ভাই, তাই না”?

কিংশুক মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যাঁ, স্যার। আমি কিংশুক”।

পরিতোষও হেসে বলল, “তাহলে তোমাদের দিদিভাই তোমাকে জানিয়েই দিয়েছেন যে আমি এই ট্রেনে আসছি, তাই না”?
 

কিংশুক হঠাতই পরিতোষের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, “না স্যার, দিদিভাই নন। আমাকে তো ছোড়দি ফোন করে এ’কথাটা বলেছে”।

পরিতোষ কিংশুকের মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, “তার মানে, রচু তোমায় ফোন করে জানিয়েছে যে আমি আসছি। আর তুমিও তোমার কলেজ যাওয়া কামাই করে আমাকে ষ্টেশন থেকে রিসিভ করতে চলে এসেছ, তাই তো”?

কিংশুক তাড়াতাড়ি জবাব দিল, “না স্যার, কলেজ কামাই আমি কখনও করিনা। আসলে আমাদের কলেজের এক প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল গতকাল পরলোকগত হয়েছেন। তাই, আজ আমাদের কলেজের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর আপনি তো এর আগে আর কখনও আসেননি। তাই ছোড়দি আমাকে আপনাকে ষ্টেশন থেকে নিয়ে যেতে বলেছে। নইলে আপনাকে তো একে তাকে জিজ্ঞেস করে আমাদের বাড়ি পৌঁছতে হত”।

পরিতোষ মুচকি হেসে বলল, “তা তোমার ছোড়দিই কি তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছেন আমাকে স্যার বলে ডাকতে”?

কিংশুক লজ্জা পেয়ে বলল, “না স্যার, ছোড়দি যে আপনাকে পরিদা বলে ডাকে সেটা জানি। আর সে আমাকে অমন কিছু শিখিয়েও দেয় নি। আসলে আপনার সাথে তো এই আমার প্রথম কথা। তাই ছোড়দির মত করে ‘পরিদা’ ডাকতে একটু সঙ্কোচই হচ্ছিল, তাই আর কি”।

পরিতোষ আবার কিংশুকের কাঁধে হাত রেখে হেসে বলল, “কোনও সঙ্কোচ করতে হবে না তোমাকে। তুমিও আমাকে ‘পরিদা’ বলেই ডাকবে। কিন্তু ভাই, তুমি আমাকে রিসিভ করতে এসে যে আমার প্ল্যান গোলমাল করে ফেললে। আসলে আমি ভেবেছিলাম, তোমাদের বাড়ি যাবার আগে আমি আরেকটা কাজ সেরে নেব”।

কিংশুক সাথে সাথে বলল, “আপনি ডক্টর সোমের সাথে দেখা করবেন তো? সে তো, দুপুরে খেয়েদেয়ে বিকেলের দিকেও যেতে পারেন”।

পরিতোষ আবারও আগের মতই হেসে বলল, “আচ্ছা, তোমার ছোড়দি তাহলে এ’কথাও জানিয়ে দিয়েছে তোমাকে? কিন্তু তুমি যেমনটা বলছ, তা হয়ত করতেই পারতাম। কিন্তু আমি চাইছিলাম তোমাদের ওখানে যাবার আগেই তার সাথে দেখাটা করে নিতাম”।

কিংশুক বলল, “বেশ তো, চলুন আমিই সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। ডাক্তারবাবুও আমাকে বেশ স্নেহ করেন। কয়েকদিন তার ওখানে যেতেও বলেছিলেন। কিন্তু বড়দি হাসপাতাল থেকে চলে আসবার পর আমি তার সাথে দেখা করবার সুযোগই করে উঠতে পারছিলুম না। এই সুযোগে একসাথে দুটো কাজই করা হয়ে যাবে, আপনাকেও নিয়ে যাওয়া হবে, আর আমিও তার সাথে দেখা করতে পারব” এই বলে এক মূহুর্ত থেমে বলল, “অবশ্য আপনার যদি আপত্তি থাকে, তাহলে আর ....”

পরিতোষ কিংশুকের কথা শেষ না হতেই বলল, “না না, আপত্তি কেন থাকবে ভাই? বেশ তবে চলো। আগে আমরা হাসপাতালেই যাই”।

কিংশুক পরিতোষের হাত ধরে রাস্তার আরও ধারে চলে যেতে যেতে বলল, “তাহলে, এক মিনিট দাঁড়ান পরিদা। আমি ডাক্তারবাবুকে ফোন করে জেনে নিই, উনি এখন কোথায় আছেন” বলে পকেট থেকে তার মোবাইল বের করে ডক্টর সোমকে ফোন করে জেনে নিল যে উনি এখন হাসপাতালেই আছেন, আর তাদের হাসপাতালেই যেতে বললেন।
 

****************

ডক্টর সোম কিংশুককে দেখেই হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ভাই? এতদিনে আমার কথা মনে পড়ল বুঝি? তা তোমার বড়দি এখন কেমন আছে? সুস্থ তো”?

কিংশুক কাছে গিয়ে ডক্টর সোমের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, “হ্যাঁ স্যার। বড়দি ভাল আছেন। আর আপনার কথা তো আমরা সব সময়ই আলোচনা করি স্যার। কিন্তু কলেজ আর টিউশানির এত চাপে পড়ে গেছি যে এদিকে আর আসাটাই হয়ে ওঠে না। আর আজ যে আসবার সুযোগ পেয়েছি সেটা এনার জন্য”।

ডক্টর সোম এবার পরিতোষকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সরি স্যার, কিছু মনে করবেন না। আসুন, বসুন প্লীজ” বলে নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন।

পরিতোষ তার সাথে হ্যান্ডশেক করে একটু হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “স্যার, আমি আপনার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। আর তাছাড়া, আপনার ছোটবোন দীপাকে আমি বৌদি বলে ডাকি। তাই আপনি অনায়াসে আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন। আমি পরিতোষ সান্যাল। কলকাতায় থাকি। কিংশুকের ছোড়দি রচনাকে আমি ছোট বোনের মত স্নেহ করি”।

ডক্টর সোম খুব অবাক হয়ে বললেন, “আরে তুমিই সেই আইপিএস পরিতোষ সান্যাল নাকি? হোয়াট এ প্লেজান্ট সারপ্রাইজ। দীপু আর আকুর মুখে তো আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি। সরি, তোমার প্রশংসা শুনেছি” বলে কিংশুককে চেয়ারে বসতে বললেন।

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “হ্যাঁ স্যার, আমিই সেই পরিতোষ। একটা বিশেষ কাজে আমি গতকাল নাগরাকাটা এসেছিলাম। নাগরাকাটা থেকে কালচিনি এত কাছে বলেই আপনার সাথে একটু দেখা করব বলে এসেছি। নইলে কলকাতা ফিরে যাবার পর দীপা বৌদি নিশ্চয়ই আমাকে খুব বকতেন”।

ডক্টর সোম জিজ্ঞেস করলেন, “তারমানে তুমি কলকাতা থেকে ভট্টাচার্যি ম্যাডামের সাথে দেখা করবার জন্যে এসেছ, বুঝতে পারছি। তবে আমার সাথে তোমার আগে পরিচয় না থাকা সত্বেও দিপুর মন রাখবার জন্যেই যে তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছ, তাতে আমি সত্যিই খুব খুশী হয়েছি”।

ডক্টর সোম কথায় কথায় সীমন্তিনী আর অর্চনার ব্যাপারে অনেক কথা বললেন পরিতোষকে। আর সব শেষে বললেন, “এ হাসপাতালে তোমাদের যে এক এক কাপ চা-ও খাওয়াব, তারও উপায় নেই। তাই বলছি, আমার কোয়ার্টার পাশেই। চলো, ওখানে গিয়ে আমার হাতের বানানো চা খাবে”।

পরিতোষ মিষ্টি করে হেসে ডক্টর সোমকে বাঁধা দিয়ে বলল, “ডক্টর, এখন আর আপনার কোয়ার্টারে যাচ্ছি না। যদি আজ কালচিনিতে থেকে যেতে হয় তাহলে বরং সন্ধ্যের পর আপনার কোয়ার্টারে এসে আপনার হাতের চা খেয়ে যাব। তবে যদি অনুমতি দেন, তাহলে ছোট্ট একটা কাজ সেরে যেতে চাইছি” বলে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা প্যাকেট টেনে বের করল।

প্যাকেটটা ডক্টর সোমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আপনার শার্ট বা প্যান্টের মাপ তো আমার জানা ছিল না স্যার। তাই দুটো পিচ কিনে এনেছিলাম। দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন না প্লীজ”।

ডক্টর সোম অবাক হয়ে বললেন, “আরে কী আশ্চর্য! এ’সবের কী দরকার ছিল”?

পরিতোষ অমায়িক হেসে বলল, “দরকারের কথা নয় স্যার। এটাকে আমার আকাঙ্ক্ষা মামনির তরফ থেকে একটা উপহার মনে করুন না। এতে আমি আর আকাঙ্ক্ষা দু’জনেই খুশী হব, প্লীজ”।

ডক্টর সোম এবার কোন কথা না বলে হাত বাড়িয়ে পরিতোষের হাত থেকে প্যাকেটটা নিতে নিতে বললেন, “এ’কথা বলে তো আমাকে বেঁধে ফেললে পরিতোষ। কিন্তু আর কিছুক্ষণ কি একেবারেই বসতে পারবে না? আমাকে দশটা মিনিট সময় দাও। আমি একবার চট করে রাউন্ডটা সেরে আসি। তারপর তোমাদের নিয়ে কোয়ার্টারে যেতুম”।

পরিতোষ নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “এখন কাজের সময় আপনাকে কাজ ফেলে আমাদের সাথে সময় কাটাতে হবে না স্যার। আমার আরেকটা কাজ আছে, তাই আমাকেও এখনই উঠতে হচ্ছে। আর আপনাকে তো আগেই কথা দিলাম, যদি আজ কোন কারণে এখানে থেকে যেতে হয় তাহলে সন্ধ্যের পর আপনার সাথে নিশ্চয়ই দেখা করব। এখন উঠছি স্যার”।

ডক্টর সোম পরিতোষের সাথে আবার হ্যান্ডশেক করে বললেন, “কথাটা কিন্তু মনে রেখ ভাই প্লীজ। আমি আশা রাখছি সন্ধ্যের পর তোমার সাথে আবার দেখা হবে”।

******************

হাসপাতাল থেকে বেড়িয়েই পরিতোষ কিংশুককে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের গেটের একটু দুরেই অটো স্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে গেল। আর মিনিট পনের বাদেই বিধুবাবুর বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। বিধুবাবু তখন তার দোকানেই ছিলেন। কিংশুকের সাথে একজনকে অটো থেকে নামতে দেখেই তিনি দোকানের পেছনের দড়জা দিয়ে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন। পরিতোষ অটোর ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে পেছন ফিরতেই কিংশুক তার বাবাকে দেখিয়ে পরিতোষকে বলল, “দাদা, ইনি আমাদের বাবা। আর বাবা, ইনিই হচ্ছেন আমাদের পরিদা”।

পরিতোষ বেশ কয়েক মূহুর্ত বিধুবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবার পর তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই বিধুবাবু তাকে আশীর্বাদ করে বললেন, “বেঁচে থাকো বাবা, সুখে থাকো। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। যাও, ভেতরে যাও। আমি একটু বাদেই আসছি”।

পরিতোষ কিংশুকের হাত ধরে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই একটা ঘরের বারান্দায় প্রতিমাসদ্দৃশ এক মহিলাকে দেখেই চিনতে পারল যে ইনিই রচনার মা। কিংশুক মাকে দেখে কিছু একটা বলতে যাবার আগেই পরিতোষ বিভাদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। কিংশুক ততক্ষণে বিভাদেবীকে পরিতোষের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছে। বিভাদেবী পরিতোষকে আশীর্বাদ করে কিংশুককে বলল, “খোকা, তোর ঘরের ভেতর থেকে চেয়ারটা আগে বের করে ওকে বসতে দে”।

কিংশুক ছুটে পাশের ঘরটায় ঢুকে গেল, আর খানিক বাদেই একটা চেয়ার বারান্দায় এনে পরিতোষকে বলল, “পরিদা, বসুন”।

বিভাদেবী ছেলের মুখের সম্বোধন শুনেই বললেন, “একি খোকা? তুই কি দিনে দিনে তোর বোধবুদ্ধি সহবত সব হারাতে শুরু করেছিস নাকি? তুই ওকে নাম ধরে ডাকছিস যে বড়”?

কিংশুক হেসে বলল, “মা, বোধ বুদ্ধি সহবত, কিছুই আমি হারাইনি। আসলে উনিই আমাকে বলেছেন যে ছোড়দি তাকে পরিদা বলে ডাকে, তাই আমিও যেন তা-ই বলি”।

পরিতোষের কানে যেন তাদের মা ছেলের কোন কথা ঢুকছিলই না। সে অপলক চোখে বিভাদেবীর দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছিল, কোনও মায়ের এমন মনভোলানো রূপ সে আর আগে দেখেনি। সিনেমা থিয়েটারে বেশ কয়েকবার নানা অভিনেত্রীকে দেবীর বেশে দেখেছে সে। তার জীবনে এর আগে পর্যন্ত সে কেবল দু’জন মাকেই দেখেছে। নবনীতার মা, আর বিট্টুর মা। নবনীতার মাকে সে শুধু দু’দিনই দেখেছে। আর বিট্টুর মা যাকে সে মাসিমা বলে ডাকে, তাকেই কেবল মাঝে মধ্যে দেখে থাকে। কিন্তু তাদের কারো ভেতরে এমন মাতৃরূপের অপূর্ব ছটা তার চোখে পড়েনি। তার জন্মদাত্রী মাকে তো সে জ্ঞান হবার আগেই হারিয়েছিল। তার বাবার ঘরের দেয়ালে এখনও তিনটে ছবি বাঁধানো আছে। একটাতে তার বাবা মায়ের বিয়ের ছবি আছে। তাতে ঠাকুমা আর দাদুও আছেন। আর একটা ছবিতে তার বাবার ছোট বয়সের একটা ছবিতে তার বাবার পাশে আরেকজন অচেনা লোকের ছবি আছে। আর তৃতীয় ছবিটা তার ঠাকুর্দার। তাই তার মায়ের যে ছবিটা সে ছোটবেলা থেকে এতদিন ধরে দেখে আসছে, তাতে তার মাকে সে কেবল বিয়ের পোশাকেই দেখেছে। পরিতোষের নিজের ধারণা, বিয়ের পোশাকে মেয়েদের আসল রূপটা সঠিক বোঝা যায় না। তবে তার মা-ও যে খুব সুন্দরী ছিলেন এ’কথা তার অজানা নয়। বাবার দু’চারজন বন্ধুর মুখে তার মায়ের কিছুকিছু কথা সে শুনেছে। কিন্তু তবু, ঘরোয়া পোশাকে তার মাকে যে কেমন লাগতো দেখতে, তা কোনদিন সে কল্পনাও করতে পারেনি। আজ এই মূহুর্তে বিভাদেবীকে দেখে তার মনে হচ্ছে স্বর্গের কোন দেবীই বুঝি সাধাসিধে নিরাভরণা মাতৃরূপ ধরে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

পরিতোষ একই ভাবে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে কিংশুক তার একটা হাত ধরে বলল, “পরিদা, বসুন”।

পরিতোষ সন্বিত ফিরে পেয়ে কিছুটা লজ্জিতভাবে চেয়ারে বসে নিজের গলাটা একটু পরিস্কার করে বলল, “মা-কাকিমা, আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনি বোধহয় একটু বিব্রতই হয়েছেন আমার ব্যবহারে। আমি তারজন্য সত্যি খুব দুঃখিত। কিন্তু কাকিমা ....”

বিভাদেবী পরিতোষকে হাত তুলে তার কথায় বাধা দিয়ে বললেন, “ও’সব কথা থাক বাবা। আমি আগে তোমার জন্যে একটু চা করে আনছি” বলে কিংশুককে বললেন, “খোকা তুই ওকে আমাদের কলপাড়টা দেখিয়ে দে। হাত মুখ ধুয়ে এখানে এসে বসুক। আমি চায়ের জলটা চাপাচ্ছি”।

পরিতোষ তার কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে তাড়াতাড়ি বলল, “কাকিমা, এক মিনিট” বলে ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বড়সড় মিষ্টির প্যাকেট বের করে বিভাদেবীর হাতে দিয়ে বলল, “এটা রাখুন। আপনাদের সকলের জন্য একটু মিষ্টি এনেছি”।
 

পরিতোষ ব্যাগ বন্ধ করতেই কিংশুক সেটা ধরে বলল, “পরিদা, আপনি ঘরে আসুন আগে”।

পরিতোষ কিংশুকের সাথে একটা ঘরে ঢুকে গেল। আর বিভাদেবী রান্নাঘরে গিয়ে চা বানাবার আয়োজন করতে করতে ভাবতে লাগলেন, দিব্যি দেখতে ছেলেটা। ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যায় ও কত’টা সৎ আর কত বুদ্ধিমান। এমন একটা ছেলে যদি তার বিধবা মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজী হয়, তাহলে এর বেশী কিছু আর তাদের চাওয়ার নেই। কিন্তু রচনা তো সকালেই ফোন করে জানিয়েছে যে মন্তি এখনও এর সাথে অর্চুর বিয়ে দেবার ব্যাপারে কিছু বলেনি। তাই বারবার করে বলেছে যে তারাও যেন অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে তাকে একটা কথাও না বলে। পরে যেভাবে যা করার তা নাকি মন্তিই করবে। মন্তির ওপর তাদের সকলেরই পুরো আস্থা আছে। কিন্তু ছেলেটা তো আগের দিনই মন্তির ওখানে গিয়েছিল। তবু মন্তি তাকে কিছু বলেনি, এটা ভেবেই বিভাদেবী যেন কিছুটা অসামঞ্জস্যে আছেন।

_____________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 29-03-2020, 12:07 AM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)