Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 226)

ঘরের ভেতরের তিন মহিলা প্রায় দম বন্ধ করে পরিতোষের কাহিনী শুনে যাচ্ছিল। বিস্ময়ে তারা যেন কথা বলতেও ভুলে গেছে। একটু থেমে পরিতোষ আবার বলল, “এ কাজে সব মিলিয়ে আমাকে আটত্রিশজনকে কাজে লাগাতে হয়েছিল। আর রতু আর রচুর ওপর নজর রাখবার জন্য শুরু থেকেই ছ’জনকে লাগিয়ে রেখেছিলাম। রচুর ওপর বিমলের নজর পড়েছে শুনে আরও তিনজনকে ওদের ওপর নজর রাখবার কাজে লাগিয়েছিলাম। ওদের সকলকে দিনে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার করে পেমেন্ট করতে হবে। নিজের কাছ থেকেই অল্প অল্প করে ওদের সবাইকে আমি পেমেন্ট করে এসেছি এতদিন। কিন্তু অনেকটাই দেওয়া বাকি আছে এখনও। তবে এখন মনে হয় আর ওদের পেছনে সিকিউরিটি রাখবার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু এদের সব ক’জনকে মিলিয়ে প্রায় দশ এগারো লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। এই টাকাটা কী করে যোগাবো সেটা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাতেই ছিলাম আমি। কিন্তু বিমলের ওপর অপারেশন করতে হবে জেনেই আমি এই খরচাটাও বিমলের কাছে থেকেই আদায় করব ভেবে নিয়েছিলাম। তাই হিসেব করে দেখলাম সিকিউরিটির সবাইকে, আর এই অপারেশনের আটত্রিশ জনকে তাদের পাওনা সমস্ত কিছু মিটিয়ে দিতে প্রায় চুয়াল্লিশ লাখ টাকার দরকার। বিমল যে একটা টাকার কুমীর সে তো আমার জানাই ছিল। তাই জানতাম, ওকে যদি তেমনভাবে জালে ফেলতে পারি তাহলে নিজেকে আমার ফাঁদ থেকে বাঁচিয়ে নিতে সে পাঁচ বা দশ কোটি টাকাও আমাকে দিতে রাজী হয়ে যাবে। তাই এমনভাবে প্ল্যানটা সাজিয়েছিলাম যে বিমলের কাছ থেকে অনায়াসেই পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আদায় করে নেওয়া যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে কালচিনি বাড়ি তৈরীর ব্যাপারটা সামনে এসে গেল। মনে মনে ভাবলাম রচুর ওপর নজর দিয়েছে বলেই যখন বিমলের কাছ থেকে টাকা তুলছি তাহলে রচুর বাবার বাড়ি তৈরীর খরচটাও তো এর ভেতর থেকেই তুলে আনা যায়। এটাও বিমলের অপরাধের ক্ষতিপূরণ হিসেবেই ধরা যায়। মন্তির মুখে বাড়ি তৈরীর রাফ এস্টিমেট জেনে নিয়ে চল্লিশ লক্ষ টাকা আমার প্ল্যানে যোগ করে দিলাম। তাতে আমার প্রজেক্ট কস্ট গিয়ে দাঁড়ালো চুরাশি লক্ষে। এরপর আবার গত মাস তিনেক ধরেই একটা পার্মানেন্ট গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে রতুদের ওপর নজর রেখে এদিক ওদিক যাবার জন্য। একটা অটোও রেগুলার বেসিসে ভাড়া নেওয়া আছে। এ ছাড়াও বিমলকে ফাঁদে ফেলতে গিয়েও এই আটত্রিশ জন লোক ছাড়াও সাত আটটা গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। একটা এ্যাম্বুলেন্সও ভাড়া করতে হয়েছিল। এই গাড়ি ঘোড়া বা যাতায়াত খরচা বাবদ আরও দু’ লক্ষ টাকার দরকার। সেটাও আমার বাজেটে ঢুকিয়ে নিতে টোটাল প্রজেক্ট কস্ট গিয়ে দাঁড়াল ছিয়াশি লক্ষে। আবার শেষ মূহুর্তে দেখলাম ওই চল্লিশ লক্ষ টাকাটা এখানে পৌঁছে দিতে একজনকে পাঠাতে হবে। আব্দুলকেই পছন্দ করলাম সে কাজটার জন্যে। কিন্তু আমাকেও এখানে আসতে হল। আমার আসা যাওয়ার ফ্লাইট ফেয়ার আর আব্দুলের আসা যাওয়ার খরচ মিলিয়ে আরও কুড়ি পঁচিশ হাজার টাকার দরকার। সেটাও ঢুকিয়ে নিলাম বাজেটে। তাই আমার শেষ চাহিদা গিয়ে দাঁড়াল প্রায় সাড়ে ছিয়াশি লক্ষে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাড়ে ছিয়াশি লক্ষ তো আর ডিমান্ড করা যায় না। করতে হবে পঞ্চাশ লক্ষ বা এক কোটি। পঞ্চাশ নিলে আমার বাজেটে অনেকটা ঘাটতি থেকে যাবে, আবার এক কোটি নিলেও প্রায় সাড়ে তেরো লক্ষ টাকা হাতে বেশী এসে যাচ্ছে। তবু নিরুপায় হয়ে এক কোটি টাকা ডিমান্ড করব বলেই সিদ্ধান্ত নিলাম। বিমলের যে বিভিন্ন নারীসঙ্গের দোষ আছে এটা তো জানাই ছিল। পরে অ্যাকশন শুরু করতেই দেখলাম ওর ছেলে আর স্ত্রীও একই রকম ব্যাভিচারে লিপ্ত। তাই ওদের তিনজনের কূকীর্তির অনেকগুলো ভিডিও রেকর্ডিং করালাম। তবে শুরুতে প্ল্যানটা যেভাবে বানিয়েছিলাম তাতে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিন সময়ের প্রয়োজন পড়ত। কিন্তু মাঝে হঠাৎ করে সেন্ট্রালের গোয়েন্দারা ঢুকে পড়াতে সে প্ল্যানটা বাতিল করতে বাধ্য হলাম। সেন্টারের বেশ কয়েকটা এজেন্সীর সাথে একদিন মিটিঙে বসে জানতে পারলাম তারা দশ তারিখেই বিমলের বাড়ি, অফিস আর ফার্ম হাউসে রেইড করবার প্ল্যান করছে। বিমল একবার তাদের খপ্পরে পড়ে গেলে আমার প্ল্যান ভেস্তে যাবে। কিন্তু তখনও আমার প্রিপারেটরি কাজগুলো কমপ্লিট হয়নি। তাই তাদেরকে অনেকভাবে অনুরোধ করে তাদের ডেটটা সাতদিন পিছিয়ে দিলাম। আমাকেও তড়িঘড়ি সতেরো তারিখের ভেতরেই সবকিছু করে ফেলবার সিদ্ধান্ত নিতে হল। আর সে’জন্যেই দশ তারিখের পর থেকে আমি অতিরিক্ত ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তোমাকেও আমি সে জন্যেই কয়েকদিন আমাকে ফোন করতে বারণ করেছিলাম। তবে যাদের আমি এ’সব কাজে লাগিয়েছিলাম তারাও অবিশ্বাস্য কম সময়েই তাদের প্রথমদিকের কাজগুলো শেষ করে ফেলেছিল। আর এর মূলে ছিল দুটো মেয়ে। একজন বিমলের অফিসেরই কর্মচারী। সেও বিমলের ফাঁদে আটকা পড়ে ছিল অনেকদিন থেকে। আর অন্যজন এক বয়স্কা কলগার্ল। মূলতঃ এই দু’জনের জন্যেই আমি কাজটা এত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পেরেছি। তা, সেন্ট্রাল এজেন্সীগুলো সতেরো তারিখেই বিমলের ওপর অ্যাটাক করবার প্ল্যান করছিল বলে আমিও সতেরো তারিখেই আমার ফাইনাল অ্যাকশন করব বলে ঠিক করলাম। সেই মতই বারো তারিখ থেকেই আমার লোকেরা বিমলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিল। রোজ ওর, ওর বৌয়ের আর ছেলের দুষ্কর্মের তিনটে চারটে সিডি পাঠিয়ে, আর সেই সাথে ইন্টারনেটে ওইসব ভিডিও আপলোড করে দেবার হুমকি দিতে শুরু করলাম। আলাদা আলাদা সময়ে তাকে এসএমএস আর আনট্রেসেবল মোবাইল থেকে ফোন করা হত। বিমল যদিও প্রথম দিন থেকেই এ’সবের পেছনে যে আছে, তাকে ধরবার জন্য তার পোষা গুণ্ডা আর নিজস্ব সাইবার এক্সপার্টদের কাজে লাগিয়েছিল, আর পরের দিন থেকেই বিমলের কথায় সরকারী কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের লোকেরাও আমার লোকদের পেছনে লেগেছিল, তারা কেউই আমার একটা লোকের টিকিটির হদিশও পায়নি। দু’তিন দিনের ভেতরেই বিমল বুঝে গিয়েছিল যে সে আমার একটা লোককেও ধরতে পারবে না। তখন থেকেই সে ভেতরে ভেতরে ভাঙতে শুরু করেছিল। একসময় পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে ওর ব্লাড প্রেসার আর সুগার লেভেল প্রচণ্ড রকম বেড়ে গিয়েছিল। শেষের দিন তো নিজের অফিসে অজ্ঞান হয়েই পড়েছিল। তখন সে আমাকে দশ কোটি টাকাও দিতে রাজী হয়েছিল। ষোল তারিখ আমি তমলুক চলে গেলাম অফিসের অন্য একটা কাজ নিয়ে। সেটাও আমার প্ল্যানের ভেতরেই ছিল। সেখান থেকেই আমি ফোনে ফোনে সবকিছু মনিটর করে যাচ্ছিলাম। তাই সতের তারিখে অনেকবার তোমার ফোন কল পেয়েও আমি রিসিভ করিনি। কারন তখন আমি অন্য ফোন গুলোর মাধ্যমে কলকাতার বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলাম। সেন্ট্রালের দু’একজনের সাথেও কয়েকবার কথা হয়েছে আমার। সতেরো তারিখ সকালেই বিমলের সাথে আমার লোকদের ডিল হল। বিমল দুপুরেই এক কোটি টাকা আমার লোকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল ওর ছেলের হাত দিয়ে। কিন্তু ওই বদমাশ ছেলেটা আবার একটু বেশী চালাকি করে আমার লোকদের ধরবার জন্য একটা ছোটখাট ফাঁদ পেতেছিল। কিন্তু আমার লোকেরা ওই কাজে জড়িত বিমলের ছেলের সাথে তার সাতজন বন্ধুকেও কিডন্যাপ করে নিয়েছিল। আর টাকা তো আমাদের হাতে এসেই গিয়েছিল। বিমলের ছেলে আর তার বন্ধু সাতটা ছেলেকে পরের দিন সকালে এক একজনের বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমার প্ল্যান মোতাবিকই বিমল সেদিন সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে বারুইপুর থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার পশ্চিমে একটা জায়গায় আমার লোকদের সাথে দেখা করেছিল গিয়ে। আর প্ল্যান মোতাবিকই ভিডিও সিডিগুলো তার হাতে তুলে দেবার আগে বিমলকে দিয়ে নিজে হাতে তার সমস্ত দুষ্কর্মের কথাগুলো একটা কাগজে লিখিয়ে তারা সই করিয়ে নিয়েছিল। যেটা গতকাল আব্দুল হাওড়া থেকে ট্রেন ধরবার আগে সেন্ট্রালের টিমগুলো যে লীড করেছিল, তার হাতে দিয়ে এসেছে। সেটা কোর্টে বিমলের জবানবন্দী হিসেবে পেশ করা হবে। বিমল সিডিগুলো নিয়ে যখন কলকাতার দিকে ফিরছিল, তখন আমার লোকেরাই পুলিশকে খবর দিয়ে জানিয়েছিল যে বিমলের গাড়িতে বম্ব রাখা আছে। বিমলের গাড়ির ডিকিতে সে বম্বটাও আমার লোকেরাই রেখেছিল, যখন বিমল আমার লোকদের কাছ থেকে সিডি নিচ্ছিল। আমার প্ল্যানমতই পুলিশের লোকেরাই বম্ব ব্লাস্টের হাত থেকে বিমলকে বাঁচায়। তারপর সেখান থেকে বিমলকে যে অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতায় আনা হয় সেটাও আমার লোকেরাই আগে থেকে ওখানে রেখে দিয়েছিল। যাতে বিমলকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরাও আমার প্ল্যান মোতাবিকই বিমলের অপারেশন করেছিল। আর তোমরা তো বুঝতেই পারছ, সেটাই আমার আল্টিমেট গোল ছিল। আর ..... এই তো। আর কিছু বলার নেই আমার। দ্যাটস অল” বলে থামল।

পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে ঘরের বাকি তিনজনের যেন দম বন্ধ আসছিল উত্তেজনায়। তারা সকলেই বিস্ফারিত চোখে পরিতোষের দিকে তাকিয়ে ছিল। পরিতোষ থামতেই সবার আগে সীমন্তিনী দম ছেড়ে বলল, “ও মাই গড। এ যে একেবারে অবিশ্বাস্য ব্যাপার”!

নবনীতাও বলল, “হ্যাঁ গো দিদি, এ কী সত্যি ঘটণা? আমার তো মনে হচ্ছিল পরি বোধহয় কোনও একটা সিনেমার গল্প শোনাচ্ছে আমাদের”!

অর্চনা কৃতজ্ঞ চোখে পরিতোষের দিকে দেখতে দেখতে সীমন্তিনীকে বলল, “আজ আমার বুকের ওপর থেকে একটা বড় পাথর যেন সরে গেল গো দিদিভাই। এ’ কটা দিন কী দুশ্চিন্তাই না করেছি রচুকে নিয়ে। আমার বোনটাকে বাঁচাবার জন্য উনি যা কিছু করেছেন, তার বিনিময়ে ওনাকে হাজারটা ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। বাবা মা রচু রতুদা কেউই তো রচুর ওপর এমন বিপদের কথা জানতেও পারেনি। তাই তারা কেউ জানতেও পারবে না যে উনি আমাদের কত বড় একটা উপকার করলেন। তাই আমাদের পরিবারের সকলের হয়েই আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি, ভগবান যেন ওনাকে সবদিক দিয়ে সুখী করেন”।

পরিতোষ এবার বলল, “তবে মন্তি, আমি কিভাবে কি করি, তা কাউকে জানতে দিইনা কখনও। আর এ অপারেশনটা এমন ভাবে করেছি যে এতে মোট ন’টা টিম ছিল। কিন্তু এক টিমের লোকেরা অন্য টিমের কাজ সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারেনি। প্রয়োজনের থেকে বেশী লোক জানাজানি হলেই নিজের ফেঁসে যাবার সম্ভাবনাটা বেড়ে যায়। সাধারণ লোকেরা এ’সব শুনে কথায় কথায় অন্যদেরকে জানিয়ে দিতে পারে। এই প্রথম আমি আমার কোনও অপারেশন নিয়ে এত ডিটেইলে কারো সাথে আলোচনা করলাম। তোমার ওপর তো আমি সবদিক দিয়েই অন্ধ। তুমি আমাকে গুলি করে মারতে চাইলে আমি নিজেই তোমার হাতে বন্দুক তুলে দেব। তবে নীতা আর অর্চনা, তোমাদের দু’জনের কাছেই আমি হাতজোড় করে বলছি, এ’সব কথা তোমরা ভুল করেও অন্য কাউকে জানিওনা প্লীজ। তাহলে আমি কিন্তু ভীষণ বিপদে পড়ে যাব”।
 

অর্চনা সাথে সাথেই বলল, “যাকে নিয়ে এতসব কাণ্ড করলেন, সেই রচুকেও জানতে দেবেন না”?

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “সে সিদ্ধান্ত মন্তিই নিক। আমি সে ব্যাপারে কিছু বলব না”।

নবনীতা বেশ ভারী গলায় বলল, “আমার কাছে তুমি অনেক কিছু চেয়েছিলে পরি, কিন্তু আমি তোমাকে কিচ্ছুটি দিতে পারিনি। তবে দিতে না পারলেও তোমার কাছ থেকে নতুন করে আর কিছু আমি কেড়ে নেব না। তোমার সুনাম তোমার সম্মান ক্ষুণ্ণ হোক এমন কিছু আমি সারা জীবনেও করব না। আশা করি, এতটুকু বিশ্বাস তুমি আমাকে নিশ্চয়ই করবে”।

পরিতোষ এবার স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, “আচ্ছা তোমরা সবাই শোনো। আরও কিছু কথা তোমাদের সাথে আলোচনা করবার আছে। কিন্তু এতক্ষণ ধরে বকবক করতে করতে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। অর্চনা না জানলেও তোমরা দু’জন তো জানো যে আমি মাঝে মধ্যে দু’একটা সিগারেট খাই। এখন একটা সিগারেট খেতে খুব ইচ্ছে করছে আমার। কিন্তু বলছিলাম যে তার আগে একটু চা পেলে ভাল হত। তোমরা কেউ খাবে”?

সবাই ‘হ্যাঁ’ বলতেই পরিতোষ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে ভেতরে লক্ষ্মীকে দেখতে পেয়ে বলল, “ও লক্ষ্মীদি, আমরা সবাই যে একটু চা খেতে চাইছি গো। এখন বানানো সম্ভব হবে? না রান্না করছ”?
 

লক্ষ্মী সাথে সাথে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বড়দা, এখনই বানিয়ে দিচ্ছি”।

পরিতোষ গেস্টরুমে গিয়ে নিজের ব্যাগের ভেতর হাতরে দেখল একটা সিগারেটের প্যাকেটে এখনও তিন চারটে সিগারেট আছে। তাতে আশ্বস্ত হয়ে সে আবার সীমন্তিনীর রুমে ফিরে এল। নিজের জায়গায় বসতে বসতে বলল, “আচ্ছা মন্তি, সবাইকে তাদের প্রাপ্য সব টাকা বুঝিয়ে দিয়েও আমার হাতে যে প্রায় তেরো চৌদ্দ লক্ষ টাকা থেকে যাবে, সেটা নিয়ে কী করা যায় বলো তো? আর শুধু তুমি একাই নও, নীতা আর অর্চনাও কিন্তু এ ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিতে পারে”।

কিন্তু কেউই কোন উত্তর না দেওয়াতে সীমন্তিনী বলল, “মনে হয় আমাদের কেউই সেটা ঠিক করতে পারছি না এখনই। তাই আপাততঃ ওই বাড়তি টাকাটা তুমি কোথাও রেখে দিতে পারবে না? পরে আমরা নাহয় অন্য কোন ভাল কাজে লাগিয়ে দেব”।

পরিতোষ একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে, সে না হয় আমি আমার বিশ্বস্ত কারো কাছে সেটা রেখে দিতে পারব অল্প কিছু দিনের জন্য। কিন্তু খুব বেশী দিন তো সেভাবে টাকাটা ফেলে রাখা যাবে না। তেরো লক্ষ টাকা তো আর যে সে কথা নয়। আর মানুষের মনও বড় বিচিত্র একটা জিনিস। আজ যেটা একজনের কাছে ভাল। কালই সেটা তার কাছে খারাপ মনে হতে পারে। তাই মানুষের মন বদলাতে খুব বেশী সময়ের দরকার হয় না। আর এতগুলো টাকার লোভে অনেকেই নিজেদের নৈতিকতা হারিয়ে বসতে পারে। কালই তমলুকে একটা খবরের কাগজে দেখেছিলাম শুধু এক টাকার জন্যে একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলেছে। তবে সে যাই হোক। কিছুদিন পরেই নাহয় এ ব্যাপারে একটা পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেব আমরা। তবে এবার দ্বিতীয় কথাটা বলি। দু’টো বিশেষ কাজে আমার একটু কালচিনি যাবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর কবে এদিকে আসা হবে তা তো জানি না। হয়তো আদৌ আর আসা হবে না। তাই অর্চনা আর রচুর বাবার সাথে একটু দেখা করে যেতে চাই। নইলে রচু আমার ওপর রেগে যেতে পারে। আসলে রচুই বিকেলে ফোনে আমাকে এ অনুরোধটা করেছে। আর পরে ভাবলাম যে কালচিনি যদি চলেই যাই, তাহলে দীপাবৌদির দাদা ওই ডক্টর সোমের সাথেও একটু দেখা করে যাব। আকাঙ্ক্ষা মামনি আর দীপাবৌদি শুনে খুব খুশী হবেন। তা তোমাদের এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই তো”?

অর্চনা প্রায় সাথে সাথে বলল, “ওমা রচু যে তখন আপনাকে যেতেই বলল সে তো আমিও শুনেছি। আমরা আর বারণ করব কেন তাতে”?

সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “তা চাইছ যখন যেতেই পার তুমি। কিন্তু আমিও একবার কালচিনি যাব যাব ভাবছিলুম। আসলে অধিকারীরা বাড়ির প্ল্যানটা কিভাবে করল, সেটা একটু দেখে আসব বলে ভেবেছিলুম। তাই আমি একদিন মিঃ অধিকারীর সাথেই যাব বলে ভেবেছিলুম। কিন্তু তুমি তো কালই যেতে চাইছ। আর আমিও কাল পরশু দু’দিন কয়েকটা অফিসিয়াল ব্যাপারে খুব ব্যস্ত থাকব। দুটো দিন এখানে থাকো না পরি। বাইশ তারিখে না হয় মিঃ অধিকারীকে নিয়ে আমরা সবাই মিলে যাব। অবশ্য বাইশে না গিয়ে তেইশ তারিখে গেলে আরও ভাল হয়। রবিবারে নীতার ছুটি থাকে। ও-ও আমাদের সঙ্গে যেতে পারত তাহলে। ও-ও তো মাসি মেসোকে দেখেনি এখনও।”

নবনীতাও প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “হ্যাঁ পরি, আজ তো ঊণিশ তারিখ পেরিয়েই গেল। আর চারটে দিন থেকে যাও না। তাহলে আমিও যেতে পারব”।

পরিতোষ মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “না, সরি নীতা, সেটা সম্ভব হবে না। আমি তো শুধু তিনদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। আর ওদিকেও কয়েকটা জরুরী কাজ ফেলে এসেছি। তাই ছুটি বাড়িয়ে থেকে যাওয়াও তো সম্ভব নয় আমার পক্ষে”।

সীমন্তিনী কিছু বলতে যাবার আগেই লক্ষ্মী সকলের জন্য চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। সকলকে চা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পর সীমন্তিনী বলল, “তাহলে পরি, তুমি যদি কালই কালচিনি যেতেই চাও, তাহলে তো তোমাকে একাই যেতে হবে, সরি। কিন্তু তুমি কি সত্যিই শুধু তাদের সাথে দেখা করতেই যেতে চাও? না অন্য কোনও ব্যাপার আছে এর ভেতরে”?

পরিতোষ কিছু বলবার আগে নবনীতাই বলে উঠল, “ও দিদি, সে’কথা তো তোমাদের বলাই হয়নি গো। পরি আজ বিকেলে আমাদের শোরুমে গিয়ে কালচিনির সকলের জন্যে, আমাদের সকলের জন্যে আর রতুদা বৌদির জন্যে আর ওই ডক্টর সোমের জন্যেও এত্ত এত্ত জামা কাপড় কিনে এনেছে। আর কলকাতার আরও একটা মেয়ে..কি যেন নাম...ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষার জন্যেও কিনেছে। এবার বুঝতে পারছ কালচিনি যাবার কারন”?

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “সেকি পরি? সত্যি বলছে নীতা”?

পরিতোষ চা খেতে খেতেই একটু হেসে বলল, “হ্যাঁ মন্তি, নীতা ঠিকই বলেছে। আসলে নিজের আপনজন বলতে তো কেউ নেই আমার। তাই কাউকে উপহার দেবার পালাও কখনও আসেনি আমার জীবনে। রচু তখন বলাতেই এ সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। আর কখনও এদিকে আসা হবে কিনা তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর সামনের মাসেই পূজো। তাই ভাবলাম এই সুযোগেই এখানকার পরিচিতদের কিছু পূজোর উপহার দিয়েই যাই। কিন্তু নিজের পোশাক ছাড়া অন্য কারো জন্যে পোশাক পছন্দ করাও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তুমিও অফিসে ছিলে। তাই ভাবলাম নীতাদের দোকানে গেলে ওর পছন্দমতোই জিনিসগুলো নেওয়া যাবে। সেই ভেবেই নিয়ে নিলাম আর কি” বলে নীতাকে বলল, “প্রসঙ্গটা যখন উঠেই গেল, তবে সব কিছু আমার রুমে আছে, সেখান থেকে এনে সবাইকে দেখাও। কারো কিছু পছন্দ না হলে সে দায় কিন্তু আমার নয়, এ আমি আগেই বলে দিচ্ছি”।
 

নবনীতা সাথে সাথে দৌড়ে গেস্টরুমে চলে গেল। আর একটু বাদেই সবগুলো ক্যারিব্যাগ সাথে নিয়ে আবার সীমন্তিনীর রুমে এসে হাজির হল। পরিতোষ তাকে ফিরে আসতে দেখেই বলল, “কার জন্যে কোনটা কিনেছ সেটাও আমি বুঝব না। নীতা, তুমিই যার যারটা তার হাতে তুলে দাও প্লীজ”।

নবনীতা ক্যারিব্যাগ থেকে জিনিসগুলো বের করতে শুরু করতেই সীমন্তিনী বলল, “আগেরবার প্রণাম পাবার হাত থেকে তোমাকে বাঁচাতে পেরেছিলুম পরি। এবারে কিন্তু আর সেটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে”।

পরিতোষ সীমন্তিনীর কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বলল, “তার মানে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “রচুরা সকলেই কারো কাছ থেকে কোনও উপহার পেলে তাকে প্রণাম না করে সে উপহার তারা নেয় না। তাই এবার অর্চুর প্রণামের হাত থেকে বাঁচতে হলে ওকেই তোমায় বোঝাতে হবে। আমার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয় আর এবার। আমি আগে থেকেই সারেন্ডার করছি”।

নবনীতা প্রথম যে প্যাকেটটা বের করল সেটাই অর্চনার জন্যে নেওয়া চুড়িদারের সেট। নবনীতা সেটা অর্চনার হাতে তুলে দিতেই অর্চনা বিছানার ওদিক থেকে ঘুরে এসে পরিতোষের সামনে দাঁড়াতেই পরিতোষ হা হা করে পেছনে সরে দাঁড়িয়ে বলল, “এই না না, একদম না। একদম প্রণাম করবে না কিন্তু অর্চনা”।


(To be cont'd ......)
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 29-03-2020, 12:04 AM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)