28-03-2020, 11:48 PM
(Update No. 223)
অর্চনা আর পরিতোষ দু’জনেই মুখ টিপে হাসল। রচনা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে বলল, “ও মা, পরিদা আপনি? আপনি ওখানে কবে গিয়েছেন? আজ সকালেও তো দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। তখনও তো দিদিভাই আমাকে বলেননি যে আপনি ওখানে গিয়েছেন? ওহ তার মানে, আগের কলটাও কোন ভুল নাম্বারে যায়নি। আপনিই আমার সাথে অমন দুষ্টুমি করেছেন, তাই না”?
পরিতোষ হেসে বলল, “ঠিক ধরেছ সোনা বোন আমার। তুমি ফোন করেছ দেখেই এভাবে তোমাকে ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ দেবার লোভটা সামলাতে পারলাম না। কিন্তু তাই বলে তুমি আমার ওপর রেগে যেওনা প্লীজ”।
রচনাও এবার হেসে বলল,“না রাগ করছি না। কিন্তু পরিদা, আপনি কখন ওখানে গিয়ে পৌঁছেছেন”?
পরিতোষ বলল, “সকালে মন্তি যখন অফিসে যাবার জন্যে বেরোচ্ছিল, আমি তখনই এসেছি। মন্তি তাই একটু দেরী করে অফিসে গেছে। ও আর নীতা একই সময়ে যার যার কাজে চলে যাবার পর তোমার দিদির সাথে বসে গল্প করছিলাম। আর তোমার ফোন এল”।
রচনা খুশীর গলায় বলল, “খুব ভাল করেছেন পরিদা। তা ক’দিন থাকবেন ওখানে”?
পরিতোষ জবাব দিল, “সেটা এখনই ঠিক বলতে পারছি না। মন্তি ওরা অফিস থেকে ফিরে এলে রাতে ওর সাথে কথা বলার পরই সেটা বলা যাবে। তবে কাল বা পরশুর মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে। আসলে এদিকে কয়েকটা ছোটখাটো কাজ আছে। আর তাছাড়া অফিসেও আমার অনেক ছুটি পাওনা ছিল। তাই তিন চারদিনের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। তা রতু কোথায়? ও বাড়ি ফিরে এসেছে”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দাদা, এই একটু আগেই এসেছেন। এখন স্নান করছেন। কিন্তু পরিদা আমার একটা অনুরোধ আছে, রাখবেন প্লীজ”।
পরিতোষ সাথে সাথে বলল, “অবশ্যই রাখব। আমাকে কলকাতা ফিরতে দাও। কলকাতা ফিরেই আমি তোমার সাথে কথা বলব”।
রচনা সাথে সাথে বলল, “না পরিদা, কলকাতায় ফিরে নয়। আসলে কাজটা ওখানেই করতে হবে”।
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে বলল, “এখানেই? আচ্ছা বেশ, বলো শুনি, কী কাজ”।
রচনা বলল, “আপনি যে কখনও ওদিকে যেতে পারেন, এটা তো ভাবিই নি। তবে যে কাজেই গিয়ে থাকুন না কেন, যদি কালচিনি গিয়ে আমার মা বাবার সাথে একটু দেখা করে আসতেন, তবে খুব খুশী হতুম। আর দিদিভাইয়ের ওখান থেকে কালচিনি খুব একটা দুরও নয়। ট্রেনে সওয়া ঘন্টা বা বড় জোর দেড় ঘন্টার মতই লাগে। বলুন না পরিদা, যাবেন তো”?
পরিতোষ একটু ভাবতে ভাবতে জবাব দিল, “তোমার কথাটা ভেবে দেখছি। এখনই কথা দিতে পারছি না বোন। আসলে মন্তির সাথে কথা না বলা পর্যন্ত কোন কিছুই ডিসাইড করা যাবে না। তবে তোমার কথা আমার ঠিক মনে থাকবে। মন্তির সাথে কথা বলে দেখি। আচ্ছা এই নাও, তোমার দিদির সাথে কথা বলো এখন” বলে ফোনটা অর্চনার দিকে এগিয়ে দিল।
আর ঠিক তখনই লক্ষ্মী রান্নাঘর থেকে বলল, “সোনাদি, আমার রান্না সারা হয়ে গেছে গো”।
সে’কথা শুনেই অর্চনা ফোনে বলল, “রচু, আমি তোর সাথে একটু পরে কথা বলছি” বলে ফোন কেটে দিয়ে পরিতোষকে বলল, “আপনি বসুন। আমি আপনার খাবার এনে দিচ্ছি”।
পরিতোষ বলল, “সেকি? আমি একা একা খাবো নাকি? তুমিও বসো আমার সাথে”।
অর্চনা বলল, “এখন সেটা সম্ভব হবে না পরিতোষবাবু। আমার এখনও স্নান হয়নি। স্নান করে ঠাকুর পুজো করে তবেই আমি খাই। আমরা বরং রাতেই সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাব। এখন আমার সঙ্গে খেতে গেলে আপনাকে আরও এক ঘন্টার মত বসে থাকতে হবে। আর আপনি তো ঘুমোবেন বলছিলেন। তাই এখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন”।
পরিতোষ আর কথা না বাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা বেশ, তবে তাই হোক”।
পরিতোষের খাওয়া হয়ে যাবার পর সে গেস্টরুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। অর্চনা স্নান সেরে ঠাকুর পূজো সেরে লক্ষ্মীর সাথে একসাথে বসে খেয়ে নিল। তারপর নিজেদের ঘরে এসে প্রায় দেড়টা নাগাদ রচনাকে ফোন করতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁরে দিদি, পরিদা হঠাৎ ওভাবে গিয়ে হাজির হল কেন রে? কিছু শুনেছিস এ ব্যাপারে”?
অর্চনা বলল, “নীতাদি আর দিদিভাইও আগে থেকে কিছু জানতেন না। আর তারা অফিসে যাবার আগে খুব বেশী আলোচনাও হয়নি। যতদুর শুনলুম, আমাদের কালচিনির বাড়ি তৈরী করবার জন্য উনি নাকি চল্লিশ লক্ষ টাকা এনেছেন”।
রচনা এ’কথা শুনে চরম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলছিস তুই দিদি? পরিদা চল্লিশ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছেন? তাও আমাদের বাড়ি তৈরীর জন্য? এটা কী করে সম্ভব? পরিদা কেন আমাদের বাড়ি তৈরীর টাকা দেবেন”?
অর্চনা বলল, “ব্যাপারটা আমার মাথাতেও ঢোকেনি রে রচু। তবে পরিতোষবাবু তো নিজে মুখেই কথাটা বললেন। দিদিভাইয়ের সাথে পরে কথা বলার সুযোগ পেলে হয়ত জানতে পারব”।
রচনা এবার জিজ্ঞেস করল, “তা পরিদাকে দেখে কেমন লাগল রে? আমার তো তাকে ভীষণ ভাল লাগে। আর তিনিও আমাকে বোন বলে ডেকেছেন”।
অর্চনা একটু সাবধানে জবাব দিল, “আমি তো তোর মুখে, নীতাদি আর দিদিভাইয়ের মুখে এতদিন তার অনেক কথা শুনেছি। যে ভদ্রলোক তোকে বোনের মত ভালবাসেন, দিদিভাইকে এত ভালবাসেন তাকে আমার ভাল লাগবে না কেন? আমার অবশ্য প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল দিদিভাইরা চলে যাবার পর। কিন্তু তার সাথে কথায় কথায় যখন তোর আর দিদিভাইয়ের কথা উঠল, তখনই সে অস্বস্তি ভাবটা কেটে গেছে। আর তুই যখন ফোন করলি তখন তো বেশ মজাই লাগছিল”।
দুই বোন আরও নানা বিষয়ে টুকটাক কথা বলে তাদের ফোন বার্তালাপ শেষ করল।
*****************
প্রায় ঘন্টা তিনেক টানা ঘুমিয়ে ওঠবার পর পরির শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। সে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে বুঝেই লক্ষ্মী গেস্টরুমের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল পরিতোষ চা খাবে কি না। পরিতোষ ‘হ্যাঁ’ বলে নিজের শার্ট প্যান্ট পড়তে লাগল। শার্ট প্যান্ট পড়ে গেস্টরুম থেকে বেরোতেই লক্ষ্মী পরিতোষের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিল। পরিতোষ চা খেতে খেতে লক্ষ্মীর কাছ থেকে জেনে নিল সীমন্তিনী ক’টা নাগাদ অফিস থেকে ফেরে, বাজারের রাস্তা কোনদিকে।
পরিতোষের চা খাওয়া শেষ হতেই অর্চনা তার ঘর থেকে বেরিয়ে পরিতোষকে শার্ট প্যান্ট পড়া দেখে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি কোথাও বেরোচ্ছেন নাকি”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ, ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে এখন বেশ ভাল লাগছে। তাই ভাবলাম একটু বেরিয়ে গিয়ে জায়গাটা একটু ঘুরে দেখে আসি এদিক ওদিক। নীতা বা মন্তির তো ফিরে আসতে এখনও দেরী আছে। আর এমনও হতে পারে যে আমি হয়ত কালই চলে যাব। তাই এখনই একটু ঘুরে আসি”।
পরিতোষ কোয়ার্টার থেকে বেরোবার সময় গার্ডদের কাছ থেকে বাজার, হসপিটাল আর থানার লোকেশান জেনে নিল। বেরিয়ে কিছুদুর হেঁটে যাবার পরেই সীমন্তিনীর ফোন পেল। সীমন্তিনী জানাল সে ছ’টা নাগাদ অফিস থেকে বেরোবে। আর সে বাড়ি ফেরবার সময় সুরজিত অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। পরিতোষও তাকে জানাল যে সে একটু বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে, তবে সেও ছ’টার দিকেই ফিরে আসবার চেষ্টা করবে। কথা শেষ করে পরিতোষ একটা অটোয় চড়ে প্রথমে থানার দিকে গেল। বাজার পেরিয়ে আরো কিছুদুর যাবার পর থানা চোখে পড়ল। কিন্তু ইচ্ছে করেই থানার ভেতরে ঢুকে সীমন্তিনীর সাথে দেখা করল না। তারপর সেখান থেকে ঘুরে মেইন মার্কেটের দিকে গেল। অটোওয়ালাকে বসাক গারমেন্টসের কথা বলতেই সে নবনীতাদের শোরুমের সামনে পৌঁছে গেল বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ। শোরুমের ভেতরে ঢুকে সবগুলো কাউন্টারের দিকে চেয়ে দেখতে দেখতেই নবনীতাকে দেখতে পেল। নবনীতার কাউন্টারের সামনে বেশ ভিড়। তবে নবনীতা একবার এদিকে চাইতেই পরিতোষের সাথে তার চোখাচোখি হল। পরিতোষ ভিড়ের পাশ কাটিয়ে কাউন্টারের কাছাকাছি আসতেই নবনীতা তার সামনের কাস্টমারটাকে তার পছন্দের জিনিস দেখাতে দেখাতেই পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার? হঠাৎ এখানে এসে পড়লে যে”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “শুনেছি তোমাদের এখানে নাকি জ্যাকেটের খুব ভাল কালেকশন আছে। তাই ভাবলাম একবার দেখি। পছন্দসই কিছু পাওয়া যায় কি না”।
নবনীতা মুচকি হেসে বলল, “আচ্ছা, একটু দাঁড়াও। আমি এনাকে আগে ছেড়ে দিচ্ছি” বলে সামনের কাস্টমারটার দিকে ঈঙ্গিত করল। মিনিট দশেক বাদে সে কাস্টমার পোশাক পছন্দ করে বিদেয় নিতেই নবনীতা তার পরের কাস্টমারকে পাশের খালি কাউন্টারে পাঠিয়ে দিয়ে পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যিই জ্যাকেট নেবে তো”?
পরিতোষ হেসে বলল, “অবশ্যই। তবে সেটা তোমাকেই পছন্দ করে দিতে হবে কিন্তু। আর জ্যাকেট ছাড়াও আরও বেশ কিছু এটা সেটা কিনব। তবে প্রথমে জ্যাকেট দেখাও”।
নিজের জন্যে নবনীতার পছন্দ করা একটা জ্যাকেট নেবার পর পরিতোষ বলল, “এবার তুমি নিজের পছন্দ মতই আমার দুই পছন্দের পাত্রী আর অর্চনা এবং রচুর জন্যেও কিছু পছন্দ করে দাও। লক্ষ্মীদির জন্যেও একটা শাড়ি পছন্দ কর আর রতুর জন্যেও একটা পাজামা পাঞ্জাবীর সেট পছন্দ করে দাও”।
নবনীতা অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না। নিজেই পছন্দ করে দিল সব। সীমন্তিনী আর রচনার জন্যে দুটো শাড়ি, তার নিজের এবং অর্চনার জন্যে দুটো চুড়িদারের সেট, আর লক্ষ্মীদির জন্যেও একটা শাড়ি আর রতীশের জন্য খুব সুন্দর একটা শেরোয়ানীর সেটা পছন্দ করল। পরিতোষ একবার ঘড়িতে সময় দেখে নিল। প্রায় সাড়ে পাঁচটা। সে নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি রচুর মা বাবা ভাইকে দেখেছ”?
নবনীতা বলল, “দু’দিন আগে আলিপুরদুয়ারে কোর্টে যখন গিয়েছিলাম তখন ভাইকে দেখেছি। কিন্তু মাসি মেসোকে এখনও দেখিনি”।
পরিতোষ বলল, “তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ভাইয়ের জন্যে ভাল শার্ট প্যান্ট দাও। আর মাসিমা তো নিশ্চয়ই শাড়িই পড়বেন। তার জন্যে একটা শাড়ি, মেসোমশাইয়ের জন্য ধুতি আর পাঞ্জাবী দাও। কিন্তু মুস্কিল হল তো ওই ডক্টর শিব শঙ্কর সোমের ব্যাপারে। তুমি নিশ্চয়ই তাকে দেখনি। আর আমিও তাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি”।
নবনীতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এত সকলের জন্য এত কিছু কেন কিনছ তুমি”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “উপহার দেবার মত আপন বলতে তো আর আমার কেউ নেই বনি, ওঃ সরি নীতা। পাতানো সম্পর্কের দু’একজনকে ক্বচিৎ কখনও এটা সেটা দিই। আর রচু তো আমার বোন। আর ও বায়না ধরেছে কালচিনি গিয়ে ওর মা বাবার সাথে দেখা করে যেতে হবে আমাকে। তাই ভাবছি ওর মা বাবা ভাইয়ের জন্য কিছু একটা না নিয়ে গেলে কি ভাল দেখায় বলো। আবার কবে এদিকে আসব, বা আদৌ আর আসা সম্ভব হবে কিনা কে জানে। তাই মনে হল, এ সুযোগেই এ কাজটা করে যাই। আর ডক্টর সোমের বোন আমার দীপা বৌদি। উনিও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। আর উনিও যখন কালচিনিতেই থাকেন, তার সাথেও একটু দেখা করে যাব। তাই ডক্টর সোমের জন্যে কিছু একটা নিতে চাইছি। কিন্তু তার শার্ট বা প্যান্টের সাইজ তো জানা নেই। তার জন্যে বরং ভাল প্যান্ট আর শার্টের পিচ দিয়ে দাও। ওহ, ইশশ একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম। দীপাবৌদির মেয়ে আকাঙ্ক্ষা। আচ্ছা তুমি অন্য সকলের গুলো পছন্দ করো। আমি একটা ফোন করে জেনে নিচ্ছি” বলে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ডক্টর বড়ুয়ার বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে ফোন করে দীপা আর আকাঙ্ক্ষার সাথে কথা বলে আকাঙ্ক্ষার হাইট আর কোমড়ের মাপ জেনে নিল।
ফোন বন্ধ করে নবনীতাকে বলল, “ওর হাইট পাঁচ চার। কোমর আটাশ ইঞ্চি। ওর জন্যে খুব ভাল কোয়ালিটির টপ আর জীন্স দিও। আর তাড়াতাড়ি করো প্লীজ। ছ’টার ভেতরেই আমাকে ঘরে ফিরে যেতে হবে কিন্তু”।
নিজের কার্ড থেকে পেমেন্ট করে দিয়ে সে নবনীতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বড় বড় তিনটে ক্যারিব্যাগ নিয়ে শোরুম থেকে বেরলো। বাইরে বেড়িয়েই অটো ধরে সে সোজা সীমন্তিনীর কোয়ার্টারে এসে পৌঁছল যখন, তখন তার মোবাইলের ঘড়িতে দেখল সময় ছ’টা পাঁচ।
গেটের কনস্টেবলদের গ্রুপ থেকে একজন ছুটে এসে পরিতোষের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে কোয়ার্টারের দিকে এগিয়ে গেল। পরিতোষও অটোর ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে তার পেছন পেছন সিঁড়ি বেয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কলিং বেল টিপতেই অর্চনা দড়জা খুলে দিয়েই পরিতোষকে দেখে বলল, “ওহ আপনি? আমি ভেবেছিলুম দিদিভাই এসেছেন বোধহয়। আসুন আসুন। কিন্তু এতগুলো ব্যাগে আপনি এতসব কী নিয়ে এলেন”?
পরিতোষ একটা ব্যাগ অর্চনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “সব জানতে পারবে, আপাততঃ একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে আমাকে একটু সাহায্য করো প্লীজ” বলে বাকি দুটো ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে গেস্টরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল, “মন্তি ফেরেনি এখনও নাকি? ও তো বলেছিল ছ’টা নাগাদ চলে আসবে”।
গেস্টরুমে ঢুকে ক্যারিব্যাগটা একপাশে রাখতে রাখতে অর্চনা বলল, “দিদিভাই একটু আগেই ফোন করেছিলেন। বললেন যে উনি কাকে যেন সঙ্গে করে আনবেন বলে তার ওখানে গেছেন। হয়তো এখনই এসে পড়বেন” বলে একটু থেমে বলল, “আপনি চা খাবেন তো এখন”?
পরিতোষ বলল, “না, মন্তি ফিরুক। তারপর একসাথে চা খাব” বলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। অর্চনা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
*****************
বাথরুম থেকে বেরিয়ে পরিতোষ নিজের মোবাইল থেকে আরও কয়েকটা ফোন কল সেরে নিল। মিনিট দশেক বাদেই সীমন্তিনী এল। সীমন্তিনী সুরজিত অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা গেস্টরুমে চলে এল। এসে পরিতোষের সাথে সুরজিত অধিকারীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের কথা বলতে বলে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল।
পরিতোষ সুরজিতকে বলল, “আসলে মিঃ অধিকারী, কালচিনির বাড়ি তৈরীর ব্যাপারেই আপনার সাথে কিছু জরুরী আলোচনা করবার জন্যে আমিই আপনাকে এখানে ডেকেছিলাম”।
সুরজিত বললেন, “হ্যাঁ স্যার, সেটা তো আমি বুঝতেই পারছি। বলুন কি বলবেন”।
পরিতোষ বলল, “বাড়ি তৈরীর কাজটা তো পুরোপুরিভাবে আপনারাই সামলাবেন, তাই তো”?
সুরজিত বলল, “হ্যাঁ স্যার, ম্যাডামের সাথে আমাদের এমনই কথা হয়েছে। আর আমাদের পক্ষেও অসুবিধের কিছু নেই”।
পরিতোষ জানতে চাইল, “কিভাবে প্ল্যানটা করেছেন আর টোটাল বাজেট কত পড়ছে”?
সুরজিত বললেন, “স্যার, সব কিছু মিলিয়ে মোট ঊনিশশ’ স্কয়ার ফুটের কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। তবে দু’শ সত্তর স্কয়ার ফিটের একটা অংশ যেখানে টয়লেট ইউরিনাল আর বাথরুমগুলোর প্রভিশন করে রাখা হয়েছে, সে অংশটায় দু’তলা ফাউন্ডেশন হচ্ছে না। ওই পার্টটা মাসিমা মেসোমশাইদের পছন্দ অনুযায়ী মেন বিল্ডিং থেকে ডিটাচড রাখছি। বাকি ষোলশ’ তিরিশ স্কয়ার ফিটের মধ্যে দু’তলা ফাউন্ডেশন করে তিনটে বেডরুম, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন, কলঘর, স্টোর রুম, ভোগ ঘর আর ঠাকুর ঘরের প্রভিশন রাখা হয়েছে, সাথে চব্বিশ ফুট বাই পাঁচ ফুটের একটা বারান্দাও হচ্ছে। আর সবটুকু মিলে টোটাল বাজেট হচ্ছে প্রায় ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজার। তবে স্যার, এর ভেতর আরেকটা ব্যাপার আছে, সেটা এখনও ম্যাডামকে বলা হয়নি। ম্যাডাম এলে সেটা খুলে বলছি”।
পরিতোষ তার কথা শুনে বলল, “পেমেন্টটা কিভাবে করতে হবে? চেকে না ব্যাঙ্ক ট্র্যান্সফার করে”?
সুরজিত বললেন, “জেনারালি আমরা চেকই প্রেফার করি। তবে ম্যাডাম যদি ক্যাশেই পেমেন্ট করতে চান, তাহলেও আমরা সেটা অ্যাকসেপ্ট করব”।
পরিতোষ তখন বলল, “আপনি তো বুঝতেই পাচ্ছেন, ম্যাডাম একজন সরকারী কর্মচারী। তার একাউন্টে এমন হেভি এমাউন্টের লেনদেন হলে সেটা ইনকাম ট্যাক্সের নজরে সন্দেহ জনক বলে বিবেচিত হবে। আর কালচিনির বাড়ির .......” বলেই দড়জা দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেখে থেমে গেল।
লক্ষ্মী আর অর্চনা দুটো ট্রেতে করে জল খাবারের থালা সাজিয়ে এনেছে। পেছনে পেছনে সীমন্তিনীও ঘরে ঢুকল। টেবিলে খাবারের থালা গুলো সাজিয়ে রেখে লক্ষ্মী আর অর্চনা বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী সুরজিতকে আর পরিতোষকে খেতে বলল।
পরিতোষ নিজের প্লেটটা হাতে নিয়ে সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার প্লেট কোথায়? তুমি খাবে না”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “তোমরা খাও। আমি অর্চু আর লক্ষীদির সাথে খাব। মিঃ অধিকারীকে খুব বেশী সময় আটকে রাখা যাবে না। তাই তার সাথে কথাটুকু আগে সেরে নিই। তারপর আমি খাব”।
______________________________
SS_SEXY
অর্চনা আর পরিতোষ দু’জনেই মুখ টিপে হাসল। রচনা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে বলল, “ও মা, পরিদা আপনি? আপনি ওখানে কবে গিয়েছেন? আজ সকালেও তো দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। তখনও তো দিদিভাই আমাকে বলেননি যে আপনি ওখানে গিয়েছেন? ওহ তার মানে, আগের কলটাও কোন ভুল নাম্বারে যায়নি। আপনিই আমার সাথে অমন দুষ্টুমি করেছেন, তাই না”?
পরিতোষ হেসে বলল, “ঠিক ধরেছ সোনা বোন আমার। তুমি ফোন করেছ দেখেই এভাবে তোমাকে ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ দেবার লোভটা সামলাতে পারলাম না। কিন্তু তাই বলে তুমি আমার ওপর রেগে যেওনা প্লীজ”।
রচনাও এবার হেসে বলল,“না রাগ করছি না। কিন্তু পরিদা, আপনি কখন ওখানে গিয়ে পৌঁছেছেন”?
পরিতোষ বলল, “সকালে মন্তি যখন অফিসে যাবার জন্যে বেরোচ্ছিল, আমি তখনই এসেছি। মন্তি তাই একটু দেরী করে অফিসে গেছে। ও আর নীতা একই সময়ে যার যার কাজে চলে যাবার পর তোমার দিদির সাথে বসে গল্প করছিলাম। আর তোমার ফোন এল”।
রচনা খুশীর গলায় বলল, “খুব ভাল করেছেন পরিদা। তা ক’দিন থাকবেন ওখানে”?
পরিতোষ জবাব দিল, “সেটা এখনই ঠিক বলতে পারছি না। মন্তি ওরা অফিস থেকে ফিরে এলে রাতে ওর সাথে কথা বলার পরই সেটা বলা যাবে। তবে কাল বা পরশুর মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে। আসলে এদিকে কয়েকটা ছোটখাটো কাজ আছে। আর তাছাড়া অফিসেও আমার অনেক ছুটি পাওনা ছিল। তাই তিন চারদিনের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। তা রতু কোথায়? ও বাড়ি ফিরে এসেছে”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দাদা, এই একটু আগেই এসেছেন। এখন স্নান করছেন। কিন্তু পরিদা আমার একটা অনুরোধ আছে, রাখবেন প্লীজ”।
পরিতোষ সাথে সাথে বলল, “অবশ্যই রাখব। আমাকে কলকাতা ফিরতে দাও। কলকাতা ফিরেই আমি তোমার সাথে কথা বলব”।
রচনা সাথে সাথে বলল, “না পরিদা, কলকাতায় ফিরে নয়। আসলে কাজটা ওখানেই করতে হবে”।
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে বলল, “এখানেই? আচ্ছা বেশ, বলো শুনি, কী কাজ”।
রচনা বলল, “আপনি যে কখনও ওদিকে যেতে পারেন, এটা তো ভাবিই নি। তবে যে কাজেই গিয়ে থাকুন না কেন, যদি কালচিনি গিয়ে আমার মা বাবার সাথে একটু দেখা করে আসতেন, তবে খুব খুশী হতুম। আর দিদিভাইয়ের ওখান থেকে কালচিনি খুব একটা দুরও নয়। ট্রেনে সওয়া ঘন্টা বা বড় জোর দেড় ঘন্টার মতই লাগে। বলুন না পরিদা, যাবেন তো”?
পরিতোষ একটু ভাবতে ভাবতে জবাব দিল, “তোমার কথাটা ভেবে দেখছি। এখনই কথা দিতে পারছি না বোন। আসলে মন্তির সাথে কথা না বলা পর্যন্ত কোন কিছুই ডিসাইড করা যাবে না। তবে তোমার কথা আমার ঠিক মনে থাকবে। মন্তির সাথে কথা বলে দেখি। আচ্ছা এই নাও, তোমার দিদির সাথে কথা বলো এখন” বলে ফোনটা অর্চনার দিকে এগিয়ে দিল।
আর ঠিক তখনই লক্ষ্মী রান্নাঘর থেকে বলল, “সোনাদি, আমার রান্না সারা হয়ে গেছে গো”।
সে’কথা শুনেই অর্চনা ফোনে বলল, “রচু, আমি তোর সাথে একটু পরে কথা বলছি” বলে ফোন কেটে দিয়ে পরিতোষকে বলল, “আপনি বসুন। আমি আপনার খাবার এনে দিচ্ছি”।
পরিতোষ বলল, “সেকি? আমি একা একা খাবো নাকি? তুমিও বসো আমার সাথে”।
অর্চনা বলল, “এখন সেটা সম্ভব হবে না পরিতোষবাবু। আমার এখনও স্নান হয়নি। স্নান করে ঠাকুর পুজো করে তবেই আমি খাই। আমরা বরং রাতেই সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাব। এখন আমার সঙ্গে খেতে গেলে আপনাকে আরও এক ঘন্টার মত বসে থাকতে হবে। আর আপনি তো ঘুমোবেন বলছিলেন। তাই এখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন”।
পরিতোষ আর কথা না বাড়িয়ে বলল, “আচ্ছা বেশ, তবে তাই হোক”।
পরিতোষের খাওয়া হয়ে যাবার পর সে গেস্টরুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। অর্চনা স্নান সেরে ঠাকুর পূজো সেরে লক্ষ্মীর সাথে একসাথে বসে খেয়ে নিল। তারপর নিজেদের ঘরে এসে প্রায় দেড়টা নাগাদ রচনাকে ফোন করতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁরে দিদি, পরিদা হঠাৎ ওভাবে গিয়ে হাজির হল কেন রে? কিছু শুনেছিস এ ব্যাপারে”?
অর্চনা বলল, “নীতাদি আর দিদিভাইও আগে থেকে কিছু জানতেন না। আর তারা অফিসে যাবার আগে খুব বেশী আলোচনাও হয়নি। যতদুর শুনলুম, আমাদের কালচিনির বাড়ি তৈরী করবার জন্য উনি নাকি চল্লিশ লক্ষ টাকা এনেছেন”।
রচনা এ’কথা শুনে চরম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলছিস তুই দিদি? পরিদা চল্লিশ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছেন? তাও আমাদের বাড়ি তৈরীর জন্য? এটা কী করে সম্ভব? পরিদা কেন আমাদের বাড়ি তৈরীর টাকা দেবেন”?
অর্চনা বলল, “ব্যাপারটা আমার মাথাতেও ঢোকেনি রে রচু। তবে পরিতোষবাবু তো নিজে মুখেই কথাটা বললেন। দিদিভাইয়ের সাথে পরে কথা বলার সুযোগ পেলে হয়ত জানতে পারব”।
রচনা এবার জিজ্ঞেস করল, “তা পরিদাকে দেখে কেমন লাগল রে? আমার তো তাকে ভীষণ ভাল লাগে। আর তিনিও আমাকে বোন বলে ডেকেছেন”।
অর্চনা একটু সাবধানে জবাব দিল, “আমি তো তোর মুখে, নীতাদি আর দিদিভাইয়ের মুখে এতদিন তার অনেক কথা শুনেছি। যে ভদ্রলোক তোকে বোনের মত ভালবাসেন, দিদিভাইকে এত ভালবাসেন তাকে আমার ভাল লাগবে না কেন? আমার অবশ্য প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল দিদিভাইরা চলে যাবার পর। কিন্তু তার সাথে কথায় কথায় যখন তোর আর দিদিভাইয়ের কথা উঠল, তখনই সে অস্বস্তি ভাবটা কেটে গেছে। আর তুই যখন ফোন করলি তখন তো বেশ মজাই লাগছিল”।
দুই বোন আরও নানা বিষয়ে টুকটাক কথা বলে তাদের ফোন বার্তালাপ শেষ করল।
*****************
প্রায় ঘন্টা তিনেক টানা ঘুমিয়ে ওঠবার পর পরির শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। সে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে বুঝেই লক্ষ্মী গেস্টরুমের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল পরিতোষ চা খাবে কি না। পরিতোষ ‘হ্যাঁ’ বলে নিজের শার্ট প্যান্ট পড়তে লাগল। শার্ট প্যান্ট পড়ে গেস্টরুম থেকে বেরোতেই লক্ষ্মী পরিতোষের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিল। পরিতোষ চা খেতে খেতে লক্ষ্মীর কাছ থেকে জেনে নিল সীমন্তিনী ক’টা নাগাদ অফিস থেকে ফেরে, বাজারের রাস্তা কোনদিকে।
পরিতোষের চা খাওয়া শেষ হতেই অর্চনা তার ঘর থেকে বেরিয়ে পরিতোষকে শার্ট প্যান্ট পড়া দেখে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি কোথাও বেরোচ্ছেন নাকি”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ, ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে এখন বেশ ভাল লাগছে। তাই ভাবলাম একটু বেরিয়ে গিয়ে জায়গাটা একটু ঘুরে দেখে আসি এদিক ওদিক। নীতা বা মন্তির তো ফিরে আসতে এখনও দেরী আছে। আর এমনও হতে পারে যে আমি হয়ত কালই চলে যাব। তাই এখনই একটু ঘুরে আসি”।
পরিতোষ কোয়ার্টার থেকে বেরোবার সময় গার্ডদের কাছ থেকে বাজার, হসপিটাল আর থানার লোকেশান জেনে নিল। বেরিয়ে কিছুদুর হেঁটে যাবার পরেই সীমন্তিনীর ফোন পেল। সীমন্তিনী জানাল সে ছ’টা নাগাদ অফিস থেকে বেরোবে। আর সে বাড়ি ফেরবার সময় সুরজিত অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। পরিতোষও তাকে জানাল যে সে একটু বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে, তবে সেও ছ’টার দিকেই ফিরে আসবার চেষ্টা করবে। কথা শেষ করে পরিতোষ একটা অটোয় চড়ে প্রথমে থানার দিকে গেল। বাজার পেরিয়ে আরো কিছুদুর যাবার পর থানা চোখে পড়ল। কিন্তু ইচ্ছে করেই থানার ভেতরে ঢুকে সীমন্তিনীর সাথে দেখা করল না। তারপর সেখান থেকে ঘুরে মেইন মার্কেটের দিকে গেল। অটোওয়ালাকে বসাক গারমেন্টসের কথা বলতেই সে নবনীতাদের শোরুমের সামনে পৌঁছে গেল বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ। শোরুমের ভেতরে ঢুকে সবগুলো কাউন্টারের দিকে চেয়ে দেখতে দেখতেই নবনীতাকে দেখতে পেল। নবনীতার কাউন্টারের সামনে বেশ ভিড়। তবে নবনীতা একবার এদিকে চাইতেই পরিতোষের সাথে তার চোখাচোখি হল। পরিতোষ ভিড়ের পাশ কাটিয়ে কাউন্টারের কাছাকাছি আসতেই নবনীতা তার সামনের কাস্টমারটাকে তার পছন্দের জিনিস দেখাতে দেখাতেই পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার? হঠাৎ এখানে এসে পড়লে যে”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “শুনেছি তোমাদের এখানে নাকি জ্যাকেটের খুব ভাল কালেকশন আছে। তাই ভাবলাম একবার দেখি। পছন্দসই কিছু পাওয়া যায় কি না”।
নবনীতা মুচকি হেসে বলল, “আচ্ছা, একটু দাঁড়াও। আমি এনাকে আগে ছেড়ে দিচ্ছি” বলে সামনের কাস্টমারটার দিকে ঈঙ্গিত করল। মিনিট দশেক বাদে সে কাস্টমার পোশাক পছন্দ করে বিদেয় নিতেই নবনীতা তার পরের কাস্টমারকে পাশের খালি কাউন্টারে পাঠিয়ে দিয়ে পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যিই জ্যাকেট নেবে তো”?
পরিতোষ হেসে বলল, “অবশ্যই। তবে সেটা তোমাকেই পছন্দ করে দিতে হবে কিন্তু। আর জ্যাকেট ছাড়াও আরও বেশ কিছু এটা সেটা কিনব। তবে প্রথমে জ্যাকেট দেখাও”।
নিজের জন্যে নবনীতার পছন্দ করা একটা জ্যাকেট নেবার পর পরিতোষ বলল, “এবার তুমি নিজের পছন্দ মতই আমার দুই পছন্দের পাত্রী আর অর্চনা এবং রচুর জন্যেও কিছু পছন্দ করে দাও। লক্ষ্মীদির জন্যেও একটা শাড়ি পছন্দ কর আর রতুর জন্যেও একটা পাজামা পাঞ্জাবীর সেট পছন্দ করে দাও”।
নবনীতা অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না। নিজেই পছন্দ করে দিল সব। সীমন্তিনী আর রচনার জন্যে দুটো শাড়ি, তার নিজের এবং অর্চনার জন্যে দুটো চুড়িদারের সেট, আর লক্ষ্মীদির জন্যেও একটা শাড়ি আর রতীশের জন্য খুব সুন্দর একটা শেরোয়ানীর সেটা পছন্দ করল। পরিতোষ একবার ঘড়িতে সময় দেখে নিল। প্রায় সাড়ে পাঁচটা। সে নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি রচুর মা বাবা ভাইকে দেখেছ”?
নবনীতা বলল, “দু’দিন আগে আলিপুরদুয়ারে কোর্টে যখন গিয়েছিলাম তখন ভাইকে দেখেছি। কিন্তু মাসি মেসোকে এখনও দেখিনি”।
পরিতোষ বলল, “তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ভাইয়ের জন্যে ভাল শার্ট প্যান্ট দাও। আর মাসিমা তো নিশ্চয়ই শাড়িই পড়বেন। তার জন্যে একটা শাড়ি, মেসোমশাইয়ের জন্য ধুতি আর পাঞ্জাবী দাও। কিন্তু মুস্কিল হল তো ওই ডক্টর শিব শঙ্কর সোমের ব্যাপারে। তুমি নিশ্চয়ই তাকে দেখনি। আর আমিও তাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি”।
নবনীতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এত সকলের জন্য এত কিছু কেন কিনছ তুমি”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “উপহার দেবার মত আপন বলতে তো আর আমার কেউ নেই বনি, ওঃ সরি নীতা। পাতানো সম্পর্কের দু’একজনকে ক্বচিৎ কখনও এটা সেটা দিই। আর রচু তো আমার বোন। আর ও বায়না ধরেছে কালচিনি গিয়ে ওর মা বাবার সাথে দেখা করে যেতে হবে আমাকে। তাই ভাবছি ওর মা বাবা ভাইয়ের জন্য কিছু একটা না নিয়ে গেলে কি ভাল দেখায় বলো। আবার কবে এদিকে আসব, বা আদৌ আর আসা সম্ভব হবে কিনা কে জানে। তাই মনে হল, এ সুযোগেই এ কাজটা করে যাই। আর ডক্টর সোমের বোন আমার দীপা বৌদি। উনিও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। আর উনিও যখন কালচিনিতেই থাকেন, তার সাথেও একটু দেখা করে যাব। তাই ডক্টর সোমের জন্যে কিছু একটা নিতে চাইছি। কিন্তু তার শার্ট বা প্যান্টের সাইজ তো জানা নেই। তার জন্যে বরং ভাল প্যান্ট আর শার্টের পিচ দিয়ে দাও। ওহ, ইশশ একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম। দীপাবৌদির মেয়ে আকাঙ্ক্ষা। আচ্ছা তুমি অন্য সকলের গুলো পছন্দ করো। আমি একটা ফোন করে জেনে নিচ্ছি” বলে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ডক্টর বড়ুয়ার বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে ফোন করে দীপা আর আকাঙ্ক্ষার সাথে কথা বলে আকাঙ্ক্ষার হাইট আর কোমড়ের মাপ জেনে নিল।
ফোন বন্ধ করে নবনীতাকে বলল, “ওর হাইট পাঁচ চার। কোমর আটাশ ইঞ্চি। ওর জন্যে খুব ভাল কোয়ালিটির টপ আর জীন্স দিও। আর তাড়াতাড়ি করো প্লীজ। ছ’টার ভেতরেই আমাকে ঘরে ফিরে যেতে হবে কিন্তু”।
নিজের কার্ড থেকে পেমেন্ট করে দিয়ে সে নবনীতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বড় বড় তিনটে ক্যারিব্যাগ নিয়ে শোরুম থেকে বেরলো। বাইরে বেড়িয়েই অটো ধরে সে সোজা সীমন্তিনীর কোয়ার্টারে এসে পৌঁছল যখন, তখন তার মোবাইলের ঘড়িতে দেখল সময় ছ’টা পাঁচ।
গেটের কনস্টেবলদের গ্রুপ থেকে একজন ছুটে এসে পরিতোষের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে কোয়ার্টারের দিকে এগিয়ে গেল। পরিতোষও অটোর ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে তার পেছন পেছন সিঁড়ি বেয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কলিং বেল টিপতেই অর্চনা দড়জা খুলে দিয়েই পরিতোষকে দেখে বলল, “ওহ আপনি? আমি ভেবেছিলুম দিদিভাই এসেছেন বোধহয়। আসুন আসুন। কিন্তু এতগুলো ব্যাগে আপনি এতসব কী নিয়ে এলেন”?
পরিতোষ একটা ব্যাগ অর্চনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “সব জানতে পারবে, আপাততঃ একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে আমাকে একটু সাহায্য করো প্লীজ” বলে বাকি দুটো ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে গেস্টরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল, “মন্তি ফেরেনি এখনও নাকি? ও তো বলেছিল ছ’টা নাগাদ চলে আসবে”।
গেস্টরুমে ঢুকে ক্যারিব্যাগটা একপাশে রাখতে রাখতে অর্চনা বলল, “দিদিভাই একটু আগেই ফোন করেছিলেন। বললেন যে উনি কাকে যেন সঙ্গে করে আনবেন বলে তার ওখানে গেছেন। হয়তো এখনই এসে পড়বেন” বলে একটু থেমে বলল, “আপনি চা খাবেন তো এখন”?
পরিতোষ বলল, “না, মন্তি ফিরুক। তারপর একসাথে চা খাব” বলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। অর্চনা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
*****************
বাথরুম থেকে বেরিয়ে পরিতোষ নিজের মোবাইল থেকে আরও কয়েকটা ফোন কল সেরে নিল। মিনিট দশেক বাদেই সীমন্তিনী এল। সীমন্তিনী সুরজিত অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা গেস্টরুমে চলে এল। এসে পরিতোষের সাথে সুরজিত অধিকারীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের কথা বলতে বলে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল।
পরিতোষ সুরজিতকে বলল, “আসলে মিঃ অধিকারী, কালচিনির বাড়ি তৈরীর ব্যাপারেই আপনার সাথে কিছু জরুরী আলোচনা করবার জন্যে আমিই আপনাকে এখানে ডেকেছিলাম”।
সুরজিত বললেন, “হ্যাঁ স্যার, সেটা তো আমি বুঝতেই পারছি। বলুন কি বলবেন”।
পরিতোষ বলল, “বাড়ি তৈরীর কাজটা তো পুরোপুরিভাবে আপনারাই সামলাবেন, তাই তো”?
সুরজিত বলল, “হ্যাঁ স্যার, ম্যাডামের সাথে আমাদের এমনই কথা হয়েছে। আর আমাদের পক্ষেও অসুবিধের কিছু নেই”।
পরিতোষ জানতে চাইল, “কিভাবে প্ল্যানটা করেছেন আর টোটাল বাজেট কত পড়ছে”?
সুরজিত বললেন, “স্যার, সব কিছু মিলিয়ে মোট ঊনিশশ’ স্কয়ার ফুটের কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। তবে দু’শ সত্তর স্কয়ার ফিটের একটা অংশ যেখানে টয়লেট ইউরিনাল আর বাথরুমগুলোর প্রভিশন করে রাখা হয়েছে, সে অংশটায় দু’তলা ফাউন্ডেশন হচ্ছে না। ওই পার্টটা মাসিমা মেসোমশাইদের পছন্দ অনুযায়ী মেন বিল্ডিং থেকে ডিটাচড রাখছি। বাকি ষোলশ’ তিরিশ স্কয়ার ফিটের মধ্যে দু’তলা ফাউন্ডেশন করে তিনটে বেডরুম, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন, কলঘর, স্টোর রুম, ভোগ ঘর আর ঠাকুর ঘরের প্রভিশন রাখা হয়েছে, সাথে চব্বিশ ফুট বাই পাঁচ ফুটের একটা বারান্দাও হচ্ছে। আর সবটুকু মিলে টোটাল বাজেট হচ্ছে প্রায় ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজার। তবে স্যার, এর ভেতর আরেকটা ব্যাপার আছে, সেটা এখনও ম্যাডামকে বলা হয়নি। ম্যাডাম এলে সেটা খুলে বলছি”।
পরিতোষ তার কথা শুনে বলল, “পেমেন্টটা কিভাবে করতে হবে? চেকে না ব্যাঙ্ক ট্র্যান্সফার করে”?
সুরজিত বললেন, “জেনারালি আমরা চেকই প্রেফার করি। তবে ম্যাডাম যদি ক্যাশেই পেমেন্ট করতে চান, তাহলেও আমরা সেটা অ্যাকসেপ্ট করব”।
পরিতোষ তখন বলল, “আপনি তো বুঝতেই পাচ্ছেন, ম্যাডাম একজন সরকারী কর্মচারী। তার একাউন্টে এমন হেভি এমাউন্টের লেনদেন হলে সেটা ইনকাম ট্যাক্সের নজরে সন্দেহ জনক বলে বিবেচিত হবে। আর কালচিনির বাড়ির .......” বলেই দড়জা দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেখে থেমে গেল।
লক্ষ্মী আর অর্চনা দুটো ট্রেতে করে জল খাবারের থালা সাজিয়ে এনেছে। পেছনে পেছনে সীমন্তিনীও ঘরে ঢুকল। টেবিলে খাবারের থালা গুলো সাজিয়ে রেখে লক্ষ্মী আর অর্চনা বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী সুরজিতকে আর পরিতোষকে খেতে বলল।
পরিতোষ নিজের প্লেটটা হাতে নিয়ে সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার প্লেট কোথায়? তুমি খাবে না”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “তোমরা খাও। আমি অর্চু আর লক্ষীদির সাথে খাব। মিঃ অধিকারীকে খুব বেশী সময় আটকে রাখা যাবে না। তাই তার সাথে কথাটুকু আগে সেরে নিই। তারপর আমি খাব”।
______________________________
SS_SEXY