Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 220)

এবার আর একটা সিগারেট না খেয়ে থাকতে পারল না পরিতোষ। সিগারেট খেতে খেতে গোটা বিষয়টা নিয়ে সে আরও ভালভাবে চিন্তা করতে লাগল। সিগারেট খাওয়া শেষ হতে সে আবার আব্দুলকে মিস কল দিল। কয়েক সেকেন্ড বাদেই আব্দুলের প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল এল। ফোন কানে লাগিয়েই পরিতোষ বলল, “তোর হিসেবটা করেছিস”?

আব্দুল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, করেছি। সব মিলে সাতটা গাড়ি ভাড়া করতে ......”

পরিতোষ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “ডিটেইলসে কিছু বলতে হবে না। মোট কত টাকা পেমেন্ট করতে হচ্ছে, সেটা বল”।

আব্দুল বলল, “স্যার সব মিলে দু’লাখ সত্তর হাজার টাকা পেমেন্ট করতে হবে”।

পরিতোষ এবার বলল, “বেশ, এবার মন দিয়ে শোন। সাড়ে ন’লাখ একটা আলাদা প্যাকেটে করে রাখ। কাল সকালে শেখর তোর কাছে যাবে। এই প্যাকেটটা ওকে দিয়ে দিবি। আর পাঁচ লাখ টাকা আলাদা করে তোর টিমের জন্য রাখ। সবাইকে যা যা দেবার দিয়ে বাকিটা নিজের কাছে রেখে দিবি। আর চল্লিশ লাখ টাকার আলাদা একটা প্যাকেট কর। কাল যখন নর্থ বেঙ্গল যাবি তখন ব্যাগে তোর জামা কাপড়ের তলায় এ প্যাকেটটা নিয়ে যাবি। বাকি টাকাটা আলাদা ভাবে কোনও সেফ জায়গায় রেখে যাবি আপাততঃ। আমি কলকাতা ফিরে আসবার পর সেটা নিয়ে যা করবার করব। বুঝেছিস? সাড়ে ন’লাখ শেখরকে দিবি, পাঁচ লাখ তোর টিমের জন্য রাখবি, আর চল্লিশ লাখ ব্যাগে নিয়ে যাবি। বাকি সাড়ে পঁয়তাল্লিশ লাখ এখন তোর কাছেই রাখবি। তুই
 
নাগরাকাটা থেকে ফিরে আসবার পর সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব, ঠিক আছে”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার ঠিক আছে। আর আমি আগামীকালের ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছি। ট্রেনটা ছাড়বে তিনটা পঞ্চাশে। আমি ঠিক সময়েই ষ্টেশনে পৌঁছে যাব”।

পরিতোষ বলল, “নারে, একেবারে ঠিক সময়ে নয়। তোকে সাড়ে তিনটের আগে ষ্টেশনে পৌঁছে যেতে হবে। আরেকটা ছোট্ট কাজ সেরে তোকে ট্রেনে উঠতে হবে”।

আব্দুল জিজ্ঞেস করল, “আর কি কাজ স্যার”?

পরিতোষ বলল, “ওই জবানবন্দীর কাগজটার একটা ফটোকপি করে নিজের কাছে রাখবি। আর সেই অরিজিনাল জবানবন্দীর কাগজটাকে একটা খামে ভরে মুখটা সীল করে দিবি। যখন ট্রেন ধরতে যাবি, তখন তোর ব্যাগের মধ্যে এ’ খামটাকে নিয়ে যাবি। ঠিক সাড়ে তিনটের সময় তুই হাওড়া ষ্টেশনের জেন্টস টয়লেটের ভেতর থাকবি। আর হ্যাঁ, তুই কিন্তু দুটো মোবাইলই সাথে রাখবি। আমি যে কোন সময় তোকে ফোন করতে পারি। তুই যখন টয়লেটের ভেতর থাকবি তখন আমি তোর ফোনে একটা মিসকল দেব। মিসকলটা পেলেই তুই প্রাইভেট নাম্বার থেকে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবি। তখন আমি তোকে বলে দেব খামটা কার হাতে দিতে হবে। সে ওই টয়লেটের ভেতরেই থাকবে। তাকে খামটা দিয়ে তার সাথে আর একটাও কথা না বলে তুই টয়লেট থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্লাটফর্মে চলে যাবি। তারপর ট্রেণে উঠে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে থাকবি। বুঝেছিস”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার, বুঝেছি। আর কিছু”?

পরিতোষ বলল, “আর বাকি যা কিছু বলার সেটা আমি সময়ে সময়ে তোকে জানিয়ে দেব। আর হ্যাঁ, তোকে যে পাঁচ লাখ নিতে বললাম, নাগরাকাটা যাবার সময় সেখান থেকে ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে যাস। কারন ফেরার পথে তোকে বাগডোগরা থেকে প্লেনে চড়ে কলকাতায় আসতে হবে। সঙ্গে আইডেন্টিটি কার্ড নিয়ে যাস”।

আব্দুল বলল, “ঠিক আছে স্যার”।

পরিতোষ ফোন কেটে দিয়েই দেখল রাত সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেছে। সে আবার শেখরকে ফোন করল। ওদিক থেকে শেখর সাড়া দিতেই পরিতোষ বলল, “শোন কাল সকাল আটটার ভেতর তুই আব্দুলের গ্যারেজে যাবি। আব্দুল তোকে একটা প্যাকেট দেবে। তার মধ্যে টাকা থাকবে, সাড়ে ন’ লাখ। তোর টিমের যাকে যাকে যা যা পেমেন্ট করার কথা আছে, তা সব পেমেন্ট করে দিবি। চার লাখ টাকা তোর আর বিপ্লবের জন্যে দিয়েছি। সেটা তোরা দু’জনে শেয়ার করে নিস”।

শেখর বলল, “কিন্তু স্যার আমাদের জন্যে চার লাখ টাকা”!?

পরিতোষ বলল, “সেটা নিয়ে এখন আর কোন কথা বলিস না। আমি খুব ব্যস্ত আছি। তাই বেশী কথা বলতে পারব না। কিন্তু মনে রাখিস, সকাল আটটার আগেই আব্দুলের কাছ থেকে সেটা নিয়ে নিবি, ঠিক আছে”?

শেখর বলল, “ওকে স্যার, তাই হবে”।


*****************

ঊণিশ তারিখ সকালে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পরিতোষ একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা নাগরাকাটা রওনা দিল। সে পুরোপুরি তার ইউনিফর্মে ছিল। আধ ঘন্টা পর প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এল। কলটা সাথে সাথেই রিসিভ না করে সে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই তারা নাগরাকাটা পৌঁছে যাবে।

পরিতোষ কল রিসিভ করে ফোন কানে লাগিয়েই বলল, “হ্যাঁ, বল কোথায় পৌঁছেছিস তুই”?

আব্দুল জবাবে বলল, “স্যার, আমি এইমাত্র নাগরাকাটা ষ্টেশন থেকে বেরোলাম। এখন কী করব”?

পরিতোষ বলল, “সব ঠিক ঠাক আছে তো? রাস্তায় কোন ধরণের সমস্যা হয়নি তো”?

আব্দুল বেশ সহজ সুরেই বলল, “না স্যার, তেমন কোনও অসুবিধে হয়নি। শুধু ঘুমেরই একটু ডিস্টার্ব হয়েছে”।

পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে, ষ্টেশনের আশে পাশে চায়ের দোকান টোকান আছে নিশ্চয়ই”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার, দু’তিনটে চায়ের দোকান খোলা দেখা যাচ্ছে”।

পরিতোষ বলল, “কোন একটা চায়ের দোকানে ঢুকে চা আর খাবার যা পাস খেয়ে নে। পনেরো মিনিট পর আমাকে ফোন করিস আবার” বলে ফোন কেটে দিল।
 

মিনিট পনেরো বাদে নেপালী ড্রাইভারটা হিন্দিতে বলল, “স্যার নাগরাকাটা তো পহুচ গয়া। কিধর জানা হ্যায় অব”?

পরিতোষ বলল, “সবসে পহলে তো ইস্টিশান লে চলো ভাইয়া। পর বিল্কুল সামনে জানা নহী হ্যায়। কোই এয়সি জগহ পে রখনা যাহা সে স্টেশনকে সামনেওয়ালা গেট দিখাই দে। ওয়াহা হম দো চার মিনিট হি রুকেঙ্গে। ফির পুলিশ ষ্টেশন কি তরফ জানা পড়েগা”।

ড্রাইভার একবার মাথা ঘুরিয়ে পরিতোষের দিকে দেখে একটু ভীত গলায় বলল, “স্যার, কোই লফড়া তো নেহী হোগা না”?

পরিতোষ তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “এয়সা কুছ ভি নহী হোগা ভাই। তুমকো বিল্কুল ভি ঘবড়ানে কি জরুরত নহী হ্যায়”।

মিনিট দুয়েক বাদেই ড্রাইভারটা রাস্তার এক পাশে গাড়ি চাপিয়ে দিতে দিতে বলল, “হা সর, লিজিয়ে রেল ইষ্টেশন আ গয়া। ও সামনে দেখিয়ে গেট”।

পরিতোষ সেদিকে তাকাতেই একটা দোকানের সামনে আব্দুলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল, সকাল সওয়া আটটা। সে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাইয়া, তুম ইয়াহাকে থানেকা ওএসডি ম্যাডামকা কোয়ার্টার ঔর থানা কহা পর হ্যায় জানতে হো”?

ড্রাইভার বলল, “হাঁ সাব, জানতা হু না। বো সামনে সে জো রাস্তা চলা গয়া উসি রাস্তে পে থোড়া আগে যা কর ডাহিনা তরফ থোড়া যাতে হি ওএসডি ম্যাডাম কা কোয়ার্টার পহুচ জায়েঙ্গে। জ্যাদা দুর নহী হ্যায়, দশ মিনট মে পহুচ জাউঙ্গা। পর থানা জানে কে লিয়ে বো ডাহিনা মোড় ছোড়কে থোড়া ঔর দুর যাকে বাঁয়ে তরফ বজার কে রাস্তা পকড়না পড়েগা। থোড়া দুর হ্যায়। ঔর পন্দ্রহ বিস মিনিট জ্যাদা লাগেগা”।

পরিতোষ এবার সীমন্তিনীর নাম্বারে ফোন করল। সীমন্তিনী ফোন ধরেই বলল, “ঈশ তুমি কি গো পরি। পরশু রাত থেকে তোমাকে কতবার ফোন করে যাচ্ছি আমি। একবারও তুমি ফোন ধরছ না কেন বল তো”?
 

পরিতোষ সীমন্তিনীর কথার জবাব না দিয়ে বলল, “তুমি এখন ঠিক কোথায় আছ বলো তো? অফিসে চলে গেছ নাকি”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “এই তো ঘর থেকে বেরোচ্ছি এখনই। কিন্তু তোমার খবর কি বলো না। ওদিকে কি কি হল”?

পরিতোষ বলল, “সে’সব কথা পরে বলছি। তুমি কি আর পনেরো কুড়ি মিনিট পর বেরোতে পারবে ঘর থেকে”?

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ, তা পারব। কিন্তু কেন”?

পরিতোষ বলল, “পনেরো কুড়ি মিনিটের ভেতরেই তোমার কোয়ার্টারে আব্দুর রহমান বলে একজন গিয়ে পৌঁছবে। তাকে আমি পাঠিয়েছি তোমার কাছে। তুমি আগে থেকেই গেটে বলে রাখো, যে এ নামের কেউ এসে তোমার সাথে দেখা করতে চাইলে যেন তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়। তার কাঁধে বা হাতে একটা ব্যাগ থাকবে, চেকিং এ যেন না আটকায়, আর কোনও রেজিস্টারে যেন তার সইও না নেওয়া হয়। লোকটা তোমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়েই সাথে সাথে বেরিয়ে আসবে। তুমিও তাকে ঘরের ভেতর নেবার বা কোনরকম আতিথেয়তা করবার চেষ্টা করো না” বলেই ফোন কেটে দিল।

আর দেখতে পেল, আব্দুলও ঠিক তখনই নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করল। আর পাঁচ সেকেন্ডের ভেতরেই পরিতোষের ফোন আবার বেজে উঠল। প্রাইভেট নাম্বারের কল দেখেই কল রিসিভ করে সে বলল, “তুই একটা অটোতে চেপে সোজা থানার ওএসডি ম্যাডামের কোয়ার্টারে চলে যা। কোয়ার্টারের সামনে পুলিশের পাহারা আছে। তাদের কাছ গিয়ে বলবি যে ওএসডি ম্যাডাম তোকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাহলেই ওরা তোকে ভেতরে ঢুকতে দেবে। তবে ওরা যদি তোর নাম জিজ্ঞেস করে নিজের আসল নাম না বলে বলবি আব্দুর রহমান। তাহলে ওরা আর তোকে অন্য কোনও প্রশ্ন করবে না। ওএসডি ম্যাডাম খুব সুন্দরী দেখতে আর প্রায় ছ’ফুটের মত লম্বা। তার নাম সীমন্তিনী ভট্টাচার্যি। ভেতরে ঢুকে তার পরিচয় জেনেই তার হাতে ওই প্যাকেটটা দিয়ে তুই বলবি যে এটা আমি পাঠিয়েছি। আর সেটা তাকে দিয়েই তুই আর এক মূহুর্তও দেরী না করে ওখান থেকে চলে আসবি। অটোটাকে ধরে রাখিস। প্যাকেটটা ওএসডি ম্যাডামের হাতে দিয়েই ওই অটো ধরেই আবার ষ্টেশনে ফিরে আসবি। তারপর ষ্টেশন থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা বাগডোগরা এয়ারপোর্টে চলে যাবি। তারপর যে ফ্লাইট পাবি তার টিকিট কেটে কলকাতা চলে যাস। খাবার খেতে হলে এয়ারপোর্টে গিয়ে খেয়ে নিস, কেমন”?

পরিতোষ দুর থেকেই দেখতে পেল আব্দুল ফোন পকেটে রেখে একপাশে পার্ক করা অটো গুলোর দিকে এগিয়ে চলেছে। কিছুক্ষণ বাদেই আব্দুলের অটো চলতে শুরু করতেই পরিতোষ ড্রাইভারকে বলল, “ভাইয়া উস অটো কো থোরা দুরসে ফলো করতে হুয়ে চলো। পর ওএসডি ম্যাডাম কি কোয়ার্টার কে সামনে যাকর উস অটো কো ওভারটেক করকে থোড়া আগে যা কে থোড়াসা দুর পর হি রোকনা। যহা সে ম্যায় উসকো ঠিক তরহ সে দেখ সকু”।

ঠিক তেরো মিনিট বাদেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বলল, “সাব, বো পিছে রহা ইয়াহা কা ওএসডি ম্যাডাম কা বঙ্গলা। আপ ইয়েহি উতরেঙ্গে ক্যায়া”?

পরিতোষ মাথা ঘুরিয়ে পেছনের অটো থেকে আব্দুলকে নামতে দেখে ড্রাইভারের কথার জবাবে বলল, “হাঁ ভাইয়া, ইয়েহি উতর জাউঙ্গা। পর ও অটো কো ওয়াহা সা চলে জানে দো”।
 

আব্দুল কোয়ার্টারের গেটের কাছে যেতেই পাহারারত পুলিশের মধ্যে থেকে একজন গেটের কাছে এগিয়ে এল। আব্দুলের সাথে একটু কথা বলেই পুলিশটা গেট খুলে দিল। আব্দুল ভেতরে চলে গেল। প্রায় মিনিট পাঁচেক বাদেই আব্দুলকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। আব্দুল অটোর দিকে এগিয়ে যেতেই পরিতোষ তার নিজের পকেট থেকে পার্স বের করে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ট্যাক্সিটাকে বিদেয় করে দিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেল।

পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া একজনকে গেটের কাছে দেখতে পেয়েই পাহারায় থাকা দু’জন পুলিশ গেটের কাছে এসে পরিতোষকে স্যাল্যুট করে বলল, “স্যার, আপনাকে তো ঠিক ......”

পরিতোষ হাত উঠিয়ে শান্ত গলায় বলল, “আমাকে তোমরা চিনবে না। আমি কলকাতা থেকে এসেছি। ভবানীপুর হেড কোয়ার্টার থেকে। ম্যাডাম কি বেরিয়ে গেছেন”?

একজন পুলিশ গেট খুলতে খুলতে বলল, “না স্যার। ম্যাডাম এখনও বেরোন নি। আপনি আসুন স্যার, ভেতরে আসুন”।

পরিতোষ ভেতরে ঢুকে বলল, “আমি কি ভেতরে গিয়ে ম্যাডামের সাথে দেখা করতে পারি”?

একজন পুলিশ মুখ কাচুমাচু করে বলল, “স্যার এক মিনিট। আমাদের অপরাধ নেবেন না স্যার। আপনার নামটা যদি একটু আমাদের খাতায় এন্ট্রি করে দিতেন ... আসলে আমরা তো আপনাকে ঠিক চিনিনা। আর এসপি সাহাবের কড়া নির্দেশ আছে, আমাদের অপরিচিত কাউকে যেন ভেতরে ঢুকতে না দিই। তাই প্লীজ আমাদের ক্ষমা করবেন”।

পরিতোষ মনে মনে সেন্ট্রিদের কথায় খুশী হলেও বলল, “একটু আগেও তো একজন এসে ম্যাডামের সাথে দেখা করে গেল। আমি তো তখন সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কৈ, তখন তো তোমরা তাকে খাতায় সই করতে বলনি”।

একজন সেন্ট্রি উত্তর দিল, “স্যার, ম্যাডাম আমাদের আগেই বলে রেখেছিলেন তার আসবার কথা। উনি ম্যাডামের পরিচিত। তাই ম্যাডামের কথাতেই তাকে ঢুকতে দিয়েছিলাম। তবে বুঝতে পাচ্ছি স্যার, আপনি আমাদের হেড অফিসের বড় কোন অফিসারই হবেন। কিন্তু স্যার আপনাকে তো আমরা ঠিক চিনিনা। আর ম্যাডামও আপনার ব্যাপারে আমাদের কিছু বলেননি”।

পরিতোষ লক্ষ্য করল পাশের ছোট্ট কেবিনের ভেতর থেকে আরেকজন কনস্টেবল ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। পরিতোষ কিছু বলবার জন্য মুখ খুলতেই কেবিনের ভেতরের কনস্টেবলটা বেশ জোরে বলে উঠল, “এই বর্মন, যেতে দে স্যারকে” বলতে বলতে বাইরে বেরিয়ে এসে সে পরিতোষকে একটা স্যালিউট করে বলল, “সরি স্যার। কিছু মনে করবেন না প্লীজ। আমরা তো আমাদের ডিউটিই করছিলাম”।

পরিতোষ কনস্টেবলটার কাঁধে একটা হাত রেখে বেশ শান্ত গলায় বলল, “আমি কিচ্ছু মনে করিনি ভাই। তোমরা যে আমার ইউনিফর্ম দেখেও আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে এতসব কথা বললে, তাতে আমি খুশী হয়েছি। এভাবেই ডিউটি করবে সব সময়। তোমাদের ম্যাডাম আমার খুব ভাল বন্ধু। আর তার সিকিউরিটির দায়িত্ব তো তোমাদের ওপরেই। সবসময় এভাবে কড়া পাহারা দেবে। ম্যাডামের ওপর যেন কোন বিপদ না আসে, সেদিকে সব সময় নজর রাখবে”।

কনস্টেবল আর সেন্ট্রিগুলো আবার জুতো ঠুকে পরিতোষকে স্যালিউট করতে পরিতোষ হাত নেড়ে ভেতরের দিকে এগোতেই দেখতে পেল সীমন্তিনী আর নবনীতা দু’জনেই ছুটতে ছুটতে গেটের দিকে আসছে।

তাদের দু’জনকে ওভাবে দৌড়োতে দেখে পরিতোষ বেশ জোরে বলে উঠল, “আরে এ কী করছ তোমরা। আস্তে আস্তে নীতা, পড়ে যাবে তো”।

সীমন্তিনী আর নবনীতা দু’জনেই কাছে এসে পরিতোষের দুটো হাত ধরে ফেলল। তাদের দু’জনের চোখে মুখেই বিস্ময় খুশী আর উত্তেজনার চিহ্ন। নীতাই আগে কথা বলল। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল, “কোন কথা নেই বার্তা নেই, এমন হঠাৎ করে এসে এভাবে আমাদের সকলকে অবাক করে দিলে তুমি”?

সীমন্তিনী পরিতোষের একটা হাত ধরে ঘরের দিকে টানতে টানতে বলল, “আগে ঘরে চল নীতা। তারপর তোর যত খুশী ঝগড়া করিস” বলে পরিতোষকে বলল, “কিছুক্ষণ আগে ফোনটা তাহলে ষ্টেশন থেকেই করেছিলে,
 
তাই না”?

পরিতোষ মুচকি হেসে বলল, “ঠিক ধরেছ। তবে আমি ট্রেনে আসিনি। আমি ফ্লাইটে এসেছি বাগডোগরা অব্দি। তারপর সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে এখানকার ষ্টেশন পর্যন্ত এসেছি। আর তারপর ষ্টেশন থেকে ওই ট্যাক্সিতেই এখানে এসেছি”।

ততক্ষণে সবাই মিলে বারান্দায় পৌঁছে গেছে। সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তখনও তো আমাকে বলনি যে তুমি নাগরাকাটা এসে গেছ”?

পরিতোষ আবার মুচকি হেসে বলল, “আমার দু’দুটো প্রেয়ষী এখানে আছে। তাই ভেবেছিলাম কোনও খবর না দিয়ে হুট করে এসে তোমাদের দু’জনকে চমকে দেব। তা সারপ্রাইজটা ভাল লাগেনি”?

সীমন্তিনী মুখে খুশীর ভাব নিয়েই বলল, “সারপ্রাইজ বলে সারপ্রাইজ? কনস্টেবলটা যখন আমাকে বলল যে পরিতোষ সান্যাল বলে একজন এসেছেন, তখন তো এমন চমকে গিয়েছিলুম যে আরেকটু হলেই বোধ হয় হার্ট ফেল করত আমার। ইশ বাব্বা, আচ্ছা এসো এসো ভেতরে এসো” বলেই ঘরের ভেতর ঢুকে চিৎকার করে বলতে লাগল, “নীতা, তুই সবাইকে ডাক। ওহ, কী যে করব আমি। আজ দিনের শুরুটা যে এভাবে হবে এ তো দশ মিনিট আগেও আমি ভাবতে পারিনি। ওরে তোরা সব গেলি কোথায়। দ্যাখ কে এসেছে আমাদের বাড়ি”।

______________________________
 
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:55 AM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)