25-03-2020, 11:53 AM
(Update No. 219)
অনির্বান দত্ত বলল, “অপারেশনটা এক্সট্রিমলি সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। আর আপনি আমাদের এভাবে সাহায্য না করলে এবারেও এটা সম্ভব হত না। তবে আমরা যা কিছু পাব বলে আশা করেছিলাম, তার থেকে অনেক অনেক বেশী আমরা পেয়েছি। আমরা সবাই আজ রাতেই দিল্লী উড়ে যাচ্ছি। তাই আপনার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না আমার। কিন্তু আপনার কথা আমি সারা জীবনেও ভুলব না স্যার। আর যদিও এখন আপনাকে ফোন করবার কথা ছিলনা আমার, তবু যার সহায়তায় এমন অসম্ভব একটা মিশন সাকসেসফুল হল, সেই আপনাকে চিরতরে পর্দার আড়ালে রেখে চলে যেতে আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যার। কিন্তু কী করব বলুন। ডিউটির কাছে যে আমরা সবাই বাঁধা পড়ে আছি। এ অপারেশনের পুরো ক্রেডিটটাই আপনার। কিন্তু আপনার নাম আমরা কেউ মুখেও আনতে পারছি না। বুঝতেই পারছেন স্যার, এতে আপনার কত বড় বিপদ হতে পারে। তবু স্যার, নিজের বিবেককে বোঝাতে পারছিলাম না। যার জন্যে এতবড় একটা সাফল্য আমার জীবনে এল, এতবড় সাকসেস আমি পেলাম, তাকে সামান্য একটু মৌখিক ধন্যবাদ না জানিয়ে স্বার্থপরের মত চলে যাব, এটা ভাবতেও যেন কেমন লাগছিল আমার। তাই ফোনটা করলাম। আপনি এতে ডিস্টার্বড ফিল করছেন না তো স্যার”?
পরিতোষ খুব খুশী হয়ে বলল, “আরে না না, কী বলছেন আপনি মিঃ দত্ত। আমি গতকাল থেকেই একটা স্পেশাল ডিউটিতে ইস্ট মেদিনীপুরে আছি। কিন্তু আজ সকাল থেকেই বারবার আপনাদের অপারেশনের কথাটাই আমার মনে ঘুরে ফিরে আসছিল। খুব ইচ্ছে করছিল রেজাল্টটা জানতে। আপনি যে নিজে মুখে আমাকে এ খবরটা জানালেন, এ জন্য আমি সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ। কিন্তু মিঃ দত্ত, যদিও জানি যে এমন আবদার করাটা আমার একেবারেই অনুচিত হবে। তবু বলছি, খবরের কাগজে যা বেরোবে সে’সব তো জানতেই পারব। কিন্তু যে’সব কথা প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মেডিয়াতে আসবে না, সে’সবের অন্ততঃ একটুও কি আপনার মুখ থেকে শুনতে পারি মিঃ দত্ত”?
এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে অনির্বান দত্ত বলল, “অন্য কেউ হলে তার এমন অনুরোধ আমি এক কথায় টার্ন ডাউন করে দিতাম স্যার। আপনাকে সেটা বলতে পারছি না। কিন্তু স্যার, ভেতরের কথা আপনাকে খুলে বলতে পারব না সবটা। তবে শুনুন, বিমল আগরওয়ালার অফিসে আর বাড়িতে দু’জায়গায় সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ রেইড করা হয়েছিল। আর ফার্ম হাউসে সন্ধ্যে থেকেই কড়া ভিজিল্যান্স রাখলেও সেখানে রেইড করা হয়েছিল রাত আটটায়। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা মাত্র মিনিট পনেরো আগেই শেষ হল। তার অফিস, বাড়ি আর ফার্ম হাউস থেকে সব মিলিয়ে প্রায় সাতশ’ কোটি টাকার ব্ল্যাকমানি পাওয়া গেছে। আর বেনামী এবং বেআইনী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার সম্পত্তির দস্তাবেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তা এ’সব তো গেল পুলিশ, সিবিআই, এসিবি, ইনকাম ট্যাক্স, আর অন্যান্য দপ্তরের ব্যাপার। আমরা যে ব্যাপারে ইনভল্ভড ছিলাম সেটা ছিল সিক্রেট সার্ভিসেসের ব্যাপার। আমাদের দেশের সুরক্ষার ব্যাপার। বিমলের ফার্ম হাউসের ওই সিক্রেট চেম্বারের ভেতরের সিক্রেট সেফটা থেকেই আমরা এমন এমন ডকুমেন্টস পেয়েছি যে বিমল আগরওয়ালার বিরূদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা তো চলবেই, ফাঁসির কম সাজা তার হতেই পারে না। আর শুধু বিমলই নয়। বিমলের সাথে সাথে এক্সটারনাল মিনিস্ট্রি আর ডিফেন্স মিনিস্ট্রির বেশ কয়েকজন হোমরা চোমরাও মিনিট চল্লিশেক আগে দিল্লী, চেন্নাই, মুম্বাই, ভাইজ্যাগ আর কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যারেস্টেড হয়েছে। তাদের সকলের বিরূদ্ধেও দেশদ্রোহিতার মামলা শুরু হয়ে গেছে। এর বেশী আর কিছু আপনাকে বলতে পারছি না”।
পরিতোষ সব শুনে বলল, “ওয়েল মিঃ দত্ত, এতোটা যে বললেন, এ জন্যেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মোটামুটি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা। কিন্তু মিঃ দত্ত, আপনারা কি বিমল আগরওয়ালাকে অ্যারেস্ট করেছেন”?
অনির্বান দত্ত বলল, “অপারেশনের সময় আমরা আগরওয়ালাকে তার বাড়ি বা অফিস কিংবা ফার্ম হাউস কোথাও দেখতে পাইনি। তবে তার বাড়িতে রেড চলাকালীনই তার স্ত্রীর কাছে খবর এসেছিল যে তার স্বামীর গাড়ি বম্ব ব্লাস্টে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর তার স্বামীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা তার স্ত্রীকে সঙ্গে করেই সেই হাসপাতালে পৌঁছই। সেখানে আন্ডার ট্রিটমেন্ট অবস্থাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও সে হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। ডক্টররা বললেন আরও দু’দিন তাকে ওয়াচে রাখা হবে। তবে আপাততঃ তাকে কলকাতা পুলিশের হেপাজতেই রেখে যাচ্ছি আমরা”।
পরিতোষ এবার বলল, “আচ্ছা মিঃ দত্ত, ধরুন এত কিছুর সাথে আপনারা যদি বিমলের নিজের হাতে লেখা তার সমস্ত বেআইনী কাজের স্বীকারোক্তি পেয়ে যান, তাহলে কেমন হয়”?
অনির্বান দত্ত এবার প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “হোয়াট কী বলছেন আপনি স্যার? এটা কী সম্ভব”?
পরিতোষ হেসে বলল, “আমাদের ভারতীয় আধ্যাত্মিকতায় বলে যে একমনে ভগবানকে ডাকলেও নাকি তার দেখা পাওয়া যায়। শুধু একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর নিরলস প্রচেষ্টার দরকার। আর এ তো সামান্য একজন ক্রিমিনালের স্বীকারোক্তি মিঃ দত্ত”।
অনির্বান দত্ত আবার একই ভাবে চেঁচিয়ে বলল, “আই কান্ট বিলিভ ইট। আই জাস্ট কান্ট বিলিভ ইট। আপনি কী করে এটা করলেন স্যার”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “সেটা জিজ্ঞেস করবেন না মিঃ দত্ত। ওটা আমার প্রফেশনাল সিক্রেট। তাই সেটা খুলে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বিমল আগরওয়ালা নিজে হাতে তার সমস্ত কূ-কর্মের কথা আজ সকালেই একটা কাগজে লিখে আমার এক সোর্সের হাতে দিয়েছে। অবশ্য আমি কলকাতার বাইরে আছি বলে সেটা এখনও আমার হাতে পৌঁছয় নি। কিন্তু আমার মনে হয় সেটা আপনার কাছেও খুব গ্রহণ যোগ্য একটা জিনিস হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে আমি এখন তমলুকে আছি। আর আপনারা আজ রাতেই কলকাতা ছেড়ে যাচ্ছেন। তাই সেটা আর কী করে আপনার হাতে ......”
অনির্বান দত্ত এবার নিজেকে সংযত করে বলল, “ইফ ইউ আর নট জোকিং, তাহলে স্যার আমি সেটা নেবার জন্য আরও একটা দিন থেকে যেতে পারি। প্লীজ যে করেই হোক, আগামীকালের মধ্যে আপনি সে জিনিসটা আমার কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করুন, প্লীজ”।
পরিতোষ মনে মনে একটু ভেবে বলল, “বেশ মিঃ দত্ত। আমি সেটা করবার চেষ্টা করছি। তাহলে শুনুন, আপনাকে আগামীকাল বিকেল ঠিক সাড়ে তিনটেয় হাওড়া ষ্টেশনের জেন্টস টয়লেটে যেতে হবে। মেইন এন্ট্রান্স দিয়ে ভেতরে ঢুকে বাঁদিকে গেলেই জেন্টস টয়লেট দেখতে পাবেন। আমার একজন বিশ্বস্ত লোক সেখানে কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে থাকবে। আপনি সেখানে গিয়ে অমন কাউকে দেখতে পেলেই আমাকে একটা ফোন করবেন। আমি তখন তাকে ফোন করে আপনার হাতে সেটা দিয়ে দিতে বলব। তবে মিঃ দত্ত, বুঝতেই তো পারছেন এ’সব ব্যাপারে কত কিছু গোপন রাখতে হয়। আপনি দয়া করে তার নাম ঠিকানা জানতে চাইবেন না, আর তাকে অন্য কোনও প্রশ্নও করবেন না, প্লীজ”।
অনির্বান দত্ত বললেন, “ওকে স্যার, তাই হবে। আমি কাল ঠিক সময়েই সেখানে পৌঁছে যাব। আপনাকে আমি কী বলে যে ধন্যবাদ জানাব, তার ভাষাই আমার মুখে জোগাচ্ছে না স্যার। তবে যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন আপনার কথা আমি ভুলতে পারব না। আর এর পরেও আমি মাঝে মাঝে আপনার সাথে যোগাযোগ করব। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার”।
পরিতোষ তাকে ‘বাই’ বলে ফোন কেটে দিয়েই শেখরকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “শেখর, তোকে বিকেলে ফোন করে যেটা বলেছিলাম, সেটা করেছিস”?
শেখর বলল, “হ্যাঁ স্যার, হিসেবটা করেছি। কিন্তু স্যার অন্যান্য বারের মত আমাদের কি আর এবার দেখা হচ্ছে না”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ দেখা হবে। তবে দু’দিন হল আমি কলকাতার বাইরে আছি একটা বিশেষ কাজে। কয়েকদিন বাদে কলকাতা ফিরব। তাই কলকাতা না যাওয়া পর্যন্ত দেখাটা হচ্ছে না। কিন্তু ফান্ড তো হাতে চলে এসেছে। ওটা যত তাড়াতাড়ি ডিস্ট্রিবিউট করে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। তুই তোর হিসেব মত বল সব মিলে তোর কত পেমেন্ট করতে হবে”।
শেখর জবাবে বলল, “স্যার হিসেব তো আমি করেছি মোটামুটি। তাতে আমার আর বিপ্লবের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা হচ্ছে”।
পরিতোষ সে’কথা শুনেই বলল, “ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ। তোর সাথে পরে কথা বলছি” বলে ফোন বন্ধ করল।
এমন সময়েই তার ঘরে ডিনার সার্ভ করা হল। এক মূহুর্ত ভেবে সে ডিনার সেরে নিল। তারপর রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ডক্টর দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে ফোন করল। দু’বার রিং হতেই সাড়া পেয়ে পরিতোষ বলল, “ডক্টর, পরিতোষ হিয়ার। ও’দিকের কী খবর? আপনি কি এখনও আপনার হাসপাতালেই আছেন স্যার”?
ডঃ দিব্যেন্দু বললেন, “না স্যার, আমি এইমাত্র বাড়ি ফিরলাম। কিন্তু আপনাকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না”।
পরিতোষ শান্তভাবে বলল, “ডক্টর আমি আসলে গতকালই একটা বিশেষ কাজে তমলুক চলে এসেছি। আজও এখানেই আছি। তা ও’দিকের খবর কী? অপারেশনটা সাকসেসফুল হয়েছে তো”?
ডঃ দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “হ্যাঁ স্যার, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু স্যার সব কিছু দেখে শুনে আমি তো প্রায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বাপরে! পুলিশ তো পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিসেসের গোয়েন্দারা পর্যন্ত হাসপাতালে এসে হাজির হয়েছে। হাসপাতালের বেডে অজ্ঞান অবস্থাতেই তারা বিমল আগরওয়ালাকে অ্যারেস্ট করেছে! এ’সব ব্যাপারে তো স্যার আগে আপনি কিছু বলেন নি”?
পরিতোষ বলল, “সিক্রেট সার্ভিসেসের লোকদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না স্যার। আর আমার প্ল্যানের সাথে তারা কোনভাবেই জড়িত ছিল না। তারা হয়ত অন্য কোনও ব্যাপারে বিমলের পেছনে লেগেছিল। আমার অপারেশনের সঙ্গে তাদের অপারেশনটা হয়ত কোনভাবে কোয়েনসাইড করে গেছে। এ ব্যাপারে আমিও আগে থেকে কিছু জানতাম না। একটু আগেই সেটা জানতে পারলাম আমি। তবে তারা কেন বিমলকে অ্যারেস্ট করেছে, সে ব্যাপারে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি আপনার কাছে শুধু আমাদের প্ল্যানটা কতদুর সাকসেসফুল হয়েছে সেটাই জানতে চাইছি”।
ডক্টর দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “আমাদের প্ল্যান মাফিক সব কিছুই সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। ঠিক আটটা দশে অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছেছিল। ইমারজেন্সীতে তখন এক জুনিয়র ডাক্তার ছিল। পেশেন্টের নেচার অফ ইনজুরি দেখেই সে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি গিয়ে দেখি পেশেন্ট সেন্সলেস। দেখেই বুঝলাম যে একটা মাঝারী ধরণের কার্ডীয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। আর তার কাঁধে পিঠে কিছু কিছু মাইনর ইনজুরি থাকলেও সবচেয়ে বেশী ইনজুরি হয়েছিল তার মেল অর্গানে। মানে যাকে সাধারণ বাংলায় আমরা যৌনাঙ্গ বলে থাকি। শুনেছি সেখানে নাকি একটা বম্ব ব্লাস্ট করেছিল। সেই বম্বের স্প্লিন্টারের আঘাতেই বুঝি অমনটা হয়েছিল। এমনিতেও তো তার শরীরের ওই অঙ্গেই আমার অপারেশন করবার কথা ছিল। তাই একসঙ্গে দুটো অপারেশনই করে ফেলেছি। আর স্ট্রোকের এফেক্টটাও ঘন্টা খানেকের মধ্যে অনেক কমে গিয়েছিল। এখনও পেশেন্ট আইসিইউতে আছে। এখনও সেন্স ফিরে আসেনি। আগামী ছত্রিশ ঘন্টা তাকে কনস্ট্যান্ট ওয়াচে রাখতে হবে। এরমধ্যে সেন্স ফিরলে অন্যান্য ডাক্তাররাই তাকে পরীক্ষা করবে। তখন আর আমার দরকার পড়বে না। তবে আপনি আমাকে যে দায়িত্বটা দিয়েছিলেন, সেটা পালন করতে আমাকে একটুও কষ্ট পেতে হয় নি। হাসপাতালের অন্য নার্স বা ডক্টররা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। আর পেশেন্টকে ওটি থেকে বের করবার আগেই সেখানে পুলিশ আর সিক্রেট সার্ভিসেসের অফিসারেরা পৌঁছে যাওয়াতে আমাকে আর আলাদা ভাবে কোনও হ্যাপা পোয়াতে হয়নি। পেশেন্টের ইনজুরি কেমন হয়েছে আর কন্ডিশন কেমন আছে, এটুকু জানিয়ে দিতেই তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন”।
পরিতোষ যে’কথাটা বিশেষ ভাবে শুনতে চেয়েছিল সেটা শুনতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “বাঃ, আপনাকে যে কোন ঝামেলায় জড়াতে হয়নি সেটা শুনে খুব ভাল লাগল। কিন্তু স্যার, আমার উদ্দেশ্যটা সফল হবে তো? মানে ভবিষ্যতে বিমল আগরওয়ালা আবার ......”
পরিতোষকে বাধা দিয়েই ডক্টর দিব্যেন্দু বললেন, “আপনি যেটা চেয়েছিলেন, সেটা পুরোপুরি ভাবেই হয়ে গেছে স্যার। পেশেন্ট চিরতরে সেক্স পাওয়ার হারিয়েছে। শুধু ইম্পোটেন্ট হয়ে যাওয়াই নয়, এখন সে হাজার চেষ্টা করেও নিজের ইরেকশান পাওয়ার আর ফিরে পাবে না”।
পরিতোষ এবার খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। এটা করতে না পারলে আমার বোনটাকে বোধহয় আর বাঁচাতে পারতাম না আমি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডক্টর। আচ্ছা, আপনাকে এখন আর ডিসটার্ব করছি না। আপনি বরং একটু রেস্ট নিন। বৌদিকে আমার প্রণাম জানাবেন আর মামনিকে আমার ভালবাসা দেবেন। আপনার সাথে পরে আবার কথা বলব। আজ রাখি” বলে ফোন কেটে দিল।
আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে একমনে কিছু ভাববার পর পরিতোষ নিজের অফিসিয়াল মোবাইল থেকে কাউকে ফোন করল। রাত তখন প্রায় দশটা। বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ওদিকের সাড়া পেয়ে পরিতোষ বলল, “কোথায় আছ শ্যামল”?
অপরদিক থেকে শ্যামল নামের লোকটা জবাব দিল, “আর বলবেন না স্যার, বড় বাজে ভাবে ডিউটিতে ফেঁসে গেছি। বাইপাসের কাছাকাছি একটা প্রাইভেট নার্সিংহোমে আছি এখন। আর খুব সিরিয়াস ব্যাপার। সাংঘাতিক হাই প্রোফাইল কেস”।
পরিতোষ কিছু না জানার ভাণ করে জিজ্ঞেস করল, “নার্সিংহোমে? কোনও অ্যাকসিডেন্ট কেস নাকি”?
শ্যামল বলল, “শুধু কি অ্যাকসিডেন্ট কেস স্যার? সারা দেশ জুড়ে হুলুস্থুল পড়ে গেছে। আমাদের কলকাতা পুলিশ বা ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের কথা ছেড়েই দিন, আমরা তো চুনোপুটি স্যার। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট সিবিআই, এন্টি করাপশন ব্যুরো, এনফোর্সমেন্ট আর সিক্রেট সার্ভিসেসের গোয়েন্দারা, সবাই এ কেসে জড়িয়ে আছে। আসল কালপ্রিট বিমল আগরওয়ালা এই নার্সিংহোমের আইসিইউতে আছে। সেখানেই আমার ডিউটি পড়েছে”।
পরিতোষ অবাক হবার ভাণ করে বলল, “বিমল আগরওয়ালা মানে ওই বিল্ডার বিমল আগরওয়ালা? যার সেন্ট্রাল কলকাতার অফিস আর দক্ষিণেশ্বরের ওদিকে ফার্ম হাউসে বছর দেড়েক আগেও কলকাতা পুলিশ আর সেন্ট্রাল এজেন্সী রেড করেছিল”?
শ্যামল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, ওই বিমল আগরওয়ালাই। আর স্যার, শুধু বছর দেড়েক আগের কথাই নয়। শুনলাম এর আগেও নাকি বহুবার আগরওয়ালার অফিসে আর ফার্ম হাউসে আলাদা আলাদা ভাবে অনেক সরকারি এজেন্সীই নাকি নানা সময়ে রেড করেছে, খানা তল্লাশী করেছে। কিন্তু তারা কোনভাবেই আগরওয়ালার বিরূদ্ধে কোন কিছুই খুঁজে পায়নি। কিন্তু এবারে তাদের হাতে সলিড ইনফরমেশন আর ক্লু ছিল। তাই একসঙ্গে তার অফিস, বাড়ি আর ফার্ম হাউসে রেড করা হয়েছে। আমি অবশ্য ওইসব জায়গায় ছিলাম না। তবে শুনেছি তিন জায়গা থেকেই নাকি অনেক কিছু আপত্তিজনক ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্ল্যাকমানি আর বেনামী সম্পত্তি সীজ করা হয়েছে। কিন্তু আগরওয়ালা লোকটা ওই সব জায়গায় ছিল না”।
পরিতোষ আবার অজানার ভাণ করে বলল, “ওহ, সেই বদমাশটা তাহলে ধরা পড়েনি। নিশ্চয়ই আগে থাকতে কোন খবর পেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি তো বললে সে হাসপাতালের বেডে আছে। তাহলে”?
শ্যামল বলল, “না স্যার, ঠিক তা নয়। সে বোধহয় কোন একটা কাজে বারুইপুরের ওদিকে কোথাও গিয়েছিল। এদিকে সন্ধ্যের দিকে আমাদের বারুইপুর থানায় একটা খবর এসেছিল যে অ্যাস কালারের একটা বিদেশী গাড়িতে নাকি বম্ব প্লান্ট করা হয়েছে, আর সেটা নাকি ঠিক সওয়া সাতটায় ব্লাস্ট করবে। সে খবর পেয়েই আমাদের বারুইপুর থানার একটা টিম বম্ব স্কোয়াডের লোকজনদের নিয়ে চারপাশে খানা তল্লাশি শুরু করে দিয়েছিল। বারুইপুর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পশ্চিমে একটা প্রায় ফাঁকা রাস্তায় আগরওয়ালার অ্যাস কালারের গাড়িটা দেখতে পেয়ে পুলিশ সে গাড়িটাকে থামায়। আর গাড়ির পেছনের ডিকিতে বম্ব দেখতে পেয়েই আগরওয়ালাকে গাড়ি থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বম্ব স্কোয়াডের লোকেরা তখন প্রায় একশ’ গজ দুরে ছিল। তারা গাড়িটার দিকে রওনা হতেই বম্বটা ব্লাস্ট করে গেছে। গাড়িটা তো একেবারে চুরমার হয়ে গেছে। তবে আগরওয়ালাকে গাড়ি থেকে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে যাবার আগেই বম্বটা ব্লাস্ট করেছিল বলে পুলিশের লোকেরা তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হয়নি। তার শরীরের পেছন দিকে অনেক জায়গায় ছোটখাট ইনজুরি হয়েছে। আর খুব সম্ভবত তার কোমড়ের নিচে বম্বের কোন স্প্লিন্টার বা শক্ত মতন কোনকিছু এমনভাবে আঘাত করেছে যে তার যৌনাঙ্গটা খুব সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স কাছাকাছি ছিল বলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। গড়িয়ার কাছাকাছি প্রথম যে বেসরকারী নার্সিংহোম পাওয়া গেছে সেখানেই তাকে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করেই সাথে সাথে বলল যে তার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। তাকে সাথে সাথে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ইনজুরি গুলোর ট্রিটমেন্ট করা হয়। যৌনাঙ্গে অপারেশন করে ভেতর থেকে কয়েকটা মরচে ধরা লোহার টুকরো বের করা হয়েছে। ঘন্টাখানেক পর তাকে মোটামুটি নিরাপদ করে তোলার পর তাকে আইসিইউতে শিফট করা হয়েছে। সেন্ট্রাল এজেন্সীর লোকেরা সেখানেই তাকে অ্যারেস্ট করে আমাদের হাতে ছেড়ে গেছে। তাই আমাকেও এখানে ডিউটিতে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছে এখনও ছত্রিশ ঘন্টা তাকে কনস্ট্যান্ট অবজারভেসনে রাখতে হবে। তবে তার আর প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। কিন্তু তার যৌনাঙ্গটা এমন সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে ডাক্তাররা মনে করছে যে তার যৌনাঙ্গ আর কখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে না। আমিও এখানে সিকিউরিটি থাকতে বাধ্য হয়েছি”।
পরিতোষ সবটা শুনে মনে মনে আরও আশ্বস্ত হয়ে একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, “কি আর করবে বলো? আমাদের কাজই তো এমন। কখন কিভাবে কোথায় আমরা আটকে যাই, তা কি আর সবসময় আগে থেকে বোঝা যায়? এই আমাকেই দ্যাখো না। তমলুকে আসবার সময় ভেবেছিলাম যে একদিনেই এখানকার কাজ সারা হয়ে যাবে। কিন্তু লাগল দু’দিন। এখন আবার এখান থেকে আরেক জায়গায় যেতে হবে। হয়ত আগামী তিন চারদিনের মধ্যেও কলকাতা ফেরা হবে না। কিন্তু সবটাই মেনে নিতে হবে। ডিউটি ইজ ডিউটি। আচ্ছা শ্যামল, অনেকক্ষণ তোমাকে ফোনে আটকে রেখেছি। তুমি বরং তোমার ডিউটিতেই মন দাও ভাই। পরে দেখা হবে। রাখছি” বলে ফোন কেটে দিল।
______________________________
অনির্বান দত্ত বলল, “অপারেশনটা এক্সট্রিমলি সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। আর আপনি আমাদের এভাবে সাহায্য না করলে এবারেও এটা সম্ভব হত না। তবে আমরা যা কিছু পাব বলে আশা করেছিলাম, তার থেকে অনেক অনেক বেশী আমরা পেয়েছি। আমরা সবাই আজ রাতেই দিল্লী উড়ে যাচ্ছি। তাই আপনার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না আমার। কিন্তু আপনার কথা আমি সারা জীবনেও ভুলব না স্যার। আর যদিও এখন আপনাকে ফোন করবার কথা ছিলনা আমার, তবু যার সহায়তায় এমন অসম্ভব একটা মিশন সাকসেসফুল হল, সেই আপনাকে চিরতরে পর্দার আড়ালে রেখে চলে যেতে আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যার। কিন্তু কী করব বলুন। ডিউটির কাছে যে আমরা সবাই বাঁধা পড়ে আছি। এ অপারেশনের পুরো ক্রেডিটটাই আপনার। কিন্তু আপনার নাম আমরা কেউ মুখেও আনতে পারছি না। বুঝতেই পারছেন স্যার, এতে আপনার কত বড় বিপদ হতে পারে। তবু স্যার, নিজের বিবেককে বোঝাতে পারছিলাম না। যার জন্যে এতবড় একটা সাফল্য আমার জীবনে এল, এতবড় সাকসেস আমি পেলাম, তাকে সামান্য একটু মৌখিক ধন্যবাদ না জানিয়ে স্বার্থপরের মত চলে যাব, এটা ভাবতেও যেন কেমন লাগছিল আমার। তাই ফোনটা করলাম। আপনি এতে ডিস্টার্বড ফিল করছেন না তো স্যার”?
পরিতোষ খুব খুশী হয়ে বলল, “আরে না না, কী বলছেন আপনি মিঃ দত্ত। আমি গতকাল থেকেই একটা স্পেশাল ডিউটিতে ইস্ট মেদিনীপুরে আছি। কিন্তু আজ সকাল থেকেই বারবার আপনাদের অপারেশনের কথাটাই আমার মনে ঘুরে ফিরে আসছিল। খুব ইচ্ছে করছিল রেজাল্টটা জানতে। আপনি যে নিজে মুখে আমাকে এ খবরটা জানালেন, এ জন্য আমি সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ। কিন্তু মিঃ দত্ত, যদিও জানি যে এমন আবদার করাটা আমার একেবারেই অনুচিত হবে। তবু বলছি, খবরের কাগজে যা বেরোবে সে’সব তো জানতেই পারব। কিন্তু যে’সব কথা প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মেডিয়াতে আসবে না, সে’সবের অন্ততঃ একটুও কি আপনার মুখ থেকে শুনতে পারি মিঃ দত্ত”?
এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে অনির্বান দত্ত বলল, “অন্য কেউ হলে তার এমন অনুরোধ আমি এক কথায় টার্ন ডাউন করে দিতাম স্যার। আপনাকে সেটা বলতে পারছি না। কিন্তু স্যার, ভেতরের কথা আপনাকে খুলে বলতে পারব না সবটা। তবে শুনুন, বিমল আগরওয়ালার অফিসে আর বাড়িতে দু’জায়গায় সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ রেইড করা হয়েছিল। আর ফার্ম হাউসে সন্ধ্যে থেকেই কড়া ভিজিল্যান্স রাখলেও সেখানে রেইড করা হয়েছিল রাত আটটায়। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা মাত্র মিনিট পনেরো আগেই শেষ হল। তার অফিস, বাড়ি আর ফার্ম হাউস থেকে সব মিলিয়ে প্রায় সাতশ’ কোটি টাকার ব্ল্যাকমানি পাওয়া গেছে। আর বেনামী এবং বেআইনী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার সম্পত্তির দস্তাবেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তা এ’সব তো গেল পুলিশ, সিবিআই, এসিবি, ইনকাম ট্যাক্স, আর অন্যান্য দপ্তরের ব্যাপার। আমরা যে ব্যাপারে ইনভল্ভড ছিলাম সেটা ছিল সিক্রেট সার্ভিসেসের ব্যাপার। আমাদের দেশের সুরক্ষার ব্যাপার। বিমলের ফার্ম হাউসের ওই সিক্রেট চেম্বারের ভেতরের সিক্রেট সেফটা থেকেই আমরা এমন এমন ডকুমেন্টস পেয়েছি যে বিমল আগরওয়ালার বিরূদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা তো চলবেই, ফাঁসির কম সাজা তার হতেই পারে না। আর শুধু বিমলই নয়। বিমলের সাথে সাথে এক্সটারনাল মিনিস্ট্রি আর ডিফেন্স মিনিস্ট্রির বেশ কয়েকজন হোমরা চোমরাও মিনিট চল্লিশেক আগে দিল্লী, চেন্নাই, মুম্বাই, ভাইজ্যাগ আর কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যারেস্টেড হয়েছে। তাদের সকলের বিরূদ্ধেও দেশদ্রোহিতার মামলা শুরু হয়ে গেছে। এর বেশী আর কিছু আপনাকে বলতে পারছি না”।
পরিতোষ সব শুনে বলল, “ওয়েল মিঃ দত্ত, এতোটা যে বললেন, এ জন্যেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মোটামুটি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা। কিন্তু মিঃ দত্ত, আপনারা কি বিমল আগরওয়ালাকে অ্যারেস্ট করেছেন”?
অনির্বান দত্ত বলল, “অপারেশনের সময় আমরা আগরওয়ালাকে তার বাড়ি বা অফিস কিংবা ফার্ম হাউস কোথাও দেখতে পাইনি। তবে তার বাড়িতে রেড চলাকালীনই তার স্ত্রীর কাছে খবর এসেছিল যে তার স্বামীর গাড়ি বম্ব ব্লাস্টে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর তার স্বামীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা তার স্ত্রীকে সঙ্গে করেই সেই হাসপাতালে পৌঁছই। সেখানে আন্ডার ট্রিটমেন্ট অবস্থাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও সে হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। ডক্টররা বললেন আরও দু’দিন তাকে ওয়াচে রাখা হবে। তবে আপাততঃ তাকে কলকাতা পুলিশের হেপাজতেই রেখে যাচ্ছি আমরা”।
পরিতোষ এবার বলল, “আচ্ছা মিঃ দত্ত, ধরুন এত কিছুর সাথে আপনারা যদি বিমলের নিজের হাতে লেখা তার সমস্ত বেআইনী কাজের স্বীকারোক্তি পেয়ে যান, তাহলে কেমন হয়”?
অনির্বান দত্ত এবার প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “হোয়াট কী বলছেন আপনি স্যার? এটা কী সম্ভব”?
পরিতোষ হেসে বলল, “আমাদের ভারতীয় আধ্যাত্মিকতায় বলে যে একমনে ভগবানকে ডাকলেও নাকি তার দেখা পাওয়া যায়। শুধু একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর নিরলস প্রচেষ্টার দরকার। আর এ তো সামান্য একজন ক্রিমিনালের স্বীকারোক্তি মিঃ দত্ত”।
অনির্বান দত্ত আবার একই ভাবে চেঁচিয়ে বলল, “আই কান্ট বিলিভ ইট। আই জাস্ট কান্ট বিলিভ ইট। আপনি কী করে এটা করলেন স্যার”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “সেটা জিজ্ঞেস করবেন না মিঃ দত্ত। ওটা আমার প্রফেশনাল সিক্রেট। তাই সেটা খুলে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বিমল আগরওয়ালা নিজে হাতে তার সমস্ত কূ-কর্মের কথা আজ সকালেই একটা কাগজে লিখে আমার এক সোর্সের হাতে দিয়েছে। অবশ্য আমি কলকাতার বাইরে আছি বলে সেটা এখনও আমার হাতে পৌঁছয় নি। কিন্তু আমার মনে হয় সেটা আপনার কাছেও খুব গ্রহণ যোগ্য একটা জিনিস হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে আমি এখন তমলুকে আছি। আর আপনারা আজ রাতেই কলকাতা ছেড়ে যাচ্ছেন। তাই সেটা আর কী করে আপনার হাতে ......”
অনির্বান দত্ত এবার নিজেকে সংযত করে বলল, “ইফ ইউ আর নট জোকিং, তাহলে স্যার আমি সেটা নেবার জন্য আরও একটা দিন থেকে যেতে পারি। প্লীজ যে করেই হোক, আগামীকালের মধ্যে আপনি সে জিনিসটা আমার কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করুন, প্লীজ”।
পরিতোষ মনে মনে একটু ভেবে বলল, “বেশ মিঃ দত্ত। আমি সেটা করবার চেষ্টা করছি। তাহলে শুনুন, আপনাকে আগামীকাল বিকেল ঠিক সাড়ে তিনটেয় হাওড়া ষ্টেশনের জেন্টস টয়লেটে যেতে হবে। মেইন এন্ট্রান্স দিয়ে ভেতরে ঢুকে বাঁদিকে গেলেই জেন্টস টয়লেট দেখতে পাবেন। আমার একজন বিশ্বস্ত লোক সেখানে কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে থাকবে। আপনি সেখানে গিয়ে অমন কাউকে দেখতে পেলেই আমাকে একটা ফোন করবেন। আমি তখন তাকে ফোন করে আপনার হাতে সেটা দিয়ে দিতে বলব। তবে মিঃ দত্ত, বুঝতেই তো পারছেন এ’সব ব্যাপারে কত কিছু গোপন রাখতে হয়। আপনি দয়া করে তার নাম ঠিকানা জানতে চাইবেন না, আর তাকে অন্য কোনও প্রশ্নও করবেন না, প্লীজ”।
অনির্বান দত্ত বললেন, “ওকে স্যার, তাই হবে। আমি কাল ঠিক সময়েই সেখানে পৌঁছে যাব। আপনাকে আমি কী বলে যে ধন্যবাদ জানাব, তার ভাষাই আমার মুখে জোগাচ্ছে না স্যার। তবে যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন আপনার কথা আমি ভুলতে পারব না। আর এর পরেও আমি মাঝে মাঝে আপনার সাথে যোগাযোগ করব। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার”।
পরিতোষ তাকে ‘বাই’ বলে ফোন কেটে দিয়েই শেখরকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “শেখর, তোকে বিকেলে ফোন করে যেটা বলেছিলাম, সেটা করেছিস”?
শেখর বলল, “হ্যাঁ স্যার, হিসেবটা করেছি। কিন্তু স্যার অন্যান্য বারের মত আমাদের কি আর এবার দেখা হচ্ছে না”?
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ দেখা হবে। তবে দু’দিন হল আমি কলকাতার বাইরে আছি একটা বিশেষ কাজে। কয়েকদিন বাদে কলকাতা ফিরব। তাই কলকাতা না যাওয়া পর্যন্ত দেখাটা হচ্ছে না। কিন্তু ফান্ড তো হাতে চলে এসেছে। ওটা যত তাড়াতাড়ি ডিস্ট্রিবিউট করে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। তুই তোর হিসেব মত বল সব মিলে তোর কত পেমেন্ট করতে হবে”।
শেখর জবাবে বলল, “স্যার হিসেব তো আমি করেছি মোটামুটি। তাতে আমার আর বিপ্লবের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা হচ্ছে”।
পরিতোষ সে’কথা শুনেই বলল, “ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ। তোর সাথে পরে কথা বলছি” বলে ফোন বন্ধ করল।
এমন সময়েই তার ঘরে ডিনার সার্ভ করা হল। এক মূহুর্ত ভেবে সে ডিনার সেরে নিল। তারপর রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ডক্টর দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে ফোন করল। দু’বার রিং হতেই সাড়া পেয়ে পরিতোষ বলল, “ডক্টর, পরিতোষ হিয়ার। ও’দিকের কী খবর? আপনি কি এখনও আপনার হাসপাতালেই আছেন স্যার”?
ডঃ দিব্যেন্দু বললেন, “না স্যার, আমি এইমাত্র বাড়ি ফিরলাম। কিন্তু আপনাকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না”।
পরিতোষ শান্তভাবে বলল, “ডক্টর আমি আসলে গতকালই একটা বিশেষ কাজে তমলুক চলে এসেছি। আজও এখানেই আছি। তা ও’দিকের খবর কী? অপারেশনটা সাকসেসফুল হয়েছে তো”?
ডঃ দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “হ্যাঁ স্যার, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু স্যার সব কিছু দেখে শুনে আমি তো প্রায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বাপরে! পুলিশ তো পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিসেসের গোয়েন্দারা পর্যন্ত হাসপাতালে এসে হাজির হয়েছে। হাসপাতালের বেডে অজ্ঞান অবস্থাতেই তারা বিমল আগরওয়ালাকে অ্যারেস্ট করেছে! এ’সব ব্যাপারে তো স্যার আগে আপনি কিছু বলেন নি”?
পরিতোষ বলল, “সিক্রেট সার্ভিসেসের লোকদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না স্যার। আর আমার প্ল্যানের সাথে তারা কোনভাবেই জড়িত ছিল না। তারা হয়ত অন্য কোনও ব্যাপারে বিমলের পেছনে লেগেছিল। আমার অপারেশনের সঙ্গে তাদের অপারেশনটা হয়ত কোনভাবে কোয়েনসাইড করে গেছে। এ ব্যাপারে আমিও আগে থেকে কিছু জানতাম না। একটু আগেই সেটা জানতে পারলাম আমি। তবে তারা কেন বিমলকে অ্যারেস্ট করেছে, সে ব্যাপারে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি আপনার কাছে শুধু আমাদের প্ল্যানটা কতদুর সাকসেসফুল হয়েছে সেটাই জানতে চাইছি”।
ডক্টর দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “আমাদের প্ল্যান মাফিক সব কিছুই সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। ঠিক আটটা দশে অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছেছিল। ইমারজেন্সীতে তখন এক জুনিয়র ডাক্তার ছিল। পেশেন্টের নেচার অফ ইনজুরি দেখেই সে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি গিয়ে দেখি পেশেন্ট সেন্সলেস। দেখেই বুঝলাম যে একটা মাঝারী ধরণের কার্ডীয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। আর তার কাঁধে পিঠে কিছু কিছু মাইনর ইনজুরি থাকলেও সবচেয়ে বেশী ইনজুরি হয়েছিল তার মেল অর্গানে। মানে যাকে সাধারণ বাংলায় আমরা যৌনাঙ্গ বলে থাকি। শুনেছি সেখানে নাকি একটা বম্ব ব্লাস্ট করেছিল। সেই বম্বের স্প্লিন্টারের আঘাতেই বুঝি অমনটা হয়েছিল। এমনিতেও তো তার শরীরের ওই অঙ্গেই আমার অপারেশন করবার কথা ছিল। তাই একসঙ্গে দুটো অপারেশনই করে ফেলেছি। আর স্ট্রোকের এফেক্টটাও ঘন্টা খানেকের মধ্যে অনেক কমে গিয়েছিল। এখনও পেশেন্ট আইসিইউতে আছে। এখনও সেন্স ফিরে আসেনি। আগামী ছত্রিশ ঘন্টা তাকে কনস্ট্যান্ট ওয়াচে রাখতে হবে। এরমধ্যে সেন্স ফিরলে অন্যান্য ডাক্তাররাই তাকে পরীক্ষা করবে। তখন আর আমার দরকার পড়বে না। তবে আপনি আমাকে যে দায়িত্বটা দিয়েছিলেন, সেটা পালন করতে আমাকে একটুও কষ্ট পেতে হয় নি। হাসপাতালের অন্য নার্স বা ডক্টররা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। আর পেশেন্টকে ওটি থেকে বের করবার আগেই সেখানে পুলিশ আর সিক্রেট সার্ভিসেসের অফিসারেরা পৌঁছে যাওয়াতে আমাকে আর আলাদা ভাবে কোনও হ্যাপা পোয়াতে হয়নি। পেশেন্টের ইনজুরি কেমন হয়েছে আর কন্ডিশন কেমন আছে, এটুকু জানিয়ে দিতেই তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন”।
পরিতোষ যে’কথাটা বিশেষ ভাবে শুনতে চেয়েছিল সেটা শুনতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “বাঃ, আপনাকে যে কোন ঝামেলায় জড়াতে হয়নি সেটা শুনে খুব ভাল লাগল। কিন্তু স্যার, আমার উদ্দেশ্যটা সফল হবে তো? মানে ভবিষ্যতে বিমল আগরওয়ালা আবার ......”
পরিতোষকে বাধা দিয়েই ডক্টর দিব্যেন্দু বললেন, “আপনি যেটা চেয়েছিলেন, সেটা পুরোপুরি ভাবেই হয়ে গেছে স্যার। পেশেন্ট চিরতরে সেক্স পাওয়ার হারিয়েছে। শুধু ইম্পোটেন্ট হয়ে যাওয়াই নয়, এখন সে হাজার চেষ্টা করেও নিজের ইরেকশান পাওয়ার আর ফিরে পাবে না”।
পরিতোষ এবার খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। এটা করতে না পারলে আমার বোনটাকে বোধহয় আর বাঁচাতে পারতাম না আমি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডক্টর। আচ্ছা, আপনাকে এখন আর ডিসটার্ব করছি না। আপনি বরং একটু রেস্ট নিন। বৌদিকে আমার প্রণাম জানাবেন আর মামনিকে আমার ভালবাসা দেবেন। আপনার সাথে পরে আবার কথা বলব। আজ রাখি” বলে ফোন কেটে দিল।
আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে একমনে কিছু ভাববার পর পরিতোষ নিজের অফিসিয়াল মোবাইল থেকে কাউকে ফোন করল। রাত তখন প্রায় দশটা। বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ওদিকের সাড়া পেয়ে পরিতোষ বলল, “কোথায় আছ শ্যামল”?
অপরদিক থেকে শ্যামল নামের লোকটা জবাব দিল, “আর বলবেন না স্যার, বড় বাজে ভাবে ডিউটিতে ফেঁসে গেছি। বাইপাসের কাছাকাছি একটা প্রাইভেট নার্সিংহোমে আছি এখন। আর খুব সিরিয়াস ব্যাপার। সাংঘাতিক হাই প্রোফাইল কেস”।
পরিতোষ কিছু না জানার ভাণ করে জিজ্ঞেস করল, “নার্সিংহোমে? কোনও অ্যাকসিডেন্ট কেস নাকি”?
শ্যামল বলল, “শুধু কি অ্যাকসিডেন্ট কেস স্যার? সারা দেশ জুড়ে হুলুস্থুল পড়ে গেছে। আমাদের কলকাতা পুলিশ বা ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের কথা ছেড়েই দিন, আমরা তো চুনোপুটি স্যার। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট সিবিআই, এন্টি করাপশন ব্যুরো, এনফোর্সমেন্ট আর সিক্রেট সার্ভিসেসের গোয়েন্দারা, সবাই এ কেসে জড়িয়ে আছে। আসল কালপ্রিট বিমল আগরওয়ালা এই নার্সিংহোমের আইসিইউতে আছে। সেখানেই আমার ডিউটি পড়েছে”।
পরিতোষ অবাক হবার ভাণ করে বলল, “বিমল আগরওয়ালা মানে ওই বিল্ডার বিমল আগরওয়ালা? যার সেন্ট্রাল কলকাতার অফিস আর দক্ষিণেশ্বরের ওদিকে ফার্ম হাউসে বছর দেড়েক আগেও কলকাতা পুলিশ আর সেন্ট্রাল এজেন্সী রেড করেছিল”?
শ্যামল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, ওই বিমল আগরওয়ালাই। আর স্যার, শুধু বছর দেড়েক আগের কথাই নয়। শুনলাম এর আগেও নাকি বহুবার আগরওয়ালার অফিসে আর ফার্ম হাউসে আলাদা আলাদা ভাবে অনেক সরকারি এজেন্সীই নাকি নানা সময়ে রেড করেছে, খানা তল্লাশী করেছে। কিন্তু তারা কোনভাবেই আগরওয়ালার বিরূদ্ধে কোন কিছুই খুঁজে পায়নি। কিন্তু এবারে তাদের হাতে সলিড ইনফরমেশন আর ক্লু ছিল। তাই একসঙ্গে তার অফিস, বাড়ি আর ফার্ম হাউসে রেড করা হয়েছে। আমি অবশ্য ওইসব জায়গায় ছিলাম না। তবে শুনেছি তিন জায়গা থেকেই নাকি অনেক কিছু আপত্তিজনক ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্ল্যাকমানি আর বেনামী সম্পত্তি সীজ করা হয়েছে। কিন্তু আগরওয়ালা লোকটা ওই সব জায়গায় ছিল না”।
পরিতোষ আবার অজানার ভাণ করে বলল, “ওহ, সেই বদমাশটা তাহলে ধরা পড়েনি। নিশ্চয়ই আগে থাকতে কোন খবর পেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি তো বললে সে হাসপাতালের বেডে আছে। তাহলে”?
শ্যামল বলল, “না স্যার, ঠিক তা নয়। সে বোধহয় কোন একটা কাজে বারুইপুরের ওদিকে কোথাও গিয়েছিল। এদিকে সন্ধ্যের দিকে আমাদের বারুইপুর থানায় একটা খবর এসেছিল যে অ্যাস কালারের একটা বিদেশী গাড়িতে নাকি বম্ব প্লান্ট করা হয়েছে, আর সেটা নাকি ঠিক সওয়া সাতটায় ব্লাস্ট করবে। সে খবর পেয়েই আমাদের বারুইপুর থানার একটা টিম বম্ব স্কোয়াডের লোকজনদের নিয়ে চারপাশে খানা তল্লাশি শুরু করে দিয়েছিল। বারুইপুর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পশ্চিমে একটা প্রায় ফাঁকা রাস্তায় আগরওয়ালার অ্যাস কালারের গাড়িটা দেখতে পেয়ে পুলিশ সে গাড়িটাকে থামায়। আর গাড়ির পেছনের ডিকিতে বম্ব দেখতে পেয়েই আগরওয়ালাকে গাড়ি থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বম্ব স্কোয়াডের লোকেরা তখন প্রায় একশ’ গজ দুরে ছিল। তারা গাড়িটার দিকে রওনা হতেই বম্বটা ব্লাস্ট করে গেছে। গাড়িটা তো একেবারে চুরমার হয়ে গেছে। তবে আগরওয়ালাকে গাড়ি থেকে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে যাবার আগেই বম্বটা ব্লাস্ট করেছিল বলে পুলিশের লোকেরা তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হয়নি। তার শরীরের পেছন দিকে অনেক জায়গায় ছোটখাট ইনজুরি হয়েছে। আর খুব সম্ভবত তার কোমড়ের নিচে বম্বের কোন স্প্লিন্টার বা শক্ত মতন কোনকিছু এমনভাবে আঘাত করেছে যে তার যৌনাঙ্গটা খুব সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স কাছাকাছি ছিল বলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। গড়িয়ার কাছাকাছি প্রথম যে বেসরকারী নার্সিংহোম পাওয়া গেছে সেখানেই তাকে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করেই সাথে সাথে বলল যে তার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। তাকে সাথে সাথে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ইনজুরি গুলোর ট্রিটমেন্ট করা হয়। যৌনাঙ্গে অপারেশন করে ভেতর থেকে কয়েকটা মরচে ধরা লোহার টুকরো বের করা হয়েছে। ঘন্টাখানেক পর তাকে মোটামুটি নিরাপদ করে তোলার পর তাকে আইসিইউতে শিফট করা হয়েছে। সেন্ট্রাল এজেন্সীর লোকেরা সেখানেই তাকে অ্যারেস্ট করে আমাদের হাতে ছেড়ে গেছে। তাই আমাকেও এখানে ডিউটিতে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছে এখনও ছত্রিশ ঘন্টা তাকে কনস্ট্যান্ট অবজারভেসনে রাখতে হবে। তবে তার আর প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। কিন্তু তার যৌনাঙ্গটা এমন সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে ডাক্তাররা মনে করছে যে তার যৌনাঙ্গ আর কখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে না। আমিও এখানে সিকিউরিটি থাকতে বাধ্য হয়েছি”।
পরিতোষ সবটা শুনে মনে মনে আরও আশ্বস্ত হয়ে একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, “কি আর করবে বলো? আমাদের কাজই তো এমন। কখন কিভাবে কোথায় আমরা আটকে যাই, তা কি আর সবসময় আগে থেকে বোঝা যায়? এই আমাকেই দ্যাখো না। তমলুকে আসবার সময় ভেবেছিলাম যে একদিনেই এখানকার কাজ সারা হয়ে যাবে। কিন্তু লাগল দু’দিন। এখন আবার এখান থেকে আরেক জায়গায় যেতে হবে। হয়ত আগামী তিন চারদিনের মধ্যেও কলকাতা ফেরা হবে না। কিন্তু সবটাই মেনে নিতে হবে। ডিউটি ইজ ডিউটি। আচ্ছা শ্যামল, অনেকক্ষণ তোমাকে ফোনে আটকে রেখেছি। তুমি বরং তোমার ডিউটিতেই মন দাও ভাই। পরে দেখা হবে। রাখছি” বলে ফোন কেটে দিল।
______________________________