Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 218)

সীমন্তিনী বলল, “ওদের বিচার এ কোর্টে তো হবেনা রে রচু। ওরা যে এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাই ওদের বিচার হবে জুভেনাইল কোর্টে। সেখানেই যা হয় হবে। হয়তো কয়েক বছরের জন্য ওদের কোন হোমে থাকতে হবে। তবে সেটা নিয়ে জুভেনাইল কোর্টে আলাদা ভাবে শুনানী টুনানী হবার পরেই সেখানে রায় দেওয়া হবে”।
 

রচনা এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দিদিভাই, বাড়িতে গিয়ে দিদি আর নীতাদির কোনও কষ্ট হয়নি তো? না মানে, আমি তো জানিই আমাদের বাড়ির সকলেই খুব ভাল। কাউকে তারা কোনও কষ্ট দেবেন না। তবু নীতাদি আর দিদির অতীত নিয়ে কেউ কিছু বলেনি তো? মানে ওখানে গিয়ে তারা কেউ কোন অস্বস্তি ফিল করেনি তো”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “তোর দিদি ওই বাড়ির সকলের আদরের বৌমার দিদি। তুই এটা ভাবছিস কি করে যে তারা কেউ অর্চুর মনে কোন কষ্ট দিতে পারে? আর নীতার সাথেও সকলেই খুব ভাল ব্যবহার করেছে। আজ তো তারা কেউ আমাদের আসতেই দিতে চাইছিল না। নেহাত অর্চুর কোর্ট কেস ছিল বলেই তারা আর কোনরকম জোরাজুরি করেনি। আচ্ছা নে, তুই তোর দিদির মুখ থেকেই সেটা শোন” বলে অর্চনার হাতে ফোন দিতেই অর্চনার নিজের ফোনটা বেজে উঠল।

তা দেখে সীমন্তিনী অর্চনার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বলল, “এই যে ভাই ফোন করেছে। তুই রচুর সাথে কথা বল, আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলছি” বলে অর্চনার ফোনটা নিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল। কিংশুক জানালো কিছুক্ষণ আগেই মিঃ রায় তাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। ত্রিলোচন আচার্যি আর তার স্ত্রীকে কোর্ট যে সাজা দিয়েছে তাতে বাড়ির সকলেই খুব খুশী হয়েছে। আর বিধুবাবু জানালেন যে সুরজিত অধিকারী বাড়ি থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জেরক্স করে নিয়ে গেছেন ক’দিন আগেই। সীমন্তিনীও তাদের সকলের কুশলবার্তা জানিয়ে কথা সারলো।

নিজের ঘরে ফিরে এসে দেখে নবনীতা তখন রচনার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। সীমন্তিনী বিছানায় বসে ভাবতে লাগল, পরি কি সত্যিই আজ আর ফোন করবে? কোর্টে ঢুকবার ঠিক আগেই ফোন করে জানিয়েছিল যে আজই বিমল আগরওয়ালার ফাইনাল অপারেশন হচ্ছে। আর এটাও বলেছিল যে রাত ন’টা নাগাদ অপারেশনটা শেষ হয়ে যাবে। ন’টা তো অনেক আগেই বেজে গেছে। ভেতরে ভেতরে খুব টেনশন হচ্ছে তার। একটুখানি সময়ের জন্যে ফোন করেও পরি যদি তাকে জানাত যে অপারেশনটা সাকসেসফুলি শেষ হয়ে গেছে, তাহলেও তার মনটা কিছুটা শান্ত হত। কী ভাবে কী সব হল সেখানে, তা জানতে তার মনটা ছটফট করছে।

নবনীতার কথা শেষ হতে সে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে বাড়িয়ে দিল। সীমন্তিনী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে যে এরমধ্যে দুটো কল এসেছিল মহিমার কাছ থেকে। সীমন্তিনী ভাবল আগের দিনই তো মহিমার সাথে তার কথা হয়েছে। এখন আবার কী বলতে চাইছে সে? কিন্তু মহিমাকে ফোন না করে সে আগে পরিতোষের নাম্বার ডায়াল করল। কিন্তু পরিতোষের ফোন ব্যস্ত। দু’তিনবার ফোন করেও বারবারই বিজি টোন পেল সে। তাতেই সীমন্তিনী বুঝে গেল যে পরিতোষ নিশ্চয়ই ভীষণ ব্যস্ত আছে। সীমন্তিনী ভাবল, একবার মহিমাকে ফোন করে দেখাই যাক, কী জন্যে সে এখন ফোন করছিল। এই ভেবে সীমন্তিনী মহিমার নাম্বার ডায়াল করতেই মহিমা প্রায় সাথে সাথে সাড়া দিয়ে উত্তেজিত স্বরে বলল, “ওহ, মন্তি, দু’দুবার তোমাকে ফোন করে তোমার ফোন বিজি পেলাম। এদিকে একটা সাংঘাতিক খবর আছে তোমাকে দেবার মত”।

সীমন্তিনী মহিমার উত্তেজিত স্বর শুনে চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে বৌদি? সব ঠিক আছে তো? তুমি ঠিক আছ তো”?

সীমন্তিনীর অমন কথা শুনে অর্চনা আর নবনীতাও চমকে উঠল। ও’দিক থেকে মহিমা বলল, “না না মন্তি, আমার কিছু হয়নি। আমি, রচনা আর রতীশ সকলেই ভাল আছি। কিন্তু যে খবরটা তোমাকে বলতে যাচ্ছি সেটা শুনে তুমিও চমকে যাবে। আচ্ছা এর পেছনে কি তোমার কোনও হাত ছিল মন্তি”?

সীমন্তিনী মহিমার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বলল, “তুমি কিসের কথা বলছ বৌদি, আমি তো কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা গো। কী হয়েছে? একটু খুলে বলো না প্লীজ”।

মহিমা প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি মন্তি। একটু আগেই খবরটা আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। আর সেটা শুনেই আমি প্রথমেই তোমাকে খবরটা জানাতে চাইছিলাম। শোনো, আজ প্রায় ঘন্টা দেড়েক আগে বারুইপুর ছাড়িয়েও অনেকটা দুরে একটা জায়গায় বিমলের গাড়িতে একটা বম্ব বার্স্ট হয়েছে। বিমল নাকি গাড়িতে একাই ছিল, নিজেই ড্রাইভ করছিল। পুলিশের কাছে নাকি খবর ছিল যে ওই রঙের কোন একটা গাড়িতে দুষ্কৃতীরা বম্ব রেখেছে, তাই পুলিশ সেখানে সব ক’টা গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে চেক করছিল, বিমলের গাড়িটাকেও পুলিশ থামিয়েছিল। সেটা থামিয়ে চেক করতে গিয়েই সেটাতে বম্ব দেখতে পেয়েই পুলিশের লোকেরা নাকি বিমলকে গাড়ি থেকে দুরে কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। বম্ব স্কোয়াডের পুলিশও নাকি সেখানে ছিল। কিন্তু তারা কিছু করে ওঠবার আগেই, আর বিমল নিরাপদ দুরত্বে যাবার আগেই নাকি বম্বটা বার্স্ট করেছে। পুলিশের সহায়তায় বিমল প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশ ভাল রকম জখম হয়েছে শুনেছি। ওকে নাকি অজ্ঞান অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে নাকি ওর কিছু একটা অপারেশনও করা হচ্ছে”।

উত্তেজিত ভাবে একদমে এতগুলো কথা বলে মহিমা থামতেই সীমন্তিনী খুশীতে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কী বলছ বৌদি? সত্যি”?

মহিমাও খুশীতে উৎফুল্লভাবে বলল, “হ্যাঁ মন্তি। আমি একদম ঠিক বলছি। অবশ্য বিমল ওখানে কেন গিয়েছিল, তার অবস্থা কতটা সিরিয়াস এ ব্যাপারে এখনও বেশী কিছু জানতে পারিনি। তবে যেটুকু শুনেছি, তাতে যে কোনও ভুল নেই এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তুমি আমাকে বলেছিলে যে বিমলকে তুমি শায়েস্তা করবার চেষ্টা করবে। তাই তো আমার মনে হল যে এ’সবের পেছনে হয়ত তুমিই আছ। তুমি সত্যিই এ ব্যাপারে কিছু জানো না মন্তি”?

সীমন্তিনী এবার নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখবার প্রয়াস করে জবাব দিল, “তুমি কী যে বল না বৌদি। হ্যাঁ, বিমল আগরওয়ালাকে শায়েস্তা করবার কথা আমি তোমাকে বলেছি ঠিকই। কিন্তু সে তো মাত্র কয়েক দিন আগের কথা। আমি তো এখনও সে ব্যাপারে কোনও ডিসিশন নিতেই পারিনি। তবে মনে মনে একটা প্ল্যান ঠিকই বানিয়েছিলুম। আর সে জন্যেই সেদিন তোমাকে বলেছিলুম যে বিমল আগরওয়ালার হাত থেকে তুমি খুব অল্পদিনের ভেতরেই মুক্তি পাবে। কিন্তু ওই প্ল্যান করা টুকুই সার। আমি তো সে কাজে এখনও হাতই দিই নি। আর তাছাড়া আমি আমার অফিস ছাড়াও তোমার প্রজেক্ট নিয়ে আর রচুর বাপের বাড়িতে বাড়ি বানাবার ব্যাপার নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত আছি যে বিমলের কাজটা শুরুই করতে পারিনি। আর হাতে মাস ছয়েক সময় ছিল বলেই ভেবেছিলুম যে ওটা নিয়ে ক’দিন বাদে ভাবলেও চলবে। কিন্তু আগে আমাকে বাড়ি তৈরী আর তোমার প্রজেক্টের কাজটা শুরু করে দিতে হবে। আর তোমাকে তো আমি কালই বললুম যে রচনার দিদির বিয়ের ব্যাপার নিয়েও আমি খুব ব্যস্ত আছি। তোমার প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়ে গেছে, কালচিনির বাড়ি তৈরীর ব্যাপারেও লোক লাগিয়ে দিয়েছি। তাই এখন আমার সামনে রচনার দিদির বিয়েটা দেওয়াই সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ। আর আমি গত কয়েকদিন ধরে সেটা নিয়েই ভাবছি। কিন্তু তোমার মুখে এ খবর শুনে আমিও চমকে গেছি গো বৌদি। তবে আমি বিমলের জন্য এ’রকম কোনও প্ল্যান ভাবিও নি। তুমিই তো বললে যে বিমল এখনও বেঁচে আছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই সে যে তোমার কথা আর রচুর কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেবে তা তো নয়। আমি অন্যভাবে এমন একটা কিছু প্ল্যান করবার চেষ্টা করছিলাম যে ও যেন ভবিষ্যতে তোমার আর রচুর ওপর কোন নজর দিতে না পারে। তবে দেখা যাক, আমি তো সেখান থেকে প্রায় পাঁচশ’ মাইল দুরে আছি বৌদি। তাই তুমিই বরং বিমলের ব্যাপারে ভাল করে খবরাখবর নেবার চেষ্টা করো। কিভাবে কী হয়েছে, আর বিমলের বর্তমান শারীরিক অবস্থা কেমন, এ’সব জানতে পারলে আমাকে কিন্তু অবশ্যই জানাবে বৌদি। জানিনা, অনেক ভেবে চিন্তে যে একটা প্ল্যান বানিয়েছিলুম সে প্ল্যানও এবার ভেস্তে যাবে কি না। হয়ত আমাকে আবার নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে হবে”।

মহিমা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আরও খবর নেবার চেষ্টা করছি। আর নতুন কিছু জানতে পারলেই তোমাকে জানাব। এখন রাখছি, বাই” বলে ফোন কেটে দিল।
 

সীমন্তিনী ফোন নামিয়ে রাখতেই নবনীতা আর অর্চনা একসাথে তার কাছে জানতে চাইল যে কার কী হয়েছে? সীমন্তিনী আনন্দে দু’জনকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “হয়ে গেছে রে অর্চু, হয়ে গেছে। আমার রচু সোনা এখন বিপদমুক্ত। ওই বিমল আগরওয়ালা আর রচুর কোন ক্ষতি করতে পারবে না”।

নবনীতা আর অর্চনাও একসাথে খুশীতে চিৎকার করে উঠল। নবনীতা বলল, “সত্যি বলছ দিদি? বৌদির ওপর থেকে সত্যি বিপদ কেটে গেছে”?

সীমন্তিনী খুশীতে তাদের দু’জনকে আগের মতই নিজের সাথে চেপে ধরে রেখে বলল, “হ্যাঁরে সত্যি, সত্যি। শুনলি না মহিমা বৌদি কী বলল? বৌদি বলল যে বিমলের গাড়িতে একটা বম্ব ব্লাস্ট হয়েছে, কিন্তু পুলিশের সাহায্যেই বিমল প্রাণে বেঁচে গেছে। তবে সে এখনও হাসপাতালে আছে”।

অর্চনা আর নবনীতা সীমন্তিনীর উচ্ছ্বাস দেখে চমৎকৃত হলেও তারা বুঝতে পারল না বিমলের গাড়িতে একটা বম্ব বার্স্ট হয়েছে বলেই রচনার ওপর নেমে আসা বিপদটা কি করে কেটে যেতে পারে? হ্যাঁ, একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তা নয় ঠিক। কিন্তু ওই অ্যাকসিডেন্টে বিমল আগরওয়ালা তো আর মারা যায়নি। সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার তো রচনার পেছনে লাগতেই পারে!

নবনীতা এমন আশঙ্কার কথা সীমন্তিনীকে বলতেই সীমন্তিনী জবাবে বলল, “আরে সেটাই তো আমাদের রবিনহুডের কামাল রে”


নবনীতার সাথে সাথে অর্চনাও চমকে উঠল এ’কথা শুনে। নবনীতা দম বন্ধ করে জিজ্ঞেস করল, “কি বলছ তুমি দিদি? তুমি বলছ পরি এ’সব করেছে”?

সীমন্তিনী এবার নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখবার চেষ্টা করে বলল, “আরে পরি তো বিমলকে মেরেই ফেলতে চাইছিল। আমিই ওকে বলেছিলাম যে কোন রকম খুনোখুনি যেন ও না করে। তাই আমি জানি বিমল যে বেঁচে গেছে, তা ওই পরির জন্যেই বেঁচেছে। নইলে ওই বম্ব ব্লাস্টেই ও মরে যেত”।

নবনীতা হতভম্বের মত বলল, “তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই তো বুঝতে পারছি না গো দিদি”।

সীমন্তিনী নিজের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে করতে বলল, “সে তো আমিও সব কিছু বুঝতে পারছি না রে নীতা। পরির সাথে কথা না হওয়া অব্দি গোটা ব্যাপারটা আমার কাছেও স্পষ্ট হবে না। আর পরিও যে আমায় সব কিছু খুলে বলবে না সেটাও জানি। কিন্তু তোরা যদি আমাকে বিশ্বাস করিস, তাহলে নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখ, আমাদের রচুসোনা এখন সম্পূর্ণভাবে বিপদমুক্ত হয়ে পড়েছে। উঃ পরি যে কখন ফোন করবে কে জানে। যদিও দুপুরে বলেছিল যে রাতে ফুরসৎ পেলে ও ফোন করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আজ রাতে ও আর কোন ফোন করবে বলে মনে হয় না। তবে ওর ফোন না পাওয়া অব্দি আমিও তোদেরকে এর চেয়ে বেশী কিছু বোঝাতে পারব না। কিন্তু আমাদের রচু সোনার যে আর কোন বিপদ হবে না, এ ব্যাপারে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। আচ্ছা, তোরা এবার আমাকে একটু ছাড় তো। আজ দিনটা খুব ভাল গেল রে। দু’দুটো সুখবর আমরা পেলুম। দাঁড়া দাঁড়া, আগে আমি ঠাকুরকে প্রণাম করে আসি” বলেই বিছানা থেকে নেমে ঠাকুর ঘরের দিকে দৌড়ে গেল।

নবনীতা আর অর্চনাও তার পেছন পেছন ঠাকুর ঘরে এল। সীমন্তিনী প্রদীপ আর ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ঠাকুরের সামনে হাতজোড় করে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে সে যে ঠাকুরের কাছে কী বলল সেটা নবনীতা আর অর্চনা জানতে না পারলেও তারা দেখল যে সীমন্তিনীর দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে।


*****************

রাত তখন প্রায় ন’টা। সারাদিন কাজের শেষে পরিতোষ তমলুকে পুলিশের গেস্ট হাউসে এসেই রুমের দড়জা বন্ধ করে আব্দুলকে একটা মিস কল দিল। মিনিট খানেক বাদেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে একটা কল এল তার মোবাইলে। কলটা রিসিভ করেই সে বলল, “হ্যাঁ, বল কী খবর”।

ও’পাশ থেকে আব্দুল বলল, “স্যার আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে। আর সেটা করতে একচুলও গড়বড় হয়নি। হুবুহু প্ল্যান মতই কাজটা সারা হয়ে গেছে”।

পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “তুই স্পটে যাসনি তো”?

আব্দুল জবাব দিল, “না না স্যার। আমি তো আজ সকাল থেকে নিজের বাড়ি আর গ্যারেজ ছেড়ে কোত্থাও যাইনি। দুপুরের অপারেশনের খবর তো আপনাকে আগেই দিয়েছি। ফাইনাল অপারেশনটাও ঠিক সময় মতই সেরে ফেলা গেছে। অ্যাম্বুলেন্স ঠিক রাত আটটা দশে হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। আর সেখানে কেসটা আমাদের ডাক্তার বাবুর হাতেই গিয়ে পড়েছে। বাকি কাজটা তো তারই”।

পরিতোষ আবার জিজ্ঞেস করল, “আর অন্যান্য দিকের খবর কিছু পেয়েছিস”?

আব্দুল জানাল, “সে’দিকেরও খুব ভাল রিপোর্ট পেয়েছি স্যার। আজ সন্ধ্যে ঠিক সাড়ে ছ’টায় ওই হারামীটার অফিসে কুড়ি বাইশ জনের একটা দল হানা দিয়েছিল। সব মিলে আটটা গাড়িতে তারা এসেছিল। অবশ্য তাতে কোন কোন ডিপার্টমেন্টের লোক ছিল, সে ব্যাপারে সঠিক জানতে পারিনি। তবে ওর অফিস বিল্ডিঙের চারপাশে লোকাল পুলিশ মোতায়েন ছিল। আর একই সময়ে, হারামিটার বাড়িতেও ছ’টা গাড়িতে পনেরো জনের একটা দল ছাপা মেরেছিল। আর ফার্ম হাউসে আরও বড় একটা দল হানা দিয়েছিল। সেখানে শুনেছি প্রায় তিরিশ থেকে পয়তিরিশ জন লোক রাত আটটায় গিয়ে রেড করেছিল। সেখানে সব মিলিয়ে গোটা পনেরো গাড়ি ছিল। আর ফার্ম হাউসের চারপাশে প্রচুর পরিমানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে ফার্ম হাউসে অপারেশন এখনও চলছে কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই খবর পেলাম যে বাড়ির টিমটা তাদের কাজ সেরে চলে গেছে। আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তারা ওই হারামীর বৌটাকেও সাথে নিয়ে বেরিয়েছে। ছেলেটাকে সাথে দেখা যায়নি। তবে বাড়ি থেকে চলে যাবার সময় তিনটে গাড়ি অন্য গাড়ি গুলোর সাথে না গিয়ে অন্য রাস্তায় গেছে। আর সব শুনে মনে হল ওই গাড়ি তিনটে বোধহয় নার্সিংহোমের দিকেই যাচ্ছে এখন”।

পরিতোষ সব শুনে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল, “তাহলে এখন তো আর তোর কোনও টেনশন নেই, তাই তো”?

আব্দুল একটু হেসে বলল, “না স্যার টেনশন তো কিছুই নেই। সবকিছুই একেবারে প্ল্যান মাফিক সারা হয়ে গেছে। টুরিস্টার ব্যাগটাও আমার কাছে এসে গেছে। ভেতরে সব ঠিক আছে। আর তার হাতে লেখা জবানবন্দীও আমার হাতে এসে গেছে। শুধু ছোট্ট একটা কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে”।

পরিতোষ বলল, “হু, জানি। ওই বাচ্চা গুলোর কথা বলছিস তো”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার। আসলে ওটা তো আমাদের অরিজিনাল প্ল্যানে এভাবে সাজানো ছিল না। কুত্তার বাচ্চা গুলো উড়ে এসে জুড়ে বসতেই, প্ল্যানে একটু বাড়তি কাজ করতে হল। কিন্ত স্যার, ও’গুলোকে নিয়ে কী করব এখন”?

পরিতোষ বলল, “আজ রাতটা ও’গুলোকে ওখানেই থাকতে দে। খাবার দাবার কিচ্ছু দিবি না। শুধু তিন চারটে জলের কলসী ওই রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিস। আর কাল সকাল আটটার পর সবগুলোকে ন্যাংটো করেই একটা গাড়িতে উঠিয়ে নিতে বলবি। আর প্রত্যেকটাকে তাদের বাড়ি থেকে অন্ততঃ তিনশ’ গজ দুরে ন্যাংটো অবস্থাতেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে বলবি। তখন নিজেদের লজ্জা বাঁচাতেই ওরা ব্যস্ত থাকবে। অন্য কোনও দিকে আর নজর দিতে পারবে না, বুঝেছিস”?
 

আব্দুল হেসে বলল, “সত্যি স্যার, আপনার ব্রেনটাকে পূজো করা দরকার। হা হা। ঠিক আছে স্যার, তাই হবে। আর কোনও অর্ডার আছে স্যার”?

পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ, ওই টুরিস্টার ব্যাগটা জ্বালিয়ে ফ্যাল। আর ভেতরের জিনিসগুলো অন্য আরেকটা এমন ব্যাগে ভরে রাখ যেটা কাঁধে নিয়ে চলতে সুবিধে হয়। আর তোর অপারেশনে সব মিলে কত টাকা পেমেন্ট করতে হবে, তার একটা হিসেব বানিয়ে রাখ এখনই। এখন আর কিছু বলবার নেই। তবে তোর ফোনগুলো হাতের কাছাকাছিই রাখিস। পরে আবার ফোন করব। আর শোন, কাল যদি তোকে বাইরে দুরে কোথাও পাঠাতে চাই, তাহলে যেতে পারবি”?

আব্দুল একটু অবাক হয়ে বলল, “এ কী বলছেন স্যার! আপনি অর্ডার করবেন, আর আমি তা করব না? এ কি কখনও হতে পারে স্যার? আপনি বলুন না কী করতে হবে”?

পরিতোষ বলল, “তাহলে শোন। কাল সকালেই বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দেবার পর তোর টিমের যাকে যতটা পেমেন্ট করা দরকার তা করে দিবি দুপুরের আগেই। বিকেল তিনটে পঞ্চাশে হাওড়া ষ্টেশন থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস বলে একটা ট্রেন ছাড়ে। ওই ট্রেনের আগামীকালের একটা টিকিট কেটে ফ্যাল। নিউ জলপাইগুড়ি যাবার টিকিট কাটবি। পরশু রাত একটা দেড়টা নাগাদ ট্রেনটা নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছবে। বাকি রাতটুকু সেখানে কোনও ওয়েটিং রুমে কাটিয়ে দিস। সেখান থেকে সকাল ছ’টা পাঁচে একটা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ছাড়ে, যেটা ডুয়ার্সের ভেতর দিয়ে আসামের ধুবড়ী ষ্টেশন পর্যন্ত যায়। সেই ট্রেনে উঠে গিয়ে মাল জংশন ছাড়িয়ে যাবার পর নাগরাকাটা বলে একটা ষ্টেশন আসবে। সেখানে নামবি। ওই ট্রেনটার টাইম সিডিউল ঠিক থাকে না। সেখানে নেমে সেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করবি। তখন আমি তোকে বলে দেব, কোথায় যেতে হবে, আর কী করতে হবে। বুঝেছিস”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার, বুঝেছি। কোন অসুবিধা নেই। আমি ঠিক চলে যাব”।

পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে। এখন তাহলে ছাড়ছি। ঘন্টা দুয়েক বাদে আবার তোকে ফোন করব”।

ফোন কেটে চুপচাপ মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই তার দুটো মোবাইল একসাথে বেজে উঠল। একটায় সীমন্তিনীর কল দেখতে পেয়েও সেটা ধরল না। অন্যটা হাতে নিয়ে দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে কলটা এসেছে। কিছুটা ইতস্ততঃ করেও সে কলটা রিসিভ করল। ও’পাশ থেকে শোনা গেল, “গুড ইভিনিং স্যার। অনির্বান দত্ত বলছি”।

পরিতোষ আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠে বলল, “আরে কী আশ্চর্য, আপনি? হঠাৎ”?

(To be cont'd ......)
______________________________
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:52 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)