Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 217)

বিমল হড়বড় করে জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝেছি। তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, কোনও রকম উল্টোপাল্টা কিছুই আমি করব না। আমি সাথে কোন অস্ত্রও নেব না। একদম খালি হাতে, মানে শুধু ওই খামটা নিয়েই যাব। আমি এখনই রওনা হচ্ছি। তবে প্লীজ, আপনি বিকি আর ওর বন্ধুদের কোন ক্ষতি করবেন না”।

লোকটা বলল, “সেটা ডিপেন্ড করছে এখন তোর ওপর আর ওই হারাম খোর মা-চোদা ছেলেগুলোর ওপর। কেউ যদি কোনরকম চালাকি করে তাহলে ওরা কেউ বাঁচবে না। আর হ্যাঁ, তোর মোবাইলটা সঙ্গে আনিস। কিন্তু কাউকে ফোন করবি না। আমি প্রয়োজনে তোকে ফোন করব” বলেই ফোন কেটে দিল। বিমলও সাথে সাথে পোশাক পড়ে শার্টের বুক পকেটে নিজের হাতে লেখা স্বীকারোক্তির খামটা ভরে নিয়ে, আর নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে সবিতাকে সবকিছু বলে বুঝিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।


******************

পুকুরের ধারে গিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গেছে। বিমল গাড়ি থামিয়ে ঘড়িতে সময় দেখল, সন্ধ্যে সাতটা পাঁচ। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দড়জা লক করতে করতেই তার পকেটের ফোন বেজে উঠল। কল রিসিভ করতেই সেই পরিচিত গলা শোনা গেল, “গাড়ি ওখানে রেখে পুকুরের ধার বরাবর এগিয়ে ঠিক উল্টোপাশে চলে আয়। আমি এখানেই আছি”।

বিমল একবার বুক পকেটের কাগজটাকে হাত দিয়ে অনুভব করে ধীরে ধীরে অন্ধকারের মধ্যেই এগিয়ে চলল। প্রায় পঁচিশ গজ যাবার পরেই পুকুরের সীমানা শেষ হয়ে গেল। ঠিক তখনই বাঁদিকে কিছুটা দুর থেকে একটা শক্তিশালী সার্চ লাইটের আলো তার ওপর এসে পড়ল। আর সেই সাথে সাথে ওই আলোর দিক থেকেই সেই পরিচিত গলার কথা ভেসে এল, “এই শুয়োরের বাচ্চা হারামী, এদিকে এগিয়ে আয়”।

বিমল দুরুদুরু বুকে সেদিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই আশপাশ থেকে আরও অনেকগুলো জোরদার সার্চ লাইট জ্বলে উঠল। সবক’টার ফোকাসই বিমলের মুখের ওপর। এতগুলো সার্চ লাইটের আলো একসাথে তার মুখের ওপর পড়তে মূহুর্তের ভেতর বিমলের চোখ ঝলসে গেল। তার চোখে যেন আশেপাশের কিছুই আর নজরে আসছিল না। শুধুই চোখ ঝলসানো আলো। বিমল থেমে যেতেই টর্চগুলো বিমলের খুব কাছাকাছি এসে গেল। আলোর পেছনে কী আছে, কে বা কারা আছে, কিছুই বোঝা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শুধু দেখল, গ্লাভস পড়া একটা হাত আলোর পেছন থেকে বেড়িয়ে এল। সে হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ ধরা। সেই পরিচিত গলার লোকটা আলোর পেছন থেকে বলে উঠল, “এই নে রে হারামজাদা, এই ব্যাগের ভেতর ওই সবগুলো সিডি আছে। কিন্তু এটা নেবার আগে, ওই কাগজটা বের কর”।

বিমল কোনও কথা না বলে কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের শার্টের পকেট থেকে খামটা বের করে এগিয়ে দিল। আর অমনি লোকটা চাপা গলায় খেঁকিয়ে উঠে বলল, “শালা শুয়োরের বাচ্চা, ওটাতে সইটা কে করবে? তোর মরা বাপ? এই নে কলম। ওটায় সাইন কর”।

আলোর ভেতর থেকে আরেকটা গ্লাভস পড়া হাত একটা কলম এগিয়ে দিল। বিমল কলমটা হাতে নিয়ে বলল, “নিচে একটা কিছু পেতে নিলে .......”

তার কথা শেষ না হতেই সার্চ লাইটের আলোর পেছন থেকেই একটা ছোট্ট টেবিল যেন নিজে থেকেই বিমলের সামনে এসে গেল। লোকটা বলল, “নে। এটার ওপর রেখে প্রত্যেকটা পাতায় সই কর। আর ওপরে একটা সাদা খালি পাতা রেখেছিস তো? সেটাতে তোর নাম ঠিকানা আর তোর বাবার নাম লিখে দে। আর তার নীচে লিখে দে যে তুই সুস্থ মস্তিষ্কে স্বেচ্ছায় এই ছাব্বিশ পাতার স্বীকারোক্তি নিজের হাতে লিখেছিস”।
 

বিমল আর কোনও উচ্চ্যবাচ্য না করে সেভাবেই প্রথম পাতায় কথাগুলো লিখে প্রত্যেকটা পাতায় সই করে দিল। গ্লাভস পড়া হাতটা বিমলের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে আলোর সামনে সেটাকে ধরে লেখাগুলো কিছুক্ষণ দেখে বলল, “ঠিক আছে, যা। এবার আবার গাড়ি চড়ে যেভাবে এসেছিলি, সেভাবেই ফিরে যা”।

বিমল পলিথিনের প্যাকেটটা খুলে ভেতরে অনেকগুলো সিডি দেখতে পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “দুটো কথা ছিল”।

লোকটা বলল, “বল”।

বিমল মাথা নিচু করে বলল, “ভিডিওগুলোর সফট কপিগুলো আর আমার ছেলে আর তার বন্ধুদের ...”

বিমলের কথা শেষ না হতেই লোকটা বলল, “সফট কপিগুলো গুলো আমি আজ রাতেই ডিলিট করে ফেলব। এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস। তবে অরিজিনাল রেকর্ডিংএর ফুটেজ গুলো কিছুদিন হাতে রাখব। কারন এখান থেকে এই সিডিগুলো নিয়ে যাবার পরেও তুই যে আর পেছন থেকে আমাকে ছুরি মারবি না, এ’কথা তুই মুখে বললেও আমি বিশ্বাস করব না। তাই ওগুলো আরও কিছুদিন আমার হাতে থাকবে। তবে কথা দিচ্ছি, ও’গুলো আর নেটে দেওয়া হবে না আপাততঃ। তবে তুই যদি এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে কোনভাবে আমাদের পেছনে লাগবার চেষ্টা করিস, তখন কিন্তু হাজার কোটি টাকা দিয়েও পার পাবিনা। তখন ও’গুলো নেটে আপলোড করা হবেই। আর তোর মা-চোদা ছেলেটা আর তার বন্ধুরা এখন পর্যন্ত আর কোনও উপদ্রব করেনি। তবে তারা আজ রাতে আমার কাছেই থাকবে। কাল সকালেই তারা নিজের নিজের বাড়িতে পৌঁছে যাবে। ভাবিস না। এবার যা। আর কোনও কথা নয়”।

বিমল তবুও কিছুটা ইতঃস্তত করে কিছু একটা কথা বলতে যেতেই লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আর একটাও কথা বলবি না শুয়োরের বাচ্চা। যদি বাঁচতে চাস, তাহলে এখনই ফিরে যা”।

বিমল আর কোন কথা বলবার সাহস জুটিয়ে উঠতে না পেরে পেছন ফিরে গাড়ির দিকে এগোতে শুরু করল। আর অমনি তার পেছন থেকে আসা সার্চ লাইটের আলো গুলো একসাথে নিভে গেল। হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় বিমল চোখে কিছু দেখতে না পেয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। কিন্তু এবারে আর পেছন থেকে কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। প্রায় আধ মিনিটের মত দাঁড়িয়ে থাকবার পর অন্ধকারে চোখটা সয়ে যেতে সে ধীরে ধীরে গাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছলো। বিমলের হাত পা তখনও ঠকঠক করে কাঁপছে ভয়ে আর উত্তেজনায়। ড্রাইভিং সীটে বসে দড়জা বন্ধ করে পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের মুখ কপাল আর ঘাড় ভাল করে মুছে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল। গাড়ি গিয়ারে ফেলবার আগে সে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দিল। গাড়িটা ব্যাক করবার সময় যেখানে দাঁড়িয়ে সে লোকটার সাথে কথা বলেছিল সেখানেও হেড লাইটের আলো গিয়ে পড়ল। কিন্তু সেখানে তখন আর কোন মানুষের ছায়াও তার চোখে পড়ল না। এমনকি সেই টেবিলটাও নেই।
 

ধীর গতিতেই গাড়িটা চালাচ্ছিল বিমল। চার পাঁচ কিলোমিটার আসবার পরেই এক জায়গায় রাস্তার ওপরে বেশ কয়েকজন পুলিশকে ঘোরাফেরা করতে দেখে সে গাড়ির স্পীড আরও কমিয়ে দিল। পুলিশ গুলোর সাথে অদ্ভুত পোশাক পড়া আরও দু’তিনজন লোককে দেখা গেল। একেবারে কাছাকাছি এসে পড়তে পুলিশের লোকেরা হাতের ঈশারায় তার গাড়ি থামাবার নির্দেশ দিতে বিমল গাড়ি থামিয়ে দিয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাইরে বের করল। একজন পুলিশ কাছে এসে বলল, “বেরিয়ে আসুন। গাড়ি সার্চ করা হবে”।

বিমল কি ব্যাপার কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে স্যার”?

আরেকজন পুলিশ বলল, “কিচ্ছু হয়নি। আপনি গাড়ি থেকে নেমে আসুন। আমাদের কাছে খবর আছে এ’ রঙের কোন একটা গাড়িতে বম্ব প্লান্ট করা হয়েছে। তাই আমরা আপনার গাড়িটা সার্চ করব। তাড়াতাড়ি করুন প্লীজ”।

বিমল আর কোনও কথা না বলে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। দু’তিনজন পুলিশ তাকে গাড়ি থেকে অনেকটা দুরে নিয়ে চলে গেল। বিমল এতক্ষণে আন্দাজ করল, ওই অদ্ভুত পোশাক পড়া লোকগুলো নিশ্চয়ই পুলিশের বম্ব স্কোয়াডের লোক। উর্দি পড়া পুলিশগুলোর সাথে গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা তফাতে গিয়ে দাঁড়াতেই পেছন থেকে কেউ একজন গাড়ি থেকে দুরে যেতে যেতে চিৎকার করে বলল, “এ গাড়িতেই বম্ব আছে স্যার। ডিকিতে। সবাই সাবধান থাকুন। আমরা এটাকে ডিফিউজ করার চেষ্টা.....”

তার কথা শেষ না হতেই বিকট আওয়াজে একটা বম্ব ব্লাস্ট হল। পুলিশের লোকগুলো বিমলকে মাটিতে ধাক্কা মেরে ফেলে নিজেরাও মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। বিমলের মনে হল তার কোমড়ের নিচে প্যান্ট ফুটো করে শক্ত মতন কিছু একটা গিয়ে তার পুরুষাঙ্গের ভেতর ঢুকে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথায় জ্ঞান হারাবার আগে এক পলকে সে দেখল তার গাড়িটা রাস্তা থেকে উড়ে গিয়ে একপাশে অনেকটা দুরে গিয়ে পড়েছে। আর সেটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। খানিক বাদেই অ্যাম্বুলেন্স আর দমকলের আওয়াজে জায়গাটা সরগরম হয়ে উঠল। তবে বিমল আর সেটা জানতে বা বুঝতে পারল না। সে জ্ঞান হারাল।

ঠিক আটটা দশে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাসপাতালের ইমারজেন্সীর সামনে এসে দাঁড়াতেই হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ স্ট্রেচার হাতে নিয়ে ছুটে এল। অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের দড়জা খুলে সবাই মিলে ধরাধরি করে বিমলের রক্তাক্ত অচেতন দেহটাকে স্ট্রেচারে তুলে ইমারজেন্সী রুমে নিয়ে গেল। ডিউটি রত জুনিয়ার ডাক্তার ভিক্টিমের কোমরের নিচের অংশটাকে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় দেখতে পেয়েই নার্স পাঠিয়ে অনডিউটি সার্জন ডক্টর দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে ডেকে পাঠাল।
 

******************

কোর্টে মামলার রায় বেরোতে বেরোতে বিকেল চারটে বেজে গিয়েছিল। দু’ তিনটে আলাদা আলাদা ধারায় অর্চনার শ্বশুর ত্রিলোচন আচার্যি আর তার স্ত্রীর সাত সাত বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাদল আচার্যির দুই নাবালক ছেলের কেস জুভেনাইল কোর্টে ট্র্যান্সফার করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আদালত থেকে বেরিয়ে মিঃ রায় সীমন্তিনীকে বলেছিলেন, “ম্যাম, আমাকে তো পাবলিক প্রজিকিউটরের সাথে আরেকটা মিটিং সেরে যেতে হবে। বেশ কিছুটা দেরী হবে। আপনারা বরং আর দেরী না করে এখনই জংশনে চলে যান। এনজেপি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসটা পেয়ে যাবেন। এখানে আর দেরী করলে কিন্তু ট্রেনটা ধরতে পারবেন না। তখন আপনাদের নাগরাকাটা পৌঁছতে কিন্তু বেশ অসুবিধে হতে পারে। আপনার ভাইকে আমি তাদের বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেব”।

সীমন্তিনী আর অর্চনাও কিংশুক ও ডঃ সোমের সাথে সংক্ষেপে কথা বলে একটা অটো ভাড়া করে জংশন ষ্টেশনে গিয়ে পৌঁছাবার দশ মিনিটের ভেতরেই এনজেপি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস এসে গিয়েছিল। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নাগরাকাটা ষ্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই একটা অটোয় চেপে নিজের কোয়ার্টারের সামনে নবনীতা আর অর্চনাকে নামিয়ে দিয়েই সীমন্তিনী বলল, “তোরা ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চা জলখাবার খেয়ে নিস। আমাকে একবার থানায় যেতেই হবে। আর শোন, আমার ফিরতে একটু দেরী হতে পারে। তোরা আমার জন্যে অপেক্ষা করিস নে যেন। অফিসের বড়বাবু আমায় ফোন করেছিলেন। বেশ জরুরী কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে আমাকে আলোচনায় বসতে হবে। তোরা ততক্ষণ রাজগঞ্জ আর কালচিনির বাড়িতে কথা বলে নিস। রচু ফোন করলে ওর সাথেও কথা বলিস। আর বলিস, আমি রাতে ওদের সাথে কথা বলব। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসব, কেমন”? বলে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠল।
 

তার গাড়ি বেরিয়ে যেতেই নবনীতা আর অর্চনা ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। লক্ষ্মী নবনীতা আর অর্চনার মুখে আদালতের রায় শুনে খুব খুশী হয়ে বলল, “বেশ হয়েছে। ওই বদমাশ বুড়োবুড়ির উচিৎ সাজা হয়েছে। জেলে সাত বছর কাটতে না কাটতেই যেন ওদের মরন হয়”।

নবনীতা আর অর্চনা স্নান করে চা জলখাবার খেতে খেতে রাজগঞ্জের বাড়িতে সকলের সাথে ফোনে কথা বলল। কিংশুকের ফোনে ফোন করে জানতে পারল ওরা এখনও আলিপুরদুয়ার থেকে রওনা হয়নি। সীমন্তিনী বাড়ি ফিরল রাত সাড়ে ন’টার পর। গরম জলে ভাল করে স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নবনীতা আর অর্চনা তার ঘরেই বসে আছে। সীমন্তিনীকে ঘরে ঢুকতে দেখেই অর্চনা উঠে বলল, “দিদিভাই, সারাটা দিন আজ তোমার বড্ড খাটুনি গেছে, তুমি এখানেই বিছানায় শুয়ে একট বিশ্রাম নাও। আমি তোমার চা-টা নিয়ে আসছি”।

অর্চনা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “এই নীতা, পরি তোকে কোনও ফোন করেছিল”?

নবনীতা সীমন্তিনীর পাশে বসতে বসতে বলল, “না তো দিদি, পরি তো গত এক সপ্তাহের ভেতর একদিনও ফোন করেনি আমাকে। তোমাকে তখন কী বলেছিল? ও বুঝি কাজে খুব ব্যস্ত আছে”।

সীমন্তিনী বালিশে মাথা দিয়ে ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে দিতে দিতে বলল, “হ্যাঁরে ও সত্যিই খুব ব্যস্ত আছে। তা সে’সব ব্যাপারে একটু পরে কথা বলছি। আগে বল তো, বাড়ি ফিরে তোরা কার কার সাথে কথা বলেছিস”?

নবনীতা সীমন্তিনীর ভেজা চুলগুলো আঙুল দিয়ে আরও কিছুটা ছড়িয়ে দিতে দিতে বলল, “রাজগঞ্জের বাড়ির অনেকের সাথে কথা বলেছি। বড়মা, মেজমা, ছোটমা আর চন্দুর সাথেও কিছুক্ষণ কথা বলেছি। অবশ্য চন্দু আজ খুব বেশীক্ষণ কথা বলেনি। ছোটকাকুর দোকানে বিশ্বকর্মা পূজো হচ্ছে। বিকেল থেকে কিছু সময় সেখানে কাটিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যে হতে না হতেই বাড়ি ফিরে এসে পড়তে বসে গেছে” বলে একটু থেমে বলল, “সত্যি দিদি, তোমাদের বাড়ির সবক’টা লোকই কী ভাল গো। এতদিনে আমি বুঝতে পারলাম তুমি আর রতুদা এত ভাল কেন? অমন বাড়ির ছেলে মেয়েরাই এমন মিষ্টি স্বভাবের হতে পারে। আর একটা জিনিস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারিনি জানো? তোমাদের মুখেই শুনেছি বৌদির বিয়ের পর সে তোমাদের ওই বাড়িতে মোটে মাস তিনেক ছিল। ওই তিন মাসেই সে বাড়ির ছোট বড় সব ক’টা লোককে কেমন এক যাদুতে বশ করে ফেলেছে! বৌদির প্রশংসা করতে ছোট বড় সকলেই একেবারে পঞ্চমুখ”।

অর্চনা চা নিয়ে ঘরে ঢুকতে সীমন্তিনী আধশোয়া হয়ে অর্চনার হাত থেকে চায়ের কাপ নিতে নিতে হেসে বলল, “রচুর কথা বলতে গেলে, আমার মুখ দিয়েও একই রকম কথা বেরোবে রে নীতা। আমার কথা তো ছেড়েই দে। আমি তো ওদের বিয়ের একবছর আগে যেদিন রচুকে প্রথম দেখেছিলুম, সেদিনই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলুম। আর সেদিন থেকেই ওকে দাদাভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবার জন্য আমি আর সতু উঠে পড়ে লেগেছিলুম। মিছে কাজের অজুহাতে কালচিনি গিয়ে ওর সাথে, আর বাড়ির সকলের সাথে ভাব করে বাড়ি থেকে বড়মা, জেঠু আর ছোটকাকুকে ওদের বাড়ি পাঠিয়েছিলুম। কিন্তু সেদিন আমাকে দেওয়া একটা কথা রাখবে বলেই রচু বিয়েতে রাজী হয়নি। তারপর কত নাটক করে আমি আর সতু ও বাড়িতে গিয়ে সবাইকে রাজী করিয়েছিলুম। আর তারপর আমি যেটা মনে মনে ভেবেছিলুম, রচু ঠিক তাই তাই করেছে। ওকে দাদাভাইয়ের বৌ করে আনতে পেরে আমিও খুব খুশী হয়েছি। আর তোরা তো জানিসই রচু এখন শুধু আমার বৌদি নয়। ও আমার ছোট বোন আর খুব প্রিয় বান্ধবীও। তাই আমি আর ওর সম্পর্কে কী অন্য কথা বলব বল? আমার কথা তো ছেড়েই দে, তোর মহিমা ম্যাডামও তো প্রথম দিন রচুকে দেখেই তাকে বোন বানিয়ে নিয়েছে। আসলে ভগবানই বোধহয় রচুকে এমনভাবে গড়েছেন যে কেউ ওকে ভাল না বেসে থাকতে পারে না”।

অর্চনা নিজের বোনের প্রশংসা শুনে সীমন্তিনীর পেছনে বসতে বসতে বলল, “তবে দিদিভাই, তোমাদের বাড়ি গিয়ে আমি বুঝতে পারলুম যে রচু কত সুন্দর একটা শ্বশুর বাড়ি পেয়েছে। তুমি ওর জীবনে না এলে ও কি এ’সব পেত? সত্যি দিদিভাই, তোমাদের কাছে আমরা প্রত্যেকে এতটাই ঋণী হয়ে পড়েছি যে এই জনম তো দুরের কথা, সাত জনমেও আমরা তোমার ঋণশোধ করতে পারব না। বাবা মা একদম ঠিক ..”

সীমন্তিনী পেছনে ঘুরে অর্চনার মুখে হাত চাপা দিয়ে তার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, “প্লীজ অর্চু। কতদিন বলেছি না এ’সব কথা একেবারে বলবি না। আমার ভাল লাগে না। আচ্ছা, বাড়ি এসে তোরা কেউ রচুকে বা মাসি মেসোকে ফোন করেছিলিস”?

নবনীতা বলল, “না দিদি, কালচিনি বাড়িতে তো আর ফোন নেই, ফোনটা তো কিংশুকের হাতে। তাই কিংশুক বাড়ি গিয়ে না পৌঁছনো অব্দি তাদের সাথে আর কি করে কথা বলব। আর আমরা ভেবেছিলাম, তুমি ফিরে আসবার পরেই আমরা বৌদিকে .......”

নবনীতার কথা শেষ না হতেই সীমন্তিনীর মোবাইলটা বেজে উঠল। সীমন্তিনী ফোনটা হাতে নিয়েই হেসে বলল, “এই দ্যাখ, নাম নিতে না নিতেই দুষ্টুটার ফোন এসে হাজির” বলে ফোন কানে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ রচু সোনা, বল কেমন আছিস”?
 

রচনা ও’পাশ থেকে জবাব দিল, “আচ্ছা দিদিভাই তুমি কী গো। সেই সকালে একবার নীতাদি জানাল যে তোমরা আলিপুরদুয়ার কোর্টে ঢুকছ। আর তারপর থেকে কেউ একটা খবর দিলে না? বিকেলের দিকে ফোন করেও লাইন পাচ্ছিলুম না। তোমরা কি এখনও বাড়ি পৌঁছও নি, নাকি”?

সীমন্তিনী বলল, “বিকেলে ফোনে হয়ত আমাদের তিনটে ফোনই আনরিচেবল পেয়েছিস, তাই না? আরে তখন হয়তো আমরা ট্রেনে ছিলুম। পৌনে ছ’টা নাগাদ ওদের দু’জনকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই আমি অফিসে চলে গিয়েছিলুম। এই কিছুক্ষণ আগেই ঘরে এলুম। তা তোরা দু’জন ঠিক আছিস তো”?

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “ওমা সারাটা দিন বাইরে বাইরে কাটিয়েও তুমি ওখানে পৌঁছেই আবার তোমার অফিসে চলে গিয়েছিলে? কেন গো দিদিভাই? নিজের শরীরটার ওপর একটু যত্নও তো নেওয়া উচিৎ”।

সীমন্তিনী রচনার আদুরে স্নেহমাখা গলার কথাগুলো শুনে বলল, “সাধে কি আর তোকে আমি এত ভালবাসি রচু সোনা। আমাকে নিয়ে এমন ভাবনা একমাত্র বোধহয় তুইই ভাবিস। কিন্তু আসলে হয়েছে কি জানিস। দু’দিন আমি থানায় হাজিরা দিই নি। আর আজ সকাল থেকে এমন কিছু ঘটণা এখানে ঘটেছে যে আমার জুনিয়র অফিসাররা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। আমরা আলিপুরদুয়ারে থাকতেই সে আমাকে এসএমএস করে জানিয়াছিল যে আমার অফিসে যাওয়াটা খুবই জরুরী। তাই যেতে হয়েছিল। আচ্ছা ও’সব কথা ছাড়। দাদাভাই আর তুই ভাল আছিস তো”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমরা দু’জনেই ভাল আছি। আর আমি তো কাল থেকে আরও বেশী ভাল আছি। তোমরা বাড়ি যাবার পর থেকেই চন্দু খুব আনন্দে আছে জানতে পেরে। তোমার দাদাভাইও সে কথাই বলছিলেন। সত্যি দিদিভাই, তুমি যেন কী গো। আমরা তো এতদুরে থাকি, তাই ইচ্ছে করলেও আমাদের পক্ষে রাজগঞ্জ যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তুমি তো বাড়ি থেকে মাত্র দু’ঘন্টা দুরত্বে থাক। মাঝে মাঝে একটা পুরো দিন না হলেও এক বেলার জন্যেও তো বাড়ি যেতে পার। তুমি গেলে সবাই কত খুশী হয়, দেখেছ তো”?

সীমন্তিনী হাল্কা সুরে বলল, “আমাকে দেখে যে সবচেয়ে বেশী খুশী হয় সে লোকটাই তো বাড়িতে থাকেনা রে। তবে হ্যাঁ, এবার চন্দুটাকে খুব খুশী হতে দেখে আমারও ভাল লেগেছে রে। তবে তুই তো ওখানে থেকে বুঝতে পারিস নি, আমি বুঝতে পেরেছি। চন্দু আসলে খুশী হয়েছে তোর দিদিকে কাছে পেয়ে। বেচারী নিজের বৌমণিকে কাছে না পেয়ে তার দিদিকে পেয়েই খুব খুশী হয়েছে। আচ্ছা এবার একটা সুখবর শোন। ত্রিলোচন আচার্যি আর তার স্ত্রীর দু’জনেরই সাত সাত বছরের জেল হয়েছে”।

রচনা খুশীতে প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “সত্যি বলছ দিদিভাই? সাত বছরের জেল! খুব ভাল হয়েছে। আমার নির্দোষ নিরপরাধ দিদিটাকে সাতটা বছর ধরে তারা যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তাতে পরের সাতটা বছর জেলে থাকতে থাকতে সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুক। কিন্তু দিদিভাই। ওই ছেলেদুটোর কি হল? ওদের শাস্তি দেয়নি কোর্ট”?

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:52 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)