Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 215)

বিমলের কথা শেষ না হতেই তার মোবাইলটা বেজে উঠল। বিমল মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সময় ঠিক সাড়ে আটটা। প্রাইভেট নাম্বারের লোকটা ফোন করতে এক সেকেন্ডও এদিক ওদিক করেনি। বিমল সবিতার সাথে চোখাচোখি করে কলটা রিসিভ করে ফোন স্পীকারে দিয়ে বলল, “হ্যালো”।

ও’পাশ থেকে লোকটা চিরাচরিত আন্দাজে বলল, “কিরে শালা হারামী, শুয়োরের বাচ্চা। পন্দ্রহ সাল বাদে কাল তোর বেশ্যা মাগী বিবিটাকে চুদে তো ভালই সুখ পেয়েছিস মনে হয়। তাই না? মনে হয় তোর প্রেসার কিছুটা হলেও কমেছে। রাতে ভালো ঘুম হয়েছে নিশ্চয়ই। তা মনে আছে তো কাল কি বলেছিলাম। হয়ত এটাই তোর কাছে আমার শেষ কল। তোকে আর জ্বালাব না। অবশ্য যদি তুই আমার বলা তিন নাম্বার রাস্তায় যেতে চাস তাহলে হয়ত আরও দু’একবার আমাদের ভেতর কথা হবেই। তা কি ভেবেছিস তুই? কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিস সেটা আগে বল দেখি”।
 

বিমল নিজের গলাটা একটু পরিস্কার করে জবাব দিল, “আমি আপনার কথা মানতে রাজি আছি। প্লীজ, ওই ভিডিওগুলো দয়া করে ইন্টারনেটে ছড়াবেন না”।

লোকটা জিজ্ঞেস করল, “তার মানে তুই কি তিন নাম্বার রাস্তাটাই চুনে নিলি”?

বিমল ঘড়ঘড়ে গলায় জবাব দিল, “হ্যাঁ, আমি আপনাকে এক কোটি টাকাও দিতে রাজি আছি, আর আপনার কথা মত আমার অতীতের সমস্ত অপরাধের কথা কাগজে লিখে, তাতে আমার স্ত্রী আর ছেলেকে সাক্ষী রেখে, আমরা সবাই সাইন করে দেব। এখন আপনি বলুন, আপনি কখন কিভাবে সেটা আমার কাছ থেকে নেবেন”।
 

লোকটা বলল, “বেশ, শোন তাহলে হারামজাদা। এক কোটি টাকা যেটা আমাকে দিবি সেগুলো সব হাজার টাকার নোটে দিতে হবে। আর একেবারে ফ্রেস নোট চলবে না। রিসাইকলড প্যাকেট হতে হবে সব গুলোর। রিসাইকলড প্যাকেট কাকে বলে, তা নিশ্চয়ই জানিস”?

বিমল জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। যে’সব প্যাকেটে নোটগুলো এক সিরিজের বা এক সিরিয়ালের হয় না”।

লোকটা বলল, “হ্যাঁ, ঠিক বুঝেছিস একদম। সব মিলে হাজার টাকার একশ’টা প্যাকেট হবে। কিন্তু কোন প্যাকেটেই একটাও ফ্রেশ নোট থাকা চলবে না। সবগুলোই পুরনো নোটের প্যাকেট হতে হবে। এমন একশ’টা প্যাকেট একটা অ্যামেরিকান টুরিস্টার ব্যাগে ঢুকিয়ে সে ব্যাগটা তোর ছেলেকে দিয়ে ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডে পাঠিয়ে দিবি দুপুর দুটোয়। আর তোর ছেলের হাতে যে মোবাইলটা থাকবে সেটার নাম্বারটা আমাকে জানিয়ে দিবি। তোর ছেলে বাসস্ট্যান্ডে আসবার পর আমি তোকে ফোন করে কিভাবে কি করতে হবে তা বুঝিয়ে দেব। আমি এই প্রাইভেট নাম্বারের ফোনটা থেকেই তার সাথে কথা বলব। আর তাকে বলে দিবি, আমি তাকে যেমন যেমন নির্দেশ দেব সে যেন ঠিক সেটাই করে। আমার কথার বাইরে সামান্য কিছু করলেই কিন্তু তার প্রাণটা চলে যেতে পারে। টাকাগুলো ঠিকঠাক থাকলেই আমি পরে ফোন করে তোকে এক জায়গায় ডেকে নেব। আর তোর হাতে ওই সমস্ত ভিডিও তুলে দিয়ে তোকে ছেড়ে দেব”।

বিমল বলল, “বুঝেছি। কিন্তু ওই কাগজটা”?

লোকটা বলল, “সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা রে শুয়োরের বাচ্চা। ওটা তোর কাছেই রাখিস। তোর কাছ থেকে আমি কখন কিভাবে নেব, সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দে। ও নিয়ে তুই টেনশন নিস না। এখন তোকে টাকাটা যেভাবে পাঠাবার কথা বললাম, তুই বরং সেটার ব্যবস্থাই কর। মনে রাখিস, পুরোনো হাজার টাকার নোটের মোট একশ’টা প্যাকেট, অ্যামেরিকান টুরিস্টার ব্যাগ, ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ড আর ঠিক বেলা দুটো। আর হা, আরেকটা কথা শুনে রাখ। এই গত কয়েকটা দিনে এটা তো বুঝেই গেছিস যে আমার একটা চুলের ডগাও তুই বা তোর পোষা কুকুরগুলো ছুঁতে পারবি না। তাই এবারেও সে চেষ্টাটা আর করিস না। তোর সমস্ত ফোন কলের ওপর আমার নজর আছে। আর ঠিক একই রকম নজর আছে তোর আর তোর সাকরেদগুলোর ওপর। তুই কার সাথে কখন ফোনে কি কি কথা বলছিস, কার কার সাথে দেখা করছিস, তোর সাকরেদরা কে কোথায় ঘোরাফেরা করছে, এ’সব কিছুই কিন্তু আমি নজরে রাখছি। আর এটা আশা করি তুই নিজেও এতদিনে বুঝে গেছিস। তাই বলছি, থানা পুলিশ স্পাই গোয়েন্দা আর তোর পোষা কুকুরগুলো যদি তোর ছেলের ওপর কোনভাবে নজর রাখবার চেষ্টা করে, তাহলে তার পরিণাম কী হতে পারে সেটা শুনে রাখ। এক, তোর ছেলে ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডেই গুলি খেয়ে মরবে। দুই, আমাদের এ ডিলটা ক্যানসেল বলে ধরা হবে। আর তিন, তোর ছেলের বডিটা রাস্তায় পড়ে যাবার সাথে সাথেই আমার ইন্টারনেট ওয়েব সাইটটা খুলে যাবে, আর সতেরো তারিখে যে তিনটে ভিডিও আপলোড করার কথা বলেছিলাম, সেই তিনটে ভিডিওই একই সময়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়বে”। বলেই ফোন কেটে দিল।

বিমল ফোন নামিয়ে রেখে সবিতাকে বলল, “তুমি বিকিকে কি কি করতে হবে, সেটা বুঝিয়ে দাও। তবে হ্যাঁ, ওই ভিডিও গুলোর ব্যাপারে ওকে কিচ্ছু বোল না। আমি এদিকের ব্যবস্থা করছি”।
 

সবিতা বিমলের মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি বিকির ওপর নজর রাখবার জন্য কাউকে ওর পেছন পেছন পাঠাবে বলে ভাবছ নাকি জানু? না না, অমনটা কোর না কিন্তু। লোকটা ঠিক বুঝে ফেলবে”।

বিমল একটু ভাবতে ভাবতে বলল, “লোকটাকে বা তার কোন সাথীকে ধরবার জন্য এটা একটা ভাল সুযোগ ছিল ঠিকই। কিন্তু লোকটা তো অসম্ভব চালাক। আমরা তেমন কিছু করলে সে নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পেরে যাবে। তার ফলে কাজের কাজ তো কিছুই হবে না। ওরা কেউ বিকির কাছ থেকে টাকা নিতে আসবে না। উল্টে আমাদের সাথে সাথে বিকির জীবনটাও বিপন্ন হয়ে উঠবে। তাই সে’সব না করাটাই উচিৎ হবে। তুমি ওটা নিয়ে ভেবো না। বিকিকে কথাগুলো ভাল করে বুঝিয়ে দাও গিয়ে। বিকি যদি কারন জানতে চায়, তাহলে তুমি ওকে সব কিছুই খুলে বলতে পার। কিন্তু ও যেন আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার সাথে ও’সব ব্যাপার নিয়ে কোন আলোচনা করতে না আসে”।
 

সবিতা বেরিয়ে যেতেই বিমল নিশিতাকে ফোন করে তাকে নির্দেশ দিল যে অফিস থেকে একটা চেকবুক নিয়ে সে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমলের বাড়িতে চলে আসে।
 

*******************

সীমন্তিনী আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাই রাজগঞ্জ থেকে সে নিজের জায়গায় না গিয়ে অর্চনা আর নবনীতাকে সঙ্গে নিয়েই নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে সোজা নিউ আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে এসে পৌঁছল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ। ষ্টেশন চত্বরের বাইরে এসেই একটা অটো ভাড়া করে কোর্টের সামনে এসে পৌঁছল দশটা নাগাদ। কোর্টে তখনও তেমন লোক চলাচল শুরু হয়নি। সীমন্তিনী এখন তার ইউনিফর্মেই আছে। অর্চনা আর নবনীতাকে নিয়ে সে রাস্তার উল্টোদিকে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। তিনজনের জন্য পরোটা আর কফির অর্ডার দিয়ে সে কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায়কে ফোন করে জানতে পারল যে তারা এখনও রাস্তাতেই আছে। আর পনের কুড়ি মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। আর ডক্টর সোম এবং অন্য চারজন সাক্ষীও তার সাথেই আসছে।
 

খেতে খেতেই অর্চনার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল এল একটা। অর্চনা ফোনটা দেখে সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতেই সীমন্তিনী দেখল, নাম্বারটা সতীশের। সীমন্তিনী সেটা দেখেই অবাক হয়ে বলল, “এটা তো সতুর নাম্বার। তুই কি সতুকে তোর নাম্বার দিয়ে এসেছিস না কি”?

অর্চনা থতমত খেয়ে বলল, “না তো দিদিভাই, সতুদাকে তো আমি আমার নাম্বার দিই নি। তবে চন্দু আর চঞ্চু আমার নাম্বারটা চেয়ে নিয়েছিল”।
 

সীমন্তিনী হেসে বলল, “তবে দ্যাখ, চন্দুই হয়ত সতুর মোবাইল থেকে কল করেছে। নে নে, কলটা রিসিভ কর। নইলে এখনই টাইম আউট হয়ে যাবে”।
 

অর্চনা সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করে ফোনটা কানে লাগিয়ে “হ্যালো” বলতেই ওদিক থেকে চন্দ্রিকার গলা শোনা গেল, “অর্চুদি, তোমরা কি বড়দির ওখানে পৌঁছে গেছ”?

অর্চনা জবাব দিল, “না বোন, আমরা তো নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সোজা আলিপুরদুয়ারে চলে এসেছি। এখানে তো দিদিভাই আর আমার একটু কাজ আছে। সেটা একেবারে সেরে নিয়ে তারপর বাড়ি যাব। কিন্তু তুমি এখন ফোন করেছ কেন বোন? কলেজে যাও নি”?

চন্দ্রিকা জবাবে বলল, “বারে, আজ তো বিশ্বকর্মা পূজো। আমাদের কলেজ তো আজ ছুটি। তোমাকে তো বলেছি সে’কথা। তুমি ভুলে গেছ”?

অর্চনার সে’কথা মনে পড়তেই একটু হেসে বলল, “ওহ, হ্যাঁ তাই তো। তুমি তো কথাটা আমাকে বলেছিলে। আমিই ভুলে গিয়েছিলুম”।

চন্দ্রিকা বলল, “আসলে বড়মা বড়দির ফোনে দু’বার ফোন করেও লাইন না পেয়ে মেজদাকে মোবাইল থেকে ফোন করতে বলেছিলেন। মেজদাও বড়দির ফোনে লাইন পাচ্ছিল না। তখন আমি তোমার নাম্বারে ফোন করলাম। তুমি তাতে কিছু মনে করনি তো অর্চুদি”?

অর্চনা মিষ্টি করে বলল, “ওমা, মনে করব কেন? তুমি তো আমার ছোট্ট বোন। তুমি ফোন করলে আমি কি কখনও রাগতে পারি? তোমার যেদিন খুশী যখন খুশী আমাকে ফোন কোর। আমি খুব খুশী হব। কিন্তু সোনা, তুমি তো শুনেছই এখানে কোর্টে আমাদের একটু কাজ আছে। আমরা তাই এখন কোর্টে ঢুকছি। তবে আমি দিদিভাই আর নীতাদি তিনজন একসাথেই আছি, এবং ঠিক আছি। বড়মাকে বোল যেন কোন চিন্তা না করেন। আমরা পরে আবার কথা বলব তার সাথে। কিন্তু এখন যে আর কথা বলতে পারছি না বোন। তুমি কিছু মনে কোর না প্লীজ”।

চন্দ্রিকাও সাথে সাথে জবাব দিল, “না না, অর্চুদি, কিচ্ছু মনে করছি না। তবে বাড়ি ফিরে গিয়ে কিন্তু অবশ্যই ফোন করবে”।

অর্চনা হেসে বলল, “ঠিক আছে সোনা, তাই হবে। রাখছি এখন”।
 

অর্চনা চন্দ্রিকার সাথে কথা বলতে থাকার সময় সীমন্তিনীও তার ফোনে আবার কারো সাথে কথা বলছিল। নবনীতার ফোনেও রচনার কল এল একটা। সেও জানতে চাইছিল রাজগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে এসে তারা কোথায় আছে। তাদের খাবার শেষ হতে না হতেই সীমন্তিনীর ফোনে পরিতোষের কল এল। সীমন্তিনী ফোন কানে নিতেই পরিতোষ বলল, “গুড মর্নিং মুন ডার্লিং। আর একই সঙ্গে বেস্ট অফ লাক”।

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “পরি তুমি? তুমি আজ আমাকে বেস্ট অফ লাক উইশ করছ কেন”?

পরিতোষ হেসে বলল, “কোর্টে রচুর দিদির কেসের হিয়ারিং এটেন্ড করতে যাচ্ছ তো। তাই বেস্ট অফ লাক জানালুম”।

সীমন্তিনী আরও অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু তুমি সেটা কী করে জানলে? আমি তো তোমাকে এ’কথা বলিনি কখনো”?

পরিতোষ হাল্কা রসিকতা করে বলল, “সেটাই তো আমার দুঃখ ডার্লিং। অনেক কথাই তুমি আমাকে বলো না। কিন্তু যাক সে কথা। তুমি চাইলে আমাকেও একটা বেস্ট অফ লাক উইশ করতে পার আজ”।

সীমন্তিনী পরিতোষের কথার মানে বুঝতে না পেরেও একটু রসিকতা করেই বলল, “আচ্ছা? তা এমন কোন শুভ কাজে যাচ্ছ আজ শুনি? তোমার বিয়ে? তাও আমাকে আর নীতাকে না জানিয়েই”?

পরিতোষ এবার একটু চাপা স্বরে বলল, “আজ দুপুর থেকেই, মানে ধরো আর ঘন্টা তিনেক পর থেকেই একটা ফাইনাল অপারেশন শুরু করছি। ফাইনাল স্টেজ অফ অপারেশন বিমল আগরওয়ালা”?

সীমন্তিনী প্রায় লাফিয়ে উঠে বলল, “হোয়াট? কী বলছ তুমি পরি? অ্যাতো তাড়াতাড়ি? মানে আজই সেটা হচ্ছে? আই কান্ট বিলিভ ইট”!
 

পরিতোষ শান্ত স্বরে বলল, “ইয়েস ডার্লিং। আজই সেই শুভদিন। তবে তোমার এখন কোর্টে ঢোকবার সময় হয়ে গেছে জানি। তাই এখন আর কোন কথা নয়। আমি আশা করি, আজই তোমাদের কেসটার ফয়সলা হয়ে যাবে। সে’জন্যেই তোমাকে বেস্ট অফ লাক বললুম”।

কোর্টের সামনে একটা পুলিশ ভ্যান এসে দাঁড়াতে দেখে সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ পরি। তোমাকেও অনেক অনেক বেস্ট অফ লাক উইশ করছি। আজ সারাটা দিনের জন্য তুমি আমাকে টেনশনে ফেলে দিলে। কিন্তু অপারেশন ওভারের খবরটা কখন জানাবে বলো তো, প্লীজ”।

পরিতোষ সংক্ষেপে বলল, “ফিনিশিং টাইম সিডিউলড আছে রাত ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার ভেতর। তবে প্লীজ, ওই সময়েই আমাকে তুমি ফোন কোর না ডার্লিং। আমি সুযোগ পেলেই তোমাকে ফোন করব। আর কোন এক্সট্রা টেনশন নিও না। আমার অপারেশন আমি ঠিক সামলে নেব। আর তুমি যখন বেস্ট অফ লাক বললে, তখন তো সোনায় সোহাগা। এনি ওয়ে, এখন ছাড়ছি। পরে কথা হবে” বলে ফোন কেটে দিল।
 

সীমন্তিনীও ফোন পকেটে রেখে রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে দিয়ে নবনীতা আর অর্চনাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে বলল, “পরির সাথে আমার কী নিয়ে কথা হল, সেটা জানতে তোদের খুব ইচ্ছে করছে জানি। তবে এখন সেটা আর বলবার উপায় নেই। ওরা সবাই এসে গেছে, ওই দ্যাখ। তাই আমাদের হাতে আর সময় নেই। তবে এটা জেনে রাখ, আজ রাতেই হয়ত খুব ভাল একটা সুখবর পাবো আমরা। আর বাড়ি ফিরে এ ব্যাপারে তোদের সাথে কথা বলব। এখন চল, ওই দ্যাখ, ওরা সকলেও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। চল চল”।

পুলিশের ভ্যানটার ভেতর থেকে ততক্ষণে একে একে প্রায় সকলেই নেমে এসেছে। সকলের শেষে কিংশুককে নামতে দেখে সীমন্তিনী আর অর্চনা দু’জনেই চমকে গেল। কিংশুক গাড়ি থেকে নেমেই ছুটে এসে সীমন্তিনী আর অর্চনাকে একসাথে জড়িয়ে ধরল। অর্চনা এতদিন বাদে ভাইকে দেখে নিজের আনন্দ আর ধরে রাখতে পারছিল না। কিন্তু সীমন্তিনী তাকে সামলে নিয়ে কিংশুকের সাথে নবনীতার পরিচয় করিয়ে দেবার পর বাড়ির খবরাখবর নিল। তারপর সীমন্তিনী আর অর্চনা মিঃ রায় আর ডক্টর সোমকে হাতজোড় করে নমস্কার করে নবনীতার সাথেও তাদের পরিচয় করিয়ে দিল।

কয়েক মিনিট বাদেই সরকারি উকিল এসে পৌঁছতে মিঃ রায় তার সাথে বাকি সকলের পরিচয় করিয়ে দেবার পর সকলে মিলে কোর্টের ভেতরে ঢুকে গেল।

*****************

দুপুর একটা পঞ্চান্ন মিনিটে ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডের কার পার্কিংএ বিকিকে একটা গাড়ি থেকে নামতে দেখা গেল। গাড়ি থেকে নেমে সীটের ওপর থেকেই একটা অ্যামেরিকান ট্যুরিস্টার ব্যাগ নামিয়ে নিজের কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। তারপর নিজের পকেটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে মোবাইলটা বের করে একবার দেখেই সেটা আবার পকেটের ভেতর রেখে দিল। তারপর ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলতেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেল। বিকি আশেপাশে চারদিকে একবার দেখে নিয়ে ঠিক বুঝতে না পেরেও একদিকে এগিয়ে গেল।

এমন সময়েই তার পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠতে বিকি মোবাইল বের করে দেখে ‘প্রাইভেট নাম্বার কলিং’। দাঁতে দাঁত চেপে সে কল রিসিভ করে কানে ফোন নিতেই শুনতে পেল, “কিরে শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর। নিজেকে খুব সেয়ানা ভাবিস, তাই না”?

বিকি একটু থতমত খেয়ে জবাব দিল, “কি-কি বলছেন আপনি? আমি এমন কী করেছি? ড্যাড আমাকে যা যা বলেছেন আমি তো সেটাই করেছি”।

ও’পাশ থেকে লোকটা বলল, “তাই নাকিরে শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর। তা তোর হারামী শুয়োরের বাচ্চা বাপটা কি তোকে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আসতে বলেছিল? না তোর বেশ্যামাগী মা টা এমন বুদ্ধি দিয়েছিল তোকে”?
 

বিকি ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বলল, “এ-এসব আপনি কি-কি বলছেন। আমি তো গাড়িতে একাই এসেছি। আর আমাকে নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভারও গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। আর তো কেউ আমার সাথে আসেনি”।

লোকটা হেসে বলল, “তাই বুঝি? তা আরেকবার দেখে নে। দ্যাখ তো তোর হারামী বন্ধুগুলো ঠিক ঠিক লোকেশান মত আছে কি না”।
 

বিকি এ’কথার কোনও জবাব দেবার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন তাকে একটা ধাক্কা মারল। তার হাতের মোবাইলটা ছিটকে গেল। আর সে নিজেও শরীরের ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পাশ দিয়ে যাওয়া একটা লোক তার হাত থেকে ছিটকে যাওয়া মোবাইলটা লুফে নিল। আর যে লোকটা পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল, সে লোকটাই তাকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে দুঃখিত স্বরে বলল, “সরি, সরি বেটা, কিছু মনে কোর না। আমি ইচ্ছে করে তোমাকে ধাক্কা দিইনি বেটা। ওই দ্যাখো, কলার খোসায় পা পড়ে যাওয়াতেই এ বিপত্তি। তা, তোমার লাগেনি তো বেটা? আমি সত্যিই খুব দুঃখিত”।

বিকি চেয়ে দেখল, “সত্যিই নিচে একটা কলার খোসা পড়ে আছে। আর সেটাও যে কারো পায়ের চাপে একেবারে রাস্তার সাথে পিষে গেছে, সেটা দেখেই বোঝা যায়। বিকি বুঝল যে লোকটা তাকে সত্যিই ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারে নি। আর এমন বয়স্ক একটা লোক নিশ্চয়ই তার মত একটা কম বয়সী ছেলের সাথে কোনও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এভাবে ধাক্কা মারবে না। লোকটা ফুটপাতের একটা উঁচু ইটের ওপর নিজের জুতোর তলা থেকে লেগে থাকা কলার খোসার অবশিষ্টাংশ ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতে আবার বিকিকে বলল, “আমি সত্যিই বলছি বেটা, আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। তবু সরি বলছি”।

এবার বিকির মোবাইলটা যে লোকটা লুফে নিয়েছিল সে বিকির কাছে এসে তার দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “ভাই, তোমার হাত থেকে এটা ছিটকে গিয়েছিল। ভাগ্যিস আমি লুফে নিতে পেরেছিলাম। নইলে নিচে পড়ে গেলে তো এত দামী মোবাইলটা বোধহয় ভেঙেই যেত। নাও”।
 

বিকি হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে লোকটাকে ধন্যবাদ বলতে লোকটা চলে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, কলটা চালু আছে এখনও। ফোনটা কানে লাগাতেই ও’পাশ থেকে লোকটা বলল, “একটু দেখে শুনেও পথ চলতে শিখিস নি নাকি? এই জন্যেই তো তোকে শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর বলেছি আমি। সারা দিন শুধু তোর বাপ শুয়োরের বাচ্চার পয়সায় গাড়ি আর বাইক চেপে বেড়াস। দু’পা হাঁটতেই এর ওর গায়ে ধাক্কা খাস। মানুষের মত পথ চলতে আর কবে শিখবি”?

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:51 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)