Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 208)

সীমন্তিনী এবার অবাক হয়ে বলল, “আমাকে তোমার শর্ত মানতে হবে? দাদাভাইকে কোনও শর্ত মানতে হবে না? আচ্ছা কী এমন শর্ত তোমার শুনি”?
 

মহিমা একটু ভেবে ভেবে বলল, “সেটা কিন্তু একটা শর্ত নয় মন্তি। বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে, আমি তোমাকে দেখতে চাই। একেবারে সামনা সামনি, মুখোমুখি। আর দু’ নাম্বার শর্ত হচ্ছে, যেদিন আমাদের মার্কেট কমপ্লেক্সের ইনগারেশন হবে সেদিন তোমায় আমাদের সাথে উপস্থিত থাকতে হবে। আর লাস্ট বাট নট দা লিস্ট, আমি রতীশের ইনস্টিটিউটের জন্যে যেমন একটা কমপ্লেক্স বানিয়ে দিতে চাইলাম তাতে তোমাকে রাজী হতে হবে”।

সীমন্তিনী মহিমার শর্ত তিনটে শুনে মনে মনে কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “বৌদি, তোমার প্রথম শর্তটা আমি এখনই মেনে নিচ্ছি। তবে সেটা কলকাতায় হবে না। হবে আমাদের বাড়িতে, রাজগঞ্জে। কারন রচুর দিদির বিয়েটা হয়ত আমাদের রাজগঞ্জের বাড়িতেই হবে। আর সে বিয়েতে তুমি আমাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে আসছ। তখনই আমার তোমার মুখোমুখি দেখা হবে”।

মহিমা এবার প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কি বলছ তুমি মন্তি? তুমি তো জানোনা, রতীশ আর রচনাকে দেখবার পর আর তোমার সাথে ফোনে পরিচয় হবার পর থেকেই আমার খুব ইচ্ছে করছিল তোমাদের পরিবারের লোকজনদের দেখতে। বিশেষ করে রতীশের বাবা মা ভাইবোন আর রচনার বাবা মা-কে দেখতে। আর সেটা যদি রচনার দিদির বিয়েকে উপলক্ষ করে হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার আমার পরিচয়টা ও ভাবেই হোক। আমার আপত্তি নেই। আর বাকি দুটো শর্ত মানতে চাইছ না”?
 

সীমন্তিনী বলল, “তোমার দ্বিতীয় শর্তটা মৌখিক ভাবে মেনে নিলেও কার্যত সেটা সম্ভব হবে কিনা তা জানিনা বৌদি। বুঝতেই তো পারছ, আমি একজন সরকারি চাকুরে। যখন তখন অফিস থেকে ছুটি নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে সে ইচ্ছে আমার মনেও আছে। তুমি এটাকে শর্ত হিসেবে না বললেও তোমার মার্কেট কমপ্লেক্স উদ্বোধনের দিন সেখানে হাজির থাকার চেষ্টা করতুমই আমি। আর এটাকে এখন যখন তুমি শর্ত হিসেবেই আমার সামনে রাখছ, তখন আপাততঃ এটুকু বলতে পারি যে অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করতে পারলে আমি অবশ্যই যাব বৌদি। আর সেদিন শুধু আমি নই। তোমার পছন্দের আরও কেউ আমার সাথে থাকতে পারে”।

মহিমা সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “তাহলে ব্যাপারটা আপাততঃ একটুখানি ঝুলিয়ে রাখছ, তাই তো? আচ্ছা সে না হয় আমি মেনেই নিচ্ছি। কবে সেটা হবে তা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই তোমার কথাটা আমি মেনেই নিচ্ছি। কিন্তু আমার তিন নাম্বার শর্তটা কিন্তু তোমাকে রাখতেই হবে মন্তি প্লীজ। দ্যাখ মন্তি, রচনা আর রতীশ আমার জীবনে এসেছে বলেই আমি তোমার মত একজন বন্ধু পেয়েছি। আর তুমি আমাকে রাস্তা দেখিয়েছ বলেই আমি পাপের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে, অসৎ কাজে কামানো টাকাগুলো এভাবে একটা সৎ কাজে লাগিয়ে, বাকি জীবনটুকু সৎ ভাবে কাটিয়ে দিতে চাইছি। তাই ওদের দু’জনের জন্য কিছু একটা করতে না পারলে আমার মনে খুব দুঃখ থেকে যাবে, তুমি প্লীজ বারণ কোর না। আমি জানি, তুমি রাজী হলে রতীশ আর রচনাও রাজি হবে। প্লীজ মন্তি”।

সীমন্তিনী বলল, “এ ব্যাপারে তো আমি তোমাকে আগেই বলেছি বৌদি, দু’মাস পর আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবব। তবে তোমার এ শর্তটাও আমি এখনই খারিজ করে দিচ্ছি না। দু’মাস পরেই তোমাকে এ ব্যাপারে হ্যাঁ না কিছু একটা বলব”।
 

মহিমা এবার বলল, “তুমি তাহলে এ শর্তটাকেও দু’মাস ঝুলিয়ে রাখতে চাইছ। আচ্ছা বেশ, আমিও দু’মাস অপেক্ষা করব। তাহলে আমিও তোমাকে কথা দিচ্ছি, রতীশ আর রচনাকে ওই তিনটে অনুষ্ঠানেই যাবার জন্য ছুটি দেব। তবে একটানা দু’মাসের ছুটি আমি দিতে পারব না ভাই। অক্টোবরের ১৭ তারিখ থেকে দশ দিনের ছুটি দেব আমি রতীশকে। ওরা ১৬ তারিখ বিকেলেই এখান থেকে রওনা হতে পারবে। ১৭ তারিখে কালচিনি পৌঁছে যাবে। সেখানে ১৮ তারিখে বাড়ির কাজের শুভারম্ভের অনুষ্ঠানে ওরা হাজির থাকতে পারবে। আর তারপর রাজগঞ্জে গিয়ে পরিবারের সকলের সাথে পূজোটাও এনজয় করতে পারবে। তবে অক্টোবরের ২৬ তারিখেই কিন্তু ওদের ফিরে আসতে হবে। তাহলে প্রথম দুটো অনুষ্ঠানেই ওরা থাকতে পারবে, হল? আর পরের ......”

সীমন্তিনী মাঝপথেই মহিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “নাগো বৌদি, পূজোর পরে দাদাভাই আর রচুকে কেউ ৩০ তারিখের আগে বাড়ি থেকে যেতে দেবে না। দুর্গাপূজোর চার পাঁচদিন বাদেই প্রত্যেকটা বাঙালী ঘরেই লক্ষ্মীপূজো হয়ে থাকে। এবারে লক্ষ্মীপূজো পড়েছে অক্টোবরের ২৯ তারিখে। রচু আমাদের বাড়ির সকলের কাছে লক্ষ্মী। তাই ওরা এলে কিছুতেই লক্ষ্মীপূজোর আগে ফিরতে পারবে নাগো”।

মহিমা সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “ও, তাই তো! সেটা তো আমার মনেই ছিল না। তাহলে তো ১০ দিনের ছুটি দিলে কুলোবে না। আচ্ছা, তবে পনের দিনের ছুটিই নাহয় দেব। ১৭ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। তাহলে কী যেন বললে? ও হ্যাঁ, গৃহারম্ভ। তাহলে ওরা গৃহারম্ভ, দুর্গাপূজো আর লক্ষ্মীপূজো কাটিয়ে ফিরতে পারছে। তাই না? এখন বাকি রইল রচুর দিদির বিয়ে আর ওদের গৃহপ্রবেশের ব্যাপার দুটো। একটা ২৯শে নভেম্বর আর অন্যটা ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ। তার মানে ষোলো দিনের তফাতে দুটো অনুষ্ঠান। আর তার জন্যে আমি যদি নভেম্বরের ২৬ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ অব্দি একটানা ২১ দিনের ছুটি আমি দিই রতীশকে, তাহলে চলবে? তখন ওরা বিয়ে আর গৃহপ্রবেশের দুটো অনুষ্ঠানেই থাকতে পারবে। তবে ওদের দু’বার আলাদা আলাদাভাবে যেতে হবে। চলবে”?

সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনে খুব খুশী হয়ে বলল, “তোমার কথা শুনে আমি খুব খুশী হলাম বৌদি। তুমি যে আমার কথায় নিজের কাজের ক্ষতি করেও দাদাভাইকে এভাবে ছুটি দিচ্ছ, তাতে আমি অভিভূত হয়ে গেলুম। তোমাকে ধন্যবাদ জানা....”

সীমন্তিনীর কথায় বাধা দিয়ে মহিমা বলল, “কিন্তু মন্তি, এতে কিন্তু আমার মনে একটা ভয়ও হচ্ছে গো। ওরা দু’ দু’বার এখান থেকে নর্থ বেঙ্গল যাবে আর ফিরে আসবে। তুমি কি বিমলের কথাটা ভুলে গেছ? রাস্তায় কোথাও যদি বিমলের লোকজন ওদের ওপর অ্যাটাক করে? তাহলে ভেবে দেখেছ কত বড় সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে”?

সীমন্তিনী বলল, “কেন বৌদি? বিমল আগরওয়ালা তো তোমাকে ছ’মাস সময় দিয়েছে। সেই সময় তো এখনও শেষ হয়নি। এই ছ’মাসের মধ্যেই কি সে আবার অন্যভাবে রচুর ওপর অ্যাটাক করবে বলে তোমার মনে হয়”?

মহিমা বলল, “ওর সাথে আমার কথা হয়েছে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। খুব সম্ভবতঃ আগস্টের ঊণিশ তারিখে। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারীতে ছ’মাস হয়। ততদিন পর্যন্ত ও আমার ভরসাতেই হয়ত থাকবে। কিন্তু সেটা খুব জোর দিয়ে বলতেও পাচ্ছিনা। কারন অন্যান্য দিক দিয়ে বিমল তার সব কথা রাখলেও মেয়েদের ব্যাপারে ও খুব রেস্টলেস। একবার কোনও মেয়ের ওপর ওর লোভ জন্মালে, সেই লোভ চরিতার্থ না করা পর্যন্ত সে শান্ত হয় না। আমার কাজের অপেক্ষা করতে করতে ও যদি অধৈর্য হয়ে ওঠে, তাহলে হয়ত আমাকে দেওয়া সময় পেরিয়ে যাবার আগেই ও অন্য কাউকে দিয়ে অন্য কোন ভাবে রচনাকে হাসিল করতে চাইবে। রচনা রতীশ দু’ দু’বার নর্থ বেঙ্গল যাবে আসবে। এমন খবর জানতে পারলে বিমল খুব সহজেই আরেকটা প্ল্যান করে ফেলতে পাবার। এটা ভেবেই আমার ভয় লাগছে গো”।

সীমন্তিনী মহিমাকে অভয় দিয়ে বলল, “ও ব্যাপার নিয়ে তুমি একদম ভেবো না বৌদি। আমার মনে হয় না ওই সময়ে, মানে ওই অক্টোবর নভেম্বর মাসে বিমল কিছু করতে পারেবে। আর সেটা তো আরও এক দু’মাস পরের কথা। সেটা নিয়ে ভাববার যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে আছে। ততদিনে কত কী হয়ে যেতে পারে। এমনও তো হতে পারে বিমল আগরওয়ালা হার্ট অ্যাটাকে মরে গেল, বা সে অন্য কোনও বিপাকে পড়ে নিজেই হয়ত নিজেকে বাঁচাতে এ দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেল। তাহলে তো আর রচনার ওপর কোন বিপদ থাকবে না”।

মহিমা সীমন্তিনীর কথা শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এমনটাই যে হবে তা তো কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে না মন্তি। বিমল যদি সত্যি হার্ট অ্যাটাকে মরে যায়, বা বিদেশে পালিয়ে যায়, তাহলে শুধু রচনা কেন মন্তি, রচনার সাথে সাথে আমিও তো ওই রাহুর কবল থেকে মুক্তি পাব গো। আর আমাদের মত আরও বেশ কয়েকজন মেয়েও হয়ত অনেক লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে সে যাই হোক বোন, আমি স্বার্থপরের মত তোমার ওপর এতগুলো শর্ত চাপিয়ে দিয়ে তবে রতীশের ছুটি মঞ্জুর করলাম। সে জন্যে আমাকে ক্ষমা কোর ভাই। তবে অক্টোবরের আগেই যদি তুমি বিমলের কোন ব্যবস্থা করে ফেলতে পারতে তবে নিশ্চিন্ত হতাম আমি। আচ্ছা, রতীশ ওরা যাবার আগে নাহয় এ ব্যাপারে আবার ভেবে দেখব আমরা। না কি বলো”?

সীমন্তিনী সায় দিয়ে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তাই করব। আমার কথাটা রাখলে বলে সত্যিই খুব খুশী হলুম আমি। তবে দাদাভাইকে এখনই এ ছুটির ব্যাপারে কিছু বলার দরকার নেই। কারন বিয়ের ডেটটা এখনও ফাইনাল হয়নি। সেটা হলেই তোমাকে জানিয়ে দেব বৌদি। এবার আমি রাখছি, বাই” বলে ফোন কেটে দিল।
 

***************

তখন বিকেল পায় পাঁচটা। ছোটকাকী চন্দ্রাদেবীর ঘরে চঞ্চল আর চন্দ্রিকা নবনীতা আর অর্চনাকে নিয়ে হৈ হুল্লোরে ব্যস্ত। আর ভট্টাচার্যি বাড়ির বসবার ঘরে বাড়ির বড়রা সবাই বসে সীমন্তিনীর সাথে অর্চনার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আলাপে মত্ত। মূলতঃ বিয়ের যোগারযন্ত্র ব্যবস্থাপনা নিয়েই কথা হচ্ছিল। বিয়ের ক’দিন আগেই কালচিনি থেকে বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুককে নিয়ে আসা হবে। সীমন্তিনীর সাথে নবনীতা, অর্চনা আর লক্ষ্মীকে রাজগঞ্জ আসতে হবে। এছাড়াও কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায় আর কালচিনি হাসপাতালের ডাক্তার সোমকেও বিয়েতে আসবার আমন্ত্রণ জানাতে হবে। কলকাতা থেকে রতীশ আর রচনার সাথে মহিমা মালহোত্রা সেনও বিয়ের কয়েকদিন আগেই রাজগঞ্জে এসে যাবে। এ’সমস্ত ব্যাপার নিয়েই কথা হচ্ছিল। এমন সময়েই সীমন্তিনীর হাতের ফোন বেজে উঠল। কালচিনি থানার ওসি মিঃ রায় ফোন করেছেন দেখেই সীমন্তিনী ঘরের এক কোনায় গিয়ে ফোনটা ধরে বলল, “হ্যাঁ মিঃ রায়, বলুন ওদিকে সব কিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছেন তো”?

মিঃ রায় ওদিক থেকে বললেন, “ম্যাম, সে ব্যাপারেই আপনাকে ফোন করছি। এদিকে সব কিছু গোছগাছ করা হয়ে গেছে। কিন্তু ম্যাম, আজ অর্চনাদের বাড়ি গিয়ে শুনলাম ও নাকি আপনার ওখানে আছে? কিন্তু কাল তো ওকে কোর্টে প্রেজেন্ট থাকতে হবে ম্যাম”।

সীমন্তিনী জবাব দিল, “সে ব্যাপারটা আমি ভুলিনি মিঃ রায়। আসলে ও’ বাড়িতে প্রায় রোজই মা বাবা ভাইদের সাথে নানা কথাবার্তার মধ্যেও বারে বারেই ওর স্বামী শ্বশুরের কথা উঠে আসত, বার বার ওই রাতের এক্সিডেন্টের কথা, হাসপাতালের কথা এ’সব ওদের আলোচনায় চলে আসত। তাই ডঃ সোমের পরামর্শ মতই আমি অর্চনাকে আমার এখানে নিয়ে এসেছিলুম। হ্যাঁ, আপনাকে কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি আমার। তবে আপনি শুনে খুশী হবেন মিঃ রায়, এখানে আসবার পর দু’ তিন সপ্তাহের ভেতরেই অর্চনা পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আজও ওকে সঙ্গে নিয়েই আমি এক জায়গায় বেড়াতে এসেছি। তবে কাল যে ওকে কোর্টে প্রেজেন্ট থাকতে হবে, এ কথা আমার মনেই আছে। তাই আপনি ভাববেন না মিঃ রায়, আমি নিজে ওকে নিয়ে ঠিক সময়েই কোর্টে পৌঁছে যাব। তা, এরমধ্যে পাব্লিক প্রসিকিউটারের সাথে আপনার কি আর আলাপ হয়েছিল? তার প্রিপারেশন কেমন? আর কেসটা কত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবেন উনি”?

মিঃ রায় জবাবে বললেন, “হ্যাঁ ম্যাম, গত এক সপ্তাহের ভেতর তার সাথে আমার তিন চার দিন ফোনে কথা হয়েছে। আজ আমি তার চেম্বারেও গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে সব রকম আলোচনা করেছি। আর তিনি যেমন যেমন সাক্ষী উপস্থিত করতে বলেছেন, সেভাবেই আমি ম্যানেজ করেছি। ডক্টর সোমকেও জানিয়ে দিয়েছি। তিনিও কাল আমাদের সাথেই কোর্টে যাচ্ছেন। আচার্যিদের বাড়ির প্রতিবেশীদের মধ্যে চারজন আর রেল লাইনের ধারে যারা ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করেছিল তাদের দু’জনকে সাক্ষী হিসেবে কোর্টে পেশ করছি কাল আমরা। সরকারি উকিল তো খুবই আশাবাদী যে কালই কেসটার রায় বের করে ফেলতে পারবেন”।

সীমন্তিনী সব শুনে বলল, “বাহ, তাহলে তো বেশ ভালই হবে। আর এটা যেমন ওপেন কেস, তাতে করে প্রতিপক্ষের উকিলের করবার কি আর বেশী কিছু আছে? তবে আপনি অর্চনাকে নিয়ে ভাববেন না। আপনারা ওখান থেকে চলে আসুন। আমি অর্চনাকে নিয়ে কোর্টে পৌঁছে যাব। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা আছে মিঃ রায়”।

মিঃ রায় জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ ম্যাম, বলুন”।

সীমন্তিনী বলল, “আমরা অর্চুর আবার বিয়ে দেবার প্ল্যান করছি। একটা ভাল ছেলেও পেয়েছি। শুধু বিয়ের দিন স্থির করাটাই বাকি আছে। তবে বিয়েটা কালচিনি থেকে দেওয়া সম্ভব হবে না। বিয়েটা হবে আমাদের রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে। আর এটা এ জন্যেই আপনাকে আগাম জানিয়ে রাখছি যে, বিয়ের দিন আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে অর্চনাকে আশীর্বাদ করতে মিঃ রায়”।
 

মিঃ রায় উৎফুল্ল স্বরে জবাব দিলেন, “আরে এ তো দারুণ একটা সুখবর। জানেন ম্যাম, মেয়েটা জীবনে যত ঝড় ঝাঁপটা সয়েছে, তাতে মেয়েটাকে দেখলেই আমার মনে খুব কষ্ট হত। ফুলের মত সুন্দর অতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে তার জীবনের শুরুতেই সাত সাতটা বছর কী নরক যন্ত্রণাই না ভোগ করেছে। ভগবান ওর মঙ্গল করুন। তবে বিয়ের দিন তো এখনও স্থির হয়নি বললেন। দয়া করে ডেটটা জানাতে ভুল করবেন না ম্যাম। আমি অবশ্যই ওর বিয়ে দেখতে যাব। আচ্ছা ম্যাম, কাল তো আমাদের মুখোমুখি দেখা হচ্ছেই। বাকি কথা না হয় কালই আলোচনা করা যাবে। আজ ছাড়ছি ম্যাম”।

সীমন্তিনীও খুশী হয়ে বলল, “হ্যাঁ মিঃ রায়, কাল দেখা হচ্ছে আমাদের। ভালো থাকবেন। বাই”।

ফোনে কথা শেষ হতেই সরলাদেবী এসে সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বললেন, “সত্যি রে মা। তোর জন্যে আমার গর্বের শেষ নেই রে। সকলের সবদিকে তোর সব সময় নজর আছে। ভগবান তোর মঙ্গল করুন”।

সীমন্তিনীও তার বড়মার হাত ধরে বলল, “বড়মা ও’সব কথা আর উঠিও না গো প্লীজ। অর্চুকে অনেক কষ্টে আমরা সবাই মিলে স্বাভাবিক করে তুলেছি। এখানে এসেও ও খুব আনন্দে আছে। এখন আমরা যদি ওর পুরনো ব্যাপার গুলো নিয়ে কথা বলতে থাকি, আর ও যদি হঠাৎ করে ও’ঘর থেকে চলে আসে, তাহলে ওর আবার মন খারাপ হয়ে যাবে”।

ছোটকাকু চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যাঁ সে তুই ঠিকই বলেছিস মা। মেয়েটা সত্যিই বড্ড ভাল রে। তবে ওর জন্যে তুই যা করেছিস, তাতে গর্বে আমাদের বুকই ভরে উঠেছে রে”।

সীমন্তিনী তার কাকুকে থামাতে বলল, “কাকু, প্লীজ তুমিও আর ওইসব কথা এখন পেড়ে বোস না তো। আর তাছাড়া, আমি তো ওর জন্যে কিছু করিনি। আমি যা কিছু করেছি তা কেবল আমার কথা রাখবার জন্যেই করেছি। রচুর বিয়ের আগে আমি ওকে কথা দিয়েছিলুম যে রচুকে কখনও কষ্ট পেতে দেবনা আমি। আর মাসি মেসোকেও বলেছিলাম তারা সব সময় আমাকে পাশে পাবেন। তাদের তিনজনকে দেওয়া কথা রাখতেই আমি এ’সব করেছি। রচুর চোখে আমি কি জল দেখতে পারি”?

ঘরের এককোনায় সীমাদেবী মেয়ের কথা শুনে নিজের চোখে ছাপিয়ে আসা জল শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছলেন। আর ছোটকাকি চন্দ্রাদেবী সীমন্তিনীকে ধরে আবার সোফায় বসাতে বসাতে বললেন, “আচ্ছা মন্তি, আমাদের বৌমা আর রতুও আসছে তো বিয়েতে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে, এ কেমন কথা বলছ তুমি ছোটমা? রচুর দিদির বিয়ে, আর রচু দাদাভাই আসবে না, এ কী কখনও হতে পারে”?
 

চন্দ্রাদেবী বললেন, “হ্যাঁ তা তো ঠিক। কিন্তু কাল রাতেই বৌমা বলছিল যে দু’মাসের মধ্যে গৃহারম্ভ, বিয়ে আর গৃহপ্রবেশের দিন পড়ছে। এর ভেতরেই আবার দুর্গাপূজো আর লক্ষ্মীপূজো। রতু এত ঘনঘন এতবার ছুটি নিতে পারবে না বোধহয়”।

সীমন্তিনী আগের মতই হেসে বলল, “ও নিয়ে তোমরা ভেবো না ছোটমা। রচু না এলে এ বাড়ির কেউ কি আর বিয়েতে প্রাণখুলে মজা করতে পারবে? তবে এখনও তো মাঝে অনেকটা সময় আছে। ও আমি ঠিক সামলে নিতে পারব, দেখো”।

*****************

সন্ধ্যে সাতটা। বিমলের চেম্বারে তখন লোকে লোকারণ্য। চেম্বার সংলগ্ন রেস্টরুমের বিছানায় বিমল চোখ বুজে শুয়ে আছে। নিশিতা রেস্টরুমের এক কোনায় ক্লোজেটের দড়জার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রেস্টরুম আর চেম্বারের দড়জার কাছে বিমলের স্ত্রী আর ছেলে দাঁড়িয়ে আছে শুকনো মুখে। বিমলের চেম্বারের ভেতরে অফিসের সাত আটজন কর্মচারী দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভেতর কনীনিকা, শ্রদ্ধা আর আকৃতিকেও দেখা যাচ্ছে। প্রায় সকলের চোখে মুখেই কিছুটা উৎকণ্ঠার চিহ্ন। নিশিতা বাদে অফিসের অন্যান্য সবাই একটাই কথা নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে বলে যাচ্ছে যে ‘এমন শক্তপোক্ত চেহারার বিমল আগরওয়ালার হঠাৎ এমন কী হয়েছে যে তার চেম্বারে ডাক্তার ডেকে আনতে হল’।

ঘটণার গম্ভীরতা বুঝতে না পারলেও নিশিতা, মিসেস আগরওয়ালা আর তার ছেলের শুকিয়ে যাওয়া মুখগুলো দেখে তারা অন্ততঃ মনে মনে এটুকু বুঝে গিয়েছিল, যে ব্যাপারটা খুব একটা স্বাভাবিক নয়। তাদের বসকে তারা এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে কোন দিন দেখে নি। কিন্তু গত কয়েকটা দিন থেকে তাদের বস বিমল আগরওয়ালা যে খুব টেনশনে ছিল, সেটা তারা বুঝতে পারলেও, আসল ঘটণা সম্বন্ধে তারা কেউই কিছু জানতে বা বুঝতে পারে নি।
 

ডাক্তার বিমলকে ভাল করে পরীক্ষা করে বলল, “প্রেসারটা বেশ বেড়েছে। আর সুগার লেভেলটাও বেশ হাই। আমি আপাততঃ প্রেসার আর সুগার লেভেলটা কমাবার জন্য মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি। আর কতগুলো মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছি। এগুলো এখনই আনবার ব্যবস্থা করুন। আর এই দুটো মেডিসিন তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাইয়ে দিন। তিন নম্বর মেডিসিনটা রোজ সকাল আটটা আর রাত আটটায় খাওয়াবেন। একেবারে ঘড়ি ধরে। আর চার নম্বর মেডিসিনটা রোজ সকালে খালি পেটে খেতে দেবেন। প্রথম দুটো আমি এখানেই দিয়ে দিয়েছি। ও’গুলো আপাততঃ আর রিপিট করবার দরকার নেই। তবে খালি পেটে আর লাঞ্চের দেড় ঘন্টা পরে ব্লাড সুগার টেস্ট করে তার রিডিং গুলো নোট ডাউন করে রাখবেন। আর রোজ বিপিটা মনিটর করতে হবে, তার রিডিং গুলোও লিখে রাখবেন। আর বিপি লেভেল যতক্ষণ হাই থাকবে ততক্ষণ পুরোপুরি রেস্টে রাখবেন। বেশী টেনশন যেন না নেয়। ততক্ষণ অফিসে না এসে বাড়িতে রেস্ট নিলেই ভাল। আমি কাল সকালের দিকে একবার বাড়িতে গিয়ে তার প্রেসারটা চেক করব। তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। এরমধ্যে অন্য কোনও সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু তেমন কিছু যদি ঘটেই যায়, তাহলে আমি সাজেস্ট করব, তাকে কোন নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করিয়ে দিলেই ভাল হবে”।
 

ডাক্তারের কথা শুনে সবিতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওনাকে কি এখনই বাড়ি নিয়ে যাব আমরা”?

ডাক্তার বললেন, “সেটা করলেই ভাল। আপাততঃ ইনি আউট অফ ডেঞ্জার। চাইলে এখানেও কিছুক্ষণ বসে থাকতে পারেন। তবে কোনোরকম ভাবেই সে যেন উত্তেজিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন”।

______________________________
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:47 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)