Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 207)

সীমাদেবীর এমন কথা শুনে অর্চনার চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু বেরিয়ে আসতে লাগল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সরলাদেবী অর্চনার পেছন থেকে তার দু’কাঁধে হাত রেখে বললেন, “কেঁদো না মা। মায়েদের চোখের সামনে মেয়েদের এভাবে চোখের জল ফেলতে নেই। আর এটাকে ঠিক উপহার হিসেবেই ধরোনা তুমি। এটা তোমার এ বাড়ির এই তিন মাসিমার আশীর্বাদ বলে ভাবো”।

অর্চনা সরলাদেবীর একটা হাত নিজের গালে চেপে ধরে নিজেকে সংযত করবার চেষ্টা করতে লাগল। এমন সময় চন্দ্রকান্তবাবু বলে উঠলেন, “হ্যাঁ মা, একদম চোখের জল ফেল না। আমাদের বৌমা বিয়ের মাস তিনেক বাদেই কলকাতা চলে গেছে। বিয়ের পর ওকে কোনও উপহার দেবার সুযোগ আমরা পাইনি। তোমাকে তো আমরা আগে দেখিই নি। রতু রচুর বিয়ের সময়েও তোমাকে কেউ আসতে দেয় নি। আজ প্রথমবার তোমাকে আমরা দেখছি। এমন সোনার টুকরো একটা মেয়ের মুখ প্রথমবার দেখে একটা কিছু উপহার তো আমাদের তরফ থেকে দেওয়াই উচিৎ। তুমি কোন আপত্তি কোর না”।

অর্চনা আর কোনও কথা না বলে বাড়ির তিন কর্তা আর তিন গিন্নীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। আর ঠিক এমন সময়েই ঘরের কোনে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। চন্দ্রাদেবীই ফোনের কাছে ছিলেন বলে তিনিই ফোনের রিসিভার উঠিয়ে বললেন, “হ্যালো কে বলছেন?... ও বড়বৌমা তুমি? ... হ্যাঁ হ্যাঁ ওরা সবাই এসে গেছে. ...এই তো সবাই মিলে এখন বসবার ঘরেই আছি .... না না কোন অসুবিধে হয়নি। সতু গাড়ি নিয়ে ষ্টেশনে চলে গিয়েছিল তো .... হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা ধরো, আমি মন্তিকে ফোন দিচ্ছি” বলে সীমন্তিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “মন্তি নাও, বড়বৌমা তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে”।

এমন সময় চন্দ্রিকা বলে উঠল, “আমাকে একটু কথা বলতে দেবে না তোমরা”?

সীমন্তিনী চন্দ্রিকার হাত ধরে ফোনের কাছে এসে রিসিভারটা হাতে নিয়ে চন্দ্রিকার হাতে দিয়ে বলল, “নে চন্দু, আগে তুই কথা বলে নে তোর বৌমণির সাথে”।

চন্দ্রিকা খুব খুশী হয়ে রিসিভার কানে লাগিয়ে বলল, “বৌমণি, আমি চন্দু বলছি গো .......না গো বৌমণি, এখন তো সবাই এ’ঘরে আছেন, আর বড়দি আমার সাথে আছেন, তাই বোধহয় কেউ বারণ করেনি ..... হ্যাঁগো, দু’জনেই তো খুব সুন্দর। আমার মনটা একেবারে খুশীতে ভরে গেছে। নীতাদি, অর্চুদি সব্বাই খুব ভাল গো .... হ্যাঁ হ্যাঁ .... কিন্তু বৌমণি, অর্চুদির যে বিয়ে আর সে বিয়েটা যে আমাদের বাড়িতে হবে, এ’ কথা তুমি আমাকে আগে বলনি কেন ..... ও-ও বুঝেছি .... আচ্ছা আচ্ছা সে ঠিক আছে, কিন্তু তোমার দিদির বিয়ে হলে তোমাকে তো বাড়ি আসতেই হবে ......... সত্যি বলছ? সত্যি বলছ তুমি বৌমণি? ঈশ আমি বোধহয় খুশীতে পাগল হয়ে যাব গো। আমার যে এ’কথা শুনেই নাচতে ইচ্ছে করছে গো ....হ্যাঁ হ্যাঁ বড়দি তো আমার সাথেই আছেন, এই নাও বড়দির সাথে কথা বলো” বলে সীমন্তিনীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েই সে সরে এসে অর্চনার হাত ধরে বলল, “তুমি একটু আমার সাথে এসো না অর্চুদি প্লীজ” বলে অর্চনার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরের বাইরে চলে গেল।

সীমন্তিনী রচনার সাথে কথা শেষ করে নবনীতার পাশে বসে সরলাদেবীকে বলল, “ও বড়মা, বলছি কি, নীতা অর্চুকে ওদের থাকবার ঘরটা একটু দেখিয়ে দাও না। ওরা পোশাক পাল্টে হাতমুখটা ধুয়ে নিক”।

সরলাদেবী বললেন, “তোরা তিনজনই রতুদের ঘরটাতেই থাকবি। আমি গুছিয়ে রেখেছি তোদের জন্য। কিন্তু তুইও যা। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়”।

সীমন্তিনী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “বড়মা, জীবনে এমন সুযোগ তো আমার কপালে আগে জোটেনি। আজ যখন জেঠুরা একসাথেই খাবেন, তাহলে আমার খুব ইচ্ছে করছে তাদের জন্য খাবার বেড়ে দিতে। প্লীজ, বাধা দিও না তোমরা”।

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক কথা বলেছিস মন্তি মা। আমাদের কপালেও যে এমন শুভদিন আর আগে আসেনি রে। চল চল, খেতে দে আমাদের” বলেই তার দুই দাদার দিকে চেয়ে বললেন, “বড়দা, ছোড়দা, আর দেরি না করে চলো। নইলে তোমাদের দোকানে যেতে কিন্তু দেরী হয়ে যাবে”।

সীমন্তিনী নবনীতার হাত ধরে সোফা থেকে উঠিয়ে বলল, “নীতা ওঠ। তুই আর অর্চু ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি ততক্ষণে জেঠুদের খাইয়ে দিই। তারপর আমরা সবাই একসাথে বসে খাব। কিছু মনে করিসনে বোন, গত বারো বছরের ভেতর এমন সুযোগ আমি পাইনি। আজ এ সুযোগটা হাতে পেয়েও যদি কাজে না লাগাই, তবে খুব আফসোস হবে রে” বলেই সরলাদেবীকে বলল, “বড়মা, তুমি প্লীজ ওদের দাদাভাইদের ঘরটা দেখিয়ে দাও, আর বাথরুমটাও একটু দেখিয়ে দিও। জেঠুদের খাওয়া হয়ে গেলে আমি সেখানে গিয়ে চট করে হাতমুখটা ধুয়েই তোমাদের সব্বাইকে একসাথে নিয়ে খেতে বসব”।


******************

সেদিন রাজগঞ্জের ভট্টাচার্যি পরিবারে যেন উৎসব লেগে গেল। অবশ্য উৎসবের আনন্দ তো আগের রাত থেকেই শুরু হয়েছিল। সীমন্তিনী বাড়ি আসছে শুনেই সেটা শুরু হয়েছিল। পরের দিনটা ছিল রবিবার। আর প্রত্যেক রবিবারেই তিন ভাইয়ের সবগুলো দোকানই শুধু দুপুর পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর একটার আগেই রতিকান্তবাবুরা সকলেই বাড়ি ফিরে এলেন। সকলের চোখে মুখেই খুশীর ছোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। নবনীতা আর অর্চনাকে সবাই খুব আদর করছে দেখে সীমন্তিনীরও খুব ভাল লাগছে। অবশ্য এ ছাড়াও আরেকটা ভাল লাগা তার মন ছেয়ে আছে আজ। স্মরণীয় কালের মধ্যে কবে তার মা বাবা তার হাতের দেওয়া খাবার খেয়েছে, তা সে মনেই করতে পারছিল না। মুখে তাদের দু’জনের কেউই সীমন্তিনীর সাথে কোন কথা না বললেও, সে নিজে হাতে যে জীবনে প্রথমবার তার বাবা মাকে খাবার বেড়ে দিতে পেরেছে, এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া। আর এটা সম্ভব হল অর্চু বা রচুকে উপলক্ষ করেই।
 

চঞ্চল চন্দ্রিকা তো সারাক্ষণই নবনীতা আর অর্চনাকে নিয়েই হুল্লোরে মেতে ছিল। বাড়ির তিন গিন্নীও ঘর সংসারের কাজ সামলাবার ফাঁকে ফাঁকে ওদের দু’জনের সাথে কথা বলেছেন। আর সকলেই যে সেটা অন্তর থেকেই করছেন, এটা বুঝতে পেরে সীমন্তিনীও খুব খুশী। রচনা এক দু’ঘন্টা পরপরই সীমন্তিনী, নবনীতা বা অর্চনার ফোনে ফোন করে বাড়ির সকলের সাথে কথা বলেছে। অর্চনার বিয়ে উপলক্ষে রচনা বাড়ি আসছে শুনেই চন্দ্রিকার যেন আর খুশীর সীমা পরিসীমা নেই। একটা উচ্ছ্বল রঙিন প্রজাপতির মতই সে সারা বাড়িময় ছুটোছুটি লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে।

দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েই রতিকান্তবাবু কালচিনির বাড়িতে ফোন করলেন। বিধুবাবুর সাথে অর্চনার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে অনেক কথা বলবার পর অনুরোধ করলেন যে বিধুবাবুরা সকলেই যেন বিয়ের অন্ততঃ দু’তিনদিন আগে রাজগঞ্জ চলে আসেন।
 

বিকেলের দিকে সীমন্তিনী নিজেই মহিমাকে ফোন করল। মহিমা ফোন ধরেই বলল, “কী ব্যাপার গো মন্তি? কাল রাতে কতবার তোমাকে ফোন করেছি আমি। সবসময় তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছি। তুমি ঠিক আছ তো”?

সীমন্তিনী বলল, “সরি বৌদি, আমি ইচ্ছে করেই ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিলুম গো। আসলে কাল রাতে হঠাতই ভোরের ট্রেনে একটু বেরিয়ে আসবার প্রোগ্রাম বানিয়ে ফেলেছিলুম। রাত তিনটের সময় উঠে আমাদের ষ্টেশনে আসতে হয়েছিল। তাই তিন চার ঘন্টা ঘুমোতে হবেই বলে ইচ্ছে করেই ফোন অফ করে রেখেছিলুম”।

মহিমা এবার খানিকটা স্বস্তি পেয়ে বলল, “হ্যাঁ, সে খবর তো আজ সকালে রতীশের মুখেই শুনেছি। কিন্তু তোমার সাথে যে আমার অনেক কথা আছে গো মন্তি। অনেকটা সময় লাগবে। তুমি কি এখন কথা বলতে পারবে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আপাততঃ ঘন্টাখানেক ফ্রি আছি। বলতে পারো। তবে মিঃ অধিকারীর সাথে যে তোমার একটা ডীল হয়েছে, আর জমিটার রেজিস্ট্রেশন যে আগামীকাল হচ্ছে, এ খবর আমি পেয়ে গেছি। কনগ্র্যাচুলেশন বৌদি। শুভ কাজটা তাহলে সত্যিই শুরু হল”।

মহিমা বেশ খুশী খুশী গলায় বলল, “ধন্যবাদ মন্তি। কিন্তু যা হচ্ছে তা যে তুমি আমার জীবনে না এলে সম্ভব হত না, সেটা আমি খুব ভাল ভাবেই জানি। আচ্ছা শোনো, আরও অনেক কথা বলার আছে আমার। মিঃ অধিকারী কিন্তু সত্যিই আমাকে ভীষণ সাপোর্ট করছেন সব দিক থেকে। জমি কেনা বা মার্কেট কমপ্লেক্স বানানো তো বটেই, এমন সব সাজেশান উনি আমাকে দিচ্ছেন যা আমরা আগে ভাবতেও পারিনি। তার পরামর্শেই কিছু আইনী ঝামেলা এড়াতে আগামী কালই আমাদের একটা সোসাইটি বানাতে হচ্ছে। ওই সোসাইটিতে আমার সব মেয়েদের মেম্বার বানিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে তিরিশ একতিরিশ লাখ করে টাকা নিয়ে পনেরো কোটি টাকার সোসাইটি ক্যাপিটাল ফান্ড বানাতে হচ্ছে আগে। তারপর ওই সোসাইটির নামে একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে হবে। তারপর জমি কেনা যাবে। তাই আগামীকালই জমিটা কেনা হচ্ছে না। সোসাইটি ফর্মেশন, আর ব্যাঙ্ক একাউন্টটা না খোলা অব্দি জমি কেনা যাচ্ছে না। হয়ত আরও দু’চার দিন দেরী হতে পারে। তবে সে নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। আমি যেটা ভাবছি তাহল, আমার কাছে তো আটচল্লিশজন মেয়েই আছে। মিঃ অধিকারী বলছিল যে আর দু’জন সদস্য হলে ভাল হত। তাই আমি মনে মনে ভেবেছি তোমার আর রচনার নামটাও ইনক্লুড করে দেব। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে যে সোসাইটির সব ক’জন সদস্যকেই রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে, আর সেখানেই সাইন করতে হবে। রচনাকে তো আমি ডেকে নিতেই পারব, কিন্তু তুমি তো এখানে নেই”।

সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনে বলল, “বৌদি তুমি যেটা ভাবছ তা সম্ভব হবে নাগো”।

মহিমা বলল, “কেন হবে না মন্তি? আরে তোমাদেরকে তো কোনও টাকা দিতে হচ্ছে না। টাকা নিয়ে ভাবছ তো তুমি”?

সীমন্তিনী শান্ত স্বরে বলল, “না বৌদি, তা নয়। আসলে আমি রচুকে এখনই অন্য কোনও বিষয়ে জড়িয়ে ফেলতে চাই না। ও শুধু আমার দাদাভাই আর তার পরিবারকে নিয়েই থাকুক, এটাই আমি চাই। আর আমার নিজের পক্ষে অসুবিধেটা হল, আমি একজন সরকারি চাকুরে। তাই আমার পক্ষে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া পুরোপুরি বেআইনি। এবার বুঝেছ তো”?

মহিমা একটু মনমরা হয়ে বলল, “হ্যাঁ মিঃ অধিকারীও এমন একটা কথা বলেছিলেন বটে। কিন্তু আমি তখন অতটা আমল দিই নি। তবে তুমি বা রচনা যদি নিজের নামে মেম্বারশিপ না-ও নিতে চাও তাহলে কোন ভাই বোনদের নামও তো দিতে পার”।

সীমন্তিনী এবার একটু হেসে বলল, “আমার ভাই বোনেরাও কেউ এ মূহুর্তে কলকাতা যেতে পারবে না বৌদি। কারন আমরা চার ভাই বোন দুরে দুরে ছড়িয়ে আছি। বাড়িতে শুধু দু’জনই আছে। প্রথমতঃ ওরা মাইনর, দ্বিতীয়ত ওদের দু’জনেরই সামনে কলেজের পরীক্ষা। কিন্তু ওদের নাম তোমার সোসাইটিতে ঢোকাতে গেলে তো ওদেরকেও সেখানে কাল হাজির থাকতে হবে। সেটা তো একেবারেই সম্ভব নয় বৌদি”।

মহিমা আফসোসের সুরে বলল, “ইস, এটাও সম্ভব না? তাহলে কি করি বলো তো”?

সীমন্তিনী বলল, “তুমি এত মুষড়ে পড়ছ কেন বৌদি। ওই আটচল্লিশ জনের সাথে তুমি তো তোমার নামটাও ঢোকাবে, তাহলে তো ঊনপঞ্চাশ জন মেম্বার হয়ে যাবে। আর তোমার বাড়ির কাজের বৌটাকেও সঙ্গে নিয়ে নাও। তাহলেই তো হয়ে গেল”।

মহিমা একটু সময় বাদে জনান দিল, “হ্যাঁ এ পরামর্শটা তুমি ভালই দিয়েছে। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোমাদের দু’জনকেই মেম্বার করে নিতে। আচ্ছা বেশ, আমার এ অনুরোধটা যখন রাখতেই পারছ না, তাহলে আমার অন্য একটা কথা কিন্তু তোমাকে রাখতেই হবে মন্তি। সেটাতে কিন্তু একেবারেই না করতে পারবে না তুমি”।

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আবার কী অনুরোধ করবে তুমি বৌদি”?

মহিমা বলল, “রতীশের জন্য ইনস্টিটিউট বানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, সেটাতে তুমি আপত্তি করলে। এ ব্যাপারটাতেও তোমার আপত্তি। তাহলে আমি রতীশের জন্য একটা প্লট কিনে সেখানে একটা নতুন বিল্ডিং বানিয়ে দেব। সেখানেই রতীশ ইনস্টিটিউটটা খুলবে। ওকে আর অন্য কোথাও বছর বছর লাখ তিনেক টাকা খরচ করে কোন কমপ্লেক্স লিজ নিতে হবে না। এতে আপত্তি কোর না প্লীজ”।

সীমন্তিনী একটু চুপ করে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার এ’ কথাটার জবাব আমি এখনই দিতে পারছি না। আসলে এখন থেকে নভেম্বর মাসের শেষ অব্দি আমি চুড়ান্ত ভাবে ব্যস্ত থাকব গো। আর দাদাভাইয়ের যোগা ইনস্টিটিউট নিয়ে এর আগে আর কিছু ভাবতেই পারব না। তাই যদি এটা করতেই হয় তার জন্য তো সময় আমাদের হাতে আছেই। এখনই তো আর সেটা করতে হচ্ছে না। কিন্তু তোমার ওই মার্কেট কমপ্লেক্স বানিয়ে, সবগুলোকে মেয়েকে তাদের ব্যবসার মূলধন দিয়ে দেবার পর তোমাকে তো বীথিকার জন্যেও আলাদা করে কিছু টাকা রাখতে হবে। এ’সবের পরেও তোমার হাতে একটা জায়গা কিনে তাতে একটা যোগা ইনস্টিটিউটের জন্য একটা বিল্ডিং তৈরী করে দেবার মত পয়সা থাকবে”?

মহিমা একটু লাজুক ভাবে জবাব দিল, “আসলে মন্তি, এখন আমার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক একাউন্টে যত টাকা আছে বলে তোমাকে আগে বলেছিলামে, সে হিসেবটাতে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল গো। আরেকটা একাউন্টে আমার আরও তিন কোটির মত টাকা আছে গো। আর মিঃ অধিকারী এরই মধ্যে আমাদের মার্কেট কমপ্লেক্স নিয়ে এস্টিমেট বানাতে শুরু করেছেন। উনি মনে করছেন পাঁচ কোটি টাকার ভেতর কমপ্লেক্সটা পুরো হয়ে যাবে। তাই আমি হিসেব করে দেখছি যে, ওদের সব্বাইকে ব্যবসার মূলধন দিয়ে, এখনকার ব্যবসা বন্ধ করবার পর থেকে কমপ্লেক্সটা চালু না হওয়া অব্দি ওদের মাসিক টাকার যোগান দিয়ে, আর বীথির জন্যে আলাদা দু’কোটি রেখেও আমার হাতে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি থাকবে। রতীশের জন্য একটা তিন সাড়ে তিন হাজার স্কয়ার ফুটের জমি কিনে তাতে সবরকম সুবিধার প্রভিশন রেখে একটা বিল্ডিং তৈরী করতে খুব বেশী হলে দেড় থেকে দু’ কোটি লাগবে। সে’টুকু তো আমি অনায়াসেই করতে পারব। তাহলে রতীশ একটা পুরোপুরি নিজস্ব কমপ্লেক্স পেয়ে যাবে। ওকে আর অন্য কোন কমপ্লেক্স লিজে নিতে হচ্ছে না। তাছাড়া প্রতি বছরেই লিজ এগ্রিমেন্ট রিনিউ করবার সময় লিজের এমাউণ্টটাও তো বাড়তে থাকবে। ওকে তো তখন সেটা নিয়েও ভাবতে হবে না। বুঝতে পারছ ওর কতটা বেনিফিট হবে”?

সীমন্তিনী শান্ত কন্ঠে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তোমার কথা আমি সবটাই বুঝতে পারছি। তুমি আমাকে যেটা নিয়ে অনুরোধ করছ সেটাও আমি এখনই রিজেক্ট করছি না। তবে নভেম্বর মাসটা পেরিয়ে যাবার পরেই আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে পারব। তুমি প্লীজ, এই দুটো মাস একটু ধৈর্য ধরো। ইন দা মীন টাইম তোমার মার্কেট কমপ্লেক্সের কাজটা নিয়েই ভাবো। আর শোনো বৌদি, তোমার কাছেও আমার আরেকটা নতুন কথা বলবার ছিল গো। অবশ্য এ কথাটা তোমাকে বলা আমার সাজে না। দাদাভাইয়েরই তোমাকে বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু এমন একটা অনুরোধ তোমাকে করতে ওর খুব সঙ্কোচ হচ্ছে। তাই আমিই বলতে বাধ্য হচ্ছি”।

মহিমা বলল, “আরে তুমি এত হেজিটেট করছ কেন মন্তি। তুমি আমাকে সব ব্যাপারে সব কিছু বলতে পার। আর ব্যাপার যা-ই হোক না কেন, আমি তাতে কিছু মাইন্ড করব না”।

সীমন্তিনী শান্তভাবেই বলল, “বৌদি, রচুর বাবার বাড়িতে নতুন কনস্ট্রাকশন করা হচ্ছে। সেই বাড়ি তৈরীর ব্যাপারে অক্টোবরের ১৮ তারিখে সেখানে একটা ছোট অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার তিনদিন বাদেই দুর্গাপূজো। আবার তার প্রায় দু’মাস বাদেই ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ সেখানে গৃহপ্রবেশের পূজো এবং অনুষ্ঠান হবে। তাই রচুর বাবা মা চাইছেন, ওই দিনগুলোতে যেন রচু আর দাদাভাই তাদের সাথে থাকেন। আবার এর মাঝে আরেকটা ব্যাপার আছে। রচুর দিদির বিয়ের ব্যাপারে একটা কথা চলছে। হয়ত নভেম্বরের ২৯ তারিখেই বিয়েটা হবে। তাই দিদির বিয়েতে রচুরও তো থাকাই উচিৎ। কিন্তু দাদাভাই এত ঘণঘণ এতবার ছুটি .....”

মহিমা সীমন্তিনীকে কথার মাঝেই বাধা দিয়ে বলল, “রচনার দিদির বিয়ে? ওই মেয়েটা যাকে শশুরবাড়ির লোকেরা প্রায় মেরে ফেলেছিল”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যাঁ বৌদি, সেই মেয়েটাই। এখন ও আগের ট্রমাটা কাটিয়ে উঠেছে। আর ও এখন পুরোপুরি সুস্থও হয়ে উঠেছে। ওর বয়সও কম, সবে তেইশ বছর, রচুর থেকে মাত্র দু’বছরের বড়। স্বামী মারা গেছে বলেই অমন কচি একটা মেয়ের জীবন শেষ হয়ে যাক, সেটা আমি চাইনি। তাই অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওদের পরিবারের সবাইকে রাজী করিয়েছি আমি। একটা ভাল ছেলেও খুঁজে পেয়েছি। তার সাথেই ওর বিয়ে দেব বলে ভেবেছি”।

মহিমা খুব খুশী গলায় বলল, “খুব ভাল করেছ তুমি মন্তি। আমিও তোমাকে এ ব্যাপারে পুরো সাপোর্ট করছি”।

সীমন্তিনী বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বৌদি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাপোর্ট করবার জন্যে। কিন্তু বৌদি, দিদির বিয়েতে রচু না এলে কি ভাল দেখায় বলো”?

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “কেন? রচনা কি যাবে না বলছে? ও কি মন থেকে ওর দিদির আবার বিয়ে দেবার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “না না বৌদি, তা নয়। এ বিয়ে ঠিক হওয়াতে রচুও খুব খুশী হয়েছে। কিন্তু দাদাভাই না এলে তো রচু একা আসবে না। আর দাদাভাই তোমার কাছে এত ছুটি চাইতেও লজ্জা পাচ্ছে। আসলে দুটো মাসের ভেতরেই চারটে অকেশন পড়ে যাচ্ছে তো”।
 

মহিমা বলল, “আচ্ছা দাঁড়াও দাঁড়াও। বাড়ির শুভারম্ভ হচ্ছে ১৮ই অক্টোবর, পূজো ২১শে, আর গৃহপ্রবেশের কথা বললে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে। আবার রচনার দিদির বিয়ে হচ্ছে নভেম্বরের ২৯ তারিখে। হু, তাহলে দু’মাসের মধ্যে ওদেরকে তিন চারবার বাড়ি যেতে হচ্ছে। হ্যাঁ সবগুলো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলে বেশ চাপ পড়বে ওদের ওপর। আর আমিও একটানা দু’মাস রতীশকে ছুটি দিতে পারব না। আবার একবার তিন চার দিনের ছুটিতে গিয়ে ফিরে এসে আবার ক’দিন পরেই আবারও তিন চার দিনের ছুটি নিয়ে যাবে। আবার মাসখানেক পর যেতে হবে। এ তো সত্যিই বেশ চাপের ব্যাপার”।

সীমন্তিনী বলল, “সেটাই তো বৌদি। দাদাভাই এ জন্যেই তোমার কাছে কথাটা বলতেই লজ্জা পাচ্ছেন। আর আমিও জোর দিয়ে তোমাকে কিছু বলতে পারছি না। তুমি তো একদিন বলেছিলে যে এখনই দাদাভাই তার নিজের ইনস্টিটিউট শুরু করে দিক। কিন্তু আমি নিজেই চাইছিলুম দাদাভাই তোমার ওখানে অন্ততঃ ছ’টা মাস কাজ করুক। তারপর ও তোমার আশীর্বাদ নিয়ে নিজের ইনস্টিটিউট শুরু করুক। কিন্তু এ অনুষ্ঠান গুলোতে ওরা না এলে রচুর বাড়ির লোকজনেরা মনে খুব কষ্ট পাবে। তাই তোমাকে আমি কী যে বলি, সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না”।
 

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর মহিমা বলল, “আমি একটা পরামর্শ তোমাকে দিতে পারি এ ব্যাপারে মন্তি। অবশ্য তাতে আমার লোকশানই বেশী হবে। কিন্তু তবু আমি সেটা মেনে নেব। তবে আমার কয়েকটা শর্ত তোমাকে মানতে হবে”?

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:46 AM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)