Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 204)

সুরজিতবাবু একটু সময় চুপ করে থেকে বললেন, “ঠিক আছে ম্যাডাম। আপনার সাথে আমার এখনও মুখোমুখি পরিচয় হয়নি। এতদিন নানা জনের মুখে আপনার ব্যাপারে অনেকরকম কথা শুনেছি। আজ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে দেখার বড় লোভ হচ্ছে মনে। অবশ্য আপনার দুটো প্রজেক্ট যখন আমরা হাতে নিয়েছি, তখন দেখা তো হবেই। তবে কবে সেটা হবে, তারজন্যেই আজ থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব। ভাল থাকবেন ম্যাডাম। গুড নাইট”।

সীমন্তিনীও ‘গুড নাইট’ বলে ফোন বন্ধ করেই বড় করে একটা শ্বাস ফেলে পাশে তাকিয়ে দেখে নবনীতা তার বাঁপাশে বসে আছে। সীমন্তিনীর চোখে মুখে উত্তেজনা আর ভাল লাগার ছোঁয়া দেখতে পেয়ে অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে গো দিদিভাই? তোমাকে খুব খুশী খুশী লাগছে হঠাৎ”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “খুশীর খবর পেলে, কার না আনন্দ হয় বল তো? বলছি বলছি, সব বলছি। আগে তুই বাড়িতে একটা ফোন কর তো অর্চু। আর বাবাকে বল, কাল সুরজিত অধিকারী বলে একজন এখান থেকে কালচিনীর বাড়িতে যাচ্ছেন। বলবি আমিই তাকে পাঠাচ্ছি। বাড়ি তৈরীর ব্যাপারে বাড়ির দলিল, ইলেকট্রিসিটি বিল, খাজনার রসিদ, আর যা যা চায়, সব যেন তাকে দেন। বুঝেছিস”?

অর্চনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমি এখনই ফোন করে বাবাকে এ’কথা বলে দিচ্ছি”।

সীমন্তিনী নবনীতাকে বলল, “তুই তখন থেকে হাঁ করে বসে আছিস কেন? চা জল খাবার তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। খেয়ে নে তাড়াতাড়ি। অনেক কথা আছে তোকে বলবার। নে নে তাড়াতাড়ি কর”।

নবনীতা সীমন্তিনীর কথা শুনে আর তার হাবভাব দেখে অবাক হলেও কোন কথা না বলে খেতে শুরু করল। নবনীতা খাবার শেষ করে চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে অর্চনা তার বাবাকে সীমন্তিনীর বলা কথাগুলো ভাল করে বুঝিয়ে দিল।
 

নবনীতার খাওয়া শেষ হলে তিনজনে মিলে অর্চুদের ঘরে এসে বিছানার ওপর বসতেই সীমন্তিনী হঠাৎ নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা নীতা, তুই আজ কাজে যাবার পর তোর সাথে তো আমার ফোনে কোন কথা হয়নি। আমি বেশ তাড়াতাড়িই আজ বাড়ি এসেছি বটে, কিন্তু আমার তো শরীর খারাপ হয়নি। আর বাড়ি আসবার পর থেকে অর্চু সারাক্ষণই আমার সাথে ছিল। ও-ও তো তোকে কোনও ফোন করেনি এর মধ্যে! তাহলে তুই কিকরে জানতে পারলি যে আমার শরীর খারাপ হয়েছে”?

সীমন্তিনীর কথা শুনে নবনীতা প্রায় বিষম খেতে খেতেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ওমা তা কেন দিদি? ঘরে ঢুকেই তোমাকে আর অর্চুকে অমন চুপচাপ বসে থাকতে দেখেই তো আমার মনে হয়েছিল তোমার মনটা বুঝি .....”

“ও, তাহলে আমার কাছে মিথ্যে কথা বলতেও তোর মুখে আটকাচ্ছে না তাহলে? বাঃ, বেশ ভালই উন্নতি হয়েছে তো তোর” নবনীতাকে মাঝপথে থামিয়েই কথাগুলো বলল সীমন্তিনী।

নবনীতা অবাক হয়ে সীমন্তিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, “মানে? কী মিথ্যে বললাম আমি”?

সীমন্তিনী গম্ভীর মুখে বলল, “গত একঘন্টায় তুই দু’বার মিথ্যে কথা বলেছিস নীতা। এইমাত্র আমাকে বললি যে ঘরে ঢুকেই তুই বুঝতে পেরেছিস যে আমার মন বা শরীর খারাপ। এটা একটা মিথ্যে কথা। আর তার আধঘন্টা বা চল্লিশ মিনিট আগে জয়া ম্যাডামের কাছেও তুই আরেকটা মিথ্যে কথা বলেছিস। আর তোর মিথ্যে কথাটা শুনেই জয়া ম্যাডাম আজ তোকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। কি, ঠিক বলছি তো”?
 

নবনীতা এমন অবাক হল যে সে অনেকক্ষণ হাঁ করে সীমন্তিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ওদিকে অর্চুও সীমন্তিনীর কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেছে। নবনীতা বেশ কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ সীমন্তিনীর হাতদুটো জড়িয়ে ধরে প্রায় কাঁদো কাঁদো সুরে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও দিদি। সত্যি খুব ভুল করে ফেলেছি আমি। কিন্তু বৌদির ফোন পেয়েই তো আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই ওই মূহুর্তে যেটা মাথায় এসেছিল সেটাই জয়া ম্যামকে বলেছিলাম। কারন আমি জানি জয়া ম্যামও তোমাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। তোমার শরীর খারাপের কথা শুনলে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে বাড়ি আসতে দেবেন, এ’কথা ভেবেই আমি ওই মিথ্যে কথাটা তখন বলেছিলাম”।
 

অর্চনা এবার নবনীতার কথা শুনে আরও অবাক হলেও ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু দিদিভাই, তুমি কি করে বুঝতে পারলে যে নীতাদি তার জয়া ম্যামকে মিথ্যে কথা বলেছে”?

সীমন্তিনী একহাতে নীতার একটা হাত আর অন্য হাতে অর্চনার একটা হাত ধরে বলল, “তোরা ভুলে যাসনে, আমি একজন আইপিএস অফিসার। সর্বক্ষণই আমাদের চোর গুণ্ডা বদমাশদের নিয়েই কাজ করতে হয়। কে সত্যি বলে আর কে মিথ্যে কথা বলে সেটা আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি। নীতা ঘরে ঢুকেই যেভাবে আমার দিকে ছুটে এসেছিল তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে রচু ওকে ফোন করেছিল। রচুর মুখে কিছু শুনেই ও হয়ত ভেবেছিল যে আমি ঘরে কান্নাকাটি করতে শুরু করেছি। আর তুই একা হয়ত আমাকে সামলাতে পারবি না। কিংবা এ-ও হতে পারে রচু নিজেই ও’রকম কিছু বলেছিল ওকে। তাই ও গিয়ে জয়া ম্যামকে ওই মিথ্যে কথাটা বলেছিল। আর ওর ধারণা মতই জয়া ম্যাম ওকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন”।

নবনীতা এবার জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু বৌদিই যে আমাকে ফোন করেছেন, এ ‘কথা তোমায় কে বলল দিদি”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমি। আরে বোকা, তোদের কাউকে চিনতে কি আমার আর কিছু বাকি আছে? তবু বলছি শোন, বড়মার সাথে ফোনে আমার যা যা কথা হয়েছে তার ফলে আমি মনে যত কষ্ট পেয়েছি, বড়মা যে তার চেয়েও বেশী কষ্ট পেয়েছেন এটা আমি জানি। আমাকে ওভাবে বলে তার মনেও খুব দুঃখ হয়েছে। অর্চু আমার সাথে ছিল। সেটাও রচুর পরামর্শেই। কিন্তু ও আমার হাত ধরে বসেছিল বলেই নিজের কান্নাকে অনেক কষ্টে আমি সামলে নিতে পেরেছিলুম। কিন্তু বড়মা বোধহয় নিজেকে সামলাতে পারেন নি। তার বলা কথাগুলো যে আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে, সে’কথা ভেবেই উনি বোধহয় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। আর সে জন্যেই নিশ্চয়ই তিনি রচুকে সাথে সাথে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন। আর রচুও বড়মার কথা শুনেই বুঝে গিয়েছিল যে আমি হয়ত বড়মার কথাগুলো শুনে মন খারাপ করে বসে আছি। হয়ত কান্নাকাটিও শুরু করে দিয়েছি। তাই ও প্রথম অর্চুকে ফোন করেছিল সাথে সাথে। কিন্তু তখন আমরা এ টেবিলেই বসেছিলুম, আর অর্চুর ফোনটা তোদের ঘরের ভেতর ছিল। তাই ফোনের শব্দ আমরা কেউ শুনতে পাইনি। ও হয়ত তখন লক্ষ্মীদিকেও ফোন করবার কথা ভাবছিল। এমনটা ও আগেও অনেকবার করেছে। কিন্তু লক্ষ্মীদিকে ফোন করলে আমাদের ল্যান্ডলাইন ফোনেই ওকে ফোন করতে হত। আর ল্যান্ডলাইন ফোন যে আমার ঘরেই, সেটাও ওর জানা। ও সরাসরি আমাকেও ফোন করতে চায়নি। হয়ত ভেবেছিল ওই মূহুর্তে ওর ফোন পেলে হয়ত আমি আরও কান্নাকাটি করব। তাই তুই বাড়িতে নেই জেনেও তোকেই সে ফোন করেছে। আর এ’খবর আমি ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি যে রচুর ফোন পেয়েই তুই জয়া ম্যামের কাছে গিয়ে কি বলেছিস। আমার শরীর খারাপের কথা শুনেই তিনিও তোকে ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে আসতে বলেছেন” এতখানি বলার পর একটু বিরতি দিয়ে বলল, “আমি জানি, বড়মা, রচু, তুই আর তোর জয়া ম্যাম, তোরা সবাই মিলে যা করেছিস, তা শুধু আমাকে ভালবাসিস বলেই করেছিস। কিন্তু আমার কাছে মিথ্যে কথাটা না বললেই কি চলছিল না তোর নীতা”?
 

নবনীতা এবার সীমন্তিনীর দুটো হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও দিদি। আর কক্ষনও আমি তোমার কাছে মিথ্যে বলব না। বৌদির মুখে যখন শুনলাম তুমি ঘরে কান্নাকাটি করছ, তখন আর আমার মাথার ঠিক ছিল না গো। ওই মূহুর্তে কাকে কি বলা উচিৎ বা কাকে কোনটা বলা উচিৎ নয়, এ ব্যাপারে আমার মাথাই কাজ করছিল না। আমি তো শুধু তোমার কাছে চলে আসতে চাইছিলাম। তাই তো এভাবে ......প্লীজ দিদি, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে ছুঁয়ে শপথ করছি, আর কক্ষনো তোমার কাছে কোন মিথ্যে কথা বলব না”।

সীমন্তিনী নবনীতাকে ধরে আদর করে শান্ত করতে করতে বলল, “ঠিক আছে, আর কাঁদিস নে বোন। তবে এইমাত্র আমাকে ছুঁয়ে যে শপথটা করলি, সেটা কখনও ভুলে যাসনে”।
 

নবনীতাও মুখে হাসি ফুটিয়ে মাথা নেড়ে নিজের চোখের জল মুছতে লাগল। সীমন্তিনী তখন বলল, “এবার তোদের ওই সুখবরটা বলি শোন” এই বলে সীমন্তিনী মহিমার মার্কেট কমপ্লেক্স বানাবার ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলল। নবনীতা সবটা শোনার পর সীমন্তিনীর দুটো হাত ধরে বলল, “তোমাকে ভগবান কী দিয়ে যে গড়েছেন তা তো একমাত্র তিনিই জানেন। তবে তিনি যে তোমাকে তার একটা দূত বানিয়েই এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এ ব্যাপারে আর আমার মনে কোন সন্দেহ রইল না দিদি। নইলে আমার মত আর মহিমা ম্যাডামের মত পাপীদের জীবন এমনভাবে বদলে যেত না কিছুতেই। এতদিন অর্চু আর রচনা বৌদির মুখেই শুনেছি তুমি তাদের ভগবান। তাদের কারো কাছে তুমি মা অন্নপূর্ণা, কারো কাছে তুমি মা দুর্গা। কিন্তু আমি যে তোমাকে কী বলব তেমন কোন শব্দই যে আমি খুঁজে পাচ্ছি না”।

সীমন্তিনী নবনীতাকে একহাতে বেড় দিয়ে ধরে কিছু একটা বলতে যেতেই অর্চুর মোবাইলটা বেজে উঠল। রচনার ফোন। অর্চনা কল রিসিভ করতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “দিদি, নীতাদি কি বাড়ি ফিরেছেন? আর দিদিভাই কেমন আছেন বল তো”?

অর্চনা জবাব দিল, “দিদিভাই ঠিক আছেন। নীতাদিও বাড়ি ফিরেছেন। আর আমরা সবাই একসাথে বসে গল্প করছি এখন”।

রচনা এবার বলল, “আচ্ছা দিদিভাইকে একটু ফোনটা দে তো”।

অর্চনা সীমন্তিনীর দিকে ফোন বাড়িয়ে দিতেই সীমন্তিনী সেটা হাতে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, বলুন ঠাকুমা আমার। এ বাঁদির জন্যে কী হুকুম আপনার”।

এক মূহুর্ত বাদে রচনা বলল, “দিদিভাই, তোমাকে কালই বাড়ি যেতে হবে”।
 

রচনার ভারী গলা শুনেই সীমন্তিনীর মুখের হাসি উড়ে গেল। সোজা হয়ে বসে সে জিজ্ঞেস করল, “এই তুই কাঁদছিস কেন রে? বড়মা ঠিক আছেন তো”?

ও’পাশ থেকে রচনার কান্নার শব্দই শুধু শোনা যাচ্ছিল। সীমন্তিনী এবার বেশ জোরে বলে উঠল, “উঃ, কান্না থামিয়ে বল না কি হয়েছে”?

এবার রচনার বদলে ও’পাশ থেকে রতীশের গলা শোনা গেল, “মন্তি, ও আর কথা বলতে পারছে না রে”।

সীমন্তিনী ব্যগ্র ভাবে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দাদাভাই, কি হয়েছে বল তো? তুইও নিশ্চয়ই জানিস। বল না, বড়মা ঠিক আছেন তো”?
 

রতীশও খানিকটা বিচলিত স্বরে জবাব দিল, “আসলে সন্ধ্যের সময় তুই মা-র সাথে কথা বলবার পর থেকেই মা নাকি শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন। তোর সাথে কথা হবার ঠিক পরপরই মা রচুকে ফোন করেছিলেন। তখন তিনি রচুকে ঠিক কী বলেছিলেন সেটা আমি শুনিনি। কিন্তু একটু আগে ছোটমা ফোন করে জানালেন যে মা নাকি তখন থেকেই তার ঘরের বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছেন। আর বার বার নাকি শুধু একটাই কথা বলে যাচ্ছেন যে ‘আমার মেয়েটার সাথে আমি কিকরে এমন নিষ্ঠুরের মত ব্যবহার করতে পারলুম’। তোকে হয়ত তিনি ঝোঁকের বশে বা আবেগের বশে এমন কিছু বলে ফেলেছিলেন যা বলার কথা সুস্থ মস্তিষ্কে তিনি ভাবতেও পারেন না। ছোটমা, মেজমা কেউই তাকে শান্ত করতে পারছেন না। তাই রচু হয়ত ভাবছে যে এ মূহুর্তে তোকে একটু কাছে পেলেই মা শান্ত হবেন”।

সীমন্তিনী রতীশের কথা শুনে অস্থির হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দাদাভাই, বাড়ির ফোনটা তো আগে বসবার ঘরে রাখা থাকত। এখনও সেটা কি ওখানেই আছে নাকি রে”?

রতীশ বলল, “হ্যাঁ বসবার ঘরেই তো ছিল। তবে আমরা চলে আসবার পর যদি অন্য কোথাও রাখা হয়ে থাকে, তাহলে তো বলতে পারছি না”।

সীমন্তিনী আবার বলল, “জেঠু, বাবা কাকুরা তো এখনও দোকানেই থাকবার কথা। শুধু সতুর কাছেই মোবাইল আছে। আচ্ছা সতু এখন কোথায় আছে জানিস”?

রতীশ বলল, “সেটাও তো আমরা কিছু জানি না রে। সতুর সাথে আমার গত দু’দিনের মধ্যে কোন কথা হয়নি”।

সীমন্তিনী আর কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিয়ে নিজের ফোন থেকে সতীশকে ফোন করল। সতীশ কল রিসিভ করতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “সতু তুই কোথায় আছিস বল তো”?

সতীশ অবাক হয়ে বলল, “আমি তো রাজগঞ্জেই আছিরে বড়দি”।

সীমন্তিনী অস্থির ভাবে বলল, “আরে রাজগঞ্জেই যে তুই আছিস এটা তো জানি। কিন্তু রাজগঞ্জের কোথায় আছিস সেটা বল। বাড়িতে না দোকানে না অন্য কোথাও”?

সতীশ সীমন্তিনীর কথা শুনে আরও অবাক হয়ে বলল, “না ও’সব জায়গার কোথাও নয়। আমি একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলুম। এখন বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। কিন্তু কেন রে বড়দি? কী হয়েছে”?

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “তুই এক্ষুনি ছুটে বাড়ি যা। আর সোজা বড়মার ঘরে গিয়েই আমাকে একটা ফোন করবি। নইলে মিসকল দিবি। এক্ষুনি। এক মিনিটও দেরী করিস না কিন্তু শিগগীর যা”।

ফোন রেখেই সীমন্তিনী স্বগতোক্তির মত নিজেই নিজেকে বলতে লাগল, “ইশ, এটা তো আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। ছিঃ ছিঃ”।

অর্চনা আর নবনীতা এতক্ষণ চুপচাপ সীমন্তিনীকে দেখে যাচ্ছিল। এবার অর্চনা আর চুপ করে থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “ও দিদিভাই কী হয়েছে গো? মাসিমার কি শরীর খারাপ করেছে”?

সীমন্তিনী অর্চনাকে শান্ত করে নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “এই নীতা, কাল তো তোর ডিউটি নেই, তাই না”?
 

নবনীতা এমন হঠাৎ প্রসঙ্গে থতমত খেয়ে জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদি, কাল তো রবিবার। আমাদের শো রুম আর কারখানা দুটোই রবিবারে বন্ধ থাকে”।

সীমন্তিনী তখন বলল, “তাহলে একটা কাজ কর। একটা ব্যাগে আমাদের তিনজনের রাতের পোশাক আর টুথপেস্ট টুথব্রাশ ভরে ফ্যাল। আমরা কাল ভোরের ট্রেন ধরব। রাজগঞ্জ যাচ্ছি আমরা। সেখানে হয়ত রাতে থাকতে হতে পারে। তাই চট করে ব্যাগটা গুছিয়ে ফ্যাল তোরা দু’জন মিলে। আলাদা আলাদা ব্যাগ নেবার দরকার নেই, একটা ব্যাগেই আমাদের তিনজনের জিনিসগুলো ঢুকিয়ে ফ্যাল। আমি একটু আমার অফিসের লোকদের সাথে কথা বলি” বলেই নিজের ঘরে চলে গেল।
 

নিজের ঘরে এসে প্রথমে সে তার গাড়ির ড্রাইভারকে ফোন করে রাত তিনটের সময় ডিউটি আছে জানিয়ে দিয়ে তার থানার সেকেন্ড অফিসারের সাথে প্রয়োজনীয় কথাগুলো সেরে নিয়ে, নিজের ব্যাগ থেকে দু’হাজার টাকা হাতে নিয়ে সীমন্তিনী কিচেনের সামনে এসে লক্ষ্মীকে জিজ্ঞেস করল, “লক্ষ্মীদি কি করছ গো”?

লক্ষ্মী বলল, “এই তোমাদের সকলের জন্য চায়ের জল চাপাচ্ছি”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা চা করো। কিন্তু চা খেয়েই আর দেরী না করে রাতের রান্নাটাও চট করে সেরে ফেলো। আর একটু তাড়াতাড়ি করবার চেষ্টা কোর। আমরা সবাই আজ একটু তাড়াতাড়ি খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ব। আর কাল ভোর চারটের ট্রেন ধরে আমরা সবাই রাজগঞ্জ যাচ্ছি। তুমি তো একবার তোমার ছেলে বৌমার সাথে দেখা করবার জন্যে যাবে বলেছিলে। কাল আমরা থাকব না। তাই তুমিও না হয় কালই চলে যেও। আমরা বোধহয় কাল ফিরতে পারব না। পরশু সকালে এসেই আবার অফিসের জন্য বেড়িয়ে যাব। তুমি এ টাকাটা রাখো। তোমার ছেলের বৌ আর নাতির জন্য যাবার পথে কিছু একটা কিনে নিয়ে যেও। আর কোনও অসুবিধে হলে আমাদের গার্ড রুমে ফোন কোর, কেমন? ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা। আমরা তো রাত থাকতেই বেরিয়ে পড়ব। তাই তুমি বেরোবার আগে আমার ঘরের ভেতর থেকে ফোনটাকে বের করে তোমার ঘরে লাগিয়ে রেখে সবগুলো ঘর ভাল করে দেখে শুনে চাবি মেরে তবে বেরিও”।
 

লক্ষ্মী সীমন্তিনীর কথা শুনে একই সাথে খুশী আর অবাক হয়ে বলল, “রাজগঞ্জ? মানে তুমি তোমার বাপের বাড়ি যাচ্ছ দিদিমণি”?

সীমন্তিনী লক্ষ্মীর কথার জবাবে কিছু একটা বলতে যেতেই অর্চনা সীমন্তিনীর মোবাইল হাতে নিয়ে ছুটে এসে বলল, “দিদিভাই, তোমার ফোন”।
 

সীমন্তিনী দেখল সতীশ ফোন করেছে। তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে সীমন্তিনী বলল, “সতু বড়মা কেমন আছে রে”?

সতীশ ও’দিক থেকে বলল, “মা তো শুয়ে শুয়ে বেঘোরে কাঁদছে রে বড়দি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তুই বড়মার ঘরেই আছিস তো? সে ঘরে এখন আর কে কে আছে”?

সতীশ জবাব দিল, “হ্যাঁ আমি এখন মা-র কাছেই আছি। আর ছোটমা আছেন। মেজমা রান্নাঘরে আছেন”।

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “ফোনটা তুই বড়মাকে দে”।


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-03-2020, 11:35 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)