25-03-2020, 11:34 AM
(Update No. 202)
মিনিট দশেক এভাবে চলার পর হঠাৎ সবিতার মনে হল, তার স্বামী আর তার স্তনের বোঁটাটা চুসছে না। ভাল করে খেয়াল করে বুঝতে পারল বিমল ঘুমিয়ে পড়েছে। তবুও নিজের স্তনটাকে স্বামীর মুখের ভেতর থেকে টেনে সরিয়ে নিতে ইচ্ছে হল না তার। বিমলকে দু’হাতে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বিমলের আর নিজের শরীরদুটোকে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে এনে বিমলের মুখটাকে নিজের ভারী স্তনের ওপর চেপে রেখেই শুয়ে পড়ল। ঘুমন্ত স্বামীর মুখে তার একটা স্তনের বোঁটা ভরাই রইল। এক সময় সবিতার চোখদুটোও ঘুমে বুজে এল।
*****************
দু’দিন পর সীমন্তিনী সকালে যখন নিজের অফিসে গিয়ে পৌঁছল তখনই চন্দ্রকান্তবাবুর ফোন এল। থানার ভেতর ঢুকতে ঢুকতেই সে কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ বলো কাকু”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “মা-রে, আমি জানি তুই হয়ত এখন তোর অফিসে আছিস। তাই অল্প কথায় তোকে শুধু আসল কথাটা জানিয়ে দিচ্ছি। শোন মা, কাল ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সবাই মিলে আলোচনা করেছি। অন্য সবাই রাজী হলেও বড়বৌদিকেই একটু অরাজী বলে মনে হল। তবে উনি বলেছেন, কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে উনি তোর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে সামনা সামনি বসে একটু কথা বলতে চান। তাই বলছি মা, একবার একটু ফুরসৎ মত তোর বড়মার সাথে একটু কথা বলিস না। আসলে উনি বলছিলেন, তুই নাকি অনেকদিন যাবত তার সাথে কোনও যোগাযোগ রাখিস নি। তাই হয়ত তার মনে একটু অভিমান হয়ে থাকবে। আর তুই তো জানিসই বড়বৌদি তোকে কতটা ভালবাসেন”।
সীমন্তিনী নিজের চেম্বারে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিল, “আচ্ছা কাকু ঠিক আছে। তবে আমি তো অফিসে এখন একটু ব্যস্ত আছি। তুমি বড়মাকে একটু জানিয়ে দিও যে আমি আজ সন্ধ্যের পর, মানে সাতটার দিকে তাকে ফোন করব”।
চন্দ্রকান্তবাবু সীমন্তিনীর জবাব শুনে খুশী হয়ে বললেন, “ঠিক আছে রে মা, বড়বৌদিকে আমি সে’কথা জানিয়ে দেব। ছাড়ছি তাহলে এখন, ভাল থাকিস মা”।
সীমন্তিনীও “তোমরাও সবাই ভাল থেক কাকু, বাই” বলে ফোন কেটে দিল। তারপর নিজের চেয়ারে বসে কাজ শুরু করবার আগেই সে রচনাকে ফোন করে বলল, “রচু সোনা, সকালে তোর সাথে এতক্ষণ কথা বললুম, কিন্তু একটা দরকারী কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম রে। শোন রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করে তোদের কাছে অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে জানতে চাইতে পারে”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে? বাড়িতে কি তুমি দিদির বিয়ে দেবার ব্যাপারে কিছু বলেছ নাকি দিদিভাই”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি জবাব দিল, “রচু সোনা, এখন তোর সাথে বেশী কথা বলবার সময় নেই আমার হাতে। আমি অফিসে আছি এখন। তুই শুধু আমি যা বলছি সেটা ভাল করে শোন, আর দাদাভাইকেও সেভাবে বুঝিয়ে দিবি। বাড়ি থেকে কেউ যদি তোদের কাউকে অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে তোরা তাদের আপাততঃ শুধু একটা কথাই বলবি। তোরা বলবি যে এ ব্যাপারে আমি তোদের এখনও কিছু জানাইনি। তোরা শুধু এটুকুই জানিস যে আমি অর্চুর আবার বিয়ে দেবার কথা ভাবছি। ব্যস এইটুকুই। মনে থাকবে তো”?
রচনা জবাবে বলল, “হ্যাঁ, তা ঠিক আছে দিদিভাই, আমরা অমনটাই বলব। কিন্তু কারনটা ....”
সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “বাকি কথা তোকে আমি বিকেলে বলব। অফিস থেকে ফিরে বাড়ি গিয়েই আমি তোকে সবটা খুলে বলব। এখন হাতে সময় নেই। এ’টুকু সময় একটু ধৈর্য ধরে থাক না সোনা। আচ্ছা ছাড়ছি আমি” বলেই ফোন কেটে দিল।
সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ বাড়ি ফিরেই অর্চনার সাথে বসে চা খেতে খেতে সীমন্তিনী প্রথমে রচনাকে ফোন করল। রচনা ফোন ধরতেই সীমন্তিনী প্রশ্ন করল, “রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছিল তোদের রচু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, সকালে তুমি আমাকে ফোন করবার অল্প কিছুক্ষণ পরেই মামনি ফোন করেছিলেন আমাকে। তুমি যা বলছিলে, মামনি সেটাই জানতে চাইছিলেন। তোমার কথায় প্রথমবার আমি মামনিকে মিথ্যে কথা বলতে বাধ্য হলাম” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল।
সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “রচু সোনা, তুই কেন মন খারাপ করছিস বল তো? তোকে তো আমি আগেও অনেকবার বুঝিয়েছি যে একটা ভাল কাজ করতে যদি একটু আধটু মিছে কথা বলতেও হয়, তাতে কোন পাপ হয় না। আর তাছাড়া, কী এমন মিথ্যে বলেছিস তুই? তুই তো শুধু এ’টুকুই জানিস যে আমি অর্চুর সাথে পরির বিয়ে দেবার কথা ভাবছি। কিন্তু সে সিদ্ধান্তটা আমি পাকা করে ফেলেছি কিনা, তা কি তুই জানিস”?
রচনা একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ, তা তো ঠিক। কিন্তু এটা তো জানিই যে তুমি যখন এটা নিয়ে লেগেছ, তখন এ বিয়েটা হচ্ছেই। মামনির কাছে তো তাই মিথ্যে কথাই বলা হল আমার। ঠাকুর যেন আমাকে ক্ষমা করেন”।
সীমন্তিনী ফোনের স্পীকার অন করেই কথা বলছিল। তাই অর্চুও দু’জনের কথা শুনতে পেয়ে একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছিল। সীমন্তিনী অর্চনাকে একহাতে নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে বলল, “ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে আর কি হবে। ক’টা দিন অপেক্ষা কর, তারপর তুই নিজেই তোর মামনিকে বলে দিস যে আজ তুই তাকে কোন মিথ্যে কথাটা বলেছিস। সেদিন তোর মামনি তোকে কি বলেন, সেটাই দেখিস। তোর মামনি সেদিন তোকে যদি ক্ষমা করে দেন, তাহলে তোর ঠাকুরও তোকে ক্ষমা করে দেবেন। আচ্ছা এবার বল দাদাভাই বাড়ি ফেরার আগে তাকেও কি কেউ ফোন করেছিল”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই, সেখানেই তো একটু গড়বড় হয়ে গেছে গো। আসলে তোমার দাদাভাই তো অতটা খেয়াল করে কথাগুলো বলেননি। তোমার দাদাভাই ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখনই ছোটকাকু তাকে ফোন করে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলেন। তোমার দাদাভাই তো তখন জানতেন না যে তুমি আমাকে ফোনে কী বলেছ না বলেছ। উনি তো ছোটকাকুকে সত্যি কথাটাই বলে দিয়েছেন। ছোটকাকু নিশ্চয়ই এতক্ষণে মামনিকেও সে’কথা বলে দিয়েছেন। আর মামনিও এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে দিদির সাথে পরিতোষদার বিয়ে দিতে যাচ্ছি আমরা, আর আমি তাকে মিথ্যে কথা বলেছি”।
সীমন্তিনী মনে মনে হেসে বলল, “আচ্ছা ও নিয়ে ভাবিস নে। বেশ তো, তুই বরং এক কাজ করিস। একটু বাদেই তুই তোর মামনিকে ফোন করে বলে দে যে তখন দাদাভাই কথাটা জানলেও তোর জানা ছিল না। আর দাদাভাই দুপুরে বাড়ি ফেরবার পরই তার মুখে সেটা জানতে পারলি। তাহলেই তো ব্যাপারটা মিটে যাবে”।
রচনা একটু অভিমানী সুরে বলল, “হ্যাঁ এই তো আমার গুরুজন দিদির মতই কথা বলেছ তুমি। এক মিথ্যে ঢাকতে এখন আরেক মিথ্যে বলি আমি”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা, তোকে কিচ্ছু করতে হবে না। যা করার আমিই করব। তোর মামনি যাতে তোর এমন মিথ্যে কথায় মনে কোন দুঃখ না পান, আর তোকে যেন ক্ষমা করে দেন, সেটা আমিই না হয় তাকে বুঝিয়ে বলে দেব। এবার হল তো? কিন্তু তুই যে অর্চুর কাছে আমার প্ল্যান সব ফাঁস করে দিলি, সেটা কি করে সামলাব আমি এখন, বল তো”?
রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “মানে? আমি দিদির কাছে আবার কখন তোমার প্ল্যান ফাঁস করে দিলুম”?
সীমন্তিনী অর্চনাকে ঈশারা করে চেপে ধরে বলল, “তুই তো জানিসই, এ’সময় যখন আমি তোর সাথে কথা বলি তখন অর্চুও আমার সাথেই থাকে। আর আমিও ফোনের স্পীকার অন করে আমাদের সব কথা শুনতে দিই ওকে। এখনও তো একই ভাবে কথা বলছি। অর্চুও আমার সাথে বসেই আমাদের কথা শুনছে”।
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “ইশ, কথাটা তো আমার মনেই ছিল না গো। এই দিদি, তুই সত্যি দিদিভাইয়ের সাথে আছিস এখন”?
সীমন্তিনী অর্চনাকে ঈশারা করতে অর্চনা বলল, “হ্যাঁরে রচু, আমি দিদিভাইয়ের একেবারে পাশেই বসে আছি। কিন্তু তুই আমার বোন হয়েও আমার কাছ থেকে এভাবে সব কিছু লুকিয়ে রেখেছিলিস”?
রচনা এবার একটু থতমত খেয়ে বলল, “নারে দিদি, ঠিক তা নয়.... আসলে আমি তো তোকে আগেই কথাটা বলব বলে ভাবছিলুম। কিন্তু পরে আবার মনে হল যে না আরেকটু অপেক্ষা করাই ভাল হবে” বলে অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বরে বলল, “দ্যাখ দিদি, তোর শরীর মন কোনটাই তো এতদিন ভাল ছিলনা। দিদিভাই যে তোকে তার কাছে নিয়ে গেছেন তার উদ্দেশ্য শুধু একটাই ছিল, তোকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা। দিদিভাই আর নীতাদি দু’জন মিলে তো সে চেষ্টাই করছিলেন। অবশ্য লক্ষ্মীদিও যে তোর খুব যত্ন আত্তি করেছেন সেটাও জানি। কিন্তু দিদিভাইয়ের মনে যখন প্রথম এ ভাবনাটা এল, তখনই তিনি আমাকে তার মনের ইচ্ছেটা জানিয়েছিলেন। পরিতোষদার মত অমন ভাল একটা পাত্রের সাথে তোর বিয়ে হলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতেই পারে না, এটা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তার আগে তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলাটা বেশী প্রয়োজন ছিল। তাই দিদিভাইই আমাকে বলেছিলেন যে যতদিন তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে না তোলা হবে ততদিন ও ব্যাপারে আমরা কাউকে কিছু জানতে দেব না। এখন তুইই বল দিদি, আমরা কি খুব ভুল কিছু ভেবেছিলুম? আর তোকে আগে থেকে না জানানোটাই কি আমাদের খুব বড় ভুল হয়েছে”?
অর্চনা লাজুক চোখে সীমন্তিনির দিকে একবার দেখে বলল, “হয়েছে হয়েছে রচু। আর তোকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। বাব্বা, ঠাকুমা দিদিমাদের মত খুব কথা বলতে শিখেছিস দেখছি। আর শোন, দিদিভাইয়ের সাথে তো ধরাবাধা সময় ছাড়া কথা বলা যায় না। আমাকে তো সারাদিনই ফোনে পাবি। তাই এখন বরং দিদিভাইয়ের সাথেই কথা বল”।
সীমন্তিনী অর্চুর মাথায় একটা আদরের চুমু খেয়ে ফোনে বলল, “দাদাভাই তোর সাথে আছে তো রচু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, উনিও আমার সাথেই আছেন, শুনছেন সব কথা”।
সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “দাদাভাই, রচু, এখন যে কথাগুলো বলছি তা খুব ভাল করে শুনবি তোরা। তবে এ ব্যাপারে পরিকে কিন্তু তোরা একেবারে কিছু বলবি না, প্লীজ। আসলে ও ভীষণ সিরিয়াস একটা ব্যাপারে সাংঘাতিক ব্যস্ত আছে। বলতে গেলে রাতে ঘুমোবার সময়টুকুও পাচ্ছে না। তাই আমি চাই না এ ব্যাপারে ওকে এখন বিব্রত করতে। আশা করছি আর কয়েকদিন বাদেই ও ফ্রি হয়ে যাবে। তখনই ব্যাপারটা ফাইনালাইজ করা সম্ভব হবে। এদিকে ইতিমধ্যে যা যা হয়েছে, সেগুলো তোদের খুলে বলছি। প্রথম হচ্ছে, কালচিনির বাড়ি তৈরীর কাজ শুরু হচ্ছে সামনের মাসে মানে অক্টোবরের ১৮ তারিখ। সেদিনই গৃহারম্ভের অনুষ্ঠানটা হবে। আর দ্বিতীয় কথা, পরের মাস ছয়েকের ভেতর গৃহপ্রবেশের দিন না থাকায় গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানটা করতে হবে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে। কিন্তু মনে হয় দু’ মাসের ভেতরেই বাড়ির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই সেটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে ভাবতে হবে। আর তৃতীয় কথা হচ্ছে, মাসি মেসো ভাই, অর্চু আর পরির বিয়েতে মত দিয়েছেন। চতুর্থ খবর হচ্ছে, নবনীতাও এ বিয়েতে খুব খুশী। পঞ্চম খবর, অর্চু নিজেও এ বিয়েতে রাজি হয়েছে, এটাই সবচাইতে খুশীর খবর আমার কাছে”।
এ’কথা শুনেই রচনা ও’দিকে প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে উঠল, “সত্যি দিদিভাই? দিদি রাজী হয়েছে? ও ঠাকুর, তোমার অনেক দয়া। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, অনেক অনেক ধন্যবাদ ঠাকুর”।
কিন্তু রচনা আর কিছু বলবার আগেই সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি করে বলল, “এই পাগলী, আনন্দে এখনই কেঁদে ফেলিস না। আরও কথা আছে। সেগুলো শুনে নে। হ্যাঁ, ছ’নম্বর খবরটা হচ্ছে, যদিও এটা এখনও ফাইনাল বলে ধরছি না, তবু আমি ভেবেছি ওদের বিয়েটা হবে নভেম্বরের ২৯ তারিখে। দিনটা খুব ভাল। তবে পরির সাথে কথা না বলা পর্যন্ত সেটা পাকাপাকি করা যাবে না। পরির দিক থেকে ওই তারিখে কোন অসুবিধে দেখা না দিলে ওই দিনই বিয়েটা হবে”।
এবার রতীশ ও’পাশ থেকে বলল, “কিন্তু মন্তি সবগুলো তারিখ যেমন উপর্যুপরি পড়ে যাচ্ছে তাতে আমার পক্ষে তো সবগুলো শুভ কাজে যোগ দেওয়াই অসম্ভব হয়ে পড়বে রে”।
সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, সেটা নিয়ে এখনই ভাবছিস কেন তুই? আমি ঠিক ভাবনা চিন্তা করে একটা উপায় বের করব দেখিস। এমনও তো হতে পারে যে মহিমা বৌদির কাছ থেকে আমি তোকে তিন মাসের জন্য চেয়ে নিয়ে আসব। না না, সেটাই যে হবে, তা বলছি না। তবে কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। সেটা নিয়ে এখনই ভাববার দরকার নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে যেটা দরকার, তা হল এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করা, যেখান থেকে আমরা অর্চুর বিয়েটা দিতে পারি। কালচিনি বাড়িতে বাড়ি তৈরীর কাজ চলতে থাকবে তখন। আমার এখানেও অতোটা জায়গা নেই, কলকাতা নিয়ে গেলেও কোন ব্যাঙ্কোয়েট হল বা বিবাহ ভবন ভাড়া নিতে হবে, তাছাড়া মাসি মেসো ভাইদেরও অসুবিধে হবে। ভাইয়ের পরীক্ষাও হয়ত ও’রকম সময়েই হতে পারে। তাই কালচিনির কাছাকাছি আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়িতে কোন একটা হল ভাড়া করেই হয়ত বিয়ের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভাল হত যদি আমাদের বাড়ি থেকে মানে রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে বিয়েটা দেওয়া যেত। আর এ’কথা ভেবেই আমি পরশু দিন কাকুর সাথে কথা বলেছিলুম। কাল কাকু বাড়ির সকলের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। আজ শুনলুম, বড়মাই নাকি এ ব্যাপারে একটু আপত্তি করছেন। তাই কাকু আমাকে বলেছেন আমি যেন বড়মার সাথে কথা বলি। আমিও সেটাই ভেবেছি। আর একটু বাদেই আমি বড়মাকে ফোন করব। তোরাও ব্যাপারটা নিয়ে দু’জনে একটু ভেবে দ্যাখ, অন্য কোনও আয়োজন করবার কথা তোদের মাথায় আসে কিনা। আর হ্যাঁ, তোরা কিন্তু পরিতোষের সাথে এ’সব ব্যাপার নিয়ে কোন কথা বলিস নে। যখন আমি তোদের বলব তখন বলিস, বুঝেছিস তো? আচ্ছা, এখন আমি রাখছিরে দাদাভাই। কাকুকে বলেছি আজ সাতটার সময় আমি বড়মাকে ফোন করব। সাতটা তো প্রায় বাজতেই চলল। বাকি কথা পরে হবে”।
সীমন্তিনীর কথা শেষ না হতেই রচনা অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই দিদি, দিদিভাই যখন মামনির সাথে কথা বলবেন তুই কিন্তু তখন কিন্তু তার পাশেই থাকবি। তোর ঘরে বা অন্য কোথাও যাবিনা কিন্তু”।
অর্চনা রচনার কথা শুনে একটু অবাক হয়েই রচনাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবার আগেই সীমন্তিনী ফোন কেটে দিল।
সীমন্তিনী ফোন কেটে দিয়ে অর্চনার দিকে চেয়ে একটু হেসে বলল, “লাইনটা কেটে দিলুম বলে তোর মন খারাপ হল অর্চু”?
অর্চনা একটু কিন্তু কিন্তু করে জবাব দিল, “না দিদিভাই, তা ঠিক নয়। তবে রচু আমাকে তোমার পাশেই বসে থাকতে বলল কেন সেটা ঠিক বুঝতে পারলুম না। ভেবেছিলুম জিজ্ঞেস করি”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “সেটা আমিই তোকে বুঝিয়ে বলছি অর্চু। তুই তো এতদিনে জেনেই গেছিস যে আমাদের বাড়ির লোকদের সাথে আমার খুব একটা যোগাযোগ নেই। রচুর বৌভাতের পরের দিন আমি সেই যে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলুম, তারপর থেকে আজ অব্দি আর ও বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার। আর শুধু তাই নয় রচুদের বিয়েরও অনেক বছর আগে থেকে আমি বাড়ি ছাড়া। মাধ্যমিক পাশ করবার পর পড়াশোনা করতেই বাড়ি ছেড়ে জলপাইগুড়ি গিয়েছিলুম। তারপর কলেজ ইউনিভার্সিটি ট্রেইনিং আর চাকরি করতে করতে একটানা বাড়ির বাইরেই রয়ে গেছি। ছোট ছোট ভাইবোন গুলোকে সেভাবে কাছেই পাইনি আমি। তাই বাড়ির লোকদের সাথে ঘণিষ্টতা বলতে যা বোঝায় তার প্রায় কিছুই নেই। ও বাড়িতে এখন শুধু বড়মা আর কাকুই আমাকে মনে রেখেছেন। কাকুর সাথেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মাঝে মাঝে আমার কথা হয়। বড়মার সাথেও খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। কিন্তু বড়মার সাথে যখনই কথা বলি, তখন উনি কেঁদে ফেলেন। আমিও নিজেকে সামলাতে পারিনা তখন। তাই মন খুব চাইলেও আমি তাকে খুব বেশী ফোন করি না। রচু এ’সব কথা জানে। তাই বড়মার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি শুনেই ও বুঝে ফেলেছে যে অন্যান্য বারের মত এবারেও আমি কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলব। তাই তোকে আমার সাথে থাকতে বলল”।
অর্চনা আবার কিছু একটা বলতে চাইতেই সীমন্তিনী তাকে বাধা দিয়ে বলল, “এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না অর্চু সোনা, প্লীজ। বড়মার সাথে কাজের কথাটা সেরে ফেলতে দে আমাকে, কেমন? আর শোন বোন, তুই আমার পাশেই বোস। ফোনের স্পীকার প্রথমদিকে অন করেই রাখছি, কিন্তু হঠাৎ করে আবার বন্ধও করে দিতে পারি। তাতে প্লীজ তুই কিছু মনে করিস নে”।
*******************
অর্চনা কিছু না বলে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাতেই সীমন্তিনী বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে ফোন করল। ও’পাশ থেকে এক মহিলা কন্ঠের কথা শোনা গেল, “হ্যালো, কে বলছেন”?
সীমন্তিনী নিজের মায়ের গলার স্বর চিনতে পেরে মৃদু গলায় জবাব দিল, “আমি মন্তি বলছি। একটু বড়মার সাথে কথা বলতুম”।
ও’পাশ থেকে কয়েক সেকেন্ড নিরবতার পর সরলাদেবীর শান্ত মিষ্টি গলা শোনা গেল, “আজ পুরো দু’মাস দশ দিন বাদে তুই ফোন করলি মন্তি। জানি এ বাড়ির সব্বাই তোর শত্রু .......”
তার কথার মাঝপথেই বাধা দিয়ে সীমন্তিনী বলল, “এইজন্যেই, এইজন্যেই তোমাকে আমি ফোন করতে চাই নে বড়মা। যতদিন তোমাকে ফোনে কিছু বলতে চেয়েছি, ততদিনই ফোন ধরেই তুমি এমন সব কথা বলে আমাকে কাঁদিয়ে দাও। তাই তো ইচ্ছে থাকলেও তোমাকে ফোন করিনা আমি। কিন্তু এখন আর কিছু না বলে আমার সাথে তোমার কী কথা আছে, সেটা বলো”।
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকবার পর সরলাদেবী কিছুটা গম্ভীর গলায় বললেন, “তোর কাকুকে তুই যা বলেছিস দু’দিন আগে, সে’ ব্যাপারে আমরা সবাই কাল আলোচনা করেছি”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ, কাকু আজ সকালে আমাকে এ’কথা জানিয়েছেন। তুমি নাকি ব্যাপারটাতে আপত্তি জানিয়েছ”?
সরলাদেবী এবার খানিকটা রাগত স্বরেই বললেন, “হ্যাঁ, জানিয়েছিই তো। কেন আপত্তি করব না শুনি? তুই সব সময় তোর নিজের ইচ্ছেগুলো আমাদের ওপর চাপিয়ে দিবি, আমাদের কোন ইচ্ছে কোন সাধ তুই পূর্ণ করবিনা, এটা কি মন থেকে মেনে নেওয়া যায়”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় জবাব দিল, “বড়মা, কথাতেই তো আছে, কূ-সন্তান হতে পারে, কিন্তু কূ-মাতা কখনোই হতে পারে না। আমি যে তোমাদের একটা কূ-সন্তানই গো। তাই তো তোমাদের কোন সাধ ইচ্ছে আমি পূরণ করি না। কিন্তু তুমি যে আমার মা গো। এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মা। তোমার বুকের দুধ খাইয়েই না আমাকে বড় করে তুলেছ তুমি? তুমি কি আমার কূ-মাতা হতে পার কখনও”?
ও’পাশ থেকে সরলাদেবীর ফুঁপিয়ে ওঠার আওয়াজ স্পষ্ট বুঝতে পারল সীমন্তিনী। তার চোখের কোলও ভিজে গেছে। আর সেটা দেখে অর্চনাও সীমন্তিনীর একটা হাত চেপে ধরেছে। ও’পাশ থেকে অনেকক্ষণ কোন সাড়া না পেয়ে সীমন্তিনী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “দেখেছ তো? কাঁদতে শুরু করলে তো তুমি? এ’জন্যেই তো আমি তোমাকে ফোন করতে চাই নে”।
______________________________
মিনিট দশেক এভাবে চলার পর হঠাৎ সবিতার মনে হল, তার স্বামী আর তার স্তনের বোঁটাটা চুসছে না। ভাল করে খেয়াল করে বুঝতে পারল বিমল ঘুমিয়ে পড়েছে। তবুও নিজের স্তনটাকে স্বামীর মুখের ভেতর থেকে টেনে সরিয়ে নিতে ইচ্ছে হল না তার। বিমলকে দু’হাতে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বিমলের আর নিজের শরীরদুটোকে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে এনে বিমলের মুখটাকে নিজের ভারী স্তনের ওপর চেপে রেখেই শুয়ে পড়ল। ঘুমন্ত স্বামীর মুখে তার একটা স্তনের বোঁটা ভরাই রইল। এক সময় সবিতার চোখদুটোও ঘুমে বুজে এল।
*****************
দু’দিন পর সীমন্তিনী সকালে যখন নিজের অফিসে গিয়ে পৌঁছল তখনই চন্দ্রকান্তবাবুর ফোন এল। থানার ভেতর ঢুকতে ঢুকতেই সে কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ বলো কাকু”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “মা-রে, আমি জানি তুই হয়ত এখন তোর অফিসে আছিস। তাই অল্প কথায় তোকে শুধু আসল কথাটা জানিয়ে দিচ্ছি। শোন মা, কাল ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সবাই মিলে আলোচনা করেছি। অন্য সবাই রাজী হলেও বড়বৌদিকেই একটু অরাজী বলে মনে হল। তবে উনি বলেছেন, কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে উনি তোর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে সামনা সামনি বসে একটু কথা বলতে চান। তাই বলছি মা, একবার একটু ফুরসৎ মত তোর বড়মার সাথে একটু কথা বলিস না। আসলে উনি বলছিলেন, তুই নাকি অনেকদিন যাবত তার সাথে কোনও যোগাযোগ রাখিস নি। তাই হয়ত তার মনে একটু অভিমান হয়ে থাকবে। আর তুই তো জানিসই বড়বৌদি তোকে কতটা ভালবাসেন”।
সীমন্তিনী নিজের চেম্বারে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিল, “আচ্ছা কাকু ঠিক আছে। তবে আমি তো অফিসে এখন একটু ব্যস্ত আছি। তুমি বড়মাকে একটু জানিয়ে দিও যে আমি আজ সন্ধ্যের পর, মানে সাতটার দিকে তাকে ফোন করব”।
চন্দ্রকান্তবাবু সীমন্তিনীর জবাব শুনে খুশী হয়ে বললেন, “ঠিক আছে রে মা, বড়বৌদিকে আমি সে’কথা জানিয়ে দেব। ছাড়ছি তাহলে এখন, ভাল থাকিস মা”।
সীমন্তিনীও “তোমরাও সবাই ভাল থেক কাকু, বাই” বলে ফোন কেটে দিল। তারপর নিজের চেয়ারে বসে কাজ শুরু করবার আগেই সে রচনাকে ফোন করে বলল, “রচু সোনা, সকালে তোর সাথে এতক্ষণ কথা বললুম, কিন্তু একটা দরকারী কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম রে। শোন রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করে তোদের কাছে অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে জানতে চাইতে পারে”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে? বাড়িতে কি তুমি দিদির বিয়ে দেবার ব্যাপারে কিছু বলেছ নাকি দিদিভাই”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি জবাব দিল, “রচু সোনা, এখন তোর সাথে বেশী কথা বলবার সময় নেই আমার হাতে। আমি অফিসে আছি এখন। তুই শুধু আমি যা বলছি সেটা ভাল করে শোন, আর দাদাভাইকেও সেভাবে বুঝিয়ে দিবি। বাড়ি থেকে কেউ যদি তোদের কাউকে অর্চুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে তোরা তাদের আপাততঃ শুধু একটা কথাই বলবি। তোরা বলবি যে এ ব্যাপারে আমি তোদের এখনও কিছু জানাইনি। তোরা শুধু এটুকুই জানিস যে আমি অর্চুর আবার বিয়ে দেবার কথা ভাবছি। ব্যস এইটুকুই। মনে থাকবে তো”?
রচনা জবাবে বলল, “হ্যাঁ, তা ঠিক আছে দিদিভাই, আমরা অমনটাই বলব। কিন্তু কারনটা ....”
সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “বাকি কথা তোকে আমি বিকেলে বলব। অফিস থেকে ফিরে বাড়ি গিয়েই আমি তোকে সবটা খুলে বলব। এখন হাতে সময় নেই। এ’টুকু সময় একটু ধৈর্য ধরে থাক না সোনা। আচ্ছা ছাড়ছি আমি” বলেই ফোন কেটে দিল।
সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ বাড়ি ফিরেই অর্চনার সাথে বসে চা খেতে খেতে সীমন্তিনী প্রথমে রচনাকে ফোন করল। রচনা ফোন ধরতেই সীমন্তিনী প্রশ্ন করল, “রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছিল তোদের রচু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, সকালে তুমি আমাকে ফোন করবার অল্প কিছুক্ষণ পরেই মামনি ফোন করেছিলেন আমাকে। তুমি যা বলছিলে, মামনি সেটাই জানতে চাইছিলেন। তোমার কথায় প্রথমবার আমি মামনিকে মিথ্যে কথা বলতে বাধ্য হলাম” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল।
সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “রচু সোনা, তুই কেন মন খারাপ করছিস বল তো? তোকে তো আমি আগেও অনেকবার বুঝিয়েছি যে একটা ভাল কাজ করতে যদি একটু আধটু মিছে কথা বলতেও হয়, তাতে কোন পাপ হয় না। আর তাছাড়া, কী এমন মিথ্যে বলেছিস তুই? তুই তো শুধু এ’টুকুই জানিস যে আমি অর্চুর সাথে পরির বিয়ে দেবার কথা ভাবছি। কিন্তু সে সিদ্ধান্তটা আমি পাকা করে ফেলেছি কিনা, তা কি তুই জানিস”?
রচনা একটু আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ, তা তো ঠিক। কিন্তু এটা তো জানিই যে তুমি যখন এটা নিয়ে লেগেছ, তখন এ বিয়েটা হচ্ছেই। মামনির কাছে তো তাই মিথ্যে কথাই বলা হল আমার। ঠাকুর যেন আমাকে ক্ষমা করেন”।
সীমন্তিনী ফোনের স্পীকার অন করেই কথা বলছিল। তাই অর্চুও দু’জনের কথা শুনতে পেয়ে একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছিল। সীমন্তিনী অর্চনাকে একহাতে নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে বলল, “ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে আর কি হবে। ক’টা দিন অপেক্ষা কর, তারপর তুই নিজেই তোর মামনিকে বলে দিস যে আজ তুই তাকে কোন মিথ্যে কথাটা বলেছিস। সেদিন তোর মামনি তোকে কি বলেন, সেটাই দেখিস। তোর মামনি সেদিন তোকে যদি ক্ষমা করে দেন, তাহলে তোর ঠাকুরও তোকে ক্ষমা করে দেবেন। আচ্ছা এবার বল দাদাভাই বাড়ি ফেরার আগে তাকেও কি কেউ ফোন করেছিল”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই, সেখানেই তো একটু গড়বড় হয়ে গেছে গো। আসলে তোমার দাদাভাই তো অতটা খেয়াল করে কথাগুলো বলেননি। তোমার দাদাভাই ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখনই ছোটকাকু তাকে ফোন করে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলেন। তোমার দাদাভাই তো তখন জানতেন না যে তুমি আমাকে ফোনে কী বলেছ না বলেছ। উনি তো ছোটকাকুকে সত্যি কথাটাই বলে দিয়েছেন। ছোটকাকু নিশ্চয়ই এতক্ষণে মামনিকেও সে’কথা বলে দিয়েছেন। আর মামনিও এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে দিদির সাথে পরিতোষদার বিয়ে দিতে যাচ্ছি আমরা, আর আমি তাকে মিথ্যে কথা বলেছি”।
সীমন্তিনী মনে মনে হেসে বলল, “আচ্ছা ও নিয়ে ভাবিস নে। বেশ তো, তুই বরং এক কাজ করিস। একটু বাদেই তুই তোর মামনিকে ফোন করে বলে দে যে তখন দাদাভাই কথাটা জানলেও তোর জানা ছিল না। আর দাদাভাই দুপুরে বাড়ি ফেরবার পরই তার মুখে সেটা জানতে পারলি। তাহলেই তো ব্যাপারটা মিটে যাবে”।
রচনা একটু অভিমানী সুরে বলল, “হ্যাঁ এই তো আমার গুরুজন দিদির মতই কথা বলেছ তুমি। এক মিথ্যে ঢাকতে এখন আরেক মিথ্যে বলি আমি”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা, তোকে কিচ্ছু করতে হবে না। যা করার আমিই করব। তোর মামনি যাতে তোর এমন মিথ্যে কথায় মনে কোন দুঃখ না পান, আর তোকে যেন ক্ষমা করে দেন, সেটা আমিই না হয় তাকে বুঝিয়ে বলে দেব। এবার হল তো? কিন্তু তুই যে অর্চুর কাছে আমার প্ল্যান সব ফাঁস করে দিলি, সেটা কি করে সামলাব আমি এখন, বল তো”?
রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “মানে? আমি দিদির কাছে আবার কখন তোমার প্ল্যান ফাঁস করে দিলুম”?
সীমন্তিনী অর্চনাকে ঈশারা করে চেপে ধরে বলল, “তুই তো জানিসই, এ’সময় যখন আমি তোর সাথে কথা বলি তখন অর্চুও আমার সাথেই থাকে। আর আমিও ফোনের স্পীকার অন করে আমাদের সব কথা শুনতে দিই ওকে। এখনও তো একই ভাবে কথা বলছি। অর্চুও আমার সাথে বসেই আমাদের কথা শুনছে”।
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “ইশ, কথাটা তো আমার মনেই ছিল না গো। এই দিদি, তুই সত্যি দিদিভাইয়ের সাথে আছিস এখন”?
সীমন্তিনী অর্চনাকে ঈশারা করতে অর্চনা বলল, “হ্যাঁরে রচু, আমি দিদিভাইয়ের একেবারে পাশেই বসে আছি। কিন্তু তুই আমার বোন হয়েও আমার কাছ থেকে এভাবে সব কিছু লুকিয়ে রেখেছিলিস”?
রচনা এবার একটু থতমত খেয়ে বলল, “নারে দিদি, ঠিক তা নয়.... আসলে আমি তো তোকে আগেই কথাটা বলব বলে ভাবছিলুম। কিন্তু পরে আবার মনে হল যে না আরেকটু অপেক্ষা করাই ভাল হবে” বলে অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বরে বলল, “দ্যাখ দিদি, তোর শরীর মন কোনটাই তো এতদিন ভাল ছিলনা। দিদিভাই যে তোকে তার কাছে নিয়ে গেছেন তার উদ্দেশ্য শুধু একটাই ছিল, তোকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা। দিদিভাই আর নীতাদি দু’জন মিলে তো সে চেষ্টাই করছিলেন। অবশ্য লক্ষ্মীদিও যে তোর খুব যত্ন আত্তি করেছেন সেটাও জানি। কিন্তু দিদিভাইয়ের মনে যখন প্রথম এ ভাবনাটা এল, তখনই তিনি আমাকে তার মনের ইচ্ছেটা জানিয়েছিলেন। পরিতোষদার মত অমন ভাল একটা পাত্রের সাথে তোর বিয়ে হলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতেই পারে না, এটা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তার আগে তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলাটা বেশী প্রয়োজন ছিল। তাই দিদিভাইই আমাকে বলেছিলেন যে যতদিন তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে না তোলা হবে ততদিন ও ব্যাপারে আমরা কাউকে কিছু জানতে দেব না। এখন তুইই বল দিদি, আমরা কি খুব ভুল কিছু ভেবেছিলুম? আর তোকে আগে থেকে না জানানোটাই কি আমাদের খুব বড় ভুল হয়েছে”?
অর্চনা লাজুক চোখে সীমন্তিনির দিকে একবার দেখে বলল, “হয়েছে হয়েছে রচু। আর তোকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। বাব্বা, ঠাকুমা দিদিমাদের মত খুব কথা বলতে শিখেছিস দেখছি। আর শোন, দিদিভাইয়ের সাথে তো ধরাবাধা সময় ছাড়া কথা বলা যায় না। আমাকে তো সারাদিনই ফোনে পাবি। তাই এখন বরং দিদিভাইয়ের সাথেই কথা বল”।
সীমন্তিনী অর্চুর মাথায় একটা আদরের চুমু খেয়ে ফোনে বলল, “দাদাভাই তোর সাথে আছে তো রচু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, উনিও আমার সাথেই আছেন, শুনছেন সব কথা”।
সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “দাদাভাই, রচু, এখন যে কথাগুলো বলছি তা খুব ভাল করে শুনবি তোরা। তবে এ ব্যাপারে পরিকে কিন্তু তোরা একেবারে কিছু বলবি না, প্লীজ। আসলে ও ভীষণ সিরিয়াস একটা ব্যাপারে সাংঘাতিক ব্যস্ত আছে। বলতে গেলে রাতে ঘুমোবার সময়টুকুও পাচ্ছে না। তাই আমি চাই না এ ব্যাপারে ওকে এখন বিব্রত করতে। আশা করছি আর কয়েকদিন বাদেই ও ফ্রি হয়ে যাবে। তখনই ব্যাপারটা ফাইনালাইজ করা সম্ভব হবে। এদিকে ইতিমধ্যে যা যা হয়েছে, সেগুলো তোদের খুলে বলছি। প্রথম হচ্ছে, কালচিনির বাড়ি তৈরীর কাজ শুরু হচ্ছে সামনের মাসে মানে অক্টোবরের ১৮ তারিখ। সেদিনই গৃহারম্ভের অনুষ্ঠানটা হবে। আর দ্বিতীয় কথা, পরের মাস ছয়েকের ভেতর গৃহপ্রবেশের দিন না থাকায় গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানটা করতে হবে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে। কিন্তু মনে হয় দু’ মাসের ভেতরেই বাড়ির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই সেটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে ভাবতে হবে। আর তৃতীয় কথা হচ্ছে, মাসি মেসো ভাই, অর্চু আর পরির বিয়েতে মত দিয়েছেন। চতুর্থ খবর হচ্ছে, নবনীতাও এ বিয়েতে খুব খুশী। পঞ্চম খবর, অর্চু নিজেও এ বিয়েতে রাজি হয়েছে, এটাই সবচাইতে খুশীর খবর আমার কাছে”।
এ’কথা শুনেই রচনা ও’দিকে প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে উঠল, “সত্যি দিদিভাই? দিদি রাজী হয়েছে? ও ঠাকুর, তোমার অনেক দয়া। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, অনেক অনেক ধন্যবাদ ঠাকুর”।
কিন্তু রচনা আর কিছু বলবার আগেই সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি করে বলল, “এই পাগলী, আনন্দে এখনই কেঁদে ফেলিস না। আরও কথা আছে। সেগুলো শুনে নে। হ্যাঁ, ছ’নম্বর খবরটা হচ্ছে, যদিও এটা এখনও ফাইনাল বলে ধরছি না, তবু আমি ভেবেছি ওদের বিয়েটা হবে নভেম্বরের ২৯ তারিখে। দিনটা খুব ভাল। তবে পরির সাথে কথা না বলা পর্যন্ত সেটা পাকাপাকি করা যাবে না। পরির দিক থেকে ওই তারিখে কোন অসুবিধে দেখা না দিলে ওই দিনই বিয়েটা হবে”।
এবার রতীশ ও’পাশ থেকে বলল, “কিন্তু মন্তি সবগুলো তারিখ যেমন উপর্যুপরি পড়ে যাচ্ছে তাতে আমার পক্ষে তো সবগুলো শুভ কাজে যোগ দেওয়াই অসম্ভব হয়ে পড়বে রে”।
সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, সেটা নিয়ে এখনই ভাবছিস কেন তুই? আমি ঠিক ভাবনা চিন্তা করে একটা উপায় বের করব দেখিস। এমনও তো হতে পারে যে মহিমা বৌদির কাছ থেকে আমি তোকে তিন মাসের জন্য চেয়ে নিয়ে আসব। না না, সেটাই যে হবে, তা বলছি না। তবে কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। সেটা নিয়ে এখনই ভাববার দরকার নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে যেটা দরকার, তা হল এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করা, যেখান থেকে আমরা অর্চুর বিয়েটা দিতে পারি। কালচিনি বাড়িতে বাড়ি তৈরীর কাজ চলতে থাকবে তখন। আমার এখানেও অতোটা জায়গা নেই, কলকাতা নিয়ে গেলেও কোন ব্যাঙ্কোয়েট হল বা বিবাহ ভবন ভাড়া নিতে হবে, তাছাড়া মাসি মেসো ভাইদেরও অসুবিধে হবে। ভাইয়ের পরীক্ষাও হয়ত ও’রকম সময়েই হতে পারে। তাই কালচিনির কাছাকাছি আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়িতে কোন একটা হল ভাড়া করেই হয়ত বিয়ের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভাল হত যদি আমাদের বাড়ি থেকে মানে রাজগঞ্জের বাড়ি থেকে বিয়েটা দেওয়া যেত। আর এ’কথা ভেবেই আমি পরশু দিন কাকুর সাথে কথা বলেছিলুম। কাল কাকু বাড়ির সকলের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। আজ শুনলুম, বড়মাই নাকি এ ব্যাপারে একটু আপত্তি করছেন। তাই কাকু আমাকে বলেছেন আমি যেন বড়মার সাথে কথা বলি। আমিও সেটাই ভেবেছি। আর একটু বাদেই আমি বড়মাকে ফোন করব। তোরাও ব্যাপারটা নিয়ে দু’জনে একটু ভেবে দ্যাখ, অন্য কোনও আয়োজন করবার কথা তোদের মাথায় আসে কিনা। আর হ্যাঁ, তোরা কিন্তু পরিতোষের সাথে এ’সব ব্যাপার নিয়ে কোন কথা বলিস নে। যখন আমি তোদের বলব তখন বলিস, বুঝেছিস তো? আচ্ছা, এখন আমি রাখছিরে দাদাভাই। কাকুকে বলেছি আজ সাতটার সময় আমি বড়মাকে ফোন করব। সাতটা তো প্রায় বাজতেই চলল। বাকি কথা পরে হবে”।
সীমন্তিনীর কথা শেষ না হতেই রচনা অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই দিদি, দিদিভাই যখন মামনির সাথে কথা বলবেন তুই কিন্তু তখন কিন্তু তার পাশেই থাকবি। তোর ঘরে বা অন্য কোথাও যাবিনা কিন্তু”।
অর্চনা রচনার কথা শুনে একটু অবাক হয়েই রচনাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবার আগেই সীমন্তিনী ফোন কেটে দিল।
সীমন্তিনী ফোন কেটে দিয়ে অর্চনার দিকে চেয়ে একটু হেসে বলল, “লাইনটা কেটে দিলুম বলে তোর মন খারাপ হল অর্চু”?
অর্চনা একটু কিন্তু কিন্তু করে জবাব দিল, “না দিদিভাই, তা ঠিক নয়। তবে রচু আমাকে তোমার পাশেই বসে থাকতে বলল কেন সেটা ঠিক বুঝতে পারলুম না। ভেবেছিলুম জিজ্ঞেস করি”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “সেটা আমিই তোকে বুঝিয়ে বলছি অর্চু। তুই তো এতদিনে জেনেই গেছিস যে আমাদের বাড়ির লোকদের সাথে আমার খুব একটা যোগাযোগ নেই। রচুর বৌভাতের পরের দিন আমি সেই যে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলুম, তারপর থেকে আজ অব্দি আর ও বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার। আর শুধু তাই নয় রচুদের বিয়েরও অনেক বছর আগে থেকে আমি বাড়ি ছাড়া। মাধ্যমিক পাশ করবার পর পড়াশোনা করতেই বাড়ি ছেড়ে জলপাইগুড়ি গিয়েছিলুম। তারপর কলেজ ইউনিভার্সিটি ট্রেইনিং আর চাকরি করতে করতে একটানা বাড়ির বাইরেই রয়ে গেছি। ছোট ছোট ভাইবোন গুলোকে সেভাবে কাছেই পাইনি আমি। তাই বাড়ির লোকদের সাথে ঘণিষ্টতা বলতে যা বোঝায় তার প্রায় কিছুই নেই। ও বাড়িতে এখন শুধু বড়মা আর কাকুই আমাকে মনে রেখেছেন। কাকুর সাথেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মাঝে মাঝে আমার কথা হয়। বড়মার সাথেও খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। কিন্তু বড়মার সাথে যখনই কথা বলি, তখন উনি কেঁদে ফেলেন। আমিও নিজেকে সামলাতে পারিনা তখন। তাই মন খুব চাইলেও আমি তাকে খুব বেশী ফোন করি না। রচু এ’সব কথা জানে। তাই বড়মার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি শুনেই ও বুঝে ফেলেছে যে অন্যান্য বারের মত এবারেও আমি কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলব। তাই তোকে আমার সাথে থাকতে বলল”।
অর্চনা আবার কিছু একটা বলতে চাইতেই সীমন্তিনী তাকে বাধা দিয়ে বলল, “এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না অর্চু সোনা, প্লীজ। বড়মার সাথে কাজের কথাটা সেরে ফেলতে দে আমাকে, কেমন? আর শোন বোন, তুই আমার পাশেই বোস। ফোনের স্পীকার প্রথমদিকে অন করেই রাখছি, কিন্তু হঠাৎ করে আবার বন্ধও করে দিতে পারি। তাতে প্লীজ তুই কিছু মনে করিস নে”।
*******************
অর্চনা কিছু না বলে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাতেই সীমন্তিনী বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে ফোন করল। ও’পাশ থেকে এক মহিলা কন্ঠের কথা শোনা গেল, “হ্যালো, কে বলছেন”?
সীমন্তিনী নিজের মায়ের গলার স্বর চিনতে পেরে মৃদু গলায় জবাব দিল, “আমি মন্তি বলছি। একটু বড়মার সাথে কথা বলতুম”।
ও’পাশ থেকে কয়েক সেকেন্ড নিরবতার পর সরলাদেবীর শান্ত মিষ্টি গলা শোনা গেল, “আজ পুরো দু’মাস দশ দিন বাদে তুই ফোন করলি মন্তি। জানি এ বাড়ির সব্বাই তোর শত্রু .......”
তার কথার মাঝপথেই বাধা দিয়ে সীমন্তিনী বলল, “এইজন্যেই, এইজন্যেই তোমাকে আমি ফোন করতে চাই নে বড়মা। যতদিন তোমাকে ফোনে কিছু বলতে চেয়েছি, ততদিনই ফোন ধরেই তুমি এমন সব কথা বলে আমাকে কাঁদিয়ে দাও। তাই তো ইচ্ছে থাকলেও তোমাকে ফোন করিনা আমি। কিন্তু এখন আর কিছু না বলে আমার সাথে তোমার কী কথা আছে, সেটা বলো”।
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকবার পর সরলাদেবী কিছুটা গম্ভীর গলায় বললেন, “তোর কাকুকে তুই যা বলেছিস দু’দিন আগে, সে’ ব্যাপারে আমরা সবাই কাল আলোচনা করেছি”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ, কাকু আজ সকালে আমাকে এ’কথা জানিয়েছেন। তুমি নাকি ব্যাপারটাতে আপত্তি জানিয়েছ”?
সরলাদেবী এবার খানিকটা রাগত স্বরেই বললেন, “হ্যাঁ, জানিয়েছিই তো। কেন আপত্তি করব না শুনি? তুই সব সময় তোর নিজের ইচ্ছেগুলো আমাদের ওপর চাপিয়ে দিবি, আমাদের কোন ইচ্ছে কোন সাধ তুই পূর্ণ করবিনা, এটা কি মন থেকে মেনে নেওয়া যায়”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় জবাব দিল, “বড়মা, কথাতেই তো আছে, কূ-সন্তান হতে পারে, কিন্তু কূ-মাতা কখনোই হতে পারে না। আমি যে তোমাদের একটা কূ-সন্তানই গো। তাই তো তোমাদের কোন সাধ ইচ্ছে আমি পূরণ করি না। কিন্তু তুমি যে আমার মা গো। এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মা। তোমার বুকের দুধ খাইয়েই না আমাকে বড় করে তুলেছ তুমি? তুমি কি আমার কূ-মাতা হতে পার কখনও”?
ও’পাশ থেকে সরলাদেবীর ফুঁপিয়ে ওঠার আওয়াজ স্পষ্ট বুঝতে পারল সীমন্তিনী। তার চোখের কোলও ভিজে গেছে। আর সেটা দেখে অর্চনাও সীমন্তিনীর একটা হাত চেপে ধরেছে। ও’পাশ থেকে অনেকক্ষণ কোন সাড়া না পেয়ে সীমন্তিনী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “দেখেছ তো? কাঁদতে শুরু করলে তো তুমি? এ’জন্যেই তো আমি তোমাকে ফোন করতে চাই নে”।
______________________________