Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
#83
পর্ব-২১



কিছু পরে বন্দনা মাথা উঠিয়ে দেখে, সামু ঘুমিয়ে পড়েছে, আপন মনে হেসে ফেলে বন্দনা, পাগল ছেলে একেবারে, আমাকেও পাগল করেছে তার সাথে নিজে। ঘুমিয়ে আছে যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা, মুখ দেখে কে বলবে যে এই ছেলেটা একটু আগে ওকে নিয়ে সুখ সাগরে ঢেউয়ের তালে নৃত্য করছিল। নিজেকে টেনে নেয় ঘুমন্ত মুখের ওপরে, আলতো করে একটা ছোট্ট চুমু খায়, স্যামন্তকের ঠোঁটে, তারপরে নেমে যায় বিছানা থেকে। গায়ের ওপরে কম্বলটা টেনে দেয়, মাথার চুলে একটু বিলি কেটে দেয়, হেসে ফেলে আবার, সব থেকে ভালো বান্ধবীর ছোটো ভাই।
মেঝে থেকে ওভারকোট উঠিয়ে নিয়ে আলমারিতে রেখে দেয়, তারপরে নিজের জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে স্নান সারতে। স্নান সেরে একটি মাক্সি পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখে পূবালী একা একা বসে টিভি দেখছে। সারা অঙ্গে মাখা এক অদ্ভুত ভালবাসা নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।
পূবালী বন্দনাকে দেখে হেসে ফেলে, ভাইয়ের বনা, জিজ্ঞেস করতে একটু লজ্জা করে “কিরে তোর স্নান হল? এতক্ষণ লাগে নাকি স্নান করতে, ভাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
সেন্টার টেবিলে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে কামর দেয় বন্দনা, পূবালীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে স্যামন্তক ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখে এখন লেগে আছে ভালোবাসার প্রলেপ। গালের লালিমা এখন ফিকে হয়নি।
“খাবি? বারোটা বাজে, আমি তো তোর জন্য ওয়েট করছিলাম কখন তুই বের হবি স্নান সেরে।” দুষ্টুমি ভরা হাসে হেসে জিজ্ঞেস করে পূবালী।
খাওয়ার পরে সারাটা দুপুর দুই বান্ধবী মিলে গল্প করে কাটাল, কিছু করার নেই, এক জনের ভালবাসা ঘুমিয়ে রয়েছে আর এক জনের প্রানের সঙ্গী অফিসে বসে।
স্যামন্তকের ঘুম ভাঙ্গে সেই বিকেল বেলায়। ঘুম থেকে উঠেই খিদে, ঘুম ঘুম চোখে ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে যে দুই বান্ধবী গল্প করছে দিদির রুমে বসে।
“এই কিছু খেতে দে।”
“আগে স্নান করে আয় তারপরে” উত্তর দেয় পুবালী।
“ধুর এই শিতে কে চান করবে, তুই খেতে দে।” স্যামন্তক এই শিতে ঠিক চান করতে চায়না।
বন্দনা এগিয়ে এসে বলে “আচ্ছা চান করতে হবে না, হাত মুখ তো ধুয়ে আসো।”
বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে নেয় স্যামন্তক, বেড়িয়ে দেখে সিতাভ্র বাড়ি ফিরেছে। সিতাভ্র ওকে দেখেই হেসে বলে “তো আমার কনডম কাজে লেগেছে কি না।”
কথা শুনে বন্দনার আর স্যামন্তকের মুখ লাল হয়ে যায়। পুবালী একটুখানি রেগে গিয়ে বলে “কি যে বলতে থাকো না তুমি, সব সময়ে সবার পেছনে লাগা।”
“বাঃ রে, তোমার পেছন ছাড়া আমি আর কার পেছনে কবে লাগলাম” এই বলে আলতো করে পুবালীর কোমল নিতম্বে একটি ছোট্ট চাঁটি মারে।
রেগে যায় পুবালী “তোমার না কোন জ্ঞান বোধ কিছহু নেই। সবার সামনে তুমি ঐ রকম কেন কর?”
স্যামন্তক মুখ ঘুড়িয়ে নেয়, অন্তত দিদি জামাইবাবুর প্রেমালাপ ঠিক দেখতে পারেনা। বন্দনা তাকিয়ে হেসে ফেলে। সিতাভ্র স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে যে ছুটির কি খবর। স্যামন্তক জানায় যে অফিস গিয়ে ছুটির দরখাস্ত দিয়ে দেবে তারপরে ঘুরতে যাওয়া। চা খেতে খেতে গল্প করতে করতে সময় কেটে যায় অনেক। স্যামন্তকের নাইট ডিউটি, বের হতে হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। পুবালী ভাইয়ের জন্য খাবার বানাতে শুরু করে দিয়েছে, যাতে ভাইটি কিছু খেয়ে যেতে পারে, রাতে কি খাবে না খাবে তার তো ঠিকানা নেই, হয়তো খেলই না শুধু কাজ করে গেল। রান্না করতে করতে বসার ঘরের দিকে দেখে, স্যামন্তক আর বন্দনা সোফায় বসে গল্প করছে। হুম, দেখতে ভালো লাগছে ওদের দুজনকে, পাশাপাশি বেশ মানিয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা এখন কাটেনি, কাকু কাকিমা আর বাবা মা, বুঝিয়ে যদি উঠতে পারে তবে সব কিছু ঠিক হবে।
হাত মুখ ধুয়ে সিতাভ্র রান্না ঘরে ঢুকে পরে, ঢুকেই পুবালীকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো করে একটা চুমু খায়। পুবালীর নিষ্প্রভ আচরন দেখে বিচলিত হয়ে ওঠে “কি হল, হোয়াই সো কোল্ড ডার্লিং?”
ঘুরে দাঁড়িয়ে বসার ঘরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়, বলে “ওদের দুজনের জন্য কষ্ট হয়, জানিনা বাবা মা, কাকু কাকিমা মানবে কি না।” বউয়ের চোখে নিষ্প্রভ চাহনি দেখে উত্তর দেয় সিতাভ্র “ডোন্ট ওরি, আই উইল হ্যান্ডেল দ্যাট।” আলতো করে সিতাভ্রর ঠোঁটে চুমু খায় পুবালী।
স্যামন্তক বন্দনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে, বন্দনা আলতো করে নিজের কোমল আঙ্গুলে স্যামন্তকের চুলে বিলি কেটে দেয়। স্যামন্তক আরাম করে আদর খেতে গিয়ে প্রায় ঘুমিয়ে পরে। হেসে বলে “বনা, এই রকম ভাবে আদর করলে আমি তো আবার ঘুমিয়ে পরব।”
“তোমাকে কত বার করে বললাম যে আজ অফিস যেওনা, তুমি তো আমার কথা শুনলে না” অভিমানিনী মানের সুরে বলে তার প্রিয়জনকে।
“আরে বাবা, যদি অফিস না যাই তাহলে তো ছুটির এপ্ল্যাই করতে পারবো না, তাহলে তোমার সাথে আর বেড়াতে যেতে পারবো না।” তারপরে কানে কাচে মুখ নিয়ে বলে “আজ রাতের দুষ্টুমি চাও না ঘুরতে গিয়ে? সেটা ঠিক করে বল।”
“উম, শুধু ঐ একটা কাজ যেন মাথায়”
“কি করবো, অনেক দিন ধরে দেখে আসছি যে।”
“ওকে, রাতে তোমার বাড়ি না থাকা টাই ভালো দেখছি।” হেসে বলে বন্দনা।
কিছুক্ষণ পরে পুবালী খেতে দেয় স্যামন্তককে। খাওয়া দাওয়া সেরে স্যামন্তক বেড়িয়ে যায় অফিসের দিকে। বিদায় জানাতে নিচে নামে বন্দনা, গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দেখে স্যামন্তককে, বাইকে উঠলো, কিক দিয়ে স্টার্ট নিল। বাইকের স্টার্টের আওয়াজে যেন মনটা একটু খানি কেঁপে ওঠে। গেট খুলে দৌড়ে যায় ওর দিকে, জড়িয়ে ধরে স্যামন্তকের গলা, ঠোঁটে এঁকে দেয় এক নিবিড় ঘন প্রেম চুম্বন।
তারপরে গলা ছেড়ে বলে “সাবধানে যেও।”
শীত কালের দুপুর, বাইরে বেশ মিষ্টি রোদ উঠেছে। ব্যাগ ঘুছান হয়ে গেছে। এখন সিতাভ্র আর স্যামন্তক বাড়ি ফিরলনা। বেশ কিছুক্ষণ আগে বেড়িয়েছে বলে গেল ওদের নিজেদের খোরাক কিনতে যাচ্ছে। বন্দনা একটা কালো রঙের জিন্স আর একটা সাদা ফুল শার্ট পড়েছে, ওপরে একটা হাত কাটা নীল রঙের জ্যাকেট। লম্বা চুল নিয়েই যত ঝামেলা, জিন্সের সাথে কি আর লম্বা চুল ভালো লাগে? যাই হোক, স্যামন্তক চুল কাটতে দেবে না, আবার আবদার যে প্রেমিকা জিন্স ও পড়বে, যায় কোথায়। তাই চুলে একটা খোঁপা বাঁধা। পুবালী একটা নীল জিন্স, সিতাভ্র চায় যে যখন ঘুরতে যাবে তখন যেন একদম দারুন ড্রেস করে তার বউ। ঘরে যাই পরুক না কেন, ঘুরতে গেলে ওর চাই আধুনিকা স্ত্রী। পুবালীর সেই নিয়ে কোন দ্বিরুক্তি নেই, স্বামীর ভালবাসার কাছে সারা পৃথিবীর সব সুখ যেন তুচ্ছ।

তিনটে বড় বড় ব্যাগ তাতে জামাকাপড় আর শীতের কাপড়, দুটো ছোটো ব্যাগ তাতে কিছু হাতে রাখার জিনিস আর একটাতে খাবার দাবার। দুই বান্ধবী বেশ উৎফুল্ল, ঘুরতে যাবে। সেই যে বিয়ের পরে পুবালী মধুচন্দ্রিমার সময়ে ঘুরতে গেছিল তারপরে আর সিতাভ্র ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হয়নি। খুব কাজের চাপ, রাশিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আশার পরে তো কাজের চাপ আর বেড়ে গেছে। সরকারি চাকরি তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে, অন্তত ভাইটার মতন নয়, ভাইয়ের কথা ভেবে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। সাধারন দিনেও মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। সিতাভ্রকে বলেছিল একবার যে দেখ না ভাইটার কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু স্যামন্তক জানিয়ে দেয় যে ও নিজের তাগিদে, নিজের চেষ্টায় চাকরি করবে। পুবালী সেইদিনের পর থেকে আর চায় নি ভাইয়ের সম্মানে আঘাত লাগুক, একটি মাত্র ভাই। বন্দনা বেশ খুশী, এই প্রথম বার হৃদয় সঙ্গির সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, অবশ্য সব কিছুই ওর ঘোরার মতন হচ্ছে। কোলকাতা থেকে দিল্লী আসা তারপরে এই পুবালীদের সাথে জয়শাল্মির যাওয়া, সব কিছু তো একটি বৃহৎ ভ্রমনের অঙ্গ।
“কি রে একবার ফোন করে দেখ তো সামু কে” পুবালী জিজ্ঞেস করে বন্দনাকে।
“কেন তুই করতে পারিস না?”
“আরে আমি করলে ঝাঁজিয়ে উঠবে দু’জনে, তার চেয়ে তুই একজনার শালি আর এক’জনার নতুন প্রমিকা। তুই একদম সেফ সাইডে” হেসে বলে পুবালী।
ফোন করল বন্দনা “কি গো, কোথায় তোমরা।”
স্যামন্তক “কেন কি হল?”
“কি হল মানে” গলার স্বর একটু চড়িয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “বের হবে কখন, আমাদের ড্রেস করতে বলে গেলে আর নিজেরা বেপাত্তা। পনেরো মিনিটের মধ্যে যদি বাড়ির সামনে না দেখি তো আমি আর যাবনা।”
“উফ, দেখো মেয়ের কাণ্ড, আসছি এই আসছি। জাস্ট আধা ঘণ্টা ডার্লিং, ব্যাস।” স্যামন্তক কাতর স্বরে বলে ওঠে।
ফোন রেখে দিতেই পুবালী ওর দিকে হেসে বলে “কিরে দেখলি তো কাজ হল। এই যদি আমি বলতে যেতাম আমাকে দুজনে মলে এমন কথা শোনাত যেন আমি কত পাপ করে ফেলেছি।”
মিনিট পনেরো পরেই বাড়ির সামনে গাড়ি এসে হাজির। স্যামন্তক গাড়ি থেকে নামতে নামতে সিতাভ্র কে বলে “ধুর তোমার জন্য তো দেরি হল, কি না একটা মারতেই হবে যাবার আগে। এবার বোঝো ঠেলা, আমাদের দুই চন্ডী মাতা বসে আছেন আমাদের পিঠের ছাল নামানর জন্য।” একটা কোল্ড বক্সে বরফের মধ্যে খান দশেক বিয়ারের ক্যান। ক্যানটা ডিঁকি তে ঢোকাতে হবে দিদি দেখলে তাও ঠিক আছে কিন্তু বন্দনা জানে না যে ও ড্রিংক করে।
সিতাভ্র ওর মুখ দেখে বুঝে যায় “ধুর এত ভয় পেলে হবে, চল ওপরে। বক্সটা ওখানেই থাক, যেতে যেতে দুটো মারবো। সেই তো সারা রাত ধরে গাড়ি চালাতে হবে।”
“চিন্তা নেই আমি চালিয়ে নেব কিছুটা।”
“উপ্স তাহলে হয়েছে।”
“আরে বাবা, তুমি ছিলেনা, ঐ দশ দিনে আমি গাড়ি সিখে নিয়েছি।”
“তাই বলি শালা, বাম্পারে স্ক্রাচ লাগলো কি করে। যাই হোক তোমার দিদি হয়তো দেখেনি এই স্ক্রাচ না হলে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যেত।”
“আরে বাবা, ভয় পেওনা, বলে দিও যে আমি স্ক্রাচ মেরেছি, দেখবে কিছু বলবে না।” স্যামন্তক জানে দিদির দুর্বলতা।
গাড়ির আওয়াজ শুনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই বান্ধবী ওদের দেখে হাসে। ওপর থেকে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে পুবালী বন্দনা কে বলে “ছেলেটা যে বিয়ার খায় এটা তো আমিও জানতাম না রে।”
“হুম, তোর ভাই তোকে খুব ভয় পায়।”
“ভয় পায় না ঘোড়ার ডিম। দেখলি তো গাড়িতে স্ক্রাচ মেরেছে, আর কি বলছে যে দিদি কে বল যে আমি মেরেছি দিদি কিছু বলবে না।” হেসে ফেলে দু’জনে তারপরে নিচের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে “এই যে হল তোমাদের বিয়ার কেনা।”
ওপরে তাকিয়ে চমকে ওঠে দুজনে, আমতা আমতা করে মাথা চুলকায় স্যামন্তক। পুবালী মৃদু রাগের স্বরে বকে দেয় “আয় তুই ওপরে তোর বিয়ার খাওয়া বের করে দিচ্ছি।”
ওপরে উঠে স্যামন্তক বলে “চল বেড়িয়ে পড়ি, না হলে দেরি হয়ে যাবে।”
পুবালী আর বন্দনা সিঁড়ি দিয়ে আগে নামে, পেছনে সিতাভ্র আর স্যামন্তক হাতে ব্যাগ নিয়ে নামে। বন্দনা মাথা ঘুড়িয়ে ওদের দিকে দেখে যে দুজনে কেমন একটা চোখে দুই নারীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বন্দনা পুবালী কে জিজ্ঞেস করে কানেকানে “কিরে, ওরা আমাদের দিকে ওই রকম লুচ্চার মতন তাকিয়ে কেন?”
পুবালী হেসে উত্তর দিল “আরে আমারটা তো পেছন পাগল, তোরটা তোর কি দেখছে আমি জানিনা।” কথা শুনে দুজনে হেসে ওঠে।
গাড়ির পেছনে ব্যাগ রাখার সময়ে বন্দনা স্যামন্তকের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল “ওইরকম ভাবে কি দেখছিলে বলতো?”
স্যামন্তক নাক মুখ কুঁচকে হেসে বলে “কেন বলব? আমরা যা দেখার সব তোমাদের বলতে হবে নাকি?”
“আমি জানি, তুমি যা ছেলে তুমি ওইসব ছাড়া আর কিছু দেখতে পারনা। সেই বিড়লা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ও শুধু মেয়েদের পাছা দেখে যাচ্ছিলে।”
কথা শুনে স্যামন্তক হেসে ফেলে, একটু খানি ঝুঁকে বন্দনার কানে কানে বলে “তোমাকে জিন্সে যা লাগছে না, কি যে বলি, আরও ভালো হত যদি স্লাক্স টা পরতে বেশ মনে হত যে কিছুই পরে নেই।”
আদরের মার মারতে শুরু করে বন্দনা স্যামন্তকের পিঠের ওপরে। “উফ, এখনি মেরো না, মারার অনেক সময় আছে।”
পুবালী গাড়ির মধ্যে বসে পেছনে তাকিয়ে দেখে, বন্দনা আর স্যামন্তক মারামারি করছে, তবে প্রেমের ঝগড়া, হেসে বলে “এই তোরা কি গাড়িতে উঠবি না, বাড়ির চাবি দিয়ে যাবো, বাড়িতে থাক বাড়ি পাহারা দে আর নিজেদের ঝগড়া বাড়ি গিয়ে কর।”
দিদির কথা শুনে একটু খানি লজ্জায় পরে যায় স্যামন্তক, বন্দনা গাড়িতে উঠে পরে।
হাইওয়ে আট ধরে গাড়ি ধেয়ে চলে, স্টিয়ারিংএ সিতাভ্র বসে, পাশে পুবালী। পেছনের সিটে বন্দনা আর স্যামন্তক। পুবালী সিতাভ্র কে জিজ্ঞেস করল যে কতক্ষণ লাগবে জয়শাল্মির পৌঁছতে, সিতাভ্র উত্তর দিল যে কুড়ি ঘন্টার মতন লাগবে। তখন বাজে দুপুর দুটো, জয়শাল্মির পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল দশটা এগারোটা তো বেজে যাবে।
শুনে আঁতকে ওঠে পুবালী “তুমি একা একা এতটা রাস্তা চালাবে? কবে থেকে বলেছি আমাকে একটু গাড়ি শেখাও তা না।”
পেছন থেকে স্যামন্তক বলে “আরে আমি কিছুটা চালিয়ে নেব, চিন্তা নেই তোর।”
“তুই কবে চালান শিখলি?” পুবালী ঘাড় ঘুড়িয়ে স্যামন্তকে জিজ্ঞেস করল।
“এই যখন তোরা কোলকাতা গেছিলি তখন গাড়িটা শিখে নিয়েছি।”
“আমি গাড়ি থেকে তাহলে নেমে যাবো” বন্দনা হেসে বলে ওঠে “আমি বাবা অকাল মৃত্যু বরণ করতে চাই না, এখন বিয়ে হয় নি আমার আর বিয়ের আগেই…”
বন্দনা স্যামন্তকের গা ঘেঁসে বসে ছিল, স্যামন্তক বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরেছিল বন্দনা কে। কথা শুনে পেটের ওপরে কাতুকুতু দিয়ে কানেকানে বলে “তোমার চিন্তা কি, বলত মাঝখানে কোথাও গাড়ি দাঁর করিয়ে একটা মন্দির দেখে বিয়ে করে নেব।”
“হ্যাঁ, হয়েছে তোদের অনেক।” পুবালী ওদের প্রেমালাপ শুনে ফেলে বলে “যা করছ কর, এমন কিছু কর না যে আমাকে ন’মাস আগেই বিয়ের দিন ঠিক করতে হয়।”
সিতাভ্র এতক্ষণ চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছিল, কিছু বলতে পারছিল না। গুরগাঁওয়ে এত ট্রাক আর গাড়ির জ্যাম যে কোন কথা ঠিক মতন কানে যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যে খালি রাস্তা এসে পড়লো, গাড়ি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলে। বারবার পুবালী পেছন ঘুরে তাকিয়ে গল্প করছিল বন্দনা আর স্যামন্তকের সাথে, কিছুক্ষণ পরে সিতাভ্র পুবালী কে বলল যে ওরা দুই মেয়ে পেছন সিটে বসে পড়ুক, ছেলেদের কিছু কাজ আছে। একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁর করিয়ে নেমে পরে সিতাভ্র, স্যামন্তককে ডেকে বলল যে দুটি বিয়ার ক্যান বের করতে। স্যামন্তক একবার দিদির দিকে দেখে সিতাভ্রকে বলল যে ও যদি বের করে বিয়ার ক্যান তাহলে পুবালী ওর মাথার ঘিলু বের করে দেবে।
পুবালী ওর দিকে দেখে বলে “ঠিক আছে, ঘুরতে যাচ্ছি বলে মাফ করে দিচ্ছি, তবে যে দিন বাড়িতে খেয়ে ঢুকবি সেদিন বাড়ি থেকে বের করে দেব।”
তিরিং করে লাফিয়ে ওঠে স্যামন্তক, যাক বাবা সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। বন্দনা চুপ করে স্যামন্তক আর পুবালী কে দেখে, দেখে দিদির প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা আর শ্রদ্ধা। ভয় তাকেই পাওয়া যায়, যাকে মানুষ সব থেকে বেশি ভালবাসে নিজের জীবনে। ওকে এই জায়গা টাকে অর্জন করতে হবে, কিন্তু দিদির ভালবাসা খণ্ডন করে নয়, নিজের বুক ভরা প্রেম ভালোবাসা দিয়ে। দিদির স্থান এক অন্য জায়গায়, প্রেমিকার স্থান এক অন্য সমান্তরালে।
কথায় গল্পে মুখর হয়ে ওঠে যাত্রা। বন্দনা যখন ডিব্রুগড়ে থাকতো, তখন পুবালী একবার ওদের বাড়িতে গেছিল, ঠিক শীতকালের পরেপরে। দু’জনে মিলে একসাথে অরুনাচল প্রদেশ ঘুরতে গেছিল। সেই বরফে ঢাকা তাওয়াং উপত্যকা, হিমালয়ের কোলে ঠিক একটি পটের ছবির মতন আঁকা সুন্দর সেই সাদা ছোট্ট শহর। বরফের মধ্যে গড়াগড়ি খাওয়া, বরফ নিয়ে খেলা। ঠিক যেন মর্তের ওপরে ছোট্ট একটি স্বর্গ রাজ্য, পৃথিবীর এই জনারন্যের থেকে অনেক অনেক দুরে, মানুষেরা কত সাদাসিধে। সেই বরফে ঢাকা সেলা পাস পেরিয়ে বরফ জন সেলা লেক। কথা গুলো মনে করে দুই বান্ধবী কেমন যেন হারিয়ে যায়। বন্দনার মনটা একটু ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, ডিব্রুগড়ে সারা জীবন কাটিয়েছে, বড় হয়েছে সেখানে, খেলেছে ব্রমহপুত্রের তিরে। পুবালী ওর চোখ দেখে বুঝতে পারল যে বন্দনা নিজের সেই ছোটোবেলার কথা মনে করে মন খারাপ হয়ে উঠেছে।
হাসির ছলে মন ভুলানর জন্যে থাপ্পর মেরে বলে “আরে মন খারাপ করছিস কেন, হানিমুনে তোরা তাওয়াং যাস।”
চোখের কোনে এক চিলতে জল চলে এসেছিল বন্দনার একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “তাওয়াং নয় রে, পুবালী, আমাকে ব্রমহপুত্র টানছে।”
“তুই চিরকাল তো আর সেই ডিব্রুগড়ে থাকতিস না রে। যেতে হত সেই জায়গা ছেড়ে একদিন।”
“তাহলেও, বড় হয়েছি ওখানে যে।”
“ওকে বাবা, সামু নিয়ে যাবে তোকে।”
হেসে বলে বন্দনা “নিজের বাড়ি যাবার সময় হয়না ওর আবার আমাকে নিয়ে ডিব্রুগড় যাবে, তাহলে হয়েছে।”
স্যামন্তক আর সিতাভ্র, দুজনের বিশেষ কিছু বলার নেই, কওয়ার নেই, চুপ করে দুজনে বিয়ারে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে আর সিতাভ্র একমনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুড়িয়ে স্যামন্তক পেছনে বসে থাকা নিজের প্রেমিকার দিকে একবার করে দেখে একটু হেসে যাচ্ছে। কি করবে আর, পাশে বসে থাকলে না দিদির চোখ চুরিয়ে চুপিচুপি একটু দুষ্টুমি করা যেত, সামনে বসে সেটা আর সম্ভব নয়।




চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 3 users Like Biddut Roy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ) - by Biddut Roy - 22-03-2020, 10:10 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)