21-03-2020, 07:28 PM
(Update No. 200)
বিমল মোবাইলটা হাতে নিয়েই ধপ করে তার চেয়ারে বসে পড়ল। তার মুখটা একেবারে রক্তশূণ্য মনে হচ্ছিল।
নিশিতা বিমলের পিঠে একহাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করতেই বিমল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তোমার টেবিল থেকে ডাকে আসা জিনিসগুলো ........”।
বিমল তার কথা শেষ না করলেও নিশিতার বুঝতে কোন কষ্ট হল না। তাই সে ছুটে গিয়ে নিজের চেম্বার থেকে চৌকিদারের দেওয়া জিনিসগুলো এনে বিমলের মুখের সামনে টেবিলের ওপর রাখতেই বিমল প্রায় পাগলের মত জিনিসগুলোকে নাড়াচাড়া করে সাইজ আর ওজনের ওপর ভরসা করে আসল প্যাকেটটাই নিজের হাতে তুলে নিল। প্যাকেটটাকে উল্টে পাল্টে দেখল এক কোনায় সেন্ডার্স অ্যাড্রেসে লেখা আছে ‘ইস্তিয়াক আহমেদ”। বিমলের হাতটা থরথর করে কাঁপছিল। কাঁপা কাঁপা হাতেই সিডির প্যাকেটটা নিশিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে তার ল্যাপটপের দিকে ঈশারা করল। তার যেন কথা বলার শক্তিটুকুও নেই।
নিশিতা প্রথমে ল্যাপটপটা ব্যাগ থেকে বের করে অন করল। তারপর সিডির প্যাকেটটা খুলে বিমলকে জিজ্ঞেস করল, “স্যার, প্লে করব”?
বিমল মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাতে নিশিতা সিডিটাকে চালিয়ে দিল। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই ল্যাপটপের স্ক্রীনে চলমান ছবি ফুটে উঠল। এ জায়গাটা নিশিতার পরিচিত নয়। একটা অপরিচিত ঘর। দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনও একটা ফ্ল্যাটের বেডরুম হবে হয়ত। একটা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বিমল অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের পড়নের পোশাক খুলে তাকে নগ্ন করে তার বুকের অসম্ভব লোভনীয় স্তনদুটোকে নিজের হাতে দিয়ে টিপতে শুরু করল। আর মেয়েটাও সাথে সাথে বিমলের শরীর থেকে একটা একটা করে তার সমস্ত পোশাক খুলতে আরম্ভ করল। বিমল ক্লান্তি, ভয়ে আর টেনশনে এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিল। নিশিতা বিমলের কাঁধে হাত রেখে মৃদু স্বরে “স্যার’ বলে ডাকতেই বিমল চোখ মেলে তাকাল। আর ল্যাপটপের স্ক্রীনে চোখ পড়তেই বিমলের বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা রইল না যেন। বিমল দেখল এ ভিডিওতে রবির স্ত্রী অনুপমা আর তার চলমান ছবি। কিন্তু অনুপমা আর তার স্বামী রবি তো এখন জেলে আছে। আর অনুপমাকে বিমল শেষ ভোগ করেছে প্রায় দু’ আড়াই মাস আগে। অনুপমারা বড়বাজারে নতুন ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেবার পর। তার মানে দু’আড়াইমাস আগে থেকেই এই লোকটা তার পেছনে এভাবে লেগেছে? ওঃ ভগবান, আর ভাবতে পারছে না বিমল। হাত বাড়িয়ে ল্যাপটপটাকে বন্ধ করে দিয়ে বিমল টেবিলের ওপর মাথা পেতে দিয়ে হাঁপাতে লাগল।
নিশিতা ল্যাপটপ থেকে সিডিটা বের করে ল্যাপটপটাকে শাট ডাউন করে দিয়ে বিমলের ব্যাগের ভেতর সিডি আর ল্যাপটপটাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বিমলের কাঁধে হাত দিয়ে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে ডাকতেই বিমল অনেক কষ্টে নিজের চোখটা আধা খোলা করে বলল, “তুমি সব কিছু গুটিয়ে তুলে রেখে দাও নিশি। আজ আর কোন কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে দশটা মিনিট রেস্ট নিতে দাও প্লীজ”।
নিশিতা আর কিছু না বলে টেবিলের ওপরের জিনিসগুলো তুলে নিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে একটা স্টীল আলমাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে রাখল। তারপর নিজের টেবিলের জিনিসগুলোও তুলে রাখল। তারপর বিমলের পোশাক আশাক গুলো উঠিয়ে সে’গুলোকে বিমলের টেবিলের এক কোনার রেখে দিয়ে রেস্টরুমের বিছানাটা পরিপাটি করল। কাঁচের গ্লাসগুলো ক্লোজেটে রাখল। তারপর নিজের চোখমুখ ভাল করে ধুয়ে নিজের কেবিনে এসে আবার কিছুটা মেকআপ করে নিজেকে টিপটপ করে তোলার পর আবার বিমলের কাছে এসে তাকে জাগিয়ে তুলল। বিমল কোনও কথা না বলে ফ্যালফেলে চোখে নিশিতার দিকে চাইতেই নিশিতা বলল, “আমি সব গুছিয়ে রেখেছি স্যার। সিডিটা আর আপনার মোবাইল তিনটে ল্যাপটপের ব্যাগেই ভরে দিয়েছি। আপনি একটু কষ্ট করে ড্রেস আপ করে নিন। তাহলেই আমরা বেরোতে পারব”।
বিমল খুব ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ পড়ে নিল। নিশিতা চেম্বারের দড়জা খুলে বিমলকে নিয়ে বাইরে বেরলো। চৌকিদারকে অফিস বন্ধ করতে বলে বিমলকে নিয়ে লিফটে ঢুকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে নামবার পর বিমলের হাত ধরেই নিশিতা তাকে বিমলের গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিল। ড্রাইভারকে বলল, “স্যারের শরীরটা একটু খারাপ। একটু সাবধানে ড্রাইভ কোর” বলে বিমলকে গুড নাইট জানিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
******************
ডিনার শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। অর্চু বিয়েতে নিজের সম্মতি জানাবার পর থেকে নবনীতাকে যেন আর কিছুতেই আয়ত্বে রাখা যাচ্ছিল না। প্রায় গত দু’ঘন্টা ধরে একবার সীমন্তিনী, একবার লক্ষ্মী আবার কখনও কখনও অর্চুকে ধরেই আনন্দে লাফালাফি করে কাটিয়েছে সে। অর্চু লজ্জায় নিজেকে লুকিয়ে রাখতেও পারেনি। তাই রাতের খাবার খেতে একটু দেরীই হল।
সীমন্তিনী আজ তার কাকুর সাথে ফোনে কথা বলবে ভেবে রেখেছিল। জেঠু, বাবা, বড়মা এরা সকলে পরি আর অর্চুর বিয়েটার আয়োজন তাদের বাড়িতে করতে রাজি হবে কি না এটা জানা তার খুবই দরকার এখন। অর্চু বিয়েতে রাজী হওয়াতে সীমন্তিনীও সত্যি খুব খুশী হয়েছে। সে জানে, পরিও রাজি হবেই। তাই বিয়েটা যে হচ্ছেই, এ ব্যাপারে তার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। খুব ইচ্ছে করছিল রচনাকে খবরটা জানাতে। কিন্তু পরে ভাবল, নাহ, সবকিছুর আয়োজনের প্ল্যান করে ফেলার পরই রচনাকে সব কথা খুলে জানাবে। তাই এখন সবচেয়ে আগে দরকার হল বিয়ের ভেনিউটা ঠিক করা। রাজগঞ্জের বাড়িতে করতে পারলেই সব থেকে ভাল হয়। কালচিনির বাড়ির কেউও তাতে আপত্তি করবে না। রতীশ আর রচনাও এ বিয়েকে উপলক্ষ্য করেই আরেকবার অন্ততঃ রাজগঞ্জের বাড়িতে আসবার সুযোগ পাবে। বিয়েটা পূজোর প্রায় একমাস বাদে হচ্ছে। পূজোর সময় তো তার দাদাভাই আর রচুসোনা একবার বাড়ি আসবেই। বাড়ির সকলেও অল্পদিনের ব্যবধানে দু’ দু’বার রচনাকে তাদের সাথে পেয়ে খুবই খুশী হবে।
কিন্তু ডিনার সেরে নবনীতা আর অর্চুকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে সীমন্তিনী যখন নিজের ঘরের বিছানায় শুতে এল, রাত তখন এগারোটা পঁয়তাল্লিশ। এত রাতে কাকুকে ফোনে পাওয়া যাবে কি যাবে না, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তবু ল্যান্ডলাইন ফোনটা বিছানায় টেনে এনে সেটা থেকে চন্দ্রকান্তবাবুর নাম্বার ডায়াল করল। কয়েকবার রিং হতেই চন্দ্রকান্তবাবু সাড়া দিয়ে বললেন, “হ্যাঁরে মন্তি মা, বল। তুই ভাল আছিস তো? রাতের খাবার খেয়েছিস মা”?
কাকুর মুখে এমন করে ‘মা’ ডাক শুনলেই সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে। তবু নিজেকে সামলে রেখে বলল, “হ্যাঁ কাকু, খেয়েছি। তোমাদেরও খাওয়া হয়ে গেছে নিশ্চয়ই? ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি? ডিস্টার্ব করে ফেললাম বুঝি”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “দুর পাগলী, কিসের ডিসটার্ব রে? তুই আমাকে রাত দুটোর সময় ফোন করলেও আমি কখনও তোর ওপর বিরক্ত হব বলে ভাবিস তুই? আমার মনটা কেন জানি বলছিল যে তুই আজ আমাকে ঠিক ফোন করবি। তাই ঘুমোতে যাব যাব করেও অপেক্ষা করছিলাম। আর সত্যি সত্যি তোর ফোন পেলাম। তা কী বলবি বল তো”?
সীমন্তিনী নিজের মনে মনে কথাগুলোকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলল, “কাকু, তোমরা সবাই তো রচুর দিদি অর্চনার কথা শুনেছ”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যাঁরে মা সে তো শুনেছিই। মেয়েটার জন্যে সত্যিই খুব কষ্ট হয় রে। কী দোষ ছিল ওর যে ওর কপালে ভগবান এত দুঃখ লিখেছেন! তা আবার কি হয়েছে? ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার কোন ঝামেলা পাকিয়েছে নাকি রে”?
সীমন্তিনী বলল, “না কাকু, তা ঠিক নয়। আসলে মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি ভেবেছি ওর আবার বিয়ে দেব। তোমরা তো কেউ ওকে দ্যাখনি। কী ভাল যে কাকু মেয়েটা! অর্চুকে কিছুদিন হল আমার কাছেই এনে রেখেছি। আর আমাদের সাথে থাকতে থাকতে ও এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ওর মুখে হাসি ফিরে এসেছে। রচুকে তো তোমরা দেখেছ। রচুর আচার ব্যবহার স্বভাব চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা তো সবকিছুই জানো। এই অর্চুও স্বভাব চরিত্রের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ আমাদের রচুর মত। আর দেখতে তো ওকে রচুর চেয়েও ভাল। আমার খুব ইচ্ছে ছিল রচুর মত এ মেয়েটাকেও আমাদের বাড়ির আরেকটা বৌ করে তোমাদের হাতে তুলে দেব। তবে একটা বিধবা মেয়েকে তোমরা তোমাদের ঘরের বৌ করে নিতে চাইবে কিনা সেটা নিয়ে মনে একটু সংশয় ছিলই আমার। কিন্তু তার চেয়ে বেশী গোল বাঁধল তখন, যখন আমি জানতে পারলুম যে যার সাথে অর্চুর বিয়ে দেব বলে ভাবছি, আমার সেই ভাইটাই অন্য আরেকটা মেয়েকে ভালবাসে”।
এ’কথা শুনেই চন্দ্রকান্তবাবু চমকে গিয়ে বললেন, “কি বলছিস তুই মন্তি? তুই কি আমাদের সতুর কথা বলছিস”?
সীমন্তিনী শান্ত স্বরেই বলল, “হ্যাঁগো কাকু। আমি ভেবেছিলুম সতুর সাথেই অর্চুর বিয়ে দেব। শুধু অপেক্ষা করছিলুম সতুর চাকরি পাবার। রচু কলকাতা যাবার পর বাড়ির সকলে যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, অর্চুকে আমাদের বাড়ির বৌ করে নিলে অর্চুর ছোঁয়ায় আবার আমাদের বাড়িটা আগের মতই হাসিখুশীতে ভরে উঠত। তোমরা হয়ত প্রথমেই একটা বিধবা মেয়েকে বৌ বলে মেনে নিতে চাইতে না। কিন্তু সতু যদি রাজী হত তাহলে আমি শেষ অব্দি চেষ্টা করতুম তোমাদের রাজি করাতে। কিন্তু কিছুদিন আগে সতুর সাথে কথায় কথায় আমি হঠাতই জানতে পারলুম যে সতু কোন একটা মেয়েকে নাকি ভালবাসে। তাই আমি আমার মন থেকে সে ভাবনাটা সরিয়ে ফেলেছি। ওদিকে কালচিনির মাসি মেসোরাও প্রথমে আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু আমি অর্চুর ভবিষ্যতের সবরকম সম্ভাবনার কথা বলে তাদেরকে বোঝাতে, তারা রাজি হয়েছেন। আর আমারই চেনা পরিচিতির মধ্যে একটা ভাল ছেলের সাথে ওর বিয়েটা প্রায় পাকা করে ফেলেছি। কিন্তু এমন একটা মুস্কিলে পড়েছি যে বাধ্য হয়ে তোমার আর ও বাড়ির সকলের কাছে আমাকে সাহায্য চাইতে হচ্ছে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “বুঝেছি রে মা। বিধুবাবুর আর্থিক পরিস্থিতি তো সত্যিই খুব একটা ভাল নয়। আর তাছাড়া ......”
তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই সীমন্তিনী বলল, “না কাকু, আমি ওই ব্যাপারে তোমাদের কিছু বলছি না। আর মেসোর আর্থিক অবস্থার আগের চেয়ে কিছু উন্নতিই হয়েছে। আসলে কাকু, বিয়ের দিনটা স্থির হচ্ছে তেরোই অঘ্রান, ইংরেজীর ঊনত্রিশে নভেম্বর। কিন্তু মাসি মেসোরা তাদের থাকবার বাড়িটা ভেঙে নতুন করে বাড়িঘর বানাচ্ছেন। গৃহারম্ভের দিন ঠিক হয়েছে আঠারোই অক্টোবর। আর বাড়িটা পুরোপুরি তৈরী হতে হতে তো কম করেও চার পাঁচ মাস লাগবে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, বাড়িতে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলতে থাকা অবস্থায় সে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই ভাবলুম, তোমাদের সাথে এ ব্যাপারে একটু আলোচনা করে দেখি। দ্যাখো কাকু, অর্চু তো আমাদের আত্মীয়ই। আমাদের ঘরের বৌয়ের নিজের দিদি। এক আত্মীয়ের বিপদে আপদে অন্য আত্মীয়দের তো পাশে দাঁড়াতেই হয়। আর তাছাড়া যে ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছেলেটাও আমার বিশেষ বন্ধু। ওর বাড়ি কলকাতায়। দাদাভাই আর রচুর সাথেও ওর পরিচয় আর হৃদ্যতা আছে। মনে হয় রচুর মুখে তোমরা ছেলেটার নামও শুনে থাকবে। ওর নাম পরিতোষ। মানে পরিতোষ সান্যাল”।
সীমন্তিনীর কথা শুনেই চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ পরিতোষ সান্যাল নামের এক আইপিএস অফিসারের কথা বড়বৌমার মুখে শুনেছি। হ্যাঁ এটাও জানি যে তোর সাথে ওর খুব ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। এই তো দিন দুয়েক আগেই শুনলুম যে রতু আর রচুকে নিয়ে পরিতোষ কোন এক ডাক্তারের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। ওই ডাক্তারের স্ত্রী আর মেয়েও নাকি খুব ভাল। তোর কাকিকেই তো এ’সব কথা বলেছে বড়বৌমা”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ কাকু, ওই পরিতোষের সাথেই অর্চুর বিয়ে ঠিক করেছি। কিন্তু বিয়ের আয়োজন করতেই সমস্যায় পড়েছি। কালচিনির বাড়িতে সম্ভব নয়। আমার এখানেও সম্ভব নয়। কলকাতা নিয়ে গিয়ে যে বিয়েটা দেব তাতেও অনেক ঝামেলা পোয়াতে হবে। তাই আমার হাতে এখন শুধু দুটো রাস্তাই খোলা থাকছে। এক, রাজগঞ্জের বাড়ি, আর দুই কোনও বিবাহ ভবন বা ব্যাঙ্কুয়েট হল ভাড়া করা। আর বিবাহ ভবনের বিয়েগুলো কেমন যেন হয়। এটা নেই, ওটা নেই। বিয়ে বাড়ির আসল আমেজটাই সেখানে থাকে না। তবু অন্য কোন উপায় না পেলে সে রাস্তাতেই যেতে হবে আমায়। কিন্তু যদি তোমরা একটু কষ্ট করে রাজগঞ্জের বাড়িতে বিয়েটার আয়োজন করতে পার, তাহলে কালচিনির বাড়ির সকলের সাথে সাথে রচু, দাদাভাইও খুব খুশী হত। বিয়েতে ওরা সবাই মিলে খুব খুব মজা করতে পারত। আর এটা তো জানোই রচু থাকলেই আমাদের বাড়ির সকলেই হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠবে। তাই তারাও বিয়েটা মন থেকে উপভোগ করতে পারবে। এ উদ্দেশ্য নিয়েই আজ তোমাকে ফোন করছি। তোমাকে সব কথা খুলে বললুম। এবার তুমি আমার তরফ থেকে তোমার মেজদা আর জেঠু বড়মার সাথে এ ব্যাপারে একটু আলাপ করবে? প্লীজ কাকু”।
চন্দ্রকান্তবাবু সীমন্তিনীর সব কথা শুনে বললেন, “দ্যাখরে মন্তি মা। বড়বৌমার বাপের বাড়িতে অসুবিধে থাকায় তার বড়বোনের বিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে দেওয়াই যায়। নইলে আর আত্মীয় হলাম কিসের আমরা। আমি তো আমার মত তোকে এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। আমি পুরোপুরি রাজি। বিয়ের সমস্ত দায়িত্বও কাঁধে নিতে রাজি আছি। আর্থিক সাহায্য কিছু করতে হলে, সেটাও আমার সাধ্যমত করব। আমাদের বড়বৌমার বোন বলে কথা। তবে তুই তো জানিসই, আমাদের এ বাড়িতে যা কিছু আয়োজন করা হয় সে’সব ব্যাপারে আমরা তিন ভাই আর আমাদের বাড়ির তিন কর্ত্রী সমবেত ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। তাই আমার মতটা তোকে আগেই জানিয়ে দিয়ে বলছি, আমি কালই দাদা বৌদিদের সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনায় বসব। তখন আমাদের সমবেত সিদ্ধান্ত যা হয় সেটা জানতে পারবি”।
সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হয়ে বলল, “আমি জানি কাকু। আমি তোমাদের বাড়ির তোমাদের বংশের কলঙ্ক। তা সত্বেও আমি জানি তুমি আমাকে যতটা ভালবাস, তেমন ভাল আমাকে বাবা বা জেঠুও বাসেন না। তাই তো আমার সমস্ত ন্যায় অন্যায় আবদার আমি তোমাকেই জানাই শুধু। আচ্ছা কাকু, অনেক রাত হয়ে গেছে গো। এবার ঘুমোও। ছোটমাকে আমার প্রণাম জানিও আর চন্দু চঞ্চুকে আমার আদর দিও। রাখছি”।
চন্দ্রকান্তবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “আরে শোন শোন মা। তোর কথা তো শেষ হল। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন যে আছে। সেটার উত্তর দে”।
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি প্রশ্ন কাকু”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “সতু কাকে ভালবাসে, এ ব্যাপারে তোকে কিছু বলেছে? মেয়েটা কে বা কোথাকার”?
সীমন্তিনী বলল, “নাগো কাকু, সতু এ ব্যাপারে আমাকে আর কিচ্ছু জানায় নি। মেয়েটা কে? কার মেয়ে? কোথায় থাকে? কী করে, এ’সব ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না। ওই একদিনই শুধু বলেছিল যে ও একটা মেয়েকে ভালবাসে। কিন্তু পরেও আর কখনও আমাকে ও ব্যাপারে কিছু বলে নি”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তোর ছোটমার মুখে শুনেছি যে বাড়িতেও মহিলা মহলে এমন একটা কানাঘুষো চলছে। কিন্তু এরাও কেউ ওই মেয়েটা সম্বন্ধে কিছু জানে না। কিন্তু ব্যাপারটা শোনবার পর থেকেই মনে মনে একটু শঙ্কা হচ্ছে রে। মেয়েটা কেমন স্বভাবের হবে কে জানে? আমাদের বাড়ির সাথে মানিয়ে চলতে পারবে কিনা কে জানে”?
সীমন্তিনী এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “দ্যাখ কাকু, সতু নিজে যদি এ ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলে তাহলে এর ওর মুখে শোনা কথায় আমার মনে হয় কান না দেওয়াই ভাল। তবে দেখি, আমার সাথে কথা হলে, ওকে জিজ্ঞেস করব আমি। দেখি ও কি বলে। আচ্ছা কাকু, সত্যি আমিই ফোনটা করতে অনেক দেরী করে ফেলেছি আজ। রাত বারোটা পার হয়ে গেছে, এবার তুমি ঘুমোও। পরে কথা হবে আবার” বলে ফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখল।
******************
রাত প্রায় বারোটায় বিমল ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে নিজের রুমে এসে ঢুকল। সবিতার কথা মতই অফিসের সামন থেকে গাড়ি স্টার্ট নিতেই সে সবিতার ফোনে একটা মিসকল দিয়েছিল। কিন্তু নিজের চাবি দিয়ে বাড়ির মূল দড়জা খুলে ভেতরে এসেও সে কাউকে দেখতে পেল না। নিজের ঘরে এসে ল্যাপটপের ব্যাগটা যথাস্থানে রেখে দিয়ে সে তার পাশের ড্রেসিং রুমে গিয়ে টাওয়েল, আর পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে এটাচড বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুমে নিজের পড়নের পোশাক খুলে ফেলে দেখল তার সারা শরীর ঘামে চ্যাপচেপে হয়ে আছে। গিজারটা চালিয়ে দিয়ে সে কমোডে বসে পড়ল।
ঠাণ্ডা গরম জল মিশিয়ে ভাল করে স্নান করে বিমল যখন বেরলো তখনও সবিতার দেখা পেল না। মনে মনে ভাবল, সবিতা বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছে। রোজকার মতই তার খাবার ঢাকা দেওয়া আছে ঘরের এক কোনার ছোট টেবিলটার ওপরে। সময় নষ্ট না করে সে চুপচাপ খেতে বসল। পেটে ক্ষিদে তো থাকবারই কথা। সেই দুপুর দুটো নাগাদ সাইটে লাঞ্চ করেছিল। তারপর থেকে চা কফি আর হুইস্কি ছাড়া পেটে কোন সলিড খাবার ঢোকেনি। তা সত্ত্বেও তার খেতে ইচ্ছে করছিল না। আধপেটা খেয়েই সে উঠে পড়ল। এঁটো থালাটাকে আরেকটা থালা দিয়ে ঢেকে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসেও সবিতার দেখা না পেয়ে সে দড়জা বন্ধ করবার উদ্দেশ্যে দড়জার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল, সবিতা তার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। বিমল ফিরে গিয়ে নিজের বিছানায় বসতেই সবিতাও তার ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “এরই মধ্যে তোমার খাওয়া শেষ হয়ে গেল? না কি খাওনি”?
বিমল বলল, “বড্ড টেনশনে ভুগছি তো। তাই বোধহয় ক্ষিদে পাচ্ছে না। তবু যতটুকু পেরেছি খেয়েছি। তা তুমি ফ্রি আছ তো? আমার সাথে এখানে একটু সময় বসতে পারবে? অনেক কিছু আলোচনা করবার আছে আমার”।
সবিতা বিমলের ক্লান্ত স্বর শুনে বেশ অবাক হলেও বুঝতে পারল, খুব বেশী টেনশনের ফলেই হয়ত এত টায়ার্ড মনে হচ্ছে বিমলকে। বিমলের প্রশ্ন শুনে সে বলল, “হু, বল। আজ সারাদিনেও বুঝি কোনও হদিশ করে উঠতে পারোনি তুমি”?
বিমল হতাশ ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বলল, “নাহ, কেউ কোনও খবর দেয়নি এখন পর্যন্ত। আজ গোটা দিনই তো সাইটে সাইটে ঘুরতে হয়েছে আমাকে। তাই আমার লোকগুলোর সাথেও খুব বেশী যোগাযোগ করতে পারিনি। কিন্তু এরই মধ্যে আজও তিনটে ভিডিও সিডি পাঠিয়েছে লোকটা। একটা সকালে বাড়ি থেকে বেরোবার সময়, একটা দুপুরে সাইটে লাঞ্চ করবার ঠিক আগে। আরেকটা পেয়েছি রাত নটা নাগাদ। আর সাথে পেয়েছি লোকটার হুমকি ভরা ফোন। আচ্ছা তুমি বরং দড়জাটা বন্ধ করে দাও। আমি চাইনা এসব ব্যাপার বিকি জেনে ফেলুক”।
বিমল মোবাইলটা হাতে নিয়েই ধপ করে তার চেয়ারে বসে পড়ল। তার মুখটা একেবারে রক্তশূণ্য মনে হচ্ছিল।
নিশিতা বিমলের পিঠে একহাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করতেই বিমল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তোমার টেবিল থেকে ডাকে আসা জিনিসগুলো ........”।
বিমল তার কথা শেষ না করলেও নিশিতার বুঝতে কোন কষ্ট হল না। তাই সে ছুটে গিয়ে নিজের চেম্বার থেকে চৌকিদারের দেওয়া জিনিসগুলো এনে বিমলের মুখের সামনে টেবিলের ওপর রাখতেই বিমল প্রায় পাগলের মত জিনিসগুলোকে নাড়াচাড়া করে সাইজ আর ওজনের ওপর ভরসা করে আসল প্যাকেটটাই নিজের হাতে তুলে নিল। প্যাকেটটাকে উল্টে পাল্টে দেখল এক কোনায় সেন্ডার্স অ্যাড্রেসে লেখা আছে ‘ইস্তিয়াক আহমেদ”। বিমলের হাতটা থরথর করে কাঁপছিল। কাঁপা কাঁপা হাতেই সিডির প্যাকেটটা নিশিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে তার ল্যাপটপের দিকে ঈশারা করল। তার যেন কথা বলার শক্তিটুকুও নেই।
নিশিতা প্রথমে ল্যাপটপটা ব্যাগ থেকে বের করে অন করল। তারপর সিডির প্যাকেটটা খুলে বিমলকে জিজ্ঞেস করল, “স্যার, প্লে করব”?
বিমল মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাতে নিশিতা সিডিটাকে চালিয়ে দিল। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই ল্যাপটপের স্ক্রীনে চলমান ছবি ফুটে উঠল। এ জায়গাটা নিশিতার পরিচিত নয়। একটা অপরিচিত ঘর। দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনও একটা ফ্ল্যাটের বেডরুম হবে হয়ত। একটা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বিমল অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের পড়নের পোশাক খুলে তাকে নগ্ন করে তার বুকের অসম্ভব লোভনীয় স্তনদুটোকে নিজের হাতে দিয়ে টিপতে শুরু করল। আর মেয়েটাও সাথে সাথে বিমলের শরীর থেকে একটা একটা করে তার সমস্ত পোশাক খুলতে আরম্ভ করল। বিমল ক্লান্তি, ভয়ে আর টেনশনে এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিল। নিশিতা বিমলের কাঁধে হাত রেখে মৃদু স্বরে “স্যার’ বলে ডাকতেই বিমল চোখ মেলে তাকাল। আর ল্যাপটপের স্ক্রীনে চোখ পড়তেই বিমলের বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা রইল না যেন। বিমল দেখল এ ভিডিওতে রবির স্ত্রী অনুপমা আর তার চলমান ছবি। কিন্তু অনুপমা আর তার স্বামী রবি তো এখন জেলে আছে। আর অনুপমাকে বিমল শেষ ভোগ করেছে প্রায় দু’ আড়াই মাস আগে। অনুপমারা বড়বাজারে নতুন ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেবার পর। তার মানে দু’আড়াইমাস আগে থেকেই এই লোকটা তার পেছনে এভাবে লেগেছে? ওঃ ভগবান, আর ভাবতে পারছে না বিমল। হাত বাড়িয়ে ল্যাপটপটাকে বন্ধ করে দিয়ে বিমল টেবিলের ওপর মাথা পেতে দিয়ে হাঁপাতে লাগল।
নিশিতা ল্যাপটপ থেকে সিডিটা বের করে ল্যাপটপটাকে শাট ডাউন করে দিয়ে বিমলের ব্যাগের ভেতর সিডি আর ল্যাপটপটাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বিমলের কাঁধে হাত দিয়ে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে ডাকতেই বিমল অনেক কষ্টে নিজের চোখটা আধা খোলা করে বলল, “তুমি সব কিছু গুটিয়ে তুলে রেখে দাও নিশি। আজ আর কোন কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে দশটা মিনিট রেস্ট নিতে দাও প্লীজ”।
নিশিতা আর কিছু না বলে টেবিলের ওপরের জিনিসগুলো তুলে নিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে একটা স্টীল আলমাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে রাখল। তারপর নিজের টেবিলের জিনিসগুলোও তুলে রাখল। তারপর বিমলের পোশাক আশাক গুলো উঠিয়ে সে’গুলোকে বিমলের টেবিলের এক কোনার রেখে দিয়ে রেস্টরুমের বিছানাটা পরিপাটি করল। কাঁচের গ্লাসগুলো ক্লোজেটে রাখল। তারপর নিজের চোখমুখ ভাল করে ধুয়ে নিজের কেবিনে এসে আবার কিছুটা মেকআপ করে নিজেকে টিপটপ করে তোলার পর আবার বিমলের কাছে এসে তাকে জাগিয়ে তুলল। বিমল কোনও কথা না বলে ফ্যালফেলে চোখে নিশিতার দিকে চাইতেই নিশিতা বলল, “আমি সব গুছিয়ে রেখেছি স্যার। সিডিটা আর আপনার মোবাইল তিনটে ল্যাপটপের ব্যাগেই ভরে দিয়েছি। আপনি একটু কষ্ট করে ড্রেস আপ করে নিন। তাহলেই আমরা বেরোতে পারব”।
বিমল খুব ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ পড়ে নিল। নিশিতা চেম্বারের দড়জা খুলে বিমলকে নিয়ে বাইরে বেরলো। চৌকিদারকে অফিস বন্ধ করতে বলে বিমলকে নিয়ে লিফটে ঢুকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে নামবার পর বিমলের হাত ধরেই নিশিতা তাকে বিমলের গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিল। ড্রাইভারকে বলল, “স্যারের শরীরটা একটু খারাপ। একটু সাবধানে ড্রাইভ কোর” বলে বিমলকে গুড নাইট জানিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
******************
ডিনার শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। অর্চু বিয়েতে নিজের সম্মতি জানাবার পর থেকে নবনীতাকে যেন আর কিছুতেই আয়ত্বে রাখা যাচ্ছিল না। প্রায় গত দু’ঘন্টা ধরে একবার সীমন্তিনী, একবার লক্ষ্মী আবার কখনও কখনও অর্চুকে ধরেই আনন্দে লাফালাফি করে কাটিয়েছে সে। অর্চু লজ্জায় নিজেকে লুকিয়ে রাখতেও পারেনি। তাই রাতের খাবার খেতে একটু দেরীই হল।
সীমন্তিনী আজ তার কাকুর সাথে ফোনে কথা বলবে ভেবে রেখেছিল। জেঠু, বাবা, বড়মা এরা সকলে পরি আর অর্চুর বিয়েটার আয়োজন তাদের বাড়িতে করতে রাজি হবে কি না এটা জানা তার খুবই দরকার এখন। অর্চু বিয়েতে রাজী হওয়াতে সীমন্তিনীও সত্যি খুব খুশী হয়েছে। সে জানে, পরিও রাজি হবেই। তাই বিয়েটা যে হচ্ছেই, এ ব্যাপারে তার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। খুব ইচ্ছে করছিল রচনাকে খবরটা জানাতে। কিন্তু পরে ভাবল, নাহ, সবকিছুর আয়োজনের প্ল্যান করে ফেলার পরই রচনাকে সব কথা খুলে জানাবে। তাই এখন সবচেয়ে আগে দরকার হল বিয়ের ভেনিউটা ঠিক করা। রাজগঞ্জের বাড়িতে করতে পারলেই সব থেকে ভাল হয়। কালচিনির বাড়ির কেউও তাতে আপত্তি করবে না। রতীশ আর রচনাও এ বিয়েকে উপলক্ষ্য করেই আরেকবার অন্ততঃ রাজগঞ্জের বাড়িতে আসবার সুযোগ পাবে। বিয়েটা পূজোর প্রায় একমাস বাদে হচ্ছে। পূজোর সময় তো তার দাদাভাই আর রচুসোনা একবার বাড়ি আসবেই। বাড়ির সকলেও অল্পদিনের ব্যবধানে দু’ দু’বার রচনাকে তাদের সাথে পেয়ে খুবই খুশী হবে।
কিন্তু ডিনার সেরে নবনীতা আর অর্চুকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে সীমন্তিনী যখন নিজের ঘরের বিছানায় শুতে এল, রাত তখন এগারোটা পঁয়তাল্লিশ। এত রাতে কাকুকে ফোনে পাওয়া যাবে কি যাবে না, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তবু ল্যান্ডলাইন ফোনটা বিছানায় টেনে এনে সেটা থেকে চন্দ্রকান্তবাবুর নাম্বার ডায়াল করল। কয়েকবার রিং হতেই চন্দ্রকান্তবাবু সাড়া দিয়ে বললেন, “হ্যাঁরে মন্তি মা, বল। তুই ভাল আছিস তো? রাতের খাবার খেয়েছিস মা”?
কাকুর মুখে এমন করে ‘মা’ ডাক শুনলেই সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে। তবু নিজেকে সামলে রেখে বলল, “হ্যাঁ কাকু, খেয়েছি। তোমাদেরও খাওয়া হয়ে গেছে নিশ্চয়ই? ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি? ডিস্টার্ব করে ফেললাম বুঝি”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “দুর পাগলী, কিসের ডিসটার্ব রে? তুই আমাকে রাত দুটোর সময় ফোন করলেও আমি কখনও তোর ওপর বিরক্ত হব বলে ভাবিস তুই? আমার মনটা কেন জানি বলছিল যে তুই আজ আমাকে ঠিক ফোন করবি। তাই ঘুমোতে যাব যাব করেও অপেক্ষা করছিলাম। আর সত্যি সত্যি তোর ফোন পেলাম। তা কী বলবি বল তো”?
সীমন্তিনী নিজের মনে মনে কথাগুলোকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলল, “কাকু, তোমরা সবাই তো রচুর দিদি অর্চনার কথা শুনেছ”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যাঁরে মা সে তো শুনেছিই। মেয়েটার জন্যে সত্যিই খুব কষ্ট হয় রে। কী দোষ ছিল ওর যে ওর কপালে ভগবান এত দুঃখ লিখেছেন! তা আবার কি হয়েছে? ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার কোন ঝামেলা পাকিয়েছে নাকি রে”?
সীমন্তিনী বলল, “না কাকু, তা ঠিক নয়। আসলে মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি ভেবেছি ওর আবার বিয়ে দেব। তোমরা তো কেউ ওকে দ্যাখনি। কী ভাল যে কাকু মেয়েটা! অর্চুকে কিছুদিন হল আমার কাছেই এনে রেখেছি। আর আমাদের সাথে থাকতে থাকতে ও এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ওর মুখে হাসি ফিরে এসেছে। রচুকে তো তোমরা দেখেছ। রচুর আচার ব্যবহার স্বভাব চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা তো সবকিছুই জানো। এই অর্চুও স্বভাব চরিত্রের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ আমাদের রচুর মত। আর দেখতে তো ওকে রচুর চেয়েও ভাল। আমার খুব ইচ্ছে ছিল রচুর মত এ মেয়েটাকেও আমাদের বাড়ির আরেকটা বৌ করে তোমাদের হাতে তুলে দেব। তবে একটা বিধবা মেয়েকে তোমরা তোমাদের ঘরের বৌ করে নিতে চাইবে কিনা সেটা নিয়ে মনে একটু সংশয় ছিলই আমার। কিন্তু তার চেয়ে বেশী গোল বাঁধল তখন, যখন আমি জানতে পারলুম যে যার সাথে অর্চুর বিয়ে দেব বলে ভাবছি, আমার সেই ভাইটাই অন্য আরেকটা মেয়েকে ভালবাসে”।
এ’কথা শুনেই চন্দ্রকান্তবাবু চমকে গিয়ে বললেন, “কি বলছিস তুই মন্তি? তুই কি আমাদের সতুর কথা বলছিস”?
সীমন্তিনী শান্ত স্বরেই বলল, “হ্যাঁগো কাকু। আমি ভেবেছিলুম সতুর সাথেই অর্চুর বিয়ে দেব। শুধু অপেক্ষা করছিলুম সতুর চাকরি পাবার। রচু কলকাতা যাবার পর বাড়ির সকলে যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, অর্চুকে আমাদের বাড়ির বৌ করে নিলে অর্চুর ছোঁয়ায় আবার আমাদের বাড়িটা আগের মতই হাসিখুশীতে ভরে উঠত। তোমরা হয়ত প্রথমেই একটা বিধবা মেয়েকে বৌ বলে মেনে নিতে চাইতে না। কিন্তু সতু যদি রাজী হত তাহলে আমি শেষ অব্দি চেষ্টা করতুম তোমাদের রাজি করাতে। কিন্তু কিছুদিন আগে সতুর সাথে কথায় কথায় আমি হঠাতই জানতে পারলুম যে সতু কোন একটা মেয়েকে নাকি ভালবাসে। তাই আমি আমার মন থেকে সে ভাবনাটা সরিয়ে ফেলেছি। ওদিকে কালচিনির মাসি মেসোরাও প্রথমে আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু আমি অর্চুর ভবিষ্যতের সবরকম সম্ভাবনার কথা বলে তাদেরকে বোঝাতে, তারা রাজি হয়েছেন। আর আমারই চেনা পরিচিতির মধ্যে একটা ভাল ছেলের সাথে ওর বিয়েটা প্রায় পাকা করে ফেলেছি। কিন্তু এমন একটা মুস্কিলে পড়েছি যে বাধ্য হয়ে তোমার আর ও বাড়ির সকলের কাছে আমাকে সাহায্য চাইতে হচ্ছে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “বুঝেছি রে মা। বিধুবাবুর আর্থিক পরিস্থিতি তো সত্যিই খুব একটা ভাল নয়। আর তাছাড়া ......”
তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই সীমন্তিনী বলল, “না কাকু, আমি ওই ব্যাপারে তোমাদের কিছু বলছি না। আর মেসোর আর্থিক অবস্থার আগের চেয়ে কিছু উন্নতিই হয়েছে। আসলে কাকু, বিয়ের দিনটা স্থির হচ্ছে তেরোই অঘ্রান, ইংরেজীর ঊনত্রিশে নভেম্বর। কিন্তু মাসি মেসোরা তাদের থাকবার বাড়িটা ভেঙে নতুন করে বাড়িঘর বানাচ্ছেন। গৃহারম্ভের দিন ঠিক হয়েছে আঠারোই অক্টোবর। আর বাড়িটা পুরোপুরি তৈরী হতে হতে তো কম করেও চার পাঁচ মাস লাগবে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, বাড়িতে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলতে থাকা অবস্থায় সে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই ভাবলুম, তোমাদের সাথে এ ব্যাপারে একটু আলোচনা করে দেখি। দ্যাখো কাকু, অর্চু তো আমাদের আত্মীয়ই। আমাদের ঘরের বৌয়ের নিজের দিদি। এক আত্মীয়ের বিপদে আপদে অন্য আত্মীয়দের তো পাশে দাঁড়াতেই হয়। আর তাছাড়া যে ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছেলেটাও আমার বিশেষ বন্ধু। ওর বাড়ি কলকাতায়। দাদাভাই আর রচুর সাথেও ওর পরিচয় আর হৃদ্যতা আছে। মনে হয় রচুর মুখে তোমরা ছেলেটার নামও শুনে থাকবে। ওর নাম পরিতোষ। মানে পরিতোষ সান্যাল”।
সীমন্তিনীর কথা শুনেই চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ পরিতোষ সান্যাল নামের এক আইপিএস অফিসারের কথা বড়বৌমার মুখে শুনেছি। হ্যাঁ এটাও জানি যে তোর সাথে ওর খুব ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। এই তো দিন দুয়েক আগেই শুনলুম যে রতু আর রচুকে নিয়ে পরিতোষ কোন এক ডাক্তারের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। ওই ডাক্তারের স্ত্রী আর মেয়েও নাকি খুব ভাল। তোর কাকিকেই তো এ’সব কথা বলেছে বড়বৌমা”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ কাকু, ওই পরিতোষের সাথেই অর্চুর বিয়ে ঠিক করেছি। কিন্তু বিয়ের আয়োজন করতেই সমস্যায় পড়েছি। কালচিনির বাড়িতে সম্ভব নয়। আমার এখানেও সম্ভব নয়। কলকাতা নিয়ে গিয়ে যে বিয়েটা দেব তাতেও অনেক ঝামেলা পোয়াতে হবে। তাই আমার হাতে এখন শুধু দুটো রাস্তাই খোলা থাকছে। এক, রাজগঞ্জের বাড়ি, আর দুই কোনও বিবাহ ভবন বা ব্যাঙ্কুয়েট হল ভাড়া করা। আর বিবাহ ভবনের বিয়েগুলো কেমন যেন হয়। এটা নেই, ওটা নেই। বিয়ে বাড়ির আসল আমেজটাই সেখানে থাকে না। তবু অন্য কোন উপায় না পেলে সে রাস্তাতেই যেতে হবে আমায়। কিন্তু যদি তোমরা একটু কষ্ট করে রাজগঞ্জের বাড়িতে বিয়েটার আয়োজন করতে পার, তাহলে কালচিনির বাড়ির সকলের সাথে সাথে রচু, দাদাভাইও খুব খুশী হত। বিয়েতে ওরা সবাই মিলে খুব খুব মজা করতে পারত। আর এটা তো জানোই রচু থাকলেই আমাদের বাড়ির সকলেই হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠবে। তাই তারাও বিয়েটা মন থেকে উপভোগ করতে পারবে। এ উদ্দেশ্য নিয়েই আজ তোমাকে ফোন করছি। তোমাকে সব কথা খুলে বললুম। এবার তুমি আমার তরফ থেকে তোমার মেজদা আর জেঠু বড়মার সাথে এ ব্যাপারে একটু আলাপ করবে? প্লীজ কাকু”।
চন্দ্রকান্তবাবু সীমন্তিনীর সব কথা শুনে বললেন, “দ্যাখরে মন্তি মা। বড়বৌমার বাপের বাড়িতে অসুবিধে থাকায় তার বড়বোনের বিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে দেওয়াই যায়। নইলে আর আত্মীয় হলাম কিসের আমরা। আমি তো আমার মত তোকে এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। আমি পুরোপুরি রাজি। বিয়ের সমস্ত দায়িত্বও কাঁধে নিতে রাজি আছি। আর্থিক সাহায্য কিছু করতে হলে, সেটাও আমার সাধ্যমত করব। আমাদের বড়বৌমার বোন বলে কথা। তবে তুই তো জানিসই, আমাদের এ বাড়িতে যা কিছু আয়োজন করা হয় সে’সব ব্যাপারে আমরা তিন ভাই আর আমাদের বাড়ির তিন কর্ত্রী সমবেত ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। তাই আমার মতটা তোকে আগেই জানিয়ে দিয়ে বলছি, আমি কালই দাদা বৌদিদের সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনায় বসব। তখন আমাদের সমবেত সিদ্ধান্ত যা হয় সেটা জানতে পারবি”।
সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হয়ে বলল, “আমি জানি কাকু। আমি তোমাদের বাড়ির তোমাদের বংশের কলঙ্ক। তা সত্বেও আমি জানি তুমি আমাকে যতটা ভালবাস, তেমন ভাল আমাকে বাবা বা জেঠুও বাসেন না। তাই তো আমার সমস্ত ন্যায় অন্যায় আবদার আমি তোমাকেই জানাই শুধু। আচ্ছা কাকু, অনেক রাত হয়ে গেছে গো। এবার ঘুমোও। ছোটমাকে আমার প্রণাম জানিও আর চন্দু চঞ্চুকে আমার আদর দিও। রাখছি”।
চন্দ্রকান্তবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “আরে শোন শোন মা। তোর কথা তো শেষ হল। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন যে আছে। সেটার উত্তর দে”।
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি প্রশ্ন কাকু”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “সতু কাকে ভালবাসে, এ ব্যাপারে তোকে কিছু বলেছে? মেয়েটা কে বা কোথাকার”?
সীমন্তিনী বলল, “নাগো কাকু, সতু এ ব্যাপারে আমাকে আর কিচ্ছু জানায় নি। মেয়েটা কে? কার মেয়ে? কোথায় থাকে? কী করে, এ’সব ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না। ওই একদিনই শুধু বলেছিল যে ও একটা মেয়েকে ভালবাসে। কিন্তু পরেও আর কখনও আমাকে ও ব্যাপারে কিছু বলে নি”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তোর ছোটমার মুখে শুনেছি যে বাড়িতেও মহিলা মহলে এমন একটা কানাঘুষো চলছে। কিন্তু এরাও কেউ ওই মেয়েটা সম্বন্ধে কিছু জানে না। কিন্তু ব্যাপারটা শোনবার পর থেকেই মনে মনে একটু শঙ্কা হচ্ছে রে। মেয়েটা কেমন স্বভাবের হবে কে জানে? আমাদের বাড়ির সাথে মানিয়ে চলতে পারবে কিনা কে জানে”?
সীমন্তিনী এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “দ্যাখ কাকু, সতু নিজে যদি এ ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলে তাহলে এর ওর মুখে শোনা কথায় আমার মনে হয় কান না দেওয়াই ভাল। তবে দেখি, আমার সাথে কথা হলে, ওকে জিজ্ঞেস করব আমি। দেখি ও কি বলে। আচ্ছা কাকু, সত্যি আমিই ফোনটা করতে অনেক দেরী করে ফেলেছি আজ। রাত বারোটা পার হয়ে গেছে, এবার তুমি ঘুমোও। পরে কথা হবে আবার” বলে ফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখল।
******************
রাত প্রায় বারোটায় বিমল ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে নিজের রুমে এসে ঢুকল। সবিতার কথা মতই অফিসের সামন থেকে গাড়ি স্টার্ট নিতেই সে সবিতার ফোনে একটা মিসকল দিয়েছিল। কিন্তু নিজের চাবি দিয়ে বাড়ির মূল দড়জা খুলে ভেতরে এসেও সে কাউকে দেখতে পেল না। নিজের ঘরে এসে ল্যাপটপের ব্যাগটা যথাস্থানে রেখে দিয়ে সে তার পাশের ড্রেসিং রুমে গিয়ে টাওয়েল, আর পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে এটাচড বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুমে নিজের পড়নের পোশাক খুলে ফেলে দেখল তার সারা শরীর ঘামে চ্যাপচেপে হয়ে আছে। গিজারটা চালিয়ে দিয়ে সে কমোডে বসে পড়ল।
ঠাণ্ডা গরম জল মিশিয়ে ভাল করে স্নান করে বিমল যখন বেরলো তখনও সবিতার দেখা পেল না। মনে মনে ভাবল, সবিতা বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছে। রোজকার মতই তার খাবার ঢাকা দেওয়া আছে ঘরের এক কোনার ছোট টেবিলটার ওপরে। সময় নষ্ট না করে সে চুপচাপ খেতে বসল। পেটে ক্ষিদে তো থাকবারই কথা। সেই দুপুর দুটো নাগাদ সাইটে লাঞ্চ করেছিল। তারপর থেকে চা কফি আর হুইস্কি ছাড়া পেটে কোন সলিড খাবার ঢোকেনি। তা সত্ত্বেও তার খেতে ইচ্ছে করছিল না। আধপেটা খেয়েই সে উঠে পড়ল। এঁটো থালাটাকে আরেকটা থালা দিয়ে ঢেকে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসেও সবিতার দেখা না পেয়ে সে দড়জা বন্ধ করবার উদ্দেশ্যে দড়জার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল, সবিতা তার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। বিমল ফিরে গিয়ে নিজের বিছানায় বসতেই সবিতাও তার ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “এরই মধ্যে তোমার খাওয়া শেষ হয়ে গেল? না কি খাওনি”?
বিমল বলল, “বড্ড টেনশনে ভুগছি তো। তাই বোধহয় ক্ষিদে পাচ্ছে না। তবু যতটুকু পেরেছি খেয়েছি। তা তুমি ফ্রি আছ তো? আমার সাথে এখানে একটু সময় বসতে পারবে? অনেক কিছু আলোচনা করবার আছে আমার”।
সবিতা বিমলের ক্লান্ত স্বর শুনে বেশ অবাক হলেও বুঝতে পারল, খুব বেশী টেনশনের ফলেই হয়ত এত টায়ার্ড মনে হচ্ছে বিমলকে। বিমলের প্রশ্ন শুনে সে বলল, “হু, বল। আজ সারাদিনেও বুঝি কোনও হদিশ করে উঠতে পারোনি তুমি”?
বিমল হতাশ ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বলল, “নাহ, কেউ কোনও খবর দেয়নি এখন পর্যন্ত। আজ গোটা দিনই তো সাইটে সাইটে ঘুরতে হয়েছে আমাকে। তাই আমার লোকগুলোর সাথেও খুব বেশী যোগাযোগ করতে পারিনি। কিন্তু এরই মধ্যে আজও তিনটে ভিডিও সিডি পাঠিয়েছে লোকটা। একটা সকালে বাড়ি থেকে বেরোবার সময়, একটা দুপুরে সাইটে লাঞ্চ করবার ঠিক আগে। আরেকটা পেয়েছি রাত নটা নাগাদ। আর সাথে পেয়েছি লোকটার হুমকি ভরা ফোন। আচ্ছা তুমি বরং দড়জাটা বন্ধ করে দাও। আমি চাইনা এসব ব্যাপার বিকি জেনে ফেলুক”।
(To be cont'd ......)
______________________________