21-03-2020, 07:24 PM
(Update No. 195)
বিমল অসহায় ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “চেষ্টা তো আমরা কাল থেকেই শুরু করে দিয়েছি নিশি। রাতেও টেলিকমিউনিকেশন সেক্রেটারীর সাথে আর এখানকার বেশ কয়েকজন হায়ার অফিসারদের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবাই প্রয়োজনীয় সবরকম সাহায্য করবে বলে কথা দিয়েছেন। পুলিশও কাজে নেমে যাবে আজ সকাল থেকে। কিন্তু এখন অব্দি তো কোনও পজিটিভ খবর পাচ্ছি না। উল্টে বাড়ি থেকে বেরোবার সময় আরেকটা সিডি পেলাম। পেছনে নাম লেখা ছিল গাবলু হাজরা। আমি ভেবেছিলাম আমাদের গাবলুই বোধহয় কোন খবর পাঠিয়েছে। একটু হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই জানতে পারলাম যে আশ্বস্ত হবার মত কিছুই ঘটেনি। বরং অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল। লোকটা আমাদের বাড়ির ভেতরে আমার স্ত্রীর বেডরুমেও ক্যামেরা লাগিয়ে ভিডিও রেকর্ডিং করেছে। তারই একটা সিডি সে আজ পাঠিয়েছে। আর সাথে সাথে ফোন করেও বলল যে এই নতুন ভিডিওটা সে আঠার তারিখ সকাল ন’টায় নেটে আপলোড করবে। উঃ, কি যে করি আমি এখন তার কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। একটু আগে শিবেন্দুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম আজ আমার মোবাইলে আসা কলটা ও ট্যাপ করতে পেরেছে কি না। জবাবে কি বলল জানো? বলল যে তুমি সকালে ওকে ফোন করবার পরে পরেই সে ট্যাপিং আর ট্র্যাকিং দুটো কাজই প্রসেস করতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও কাজটা শেষ করে উঠতে পারেনি। বলল, আরও ঘন্টাখানেক সময়ের নাকি প্রয়োজন। তারপর থেকে নাকি সেটা করা সম্ভব হবে। এরপর গাবলুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম যে ও আমার বাড়িতে কোন সিডি পাঠিয়েছে কিনা। ও তো বলল যে ও কিছু পাঠায়নি। আর এখনও এস এম খানকে খুঁজে পায়নি। আর সকালে তোমার ফোন পেয়ে ও তাকে খোঁজা বাদ দিয়ে এখন অন্য ভাবে নিজের কাজ শুরু করেছে। আর ওর পুরো নাম নাকি গাবলু সরকার। কিন্তু আজ সকালের ভিডিওতে নাম লেখা আছে গাবলু হাজরা। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে আমি যেমনটা প্রথমে ভেবেছিলাম তেমনটা নয়। আমাদের গাবলু কিছু পাঠায়নি আমাকে। আর ওই আগের নামগুলোর মত এই গাবলু হাজরা নামটাও ভূয়ো। আসলে ও’সব নামে হয়ত কেউই কোথাও নেই। শুধু আমাদের ধোকা দেবার জন্যেই বানিয়ে বানিয়ে নামগুলো লেখা হয়েছে। শুধু আমাদের কনফিইউজড করবার উদ্দেশ্যে। আচ্ছা ও’ কথা বরং এখন থাক। আজকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কি কি আছে বল তো শুনি”।
****************
বিকেল পাঁচটায় অফিসেই আজিম কুরেশির সাথে বিমলের মিটিং আছে। কিন্তু সারা দিনে নর্থ আর সাউথ কলকাতার তিনটে আন্ডার কনস্ট্রাকশন সাইটে তাকে পরিদর্শন করতে যেতে হবে। আর বিমল সাইট ইনস্পেকশনে যাবার সময় প্রায় সব সময়ই নিশিতাকে সঙ্গে নেয়। বিমলের পরামর্শমত নিশিতা একটা লিস্ট বানিয়ে নিল। সে লিস্ট অনুযায়ীই তাদের একের পর এক তিনটে সাইটে যেতে হবে। সকাল প্রায় এগারোটায় বিমল তার পিএ নিশিতাকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়ল। অফিস থেকে বেরোবার পর থেকেই চোখে কালো গগলস পড়ে বিমল চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে শুরু করল। নিশিতাকেও একই নির্দেশ দিয়ে রেখেছে। নিশিতাও চোখে ডার্ক কালারের সানগ্লাস পড়ে সারাক্ষণ আশেপাশে নজর রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাইট ইনস্পেকশনে গেলে বিমলের হাতে সবসময় তার ল্যাপটপের ব্যাগ থাকে। আর নিশিতাও কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের ভ্যানিটি নিয়ে বেরোয়। আজও তাই করেছে। প্রথম সাইটে গিয়ে পৌঁছল প্রায় বারোটায়। ঘুরে ঘুরে প্রজেক্টের সব কিছু দেখতে দেখতে ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলতে বলতেই বেলা প্রায় দেড়টা বেজে গেল। ওই সাইটেই তাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করে হয়েছিল।
প্রায় পৌনে দুটোর সময় লাঞ্চে বসবার ঠিক আগেই বিমলের ফোনটা বিপ বিপ করে উঠল। সাথে সাথে বিমলের বুকের ভেতরটাও যেন ঢিপ ঢিপ করে উঠল। বিমল বুঝতে পারল, লোকটা সকালে যেমনটা বলেছিল ঠিক সেটাই করেছে এখন। এখনও বেলা দুটো বাজে নি। নিশিতা তখন টয়লেটে হাত মুখ ধুতে গেছে। নিশিতা হাত মুখ ধুয়ে বেরোতেই বিমল টয়লেটে গিয়ে ঢুকল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে এমএমএস এসেছে। সেটাকে ডাউনলোড করে দেখল এটাও ফার্ম হাউসের আরেক রাতের ঘটণা। ওই মিলু নামের কম বয়সী মেয়েটাকে যেদিন সে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল। এমন একটা সম্ভাবনা তার মনে আগে থেকেই দেখা দিয়েছিল। তাই সে এবার খুব বেশী অবাক হল না। এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তার। কিন্তু আশা প্রত্যাশা যাই থাকুক না কেন, তার বিপদের মাত্রা তো ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। টয়লেট থেকে বেরোবার সময়েই তার মোবাইলে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এল। ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও সে কাটল না। কলটা রিসিভ করে কানে ফোন লাগাতেই শুনতে পেল, “দেখেছিস শুয়োরের বাচ্চা। আমি কত পাঙ্কচুয়াল। তোকে সকালে বলেছিলাম বেলা একটা থেকে দুটোর মধ্যে পরের এমএমএসটা পাঠাব। ঘড়ি মিলিয়ে টাইমিংটা দেখে নে। এখনও দুটো বাজে নি। জানি তুই আমাকে খুঁজে বের করবার জন্য তোর কুকুরগুলোকে লেলিয়ে দিয়েছিস। আর কুকুরগুলোও সারা শহর জুড়ে ঘেউ ঘেউ করে ছুটছে। তা ঘুরুক। আমার তাতে কোন সমস্যা নেই। তুই আর তোর পিএ মাগিটাও যে চোখে কালো চশমা পড়ে তোদের আশেপাশে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিস সে’ কথাও জানি। তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই। তোর পোষা কুকুরগুলো তোর আশেপাশে এমনভাবে পাহারা দিচ্ছে যাতে আমি তোর ধারে কাছে পৌঁছতে না পারি। দিক, তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার সমস্যা আপাততঃ শুধু একটাই। তোর ডবকা বেশ্যা মাগী বৌটাকে চুদতে পেলাম না এখনও। তবে আমি ধৈর্য ধরতে রাজি আছি। ওই যে কথায় বলে না, সবুরে মেওয়া ফলে। তাই সবুর করছি। দেখি মেওয়া কবে ফলে। আচ্ছা সে’কথা থাক। আশা করি এবারের এমএমএসটা দেখেছিস। আর এটা কবে কোথায় রেকর্ডিং করা হয়েছে তাও হয়ত বুঝে গেছিস। কারন এ ছবির হিরো তো তুই নিজেই। তবে এটা এখনও জানিস না যে এই ভিডিওটার ফুল ভার্সনটা কখন তুই হাতে পাবি। তবে টেনশন নিস না। বুঝতেই তো পারছিস, আমি কথায় পাকা। আমার কথায় আর কাজে কোনটাতেই কোন ফারাক থাকে না। তোর ল্যাপটপের ব্যাগটা বন্ধ ছিল। তাই ঠিক দেড়টার সময় সিডিটা তোর পিএ মাগীর ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যেই ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। একটু কষ্ট করে তার কাছ থেকেই সেটা নিয়ে নিস কেমন? আর শোন, এখন আর তোর সময় নষ্ট করছি না। যা যা, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। লাঞ্চটা সেরে নে। আর সিডিটা চালিয়ে দেখবার জন্য অত উতলা না হলেও চলবে। ট্রেলার দেখেই তো বুঝে গেলি পুরো ফিল্মটা কেমন হবে। তাই ধীরে সুস্থে সময়মত দেখিস ওটা। তবে আসল কথাটা জানিয়ে দিই। এ ভিডিওটা নেটে আপলোড হবে আঠারো তারিখ দুপুর দেড়টায়। দিন তারিখগুলো ভুলে যাস না” বলেই ফোন কেটে দিল।
বিমল অবাক হয়ে ভাবতে লাগল এটা কিকরে সম্ভব হল? নিশিতা আর সে নিজেও সর্বক্ষণই সতর্ক ছিল। তেমন সন্দেহজনক কাউকেই তো তাদের ধারে কাছে দেখেনি তারা। তাহলে ঠিক দেড়টার সময় নিশিতার ব্যাগে কে কিভাবে সিডিটা ঢুকিয়ে দিল!
লাঞ্চের পর গাড়িতে ওঠবার আগেই বিমল শিবেন্দুকে ফোন করে বলল, “শোন, ঠিক একটা পঁয়তাল্লিশে আমার এই নাম্বারে কেউ একটা এমএমএস পাঠিয়েছে। আর তার মিনিট পাঁচেক পরেই সে এই নাম্বারেই একটা কল করেছিল। এ দুটো ট্র্যাক করতে পেরেছিস”?
ও’পাশ থেকে শিবেন্দু জিবাব দিল, “স্যার, এমএমএস আর কল দুটোই ধরা পড়েছে আমার সিস্টেমে। কিন্তু লোকেশান গুলো ধরা পড়েনি। তবে এটা বুঝতে পেরেছি যে এমএমএস আর কলটা একই ফোন থেকে এসেছে। আমরা আরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি স্যার। দেখি ট্র্যাক করতে পারি কি না। সরি স্যার”।
গাড়িতে চেপে ওই সাইট থেকে আরেক সাইটে যাবার পথে বিমল নিশিতাকে বলল, “তোমার ব্যাগের ভেতর একটা সিডি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটা বের করে আমায় দাও”।
নিশিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার ব্যাগে স্যার? কি বলছেন? আমার ব্যাগে সিডি কোত্থেকে আসবে! ব্যাগ তো সব সময় আমার কাঁধেই আছে! কোথাও তো ব্যাগটা নামিয়ে রাখিনি আমি”!
বিমল শান্তভাবে বলল, “জানি নিশি, তুমিও আমার মত সতর্কই ছিলে, সবদিকে নজর রাখছিলে। কিন্তু খেতে বসার ঠিক আগেই আমার মোবাইলে আরেকটা এমএমএস এসেছে। আগের মতই একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ। তারপর ওই প্রাইভেট নাম্বার থেকে একট কলও এসেছিল। কলটা রিসিভ করেই শুনতে পেলাম যে তোমার ব্যাগে সিডিটা রেখে গেছে”।
বিমলের কথা শুনতে শুনতেই নিশিতা ব্যাগের মুখ খুলে তার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিতেই সিডিটা পেয়ে গেল। তার মুখ শুকিয়ে গেল। সিডিটা টেনে বের করে পাংশু মুখে সেটা বিমলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “স্যার বিশ্বাস করুন, আমি কিচ্ছু জানিনা। অফিস থেকে বেরোবার সময় আমি ব্যাগের ভেতরে কি কি আছে না আছে সব চেক করে বেরিয়েছিলাম। তখন এ সিডিটা কিন্তু এখানে সত্যি ছিল না। এখন এটা কিকরে আমার ব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেল আমি তা সত্যিই বুঝতে পাচ্ছি না স্যার। কি করে এটা সম্ভব হল? লোকটা কি ম্যাজিক জানে নাকি? আশ্চর্য তো”!
বিমল শান্তভাবেই বলল, “তুমি ভেবো না নিশি। কাল প্রথমবার তোমার ওপর সন্দেহ হয়েছিল বলে তোমাকে বাজে ভাবে ওই কথাগুলো বলে ফেলেছিলাম। ভুল বুঝে তোমাকে দুটো থাপ্পরও মেরেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় সিডিটা পাবার পরেই তোমার ওপর থেকে আমার সন্দেহ পুরোপুরি ভাবে মিটে গেছে। আমি নিশ্চিত জানি, এ’সবের পেছনে তোমার কোন হাত নেই। যা করবার সব সেই লোকটাই করছে। লোকটা যে অসম্ভব চালাক সেটা বুঝতে পারছ? ভেবে দ্যাখো, এখন আমার নিজের লোকেরাও আশেপাশে থেকে আমাদের ওপর নজরদারি করছে। আমি আর তুমিও যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। তবু লোকটা তার কথামতই ঠিক কাজটা সেরে ফেলল। সে সকালেই আমাকে বলেছিল যে দুপুর একটা থেকে দুটোর ভেতর সে আরেকটা এমএমএস আর সিডি পাঠাবে। এমএমএসটা আমার ফোনে এসেছে একটা পয়তাল্লিশে। আর সিডিটা তোমার ব্যাগে এসে ঢুকেছে দেড়টায়। আরেকটা কথা শুনলে তুমি আরও চমকে যাবে নিশি। আমরা যে ওকে খুঁজে বার করবার জন্য সারা শহর জুড়ে খানা তল্লাশী শুরু করছি, আমাদের ওপরেও যে আমার লোকেরা সর্বক্ষণ নজর রাখছে, এ’সবের সব কিছুই লোকটা জানে। আমাকে ফোনে সে নিজেই কথা গুলো বলল। কিন্তু দ্যাখো, সবকিছু জেনেও লোকটা কত সহজে তার কথা মত কাজ সেরে ফেলল। এবার বুঝতে পাচ্ছ তো? তাকে আমরা যতটা হোসিয়ার বলে ভেবেছিলাম লোকটা তার থেকেও অনেক বেশী হোসিয়ার। আর তুমি নিজেকে দোষী বলে ভেবো না। আমি তো আগেই বললাম, তুমি যে এ’সবের ভেতর নেই তা নিয়ে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। আর তোমাকে বিপদে ফেলবার জন্যেও সেই লোকটা এ’সব করছে না। তাই তুমি ভয় পেও না। তোমার কোন ক্ষতি হবে না। লোকটা শুধু আমাকেই বিপদে ফেলতে চাইছে, তোমাকে নয়। আমার মাথা গরম হয়ে আছে বলে আমি হয়ত ঠিক অ্যাঙ্গেলে ভাবতে পারছি না। তুমি তোমার মাথাটা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবো। আর নতুন কোন রাস্তা খুঁজে পেলে আমাকে জানিও। আমাকে এ বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করো, প্লীজ নিশি”।
নিশিতা বিমলের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভাবে বলল, “এমন করে কেন বলছেন স্যার। আপনার ভাল মন্দ দেখবার দায়িত্ব তো আমাদেরই। তবে আমি বুঝতে পারছি, ব্যাপারটা এতটাই সেনসিটিভ যে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের কাছে খুলে বলা সম্ভব নয়। তাই তাদের কারো কাছ থেকে হেল্প আমরা আশাও করতে পারি না। আমি তো শুরু থেকেও না চাইতেই এ’সবের ভেতরে জড়িয়ে পড়েছি। তাই আপনাকে যতভাবে সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব আমি তাই করতে চাই। কিন্তু স্যার, আমার মনে কোনও প্রশ্ন উঠলে সেটা যদি আমি আপনার কাছে জানতে চাই, তাহলে আপনি রেগে যাবেন না তো”?
বিমল ম্লান হেসে বলল, “তোমার কথা শুনে আমি খুব খুশী হলাম নিশি। তোমার মনে যদি এ ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সময় আমাকে তুমি সে প্রশ্ন কোর। আমি তোমাকে সে অনুমতি দিলাম। কিন্তু এ বিষয়ের বাইরের কোন ব্যাপারে কিন্তু সে অনুমতি আমি তোমাকে এখন দিচ্ছি না। কথায় বলে এক সে ভলে দো। আমার একা মাথায় যেটার সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না, তোমার মাথা আমার সঙ্গে এলে হয়ত সত্যি কোন সমাধান খুঁজে বের করতে পারব”।
নিশিতা এবার একটু নড়েচড়ে বসে বলল, “তাহলে স্যার, এখনই একটা কথা জিজ্ঞেস করি”?
বিমল আগের মতই ম্লান হেসে বলল, “বেশ করো”।
নিশিতা মনের কথাগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে বলল, “স্যার, সাধারণতঃ ক্রিমিন্যালরা এ ধরণের কাজ করে কাউকে ব্ল্যাকমেল করে র*্যানসম চেয়ে কিছু টাকা হাতিয়ে নেবার জন্যে। কিংবা তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য সফল করতে। এই লোকটা কাল সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচ খানা সিডি পাঠিয়েছে। আর পাঁচ বারই সে ফোনে আপনার সাথে কথা বলেছে। সে কি কখনও কোন ধরণের র*্যানসম বা অন্য কোন কিছু ডিমান্ড করেছে আপনার কাছে”?
বিমল প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিল, “সেটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না নিশি। লোকটা কোনও ডিমান্ড করেনি আমার কাছে। জীবনে আমি অনেক সমস্যা অনেক বিপদে পড়েছি। কিন্তু নিজের মাথা খাটিয়েই নিজের মত করেই সবকিছু আমি কন্ট্রোল করেছি। কিন্তু এই ব্যাপারটাতে আমি যে কোন দিকে এগোব, সেটা কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না। সমস্ত লেভেলেই আমি যোগাযোগ করেছি। থানা পুলিশকেও সেক্রেটারিয়েট থেকে কালপ্রিটকে খুঁজে বার করবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার সমস্ত চ্যানেল কাজে নেমে পড়েছে। আমার বাড়ি, অফিস, ফার্ম হাউস এমনকি ওই হোটেলের ওপরেও আমার লোকেরা নজর রাখছে। আমি যেখানে যেখানে যাচ্ছি, সব জায়গায় আমার লোকেরা আমার আশেপাশে থেকেই আমাকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। তা সত্বেও লোকটা দেখ কত অনায়াসে আমাদের কাছে তার পাঠানো জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। সাইবার এক্সপার্টরা আমার বাড়ির, ফার্ম হাউসের আর অফিসের ফোনে আসা সমস্ত কল ট্রেস করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমার সব ক’টা মোবাইলে ইনকামিং কল ট্র্যাক করা হচ্ছে, তা সত্বেও লোকটা নির্ভয়ে আমার ফোনে কল, এমএমএস পাঠিয়ে যাচ্ছে। অ্যাজ ইফ সে সমস্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর দ্যাখো, শিবেন্দুরা তার কল ট্রেস করতে পারছে না”।
নিশিতা বিমলের কথা মন দিয়ে শুনে আবার জিজ্ঞেস করল, “সত্যিই কিছুই ডিমান্ড করেনি স্যার? তাহলে লোকটার উদ্দেশ্যটা কি? কি চাইছে সে”।
বিমল একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “একটা জিনিসের কথা অবশ্য ও দু’বার উল্লেখ করেছে” বলে নিশিতার কানে ফিসফিস করে বলল, “সবিতাকে নাকি ওর খুব ভাল লাগে। ও সবিতার সাথে সেক্স করতে চায়”।
নিশিতা বিমলের কথা শুনে চোখ বড়বড় করল। তখন বিমল আবার বলল, “কিন্তু আমার মন এটাকেই ওর উদ্দেশ্য বলে মানতে চাইছে না। তবে প্রত্যেকবারই ফোনে ভিডিওগুলো নেটে আপলোড করবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর কোন ভিডিওটা কবে আপলোড করবে তার দিনক্ষণ তারিখও আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে। গতকালের ভিডিও তিনটে ও সতেরো তারিখে নেটে আপলোড করবার হুমকি দিয়েছে। আর আজ যে দুটো পাঠালো। এই দুটো ভিডিও ও আপলোড করবে বলছে আঠারো তারিখে। শুধু এটুকুই। এর বাইরে সে আর কিচ্ছু বলেনি আমাকে। অবশ্য সব সময়ই তুই তোকারি করে গালিগালাজ দিয়ে কথা বলে। আমার লাইফে কেউ আমাকে এমনভাবে কথা বলার সাহস করতে পারেনি”।
নিশিতা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা স্যার, লোকটা যে ক’বার আপনাকে ফোন করেছে, তখন আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেননি সে কেন এ’সব করছে”?
বিমল জবাব দিল, “ও যে ক’বার ফোন করেছে, সে ক’বার নিজেই একটানা আমাকে গালিগালাজ করে শুধু তার কথাগুলোই বলে গেছে। একবারও আমাকে কিছু বলার সুযোগই দেয় নি। যখনই আমি ভেবেছি কিছু জিজ্ঞেস করব, তখনই ফোন কেটে দিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে কলব্যাক করেছি। কিন্তু কন্টাক্ট করতে পারিনি। প্রত্যেকবার একই কথা শুনেছি মোবাইলে। “ডায়ালড নাম্বার ডাজ নট এক্সিস্ট। ডায়ল কিয়া গয়া নাম্বার মৌজুদ নহী হ্যায়”। পরপর তিনবার ট্রাই করেও একই রেজাল্ট পেয়েছি। আসলে লোকটা আগে থেকেই সবকিছু এমনভাবে প্ল্যান করে কাজে নেমেছে যাতে তাকে আমি কোনভাবেই ধরতে বা কন্টাক্ট করতে না পারি। তাই তো বুঝতে পাচ্ছি, যে আমরা তাকে যত চালাক ভেবেছি, সে তার থেকেও অনেক বেশী চালাক”।
নিশিতা এবার বলল, “কিন্তু স্যার এভাবে আর কতদিন চলবে? কিছু একটা তো করতেই হবে যাতে ব্যাপারটা থামানো যায়”।
বিমল হতাশ স্বরে বলল, “জানিনা নিশি, আমি সত্যিই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না”।
******************
সীমন্তিনী অফিসের কাজ শেষ করে বেরোতে যাবে, এমন সময়েই মিঃ অধিকারীর ফোন এল। কল রিসিভ করে সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ মিঃ অধিকারী বলুন”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাডাম, আজ দুপুরের দিকে কলকাতা থেকে মহিমা মালহোত্রা সেন বলে এক ভদ্রমহিলা আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি আপনার কালচিনির কাজটার ব্যাপারে ওই সময় কালচিনিতেই একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই তার সাথে ডিটেইলস কথা বলতে পারিনি। তবে উনি বললেন, আপনিই নাকি তার সেই বান্ধবী”।
সীমন্তিনী তাকে বলল, “হ্যাঁ মিঃ অধিকারী। ওনার নাম মহিমা মালহোত্রা সেনই। পাঞ্জাবী মহিলা ভালবেসে এক বাঙালী ভদ্রলোককে বিয়ে করেছেন। অনেক বছর ধরে কলকাতায় থাকতে থাকতে প্রায় বাঙালীই হয়ে গেছেন এখন। কাল যখন আমরা কলকাতার ওই প্লটটা নিয়ে আলোচনা করছিলুম, তখন আমি আপনাকে বলেছিলুম না যে আমার এক বান্ধবী একটা মার্কেট কমপ্লেক্স বানাবে বলে অমন একটা প্লট খুঁজছে? সেটা এই মহিমা মালহোত্রা সেনের ব্যাপারেই বলেছিলুম। আমি কাল রাতে তার সাথে অল্প সময় কথা বলে ওই প্লটটার ব্যাপারে তাকে বলেছি। আর আপনার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে আপনার সাথে তাকে কথা বলতে অনুরোধ করেছি। আপনাকে তো কাল রাতেই সেটা জানালুম। তা সে কি বলেছে আপনাকে? সে কি ওই ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “হ্যাঁ ম্যাডাম, ফোনে তো উনি তাই বললেন। তবে এ’সব ব্যাপারে শুধু ফোনে কথা বলাটাই তো পর্যাপ্ত নয়। সামনা সামনি বসে আলোচনা করলেই বেশী ভাল হয়। তাই উনি আমাকে অনুরোধ করলেন, কলকাতা গিয়ে তার সাথে দেখা করতে। আমি তখন তাকে বলেছি যে আমি সবেই কলকাতা থেকে ফিরেছি। এদিকে নানা কাজে খুব ব্যস্ত আছি। তবু সময় করে উঠতে পারলে আমি যাব। কিন্তু ম্যাডাম, আপনাকে বলছি, যে ওই প্লটটার ব্যাপারে কিন্তু একেবারেই দেরী করা যাবে না। আপনি যদি বলেন তবে আমি আরেকবার কলকাতা যেতেই পারি তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ম্যাম, আপনি তো কালচিনির বাড়ি তৈরীর কাজটাও খুব শিগগীরই শুরু করতে বলছেন। অবশ্য আমাদের ফার্ম ছোট হলেও দু’টো প্রজেক্টই আমরা হাতে নিতে পারব। সেটুকু ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু ম্যাম, আপনার ওই বান্ধবী যদি সত্যিই তার প্রোজেক্টটা শুরু করতে চান, তাহলে আমাকে কিন্তু জমির ডিলটা শেষ না হওয়া অব্দি কলকাতাতেই থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই ক’দিন, আপনি যেমনটা বলেছিলেন, আমি কিন্তু কালচিনির প্রজেক্টটা পারসোনালি সুপারভাইজ করতে পারব না”।
সীমন্তিনী এ’কথা শুনে বলল, “ওমা, তাহলে কিকরে হবে? আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি যে কালচিনির বাড়ি তৈরীর ব্যাপারটা আগাগোড়া আপনাকেই ব্যক্তিগত ভাবে দেখাশুনো করতে হবে”।
______________________________
ss_sexy
বিমল অসহায় ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “চেষ্টা তো আমরা কাল থেকেই শুরু করে দিয়েছি নিশি। রাতেও টেলিকমিউনিকেশন সেক্রেটারীর সাথে আর এখানকার বেশ কয়েকজন হায়ার অফিসারদের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবাই প্রয়োজনীয় সবরকম সাহায্য করবে বলে কথা দিয়েছেন। পুলিশও কাজে নেমে যাবে আজ সকাল থেকে। কিন্তু এখন অব্দি তো কোনও পজিটিভ খবর পাচ্ছি না। উল্টে বাড়ি থেকে বেরোবার সময় আরেকটা সিডি পেলাম। পেছনে নাম লেখা ছিল গাবলু হাজরা। আমি ভেবেছিলাম আমাদের গাবলুই বোধহয় কোন খবর পাঠিয়েছে। একটু হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই জানতে পারলাম যে আশ্বস্ত হবার মত কিছুই ঘটেনি। বরং অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল। লোকটা আমাদের বাড়ির ভেতরে আমার স্ত্রীর বেডরুমেও ক্যামেরা লাগিয়ে ভিডিও রেকর্ডিং করেছে। তারই একটা সিডি সে আজ পাঠিয়েছে। আর সাথে সাথে ফোন করেও বলল যে এই নতুন ভিডিওটা সে আঠার তারিখ সকাল ন’টায় নেটে আপলোড করবে। উঃ, কি যে করি আমি এখন তার কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। একটু আগে শিবেন্দুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম আজ আমার মোবাইলে আসা কলটা ও ট্যাপ করতে পেরেছে কি না। জবাবে কি বলল জানো? বলল যে তুমি সকালে ওকে ফোন করবার পরে পরেই সে ট্যাপিং আর ট্র্যাকিং দুটো কাজই প্রসেস করতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও কাজটা শেষ করে উঠতে পারেনি। বলল, আরও ঘন্টাখানেক সময়ের নাকি প্রয়োজন। তারপর থেকে নাকি সেটা করা সম্ভব হবে। এরপর গাবলুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম যে ও আমার বাড়িতে কোন সিডি পাঠিয়েছে কিনা। ও তো বলল যে ও কিছু পাঠায়নি। আর এখনও এস এম খানকে খুঁজে পায়নি। আর সকালে তোমার ফোন পেয়ে ও তাকে খোঁজা বাদ দিয়ে এখন অন্য ভাবে নিজের কাজ শুরু করেছে। আর ওর পুরো নাম নাকি গাবলু সরকার। কিন্তু আজ সকালের ভিডিওতে নাম লেখা আছে গাবলু হাজরা। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে আমি যেমনটা প্রথমে ভেবেছিলাম তেমনটা নয়। আমাদের গাবলু কিছু পাঠায়নি আমাকে। আর ওই আগের নামগুলোর মত এই গাবলু হাজরা নামটাও ভূয়ো। আসলে ও’সব নামে হয়ত কেউই কোথাও নেই। শুধু আমাদের ধোকা দেবার জন্যেই বানিয়ে বানিয়ে নামগুলো লেখা হয়েছে। শুধু আমাদের কনফিইউজড করবার উদ্দেশ্যে। আচ্ছা ও’ কথা বরং এখন থাক। আজকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কি কি আছে বল তো শুনি”।
****************
বিকেল পাঁচটায় অফিসেই আজিম কুরেশির সাথে বিমলের মিটিং আছে। কিন্তু সারা দিনে নর্থ আর সাউথ কলকাতার তিনটে আন্ডার কনস্ট্রাকশন সাইটে তাকে পরিদর্শন করতে যেতে হবে। আর বিমল সাইট ইনস্পেকশনে যাবার সময় প্রায় সব সময়ই নিশিতাকে সঙ্গে নেয়। বিমলের পরামর্শমত নিশিতা একটা লিস্ট বানিয়ে নিল। সে লিস্ট অনুযায়ীই তাদের একের পর এক তিনটে সাইটে যেতে হবে। সকাল প্রায় এগারোটায় বিমল তার পিএ নিশিতাকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়ল। অফিস থেকে বেরোবার পর থেকেই চোখে কালো গগলস পড়ে বিমল চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে শুরু করল। নিশিতাকেও একই নির্দেশ দিয়ে রেখেছে। নিশিতাও চোখে ডার্ক কালারের সানগ্লাস পড়ে সারাক্ষণ আশেপাশে নজর রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাইট ইনস্পেকশনে গেলে বিমলের হাতে সবসময় তার ল্যাপটপের ব্যাগ থাকে। আর নিশিতাও কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের ভ্যানিটি নিয়ে বেরোয়। আজও তাই করেছে। প্রথম সাইটে গিয়ে পৌঁছল প্রায় বারোটায়। ঘুরে ঘুরে প্রজেক্টের সব কিছু দেখতে দেখতে ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলতে বলতেই বেলা প্রায় দেড়টা বেজে গেল। ওই সাইটেই তাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করে হয়েছিল।
প্রায় পৌনে দুটোর সময় লাঞ্চে বসবার ঠিক আগেই বিমলের ফোনটা বিপ বিপ করে উঠল। সাথে সাথে বিমলের বুকের ভেতরটাও যেন ঢিপ ঢিপ করে উঠল। বিমল বুঝতে পারল, লোকটা সকালে যেমনটা বলেছিল ঠিক সেটাই করেছে এখন। এখনও বেলা দুটো বাজে নি। নিশিতা তখন টয়লেটে হাত মুখ ধুতে গেছে। নিশিতা হাত মুখ ধুয়ে বেরোতেই বিমল টয়লেটে গিয়ে ঢুকল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে এমএমএস এসেছে। সেটাকে ডাউনলোড করে দেখল এটাও ফার্ম হাউসের আরেক রাতের ঘটণা। ওই মিলু নামের কম বয়সী মেয়েটাকে যেদিন সে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল। এমন একটা সম্ভাবনা তার মনে আগে থেকেই দেখা দিয়েছিল। তাই সে এবার খুব বেশী অবাক হল না। এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তার। কিন্তু আশা প্রত্যাশা যাই থাকুক না কেন, তার বিপদের মাত্রা তো ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। টয়লেট থেকে বেরোবার সময়েই তার মোবাইলে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এল। ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও সে কাটল না। কলটা রিসিভ করে কানে ফোন লাগাতেই শুনতে পেল, “দেখেছিস শুয়োরের বাচ্চা। আমি কত পাঙ্কচুয়াল। তোকে সকালে বলেছিলাম বেলা একটা থেকে দুটোর মধ্যে পরের এমএমএসটা পাঠাব। ঘড়ি মিলিয়ে টাইমিংটা দেখে নে। এখনও দুটো বাজে নি। জানি তুই আমাকে খুঁজে বের করবার জন্য তোর কুকুরগুলোকে লেলিয়ে দিয়েছিস। আর কুকুরগুলোও সারা শহর জুড়ে ঘেউ ঘেউ করে ছুটছে। তা ঘুরুক। আমার তাতে কোন সমস্যা নেই। তুই আর তোর পিএ মাগিটাও যে চোখে কালো চশমা পড়ে তোদের আশেপাশে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিস সে’ কথাও জানি। তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই। তোর পোষা কুকুরগুলো তোর আশেপাশে এমনভাবে পাহারা দিচ্ছে যাতে আমি তোর ধারে কাছে পৌঁছতে না পারি। দিক, তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার সমস্যা আপাততঃ শুধু একটাই। তোর ডবকা বেশ্যা মাগী বৌটাকে চুদতে পেলাম না এখনও। তবে আমি ধৈর্য ধরতে রাজি আছি। ওই যে কথায় বলে না, সবুরে মেওয়া ফলে। তাই সবুর করছি। দেখি মেওয়া কবে ফলে। আচ্ছা সে’কথা থাক। আশা করি এবারের এমএমএসটা দেখেছিস। আর এটা কবে কোথায় রেকর্ডিং করা হয়েছে তাও হয়ত বুঝে গেছিস। কারন এ ছবির হিরো তো তুই নিজেই। তবে এটা এখনও জানিস না যে এই ভিডিওটার ফুল ভার্সনটা কখন তুই হাতে পাবি। তবে টেনশন নিস না। বুঝতেই তো পারছিস, আমি কথায় পাকা। আমার কথায় আর কাজে কোনটাতেই কোন ফারাক থাকে না। তোর ল্যাপটপের ব্যাগটা বন্ধ ছিল। তাই ঠিক দেড়টার সময় সিডিটা তোর পিএ মাগীর ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যেই ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। একটু কষ্ট করে তার কাছ থেকেই সেটা নিয়ে নিস কেমন? আর শোন, এখন আর তোর সময় নষ্ট করছি না। যা যা, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। লাঞ্চটা সেরে নে। আর সিডিটা চালিয়ে দেখবার জন্য অত উতলা না হলেও চলবে। ট্রেলার দেখেই তো বুঝে গেলি পুরো ফিল্মটা কেমন হবে। তাই ধীরে সুস্থে সময়মত দেখিস ওটা। তবে আসল কথাটা জানিয়ে দিই। এ ভিডিওটা নেটে আপলোড হবে আঠারো তারিখ দুপুর দেড়টায়। দিন তারিখগুলো ভুলে যাস না” বলেই ফোন কেটে দিল।
বিমল অবাক হয়ে ভাবতে লাগল এটা কিকরে সম্ভব হল? নিশিতা আর সে নিজেও সর্বক্ষণই সতর্ক ছিল। তেমন সন্দেহজনক কাউকেই তো তাদের ধারে কাছে দেখেনি তারা। তাহলে ঠিক দেড়টার সময় নিশিতার ব্যাগে কে কিভাবে সিডিটা ঢুকিয়ে দিল!
লাঞ্চের পর গাড়িতে ওঠবার আগেই বিমল শিবেন্দুকে ফোন করে বলল, “শোন, ঠিক একটা পঁয়তাল্লিশে আমার এই নাম্বারে কেউ একটা এমএমএস পাঠিয়েছে। আর তার মিনিট পাঁচেক পরেই সে এই নাম্বারেই একটা কল করেছিল। এ দুটো ট্র্যাক করতে পেরেছিস”?
ও’পাশ থেকে শিবেন্দু জিবাব দিল, “স্যার, এমএমএস আর কল দুটোই ধরা পড়েছে আমার সিস্টেমে। কিন্তু লোকেশান গুলো ধরা পড়েনি। তবে এটা বুঝতে পেরেছি যে এমএমএস আর কলটা একই ফোন থেকে এসেছে। আমরা আরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি স্যার। দেখি ট্র্যাক করতে পারি কি না। সরি স্যার”।
গাড়িতে চেপে ওই সাইট থেকে আরেক সাইটে যাবার পথে বিমল নিশিতাকে বলল, “তোমার ব্যাগের ভেতর একটা সিডি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটা বের করে আমায় দাও”।
নিশিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার ব্যাগে স্যার? কি বলছেন? আমার ব্যাগে সিডি কোত্থেকে আসবে! ব্যাগ তো সব সময় আমার কাঁধেই আছে! কোথাও তো ব্যাগটা নামিয়ে রাখিনি আমি”!
বিমল শান্তভাবে বলল, “জানি নিশি, তুমিও আমার মত সতর্কই ছিলে, সবদিকে নজর রাখছিলে। কিন্তু খেতে বসার ঠিক আগেই আমার মোবাইলে আরেকটা এমএমএস এসেছে। আগের মতই একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ। তারপর ওই প্রাইভেট নাম্বার থেকে একট কলও এসেছিল। কলটা রিসিভ করেই শুনতে পেলাম যে তোমার ব্যাগে সিডিটা রেখে গেছে”।
বিমলের কথা শুনতে শুনতেই নিশিতা ব্যাগের মুখ খুলে তার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিতেই সিডিটা পেয়ে গেল। তার মুখ শুকিয়ে গেল। সিডিটা টেনে বের করে পাংশু মুখে সেটা বিমলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “স্যার বিশ্বাস করুন, আমি কিচ্ছু জানিনা। অফিস থেকে বেরোবার সময় আমি ব্যাগের ভেতরে কি কি আছে না আছে সব চেক করে বেরিয়েছিলাম। তখন এ সিডিটা কিন্তু এখানে সত্যি ছিল না। এখন এটা কিকরে আমার ব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেল আমি তা সত্যিই বুঝতে পাচ্ছি না স্যার। কি করে এটা সম্ভব হল? লোকটা কি ম্যাজিক জানে নাকি? আশ্চর্য তো”!
বিমল শান্তভাবেই বলল, “তুমি ভেবো না নিশি। কাল প্রথমবার তোমার ওপর সন্দেহ হয়েছিল বলে তোমাকে বাজে ভাবে ওই কথাগুলো বলে ফেলেছিলাম। ভুল বুঝে তোমাকে দুটো থাপ্পরও মেরেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় সিডিটা পাবার পরেই তোমার ওপর থেকে আমার সন্দেহ পুরোপুরি ভাবে মিটে গেছে। আমি নিশ্চিত জানি, এ’সবের পেছনে তোমার কোন হাত নেই। যা করবার সব সেই লোকটাই করছে। লোকটা যে অসম্ভব চালাক সেটা বুঝতে পারছ? ভেবে দ্যাখো, এখন আমার নিজের লোকেরাও আশেপাশে থেকে আমাদের ওপর নজরদারি করছে। আমি আর তুমিও যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। তবু লোকটা তার কথামতই ঠিক কাজটা সেরে ফেলল। সে সকালেই আমাকে বলেছিল যে দুপুর একটা থেকে দুটোর ভেতর সে আরেকটা এমএমএস আর সিডি পাঠাবে। এমএমএসটা আমার ফোনে এসেছে একটা পয়তাল্লিশে। আর সিডিটা তোমার ব্যাগে এসে ঢুকেছে দেড়টায়। আরেকটা কথা শুনলে তুমি আরও চমকে যাবে নিশি। আমরা যে ওকে খুঁজে বার করবার জন্য সারা শহর জুড়ে খানা তল্লাশী শুরু করছি, আমাদের ওপরেও যে আমার লোকেরা সর্বক্ষণ নজর রাখছে, এ’সবের সব কিছুই লোকটা জানে। আমাকে ফোনে সে নিজেই কথা গুলো বলল। কিন্তু দ্যাখো, সবকিছু জেনেও লোকটা কত সহজে তার কথা মত কাজ সেরে ফেলল। এবার বুঝতে পাচ্ছ তো? তাকে আমরা যতটা হোসিয়ার বলে ভেবেছিলাম লোকটা তার থেকেও অনেক বেশী হোসিয়ার। আর তুমি নিজেকে দোষী বলে ভেবো না। আমি তো আগেই বললাম, তুমি যে এ’সবের ভেতর নেই তা নিয়ে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। আর তোমাকে বিপদে ফেলবার জন্যেও সেই লোকটা এ’সব করছে না। তাই তুমি ভয় পেও না। তোমার কোন ক্ষতি হবে না। লোকটা শুধু আমাকেই বিপদে ফেলতে চাইছে, তোমাকে নয়। আমার মাথা গরম হয়ে আছে বলে আমি হয়ত ঠিক অ্যাঙ্গেলে ভাবতে পারছি না। তুমি তোমার মাথাটা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবো। আর নতুন কোন রাস্তা খুঁজে পেলে আমাকে জানিও। আমাকে এ বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করো, প্লীজ নিশি”।
নিশিতা বিমলের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভাবে বলল, “এমন করে কেন বলছেন স্যার। আপনার ভাল মন্দ দেখবার দায়িত্ব তো আমাদেরই। তবে আমি বুঝতে পারছি, ব্যাপারটা এতটাই সেনসিটিভ যে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের কাছে খুলে বলা সম্ভব নয়। তাই তাদের কারো কাছ থেকে হেল্প আমরা আশাও করতে পারি না। আমি তো শুরু থেকেও না চাইতেই এ’সবের ভেতরে জড়িয়ে পড়েছি। তাই আপনাকে যতভাবে সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব আমি তাই করতে চাই। কিন্তু স্যার, আমার মনে কোনও প্রশ্ন উঠলে সেটা যদি আমি আপনার কাছে জানতে চাই, তাহলে আপনি রেগে যাবেন না তো”?
বিমল ম্লান হেসে বলল, “তোমার কথা শুনে আমি খুব খুশী হলাম নিশি। তোমার মনে যদি এ ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সময় আমাকে তুমি সে প্রশ্ন কোর। আমি তোমাকে সে অনুমতি দিলাম। কিন্তু এ বিষয়ের বাইরের কোন ব্যাপারে কিন্তু সে অনুমতি আমি তোমাকে এখন দিচ্ছি না। কথায় বলে এক সে ভলে দো। আমার একা মাথায় যেটার সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না, তোমার মাথা আমার সঙ্গে এলে হয়ত সত্যি কোন সমাধান খুঁজে বের করতে পারব”।
নিশিতা এবার একটু নড়েচড়ে বসে বলল, “তাহলে স্যার, এখনই একটা কথা জিজ্ঞেস করি”?
বিমল আগের মতই ম্লান হেসে বলল, “বেশ করো”।
নিশিতা মনের কথাগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে বলল, “স্যার, সাধারণতঃ ক্রিমিন্যালরা এ ধরণের কাজ করে কাউকে ব্ল্যাকমেল করে র*্যানসম চেয়ে কিছু টাকা হাতিয়ে নেবার জন্যে। কিংবা তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য সফল করতে। এই লোকটা কাল সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচ খানা সিডি পাঠিয়েছে। আর পাঁচ বারই সে ফোনে আপনার সাথে কথা বলেছে। সে কি কখনও কোন ধরণের র*্যানসম বা অন্য কোন কিছু ডিমান্ড করেছে আপনার কাছে”?
বিমল প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিল, “সেটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না নিশি। লোকটা কোনও ডিমান্ড করেনি আমার কাছে। জীবনে আমি অনেক সমস্যা অনেক বিপদে পড়েছি। কিন্তু নিজের মাথা খাটিয়েই নিজের মত করেই সবকিছু আমি কন্ট্রোল করেছি। কিন্তু এই ব্যাপারটাতে আমি যে কোন দিকে এগোব, সেটা কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না। সমস্ত লেভেলেই আমি যোগাযোগ করেছি। থানা পুলিশকেও সেক্রেটারিয়েট থেকে কালপ্রিটকে খুঁজে বার করবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার সমস্ত চ্যানেল কাজে নেমে পড়েছে। আমার বাড়ি, অফিস, ফার্ম হাউস এমনকি ওই হোটেলের ওপরেও আমার লোকেরা নজর রাখছে। আমি যেখানে যেখানে যাচ্ছি, সব জায়গায় আমার লোকেরা আমার আশেপাশে থেকেই আমাকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। তা সত্বেও লোকটা দেখ কত অনায়াসে আমাদের কাছে তার পাঠানো জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। সাইবার এক্সপার্টরা আমার বাড়ির, ফার্ম হাউসের আর অফিসের ফোনে আসা সমস্ত কল ট্রেস করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমার সব ক’টা মোবাইলে ইনকামিং কল ট্র্যাক করা হচ্ছে, তা সত্বেও লোকটা নির্ভয়ে আমার ফোনে কল, এমএমএস পাঠিয়ে যাচ্ছে। অ্যাজ ইফ সে সমস্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর দ্যাখো, শিবেন্দুরা তার কল ট্রেস করতে পারছে না”।
নিশিতা বিমলের কথা মন দিয়ে শুনে আবার জিজ্ঞেস করল, “সত্যিই কিছুই ডিমান্ড করেনি স্যার? তাহলে লোকটার উদ্দেশ্যটা কি? কি চাইছে সে”।
বিমল একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “একটা জিনিসের কথা অবশ্য ও দু’বার উল্লেখ করেছে” বলে নিশিতার কানে ফিসফিস করে বলল, “সবিতাকে নাকি ওর খুব ভাল লাগে। ও সবিতার সাথে সেক্স করতে চায়”।
নিশিতা বিমলের কথা শুনে চোখ বড়বড় করল। তখন বিমল আবার বলল, “কিন্তু আমার মন এটাকেই ওর উদ্দেশ্য বলে মানতে চাইছে না। তবে প্রত্যেকবারই ফোনে ভিডিওগুলো নেটে আপলোড করবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর কোন ভিডিওটা কবে আপলোড করবে তার দিনক্ষণ তারিখও আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে। গতকালের ভিডিও তিনটে ও সতেরো তারিখে নেটে আপলোড করবার হুমকি দিয়েছে। আর আজ যে দুটো পাঠালো। এই দুটো ভিডিও ও আপলোড করবে বলছে আঠারো তারিখে। শুধু এটুকুই। এর বাইরে সে আর কিচ্ছু বলেনি আমাকে। অবশ্য সব সময়ই তুই তোকারি করে গালিগালাজ দিয়ে কথা বলে। আমার লাইফে কেউ আমাকে এমনভাবে কথা বলার সাহস করতে পারেনি”।
নিশিতা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা স্যার, লোকটা যে ক’বার আপনাকে ফোন করেছে, তখন আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেননি সে কেন এ’সব করছে”?
বিমল জবাব দিল, “ও যে ক’বার ফোন করেছে, সে ক’বার নিজেই একটানা আমাকে গালিগালাজ করে শুধু তার কথাগুলোই বলে গেছে। একবারও আমাকে কিছু বলার সুযোগই দেয় নি। যখনই আমি ভেবেছি কিছু জিজ্ঞেস করব, তখনই ফোন কেটে দিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে কলব্যাক করেছি। কিন্তু কন্টাক্ট করতে পারিনি। প্রত্যেকবার একই কথা শুনেছি মোবাইলে। “ডায়ালড নাম্বার ডাজ নট এক্সিস্ট। ডায়ল কিয়া গয়া নাম্বার মৌজুদ নহী হ্যায়”। পরপর তিনবার ট্রাই করেও একই রেজাল্ট পেয়েছি। আসলে লোকটা আগে থেকেই সবকিছু এমনভাবে প্ল্যান করে কাজে নেমেছে যাতে তাকে আমি কোনভাবেই ধরতে বা কন্টাক্ট করতে না পারি। তাই তো বুঝতে পাচ্ছি, যে আমরা তাকে যত চালাক ভেবেছি, সে তার থেকেও অনেক বেশী চালাক”।
নিশিতা এবার বলল, “কিন্তু স্যার এভাবে আর কতদিন চলবে? কিছু একটা তো করতেই হবে যাতে ব্যাপারটা থামানো যায়”।
বিমল হতাশ স্বরে বলল, “জানিনা নিশি, আমি সত্যিই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না”।
******************
সীমন্তিনী অফিসের কাজ শেষ করে বেরোতে যাবে, এমন সময়েই মিঃ অধিকারীর ফোন এল। কল রিসিভ করে সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ মিঃ অধিকারী বলুন”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাডাম, আজ দুপুরের দিকে কলকাতা থেকে মহিমা মালহোত্রা সেন বলে এক ভদ্রমহিলা আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি আপনার কালচিনির কাজটার ব্যাপারে ওই সময় কালচিনিতেই একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই তার সাথে ডিটেইলস কথা বলতে পারিনি। তবে উনি বললেন, আপনিই নাকি তার সেই বান্ধবী”।
সীমন্তিনী তাকে বলল, “হ্যাঁ মিঃ অধিকারী। ওনার নাম মহিমা মালহোত্রা সেনই। পাঞ্জাবী মহিলা ভালবেসে এক বাঙালী ভদ্রলোককে বিয়ে করেছেন। অনেক বছর ধরে কলকাতায় থাকতে থাকতে প্রায় বাঙালীই হয়ে গেছেন এখন। কাল যখন আমরা কলকাতার ওই প্লটটা নিয়ে আলোচনা করছিলুম, তখন আমি আপনাকে বলেছিলুম না যে আমার এক বান্ধবী একটা মার্কেট কমপ্লেক্স বানাবে বলে অমন একটা প্লট খুঁজছে? সেটা এই মহিমা মালহোত্রা সেনের ব্যাপারেই বলেছিলুম। আমি কাল রাতে তার সাথে অল্প সময় কথা বলে ওই প্লটটার ব্যাপারে তাকে বলেছি। আর আপনার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে আপনার সাথে তাকে কথা বলতে অনুরোধ করেছি। আপনাকে তো কাল রাতেই সেটা জানালুম। তা সে কি বলেছে আপনাকে? সে কি ওই ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “হ্যাঁ ম্যাডাম, ফোনে তো উনি তাই বললেন। তবে এ’সব ব্যাপারে শুধু ফোনে কথা বলাটাই তো পর্যাপ্ত নয়। সামনা সামনি বসে আলোচনা করলেই বেশী ভাল হয়। তাই উনি আমাকে অনুরোধ করলেন, কলকাতা গিয়ে তার সাথে দেখা করতে। আমি তখন তাকে বলেছি যে আমি সবেই কলকাতা থেকে ফিরেছি। এদিকে নানা কাজে খুব ব্যস্ত আছি। তবু সময় করে উঠতে পারলে আমি যাব। কিন্তু ম্যাডাম, আপনাকে বলছি, যে ওই প্লটটার ব্যাপারে কিন্তু একেবারেই দেরী করা যাবে না। আপনি যদি বলেন তবে আমি আরেকবার কলকাতা যেতেই পারি তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ম্যাম, আপনি তো কালচিনির বাড়ি তৈরীর কাজটাও খুব শিগগীরই শুরু করতে বলছেন। অবশ্য আমাদের ফার্ম ছোট হলেও দু’টো প্রজেক্টই আমরা হাতে নিতে পারব। সেটুকু ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু ম্যাম, আপনার ওই বান্ধবী যদি সত্যিই তার প্রোজেক্টটা শুরু করতে চান, তাহলে আমাকে কিন্তু জমির ডিলটা শেষ না হওয়া অব্দি কলকাতাতেই থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই ক’দিন, আপনি যেমনটা বলেছিলেন, আমি কিন্তু কালচিনির প্রজেক্টটা পারসোনালি সুপারভাইজ করতে পারব না”।
সীমন্তিনী এ’কথা শুনে বলল, “ওমা, তাহলে কিকরে হবে? আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি যে কালচিনির বাড়ি তৈরীর ব্যাপারটা আগাগোড়া আপনাকেই ব্যক্তিগত ভাবে দেখাশুনো করতে হবে”।
______________________________
ss_sexy