21-03-2020, 07:18 PM
(Update No. 190)
বিমল একটু খিঁচিয়ে উঠেই জবাব দিল, “আহা, কেন অযথা সময় নষ্ট করছ তুমি। আমিও জানিনা কে এই এস এম খান। প্যাকেটটা খুলে দেখো। তাহলেই হয়ত বুঝতে পারব আমরা”।
নিশিতা বুঝতে পারল, আজ তার বসের মুড অফ। নইলে অন্যদিন অফিসে এসে নিজের চেম্বারে বসে কফি খায় না সে। লাগোয়া রেস্টরুমে ঢুকে নিশিতাকে তার কোলে বসিয়ে নিশিতার সারাটা শরীর নিয়ে খেলতে খেলতে কফি খায় সে। আর কথা না বলে নিশিতা প্যাকেটটা খুলে দেখে ভেতরে একটা সিডি ছাড়া আর কিছু নেই। সিডিটা বের করে বিমলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “স্যার এতে শুধু একটা সিডি আছে। কোন চিঠি ফিটি নেই, আর কিচ্ছু নেই”।
বিমল একটু বিরক্ত হয়েই বলল, “ঠিক আছে, সিডিটা চালিয়ে দাও দেখছি। আর তুমি গাড়ি রেডি করতে বলেছ”?
নিশিতা সিডিটা ল্যাপটপের ডিভিডি ড্রাইভে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “হ্যাঁ স্যার, গাড়ি তৈরী রাখতে বলে দিয়েছি”।
সিডিটা চলতে শুরু করতেই ল্যাপটপের পর্দায় নিশিতার ছবি ফুটে উঠল। একটা ভিডিও চলছে, তাতে নিশিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি বানাচ্ছে। নিশিতা সেটা দেখেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এ কি স্যার? আপনি আমাদের রেস্টরুমের ঘটণাগুলোর সিডি বানিয়েছেন নাকি? এটা কিন্তু মোটেও ঠিক করেননি স্যার। আমি তো আপনাকে বার বার অনুরোধ করেছি ওসবের সিডি না বানাতে। আপনি তবু ......”
বিমল ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই নিশিতাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে চাপা কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল, “শাট আপ। মুখ সামলে রাখো নিশি। আর শিগগীর চেম্বারের দড়জাটা লক করে দাও। যাও কুইক”।
নিশিতা এবার কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই ছুটে গিয়ে চেম্বারের দড়জা ভেতর থেকে লক করে দিল। তারপর প্রায় ছুটে এসে বিমলের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, এটা কিন্তু সত্যিই একদম ঠিক করেন নি। আমার স্বামীর হাতে এমন সিডি পড়লে আমার কী অবস্থা হবে ভাবুন তো একবার”।
বিমল আবার তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে ল্যাপটপে অনেকখানি প্লে ফরোয়ার্ড করে সিডিটাকে আবার প্লে করল। এবার দেখা গেল নিশিতার শরীরের ওপরের অংশ একেবারে খোলা। সে বিমলের কোলে বসে আছে। আর বিমল নিশিতার দু’বগলের তলা দিয়ে হাত গলিয়ে দিয়ে তার বুকের মাংসপিন্ড দুটোকে খুব আয়েশ করে চটকাচ্ছে। বিমল আর নিশিতা দু’জনেই হাঁ করে ল্যাপটপের দিকে চেয়ে। বিমল আবার প্লে ফরোয়ার্ড করে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার প্লে করল। এবার দেখা গেল রেস্টরুমের ছোট্ট বিছানায় নিশিতা সম্পূর্ণভাবে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে, আর তার ওপর পুরো উলঙ্গ শরীরে একজন বয়স্ক লোক চেপে শুয়ে নিজের কোমড় ওঠানামা করে যাচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তীব্র সম্ভোগ চলছে। খানিক বাদেই সে লোকটার মুখও স্পষ্ট দেখা গেল। এ যে বিমল নিজেই। বিমল সাথে সাথে ল্যাপটপটা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিশিতা আবার কিছু একটা বলবার জন্য নিজের মুখ খুলতেই বিমল সপাটে তার গালে একটা জোরদার থাপ্পর কষিয়ে দিয়ে হিংস্র মুখে বলে উঠল, “শালী হারামজাদি, তোর এতবড় সাহস? তোকে চুদি বলে তো তুই যত চাস তাই তোকে দিই আমি। নইলে তোর মত একটা বেশ্যা মাগীকে তো দু’হাজার দিলেই সারা রাত ভর চোদা যায়। দশ হাজার করে নিয়েও তোর পেট ভরছে না? শালী, এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করবি বলে ভেবেছিস তুই? তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেব আমি। তুই কি ভেবেছিস? আমি কিছু বুঝতে পারব না”? বলে নিশিতার অপর গালে আরেকটা থাপ্পর কষাল।
নিশিতার দু’গালে বিমলের আঙুলের দাগ পড়ে গেছে। তার দু’চোখ ফেটে জলের ধারা বইতে শুরু করেছে। নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে কোনরকমে সে বলল, “এ কী বলছেন স্যার? আপনি ভাবছেন আমি এ’সব করেছি? না স্যার, একদম না। আমি সত্যি বলছি স্যার, এ’সব ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমি তো ভেবেছি আপনিই হয়তো এগুলো রেকর্ড করেছেন”।
বিমল এবার খানিকটা থমকে গিয়ে বলল, “তুই করিসনি এ’সব? সত্যি বলছিস? কিন্তু আমার তো মনে হয় একথোকে বেশী টাকা নেবার জন্যেই তুই এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করবার চেষ্টা করছিস”।
নিশিতা আবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বলে উঠল, “না স্যার, আপনি বিশ্বাস করুন। আমি এ’সবের কিচ্ছু জানি না। আর আমি কেন আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে যাব বলুন তো? আমি আপনার কর্মচারী। আপনি আমায় মাসে মাসে বেতন দিচ্ছেন। আর আপনার সাথে এ’সব করি বলে আপনি আমাকে অনেক বাড়তি টাকাও দেন। সে’সব পেয়েই আমি খুশী। তাহলে কেন আমি এ’সব করতে যাব? আমি তো আপনার এখানে এভাবে কাজ করেই সুখে আছি”।
বিমল এবার নিজেকে কিছুটা সংযত করবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “তুমি সত্যি বলছ? এ’সবে তোমার কোন হাত নেই”?
নিশিতা অসহায়ের মত বলল, “না স্যার একেবারেই না। আমি এ’সবের বিন্দু বিসর্গও কিছু জানিনা। সত্যি বলছি আমি। আর আপনি ভাবুন তো, নিজের এমন ভিডিও করে আমি কি অন্য কাউকে দেখাতে পারব? এ তো নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা হবে। আর তাছাড়া এই এস এম খান কে? এ নামে তো কাউকে আমি চিনিও না। এমন একটা সিডি তার কাছে গেলই বা কি করে”?
বিমল অনেকক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে নিশিতাকে দেখতে দেখতে বলল, “এ চেম্বারে আমি ছাড়া একমাত্র তুমিই যখন তখন ঢুকতে পারো। এ ভিডিওটা তো এই রেস্টরুমেই রেকর্ড করা হয়েছে। আর তুমি বলছ, তুমি কিছু জান না”?
নিশিতা কাকুতি ভরা গলায় বলল, “আপনি বিশ্বাস করুন স্যার। আমি সত্যিই এ’সবের কিচ্ছু জানিনা। আপনি ভাবছেন এই ভিডিও রেকর্ডিং আমি করেছি? কিন্তু স্যার, আমিই শুধু ওই রুমে ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারি, এটাই বা কেন ভাবছেন আপনি? আমি ছাড়াও আরও কত মেয়েকে নিয়েও তো আপনি এ রুমে সময় কাটান মাঝে মাঝে। তারাও তো কেউ এ কাজ করতে পারে। তাছাড়া আমি তো আপনার এখানে আট বছর ধরে কাজ করছি স্যার। আমি কি জানিনা, আপনার সঙ্গে শত্রুতা করলে তার পরিণতি কী হয়? সব জেনে বুঝেও এমন কিছু করে আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে আমি নিজের জীবনটাকেই বিপন্ন করে তুলব, এ আপনি সত্যিই মন থেকে বিশ্বাস করেন স্যার? আর এমন একটা ভিডিও যদি কোনভাবে আমার স্বামীর কাছে চলে যায়, তাহলে আমাদের সংসার কি আর টিকবে? আমার স্বামী হয়তো আমাকে খুনই করে ফেলবে। আমি নিজেই কি অতটাই বোকা? তবু বলছি, যদি সেটাই আপনি বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে আমাকে আপনি যা শাস্তি চান দিতে পারেন। কিন্তু তবু আমি বলব, এই ভিডিওর ব্যাপারে আমি কিচ্ছু জানিনা”।
বিমল নিশিতার কথা শুনে আর নিশিতার ভীত সন্ত্রস্ত ভাব দেখে বুঝতে পারল এ ব্যাপারে সত্যিই হয়ত তার কোন হাত নেই। আর বিমল নিজেও জানে তার চোখের সামনে থেকে নিশিতা তাকে কিছুতেই ছুড়ি মারতে পারবে না। আর পেছন থেকে মারবার চেষ্টা করলেও তা পারবে না। নিজের চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল, তাহলে এমন একটা কাজ করল কে? আর কি করেই বা করল? তার অফিসের চেম্বারে না ঢুকে কেউ ওই রেস্টরুমে ঢুকতে পারবে না। আর তার চেম্বারের চাবি শুধু মাত্র নিশিতার কাছেই থাকে। আর সে আর নিশিতা যখন একসাথে কোথাও বের হয় তখন এ চেম্বার লক করে যাওয়া হয়। তাহলে বাইরের কে কিভাবে ওই রেস্টরুমে ভিডিও ক্যামেরা সেট করতে পারে? হ্যাঁ, নিশিতা ছাড়াও তার অফিসের আরও বেশ কয়েকজন মেয়ে বা মহিলাকে নিয়ে সে এ রেস্টরুমে ঢুকে তাদের শরীরের মধু খেয়েছে, এ’কথা ঠিক। কিন্তু তারা যতক্ষণ এ রুমে থাকে ততক্ষণ বিমল নিজেও এ ঘরেই থাকে। তাই তাদের কারো পক্ষেই বিমলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এ ঘরে ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয় একেবারেই। তাহলে কাজটা কে কখন কিভাবে করল? আর এই এস এম খান লোকটাই বা কে? অফিসে আসবার পথে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে তার মোবাইলে একটা কল এসেছিল। তার আগে একটা এমএমএস এসেছিল তার মোবাইলে। তখনও সে ভিডিও এমএমএসটা দেখেনি। লোকটা ফোনে বলছিল ‘একটা সুন্দর ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছি তোর এই নাম্বারে। খুবই ছোট্ট ক্লিপ। অরিজিনাল ভিডিওটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের। এই ছোট্ট ক্লিপটা আগে দেখে নে, কিছু পরে ফুল ওই পয়তাল্লিশ মিনিটের অরিজিনাল ভিডিওটা দেখবার সুযোগ পাবি’। আর কিছু না বলেই লোকটা ফোন কেটে দিয়েছিল। বিমল তখন ভিডিও এমএমএসটা দেখেছিল। ছোট্ট ক্লিপটাতে তার বা নিশিতার মুখ কোথাও দেখা যায়নি। তাই সে ভেবেছিল ওটা বুঝি সাধারণ কোন পর্নমুভি থেকে বানানো হয়েছিল। কেউ মজা করে পাঠিয়েছে বলেই সে ভেবেছিল। তার মত প্রতিপত্তিশালী একজনকে নিয়ে কেউ মজা করছে, আর ফোনে সেই লোকটা তাকে তুই তোকারি করেছে, এটা ভেবেই তার মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন সে খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে যে এটা সাধারণ মজা করবার জন্য কেউ পাঠায়নি। যে-ই এটা করে থাকুক, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় দুরভিসন্ধি আছে তার। এখন এই সিডিটা দেখে মনে হচ্ছে, এই সিডি থেকেই এডিট করে ওই ছোট্ট ক্লিপটা বানানো হয়েছে। কিন্তু এস এম খান নামের এ লোকটাই বা কে? অনেক ভেবেও এমন নামের কাউকে সে মনে করতে পারল না। কিন্তু তার রেস্টরুমে সত্যিই কি কোন ভিডিও ক্যামেরা লুকিয়ে ফিট করা হয়েছে? কথাটা মনে হতেই সে চেয়ার ছেড়ে উঠে ছুটে রেস্টরুমে গিয়ে ঢুকল। তার পেছন পেছন নিশিতাও রেস্টরুমে এসে ঢুকল। বিমল রেস্টরুমের চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। নাহ। কোথাও কোন ক্যামেরা লাগানো আছে বলে মনে হচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও সন্দেহজনক কিছুই তার চোখে পড়ল না। অসহায়ের মত নিশিতার মুখের দিকে চেয়ে সে বলল, “বুঝতে পারছি না নিশি। এ’ঘরে এটা কি করে রেকর্ড করা হয়েছে। কোথাও তো কোন ক্যামেরা নেই”।
নিশিতা এবার ভীত স্বরে বলল, “কি হবে স্যার? ভিডিওটা আমার স্বামীর হাতে গেলে বা আমার স্বামী যদি কোনও ভাবে জানতে পারে যে আমার সাথে আপনার এমন একটা সম্পর্ক আছে, তাহলে তো এক কথায় আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে”।
বিমল হাত তুলে নিশিতাকে থামতে বলে বলল, “কে কী উদ্দেশ্য নিয়ে এ’সব করছে, সেটা আগে জানা উচিৎ। তবে তুমি ভেবো না নিশি। আমার মনে হয় না কেউ তোমাকে বিপদে ফেলবে বলে এসব করছে। যে এসব করছে সে আমাকে টার্গেট করেই এ’ খেলায় নেমেছে। কিন্তু ও জানে না ও ভীমরুলের চাকে ঘা দিয়ে ফেলেছে। বিমল আগরওয়ালাকে ও আন্ডার এস্টিমেট করে ফেলেছে। আর তার ফল ও নিশ্চিত ভাবেই পাবে” বলে নিশিতার হাত ধরে চেম্বারে ফিরে আসতে আসতে বলল, “তোমার গায়ে ওভাবে হাত তোলা আমার উচিৎ হয়নি। আর ওভাবে গালিগালাজ করাও ঠিক হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ওই কথা মনে হতেই তোমার ওপরই আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই ওভাবে রিয়েক্ট করে ফেলেছি। প্লীজ, ডোন্ট মাইন্ড। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এই এস এম খান লোকটা কে, তাকে আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে নিশি। আর আমি যখন আজ অফিসে আসছিলাম তখন একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে এই ভিডিওটার একটা ছোট্ট ক্লিপ আমার মোবাইলে কেউ পাঠিয়েছিল। একজন সাইবার এক্সপার্টকে কন্টাক্ট করো। যাতে ওই প্রাইভেট নাম্বারের ফোনটার লোকেশান খুঁজে বের করা যায়”।
নিশিতা বলল, “হ্যাঁ স্যার, সে চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনার তো দমদম যাবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে স্যার। গাড়ি তো রেডি আছে”।
বিমল নিজের চেয়ারের কাছে এসে তার কোটটা গায়ে পড়তে পড়তে বলল, “ওকে আমি যাচ্ছি, তুমি বরং চেম্বারেই থাকো। আর ওই এস এম খান আর ওই প্রাইভেট নাম্বারের ফোনটা লোকেট করবার চেষ্টা করো। আমি আমার ওই মোবাইলটাও রেখে যাচ্ছি। আর ঘাবড়িও না। অফিসের কাউকে আর কিছু জানিও না। তুমি শুধু ওই কাজ দুটো করো। তারপর বাকিটা আমি সামলে নেব। ডোন্ট ওরি। আর নিজের মনটাকে শান্ত রেখো। আর আমার অমন ব্যবহারের জন্য প্লীজ ক্ষমা করে দিও” বলে নিশিতার গালে আর ঠোঁটে চুমু খেয়ে ওর উঁচু বুকদুটোকে সামান্য টিপে দিয়ে “আমি আসছি” বলে নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা আর অন্য মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল।
বিমল বেরিয়ে যাবার পর নিশিতা বিমলের দলের খুব ঘণিষ্ঠ কয়েকজনকে ফোন করে এস এম খানকে খোঁজার কথা বলল। আর দু’জন সাইবার এক্সপার্টকে ডেকে পাঠাল তাদের অফিসে।
*******************
বেলেঘাটার একটা প্রজেক্টের কাজ দেখে বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ সেখান থেকে বিমল তার অফিসের দিকে রওনা হল। মনটা বিক্ষিপ্ত বলে কাজে তেমন মন দিতে পারছেনা আজ সে। তবু পুর্ব নির্ধারিত কাজগুলো তাকে করতেই হচ্ছে। বেলেঘাটা প্রজেক্টের কাজ শেষ করে নিজের গাড়িতে ফিরে এসে পেছনের সীটে বসতেই ড্রাইভার একটা হলুদ রঙের খাম তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা নিন, স্যার”।
বিমল খামটা দেখে জিজ্ঞেস করল, “কী এটা? আর কে দিল তোমাকে”?
ড্রাইভার একটু অবাক হয়ে বলল, “সে কি স্যার? এটা আপনিই তো পাঠিয়েছেন আমার কাছে”?
এবার বিমল অবাক হয়ে বলল, “আমি পাঠিয়েছি মানে? কে দিয়ে গেল তোমাকে এটা”?
ড্রাইভারও একই সমান বিস্ময়ের সাথে বলল, “স্যার কিছুক্ষণ আগে এই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকেই একজন লেবার টাইপের লোক এসে এটা আমার হাতে দিয়ে বলল যে আপনি তাকে ওটা আমার হাতে দিতে বলেছেন। আর ভাল করে রাখতে বলেছেন। খুব দরকারী জিনিস নাকি আছে ওতে। তাই তো আমি হাত পেতে সেটা নিয়েছি। আর দরকারী জিনিস আছে ভেবে আমিও আর গাড়ি থেকে নামিনি। ড্রাইভিং সীটেই বসে আছি তখন থেকে”।
বিমল হাত বাড়িয়ে খামটা হাতে নিতেই তার মন বলে উঠল, এর ভেতরেও আবার কোন সিডি এসেছে নিশ্চয়ই। খামটার সাইজ দেখে, আর ওপর থেকে টিপেটুপে তেমনটাই মনে হচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে রাখতে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে সে খামটা খুলল। তার ভাবনাকে সত্যি করেই খামের ভেতর থেকে একটা সিডি বেরিয়ে এল। বিমল মনে মনে একটু শঙ্কিত হল, না জানি এবার আবার কিসের ভিডিও পাঠিয়েছে।
গাড়ি তখন চেনা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলছে। বিমল আর মনের অস্থিরতা চেপে রাখতে না পেরে তার ব্যাগের ভেতর থেকে ল্যাপটপটা বের করে সিডিটা প্লে করল। এবার তার চক্ষু ছানাবড়া হবার যোগার। চোখ বিস্ফারিত করে দেখতে পেল ওই সিডিতেও একটা ভিডিও আছে। আর সেই ভিডিওতে বিমল আর একজন বছর ত্রিশের সুন্দরী মহিলা। বিমল অনেক ভেবেও মনে করতে পারল না মহিলার নামটা কি ছিল। তবে এই মহিলাকে অল্প কয়েকদিন আগেই বিমল তার বাগান বাড়িতে মানে দক্ষিণেশ্বরের ফার্ম হাউসে নিয়ে গিয়েছিল। সারাটা রাত ধরে ওই মহিলা তাকে খুব সুখ দিয়েছিল। তাকে দেবার কথা ছিল কুড়ি হাজার টাকা। কিন্তু তার সার্ভিসে বিমল খুশী হয়ে তাকে আরও দশ হাজার টাকা বখশিস দিয়েছিল। বিমলের ইচ্ছে ছিল এ সপ্তাহের শেষের দিকেই সে আরেকবার ওই মহিলাকে ভোগ করবে। কিন্তু এবার তার আর বিষ্ময়ের সীমা রইল না। সকালের সিডিটা দেখে তার প্রথমেই মনে হয়েছিল রেস্টরুমের ওই ঘটণাটা হয়ত নিশিতাই রেকর্ড করেছিল তাকে ব্ল্যাকমেল করবার জন্য। কিন্তু ওই ফার্ম হাউসে ভিডিও রেকর্ডিং করা নিশিতার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। দক্ষিনেশ্বরে যে তাদের একটা ফার্ম হাউস আছে, এ’কথা জানলেও, নিশিতা কোনদিন সে ফার্ম হাউসে যায়নি। বিমল তাকে কখনও সেখানে নিয়ে যায়নি, বা বলা ভাল, নিয়ে যেতে পারেনি। কারন নিশিতার পক্ষে তার স্বামীকে বাড়িতে রেখে সারা রাত বিমলের সাথে অফিসে, ফার্ম হাউসে বা বাইরে কোথাও কাটানো সম্ভব হয় না। আর ওর স্বামীও এমন একটা কাজ করে যাতে তাকে কখনোই শহরের বাইরে যাবার দরকার পড়ে না। আর একটা রাতও সে তার বৌকে ছেড়ে থাকতে পারে না। তাই অনেকবার বিমল চাইলেও নিশিতা তার ফার্ম হাউসে যায়নি। আর বিমলের অনুপস্থিতিতে ওই ফার্ম হাউসে অন্য কারো পক্ষে ঢোকাই সম্ভব নয়। সেখানকার সিকিউরিটির লোকজনদের তেমন নির্দেশই দেওয়া আছে। তাই নিশিতা কিছুতেই সেখানে যেতে পারে না। এ কাজের পেছনে অন্য কারো হাত আছে। কিন্তু কে? সেটা তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। বড় কোনও বিপদ ঘটার আগে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করে ফেলা খুবই দরকার।
কি মনে হতেই খামটাকে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতেই এক কোনায় ছোট্ট করে বি এস মন্ডল লেখা দেখতে পেল। সকালের সিডিটায় লেখা ছিল এস এম খান। আর এবারে বি এস মন্ডল। এখন সে কাকে ছেড়ে কাকে ধরবার চেষ্টা করবে। তবে কেন যেন তার মনে হচ্ছে ওই দুটো নামই ভূয়ো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিশিতাকে ফোন করতে যাবার আগেই মোবাইলটা দু’বার বিপবিপ করে উঠল। এটা তার মোবাইলের এমএমএস টোন। মোবাইল অন করতেই দেখে এমএমএস এসেছে। একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে। সেটা খুলতেই একটা ভিডিও ডাউনলোড হতে শুরু করল। প্রায় তিন মিনিট সময় লাগল ভিডিওটা ডাউনলোড হতে। তারপর ভিডিওটা চালাতেই দেখল, এটা একটু আগে পাওয়া সিডিটারই একটা ছোট্ট ক্লিপ। আবার তার ভুরু কুঁচকে উঠল। তার মন বলছে এই দুটো সিডি একজনই পাঠিয়েছে।
মোবাইল থেকে বুঝবার জো নেই। কিন্তু সিডির খামে আর কুরিয়ারের প্যাকেটে যে দুটো নাম আছে সে দুটো নাম আলাদা আলাদা হলেও সেগুলো যে একজন লোকই পাঠিয়েছে, এ ব্যাপারে এখন সে প্রায় নিশ্চিত। সে মনে মনে ভাবল, যে করেই হোক, সেই লোকটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। যে কোনও প্রকারে।
এমন সময়েই বাঁ হাতে ধরে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তাকিয়ে দেখে প্রাইভেট নাম্বারের কল। মনটাকে শক্ত করে সে কলটা রিসিভ করল। আর সাথে সাথে ও’পাশ থেকে এক পুরুষকন্ঠ বলে উঠল, “সরিরে শুয়োরের বাচ্চা, একটুখানি ভুল হয়ে গেছে। এমএমএসটাই আগে পাঠাবার কথা ছিল। কিন্তু আজকাল নেটওয়ার্কের যে কী হয়েছে কি বলব তোকে। এমএমএসটা পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু প্রায় আধঘণ্টা বাদে মেসেজ এল এমএমএস ডেলিভারি ফেইলড। এখন তুইই বল, এতে কি আমার কোন দোষ আছে? নেটওয়ার্কের দোষেই উল্টোপাল্টা ডেলিভারি হয়ে গেল। যেটা আগে যাবার সেটা পৌছলো পরে, আর যেটা তোর হাতে পরে পৌঁছোবার, সেটাই আগে তোর হাতে গিয়ে পড়ল। কী আর করি বল? তবু তুই একটা বেজন্মা শুয়োরের বাচ্চা হলেও তোকে সরি বলছি। এ ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিস। অবশ্য তোর মত হারামীর কাছে ক্ষমা চাইতে আমার নিজেরই লজ্জা করছে। কিন্তু কি আর করা যাবে। আর তাছাড়া তুই যে তোর ওই মোবাইলটা তোর অফিসেই ফেলে এসেছিস তা তো আমার জানা ছিল না। তোর এ নম্বরটা খুঁজে পেতে একটু সময় লাগল। তাই তো দেরী হয়ে গেল এমএমএসটা পাঠাতে। আচ্ছা সে যাই হোক, শোন একটা কথা সকালে তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেটা বলে দিচ্ছি। সকালের সিডিটার ফুল ভার্সনটা আগামি সতের তারিখ সকাল ঠিক এগারোটায় নেটে আপলোড করা হবে। আর এখন যে সিডিটা পেলি, এটার ফুল ভার্সন সফট কপি নেটে আপলোড করা হবে সতেরো তারিখ বিকেল পাঁচটায়। আর শুধু নেটে আপলোড করাই নয়, এগুলো তোর চেনা পরিচিত অনেক রথী মহারথীদের ইমেইলেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে ই মেইলে ভিডিওগুলোর ফুল ভার্সনটা কাউকেই দেব না। তাতে আমার ব্যবসার ক্ষতি হবে। শুধু ট্রেলার পাঠাব। এই তোর মোবাইলে যেমন করে দুটো ক্লিপ পাঠালাম, সেভাবেই। কারন ট্রেলার দেখেই তো তারা পুরো ছবি দেখতে চাইবে, তাই না”? বলার সাথে সাথে ফোনটা কেটে গেল।
বিমল একটা কথাও বলবার সুযোগ পেল না। ফোন কেটে যাবার সাথে সাথেই সে ওই প্রাইভেট নাম্বারেই কলব্যাক করল। একবার, দু’বার, তিনবার। কোনও ফল হল না। প্রতিবারেই শোনাল “ডায়ালড নাম্বার ডাজ নট এক্সিস্ট”। অমন অভদ্র ভাষায় লোকটা আবার তাকে তুই তোকারি, গালিগালাজ দিয়ে ফোন করাতে, রাগে বিমলের সারাটা শরীর কাঁপতে লাগল। তার ফর্সা চোখ মুখ রাগের চোটে লাল হয়ে উঠল। সে সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে হুকুম দিল, “এই এখন অফিসে নয়। সোজা দক্ষিনেশ্বর চল”।
পরবর্তী ট্র্যাফিক সিগন্যালে গিয়েই গাড়ি আগের নির্ধারিত দিশা ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে গেল। কিন্তু বিমলের মন বলছে বড়সড় একটা ঝড় প্রচন্ড বেগে তার দিকে ধেয়ে আসছে।
______________________________
বিমল একটু খিঁচিয়ে উঠেই জবাব দিল, “আহা, কেন অযথা সময় নষ্ট করছ তুমি। আমিও জানিনা কে এই এস এম খান। প্যাকেটটা খুলে দেখো। তাহলেই হয়ত বুঝতে পারব আমরা”।
নিশিতা বুঝতে পারল, আজ তার বসের মুড অফ। নইলে অন্যদিন অফিসে এসে নিজের চেম্বারে বসে কফি খায় না সে। লাগোয়া রেস্টরুমে ঢুকে নিশিতাকে তার কোলে বসিয়ে নিশিতার সারাটা শরীর নিয়ে খেলতে খেলতে কফি খায় সে। আর কথা না বলে নিশিতা প্যাকেটটা খুলে দেখে ভেতরে একটা সিডি ছাড়া আর কিছু নেই। সিডিটা বের করে বিমলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “স্যার এতে শুধু একটা সিডি আছে। কোন চিঠি ফিটি নেই, আর কিচ্ছু নেই”।
বিমল একটু বিরক্ত হয়েই বলল, “ঠিক আছে, সিডিটা চালিয়ে দাও দেখছি। আর তুমি গাড়ি রেডি করতে বলেছ”?
নিশিতা সিডিটা ল্যাপটপের ডিভিডি ড্রাইভে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “হ্যাঁ স্যার, গাড়ি তৈরী রাখতে বলে দিয়েছি”।
সিডিটা চলতে শুরু করতেই ল্যাপটপের পর্দায় নিশিতার ছবি ফুটে উঠল। একটা ভিডিও চলছে, তাতে নিশিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি বানাচ্ছে। নিশিতা সেটা দেখেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এ কি স্যার? আপনি আমাদের রেস্টরুমের ঘটণাগুলোর সিডি বানিয়েছেন নাকি? এটা কিন্তু মোটেও ঠিক করেননি স্যার। আমি তো আপনাকে বার বার অনুরোধ করেছি ওসবের সিডি না বানাতে। আপনি তবু ......”
বিমল ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই নিশিতাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে চাপা কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল, “শাট আপ। মুখ সামলে রাখো নিশি। আর শিগগীর চেম্বারের দড়জাটা লক করে দাও। যাও কুইক”।
নিশিতা এবার কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই ছুটে গিয়ে চেম্বারের দড়জা ভেতর থেকে লক করে দিল। তারপর প্রায় ছুটে এসে বিমলের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, এটা কিন্তু সত্যিই একদম ঠিক করেন নি। আমার স্বামীর হাতে এমন সিডি পড়লে আমার কী অবস্থা হবে ভাবুন তো একবার”।
বিমল আবার তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে ল্যাপটপে অনেকখানি প্লে ফরোয়ার্ড করে সিডিটাকে আবার প্লে করল। এবার দেখা গেল নিশিতার শরীরের ওপরের অংশ একেবারে খোলা। সে বিমলের কোলে বসে আছে। আর বিমল নিশিতার দু’বগলের তলা দিয়ে হাত গলিয়ে দিয়ে তার বুকের মাংসপিন্ড দুটোকে খুব আয়েশ করে চটকাচ্ছে। বিমল আর নিশিতা দু’জনেই হাঁ করে ল্যাপটপের দিকে চেয়ে। বিমল আবার প্লে ফরোয়ার্ড করে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার প্লে করল। এবার দেখা গেল রেস্টরুমের ছোট্ট বিছানায় নিশিতা সম্পূর্ণভাবে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে, আর তার ওপর পুরো উলঙ্গ শরীরে একজন বয়স্ক লোক চেপে শুয়ে নিজের কোমড় ওঠানামা করে যাচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তীব্র সম্ভোগ চলছে। খানিক বাদেই সে লোকটার মুখও স্পষ্ট দেখা গেল। এ যে বিমল নিজেই। বিমল সাথে সাথে ল্যাপটপটা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিশিতা আবার কিছু একটা বলবার জন্য নিজের মুখ খুলতেই বিমল সপাটে তার গালে একটা জোরদার থাপ্পর কষিয়ে দিয়ে হিংস্র মুখে বলে উঠল, “শালী হারামজাদি, তোর এতবড় সাহস? তোকে চুদি বলে তো তুই যত চাস তাই তোকে দিই আমি। নইলে তোর মত একটা বেশ্যা মাগীকে তো দু’হাজার দিলেই সারা রাত ভর চোদা যায়। দশ হাজার করে নিয়েও তোর পেট ভরছে না? শালী, এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করবি বলে ভেবেছিস তুই? তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেব আমি। তুই কি ভেবেছিস? আমি কিছু বুঝতে পারব না”? বলে নিশিতার অপর গালে আরেকটা থাপ্পর কষাল।
নিশিতার দু’গালে বিমলের আঙুলের দাগ পড়ে গেছে। তার দু’চোখ ফেটে জলের ধারা বইতে শুরু করেছে। নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে কোনরকমে সে বলল, “এ কী বলছেন স্যার? আপনি ভাবছেন আমি এ’সব করেছি? না স্যার, একদম না। আমি সত্যি বলছি স্যার, এ’সব ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমি তো ভেবেছি আপনিই হয়তো এগুলো রেকর্ড করেছেন”।
বিমল এবার খানিকটা থমকে গিয়ে বলল, “তুই করিসনি এ’সব? সত্যি বলছিস? কিন্তু আমার তো মনে হয় একথোকে বেশী টাকা নেবার জন্যেই তুই এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করবার চেষ্টা করছিস”।
নিশিতা আবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বলে উঠল, “না স্যার, আপনি বিশ্বাস করুন। আমি এ’সবের কিচ্ছু জানি না। আর আমি কেন আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে যাব বলুন তো? আমি আপনার কর্মচারী। আপনি আমায় মাসে মাসে বেতন দিচ্ছেন। আর আপনার সাথে এ’সব করি বলে আপনি আমাকে অনেক বাড়তি টাকাও দেন। সে’সব পেয়েই আমি খুশী। তাহলে কেন আমি এ’সব করতে যাব? আমি তো আপনার এখানে এভাবে কাজ করেই সুখে আছি”।
বিমল এবার নিজেকে কিছুটা সংযত করবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “তুমি সত্যি বলছ? এ’সবে তোমার কোন হাত নেই”?
নিশিতা অসহায়ের মত বলল, “না স্যার একেবারেই না। আমি এ’সবের বিন্দু বিসর্গও কিছু জানিনা। সত্যি বলছি আমি। আর আপনি ভাবুন তো, নিজের এমন ভিডিও করে আমি কি অন্য কাউকে দেখাতে পারব? এ তো নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা হবে। আর তাছাড়া এই এস এম খান কে? এ নামে তো কাউকে আমি চিনিও না। এমন একটা সিডি তার কাছে গেলই বা কি করে”?
বিমল অনেকক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে নিশিতাকে দেখতে দেখতে বলল, “এ চেম্বারে আমি ছাড়া একমাত্র তুমিই যখন তখন ঢুকতে পারো। এ ভিডিওটা তো এই রেস্টরুমেই রেকর্ড করা হয়েছে। আর তুমি বলছ, তুমি কিছু জান না”?
নিশিতা কাকুতি ভরা গলায় বলল, “আপনি বিশ্বাস করুন স্যার। আমি সত্যিই এ’সবের কিচ্ছু জানিনা। আপনি ভাবছেন এই ভিডিও রেকর্ডিং আমি করেছি? কিন্তু স্যার, আমিই শুধু ওই রুমে ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারি, এটাই বা কেন ভাবছেন আপনি? আমি ছাড়াও আরও কত মেয়েকে নিয়েও তো আপনি এ রুমে সময় কাটান মাঝে মাঝে। তারাও তো কেউ এ কাজ করতে পারে। তাছাড়া আমি তো আপনার এখানে আট বছর ধরে কাজ করছি স্যার। আমি কি জানিনা, আপনার সঙ্গে শত্রুতা করলে তার পরিণতি কী হয়? সব জেনে বুঝেও এমন কিছু করে আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে আমি নিজের জীবনটাকেই বিপন্ন করে তুলব, এ আপনি সত্যিই মন থেকে বিশ্বাস করেন স্যার? আর এমন একটা ভিডিও যদি কোনভাবে আমার স্বামীর কাছে চলে যায়, তাহলে আমাদের সংসার কি আর টিকবে? আমার স্বামী হয়তো আমাকে খুনই করে ফেলবে। আমি নিজেই কি অতটাই বোকা? তবু বলছি, যদি সেটাই আপনি বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে আমাকে আপনি যা শাস্তি চান দিতে পারেন। কিন্তু তবু আমি বলব, এই ভিডিওর ব্যাপারে আমি কিচ্ছু জানিনা”।
বিমল নিশিতার কথা শুনে আর নিশিতার ভীত সন্ত্রস্ত ভাব দেখে বুঝতে পারল এ ব্যাপারে সত্যিই হয়ত তার কোন হাত নেই। আর বিমল নিজেও জানে তার চোখের সামনে থেকে নিশিতা তাকে কিছুতেই ছুড়ি মারতে পারবে না। আর পেছন থেকে মারবার চেষ্টা করলেও তা পারবে না। নিজের চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল, তাহলে এমন একটা কাজ করল কে? আর কি করেই বা করল? তার অফিসের চেম্বারে না ঢুকে কেউ ওই রেস্টরুমে ঢুকতে পারবে না। আর তার চেম্বারের চাবি শুধু মাত্র নিশিতার কাছেই থাকে। আর সে আর নিশিতা যখন একসাথে কোথাও বের হয় তখন এ চেম্বার লক করে যাওয়া হয়। তাহলে বাইরের কে কিভাবে ওই রেস্টরুমে ভিডিও ক্যামেরা সেট করতে পারে? হ্যাঁ, নিশিতা ছাড়াও তার অফিসের আরও বেশ কয়েকজন মেয়ে বা মহিলাকে নিয়ে সে এ রেস্টরুমে ঢুকে তাদের শরীরের মধু খেয়েছে, এ’কথা ঠিক। কিন্তু তারা যতক্ষণ এ রুমে থাকে ততক্ষণ বিমল নিজেও এ ঘরেই থাকে। তাই তাদের কারো পক্ষেই বিমলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এ ঘরে ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয় একেবারেই। তাহলে কাজটা কে কখন কিভাবে করল? আর এই এস এম খান লোকটাই বা কে? অফিসে আসবার পথে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে তার মোবাইলে একটা কল এসেছিল। তার আগে একটা এমএমএস এসেছিল তার মোবাইলে। তখনও সে ভিডিও এমএমএসটা দেখেনি। লোকটা ফোনে বলছিল ‘একটা সুন্দর ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছি তোর এই নাম্বারে। খুবই ছোট্ট ক্লিপ। অরিজিনাল ভিডিওটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের। এই ছোট্ট ক্লিপটা আগে দেখে নে, কিছু পরে ফুল ওই পয়তাল্লিশ মিনিটের অরিজিনাল ভিডিওটা দেখবার সুযোগ পাবি’। আর কিছু না বলেই লোকটা ফোন কেটে দিয়েছিল। বিমল তখন ভিডিও এমএমএসটা দেখেছিল। ছোট্ট ক্লিপটাতে তার বা নিশিতার মুখ কোথাও দেখা যায়নি। তাই সে ভেবেছিল ওটা বুঝি সাধারণ কোন পর্নমুভি থেকে বানানো হয়েছিল। কেউ মজা করে পাঠিয়েছে বলেই সে ভেবেছিল। তার মত প্রতিপত্তিশালী একজনকে নিয়ে কেউ মজা করছে, আর ফোনে সেই লোকটা তাকে তুই তোকারি করেছে, এটা ভেবেই তার মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন সে খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে যে এটা সাধারণ মজা করবার জন্য কেউ পাঠায়নি। যে-ই এটা করে থাকুক, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় দুরভিসন্ধি আছে তার। এখন এই সিডিটা দেখে মনে হচ্ছে, এই সিডি থেকেই এডিট করে ওই ছোট্ট ক্লিপটা বানানো হয়েছে। কিন্তু এস এম খান নামের এ লোকটাই বা কে? অনেক ভেবেও এমন নামের কাউকে সে মনে করতে পারল না। কিন্তু তার রেস্টরুমে সত্যিই কি কোন ভিডিও ক্যামেরা লুকিয়ে ফিট করা হয়েছে? কথাটা মনে হতেই সে চেয়ার ছেড়ে উঠে ছুটে রেস্টরুমে গিয়ে ঢুকল। তার পেছন পেছন নিশিতাও রেস্টরুমে এসে ঢুকল। বিমল রেস্টরুমের চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। নাহ। কোথাও কোন ক্যামেরা লাগানো আছে বলে মনে হচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও সন্দেহজনক কিছুই তার চোখে পড়ল না। অসহায়ের মত নিশিতার মুখের দিকে চেয়ে সে বলল, “বুঝতে পারছি না নিশি। এ’ঘরে এটা কি করে রেকর্ড করা হয়েছে। কোথাও তো কোন ক্যামেরা নেই”।
নিশিতা এবার ভীত স্বরে বলল, “কি হবে স্যার? ভিডিওটা আমার স্বামীর হাতে গেলে বা আমার স্বামী যদি কোনও ভাবে জানতে পারে যে আমার সাথে আপনার এমন একটা সম্পর্ক আছে, তাহলে তো এক কথায় আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে”।
বিমল হাত তুলে নিশিতাকে থামতে বলে বলল, “কে কী উদ্দেশ্য নিয়ে এ’সব করছে, সেটা আগে জানা উচিৎ। তবে তুমি ভেবো না নিশি। আমার মনে হয় না কেউ তোমাকে বিপদে ফেলবে বলে এসব করছে। যে এসব করছে সে আমাকে টার্গেট করেই এ’ খেলায় নেমেছে। কিন্তু ও জানে না ও ভীমরুলের চাকে ঘা দিয়ে ফেলেছে। বিমল আগরওয়ালাকে ও আন্ডার এস্টিমেট করে ফেলেছে। আর তার ফল ও নিশ্চিত ভাবেই পাবে” বলে নিশিতার হাত ধরে চেম্বারে ফিরে আসতে আসতে বলল, “তোমার গায়ে ওভাবে হাত তোলা আমার উচিৎ হয়নি। আর ওভাবে গালিগালাজ করাও ঠিক হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ওই কথা মনে হতেই তোমার ওপরই আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই ওভাবে রিয়েক্ট করে ফেলেছি। প্লীজ, ডোন্ট মাইন্ড। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এই এস এম খান লোকটা কে, তাকে আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে নিশি। আর আমি যখন আজ অফিসে আসছিলাম তখন একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে এই ভিডিওটার একটা ছোট্ট ক্লিপ আমার মোবাইলে কেউ পাঠিয়েছিল। একজন সাইবার এক্সপার্টকে কন্টাক্ট করো। যাতে ওই প্রাইভেট নাম্বারের ফোনটার লোকেশান খুঁজে বের করা যায়”।
নিশিতা বলল, “হ্যাঁ স্যার, সে চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনার তো দমদম যাবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে স্যার। গাড়ি তো রেডি আছে”।
বিমল নিজের চেয়ারের কাছে এসে তার কোটটা গায়ে পড়তে পড়তে বলল, “ওকে আমি যাচ্ছি, তুমি বরং চেম্বারেই থাকো। আর ওই এস এম খান আর ওই প্রাইভেট নাম্বারের ফোনটা লোকেট করবার চেষ্টা করো। আমি আমার ওই মোবাইলটাও রেখে যাচ্ছি। আর ঘাবড়িও না। অফিসের কাউকে আর কিছু জানিও না। তুমি শুধু ওই কাজ দুটো করো। তারপর বাকিটা আমি সামলে নেব। ডোন্ট ওরি। আর নিজের মনটাকে শান্ত রেখো। আর আমার অমন ব্যবহারের জন্য প্লীজ ক্ষমা করে দিও” বলে নিশিতার গালে আর ঠোঁটে চুমু খেয়ে ওর উঁচু বুকদুটোকে সামান্য টিপে দিয়ে “আমি আসছি” বলে নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা আর অন্য মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল।
বিমল বেরিয়ে যাবার পর নিশিতা বিমলের দলের খুব ঘণিষ্ঠ কয়েকজনকে ফোন করে এস এম খানকে খোঁজার কথা বলল। আর দু’জন সাইবার এক্সপার্টকে ডেকে পাঠাল তাদের অফিসে।
*******************
বেলেঘাটার একটা প্রজেক্টের কাজ দেখে বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ সেখান থেকে বিমল তার অফিসের দিকে রওনা হল। মনটা বিক্ষিপ্ত বলে কাজে তেমন মন দিতে পারছেনা আজ সে। তবু পুর্ব নির্ধারিত কাজগুলো তাকে করতেই হচ্ছে। বেলেঘাটা প্রজেক্টের কাজ শেষ করে নিজের গাড়িতে ফিরে এসে পেছনের সীটে বসতেই ড্রাইভার একটা হলুদ রঙের খাম তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা নিন, স্যার”।
বিমল খামটা দেখে জিজ্ঞেস করল, “কী এটা? আর কে দিল তোমাকে”?
ড্রাইভার একটু অবাক হয়ে বলল, “সে কি স্যার? এটা আপনিই তো পাঠিয়েছেন আমার কাছে”?
এবার বিমল অবাক হয়ে বলল, “আমি পাঠিয়েছি মানে? কে দিয়ে গেল তোমাকে এটা”?
ড্রাইভারও একই সমান বিস্ময়ের সাথে বলল, “স্যার কিছুক্ষণ আগে এই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকেই একজন লেবার টাইপের লোক এসে এটা আমার হাতে দিয়ে বলল যে আপনি তাকে ওটা আমার হাতে দিতে বলেছেন। আর ভাল করে রাখতে বলেছেন। খুব দরকারী জিনিস নাকি আছে ওতে। তাই তো আমি হাত পেতে সেটা নিয়েছি। আর দরকারী জিনিস আছে ভেবে আমিও আর গাড়ি থেকে নামিনি। ড্রাইভিং সীটেই বসে আছি তখন থেকে”।
বিমল হাত বাড়িয়ে খামটা হাতে নিতেই তার মন বলে উঠল, এর ভেতরেও আবার কোন সিডি এসেছে নিশ্চয়ই। খামটার সাইজ দেখে, আর ওপর থেকে টিপেটুপে তেমনটাই মনে হচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে রাখতে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে সে খামটা খুলল। তার ভাবনাকে সত্যি করেই খামের ভেতর থেকে একটা সিডি বেরিয়ে এল। বিমল মনে মনে একটু শঙ্কিত হল, না জানি এবার আবার কিসের ভিডিও পাঠিয়েছে।
গাড়ি তখন চেনা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলছে। বিমল আর মনের অস্থিরতা চেপে রাখতে না পেরে তার ব্যাগের ভেতর থেকে ল্যাপটপটা বের করে সিডিটা প্লে করল। এবার তার চক্ষু ছানাবড়া হবার যোগার। চোখ বিস্ফারিত করে দেখতে পেল ওই সিডিতেও একটা ভিডিও আছে। আর সেই ভিডিওতে বিমল আর একজন বছর ত্রিশের সুন্দরী মহিলা। বিমল অনেক ভেবেও মনে করতে পারল না মহিলার নামটা কি ছিল। তবে এই মহিলাকে অল্প কয়েকদিন আগেই বিমল তার বাগান বাড়িতে মানে দক্ষিণেশ্বরের ফার্ম হাউসে নিয়ে গিয়েছিল। সারাটা রাত ধরে ওই মহিলা তাকে খুব সুখ দিয়েছিল। তাকে দেবার কথা ছিল কুড়ি হাজার টাকা। কিন্তু তার সার্ভিসে বিমল খুশী হয়ে তাকে আরও দশ হাজার টাকা বখশিস দিয়েছিল। বিমলের ইচ্ছে ছিল এ সপ্তাহের শেষের দিকেই সে আরেকবার ওই মহিলাকে ভোগ করবে। কিন্তু এবার তার আর বিষ্ময়ের সীমা রইল না। সকালের সিডিটা দেখে তার প্রথমেই মনে হয়েছিল রেস্টরুমের ওই ঘটণাটা হয়ত নিশিতাই রেকর্ড করেছিল তাকে ব্ল্যাকমেল করবার জন্য। কিন্তু ওই ফার্ম হাউসে ভিডিও রেকর্ডিং করা নিশিতার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। দক্ষিনেশ্বরে যে তাদের একটা ফার্ম হাউস আছে, এ’কথা জানলেও, নিশিতা কোনদিন সে ফার্ম হাউসে যায়নি। বিমল তাকে কখনও সেখানে নিয়ে যায়নি, বা বলা ভাল, নিয়ে যেতে পারেনি। কারন নিশিতার পক্ষে তার স্বামীকে বাড়িতে রেখে সারা রাত বিমলের সাথে অফিসে, ফার্ম হাউসে বা বাইরে কোথাও কাটানো সম্ভব হয় না। আর ওর স্বামীও এমন একটা কাজ করে যাতে তাকে কখনোই শহরের বাইরে যাবার দরকার পড়ে না। আর একটা রাতও সে তার বৌকে ছেড়ে থাকতে পারে না। তাই অনেকবার বিমল চাইলেও নিশিতা তার ফার্ম হাউসে যায়নি। আর বিমলের অনুপস্থিতিতে ওই ফার্ম হাউসে অন্য কারো পক্ষে ঢোকাই সম্ভব নয়। সেখানকার সিকিউরিটির লোকজনদের তেমন নির্দেশই দেওয়া আছে। তাই নিশিতা কিছুতেই সেখানে যেতে পারে না। এ কাজের পেছনে অন্য কারো হাত আছে। কিন্তু কে? সেটা তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। বড় কোনও বিপদ ঘটার আগে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করে ফেলা খুবই দরকার।
কি মনে হতেই খামটাকে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতেই এক কোনায় ছোট্ট করে বি এস মন্ডল লেখা দেখতে পেল। সকালের সিডিটায় লেখা ছিল এস এম খান। আর এবারে বি এস মন্ডল। এখন সে কাকে ছেড়ে কাকে ধরবার চেষ্টা করবে। তবে কেন যেন তার মনে হচ্ছে ওই দুটো নামই ভূয়ো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিশিতাকে ফোন করতে যাবার আগেই মোবাইলটা দু’বার বিপবিপ করে উঠল। এটা তার মোবাইলের এমএমএস টোন। মোবাইল অন করতেই দেখে এমএমএস এসেছে। একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে। সেটা খুলতেই একটা ভিডিও ডাউনলোড হতে শুরু করল। প্রায় তিন মিনিট সময় লাগল ভিডিওটা ডাউনলোড হতে। তারপর ভিডিওটা চালাতেই দেখল, এটা একটু আগে পাওয়া সিডিটারই একটা ছোট্ট ক্লিপ। আবার তার ভুরু কুঁচকে উঠল। তার মন বলছে এই দুটো সিডি একজনই পাঠিয়েছে।
মোবাইল থেকে বুঝবার জো নেই। কিন্তু সিডির খামে আর কুরিয়ারের প্যাকেটে যে দুটো নাম আছে সে দুটো নাম আলাদা আলাদা হলেও সেগুলো যে একজন লোকই পাঠিয়েছে, এ ব্যাপারে এখন সে প্রায় নিশ্চিত। সে মনে মনে ভাবল, যে করেই হোক, সেই লোকটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। যে কোনও প্রকারে।
এমন সময়েই বাঁ হাতে ধরে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তাকিয়ে দেখে প্রাইভেট নাম্বারের কল। মনটাকে শক্ত করে সে কলটা রিসিভ করল। আর সাথে সাথে ও’পাশ থেকে এক পুরুষকন্ঠ বলে উঠল, “সরিরে শুয়োরের বাচ্চা, একটুখানি ভুল হয়ে গেছে। এমএমএসটাই আগে পাঠাবার কথা ছিল। কিন্তু আজকাল নেটওয়ার্কের যে কী হয়েছে কি বলব তোকে। এমএমএসটা পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু প্রায় আধঘণ্টা বাদে মেসেজ এল এমএমএস ডেলিভারি ফেইলড। এখন তুইই বল, এতে কি আমার কোন দোষ আছে? নেটওয়ার্কের দোষেই উল্টোপাল্টা ডেলিভারি হয়ে গেল। যেটা আগে যাবার সেটা পৌছলো পরে, আর যেটা তোর হাতে পরে পৌঁছোবার, সেটাই আগে তোর হাতে গিয়ে পড়ল। কী আর করি বল? তবু তুই একটা বেজন্মা শুয়োরের বাচ্চা হলেও তোকে সরি বলছি। এ ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিস। অবশ্য তোর মত হারামীর কাছে ক্ষমা চাইতে আমার নিজেরই লজ্জা করছে। কিন্তু কি আর করা যাবে। আর তাছাড়া তুই যে তোর ওই মোবাইলটা তোর অফিসেই ফেলে এসেছিস তা তো আমার জানা ছিল না। তোর এ নম্বরটা খুঁজে পেতে একটু সময় লাগল। তাই তো দেরী হয়ে গেল এমএমএসটা পাঠাতে। আচ্ছা সে যাই হোক, শোন একটা কথা সকালে তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেটা বলে দিচ্ছি। সকালের সিডিটার ফুল ভার্সনটা আগামি সতের তারিখ সকাল ঠিক এগারোটায় নেটে আপলোড করা হবে। আর এখন যে সিডিটা পেলি, এটার ফুল ভার্সন সফট কপি নেটে আপলোড করা হবে সতেরো তারিখ বিকেল পাঁচটায়। আর শুধু নেটে আপলোড করাই নয়, এগুলো তোর চেনা পরিচিত অনেক রথী মহারথীদের ইমেইলেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে ই মেইলে ভিডিওগুলোর ফুল ভার্সনটা কাউকেই দেব না। তাতে আমার ব্যবসার ক্ষতি হবে। শুধু ট্রেলার পাঠাব। এই তোর মোবাইলে যেমন করে দুটো ক্লিপ পাঠালাম, সেভাবেই। কারন ট্রেলার দেখেই তো তারা পুরো ছবি দেখতে চাইবে, তাই না”? বলার সাথে সাথে ফোনটা কেটে গেল।
বিমল একটা কথাও বলবার সুযোগ পেল না। ফোন কেটে যাবার সাথে সাথেই সে ওই প্রাইভেট নাম্বারেই কলব্যাক করল। একবার, দু’বার, তিনবার। কোনও ফল হল না। প্রতিবারেই শোনাল “ডায়ালড নাম্বার ডাজ নট এক্সিস্ট”। অমন অভদ্র ভাষায় লোকটা আবার তাকে তুই তোকারি, গালিগালাজ দিয়ে ফোন করাতে, রাগে বিমলের সারাটা শরীর কাঁপতে লাগল। তার ফর্সা চোখ মুখ রাগের চোটে লাল হয়ে উঠল। সে সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে হুকুম দিল, “এই এখন অফিসে নয়। সোজা দক্ষিনেশ্বর চল”।
পরবর্তী ট্র্যাফিক সিগন্যালে গিয়েই গাড়ি আগের নির্ধারিত দিশা ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে গেল। কিন্তু বিমলের মন বলছে বড়সড় একটা ঝড় প্রচন্ড বেগে তার দিকে ধেয়ে আসছে।
______________________________