Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 189)

সেদিন সন্ধ্যের দিকে শহরের এক জায়গায় কিছু গণ্ডগোল হবার দরুন সীমিন্তিনীর বাড়ি ফিরতে বেশ দেরী হল। রাত প্রায় দশটা নাগাদ সে বাড়ি ফিরে আসবার পর নবনীতা, অর্চনা আর লক্ষ্মীকে জানাল যে আজ কালচিনি থেকে সকলের আসবার কথা থাকলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ বলে কেউ আসতে পারল না। সে’কথা শুনে সকলেরই মন খারাপ হয়ে গেল।
 

রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার ঘরে শুতে যাবার পর সীমন্তিনী নিজের ঘরের দড়জা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে মহিমাকে ফোন করল। মহিমা ফোন ধরেই বলল, “কাল ওভাবে কথা বলতে বলতেই লাইন কেটে দিয়েছি বলে তুমি বুঝি আমার ওপর রেগে গেছ, তাই না মন্তি”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “না না বৌদি, একদম তা নয়। আমি বুঝতে পেরেছিলুম যে তুমি কতটা ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলে কাল। আচ্ছা সে’কথা ছাড়ো। এবার বলো তো দেখি, তুমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাল করে ভেবেছ? কী মনে হচ্ছে তোমার? অমন কিছু করতে রাজী আছ তুমি”?

মহিমা জবাব দিল, “অনেকবার ভেবেছি মন্তি। গত চব্বিশ ঘন্টায় শুধু তোমার বলা কথাগুলোই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ অন্য কোনও কাজে মনই লাগাতে পারছি না আমি। তোমার পরামর্শটা আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু অমন একটা মার্কেট কমপ্লেক্স বানাতে যে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হবে গো। আমি একা তো সামাল দিতে পারবোনা মন্তি”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বৌদি, কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তুমি চাইলে সেটা করতেই পারবে। তবে আমি হয়ত এতদুরে থেকেও তোমাকে এ ব্যাপারে আরও খানিকটা সাহায্য করতে পারব। তবে সে’কথায় পরে আসছি। তার আগে তুমি আমাকে একটা কথা বলো। তুমি তোমার মেয়েদের সাথে এ ব্যাপারে কিছু আলাপ করেছো? ওরা সকলে কি তোমার অমন পরামর্শ মেনে নিতে রাজী আছে”?

মহিমা জবাব দিল, “আজ প্রায় কুড়ি জনের সাথে আমার কথা হয়েছে এ ব্যাপারে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে একটু মুষড়ে পড়েছিল, যখন আমি এ ব্যবসা বন্ধ করে দেবার কথা বলেছি। তারপর ওদের যখন বোঝালাম যে ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও নতুন ব্যবসা শুরু করবার আগে পর্যন্ত ওদের সংসার চালানোর জন্যে প্রতি মাসে আমি তাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেব, তখন সবাই রাজী হয়েছে। নিজেদের শরীর আর অন্যের কাছে বিলিয়ে দিতে হবে না, আর এক বছরের মধ্যেই তারা নিজেরা ভদ্র সমাজে একটা ব্যবসা করে নিজেদেরকে সৎপথে রেখেই সংসার চালাতে পারবে, আর সেই ব্যবসার মূলধনও আমিই তাদের দেব, আর সেটা তারা আমার তরফ থেকে উপহার স্বরূপ পাবে, এ’সমস্ত কথা শুনে তো আনন্দে প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল। বারবার আমাকে তারা ধন্যবাদ দিচ্ছিল”।

সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হয়ে বলল, “আর যাদের সাথে তুমি এখনও কথা বলতে পারোনি, তারাও কি রাজী হবে বলে মনে হয় তোমার”?

মহিমা বলল, “আমি তো তাদের সকলকে খুব ভালমত চিনি মন্তি। ওরাও সব্বাই রাজী হবে বলেই আমার ধারণা। তবে আমার সবচেয়ে বেশী চিন্তা ছিল বীথিকাকে নিয়ে। কারণ ওর আর্থিক সমস্যাটাই অন্য সকলের চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু ওকে সবটা বুঝিয়ে বলার পরেও ও ঠিক রাজী হতে পারছিল না। আসলে ও ভাবছিল যে ব্যবসা শুরু করবার পরে মাসে মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা উপার্জন করা তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এখনও ওর সমস্ত টাকার চাহিদা তো আমিই মেটাই। ও রোজ রোজ কাস্টমার নিয়েও তো সে চাহিদা পূরণ করতে পারে না। কিন্তু আমি ওকে যখন কথা দিলাম যে যতদিন প্রয়োজন ওর বাবা আর ভাইয়ের পুরো চিকিৎসার খরচ আমি বহন করব, তখন ও রাজি হয়েছে। অবশ্য ওকে আমি এতদিন ধরে যেভাবে সাহায্য করে এসেছি, আর ভবিষ্যতেও যে এমনটাই করব বলে কথা দিলাম, সে জন্যে কেঁদে কেটে একসা। তবে মন্তি, আমি একটা কথা ভাবছি জানো? আমার মনে হয় বীথিকার জন্য আমাকে কিছু ফান্ড হাতে রাখতেই হবে”।

সীমন্তিনী বলল, “তুমি মেয়েটাকে সত্যি খুব ভালবাস, বুঝতে পেরেছি বৌদি। তা ওর জন্যে আর কি করতে চাও তুমি শুনি”।
 

মহিমা সীমন্তিনীর কথায় একটু আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আমি সত্যি ওকে খুব ভালবাসি মন্তি। তোমাকে তো আগেও বলেছি, ওই মেয়েটাই আমার সবচেয়ে কাছের আর সবচেয়ে বিশ্বস্ত। পরিবারের চাপে পড়ে নিজের জীবনটাই ও বরবাদ করে ফেলেছে। ওর পরিবারে এমন সমস্যা না হলে ও নিশ্চয়ই বিয়ে থা করে এতদিন সুখে স্বামীর ঘর করতে পারত। বীথি আমার যোগা সেন্টারের কাজে আর আমার ওই ব্যবসার কাজে প্রচুর সাহায্য করে। তাই আমি চাই না যে ও কোন বিপদে পড়ুক। আমি তো একসময় পুরো ব্যবসাটাই ওর হাতে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও ঠিক সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি যে আজ যদি আমি ওকে ছেড়ে দিই, তাহলে ওর বাবা আর ভাই তো মরবেই, ওর সামনেও আর শরীর বেচা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকবে না। ওকে ওর ভাইয়ের জন্য এখনও মাসে মাসে তিন লাখ টাকা হাসপাতালেই পেমেন্ট করতে হয়। আর ওর বাবার চিকিৎসার পেছনেও মাসে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকার দরকার পড়ে। রোজ রোজ এক বা একাধিক কাস্টমারকে এন্টারটেইন করতে করতে ওর স্বাস্থ্যও খারাপ হতে শুরু করেছে। তাই ওকে বাড়তি সাহায্য আমাকে করতেই হবে। আর সেজন্যেই আমি ভাবছি যে ওর জন্যে আমাকে বেশ কিছু টাকা আলাদা করে রাখতেই হবে”।

সীমন্তিনী মহিমার মনের ইচ্ছেটা শুনে অভিভূত হয়ে বলল, “মার্কেট কমপ্লেক্সটা তৈরী হয়ে যাবার পরেও তো তোমার হাতে বেশ কিছু টাকা থেকেই যাবে বৌদি। সে টাকা থেকেই না হয় ওকে সাহায্য করো তুমি। তাতে সমস্যা কোথায়”?
 

মহিমা এবার একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “কিন্তু মন্তি, কাজটা শেষ হতে হতে যদি দেখা যায় যে আমার হাতে সত্যিই বেশী কিছু আর রইল না। তখন কী হবে ভাবতে পারছ? আমার কথায় মেয়েটা সৎপথে ফিরে এসে আবার নতুন করে বিপাকে পড়বে তখন। আমি তখন কিকরে ওকে সাহায্য করব”?
 

সীমন্তিনী মহিমাকে অভয় দিয়ে বলল। “বৌদি সেটা নিয়ে তুমি এখনই এত ভেঙে পড়ছ কেন? আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যেমন ভাবছ ওর জন্য না হয় আগে থেকেই তুমি দু’কোটি টাকা আলাদা করে রেখে দাও। পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, ঠিক আছে”?

মহিমা এবার একটু আশ্বস্ত হয়ে বলল, “হ্যাঁ সেটা করলে অন্ততঃ আরও বছর দুয়েক তো আমি বীথিকাকে প্রোটেকশান দিতেই পারব। তবে তুমি যেন কী বলছিলে? দুরে থেকেও তুমি আর কিভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারো বোন”?

সীমন্তিনী তখন মিঃ অধিকারীর মুখে শোনা সাইটটার কথা খুলে বলল মহিমাকে। আর এ’কথাও বলল যে মহিমা চাইলে মিঃ অধিকারীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারে। সব শুনে মহিমাকে খুব উৎসাহিত বলে মনে হল। সে বলল, “মন্তি, তোমার কাছে তার কন্টাক্ট নাম্বার থাকলে এখনই আমাকে সেটা এসএমএস করে পাঠিয়ে দাও। আমি কাল সকালেই তার সাথে কথা বলব”।

সীমন্তিনীও খুশী হয়ে বলল, “ঠিক আছে বৌদি, তোমার সাথে কথা শেষ হলেই আমি তোমাকে তার নাম্বার এসএমএস করে দিচ্ছি। কিন্তু বৌদি, তুমি তোমার ওই ব্যবসা কবে বন্ধ করছ তাহলে”?

মহিমা আগের মতই খুশীর গলায় বলল, “আমি আমার সমস্ত ক্লায়েন্ট আর গ্রুপের সমস্ত ছেলেমেয়েকে জানিয়ে দিয়েছি যে আর এক সপ্তাহ পরে, মানে এ মাসের ঊণিশ তারিখ থেকে আমি পুরোপুরি ভাবে এ কাজ ছেড়ে দিচ্ছি। তারপর থেকে আমি শুধু আমার যোগা সেন্টার নিয়েই থাকব”।
 

মহিমার সাথে কথা শেষ হবার পর সীমন্তিনী মিঃ অধিকারীর ফোন নাম্বারটা মহিমাকে এসএমএস করে দিল। বিছানায় শুয়ে তার নিজেকে খুব হাল্কা মনে হচ্ছিল। তার এমন বিরাট একটা প্রয়াস সফল হতে চলেছে। একজন দু’জন নয়, একসাথে প্রায় পঞ্চাশ জন মহিলাকে সে অপরাধের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনতে পারছে ভেবে ভেতরে ভেতরে তার প্রচণ্ড উত্তেজনা হচ্ছিল। কিন্তু সাথে সাথেই তার মাথায় আরেকটা চিন্তা এল। সে নিজে যে একজন পুলিশ অফিসার এ’কথা মহিমা এখনও জানেন না। কিন্তু সে তো মিঃ অধিকারীর নাম্বার মহিমাকে এসএমএস করে দিল। এখন মহিমা যদি এখনই মিঃ আধিকারীর সাথে ওই ব্যাপারে কথা বলে, তাহলে কথায় কথায় সে সীমন্তিনীর আসল পরিচয়টা জেনে যাবে। ইশ, বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এখনই মিঃ অধিকারীকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু এত রাতে তাকে ফোন করাটা কি সমীচিন হবে? আবার মহিমা বৌদিকেও যতটা এক্সাইটেড মনে হল, তাতে তিনি হয়ত এখনই মিঃ অধিকারীর সাথে কথা বলবে। তাহলেই তো নিজেকে আর মহিমার কাছে গোপন রাখা সম্ভব হবে না।

তাই মন থেকে সব দ্বিধা সংশয় ঝেড়ে ফেলে সীমন্তিনী মিঃ অধিকারীর নাম্বার ডায়াল করল। দু’তিনবার রিং হবার পর সাড়া পাওয়া গেল। আর মহিমা প্রায় সাথে সাথেই অনুতপ্ত সুরে বলল, “সরি মিঃ অধিকারী, এমন অসময়ে ফোন করেছি বলে প্লীজ কিছু মনে করবেন না। আসলে ভীষণ জরুরী একটা কথা এখনই আপনাকে জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাই ভদ্রতাবোধের সীমা পার করে এখনই ফোনটা করতে বাধ্য হলাম”।

ও’পাশ থেকে মিঃ অধিকারী বেশ বিস্মিত গলায় জবাব দিলেন, “ম্যাম, আপনি এমন করে বলছেন কেন? আপনি ফোন করেছেন বলে আমি একদম বিরক্ত হইনি। আর রাত বারোটার আগে কোনদিনই ঘুমোই না। তাই অযথা বিব্রত না হয়ে কোন জরুরী কথা আমাকে জানাতে চান, সেটা নিশ্চিন্তে বলে ফেলুন”।

সীমন্তিনী এবার একটু হাঁফ ছেড়ে অনেকটা স্বস্তির সাথে বলল, “আসলে মিঃ অধিকারী, আমার কলকাতার ওই বান্ধবীর সাথে একটু আগেই আমার কথা হল। আর আপনার বলা জমিটার কথা জানাতেই সে ভীষন এক্সাইটেড হয়ে পড়েছে। সে আপনার সাথে সরাসরি এ ব্যাপারে কথা বলতে চায়। তাই আপনার অনুমতি না নিয়েই আমি তাকে আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা জানিয়ে দিয়েছি। আপনি প্লীজ আমার ওপর মনঃক্ষুণ্ণ হবেন না এ ব্যাপারে”।

মিঃ অধিকারীও এবার হাল্কা গলায় বললেন, “এ আর এমন কি ব্যাপার ম্যাম? এতে আমি কিচ্ছু মনে করছি না। আপনি সেটা ভেবে মিছেই বিব্রত হবেন না”।

সীমন্তিনী এবার বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ অধিকারী। কিন্তু আমি যে কারনে বিব্রত হয়েছি সে ব্যাপারটা একটু আলাদা। আর মূলতঃ সে’কথাটা বলবার জন্যেই আপনাকে ফোনটা করলুম এই অসময়ে”।

মিঃ অধিকারী বললেন, “আপনি নির্দ্বিধায় আপনার কথা বলতে পারেন। আপনার যতটা সময়ের দরকার সেটা দিতে আমার পক্ষ থেকে কোনও অসুবিধে নেই। আপনি বলুন”।

সীমন্তিনী একটু আমতা আমতা করে বলল, “মিঃ অধিকারী, কথাটা যে কিভাবে শুরু করব তা ঠিক মাথায় আসছে না। আসলে আমরা যে প্রফেশানে আছি তাতে অনেক সময় অনেকের কাছে আমাদের নিজেদের আইডেন্টিটি লুকিয়ে রাখতে হয়। আপনাকে আমি আগে বলেছিলাম যে কলকাতার ওই মহিলা আমার এক বান্ধবী। সেটা পুরোপুরি মিথ্যে কথা না হলেও পুরোটা সত্যিও নয়। তার সাথে আমার পরিচয় বা বন্ধুত্ব সবটাই হয়েছে ফোনে ফোনে। আমরা কেউ কাউকে এখনও চাক্ষুষ দেখিনি। এমনকি আমি যে পেশাগত ভাবে একজন পুলিশ অফিসার আমার বান্ধবী কিন্তু এটাও জানে না। সে জানে যে আমি এক সরকারী অফিসে কাজ করি। কিন্তু আপনি তো আমার আসল পরিচয়টা জানেন। আর সে যখন আপনাকে ফোন করবে তখন কথায় কথায় হয়ত সে আমার পরিচয় জেনে যাবে। কিন্তু আমি ঠিক এখনই তার কাছে আমার আসল পরিচয়টা খুলে জানাতে চাইছি না। কিন্তু আপনার কন্টাক্ট নাম্বার আমি তাকে অলরেডি জানিয়ে দিয়েছি। সে যে কোন সময় আপনাকে ফোন করতে পারে। তাই আপনাকে একটা অনুরোধ করবার জন্যেই এখন ফোন করেছি”।

সীমন্তিনীর কথা শুনে মিঃ অধিকারী বললেন, “বুঝতে পেরেছি ম্যাম। আমার মনে হয়, আপনি যে একজন পুলিশ অফিসার এ’কথাটা যেন আমি তার কাছে প্রকাশ না করি, এটাই আপনি চাইছেন তো”?

সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ মিঃ অধিকারী। আমি ঠিক এ’ অনুরোধটাই আপনাকে করতে যাচ্ছিলুম”।

মিঃ অধিকারী সামান্য হেসে বললেন, “ঠিক আছে ম্যাম, আপনার অনুরোধের কথা আমি মাথায় রাখব। কিন্তু ম্যাম, আপনার এ অনুরোধ শুনে আমার মনে সামান্য একটু দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। দেখুন ম্যাম, ব্যবসা জিনিসটা পুরোটাই তো পুরোপুরি সততা বজায় রেখে করা যায় না। কিছু মিথ্যে কথা সময়ে সময়ে আমাদের বলতেই হয়। আর সেটা যে শুধু আমাদের কনস্ট্রাক্সন লাইনেই করতে হয়, তা নয়। সব ধরণের ব্যবসাতেই সবাইকেই এটা করতে হয়। সামান্য মুদী দোকান বা পানের দোকানের মালিকেরাও তাদের গ্রাহকের কাছে প্রায় সব সময়ই মিথ্যে কথা বলে থাকেন। একজন পুলিশ অফিসারের পরিচয় গোপন করে তাকে সরকারী অফিসের চাকুরে বলতে আমার কোনও আপত্তি নেই। আর সেটা তো পুরোপুরি মিথ্যে বলাও হবে না। আপনারাও তো সরকারী চাকুরেই। কিন্তু ম্যাম, কথায় বলে একটা মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করতে গেলে আরও দশটা মিথ্যে কথা বলতে হয়। তবে এ ব্যাপারে দশটা মিথ্যে বলতেও আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এ নিয়ে পরে আর আমি অন্য কোনরকম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ব না তো”?

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “একেবারেই না মিঃ অধিকারী। আপনাকে কোনও ঝামেলায় ফেলে আমি নিজের কোন স্বার্থ পূরণ করতে চলেছি, এ’কথা একদম ভাববেন না। আর ভবিষ্যতে যদি আমি কখনও বুঝতে পারি যে আপনার ওপর এ ব্যাপারে কোন ঝামেলা আসতে পারে তাহলে আমিই আপনাকে সে ব্যাপারে আগে থেকে সাবধান করে দেব। আর আপনাকে যথোচিত প্রোটেকশানও দেব। ও নিয়ে আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত থাকুন। তবে আপনার মনে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে আমি কেন আমার সেই বান্ধবীর কাছে নিজের পরিচয় লুকোতে চাইছি। এ প্রশ্নের জবাবটাও পরে একসময় জানতে পারবেন। তবে ওই যে আগেই বললুম, আমাদের প্রফেশানে এ’সব হামেশাই করতে হয়। আপাততঃ সেটাই ধরে নিন। তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এ ব্যাপারে আপনাকে কোনদিন কোনরকম ঝামেলায় পড়তে হবে না। আর আমি কাউকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিই না, এটা জেনে রাখুন”।

মিঃ অধিকারী এবার নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন, “ওকে ম্যাম, আর আমার কোন চিন্তা রইল না। আমি আপনার কথা মনে রাখব। আর কিছু”?

সীমন্তিনীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আর কিছু নয়। আপাততঃ এ’কথাটুকুই বলবার ছিল আপনাকে। বাকি কথা পরে হবে। গুড নাইট”।

ফোন নামিয়ে রাখলেও সীমন্তিনীর ইচ্ছে করছিল, তখনই সে পরিতোষকে ফোন করে কথাগুলো খুলে বলে। কিন্তু পরিতোষের ব্যস্ততার কথা মাথায় আসতেই, সে চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল। বেচারা পরিতোষ, তার দাদাভাই আর তার রচুসোনাকে বিপদমুক্ত করতে কত কীই না করে যাচ্ছে। হয়তো সেদিনের মত আজ রাতেও সে অনেকক্ষণ বাইরে থাকবে। এসব ভেবেই আর ফোন না করে ঘুমোবার চেষ্টা করল।
 

******************

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিমল আগরওয়ালা তার অফিসের চেম্বারে এসে বসেই তার সেক্রেটারী নিশিতাকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আজ আমার কোথায় কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে বলো তো নিশি”?

নিশিতা নিজের হাতের ডাইরী খুলে দেখতে দেখতে বলল, “স্যার, আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় দমদমের মেগা প্রজেক্টে যাবার কথা আছে। বিকেল তিনটেয় বেলেঘাটার প্রোজেক্ট। আর সন্ধ্যে ছটায় মিঃ আজিম কুরেশিকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া আছে। অফিসেই মিটিং” বলে একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল, “স্যার, আপনার শরীর ঠিক আছে তো? আপনার মুখ চোখ কেমন যেন লাগছে”।

বিমল নিজের মনের ভাব গোপন করে বলল, “না না তেমন কিছু না। তুমি আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে দাও আগে। তারপর গাড়ি তৈরী করতে বলো। আমরা দমদম যাচ্ছি। তুমিও যাচ্ছ আমার সাথে। তবে তার আগে তুমি ........”

তার কথা শেষ হবার আগেই তারই অফিসের আরেক কর্মচারী চেম্বারের দরজায় এসে বলল, “স্যার, আসতে পারি”?

বিমল অনুমতি দিতেই লোকটা ভেতরে ঢুকে একটা প্যাকেট বিমলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “স্যার এইমাত্র কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এটা ডেলিভারী দিয়ে গেল। কনী ম্যাডাম টেবিলে ছিল না বলে আমিই সই করে এটা নিয়েছি”।
 

নিশিতাই হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে দেখতে বলল, “ভেতরে শক্ত মত কিছু একটা আছে স্যার। কোনও কাগজ পত্র নেই মনে হচ্ছে। খুলবো”?
 

বিমল লোকটাকে বিদেয় করে বিরক্তি ভরা সুরে নিশিতাকে বলল, “তুমি আমার সেক্রেটারী নিশি। এটা তো তোমারই ডিউটি। বেশী কথা না বলে খুলে দেখো” বলে নিজের ল্যাপটপটাকে অন করে বলল, “কিন্তু আগে আমাকে এক কাপ কফি দাও। মাথাটা ধরে আছে। আসলে অফিসে আসবার পথেই মোবাইলে ...” বলে কথা শেষ না করেই চুপ করে গেল।
 

নিশিতা লাগোয়া রেস্টরুমে ঢুকে গেল তার বসের জন্য কফি বানাতে। তবে কফি বানাবার আগে তাদের অফিসের এক ড্রাইভারকে গাড়ি রেডি রাখবার কথা বলে দিল। বিমল নিজেই কুরিয়ার সারভিস থেকে আসা প্যাকেটটা হাতে তুলে নিল। সেন্ডারের ঠিকানায় লেখা আছে ‘এস এম খান’। এ নামে কাউকে সে মনে করতে পারল না। কিন্তু কি ভেবে প্যাকেটটা না খুলে নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কিছু একটা দেখতে লাগল। মুখে তার চিন্তার ছাপ খুব স্পষ্ট। আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে ছাপ মুছে ফেলতে পারছিল না সে। নিশিতা দু’হাতে দু’কাপ কফি এনে একটা কফির কাপ বিমলের টেবিলে রাখতেই তার চোখ গেল বিমলের হাতে ধরা মোবাইলটার দিকে। কিন্তু বিমল প্রায় সাথে সাথেই মোবাইলটা বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বলল, “ডেলিভারীটা খুলে দেখ তো কি এসেছে”।

নিশিতা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বলল, “এস এম খান বলে আমাদের কোনও ক্লায়েন্ট আছে বলে তো মনে পড়ছে না। কে স্যার ইনি”?

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 21-03-2020, 07:17 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)