21-03-2020, 07:15 PM
(Update No. 188)
সকালে সীমন্তিনী অফিসে যাবার পথেই মিঃ অধিকারীকে ফোন করে তার সাথে দেখা করবার কথা বলল। মিঃ অধিকারী জানালেন উনি লাঞ্চ টাইমে এস্টিমেটের কপি নিয়ে সীমন্তিনীর সাথে দেখা করবেন। দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি ক্যান্টিনে গিয়ে রচনার সাথে কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী নিজের লাঞ্চ শেষ করে চেম্বারে ফিরে আসতেই মিঃ অধিকারী এসে হাজির।
মিঃ অধিকারী সীমন্তিনীর অনুমতি নিয়ে তার চেম্বারে ঢুকতে সীমন্তিনী তাকে চেয়ারে বসতে বলে জিজ্ঞেস করল, “বলুন মিঃ অধিকারী। আপনার কলকাতার কাজ মিটল”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “না ম্যাম, মিটে গেল বলা যায় না। ব্যাপারটা এমন একটা পরিস্থিতিতে আছে যে সাপের ছুঁচো গেলার মত অবস্থায় পড়ে গেছি। না পারছি গিলতে, না পারছি ওগড়াতে”।
সীমন্তিনী তার কথা শুনে বেশ অবাকই হল। তবু মনে মনে কিছু একটা ভেবে একটু হাসিমুখ করে বলল, “যে খাবার চট করে গিলে ফেলা যায় না, তাকে আগে চিবিয়ে চিবিয়ে নরম করে নিন। তারপর দেখবেন খুব সহজেই গিলে ফেলতে পারবেন। সাপের সাথে মানুষের এটাও বড় একটা তফাৎ। ওরা চিবোতে পারে না। আচ্ছা সে’কথা যাক। একটু হাল্কা রসিকতা করলাম বলে কিছু মনে করবেন না প্লীজ। তা এবার আমাদের ওই কালচিনির বাড়ির ব্যাপারে বলুন দেখি। সাইট ইনস্পেকশন করবার পর একটা সপ্তাহ তো আপনি কলকাতাতেই কাটিয়ে এলেন। তা ওই ব্যাপারে এস্টিমেট টেস্টিমেট কিছু করতে পেরেছেন, না কি”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “হ্যাঁ ম্যাম, এই দেখুন। একটা রাফ নক্সা করে এনেছি আমি। আর এস্টিমেটও একটা মোটামুটি বানিয়ে এনেছি। অবশ্য মিউনিসিপালিটিতে সাবমিট করবার আগে এস্টিমেটটাকে প্রপার ফরম্যাটে বানাতে হবে। সেটা আমি ঠিক সময় মতই করে দেব। আচ্ছা এই দেখুন” বলে একটা বড় ব্লু প্রিন্ট টেবিলে বিছিয়ে নক্সাটার বিশেষ বিশেষ জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখাতে দেখাতে বললেন, “এই দেখুন ম্যাম, এটা হচ্ছে নর্থ সাইড। তাই আমি প্ল্যানটা এমন ভাবে করেছি যে মূল ঘরটা হবে সাউথ ফেসিং। এটা বাস্তুশাস্ত্র হিসেবে বসত বাড়ির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল। আর এখন দোকানটা যেখানে আছে, ঠিক তার সাথে লাগোয়া করেই এই খানটাতে ১,৬৩০ স্কয়ার ফুটের মেইন ফাউন্ডেশনটা হবে। এতে ভেতরে করিডোর রেখে ড্রয়িং রুম, ডাইনিং স্পেস, কিচেন, তিনটে বেডরুম, আর কিচেনের সঙ্গে দক্ষিণ দিকে লাগোয়া একটা স্টোর রুম, একটা ভোগ ঘর আর ঠাকুর ঘর হচ্ছে। ঠাকুর ঘর আর ড্রয়িং রুমের মধ্যিখানটায় চব্বিশ বাই পাঁচ ফুটের একটা বারান্দা থাকছে যেটা দুটো বেডরুমের সাথে সংলগ্ন থাকবে। একটা বেডরুম ভেতরের দিকে হচ্ছে। এই যে এটা। এটার জানালা থাকবে পশ্চিমে। এটার সাথে কোন বারান্দা থাকবে না, তবে এক পাশে তিনফুটের একটা ছোট্ট প্যাসেজের পরেই ড্রয়িং রুম। আর সামনে ডাইনিং রুম। অবশ্য তিনটে বেডরুম, ড্রয়িং রুম আর কিচেন থেকে ডাইরেক্ট এন্ট্রি পাওয়া যাবে ডাইনিং হলে। কিচেনের পুব দিকে একটা খোলা স্পেস থাকবে যেটাকে আপনার মাসিমার পছন্দ অনুযায়ী কলতলা হিসেবে রাখা হয়েছে। মাসিমা টয়লেটটাকে মূল ঘর, ঠাকুর ঘর বা রান্নাঘরের সাথে জুড়ে দিতে চাননি। তার পছন্দের কথা মাথায় রেখেই দুটো বাথরুম, দুটো টয়লেট ছাড়াও একটা লেডিজ টয়লেটের প্রভিশন রাখা হচ্ছে বাড়ির উত্তর পশ্চিম কোনের দিকে। আর আপনার মাসিমা যেমনটি চাইছিলেন, এই ইউনিটটাকে অন্যান্য কোন রুমের সাথে লাগানো হচ্ছে না। একদিকে কিচেন আর অন্যদিকে ডাইনিং হল আর ভেতরের বেডরুমটা থেকে মূল ফাউন্ডেশন থেকে তিন ফুট প্যাসেজ ছেড়ে দিয়ে এই ইউনিটটা সেপারেট ভাবে বানানো হচ্ছে। তাই ভেতরের বেডরুম আর ডাইনিং হলটাও ওয়েল ভেন্টিলেটেড হবে। আমি আপাততঃ সেই হিসেবেই এস্টিমেটটা করেছি। আমি অবশ্য একটু আলাদা টাইপে এ ইউনিটিটা বানাতে চাইছিলাম, কিন্তু আপনার মাসিমা মেশোমশায়ের পছন্দ হিসেবেই এমনটা করেছি। তারা অবশ্য ঠাকুর ঘরটাও আলাদা ভাবে একটা সেপারেট ইউনিটে বানাতে চাইছিলেন। কিন্তু তাতে করে দক্ষিণ দিকের এই যে খোলা উঠোনটা থাকছে সেটা আর এমন রাখা যেত না। অবশ্য আমি যখন এভাবে বারান্দার সঙ্গেই ঠাকুরঘরটা বানাবার কথা বলছিলাম তখন ওনারা সেটা মেনে নিয়েছেন। তাই এভাবেই প্ল্যানটা বানালাম। আর এর ফলে যখন দোতলার কনস্ট্রাকশন হবে তখন ওপরের ফ্লোরে বেশ কিছুটা বাড়তি জায়গা পাওয়া যাবে। আর কোনার এই কলঘরটার ওপর দিয়ে একটা শেড বানিয়ে ওদিকের দোকান ঘর অব্দি টেনে নিয়ে যাব। তাতে দোকান ঘরের পেছনের দড়জা দিয়ে কলপাড়ের পাশ দিয়ে সোজা বাড়িতে ঢোকা যাবে। মোটামুটি এমনটাই তারা পছন্দ করেছেন”।
সীমন্তিনী সব দেখে বলল, “বেশ, তাদের পছন্দ অনুযায়ীই বানানো ভাল। কিন্তু মিঃ অধিকারী, আমি কিন্তু বলেছিলুম দোতলার প্রভিসন রাখতে। সে ব্যাপারটা মাথায় রেখেছেন তো”?
মিঃ অধিকারী এবার একটা ফাইল বের করে বললেন, “হ্যাঁ ম্যাম, সে’কথা আমার মনে আছে। অবশ্য আপনার মেশোমশাই সেদিন বলছিলেন যে অতকিছু করবার দরকার নেই। তবে আপনার কথা মাথায় রেখেই আমি সেভাবেই এস্টিমেটটা বানিয়েছি। পরে যে কোন সময় দোতলায় কনস্ট্রাকশন করা যাবে। তবে ম্যাম, একটা কথা এখানে একটু ক্লিয়ার করে দিচ্ছি আগে। ভবিষ্যতে দোতলায় কনস্ট্রাকশন যখন করবেন, তখন যদি ভাবেন দোতলাতেও বাথরুম টয়লেট বা কলঘরের প্রভিশন রাখবেন তাহলে সেটা কিন্তু দোতলার প্ল্যান বানাবার সময়ই করতে হবে। কারন দোতলায় ও’সব করতে হলে তো সাধারণতঃ রুমের সাথে এটাচ করেই বানাতে হয়। কিন্তু তারা যখন ওই জিনিসগুলোকে মূল ঘরের সাথে এটাচ করে বানাতে চান না, তাহলে কিন্তু দোতলা তৈরীর সময় এই নর্থ সাইড থেকে কিছুটা এক্সটেনশন করে একটা করিডোরের মত বের করে এদিকে একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি তো এখন শুধু গ্রাউন্ড ফ্লোর, ঠাকুর ঘর, আর নিচের বাথরুম, টয়লেট আর কলঘরের এস্টিমেটই শুধু করেছি। আর এ সব কিছু মিলিয়ে মোট এস্টিমেট হচ্ছে প্রায় বত্রিশ লক্ষ টাকা। তবে প্রাইস ফ্লাকচুয়েশনের ব্যাপারটা সব সময়েই হিসেবে ধরতে হয়। সেটা কনসিডারেশনে রেখেই ফিফটিন পার্সেন্ট বাড়িয়ে ধরেই এস্টিমেটটা বানিয়েছি। আর সেই ফ্লাকচুয়েশন ধরে সব মিলে টোটাল দাঁড়াচ্ছে ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজার টাকা”।
সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে বলল, “আর লেবার কস্ট? তাতে কত লাগতে পারে”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, আমরা যখন এস্টিমেট বানাই তখন ম্যান পাওয়ার লেবার কস্ট সবকিছু ইনক্লুড করেই বানাই। তাই এই ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজারের ভেতরেই লেবার কস্ট ঢুকে আছে। তবে একটা কথা এখানে আরও একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই আপনাকে ম্যাম। কনস্ট্রাকশন যদি ছ’মাসের মধ্যে না হয়, তাহলে কিন্তু কনস্ট্রাকশন কমপ্লিট হতে হতে আরও কিছু বাড়তি খরচ হতে পারে। বুঝতেই পাচ্ছেন ম্যাম, ইট কাঠ রড সিমেন্ট সব জিনিসের দামই তো দিনে দিনে বাড়ছে”।
সীমন্তিনী আরেকটু ভেবে বলল, “আচ্ছা আরেকটা কথা বলুন তো মিঃ অধিকারী, আমি যদি আপনাকেই পুরো দায়িত্ব দিয়ে দিই বাড়িটা বানাবার, মানে প্রিপারেটরি স্টেজ থেকে কমপ্লিশন অব্দি এমনকি কালারিং আর ইলেকট্রিফিকেশন, সব মিলিয়ে যা যা করবার দরকার সে সবই আপনাকে করতে হবে, তাহলে কি এই বাজেটের ভেতরেই হয়ে যাবে? না এর চেয়েও কিছু বেশী খরচ পড়তে পারে”?
মিঃ অধিকারী একটু হেসে বললেন, “ম্যাম, আমি যে এস্টিমেট বানিয়ে দিয়েছি, ছ’মাসের ভেতর কাজটা কমপ্লিট করতে পারলে, সে আপনি যে কাউকে দিয়েই কনস্ট্রাকশন করান না কেন, এই বাজেটের ভেতরেই হয়ে যাবে। আর আপনি যদি কাজটা আমাকেই করতে বলেন, তাহলে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ, সব কিছু সহ বিল্ডিং কমপ্লিট করতে এই বাজেটেড এমাউন্টও লাগবে না। কিছু কমেই হয়ে যাবে। কারন আমরা ম্যাটেরিয়ালস গুলো হোলসেল রেটে কিনতে পারি। কিন্তু কত কম হবে সেটা ম্যাম এখনই কিন্তু বলা সম্ভব হবে না। তবে ম্যাম, কালারিং আর ইলেক্ট্রিফিকেশন কিন্ত এ এস্টিমেটের ভেতর থেকে হবে না। ও’দুটোর বাজেট আর এস্টিমেট কিন্তু আলাদাই হবে মানে এ এস্টিমেটের বাইরে। আর তাতে ধরুন আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ পড়বে”।
সীমন্তিনী বলল, “মিঃ অধিকারী, আমার মেসো বুড়ো মানুষ, আর ভাইটাও লেখাপড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমি চাই না যে বাড়ি তৈরির ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে ওর লেখাপড়ায় ক্ষতি হোক। তাই ও বাড়িতে কাজের দেখাশোনা, জিনিসপত্র কেনা কোনকিছুই তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। আর আমিও তো দুরে থাকি। তাছাড়া আমাকেও আমার কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই কাজটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার হাতেই ছেড়ে দেব আমি। আর সেই সাথে আরেকটা অনুরোধ করব, যে সবকিছুর দিকে আপনি পার্সোনালি একটু স্পেশাল কেয়ার নেবেন। কোথাও কোন কাজে যেন ফাঁকি বা গাফিলতি না হয়। আর দিন দশেক বাদেই আমি কাজটা শুরু করে দিতে চাই। তাই আপনি প্রিপারেটরি কাজ গুলো, যেমন ব্লু প্রিন্ট, এস্টিমেট, কোন কোন অফিস থেকে পারমিশন বা ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়, এসব কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিন”।
মিঃ অধিকারী খুব খুশী হয়ে বললেন, “ম্যাম, অনেকের অনেক কাজেই আমরা কিছু কিছু কারচুপি করে থাকি, সেটা অস্বীকার করব না। কিন্তু ম্যাম, আপনাকে তো আমরা অন্য সকলের মত এক ক্যাটাগরিতে ধরি না। তাই আপনার মত লোকের কাজে আমরা এক চুলও কারচুপি করব না, এটুকু বিশ্বাস আপনি আমাকে করতে পারেন। আপনার বিশ্বাসভঙ্গ হবার মত কোন কাজ করব না, এ’ কথা দিচ্ছি”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “তাহলে আর দেরী না করে আপনি প্রিপারেটরি লেভেলে যা যা করতে হয়, এ’সব করে ফেলুন। আমি মেসোকে একটা ভাল দেখে গৃহারম্ভের দিন দেখতে বলি, ওকে”?
মিঃ অধিকারী খুব খুশী হয়ে বললেন, “ওকে ম্যাম। আমি ডীলটা অ্যাকসেপ্ট করলাম। আমি কাল বা পরশু থেকেই কাজ শুরু করে দেব। তাহলে এখন আসি ম্যাম”?
সীমন্তিনী তাকে বাধা দিয়ে বলল, “একটু বসুন না। আমার তরফ থেকে এক কাপ চা অন্ততঃ খেয়ে যান। না হাতে একেবারেই সময় নেই আপনার”?
মিঃ অধিকারী একটু হেসে বললেন, “ম্যাম, এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ। আচ্ছা বলুন, চায়ের অর্ডার দিন"।
সীমন্তিনী কলিং বেল টিপে আর্দালীকে চায়ের অর্ডার দিয়ে বলল, “আচ্ছা, মিঃ অধিকারী, কলকাতায় আপনার জানাশোনা ভাল বিল্ডার বা কন্ট্রাক্টর কেউ আছে? মানে যার ওপর ভরসা করতে পারি। আসলে আমি এমন একজনকে খুঁজছি, যার ওপর নিশ্চিন্তে একটা বড়সড় কনস্ট্রাকশনের দায়িত্ব আমি দিয়ে দিতে পারি”।
মিঃ অধিকারী জিজ্ঞেস করলেন, “সে তো আছেই ম্যাম। আমাদের বিশেষ ঘণিষ্ঠ বেশ কয়েকজন বিল্ডার আছে। কিন্তু এ’কথা জানতে চাইছেন কেন ম্যাম”?
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “এমন কিছু নয়। আসলে আমার এক বিশেষ বান্ধবী, সে কলকাতাতেই থাকে। সে একটা শপিং মল বা ওই ধরণের একটা মার্কেট কমপ্লেক্স বানাতে চাইছে। আর ওকে এ ব্যাপারে আমি সামান্য বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছি। তাই জিজ্ঞেস করছিলুম”।
মিঃ অধিকারী জিজ্ঞেস করলেন, “ওনার হাতে কি অমন কোনও বড় প্লট আছে ম্যাম”?
সীমন্তিনী সামান্য হেসে বলল, “না মিঃ অধিকারী, তেমন কোনও প্লট সে এখনও কেনেনি। প্লট আর কমপ্লেক্স সবকিছুই নতুন করে করতে হবে”।
মিঃ অধিকারী বেশ কিছু সময় মাথা নিচু করে কিছু ভেবে বললেন, “ম্যাম, এই যে আমি কলকাতা থেকে ঘুরে এলাম, আমি এমনই একটা লোকেশানের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু কলকাতায় আমরা ছোটখাটো বা মাঝারি ধরণের বেশ কয়েকটা প্রোজেক্ট করলেও এত বড় প্রোজেক্ট কখনও বানাইনি। অত ক্যাপিটালও আমাদের নেই। যদি আমরা ওখানকার লোকাল লোকদের কাছ থেকে কিছু অ্যাডভান্স নিতে পারতাম, তাহলে কাজটা নিশ্চিন্তে হাতে নিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করতে হলে কিছুটা সময়ের দরকার। অন্ততঃ তিন চার মাস। কিন্তু জমিটার মালিক ততখানি সময় দিতে রাজী নন। তাকে জমিটা তাড়াতাড়িই বেচে দিতে হচ্ছে। তাই কাজটা নিতে সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু এত সুন্দর লোকেশান, আর পটেনশিয়ালিটিও এত ভাল, যে ডিলটাকে হাতছাড়া করতেও ইচ্ছে করছে না”।
সীমন্তিনী বলল, “আপত্তি না থাকলে একটু খুলে বলুন না”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “না না ম্যাম, আপত্তি কেন থাকবে। শুনুন, দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাস থেকে প্রায় একশ’ মিটার দুরত্বে সাড়ে তিন হাজার স্কয়ার ফুটের একটা অসম্ভব ভাল প্লট আছে। সে প্লটের যে বর্তমান মালিক, সে আমার বিশেষ পরিচিত। সে সেটার দাম চাইছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ওদিকে জমির যা বাজার চলছে সে তুলনায় খুবই সস্তা। প্রায় জলের দামই বলা যায়। তারা খুব আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে বলেই এত সস্তা দাম চাইছে যাতে তাড়াতাড়ি জমিটা বিক্রী করে দিতে পারেন। দেড় কোটি টাকা দিয়ে জমিটা হয়ত আমরা কিনে ফেলতে পারি। কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থা এমন যে জমিটা কিনলে আমাদের ক্যাপিটাল আটকা পড়ে যাবে, কারণ ওই জমিতে হাজার তিনেক স্কয়ার ফুট জুড়ে কনস্ট্রাকশন করতে হলে যত টাকার প্রয়োজন তা বর্তমানে আমাদের হাতে তো নেইই, এমনকি আগামি ছ’মাসের মধ্যেও হবে বলে আশা করছি না আমরা। ওদিকে ওখানে লোকাল লোকদের কাছ থেকে ইনভেস্টমেন্ট নিতে চাইলেও সময়ের দরকার। সে সময়টাও আমরা পাচ্ছি না। তাই জমিটা কিনে ফেললে আমাদের দেড় কোটি টাকাই সেখানে আটকে যাবে। তাতে আমাদের বিজনেসের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু লোকেশান আর দামের দিক দিয়ে দেখতে গেলে, এমন সুযোগ হাত ছাড়া করে দেওয়া মানে সোজা কথায় বোকামি। তাই তো কোন ফাইনাল ডিসিশন নিতে পারছি না। অন্য যে কোনও প্রমোটার বা বিল্ডার সেটার খোঁজ পেলেই এক মূহুর্ত দেরী না করে কিনে ফেলবে। আর সেজন্যেই তো বলছিলুম না পারছি গিলতে না পারছি ওগড়াতে”।
সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “তাহলে ফাইনালি কি ডিসিশন নিলেন আপনারা”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “সেটাই তো নিতে পারছি না ম্যাম। গত সাতদিন অনেক চেষ্টা করেও কোন পথ খুঁজে পেলাম না। তবু দিন দশেক সময় চেয়ে নিয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু এখানেও সকলের সাথে কথা বলেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না”।
সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “আচ্ছা মিঃ অধিকারী, আমি এখন যেটা বলতে চাইছি সেটাকে অন্য ভাবে নেবেন না প্লীজ। ওই প্লটে একটা শপিং মল তৈরী করলে কতটা ফ্রুটফুল হবে”?
মিঃ অধিকারী সাথে সাথে বললেন, “ওখানে একটা শপিং কমপ্লেক্স বানালেই সবচেয়ে ভাল চলবে ম্যাম। অমন সুন্দর মার্কেট কমপ্লেক্সের লোকেশান আশেপাশের দশ মাইলের ভেতরে নেই। আপনারা যদি চান, মানে আপনার সেই বান্ধবী যদি রাজী থাকেন, তাহলে আমি যোগাযোগ করতে পারি কিন্তু। আমাদের পক্ষে তো নেওয়া আর সম্ভবই হচ্ছে না। আপনারা নিতে চাইলে নিতেই পারেন। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব সেটা আমি করব”।
সীমন্তিনী একটু উৎসুক ভাবে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছেন মিঃ অধিকারী? সেটা সম্ভব হবে? মানে আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না তো তাতে”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “আমাদের আর ক্ষতি কি হবে ম্যাম? জমির মালিক যদি আমাদের ছ’টা মাস সময় দিতেন, তাহলে আমরাই সেটা নেবার বন্দোবস্ত করে ফেলতুম। কিন্তু সেটা তো আর হচ্ছে না। তাই আপনারা চাইলে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “জমিটাতে কোনরকম কোনও ডিসপুট নেই তো? মিউটেশান নিয়ে কোন ঝামেলা টামেলা নেই তো”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “সবদিক দিয়ে ক্লিয়ার প্রপার্টি ম্যাম। শুধু বছর দুয়েকের খাজনা বাকি আছে। তা সেটা এমন কিছু আহামরি টাকার ব্যাপার নয়”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “ওকে মিঃ অধিকারী। আমি আমার বান্ধবীর সাথে আজ রাতে একটু আলাপ করে নিই। আগামীকাল আপনাকে ফোন করে জানাব”।
*****************
অধিকারীবাবু বেরিয়ে যাবার পর সীমন্তিনী অধিকারীবাবুর কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিজের মোবাইল থেকে কিংশুককে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ভাই, তোমরা কি ট্রেনে উঠে পড়েছ”?
কিংশুক জবাব দিল, “না গো দিদিভাই। আমরা সবাই তো তিনটের ট্রেন ধরব বলে খাওয়া দাওয়া করে ঠিক সময়েই ষ্টেশনে এসে পড়েছিলাম। এখনও আমরা স্টেশনেই বসে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। এইমাত্র শুনলুম যে মাদারিহাটের আশেপাশে কোথাও নাকি একটা মালগাড়ির কয়েকটা কামরা লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। তাই ট্রেন চলাচল আপাততঃ বন্ধ। কখন লাইন ক্লিয়ার হবে, কখন ট্রেন চলবে, এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমরাও যে কি করব না করব, বুঝতে পারছি না। তোমাকে ফোন করবার কথাই ভাবছিলুম আমি। কি করব এখন দিদিভাই আমরা”?
কিংশুকের কথা শুনে সীমন্তিনীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুকের আজ তার এখানে আসবার কথা ছিল। যদিও কথাটা অর্চনা, নীতা বা লক্ষ্মীকে সে জানায়নি, সে ভেবেছিল হঠাৎ করে সকলে চমকে উঠবে সবাইকে দেখে। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শুনে সে বেশ মুষরেই পড়ল। মাসি মেসোরা এলে সবচেয়ে বেশী খুশী হত বোধহয় লক্ষ্মীদিই। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতেই সীমন্তিনী কিংশুককে বলল, “ভাই, তেমনই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তো করার আর কিছুই নেই। কিন্তু শোনো ভাই। এখন তো চারটে বেজেই গেছে। যদি আর আধ ঘন্টার মধ্যে ট্রেন না পাও তাহলে বরং বাড়িই ফিরে যেও তোমরা। জানি, খারাপ লাগবে। খারাপ তো আমারও লাগছে। কত আশা করে ছিলুম যে আজ প্রথমবার তোমরা সবাই আমার এখানে আসবে। কিন্তু সাড়ে চারটের পর ট্রেন পাওয়া গেলেও এখানে এসে পৌঁছোতে পৌঁছোতে রাত হয়ে যাবে। ওভাবে আসবার দরকার নেই। রাস্তায় যদি ট্রেন আরো লেট করে, তাহলে তোমরা অসুবিধেয় পড়তে পার। তাই আজ বরং তোমরা বাড়িই ফিরে যাও। পরে কোনদিন বরং সময় সুযোগ মত তোমরা আসতে পারবে। আমি অর্চুকে বুঝিয়ে বলে দেব সবকিছু”।
কিংশুক “আচ্ছা, ঠিক আছে দিদিভাই” বলতে সীমন্তিনী ফোন কেটে দিল।
সকালে সীমন্তিনী অফিসে যাবার পথেই মিঃ অধিকারীকে ফোন করে তার সাথে দেখা করবার কথা বলল। মিঃ অধিকারী জানালেন উনি লাঞ্চ টাইমে এস্টিমেটের কপি নিয়ে সীমন্তিনীর সাথে দেখা করবেন। দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি ক্যান্টিনে গিয়ে রচনার সাথে কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী নিজের লাঞ্চ শেষ করে চেম্বারে ফিরে আসতেই মিঃ অধিকারী এসে হাজির।
মিঃ অধিকারী সীমন্তিনীর অনুমতি নিয়ে তার চেম্বারে ঢুকতে সীমন্তিনী তাকে চেয়ারে বসতে বলে জিজ্ঞেস করল, “বলুন মিঃ অধিকারী। আপনার কলকাতার কাজ মিটল”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “না ম্যাম, মিটে গেল বলা যায় না। ব্যাপারটা এমন একটা পরিস্থিতিতে আছে যে সাপের ছুঁচো গেলার মত অবস্থায় পড়ে গেছি। না পারছি গিলতে, না পারছি ওগড়াতে”।
সীমন্তিনী তার কথা শুনে বেশ অবাকই হল। তবু মনে মনে কিছু একটা ভেবে একটু হাসিমুখ করে বলল, “যে খাবার চট করে গিলে ফেলা যায় না, তাকে আগে চিবিয়ে চিবিয়ে নরম করে নিন। তারপর দেখবেন খুব সহজেই গিলে ফেলতে পারবেন। সাপের সাথে মানুষের এটাও বড় একটা তফাৎ। ওরা চিবোতে পারে না। আচ্ছা সে’কথা যাক। একটু হাল্কা রসিকতা করলাম বলে কিছু মনে করবেন না প্লীজ। তা এবার আমাদের ওই কালচিনির বাড়ির ব্যাপারে বলুন দেখি। সাইট ইনস্পেকশন করবার পর একটা সপ্তাহ তো আপনি কলকাতাতেই কাটিয়ে এলেন। তা ওই ব্যাপারে এস্টিমেট টেস্টিমেট কিছু করতে পেরেছেন, না কি”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “হ্যাঁ ম্যাম, এই দেখুন। একটা রাফ নক্সা করে এনেছি আমি। আর এস্টিমেটও একটা মোটামুটি বানিয়ে এনেছি। অবশ্য মিউনিসিপালিটিতে সাবমিট করবার আগে এস্টিমেটটাকে প্রপার ফরম্যাটে বানাতে হবে। সেটা আমি ঠিক সময় মতই করে দেব। আচ্ছা এই দেখুন” বলে একটা বড় ব্লু প্রিন্ট টেবিলে বিছিয়ে নক্সাটার বিশেষ বিশেষ জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখাতে দেখাতে বললেন, “এই দেখুন ম্যাম, এটা হচ্ছে নর্থ সাইড। তাই আমি প্ল্যানটা এমন ভাবে করেছি যে মূল ঘরটা হবে সাউথ ফেসিং। এটা বাস্তুশাস্ত্র হিসেবে বসত বাড়ির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল। আর এখন দোকানটা যেখানে আছে, ঠিক তার সাথে লাগোয়া করেই এই খানটাতে ১,৬৩০ স্কয়ার ফুটের মেইন ফাউন্ডেশনটা হবে। এতে ভেতরে করিডোর রেখে ড্রয়িং রুম, ডাইনিং স্পেস, কিচেন, তিনটে বেডরুম, আর কিচেনের সঙ্গে দক্ষিণ দিকে লাগোয়া একটা স্টোর রুম, একটা ভোগ ঘর আর ঠাকুর ঘর হচ্ছে। ঠাকুর ঘর আর ড্রয়িং রুমের মধ্যিখানটায় চব্বিশ বাই পাঁচ ফুটের একটা বারান্দা থাকছে যেটা দুটো বেডরুমের সাথে সংলগ্ন থাকবে। একটা বেডরুম ভেতরের দিকে হচ্ছে। এই যে এটা। এটার জানালা থাকবে পশ্চিমে। এটার সাথে কোন বারান্দা থাকবে না, তবে এক পাশে তিনফুটের একটা ছোট্ট প্যাসেজের পরেই ড্রয়িং রুম। আর সামনে ডাইনিং রুম। অবশ্য তিনটে বেডরুম, ড্রয়িং রুম আর কিচেন থেকে ডাইরেক্ট এন্ট্রি পাওয়া যাবে ডাইনিং হলে। কিচেনের পুব দিকে একটা খোলা স্পেস থাকবে যেটাকে আপনার মাসিমার পছন্দ অনুযায়ী কলতলা হিসেবে রাখা হয়েছে। মাসিমা টয়লেটটাকে মূল ঘর, ঠাকুর ঘর বা রান্নাঘরের সাথে জুড়ে দিতে চাননি। তার পছন্দের কথা মাথায় রেখেই দুটো বাথরুম, দুটো টয়লেট ছাড়াও একটা লেডিজ টয়লেটের প্রভিশন রাখা হচ্ছে বাড়ির উত্তর পশ্চিম কোনের দিকে। আর আপনার মাসিমা যেমনটি চাইছিলেন, এই ইউনিটটাকে অন্যান্য কোন রুমের সাথে লাগানো হচ্ছে না। একদিকে কিচেন আর অন্যদিকে ডাইনিং হল আর ভেতরের বেডরুমটা থেকে মূল ফাউন্ডেশন থেকে তিন ফুট প্যাসেজ ছেড়ে দিয়ে এই ইউনিটটা সেপারেট ভাবে বানানো হচ্ছে। তাই ভেতরের বেডরুম আর ডাইনিং হলটাও ওয়েল ভেন্টিলেটেড হবে। আমি আপাততঃ সেই হিসেবেই এস্টিমেটটা করেছি। আমি অবশ্য একটু আলাদা টাইপে এ ইউনিটিটা বানাতে চাইছিলাম, কিন্তু আপনার মাসিমা মেশোমশায়ের পছন্দ হিসেবেই এমনটা করেছি। তারা অবশ্য ঠাকুর ঘরটাও আলাদা ভাবে একটা সেপারেট ইউনিটে বানাতে চাইছিলেন। কিন্তু তাতে করে দক্ষিণ দিকের এই যে খোলা উঠোনটা থাকছে সেটা আর এমন রাখা যেত না। অবশ্য আমি যখন এভাবে বারান্দার সঙ্গেই ঠাকুরঘরটা বানাবার কথা বলছিলাম তখন ওনারা সেটা মেনে নিয়েছেন। তাই এভাবেই প্ল্যানটা বানালাম। আর এর ফলে যখন দোতলার কনস্ট্রাকশন হবে তখন ওপরের ফ্লোরে বেশ কিছুটা বাড়তি জায়গা পাওয়া যাবে। আর কোনার এই কলঘরটার ওপর দিয়ে একটা শেড বানিয়ে ওদিকের দোকান ঘর অব্দি টেনে নিয়ে যাব। তাতে দোকান ঘরের পেছনের দড়জা দিয়ে কলপাড়ের পাশ দিয়ে সোজা বাড়িতে ঢোকা যাবে। মোটামুটি এমনটাই তারা পছন্দ করেছেন”।
সীমন্তিনী সব দেখে বলল, “বেশ, তাদের পছন্দ অনুযায়ীই বানানো ভাল। কিন্তু মিঃ অধিকারী, আমি কিন্তু বলেছিলুম দোতলার প্রভিসন রাখতে। সে ব্যাপারটা মাথায় রেখেছেন তো”?
মিঃ অধিকারী এবার একটা ফাইল বের করে বললেন, “হ্যাঁ ম্যাম, সে’কথা আমার মনে আছে। অবশ্য আপনার মেশোমশাই সেদিন বলছিলেন যে অতকিছু করবার দরকার নেই। তবে আপনার কথা মাথায় রেখেই আমি সেভাবেই এস্টিমেটটা বানিয়েছি। পরে যে কোন সময় দোতলায় কনস্ট্রাকশন করা যাবে। তবে ম্যাম, একটা কথা এখানে একটু ক্লিয়ার করে দিচ্ছি আগে। ভবিষ্যতে দোতলায় কনস্ট্রাকশন যখন করবেন, তখন যদি ভাবেন দোতলাতেও বাথরুম টয়লেট বা কলঘরের প্রভিশন রাখবেন তাহলে সেটা কিন্তু দোতলার প্ল্যান বানাবার সময়ই করতে হবে। কারন দোতলায় ও’সব করতে হলে তো সাধারণতঃ রুমের সাথে এটাচ করেই বানাতে হয়। কিন্তু তারা যখন ওই জিনিসগুলোকে মূল ঘরের সাথে এটাচ করে বানাতে চান না, তাহলে কিন্তু দোতলা তৈরীর সময় এই নর্থ সাইড থেকে কিছুটা এক্সটেনশন করে একটা করিডোরের মত বের করে এদিকে একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি তো এখন শুধু গ্রাউন্ড ফ্লোর, ঠাকুর ঘর, আর নিচের বাথরুম, টয়লেট আর কলঘরের এস্টিমেটই শুধু করেছি। আর এ সব কিছু মিলিয়ে মোট এস্টিমেট হচ্ছে প্রায় বত্রিশ লক্ষ টাকা। তবে প্রাইস ফ্লাকচুয়েশনের ব্যাপারটা সব সময়েই হিসেবে ধরতে হয়। সেটা কনসিডারেশনে রেখেই ফিফটিন পার্সেন্ট বাড়িয়ে ধরেই এস্টিমেটটা বানিয়েছি। আর সেই ফ্লাকচুয়েশন ধরে সব মিলে টোটাল দাঁড়াচ্ছে ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজার টাকা”।
সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে বলল, “আর লেবার কস্ট? তাতে কত লাগতে পারে”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, আমরা যখন এস্টিমেট বানাই তখন ম্যান পাওয়ার লেবার কস্ট সবকিছু ইনক্লুড করেই বানাই। তাই এই ছত্রিশ লক্ষ পচাত্তর হাজারের ভেতরেই লেবার কস্ট ঢুকে আছে। তবে একটা কথা এখানে আরও একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই আপনাকে ম্যাম। কনস্ট্রাকশন যদি ছ’মাসের মধ্যে না হয়, তাহলে কিন্তু কনস্ট্রাকশন কমপ্লিট হতে হতে আরও কিছু বাড়তি খরচ হতে পারে। বুঝতেই পাচ্ছেন ম্যাম, ইট কাঠ রড সিমেন্ট সব জিনিসের দামই তো দিনে দিনে বাড়ছে”।
সীমন্তিনী আরেকটু ভেবে বলল, “আচ্ছা আরেকটা কথা বলুন তো মিঃ অধিকারী, আমি যদি আপনাকেই পুরো দায়িত্ব দিয়ে দিই বাড়িটা বানাবার, মানে প্রিপারেটরি স্টেজ থেকে কমপ্লিশন অব্দি এমনকি কালারিং আর ইলেকট্রিফিকেশন, সব মিলিয়ে যা যা করবার দরকার সে সবই আপনাকে করতে হবে, তাহলে কি এই বাজেটের ভেতরেই হয়ে যাবে? না এর চেয়েও কিছু বেশী খরচ পড়তে পারে”?
মিঃ অধিকারী একটু হেসে বললেন, “ম্যাম, আমি যে এস্টিমেট বানিয়ে দিয়েছি, ছ’মাসের ভেতর কাজটা কমপ্লিট করতে পারলে, সে আপনি যে কাউকে দিয়েই কনস্ট্রাকশন করান না কেন, এই বাজেটের ভেতরেই হয়ে যাবে। আর আপনি যদি কাজটা আমাকেই করতে বলেন, তাহলে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ, সব কিছু সহ বিল্ডিং কমপ্লিট করতে এই বাজেটেড এমাউন্টও লাগবে না। কিছু কমেই হয়ে যাবে। কারন আমরা ম্যাটেরিয়ালস গুলো হোলসেল রেটে কিনতে পারি। কিন্তু কত কম হবে সেটা ম্যাম এখনই কিন্তু বলা সম্ভব হবে না। তবে ম্যাম, কালারিং আর ইলেক্ট্রিফিকেশন কিন্ত এ এস্টিমেটের ভেতর থেকে হবে না। ও’দুটোর বাজেট আর এস্টিমেট কিন্তু আলাদাই হবে মানে এ এস্টিমেটের বাইরে। আর তাতে ধরুন আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ পড়বে”।
সীমন্তিনী বলল, “মিঃ অধিকারী, আমার মেসো বুড়ো মানুষ, আর ভাইটাও লেখাপড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমি চাই না যে বাড়ি তৈরির ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে ওর লেখাপড়ায় ক্ষতি হোক। তাই ও বাড়িতে কাজের দেখাশোনা, জিনিসপত্র কেনা কোনকিছুই তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। আর আমিও তো দুরে থাকি। তাছাড়া আমাকেও আমার কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই কাজটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার হাতেই ছেড়ে দেব আমি। আর সেই সাথে আরেকটা অনুরোধ করব, যে সবকিছুর দিকে আপনি পার্সোনালি একটু স্পেশাল কেয়ার নেবেন। কোথাও কোন কাজে যেন ফাঁকি বা গাফিলতি না হয়। আর দিন দশেক বাদেই আমি কাজটা শুরু করে দিতে চাই। তাই আপনি প্রিপারেটরি কাজ গুলো, যেমন ব্লু প্রিন্ট, এস্টিমেট, কোন কোন অফিস থেকে পারমিশন বা ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়, এসব কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিন”।
মিঃ অধিকারী খুব খুশী হয়ে বললেন, “ম্যাম, অনেকের অনেক কাজেই আমরা কিছু কিছু কারচুপি করে থাকি, সেটা অস্বীকার করব না। কিন্তু ম্যাম, আপনাকে তো আমরা অন্য সকলের মত এক ক্যাটাগরিতে ধরি না। তাই আপনার মত লোকের কাজে আমরা এক চুলও কারচুপি করব না, এটুকু বিশ্বাস আপনি আমাকে করতে পারেন। আপনার বিশ্বাসভঙ্গ হবার মত কোন কাজ করব না, এ’ কথা দিচ্ছি”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “তাহলে আর দেরী না করে আপনি প্রিপারেটরি লেভেলে যা যা করতে হয়, এ’সব করে ফেলুন। আমি মেসোকে একটা ভাল দেখে গৃহারম্ভের দিন দেখতে বলি, ওকে”?
মিঃ অধিকারী খুব খুশী হয়ে বললেন, “ওকে ম্যাম। আমি ডীলটা অ্যাকসেপ্ট করলাম। আমি কাল বা পরশু থেকেই কাজ শুরু করে দেব। তাহলে এখন আসি ম্যাম”?
সীমন্তিনী তাকে বাধা দিয়ে বলল, “একটু বসুন না। আমার তরফ থেকে এক কাপ চা অন্ততঃ খেয়ে যান। না হাতে একেবারেই সময় নেই আপনার”?
মিঃ অধিকারী একটু হেসে বললেন, “ম্যাম, এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ। আচ্ছা বলুন, চায়ের অর্ডার দিন"।
সীমন্তিনী কলিং বেল টিপে আর্দালীকে চায়ের অর্ডার দিয়ে বলল, “আচ্ছা, মিঃ অধিকারী, কলকাতায় আপনার জানাশোনা ভাল বিল্ডার বা কন্ট্রাক্টর কেউ আছে? মানে যার ওপর ভরসা করতে পারি। আসলে আমি এমন একজনকে খুঁজছি, যার ওপর নিশ্চিন্তে একটা বড়সড় কনস্ট্রাকশনের দায়িত্ব আমি দিয়ে দিতে পারি”।
মিঃ অধিকারী জিজ্ঞেস করলেন, “সে তো আছেই ম্যাম। আমাদের বিশেষ ঘণিষ্ঠ বেশ কয়েকজন বিল্ডার আছে। কিন্তু এ’কথা জানতে চাইছেন কেন ম্যাম”?
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “এমন কিছু নয়। আসলে আমার এক বিশেষ বান্ধবী, সে কলকাতাতেই থাকে। সে একটা শপিং মল বা ওই ধরণের একটা মার্কেট কমপ্লেক্স বানাতে চাইছে। আর ওকে এ ব্যাপারে আমি সামান্য বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছি। তাই জিজ্ঞেস করছিলুম”।
মিঃ অধিকারী জিজ্ঞেস করলেন, “ওনার হাতে কি অমন কোনও বড় প্লট আছে ম্যাম”?
সীমন্তিনী সামান্য হেসে বলল, “না মিঃ অধিকারী, তেমন কোনও প্লট সে এখনও কেনেনি। প্লট আর কমপ্লেক্স সবকিছুই নতুন করে করতে হবে”।
মিঃ অধিকারী বেশ কিছু সময় মাথা নিচু করে কিছু ভেবে বললেন, “ম্যাম, এই যে আমি কলকাতা থেকে ঘুরে এলাম, আমি এমনই একটা লোকেশানের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু কলকাতায় আমরা ছোটখাটো বা মাঝারি ধরণের বেশ কয়েকটা প্রোজেক্ট করলেও এত বড় প্রোজেক্ট কখনও বানাইনি। অত ক্যাপিটালও আমাদের নেই। যদি আমরা ওখানকার লোকাল লোকদের কাছ থেকে কিছু অ্যাডভান্স নিতে পারতাম, তাহলে কাজটা নিশ্চিন্তে হাতে নিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করতে হলে কিছুটা সময়ের দরকার। অন্ততঃ তিন চার মাস। কিন্তু জমিটার মালিক ততখানি সময় দিতে রাজী নন। তাকে জমিটা তাড়াতাড়িই বেচে দিতে হচ্ছে। তাই কাজটা নিতে সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু এত সুন্দর লোকেশান, আর পটেনশিয়ালিটিও এত ভাল, যে ডিলটাকে হাতছাড়া করতেও ইচ্ছে করছে না”।
সীমন্তিনী বলল, “আপত্তি না থাকলে একটু খুলে বলুন না”।
মিঃ অধিকারী বললেন, “না না ম্যাম, আপত্তি কেন থাকবে। শুনুন, দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাস থেকে প্রায় একশ’ মিটার দুরত্বে সাড়ে তিন হাজার স্কয়ার ফুটের একটা অসম্ভব ভাল প্লট আছে। সে প্লটের যে বর্তমান মালিক, সে আমার বিশেষ পরিচিত। সে সেটার দাম চাইছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ওদিকে জমির যা বাজার চলছে সে তুলনায় খুবই সস্তা। প্রায় জলের দামই বলা যায়। তারা খুব আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে বলেই এত সস্তা দাম চাইছে যাতে তাড়াতাড়ি জমিটা বিক্রী করে দিতে পারেন। দেড় কোটি টাকা দিয়ে জমিটা হয়ত আমরা কিনে ফেলতে পারি। কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থা এমন যে জমিটা কিনলে আমাদের ক্যাপিটাল আটকা পড়ে যাবে, কারণ ওই জমিতে হাজার তিনেক স্কয়ার ফুট জুড়ে কনস্ট্রাকশন করতে হলে যত টাকার প্রয়োজন তা বর্তমানে আমাদের হাতে তো নেইই, এমনকি আগামি ছ’মাসের মধ্যেও হবে বলে আশা করছি না আমরা। ওদিকে ওখানে লোকাল লোকদের কাছ থেকে ইনভেস্টমেন্ট নিতে চাইলেও সময়ের দরকার। সে সময়টাও আমরা পাচ্ছি না। তাই জমিটা কিনে ফেললে আমাদের দেড় কোটি টাকাই সেখানে আটকে যাবে। তাতে আমাদের বিজনেসের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু লোকেশান আর দামের দিক দিয়ে দেখতে গেলে, এমন সুযোগ হাত ছাড়া করে দেওয়া মানে সোজা কথায় বোকামি। তাই তো কোন ফাইনাল ডিসিশন নিতে পারছি না। অন্য যে কোনও প্রমোটার বা বিল্ডার সেটার খোঁজ পেলেই এক মূহুর্ত দেরী না করে কিনে ফেলবে। আর সেজন্যেই তো বলছিলুম না পারছি গিলতে না পারছি ওগড়াতে”।
সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “তাহলে ফাইনালি কি ডিসিশন নিলেন আপনারা”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “সেটাই তো নিতে পারছি না ম্যাম। গত সাতদিন অনেক চেষ্টা করেও কোন পথ খুঁজে পেলাম না। তবু দিন দশেক সময় চেয়ে নিয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু এখানেও সকলের সাথে কথা বলেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না”।
সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “আচ্ছা মিঃ অধিকারী, আমি এখন যেটা বলতে চাইছি সেটাকে অন্য ভাবে নেবেন না প্লীজ। ওই প্লটে একটা শপিং মল তৈরী করলে কতটা ফ্রুটফুল হবে”?
মিঃ অধিকারী সাথে সাথে বললেন, “ওখানে একটা শপিং কমপ্লেক্স বানালেই সবচেয়ে ভাল চলবে ম্যাম। অমন সুন্দর মার্কেট কমপ্লেক্সের লোকেশান আশেপাশের দশ মাইলের ভেতরে নেই। আপনারা যদি চান, মানে আপনার সেই বান্ধবী যদি রাজী থাকেন, তাহলে আমি যোগাযোগ করতে পারি কিন্তু। আমাদের পক্ষে তো নেওয়া আর সম্ভবই হচ্ছে না। আপনারা নিতে চাইলে নিতেই পারেন। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব সেটা আমি করব”।
সীমন্তিনী একটু উৎসুক ভাবে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছেন মিঃ অধিকারী? সেটা সম্ভব হবে? মানে আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না তো তাতে”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “আমাদের আর ক্ষতি কি হবে ম্যাম? জমির মালিক যদি আমাদের ছ’টা মাস সময় দিতেন, তাহলে আমরাই সেটা নেবার বন্দোবস্ত করে ফেলতুম। কিন্তু সেটা তো আর হচ্ছে না। তাই আপনারা চাইলে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “জমিটাতে কোনরকম কোনও ডিসপুট নেই তো? মিউটেশান নিয়ে কোন ঝামেলা টামেলা নেই তো”?
মিঃ অধিকারী বললেন, “সবদিক দিয়ে ক্লিয়ার প্রপার্টি ম্যাম। শুধু বছর দুয়েকের খাজনা বাকি আছে। তা সেটা এমন কিছু আহামরি টাকার ব্যাপার নয়”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “ওকে মিঃ অধিকারী। আমি আমার বান্ধবীর সাথে আজ রাতে একটু আলাপ করে নিই। আগামীকাল আপনাকে ফোন করে জানাব”।
*****************
অধিকারীবাবু বেরিয়ে যাবার পর সীমন্তিনী অধিকারীবাবুর কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিজের মোবাইল থেকে কিংশুককে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ভাই, তোমরা কি ট্রেনে উঠে পড়েছ”?
কিংশুক জবাব দিল, “না গো দিদিভাই। আমরা সবাই তো তিনটের ট্রেন ধরব বলে খাওয়া দাওয়া করে ঠিক সময়েই ষ্টেশনে এসে পড়েছিলাম। এখনও আমরা স্টেশনেই বসে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। এইমাত্র শুনলুম যে মাদারিহাটের আশেপাশে কোথাও নাকি একটা মালগাড়ির কয়েকটা কামরা লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। তাই ট্রেন চলাচল আপাততঃ বন্ধ। কখন লাইন ক্লিয়ার হবে, কখন ট্রেন চলবে, এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমরাও যে কি করব না করব, বুঝতে পারছি না। তোমাকে ফোন করবার কথাই ভাবছিলুম আমি। কি করব এখন দিদিভাই আমরা”?
কিংশুকের কথা শুনে সীমন্তিনীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুকের আজ তার এখানে আসবার কথা ছিল। যদিও কথাটা অর্চনা, নীতা বা লক্ষ্মীকে সে জানায়নি, সে ভেবেছিল হঠাৎ করে সকলে চমকে উঠবে সবাইকে দেখে। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শুনে সে বেশ মুষরেই পড়ল। মাসি মেসোরা এলে সবচেয়ে বেশী খুশী হত বোধহয় লক্ষ্মীদিই। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতেই সীমন্তিনী কিংশুককে বলল, “ভাই, তেমনই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তো করার আর কিছুই নেই। কিন্তু শোনো ভাই। এখন তো চারটে বেজেই গেছে। যদি আর আধ ঘন্টার মধ্যে ট্রেন না পাও তাহলে বরং বাড়িই ফিরে যেও তোমরা। জানি, খারাপ লাগবে। খারাপ তো আমারও লাগছে। কত আশা করে ছিলুম যে আজ প্রথমবার তোমরা সবাই আমার এখানে আসবে। কিন্তু সাড়ে চারটের পর ট্রেন পাওয়া গেলেও এখানে এসে পৌঁছোতে পৌঁছোতে রাত হয়ে যাবে। ওভাবে আসবার দরকার নেই। রাস্তায় যদি ট্রেন আরো লেট করে, তাহলে তোমরা অসুবিধেয় পড়তে পার। তাই আজ বরং তোমরা বাড়িই ফিরে যাও। পরে কোনদিন বরং সময় সুযোগ মত তোমরা আসতে পারবে। আমি অর্চুকে বুঝিয়ে বলে দেব সবকিছু”।
কিংশুক “আচ্ছা, ঠিক আছে দিদিভাই” বলতে সীমন্তিনী ফোন কেটে দিল।
(To be cont'd ......)
______________________________