Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 187)

নবনীতা বাড়ি ফিরল রাত আটটা কুড়িতে। নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক বদলে সীমন্তিনীর ঘরে এসে বসতেই লক্ষ্মী সকলের জন্য চা দিয়ে গেল। টুকটাক কথা বলতে বলতে চা খাওয়া শেষ করে প্রায় ন’টা নাগাদ সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা নীতা অর্চু, একটা কথা শোন। আমি এখন মহিমা মালহোত্রা সেনকে ফোন করব। ফোনের স্পীকার অন করে দেব। তোরা সব শুনতে পাবি। কিন্তু তোরা মুখে কোন শব্দ করবি না প্লীজ। কারন আমি চাইনা মহিমা ম্যাডাম জেনে ফেলুক যে আমার সাথে বসে আরো কেউ আমাদের কথা শুনছে, বুঝেছিস তো”?

নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে সীমন্তিনী অর্চনাকে ল্যান্ডলাইন ফোনটা বিছানায় আনতে বলে উঠে গিয়ে ওয়ারড্রোব খুলে ইউনিফর্মের পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে আবার বিছানায় এসে বসল। ফোন এসে গেলে একবার দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল রাত ঠিক ন’টা। মহিমার নাম্বার ডায়াল করবার প্রায় সাথে সাথেই মহিমার সাড়া পেল, “আমি তোমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম মন্তি, বল কী বলবে”?

মহিমা সীমন্তিনীকে ‘মন্তি’ বলে ডাকছে আর ‘তুমি’ করে বলছে শুনে নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই কিছুটা অবাক হল। সীমন্তিনী তখন ফোনে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তোমাকে দুপুরে যে কাজটা করতে বলেছিলুম, সেটা করেছ”?

সীমন্তিনীর মুখে ‘বৌদি’ সম্বোধন শুনে নবনীতা আর অর্চনা আরেক দফা অবাক হল। কিন্তু মহিমা ওদিক থেকে সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ, আমার সবগুলো ব্যাঙ্ক একাউন্টে আজকের তারিখে মোট পনের কোটি বাইশ লক্ষ চুরাশী হাজার আটশ’ তেইশ টাকা আছে”।
 

সীমন্তিনী টাকার অঙ্কটা শুনে চমকে উঠল। একই অবস্থা নবনীতা আর অর্চনারও। সীমন্তিনী নিজেকে সংযত করে বলল, “এ তো অনেক টাকা গো বৌদি? আচ্ছা এক মিনিট বৌদি, একটু লাইনে থেকো” বলে প্যান্টের পকেট থেকে আনা কাগজটার ভাঁজ খুলে বিছানায় ভাল করে পেতে বলল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার মন এ ব্যাপারে তৈরী তো”?

মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ মন্তি। আমি অনেক ভেবেছি এ ব্যাপারে। আমার মনে আর কোনও দ্বিধা নেই। তুমি এখন আমাকে এমন একটা পরামর্শ দাও, যাতে করে এই টাকার পাহাড়ের বোঝা আমি কমাতে পারি। এ বোঝা বইতে বইতে দিনে দিনে আমার মেরুদন্ড ঝুঁকে যাচ্ছে। আমি তো তোমাকে দুপুরেই বললাম, এখন আমার শুধু ওই তিনটে ইচ্ছে। ওই তিনটে ইচ্ছে পূরণ হলে আমার মরতেও দ্বিধা থাকবে না”।

সীমন্তিনী বলল, “ছিঃ অমন কথা বলোনা বৌদি। তুমি না থাকলে আমার দাদাভাই আর রচুসোনার পাশে কে থাকবে? তোমাকে আরও আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে হবে ওদের জন্য, আরও অনেকের জন্য। শোনো বৌদি, তোমার মনে যে এমন একটা সৎবুদ্ধি জেগে উঠেছে, সেটা দেখে আমার সত্যিই খুব ভাল লাগছে। এখন আমি তোমাকে কিছু পরামর্শ দেব। সে পরামর্শ মত কাজ করলে তোমার দুটো ইচ্ছেই কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ণ হবে। আর আমার পরামর্শ মানো বা নাই মানো, তোমার তৃতীয় ইচ্ছেটা এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে যাবে”।

মহিমা এবার প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কী বলছ তুমি মন্তি? আমার তৃতীয় ইচ্ছে তো বিমলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া! সেটার কথাই বলছ তুমি? আমি সত্যি ওই রাহুটার হাত থেকে মুক্তি পাব”?

মহিমা শান্ত কন্ঠে জবাব দিল, “হ্যাঁ বৌদি, আমি সত্যি বলছি। তোমাকে অবশ্য এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না এখনই। যেদিন তোমার সাথে আমার মুখোমুখি দেখা হবে, সেদিন হয়ত তোমাকে সবটা খুলে বলতে পারব। তাই, এ ব্যাপারে তুমি এখন আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না। আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। তবে আমার মন বলছে, অমনটাই হবে। এবারে তোমার অন্য দুটো ইচ্ছের ব্যাপারেই আমরা কথা বলব এখন”।
 

মহিমা ওদিক থেকে উচ্ছ্বসিত গলায় বলে বলে উঠল, “তোমার কথাটা শুনে আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে, তা তোমায় বলে বোঝাতে পারব না মন্তি। ওই তোমাদের বাংলায় কি যেন একটা কথা আছে না? ফুলচন্দন না এমনই কিছু...দুর ছাই মনে পড়ছে না এখন.... ও হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক। সত্যি সত্যি তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক বোন। তবে ঠিক আছে, তুমি যখন এ ব্যাপারে আর প্রশ্ন করতে বারণ করছ, তাহলে আর কিছু জিজ্ঞেস করছি না। বেশ এবারে বলো, টাকাগুলো নিয়ে আমি কি করি”।

সীমন্তিনী এবার একটু শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “বৌদি, তুমি একটা কথা বলো তো। এই যে তোমার কাছে এখন যত টাকা আছে, মানে তুমি যা বললে ওই পনের কোটি সামথিং। ওই টাকাটা কি পুরোটাই কাজে লাগিয়ে দিতে চাও? না, তোমার নিজের জন্যেও এর থেকে কিছু রেখে দিতে চাও”?

মহিমা জবাব দিল, “সত্যি বলছি মন্তি, আমার তো খুব ইচ্ছে ছিল আট দশ লাখ টাকা দিয়ে রতীশকে একটা যোগা ইনস্টিটিউট খুলে দেব। কিন্তু তুমিই তো তাতে আপত্তি করছ। তবে আমার নিজের জন্যে আর আমি একটা পয়সাও বাঁচিয়ে রাখতে চাই না। আমি আমার সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে আমার মেয়েগুলোকে ভবিষ্যতে সৎপথে চলবার উপায় করে দিতে চাই”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বেশ, তাহলে মন দিয়ে শোনো বৌদি। তোমার কাছে তো এখন আটচল্লিশ জন মেয়ে আছে। এদের প্রত্যেককে যদি তুমি পাঁচ লাখ করে টাকা দিয়ে দাও, তাহলে ওই পাঁচ লাখ টাকায় তো তারা সবাই কোন না কোন ব্যবসা খুলতে পারবে, তাই না”?

মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ পাঁচ লাখ টাকায় একটা ব্যবসা তো শুরু করাই যায়। কিন্তু আটচল্লিশ জনকে পাঁচ লাখ করে দিলেও তো মোটে দু’ কোটি চল্লিশ লাখ টাকাই যাবে আমার। আচ্ছা ধরলাম তাতে না হয় বড়জোর তিন কোটি টাকাই গেল। বাকি বারো কোটিই তো পড়ে থাকবে আমার কাছে। আর শুধু ক্যাপিটাল হলেই কি ব্যবসা করা যায় মন্তি? ব্যবসা খুলবার জন্য একটা দোকান, কমপ্লেক্স বা জায়গার প্রয়োজন তো পড়বেই। আর আজকাল এ শহরে একটা ছোটখাটো দোকান ঘর ভাড়া নিতে গেলেও হাজার হাজার টাকা সেলামী দিতে হয়। আমার মেয়েগুলো এ’সব কিভাবে যোগাবে”?
 

সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনে বলল, “হ্যাঁ, তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি বৌদি। কিন্তু আমাকে আগে সবটা বলতে দাও। সবটা শান্তভাবে শোনো, তারপর তোমার যা বলার থাকবে বলো। শোনো, তাদের সকলকে ব্যবসার মূলধন হিসেবে পাঁচ পাঁচ লাখ টাকা দিলে সেখানে খরচ হচ্ছে দু’ কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা। এবার তাদের দোকান বা জায়গার কথা বলি”।

সীমন্তিনী নিজের সামনে বিছানায় পেতে রাখা কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে বলল, “তুমি যদি এমন একটা বড়সড় জায়গা কিনে নিতে পারো যেখানে পঞ্চাশটা দোকান ঘর বানিয়ে ফেলা যায়, তাহলে তো ওদের সেলামী দেবার কোন ব্যাপার থাকে না। আমার মনে হয় ছ’হাজার স্কয়ার ফিটের একটা জায়গায় যদি তিনতলা একটা বিল্ডিং বানিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তাতে পঞ্চাশ থেকে ষাটটা দোকান ঘর হয়ে যাবে অনায়াসেই। আনুমানিক হিসেবে একটা তিনশ’ স্কয়ার ফিটের একটা রুমের খরচ যদি পাঁচ লাখ করে ধরি, তাহলে ষাট রুমের পুরো বিল্ডিংটা তৈরী করতে তিন কোটি টাকার মত লাগবে। আর এটা জমির দাম সহ হিসেব করেই বলছি। এরপর ধরো, অমন একটা শপিং মল বানাতে গেলে লিফট, সিঁড়ি, এলিভেটর, আর কিছু ইন্টেরিয়র ডেকারেশন আর কিছুটা বিউটিফিকেশনেরও প্রয়োজন আছে। এ’সবের জন্য হয়ত আরও দেড় বা দু’কোটি টাকার মত লাগবে। তাহলে বিল্ডিং তৈরী করতে তোমাকে পাঁচ কোটি খরচ করতে হবে। আর ওদিকে মূলধনের যোগান দিতে খরচ হচ্ছে দু’কোটি চল্লিশ লক্ষ, আচ্ছা ধরা যাক তিন কোটিই। তাহলে মোট খরচ হচ্ছে আট কোটি টাকা। আর এবার দ্যাখো, একটা বিল্ডিং তো আর একদিনেই তৈরী করা যাবে না। পঞ্চাশ ষাটটা রুমের একটা তিনতলা বিল্ডিং বানাতে এক বছরও লেগে যেতে পারে। কিন্তু তোমার বর্তমান ব্যবসা যদি এখনই বন্ধ করে দিতে চাও, তাহলে মেয়েগুলো এই একটা বছর তাদের সংসার কি দিয়ে চালাবে? আর যদি তুমি ভাবো যে এক বছর ওরা আগের মতই কাজ করতে থাকুক। অন্যদিকে বিল্ডিংএর কাজ চলতে থাকুক। বিল্ডিং যখন কমপ্লিট হয়ে যাবে তখনই তুমি তাদের হাতে ব্যবসার মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে দেবে, সেক্ষেত্রে তো তোমার ব্যাঙ্ক একাউন্টে আরও কত কোটি টাকা জমে যাবে। তাই আমার মনে হয় এমন সিদ্ধান্ত নেবার সাথে সাথেই তুমি এ ব্যবসাটা বন্ধ করে দাও। কিন্তু মেয়েগুলো যাতে আবার বিপথে চলে না যায়, আর তারা যাতে তাদের সংসার চালানো নিয়ে কোন সমস্যায় না পড়ে, সেজন্য প্রত্যেকটা মেয়েকেই ব্যবসা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে মাসে ওদের কিছু টাকা দিলেই হবে। তাতে তাদের সংসার প্রতিপালনে আর কোন সমস্যা হবে না। তখন তাদের মনে যদি সত্যিই সৎপথে বাঁচবার ইচ্ছে থাকে তাহলে এক বছর বাদে যখন বিল্ডিংটা কমপ্লিট হয়ে যাবে, তখন তারা কোন একটা ব্যবসা শুরু করতে পারবে। আচ্ছা বৌদি, তোমার মেয়েরা মাসে মাসে কত রোজগার করে গো, একটু বলো না”।

মহিমা জবাব দিল, “সেটা তো দু’পক্ষের প্রয়োজন আর শারীরিক ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে মন্তি। একদিকে কাস্টমারের ডিমান্ড অন্যদিকে নিজেদের চাহিদা এবং শারীরিক ক্ষমতা। এমনিতে নরম্যালি এক একটা মেয়ে মাসে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বা ষাট হাজার রোজগার করে। তবে কারো কারো পরিবারে আর্থিক চাহিদাটা একটু বেশী থাকে। তখন তারা বেশী কাস্টমার নিয়ে মাসে সত্তর বা আশি হাজার টাকা রোজগার করে। আর এমন একজন আছে, যার সংসারে তাকে নিয়ে মাত্র তিনটে প্রাণী, কিন্তু বাবা আর ভাইয়ের চিকিৎসাতেই প্রতি মাসে মেয়েটার প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তোমাকে তো বীথিকার কথা আগেও বলেছিলাম মন্তি। তোমার হয়তো মনে নেই। ও এখন প্রায় রোজই যত বেশী সম্ভব কাস্টমার নিতে শুরু করেছে। তবু সারা মাসে তিন লাখ সাড়ে তিন লাখের বেশী কামাতে পারেনা। বাকি টাকাটা, মানে প্রতি মাসে দু’ আড়াই লাখ টাকা আমি ওকে আলাদাভাবে দিই। মেয়েটার জন্যে ভীষণ কষ্ট হয় গো। ও-ই আমার সবচেয়ে পুরনো আর বিশ্বস্ত”।
 

সীমন্তিনী বলল, “না না বৌদি, আমার ঠিকই মনে আছে। ওর বাবা বিছানায়, আর একটা পঙ্গু ভাই গাড়ি দুর্ঘটণায় আহত হয়ে হাসপাতালে আছে কোমায়। সপ্তাহে সপ্তাহে সত্তর লক্ষ টাকা হাসপাতালে জমা দিতে হয়, এ’সব তুমি বলেছিলে। আমারও মনে আছে। আচ্ছা ওর ব্যাপারে না হয় আলাদা করে কিছু হিসেবে ধরা যাবে। তবে অন্য সবগুলো মেয়েকেই যদি মাসে ষাট থেকে সত্তর হাজার করে তুমি দাও তাহলে তো আর তাদের সংসার চালাবার জন্য আর কোন চিন্তা করতে হবে না। আর তোমার ওই বীথিকাকে বেশী দেবার ব্যাপারটা ধরেই গড়পড়তা হিসেবে ধর একেকটা মেয়েকে মাসে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। তাহলে আটচল্লিশটা মেয়েকে দিতে মাসে আটচল্লিশ লক্ষ টাকা মানে এক বছরে পাঁচ কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ টাকা লাগবে। তাহলে দ্যাখো সব কিছু মিলিয়ে তোমাকে খরচ করতে হচ্ছে তেরো কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ টাকা। তোমার হাতে আছে পনের কোটি বাইস লক্ষ। তার মানে তোমার হাতে এরপরেও এক কোটি ছেচল্লিশ লক্ষ টাকা থেকে যাবে। আর কনস্ট্রাকশনের কাজের হিসেবে একটু কম বেশী হতেই পারে। তাছাড়া আমি যে হিসেব করছি সেটাই তো অ্যাকুরেট হিসেব হবে না। ভাল করে প্ল্যান আর এস্টিমেট বানালে টাকার এমাউন্টে এদিক ওদিক হবেই। আর তাছাড়াও সঠিক এস্টিমেট বানিয়ে কাজ শুরু করলেও, দিনে দিনে কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে হাতে একটু বাড়তি ফান্ড রাখতেই হবে। তাই আপাততঃ এই হিসেবে ওই এক কোটি ছেচল্লিশ লক্ষ যে বাড়তি হচ্ছে, সেটা সত্যি সত্যি অতটা না-ও হতে পারে। আর সে যাই হোক, আমি মনে করি ওটুকু হাতে রাখাই ভাল। কমপ্লেক্সটা পুরোপুরি ভাবে চালু হয়ে গেলে তখন তোমার হাতে বাড়তি কতটুকু থেকে যায়, তা ডিসপোজ করার কথা ভাবা যাবে”।
 

এতগুলো কথা বলার পর সীমন্তিনী একটু দম নিয়ে বলল, “কী মনে হচ্ছে বৌদি? রাজি আছ তুমি”?

মহিমা একটু সময় বাদে ও’পাশ থেকে জবাব দিল, “তোমার এতসব হিসেবের কথা শুনে আমি তো ঘাবড়ে যাচ্ছি মন্তি! তুমি আমার জন্য এতখানি ভেবেছ দেখে আমি সত্যিই খুব অবাক হচ্ছি। ঈশ, তুমি আমার জীবনে আরও আগে কেন আসোনি গো? তাহলে আমাকে আর গলা পর্যন্ত এমন নর্দমায় ডুবে যেতে হত না” বলতে বলতে মহিমা কেঁদে ফেলল। অনেকক্ষণ সে আর কোন কথাই বলতে পারল না।
 

এদিকে নবনীতা আর অর্চনারও একের পর এক বিস্ময়ের ধাক্কায় এমন অবস্থা হয়েছে যে তারা নিজেদের মুখে হাত চেপে ধরে চোখ বড়বড় করে সীমন্তিনীর দিকে দেখতে দেখতে নিজেদের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। প্রায় মিনিট খানেক পর সীমন্তিনী আবার বলল, “বৌদি, তুমি ঠিক আছ তো? কেঁদো না গো। তোমার মত মেয়ে, যে অন্য অনেকগুলো মানুষের কথা ভেবে তাদের ভাল পথে আনতে চায়, তাদের ভাল চায়, তাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে ভাল লাগেনা গো। নিজেকে শান্ত করো। আর ভাল করে আমার কথাগুলো ভেবে দ্যাখো। তারপর তোমার মতামত জানিও আমাকে”।
 

মহিমা এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “আর কী ভাবব গো বোন? আমি বুঝতে পেরেছি, আমার ভাগ্য বিধাতা আর কেউ নয় গো। তোমার রচুসোনাই এখন আমার ভাগ্যদেবী। আজ আমি বুঝতে পারছি, রচনাকে প্রথমদিন দেখবার পর থেকেই আমার ভেতরটা এমন উথাল পাথাল করছিল কেন। রচনার দেখা পেয়েছিলাম বলেই না তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। আর তুমিই আজ পরিত্রাতা হয়ে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছ। আনন্দে আমার গলা বন্ধ হয়ে আসছে মন্তি। আমি আর কথা বলতে পারছিনা গো। আমি তোমার সাথে কাল কথা বলব। তবে শুধু এটুকু জেনে নাও, তোমার পরামর্শ আমি মানতে রাজি আছি। আমি তোমার সাথে পরে ......” বলে থেমে গেল।

সীমন্তিনী “বৌদি, বৌদি, হ্যালো বৌদি, শুনছ”? বলেও ও’পাশ থেকে সাড়া না পেয়ে ফোন নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে বসে রইল।

অনেকক্ষণ ঘরের সবাই নিশ্চুপ থাকবার পর নবনীতা ফোনের সেটটা অর্চনার হাতে দিয়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ও দিদি, তুমি মন খারাপ করছ কেন গো? তুমি তো ম্যাডামকে খুব ভাল একটা সাজেশনই দিয়েছ”।

সীমন্তিনী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “সে তুই ঠিকই বলেছিস নীতা। আসলে মহিমা বৌদির সাথে আমি প্রথম যেদিন কথা বলেছিলুম, সেদিনই আমার মনে হয়েছিল বৌদি কোনও বোর্ন ক্রিমিন্যাল নয়। তারপর তার সাথে আরও কয়েকবার কথা বলার পর জানতে পারলুম সে এই পাপ ব্যবসা করতে করতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বৌদিই আমাকে বলেছিল যে তার হাতে এতদিনে অনেক টাকা জমে গেছে। সে টাকা গুলো সে তার ছেলে মেয়ে স্বামী কাউকে দিতে তো পারবেনই না, এমনকি সে টাকার কথাও কারো কাছে খুলে বলতেও পারবে না”।
 

অর্চনাও জায়গা মতো ফোনটা রেখে এসে সীমন্তিনীর আরেকপাশে বসে তার একটা হাত নিজের হাতে নিল। সীমন্তিনী বলতে লাগল, “তখন সেইই আমাকে অনুরোধ করেছিল যে আমি তাকে কোন ভাল পরামর্শ দিতে পারি কি না। সে এ ব্যবসা বন্ধ করে দেবার কথা ভেবেও মেয়েগুলোর দুরবস্থার কথা ভেবেই সেটা করতে পারেনি। সে ভেবেছিল যে সে তার ব্যবসা বন্ধ করে দিলে মেয়েগুলো হয়তো অন্য এসকর্ট প্রোভাইডারদের কাছে চলে যাবে, আর নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তুলবে। আর সত্যি কথা বলতে, মহিমা বৌদি এতদিন যাবত যে অসামাজিক কাজ করে চলেছে তাতে তাকে অ্যারেস্ট করে তাকে আদালতে তোলাই একজন পুলিশ অফিসারের কাজ। কিন্তু আমি পরির শিষ্যা। পরি অনেক অপরাধী আর দুস্কৃতীকে সৎপথে টেনে এনে অপরাধের জগৎ থেকে সরিয়ে এনেছে। আজ ওই সমস্ত লোকগুলো খুব সুখে আছে। আর পরিতোষের জন্য তারা নিজেদের প্রাণ দিতে পারে। আমারও খুব ইচ্ছে ছিল এমন করে কাউকে অপরাধের জগৎ থেকে সরিয়ে এনে সমাজের মূল স্রোতে প্রতিষ্ঠিত করতে। যদিও আইনের চোখে বিচার করলে এ’সব কাজ করলে আমরাও দোষী বলে বিবেচিত হব। কিন্তু অনেক মহাপুরুষেরা যেমন বলে গেছেন যে ‘অপরাধকে ঘৃণা কর, অপরাধীকে নয়’, পরিতোষও আমাকে সে শিক্ষাই দিয়েছে। এমন অনেক অপরাধী আছে যারা পুলিশের হাতে ধরা পরে, আদালতের নির্দেশে বছরের পর বছর জেল খেটে বেরিয়ে এসে, আবার আগের মতই অপরাধে ডুবে গেছে। সেটা তো কারুরই কাম্য নয়। আমাদের আইন ব্যবস্থাও সেটা চায় না। আদালতের অপরাধীদের সাজা দেবার পেছনেও এমনই একটা উদ্দেশ্য থাকে। তাই আগে যেমন আমরা বলতুম জেলখানা, এখন সে পরিভাষাটা বদলে দেওয়া হয়েছে। এখন বলা হয় সংশোধনাগার। তার মানে আইন আদালত সক্কলেই চায় জেলে ঢোকা সমস্ত অপরাধীই যেন শুধরে বের হয়ে আসে। জেল থেকে বেরোবার পর তারা যেন আর ওই অন্ধকারের জগতে চলে না যায়। কিন্তু আমাদের দেশের সিস্টেমই এই। অবশ্য অপরাধের সাজা দেওয়ার প্রথা সব সভ্য সমাজেই থাকা দরকার। তবুও মনে হয় কোন কোন অপরাধীকে জেল হাজত ফাঁসি না দিয়ে তাদের যদি ভালভাবে বাঁচবার একটু সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে মনে হয় অনেক অপরাধীই অপরাধের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসত। তবে এটা ঠিক, শুধু আমরা তেমন ভাবলেই চলবে না। ওই অপরাধীর মনেও এমন সদিচ্ছা থাকা খুবই দরকার। তাই আমিও ভাবছিলুম যে তেমন কোন অপরাধীর দেখা পেলে তাকে আমি কোনভাবে সৎপথে ফিরিয়ে আনতুম। কিন্তু তেমন সুযোগ পাচ্ছিলুম না। মহিমা বৌদির মনের ভেতর অনেক দেরীতে হলেও এমনই একটা ইচ্ছে যে জেগে উঠেছে, সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলুম। তারপর পরির সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছি। পরিও আমায় উৎসাহ দিয়েছে। তাই মহিমা বৌদিকে এ’সব কথা বললুম। আর পরিতোষও আমাকে কথা দিয়েছে যে আমি যদি সত্যি সেটা করতে পারি তাহলে সেও খুব খুশী হবে। আর সে জন্যেই ও আমাকে কথা দিয়েছে যে যতদিন পর্যন্ত আমি মহিমা বৌদিকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাব, ততদিন সে তাকে কোনও আইনী ঝামেলায় ফেলবে না। তবে মহিমা বৌদি যদি আগের মতই ওই অসৎ ব্যবসা নিয়ে মেতে থাকে তাহলে সে পুলিশের হাত থেকে আর বেশীদিন বাঁচবে না। তবে মহিমা বৌদির কথা শুনে আমার মনে হয়েছে যে সে আন্তরিক ভাবেই এ’সব থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু তার ব্যবসার সাথে যেসব মেয়েরা যুক্ত আছে, তাদের কোন রকম বিপদে ফেলতে সে চায় না। তাই অনেক ভেবে এমন একটা পথ আমি বেছে নিলুম, যাতে মহিমা বৌদিও নিজের পাপের ব্যবসায় উপার্জিত টাকাগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারবে, আর সাথে সাথে তার দলের মেয়েরাও সৎপথে থেকে উপার্জন করতে পারবে”।
 

নবনীতা সীমন্তিনীর কাঁধে নিজের গাল চেপে ধরে বলল, “দিদি, আমি তো ম্যাডামের সাথে খুব বেশীদিন মেলামেশা করিনি। তবে যেটুকু তাকে চিনেছি তাতে তাকে আমার খুব ভাল মনের একটা মানুষ বলেই মনে হয়েছে। আর বীথির মুখে তো তার অনেক প্রশংসাই শুনেছি। তাই আমার মনে হয় উনি তোমাকে কিছু বানিয়ে বা মিথ্যে বলেনি। উনি হয়ত সত্যিই এখন এমনটাই করতে চাইছেন। তুমি একটু চেষ্টা করো দিদি। আমাকে যেমন তুমি একটা নর্দমা থেকে তুলে এনেছ, তেমনিভাবে ম্যাডাম আর ম্যাডামের সাথে সাথে বীথি আর বীথির মত আরও অনেক গুলো মেয়েকে তুমি বাঁচাও”।
 

সীমন্তিনী নবনীতার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল, “নাক যখন গলিয়েছি, আর মহিমা বৌদি যখন কিছুটা হলেও সাড়া দিয়েছে, তাহলে চেষ্টা তো করবই। শেষ অব্দি চেষ্টা করব। এখন তোর ম্যাডাম আর ওই মেয়েগুলো সেটা মন থেকে চাইলে, আর এতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে, নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু একটু সময় তো লাগবেই। দেখি মহিমা বৌদি এবার কি বলেন”।
 

অর্চনা এবার বলল, “তোমার কথা শুনে উনি যেভাবে কেঁদে ফেললেন, তাতে তো মনে হয় তার এতদিনের ক্রিয়া কর্মের জন্য তিনি মনে প্রাণে অনুতপ্ত। আর মনে হচ্ছে, তোমার পরামর্শও উনি নিশ্চয়ই মানবেন”।


******************
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 21-03-2020, 07:14 PM



Users browsing this thread: 13 Guest(s)