21-03-2020, 07:14 PM
(Update No. 186)
শেখর ব্যাগটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা গিফট প্যাক বের করে সেটা খুলে ফেলল। গিফট প্যাকের ভেতর থেকে কতকগুলো সিডি বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “সব মিলে স্যার তেরোটা এপিসোড রেকর্ড করা হয়েছে। আর প্রত্যেকটা এপিসোডই আলাদা আলাদা করে সিডি বানিয়েছি। আর এক থেকে তেরো অব্দি সিরিয়ালি নাম্বার দিয়ে দিয়েছি”।
একটা সিডির প্যাকেট হাতে নিয়ে আবার বলল, “এই দেখুন স্যার, এটার সাথে একটা ছোট স্টিকার লাগানো আছে। আর তাতে লেখা আছে (11) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F. এখানে অফিস আর রেস্টরুমের মানে তো বুঝতেই পাচ্ছেন। ওটা লিখে লোকেশানটা বোঝাতে চেয়েছি আমরা। ফাদার মানে হচ্ছে বিমল আগরওয়ালা। আর ওয়ান এফ মানে হচ্ছে বিমলের সাথে একজন মেয়ে বা মহিলা। অফিসের রেস্ট রুমের তিনটে সিডি আছে। তবে সব কটাই যে ওয়ান এফ এন্ডিং তা নয়। একটা টু এফ এন্ডিং সিডিও আছে। মানে ওটাতে বিমলের সাথে দু’জন মহিলা বা মেয়ে আছে। আর শুরুতে যে ইলেভেন লেখা আছে সেটা সিডির সিরিয়াল নাম্বার। এক থেকে তেরো নাম্বারের সিডি এখানে আছে। অন্যান্য সবগুলো সিডির প্যাকেটের ওপরেই এমন ধরণের স্টিকার লাগিয়ে তাতে এমন ধরণেরই কিছু কোড লিখে দিয়েছি, যাতে করে আপনার বুঝতে কোনও অসুবিধে না হয়” বলে আরেকটা সিডির প্যাকেট হাতে তুলে দেখিয়ে বলল, “আর এটা দেখুন স্যার। এটাতে লেখা আছে (1) HOUSE-MOTHER+SON+4TB. এর মানে হচ্ছে এটা সিডি নাম্বার ওয়ান আর বিমলের বাড়ির লোকেশানের সিডি, আর এটাতে যাদের দেখা যাবে তারা হল মাদার মানে বিমলের স্ত্রী, সন মানে বিমলের ছেলে বিকি, আর ফোর টিবি মানে হচ্ছে চারজন টিনেজার বয়। আসলে এরা বিকিরই বন্ধুবান্ধব”।
তারপর আরও একটা সিডি বেছে নিয়ে বলল, “এটা দেখুন স্যার, এতে কিন্তু কোডটা আবার আলাদা। এতে লেখা আছে (5) HOTEL-MOTHER + SON + 1F. এর মানে হচ্ছে এটা পাঁচ নাম্বার সিডি, আর এটার লোকেশান হচ্ছে বিমলের স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার ভাড়া নেওয়া হোটেল রুম। এতে যারা আছে তারা হল সবিতা, তার ছেলে বিকি আর অন্য আরেকজন মহিলা। আর আরও এক লোকেশানের সিডি আছে” বলে সিডিগুলো নাড়াচাড়া করে আরেকটা সিডি হাতে নিয়ে বলল, “এই যে স্যার, এটা। এটাতে কোড লেখা আছে (12) FARM HOUSE-FATHER+1F. যার মানে হচ্ছে বারো নাম্বার সিডিতে দক্ষিণেশ্বরের ওই ফার্ম হাউসে বিমলের সাথে একজন মহিলা আছে। এই চারটে লোকেশানের মোট তেরোটা সিডি এখানে আছে। বাড়ির চারটে, ফার্ম হাউসের দুটো, অফিসের রেস্টরুমের তিনটে আর হোটেলের চারটে। এখানে তো তেরোটা আছেই, আর অনুপমার সাথে বিমলের একটা সিডি তো আগেই রেকর্ড করা ছিল ওই রবিশঙ্করের কেসটার সময়। সেটা তো বলেছিলেন যে আপনার কাছে আছে। সেটা কি এনেছেন স্যার”?
পরিতোষ নিজের কোটের পকেট থেকে একটা সিডি বের করে শেখরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, এই নে। এটাতেও একটা স্টিকার লাগিয়ে কোড লিখে দিতে পারলে ভাল হয়”।
বিপ্লব হাত বাড়িয়ে সিডিটা নিতে নিতে বলল, “দিচ্ছি স্যার, এখনই লাগিয়ে দিচ্ছি”। বলে শেখরের ব্যাগটার ভেতর থেকে স্টিকার আর মার্কার পেন বের করে স্টিকারটাকে সিডির প্যাকেটের ওপর লাগিয়ে দিয়ে তার ওপর লিখে দিল (14) BOROBAZAR-FATHER+1F.
পরিতোষের কানে গেট খোলার আওয়াজ আসতেই সে বলল, “বিট্টু আসবে এখন এ ঘরে। তাই এগুলো চট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফ্যাল। পরে কথা বলব এ নিয়ে”।
শেখর তাড়াহুড়ো করে সবগুলো সিডি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে না ফেলতেই বাইরে থেকে বিট্টুর গলা শোনা গেল, “দাদা, চা এনেছি। আসব”?
পরিতোষ টেবিলের দিকে একবার দেখে জবাব দিল, “হ্যাঁ আয়”।
বিট্টু ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপর চায়ের ফ্লাস্ক আর পকোড়ার প্যাকেটটা রাখতে রাখতে বলল, “আমি ঘর থেকে কাপ নিয়ে আসছি দাদা” বলেই বেড়িয়ে গেল। আর খানিক বাদেই চারটে খালি কাপ এনে তিনটে কাপে চা ঢেলে বলল, “ফ্লাস্কে আরও তিন কাপের মত চা রইল দাদা। পরে খেতে পারবেন। আর এটা রাখুন” বলে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট পরিতোষের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “পঞ্চাশ টাকাতেই হয়ে গেছে”।
পরিতোষ কোন কথা না বলে বিট্টুর হাত থেকে টাকাটা নিতেই বিট্টু সকলের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে পরিতোষের অনুমতি নিয়ে চলে গেল। পরিতোষ শেখর আর বিপ্লবকে বলল, “নে পকোড়াও নে। আর শোন। আমাদের হাতে তাহলে চারটে লোকেশানের সিডি আছে, তাই তো? অবশ্য অনুপমার ওটা নিয়ে পাঁচটা লোকেশান হল। তোরা লোকেশান হিসেবে সিডিগুলোকে ভাগ করে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখ”।
চা খেতে খেতেই শেখর আর বিপ্লব মিলে চৌদ্দটা সিডিকে পাঁচটা ভাগে ভাগ করল। তারপর আরেকবার সবগুলোকে ভাল ভেবে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার, হয়ে গেছে”।
পরিতোষ এক ভাগের চারটে সিডি হাতে নিয়ে দেখল একটা সিডির প্যাকেটের ওপরে কোড লেখা আছে (1) HOUSE-MOTHER+SON+4TB, দ্বিতীয় সিডিটার গায়ে কোড লেখা আছে (2) HOUSE-MOTHER+ SON +1F, তৃতীয় সিডির কভারে কোড লেখা (3) HOUSE-MOTHER+2TB, আর চতুর্থ সিডিটার কভারে লেখা আছে (4) HOUSE-MOTHER+SON. পরিতোষ কোডগুলোর যথাযথ মানে বুঝতে পেরে আশ্বস্ত হয়ে সিডিগুলোকে টেবিলের একদিকে রেখে আরেকটা ভাগ তুলে নিল। সে ভাগেও চারটে সিডির প্যাকেটের ওপর লেখা কোড গুলো দেখল, (5) HOTEL-MOTHER+SON+1F, (6) HOTEL-MOTHER+1MM, (7) HOTEL-MOTHER+2TB আর (8) HOTEL-MOTHER +1TB।
দ্বিতীয় ভাগের সিডিগুলো টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “একটাতে ওয়ান এমএম লিখেছিস। এটার মানে কি একজন পুরুষ”?
বিপ্লব জবাব দিল “হ্যাঁ স্যার অনেকটা তাই। তবে টিবি মানেও যে টিনেজার বয় বললাম, ওরাও তো পুরুষই, তাই এমএমটাকে শুধু পুরুষ বলে ধরবেন না। বরং ম্যাচিওরড মেল বলে ধরুন। আর সেজন্যেই ডাবল এম লিখে দিয়েছি”।
পরিতোষ ছোট করে ‘হু’ বলে আরেক ভাগের সিডি হাতে তুলে নিল। আর সেগুলোর প্যাকেটের ওপর লেখা কোডগুলো দেখল। একটায় (9) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F, আরেকটায় (10) OFFICE-RESTROOM-FATHER+2F, আর শেষেরটাতেও (11) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F। অর্থগুলো তার কাছে বোধগম্য বলেই মনে হল। শেষের ভাগে মাত্র দুটো সিডি। সে দুটোতে একই কোড লেখা FARM HOUSE-FATHER +1F । তবে সিরিয়াল নাম্বারগুলো আলাদা। (12) আর (13)।
সিডিগুলোর কোড ভাল করে বুঝে নেবার পর পরিতোষ বলল, “সিডিগুলো ফল্টলেস আছে তো? চেক করে দেখেছিস তো ভাল করে”?
বিপ্লব বলল, “হ্যাঁ স্যার, এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। কোনটাতে কোন ফল্ট নেই”।
পরিতোষ আবার জিজ্ঞেস করল, “আর পেন ড্রাইভে দিস নি”?
বিপ্লব তাড়াতাড়ি ব্যাগের ভেতর থেকে একটা পেন ড্রাইভ বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “এই যে স্যার। এর ভেতরেই ওই তেরোটা ফাইল একই রকম কোড দিয়ে দেওয়া আছে”।
পরিতোষ এবার একবার নিজের হাতঘড়ির দিকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “আর তোদের অপারেশন কমপ্লিট করতে কত খরচ হয়েছে। কাকে কত দিয়েছিস, আর কাকে কাকে আরও কত টাকা দিতে হবে তার হিসেবটা কোথায়”?
শেখর ব্যাগের ভেতরের একটা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা পরিতোষের হাতে দিল। পরিতোষ কাগজটা খুলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চোখ বুলিয়ে বলল, “তোদের টোটাল খরচ হচ্ছে তাহলে সাড়ে পাঁচ লাখ। আর হেল্পার চার জনকে সব মিলে মোট চল্লিশ হাজার তোরা অলরেডি পেমেন্ট করে দিয়েছিস, তাই তো”?
শেখর জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, ওদের আগাম ওটুকু না দিলে কাজগুলো সাড়া যাচ্ছিল না। তবে বাকি যা যাকে দেবার আছে সে’সব মাসখানেক পরেই তারা পেয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছি”।
পরিতোষ শান্ত স্বরে বলল, “একমাস লাগবে নারে। সতেরো তারিখেই আমাদের ফাইনাল অপারেশন শেষ হয়ে যাবে। তবে সেদিনই তোদেরকে টাকাটা দিতে পারব না। হয়তো দু’একদিন দেরী হতে পারে। তবে সেটা আমি ঠিক সময়মত তোদের জানিয়ে দেব। আর একটা ছোট্ট কাজ তোকে করতে হবেরে বিপ্লব”।
বিপ্লব উৎসুক ভাবে বলল, “হ্যাঁ, বলুন স্যার”।
পরিতোষ নিজের পকেট থেকে একটা মোবাইল সিম বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই সিমটার লোকেশান ট্র্যাক করা যাতে সম্ভব না হয়, সে ব্যবস্থা কর। আর এতে যেন কোন ইনকামিং কল না ঢোকে। দু’দিন সময় পাবি। এর মধ্যে কাজটা করে সিমটা আমাকে ফেরত দিবি। খেয়াল রাখিস দু’দিনের বেশী আর একদিনও সময় কিন্তু পাবি না”।
বিপ্লব নিজের পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “স্যার সিমটা কি অ্যাক্টিভ আছে, না এখনও অ্যাক্টিভেটেড হয়নি”?
পরিতোষ জবাব দিল, “আজ সকালেই এটা অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে”।
বিপ্লব বলল, “তাহলে আর এটা নিয়ে যাবার দরকার পড়বে না। এক মিনিট সময় দিন আমাকে” বলে নিজের হাতের মোবাইলের ব্যাকপ্লেট খুলে ফোন থেকে আগের সিমটা বের করে পরিতোষের কাছ থেকে নেওয়া সিমটা মোবাইলে ঢুকিয়ে মোবাইলটা সুইচ অন করে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে সেখান থেকেই একটা নাম্বারে কল করল। আবার নিজেই কলটা কেটে দিয়ে নিজের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে সেটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে, আগের মোবাইল থেকে পরিতোষের সিমটা খুলে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “সিমটা রেখে দিন স্যার। এটা আমার নেবার দরকার নেই আর। আর দু’দিন নয়। আজ রাতেই আমি প্রয়োজনীয় কাজটা সেরে ফেলব। আজ রাত বারোটার পর থেকে এ সিমের লোকেশান সারা পৃথিবীতে কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। আর কোন ইনকামিং কলও এ নাম্বারে ঢুকবে না। আমি আপনাকে কাজটা করেই জানিয়ে দেব”।
পরিতোষ সিমটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে বলল, “ওকে, তোরা তাহলে এবার যা। আমাকে আরও কিছুক্ষণ থাকতে হবে এখানে”।
শেখর আর বিপ্লব বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে পরিতোষ আব্দুলকে ফোন করে বলল, “কোথায় আছিস”?
আব্দুল জবাব দিল, “স্যার আমি তো বিট্টুদের বাড়ি থেকে পঞ্চাশ গজ দুরেই আছি”।
পরিতোষ সাথে সাথে বলল, “তাহলে পেছনের রাস্তা দিয়ে চলে আয় আর দেরী না করে”।
মিনিট পাঁচেক বাদেই আব্দুল এসে পরিতোষের সামনে হাজির হল। পরিতোষ তাকে বলল, “ফ্লাস্কে চা আছে, আর এই প্যাকেটে কিছু পকোড়া আছে। এগুলো তুই খা, আর দুটো কাপে চা ঢাল। এক কাপ আমাকে দে”।
মিনিট দুয়েক বাদেই চা খেতে খেতে পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “বল, তোর ওদিকের সব কিছু তৈরী তো? না আরও কিছু বাকি আছে”?
আব্দুলও চা আর পকোড়া খেতে খেতে জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, আমি সবরকম ভাবে প্রস্তুত আছি। ছ’টা গাড়ি, চোদ্দ জন মেম্বার, একটা অ্যাম্বুলেন্স, সব রেডি আছে স্যার। এখন আপনি আমাকে ম্যাটেরিয়ালস গুলো দিলেই আমি কাজে নেমে পড়তে পারি”।
পরিতোষ টেবিলের ওপরে রাখা জিনিসগুলোর দিকে ঈশারা করে বলল, “তোর সব ম্যাটেরিয়ালস এখানে হাজির আছে। এগুলো আগে দেখে নে। আর সিডি গুলোর ওপরে যে কোড গুলো লেখা আছে সে’গুলো ভাল করে বুঝে নে” বলে কোড গুলোর মানে আর পেনড্রাইভে ফাইলগুলো কিভাবে স্টোর করা আছে, এ সমস্ত ব্যাপারে সব কিছু বিশদভাবে বলে বুঝিয়ে জিজ্ঞেস করল, “বুঝেছিস সবটা? না আর কোন কনফিউশান আছে”?
আব্দুল সিডিগুলো ভাল করে দেখতে দেখতে বলল, “না স্যার, আর কোনও কনফিউশান নেই। সবটাই বুঝেছি”।
পরিতোষ এবার নিজের পকেট থেকে সিমকার্ডটা বের করে আব্দুলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “কাল একটা নতুন মোবাইল কিনবি। এমন মোবাইল কিনবি, যেটাতে ইউএসবি ডিভাইস লাগানো যায়। সে মোবাইলে এ সিমটা লাগাবি। এটা তে ইনকামিং বন্ধ থাকবে। শুধু আউটগোয়িং কলই হবে। আর এটাকে আজ রাত বারোটার পর থেকে কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। এটা থেকেই কাল সকালে আমাকে তুই একটা কল করবি। আর এ নম্বরটা তোর টিমের সবাইকে জানিয়ে দিবি। তোর সব টিমের সাথে কথা বলবার জন্য তুই কাল থেকে এ মোবাইলটাই ব্যবহার করবি। যদি কেউ তোকে কন্টাক্ট করতে চায় তাহলে তোর আগের নম্বরগুলোর মধ্যে কোনটাতে কল করতে বলবি। কিন্তু তুই যখন তাদেরকে ফোন করবি, তখন শুধু এই সিমটা থেকেই করবি। আর কাল থেকেই তুই তোর কাজ শুরু করে দিবি। মানে বিমলকে প্রথম ডেলিভারিটা কালই করবি। আর মনে রাখিস যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম, তা থেকে যেন একচুলও এদিক সেদিক না হয়। কোনও দিকে কিন্তু একটুও বেচাল হলে চলবে না। এই মোবাইলেই পেন ড্রাইভটাকে ব্যবহার করবি শুধু। আর যে কোডের জিনিস মোবাইল থেকে পাঠাবি, ঠিক সে কোডের সিডিই যেন ডেলিভারি হয় এদিকেও কড়া নজর রাখবি। আর বিমলকে যখন কল করবি, তখনও এই নতুন ফোন থেকেই করবি। ঠিক আছে”?
আব্দুল খুব মন দিয়ে পরিতোষের কথাগুলো শুনে বলল, “হ্যাঁ স্যার, বুঝেছি। কোনও ভুল হবে না। কিন্তু স্যার, আমি একটা কথা ভাবছিলাম। ফাইনাল অপারেশনের স্পটটা অতদুরে না করে একটু কাছাকাছি করা যেত না”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “তুই কেন এ’কথা বলছিস সেটা আমি জানি। কিন্তু সেটা হবে না রে আব্দুল। আমি অনেক ভেবেচিন্তেই এমন ভাবে প্ল্যান করেছি। যাতে তুই আমি, আর আমরা সবাই সবরকম ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকি। কেউ যদি কিছু আন্দাজ করেও ফেলে, তারা আমার আর তোর লোকেশান জানতে বা বুঝতে পারলেই তাদের মাথা থেকে সে’ ভাবনা সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। তবে খেয়াল রাখিস, ফাইনাল অপারেশনটা করতে হচ্ছে কিন্তু সতেরো তারিখেই। তবে, নিজের চোখে অপারেশনটা দেখবার লোভ কিন্তু একেবারেই করিস না। সেদিন সকাল থেকে তুই কিন্তু কোন অবস্থাতেই তোর বাড়ি আর গ্যারেজ ছাড়া আর কোথাও যাবি না। তোর গ্যারেজের কাজে যদি বাইরে কোথাও যেতেই হয় একান্তই, তাহলে সেখানে নিজে না গিয়ে তোর গ্যারেজের অন্য কাউকে পাঠাবি। আবার বলছি, তুই সেদিন সকাল থেকে নিজের বাড়ি আর গ্যারেজেই শুধু থাকবি। সেখানে থেকেই নতুন ফোনের মাধ্যমে সকলের সাথে যোগাযোগ রেখে যাবি। আর অ্যাম্বুলেন্সটাকে সাতটা থেকে সওয়া সাতটার ভেতরে স্পটে পাঠিয়ে দিবি। আর অপারেশন স্পট থেকে খুব বেশী দুরে রাখবি না। যাতে ফাইনাল কাজটা হয়ে গেলেই একদম সময় নষ্ট না করে সেখান থেকে ওকে তুলে নিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সাড়ে সাতটা থেকে সাতটা চল্লিশের ভেতর ফাইনাল অপারেশনটা ওভার হয়ে গেলে, ঠিক আটটা থেকে সওয়া আটটার মধ্যেই কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটাকে হাসপাতালে পৌঁছে যেতে হবে। এতে যেন কোন ভুল না হয়”।
আব্দুল সব শুনে বলল, “হ্যাঁ স্যার, আপনার প্ল্যানের সবকিছুই আমার মনে আছে। আর সেভাবে তৈরীও হচ্ছি। সবাইকে সেভাবেই রেডি করে রেখেছি। কাজে কোনও রকম কোনও গণ্ডগোল হবেনা স্যার। কিন্তু স্যার, আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা তো বাদই রয়ে গেল। টাকার অঙ্কটা”?
পরিতোষ মনে মনে এক মিনিট ভেবে বলল, “ওটা এক কোটিতে ফাইনাল করিস। আর তোকে সেদিনও বলেছি টাকাটা হাতে আসবার পর সেটাকে তুই তোর কাছেই নিয়ে রাখবি। সতেরো তারিখে আমরা কেউ কারো সাথে দেখা করব না। ফোনেই শুধু কথা হবে। তুই আমাকে তোর ওই নতুন মোবাইল থেকেই শুধু কল করবি। তোদের সকলের পাওনা গণ্ডা চুকিয়ে বুকিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমার সাথে বা তোর টিমের মেম্বারদের সাথে কথা বলবার সময় কিন্তু ওই নতুন নাম্বার ছাড়া অন্য কোন নাম্বার থেকে ফোন একদম করবি না। কাল সকাল থেকে শুরু করে পেমেন্ট না পাওয়া অব্দি ওই ফোনটাকেই শুধু ব্যবহার করবি। আমি প্রয়োজন পড়লে তোর পার্সোনাল মোবাইলে মিস কল দেব। আমার মিস কল পেলে তুই সাথে সাথে নতুন নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করবি। সতেরো তারিখ রাতে ডাক্তারের কাজটা শেষ হয়ে যাবার পর তোর সাথে আমার কথা হবে। তখন তোকে জানিয়ে দেব টাকাটা কখন কোথায় নিয়ে যেতে হবে। তখন এই সিমটাও আমি তোর কাছ থেকে নিয়ে নেব, বুঝেছিস”?
আব্দুল বলল, “হ্যাঁ বুঝেছি স্যার। কিন্তু স্যার প্ল্যানে তো আমার সে রাতে হাসপাতালে থাকার কথা ছিল”!
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ সে রকমই ছিল বটে। কিন্তু হাসপাতালের প্ল্যানে কিছু চেঞ্জ করা হয়েছে। তাই তোর আর ওখানে যাবার দরকার নেই। ওটা অন্যভাবে হয়ে যাবে। তুই তোর বাড়িতেই থাকবি। তবে ফাইনাল স্পটে যাবার আগেই যেন তোর টিমের কেউ টাকাটা আদায় করে তোর কাছে নিয়ে আসে, এভাবে ঠিক কর”।
আব্দুল মনে মনে একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে স্যার। হয়ে যাবে। তবে আমাকে আরও একজন বাড়তি লোক নিতে হবে”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে, নিয়ে নে। বাড়তি একজনকে পেমেন্ট দিতেও কোন অসুবিধে হবে না” বলে মাথা নিচু করে প্রায় মিনিট দুয়েক ভেবে জিজ্ঞেস করল, “আর কিছু বলার আছে তোর”?
আব্দুলও এ দু’মিনিট চুপচাপ বসে বসে গোটা ব্যাপারটা মনে মনে আরেকবার ঝালিয়ে নিচ্ছিল। এবার পরিতোষের প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে বলল, “না স্যার, আর কিছু বলবার নেই। সব কিছু একদম ক্লিয়ার”।
পরিতোষ একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বলল, “তাহলে এ ম্যাটেরিয়ালস গুলো নিয়ে চলে যা। আর দেরী করার দরকার নেই। তবে মনে রাখিস, কাল সকালে ওই নতুন মোবাইল কিনে প্রথম কলটা করবি আমাকে। তারপর তোর কাজ শুরু করবি। আর সতেরো তারিখ”।
আব্দুল নিজের পকেটের ভেতর থেকে একটা ব্যাগ বের করে পেনড্রাইব আর সিডিগুলো ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “ঠিক আছে স্যার, তাই হবে। তাহলে আমি বেরিয়ে পড়ি স্যার”?
পরিতোষও উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ আয়, গুড নাইট”।
আব্দুলের সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে তাকে পেছনের গেট দিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে পরিতোষ বিট্টুর মার ঘরের দিকে চলল। বিট্টুর মার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তার হাতে চা খেয়ে বাড়ির সামনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
*****************
______________________________
শেখর ব্যাগটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা গিফট প্যাক বের করে সেটা খুলে ফেলল। গিফট প্যাকের ভেতর থেকে কতকগুলো সিডি বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “সব মিলে স্যার তেরোটা এপিসোড রেকর্ড করা হয়েছে। আর প্রত্যেকটা এপিসোডই আলাদা আলাদা করে সিডি বানিয়েছি। আর এক থেকে তেরো অব্দি সিরিয়ালি নাম্বার দিয়ে দিয়েছি”।
একটা সিডির প্যাকেট হাতে নিয়ে আবার বলল, “এই দেখুন স্যার, এটার সাথে একটা ছোট স্টিকার লাগানো আছে। আর তাতে লেখা আছে (11) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F. এখানে অফিস আর রেস্টরুমের মানে তো বুঝতেই পাচ্ছেন। ওটা লিখে লোকেশানটা বোঝাতে চেয়েছি আমরা। ফাদার মানে হচ্ছে বিমল আগরওয়ালা। আর ওয়ান এফ মানে হচ্ছে বিমলের সাথে একজন মেয়ে বা মহিলা। অফিসের রেস্ট রুমের তিনটে সিডি আছে। তবে সব কটাই যে ওয়ান এফ এন্ডিং তা নয়। একটা টু এফ এন্ডিং সিডিও আছে। মানে ওটাতে বিমলের সাথে দু’জন মহিলা বা মেয়ে আছে। আর শুরুতে যে ইলেভেন লেখা আছে সেটা সিডির সিরিয়াল নাম্বার। এক থেকে তেরো নাম্বারের সিডি এখানে আছে। অন্যান্য সবগুলো সিডির প্যাকেটের ওপরেই এমন ধরণের স্টিকার লাগিয়ে তাতে এমন ধরণেরই কিছু কোড লিখে দিয়েছি, যাতে করে আপনার বুঝতে কোনও অসুবিধে না হয়” বলে আরেকটা সিডির প্যাকেট হাতে তুলে দেখিয়ে বলল, “আর এটা দেখুন স্যার। এটাতে লেখা আছে (1) HOUSE-MOTHER+SON+4TB. এর মানে হচ্ছে এটা সিডি নাম্বার ওয়ান আর বিমলের বাড়ির লোকেশানের সিডি, আর এটাতে যাদের দেখা যাবে তারা হল মাদার মানে বিমলের স্ত্রী, সন মানে বিমলের ছেলে বিকি, আর ফোর টিবি মানে হচ্ছে চারজন টিনেজার বয়। আসলে এরা বিকিরই বন্ধুবান্ধব”।
তারপর আরও একটা সিডি বেছে নিয়ে বলল, “এটা দেখুন স্যার, এতে কিন্তু কোডটা আবার আলাদা। এতে লেখা আছে (5) HOTEL-MOTHER + SON + 1F. এর মানে হচ্ছে এটা পাঁচ নাম্বার সিডি, আর এটার লোকেশান হচ্ছে বিমলের স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার ভাড়া নেওয়া হোটেল রুম। এতে যারা আছে তারা হল সবিতা, তার ছেলে বিকি আর অন্য আরেকজন মহিলা। আর আরও এক লোকেশানের সিডি আছে” বলে সিডিগুলো নাড়াচাড়া করে আরেকটা সিডি হাতে নিয়ে বলল, “এই যে স্যার, এটা। এটাতে কোড লেখা আছে (12) FARM HOUSE-FATHER+1F. যার মানে হচ্ছে বারো নাম্বার সিডিতে দক্ষিণেশ্বরের ওই ফার্ম হাউসে বিমলের সাথে একজন মহিলা আছে। এই চারটে লোকেশানের মোট তেরোটা সিডি এখানে আছে। বাড়ির চারটে, ফার্ম হাউসের দুটো, অফিসের রেস্টরুমের তিনটে আর হোটেলের চারটে। এখানে তো তেরোটা আছেই, আর অনুপমার সাথে বিমলের একটা সিডি তো আগেই রেকর্ড করা ছিল ওই রবিশঙ্করের কেসটার সময়। সেটা তো বলেছিলেন যে আপনার কাছে আছে। সেটা কি এনেছেন স্যার”?
পরিতোষ নিজের কোটের পকেট থেকে একটা সিডি বের করে শেখরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, এই নে। এটাতেও একটা স্টিকার লাগিয়ে কোড লিখে দিতে পারলে ভাল হয়”।
বিপ্লব হাত বাড়িয়ে সিডিটা নিতে নিতে বলল, “দিচ্ছি স্যার, এখনই লাগিয়ে দিচ্ছি”। বলে শেখরের ব্যাগটার ভেতর থেকে স্টিকার আর মার্কার পেন বের করে স্টিকারটাকে সিডির প্যাকেটের ওপর লাগিয়ে দিয়ে তার ওপর লিখে দিল (14) BOROBAZAR-FATHER+1F.
পরিতোষের কানে গেট খোলার আওয়াজ আসতেই সে বলল, “বিট্টু আসবে এখন এ ঘরে। তাই এগুলো চট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফ্যাল। পরে কথা বলব এ নিয়ে”।
শেখর তাড়াহুড়ো করে সবগুলো সিডি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে না ফেলতেই বাইরে থেকে বিট্টুর গলা শোনা গেল, “দাদা, চা এনেছি। আসব”?
পরিতোষ টেবিলের দিকে একবার দেখে জবাব দিল, “হ্যাঁ আয়”।
বিট্টু ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপর চায়ের ফ্লাস্ক আর পকোড়ার প্যাকেটটা রাখতে রাখতে বলল, “আমি ঘর থেকে কাপ নিয়ে আসছি দাদা” বলেই বেড়িয়ে গেল। আর খানিক বাদেই চারটে খালি কাপ এনে তিনটে কাপে চা ঢেলে বলল, “ফ্লাস্কে আরও তিন কাপের মত চা রইল দাদা। পরে খেতে পারবেন। আর এটা রাখুন” বলে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট পরিতোষের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “পঞ্চাশ টাকাতেই হয়ে গেছে”।
পরিতোষ কোন কথা না বলে বিট্টুর হাত থেকে টাকাটা নিতেই বিট্টু সকলের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে পরিতোষের অনুমতি নিয়ে চলে গেল। পরিতোষ শেখর আর বিপ্লবকে বলল, “নে পকোড়াও নে। আর শোন। আমাদের হাতে তাহলে চারটে লোকেশানের সিডি আছে, তাই তো? অবশ্য অনুপমার ওটা নিয়ে পাঁচটা লোকেশান হল। তোরা লোকেশান হিসেবে সিডিগুলোকে ভাগ করে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখ”।
চা খেতে খেতেই শেখর আর বিপ্লব মিলে চৌদ্দটা সিডিকে পাঁচটা ভাগে ভাগ করল। তারপর আরেকবার সবগুলোকে ভাল ভেবে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার, হয়ে গেছে”।
পরিতোষ এক ভাগের চারটে সিডি হাতে নিয়ে দেখল একটা সিডির প্যাকেটের ওপরে কোড লেখা আছে (1) HOUSE-MOTHER+SON+4TB, দ্বিতীয় সিডিটার গায়ে কোড লেখা আছে (2) HOUSE-MOTHER+ SON +1F, তৃতীয় সিডির কভারে কোড লেখা (3) HOUSE-MOTHER+2TB, আর চতুর্থ সিডিটার কভারে লেখা আছে (4) HOUSE-MOTHER+SON. পরিতোষ কোডগুলোর যথাযথ মানে বুঝতে পেরে আশ্বস্ত হয়ে সিডিগুলোকে টেবিলের একদিকে রেখে আরেকটা ভাগ তুলে নিল। সে ভাগেও চারটে সিডির প্যাকেটের ওপর লেখা কোড গুলো দেখল, (5) HOTEL-MOTHER+SON+1F, (6) HOTEL-MOTHER+1MM, (7) HOTEL-MOTHER+2TB আর (8) HOTEL-MOTHER +1TB।
দ্বিতীয় ভাগের সিডিগুলো টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “একটাতে ওয়ান এমএম লিখেছিস। এটার মানে কি একজন পুরুষ”?
বিপ্লব জবাব দিল “হ্যাঁ স্যার অনেকটা তাই। তবে টিবি মানেও যে টিনেজার বয় বললাম, ওরাও তো পুরুষই, তাই এমএমটাকে শুধু পুরুষ বলে ধরবেন না। বরং ম্যাচিওরড মেল বলে ধরুন। আর সেজন্যেই ডাবল এম লিখে দিয়েছি”।
পরিতোষ ছোট করে ‘হু’ বলে আরেক ভাগের সিডি হাতে তুলে নিল। আর সেগুলোর প্যাকেটের ওপর লেখা কোডগুলো দেখল। একটায় (9) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F, আরেকটায় (10) OFFICE-RESTROOM-FATHER+2F, আর শেষেরটাতেও (11) OFFICE-RESTROOM-FATHER+1F। অর্থগুলো তার কাছে বোধগম্য বলেই মনে হল। শেষের ভাগে মাত্র দুটো সিডি। সে দুটোতে একই কোড লেখা FARM HOUSE-FATHER +1F । তবে সিরিয়াল নাম্বারগুলো আলাদা। (12) আর (13)।
সিডিগুলোর কোড ভাল করে বুঝে নেবার পর পরিতোষ বলল, “সিডিগুলো ফল্টলেস আছে তো? চেক করে দেখেছিস তো ভাল করে”?
বিপ্লব বলল, “হ্যাঁ স্যার, এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। কোনটাতে কোন ফল্ট নেই”।
পরিতোষ আবার জিজ্ঞেস করল, “আর পেন ড্রাইভে দিস নি”?
বিপ্লব তাড়াতাড়ি ব্যাগের ভেতর থেকে একটা পেন ড্রাইভ বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “এই যে স্যার। এর ভেতরেই ওই তেরোটা ফাইল একই রকম কোড দিয়ে দেওয়া আছে”।
পরিতোষ এবার একবার নিজের হাতঘড়ির দিকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “আর তোদের অপারেশন কমপ্লিট করতে কত খরচ হয়েছে। কাকে কত দিয়েছিস, আর কাকে কাকে আরও কত টাকা দিতে হবে তার হিসেবটা কোথায়”?
শেখর ব্যাগের ভেতরের একটা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা পরিতোষের হাতে দিল। পরিতোষ কাগজটা খুলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চোখ বুলিয়ে বলল, “তোদের টোটাল খরচ হচ্ছে তাহলে সাড়ে পাঁচ লাখ। আর হেল্পার চার জনকে সব মিলে মোট চল্লিশ হাজার তোরা অলরেডি পেমেন্ট করে দিয়েছিস, তাই তো”?
শেখর জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, ওদের আগাম ওটুকু না দিলে কাজগুলো সাড়া যাচ্ছিল না। তবে বাকি যা যাকে দেবার আছে সে’সব মাসখানেক পরেই তারা পেয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছি”।
পরিতোষ শান্ত স্বরে বলল, “একমাস লাগবে নারে। সতেরো তারিখেই আমাদের ফাইনাল অপারেশন শেষ হয়ে যাবে। তবে সেদিনই তোদেরকে টাকাটা দিতে পারব না। হয়তো দু’একদিন দেরী হতে পারে। তবে সেটা আমি ঠিক সময়মত তোদের জানিয়ে দেব। আর একটা ছোট্ট কাজ তোকে করতে হবেরে বিপ্লব”।
বিপ্লব উৎসুক ভাবে বলল, “হ্যাঁ, বলুন স্যার”।
পরিতোষ নিজের পকেট থেকে একটা মোবাইল সিম বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই সিমটার লোকেশান ট্র্যাক করা যাতে সম্ভব না হয়, সে ব্যবস্থা কর। আর এতে যেন কোন ইনকামিং কল না ঢোকে। দু’দিন সময় পাবি। এর মধ্যে কাজটা করে সিমটা আমাকে ফেরত দিবি। খেয়াল রাখিস দু’দিনের বেশী আর একদিনও সময় কিন্তু পাবি না”।
বিপ্লব নিজের পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “স্যার সিমটা কি অ্যাক্টিভ আছে, না এখনও অ্যাক্টিভেটেড হয়নি”?
পরিতোষ জবাব দিল, “আজ সকালেই এটা অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে”।
বিপ্লব বলল, “তাহলে আর এটা নিয়ে যাবার দরকার পড়বে না। এক মিনিট সময় দিন আমাকে” বলে নিজের হাতের মোবাইলের ব্যাকপ্লেট খুলে ফোন থেকে আগের সিমটা বের করে পরিতোষের কাছ থেকে নেওয়া সিমটা মোবাইলে ঢুকিয়ে মোবাইলটা সুইচ অন করে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে সেখান থেকেই একটা নাম্বারে কল করল। আবার নিজেই কলটা কেটে দিয়ে নিজের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে সেটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে, আগের মোবাইল থেকে পরিতোষের সিমটা খুলে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “সিমটা রেখে দিন স্যার। এটা আমার নেবার দরকার নেই আর। আর দু’দিন নয়। আজ রাতেই আমি প্রয়োজনীয় কাজটা সেরে ফেলব। আজ রাত বারোটার পর থেকে এ সিমের লোকেশান সারা পৃথিবীতে কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। আর কোন ইনকামিং কলও এ নাম্বারে ঢুকবে না। আমি আপনাকে কাজটা করেই জানিয়ে দেব”।
পরিতোষ সিমটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে বলল, “ওকে, তোরা তাহলে এবার যা। আমাকে আরও কিছুক্ষণ থাকতে হবে এখানে”।
শেখর আর বিপ্লব বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে পরিতোষ আব্দুলকে ফোন করে বলল, “কোথায় আছিস”?
আব্দুল জবাব দিল, “স্যার আমি তো বিট্টুদের বাড়ি থেকে পঞ্চাশ গজ দুরেই আছি”।
পরিতোষ সাথে সাথে বলল, “তাহলে পেছনের রাস্তা দিয়ে চলে আয় আর দেরী না করে”।
মিনিট পাঁচেক বাদেই আব্দুল এসে পরিতোষের সামনে হাজির হল। পরিতোষ তাকে বলল, “ফ্লাস্কে চা আছে, আর এই প্যাকেটে কিছু পকোড়া আছে। এগুলো তুই খা, আর দুটো কাপে চা ঢাল। এক কাপ আমাকে দে”।
মিনিট দুয়েক বাদেই চা খেতে খেতে পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “বল, তোর ওদিকের সব কিছু তৈরী তো? না আরও কিছু বাকি আছে”?
আব্দুলও চা আর পকোড়া খেতে খেতে জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার, আমি সবরকম ভাবে প্রস্তুত আছি। ছ’টা গাড়ি, চোদ্দ জন মেম্বার, একটা অ্যাম্বুলেন্স, সব রেডি আছে স্যার। এখন আপনি আমাকে ম্যাটেরিয়ালস গুলো দিলেই আমি কাজে নেমে পড়তে পারি”।
পরিতোষ টেবিলের ওপরে রাখা জিনিসগুলোর দিকে ঈশারা করে বলল, “তোর সব ম্যাটেরিয়ালস এখানে হাজির আছে। এগুলো আগে দেখে নে। আর সিডি গুলোর ওপরে যে কোড গুলো লেখা আছে সে’গুলো ভাল করে বুঝে নে” বলে কোড গুলোর মানে আর পেনড্রাইভে ফাইলগুলো কিভাবে স্টোর করা আছে, এ সমস্ত ব্যাপারে সব কিছু বিশদভাবে বলে বুঝিয়ে জিজ্ঞেস করল, “বুঝেছিস সবটা? না আর কোন কনফিউশান আছে”?
আব্দুল সিডিগুলো ভাল করে দেখতে দেখতে বলল, “না স্যার, আর কোনও কনফিউশান নেই। সবটাই বুঝেছি”।
পরিতোষ এবার নিজের পকেট থেকে সিমকার্ডটা বের করে আব্দুলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “কাল একটা নতুন মোবাইল কিনবি। এমন মোবাইল কিনবি, যেটাতে ইউএসবি ডিভাইস লাগানো যায়। সে মোবাইলে এ সিমটা লাগাবি। এটা তে ইনকামিং বন্ধ থাকবে। শুধু আউটগোয়িং কলই হবে। আর এটাকে আজ রাত বারোটার পর থেকে কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। এটা থেকেই কাল সকালে আমাকে তুই একটা কল করবি। আর এ নম্বরটা তোর টিমের সবাইকে জানিয়ে দিবি। তোর সব টিমের সাথে কথা বলবার জন্য তুই কাল থেকে এ মোবাইলটাই ব্যবহার করবি। যদি কেউ তোকে কন্টাক্ট করতে চায় তাহলে তোর আগের নম্বরগুলোর মধ্যে কোনটাতে কল করতে বলবি। কিন্তু তুই যখন তাদেরকে ফোন করবি, তখন শুধু এই সিমটা থেকেই করবি। আর কাল থেকেই তুই তোর কাজ শুরু করে দিবি। মানে বিমলকে প্রথম ডেলিভারিটা কালই করবি। আর মনে রাখিস যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম, তা থেকে যেন একচুলও এদিক সেদিক না হয়। কোনও দিকে কিন্তু একটুও বেচাল হলে চলবে না। এই মোবাইলেই পেন ড্রাইভটাকে ব্যবহার করবি শুধু। আর যে কোডের জিনিস মোবাইল থেকে পাঠাবি, ঠিক সে কোডের সিডিই যেন ডেলিভারি হয় এদিকেও কড়া নজর রাখবি। আর বিমলকে যখন কল করবি, তখনও এই নতুন ফোন থেকেই করবি। ঠিক আছে”?
আব্দুল খুব মন দিয়ে পরিতোষের কথাগুলো শুনে বলল, “হ্যাঁ স্যার, বুঝেছি। কোনও ভুল হবে না। কিন্তু স্যার, আমি একটা কথা ভাবছিলাম। ফাইনাল অপারেশনের স্পটটা অতদুরে না করে একটু কাছাকাছি করা যেত না”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “তুই কেন এ’কথা বলছিস সেটা আমি জানি। কিন্তু সেটা হবে না রে আব্দুল। আমি অনেক ভেবেচিন্তেই এমন ভাবে প্ল্যান করেছি। যাতে তুই আমি, আর আমরা সবাই সবরকম ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকি। কেউ যদি কিছু আন্দাজ করেও ফেলে, তারা আমার আর তোর লোকেশান জানতে বা বুঝতে পারলেই তাদের মাথা থেকে সে’ ভাবনা সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। তবে খেয়াল রাখিস, ফাইনাল অপারেশনটা করতে হচ্ছে কিন্তু সতেরো তারিখেই। তবে, নিজের চোখে অপারেশনটা দেখবার লোভ কিন্তু একেবারেই করিস না। সেদিন সকাল থেকে তুই কিন্তু কোন অবস্থাতেই তোর বাড়ি আর গ্যারেজ ছাড়া আর কোথাও যাবি না। তোর গ্যারেজের কাজে যদি বাইরে কোথাও যেতেই হয় একান্তই, তাহলে সেখানে নিজে না গিয়ে তোর গ্যারেজের অন্য কাউকে পাঠাবি। আবার বলছি, তুই সেদিন সকাল থেকে নিজের বাড়ি আর গ্যারেজেই শুধু থাকবি। সেখানে থেকেই নতুন ফোনের মাধ্যমে সকলের সাথে যোগাযোগ রেখে যাবি। আর অ্যাম্বুলেন্সটাকে সাতটা থেকে সওয়া সাতটার ভেতরে স্পটে পাঠিয়ে দিবি। আর অপারেশন স্পট থেকে খুব বেশী দুরে রাখবি না। যাতে ফাইনাল কাজটা হয়ে গেলেই একদম সময় নষ্ট না করে সেখান থেকে ওকে তুলে নিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সাড়ে সাতটা থেকে সাতটা চল্লিশের ভেতর ফাইনাল অপারেশনটা ওভার হয়ে গেলে, ঠিক আটটা থেকে সওয়া আটটার মধ্যেই কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটাকে হাসপাতালে পৌঁছে যেতে হবে। এতে যেন কোন ভুল না হয়”।
আব্দুল সব শুনে বলল, “হ্যাঁ স্যার, আপনার প্ল্যানের সবকিছুই আমার মনে আছে। আর সেভাবে তৈরীও হচ্ছি। সবাইকে সেভাবেই রেডি করে রেখেছি। কাজে কোনও রকম কোনও গণ্ডগোল হবেনা স্যার। কিন্তু স্যার, আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা তো বাদই রয়ে গেল। টাকার অঙ্কটা”?
পরিতোষ মনে মনে এক মিনিট ভেবে বলল, “ওটা এক কোটিতে ফাইনাল করিস। আর তোকে সেদিনও বলেছি টাকাটা হাতে আসবার পর সেটাকে তুই তোর কাছেই নিয়ে রাখবি। সতেরো তারিখে আমরা কেউ কারো সাথে দেখা করব না। ফোনেই শুধু কথা হবে। তুই আমাকে তোর ওই নতুন মোবাইল থেকেই শুধু কল করবি। তোদের সকলের পাওনা গণ্ডা চুকিয়ে বুকিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমার সাথে বা তোর টিমের মেম্বারদের সাথে কথা বলবার সময় কিন্তু ওই নতুন নাম্বার ছাড়া অন্য কোন নাম্বার থেকে ফোন একদম করবি না। কাল সকাল থেকে শুরু করে পেমেন্ট না পাওয়া অব্দি ওই ফোনটাকেই শুধু ব্যবহার করবি। আমি প্রয়োজন পড়লে তোর পার্সোনাল মোবাইলে মিস কল দেব। আমার মিস কল পেলে তুই সাথে সাথে নতুন নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করবি। সতেরো তারিখ রাতে ডাক্তারের কাজটা শেষ হয়ে যাবার পর তোর সাথে আমার কথা হবে। তখন তোকে জানিয়ে দেব টাকাটা কখন কোথায় নিয়ে যেতে হবে। তখন এই সিমটাও আমি তোর কাছ থেকে নিয়ে নেব, বুঝেছিস”?
আব্দুল বলল, “হ্যাঁ বুঝেছি স্যার। কিন্তু স্যার প্ল্যানে তো আমার সে রাতে হাসপাতালে থাকার কথা ছিল”!
পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ সে রকমই ছিল বটে। কিন্তু হাসপাতালের প্ল্যানে কিছু চেঞ্জ করা হয়েছে। তাই তোর আর ওখানে যাবার দরকার নেই। ওটা অন্যভাবে হয়ে যাবে। তুই তোর বাড়িতেই থাকবি। তবে ফাইনাল স্পটে যাবার আগেই যেন তোর টিমের কেউ টাকাটা আদায় করে তোর কাছে নিয়ে আসে, এভাবে ঠিক কর”।
আব্দুল মনে মনে একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে স্যার। হয়ে যাবে। তবে আমাকে আরও একজন বাড়তি লোক নিতে হবে”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে, নিয়ে নে। বাড়তি একজনকে পেমেন্ট দিতেও কোন অসুবিধে হবে না” বলে মাথা নিচু করে প্রায় মিনিট দুয়েক ভেবে জিজ্ঞেস করল, “আর কিছু বলার আছে তোর”?
আব্দুলও এ দু’মিনিট চুপচাপ বসে বসে গোটা ব্যাপারটা মনে মনে আরেকবার ঝালিয়ে নিচ্ছিল। এবার পরিতোষের প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে বলল, “না স্যার, আর কিছু বলবার নেই। সব কিছু একদম ক্লিয়ার”।
পরিতোষ একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বলল, “তাহলে এ ম্যাটেরিয়ালস গুলো নিয়ে চলে যা। আর দেরী করার দরকার নেই। তবে মনে রাখিস, কাল সকালে ওই নতুন মোবাইল কিনে প্রথম কলটা করবি আমাকে। তারপর তোর কাজ শুরু করবি। আর সতেরো তারিখ”।
আব্দুল নিজের পকেটের ভেতর থেকে একটা ব্যাগ বের করে পেনড্রাইব আর সিডিগুলো ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “ঠিক আছে স্যার, তাই হবে। তাহলে আমি বেরিয়ে পড়ি স্যার”?
পরিতোষও উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ আয়, গুড নাইট”।
আব্দুলের সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে তাকে পেছনের গেট দিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে পরিতোষ বিট্টুর মার ঘরের দিকে চলল। বিট্টুর মার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তার হাতে চা খেয়ে বাড়ির সামনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
*****************
______________________________