Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 182)

বেয়ারাটা ততক্ষণে প্যাকেট দুটো নিয়ে গাড়ির সামনে চলে এসেছে। ড্রাইভার রামসিংকে প্যাকেটগুলো ভাল মত রাখবার নির্দেশ দিয়ে সীমন্তিনী নবনীতাকে নিয়ে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকল। এগরোল আর চায়ের অর্ডার দিয়ে সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা নীতা, পরির ব্যাপারে তুই সত্যি সত্যি কী ভাবছিস বল তো”?
 

নবনীতা অবাক হয়ে বলল, “তুমি তো বললে অর্চুর ব্যাপারে আলাপ করবে, তাহলে আবার পরির কথা তুলছ কেন দিদি”?

সীমন্তিনী শান্তভাবে বলল, “বলছি, তার কারন আছে। এবার আমি যা জিজ্ঞেস করছি, তার উত্তর দে। আসলে পরি তো তোর জীবনের সমস্ত ঘটণার কথা জেনেও তোকে বিয়ে করতে রাজী আছে। কিন্তু আমার সামনেই তুই তার সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলিস। আজ আমি আবার তোর কাছে জানতে চাইছি, তুই কি সত্যি ওকে ছেড়ে সারাটা জীবন থাকতে পারবি বোন? পরি যদি আজ অন্য কাউকে বিয়ে করে, তাহলে তুই সেটা সত্যি মন থেকে মেনে নিতে পারবি তো”?
 

নবনীতা মাথা নিচু করে জবাব দিল, “পারতে যে আমাকে হবেই দিদি। যাকে আমি একদিন পরম যত্নে আমার মনের সিংহাসনে বসিয়েছিলাম, তার জীবনে কলঙ্কের ছোঁয়া লাগাতে আমি পারব নাগো দিদি। পরি যদি সত্যিই কাউকে বিয়ে করে সংসারী হয়, তবে প্রথম প্রথম মনে একটু কষ্ট হয়তো পাবো। কিন্তু দিদি, আমি সে ব্যথা সয়ে নিতে পারব। তবু আমি চাই, পরি আমার অপেক্ষায় থেকে নিজের জীবনটা নষ্ট না করে অন্য কোনও মেয়েকে বিয়ে করে সংসারী হোক”।

সীমন্তিনী একটুক্ষণ চুপ করে থেকে প্রায় ফিসফিস করে বলল, “সত্যি বলছিস? পারবি? কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ নয় রে। নিজের পাঁজরের টুকরোকে অন্যের হাতে তুলে দিতে যে কী কষ্ট হয়, সেটা আমি জানি রে নীতা। তুই পারবি সে কষ্ট সইতে”?

নবনীতা এবার আগের চেয়েও দৃঢ় স্বরে বলল, “পারব দিদি। যতই কষ্ট হোক না কেন, পরির ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ওর সুখের কথা ভেবে, আমি সে কষ্ট ঠিক সয়ে নিতে পারব”।

সীমন্তিনী এবার বলল, “শোন নীতা, তুই যদি এ ব্যাপারে আরেকটু ভাল করে ভেবে দেখতে চাস, তাহলে আমি তোকে এক মাস সময় দিতে রাজী আছি। এরমধ্যে তুই আমাকে তোর শেষ সিদ্ধান্ত জানাস”।

নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “এক মাস সময় কেন দিচ্ছ দিদি? তুমি কি পরির জন্য সত্যি কোনও মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছ না কি”?
 

সীমন্তিনী শান্ত স্বরেই জবাব দিল, “অনেকটা তাই। একটা মেয়েকে আমার খুব ভাল লেগেছে। অবশ্য তাকে এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলিনি আমি। কিন্তু পরিতোষকে তো আমরা বলেছি যে আমরা দু’জনে মিলেই ওর জন্য পাত্রী খুঁজব। তাই তোকেও মেয়েটাকে দেখাব। কিন্তু তার আগে তোর মনের ইচ্ছেটা আমার জানা দরকার। তুই যদি ভাবিস যে পরির জীবনে তুই আবার ফিরে আসতে পারবি, হয়ত তাতে আরও কিছু সময়ের দরকার হতে পারে, কিন্তু আমিও তখন খুব খুশী মনে তোদের বিয়েটা মেনে নেব। আমার খুশীর সীমা থাকবে না। তখন অন্য কোন মেয়ে, সে তোর চাইতে হাজার গুণ গুণী আর সুন্দরী হলেও তাকে আমি পরির জন্য নির্বাচন করব না। কারন আমি জানি, পরি এখনও তোকে ভালোবাসে। তাই তোর কাছে পরিষ্কার করে জানতে চাইছি”।

নবনীতা এবার একটু হতাশ ভাব নিয়ে আবার বলল, “আমার কথা ছেড়েই দাও দিদি। কিন্তু তুমি কি সত্যি কাউকে পছন্দ করে ফেলেছ”?

সীমন্তিনী নবনীতার স্বরে এবার একটু অবাক হলেও প্রায় আগের মত শান্ত কন্ঠেই বলল, “বললুমই তো, প্রায় তাই। মেয়েটাকে আমার খুব খুব পছন্দ হয়েছে। তবে তুই তাকে পছন্দ না করলে, বা তুই যদি পরিকে বিয়ে করতে রাজী থাকিস, তাহলে আমি তাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করব না”।

নবনীতা এবার আরও হতাশ হয়ে বলল, “না দিদি, আমি কিছুতেই পরিকে বিয়ে করতে পারব না। কিন্তু দিদি, আমিও যে একটা মেয়েকে মনে মনে পছন্দ করেছি গো পরির জন্যে। সেও ভীষণ সুন্দরী ও গুণী। পরির সাথে ওকে খুব ভাল মানাবে। আর ওকে বিয়ে করে পরি যে সুখী হবে, এ ব্যাপারেও আমি প্রায় নিশ্চিত। আর আমি জানি, তুমিও তাকে অপছন্দ করবে না। কিন্তু তোমাকে কথাটা বলব বলব করেও বলা বয়ে ওঠেনি”।

খাবার এসে যাওয়াতে দু’জনেই একটু চুপ করল। ওয়েটারটা চলে যেতে সীমন্তিনী বলল, “ওমা, তুইও কাউকে পছন্দ করে রেখেছিস পরির জন্যে? কে মেয়েটা? আর তুই তাকে দেখলিই বা কোথায়? তুই তো শুধু বাড়ি আর বসাক গারমেন্টস ছাড়া কোথাও যাসই নি! কোথায় দেখলি তাকে? তোদের বসাক গারমেন্টসেই কাজ করে বুঝি? না তোদের কারখানার কেউ? নাকি তোদের কোনও কাস্টমার? আমি কি তাকে চিনি? বল না, চুপ করে আছিস কেন”?
 

নবনীতা মুখ নিচু করে মনঃক্ষুণ্ণ ভাবে বলল, “কি আর বলব দিদি? তুমি তো আরেকজনকে পছন্দ করে ফেলেছ”।

সীমন্তিনী বলল, “আরে বাবা, আমি পছন্দ করেছি, তাতে কি হল? আমার পছন্দের সাথে সাথে তোর পছন্দটাও তো একই সমান জরুরী। পরিকে আমরা কী কথা দিয়েছিলুম তা কি তুই ভুলে গিয়েছিস? আমি আর তুই দু’জনে মিলেই না ওর জন্যে পাত্রী পছন্দ করব? আচ্ছা তুই বল তো, তুই যাকে পছন্দ করেছিস, সেই মেয়েটা কে? আমি কি তাকে দেখেছি কোথাও”?

নবনীতা এবার মুখ তুলে বলল, “দেখবে না কেন? আমাদের অর্চুকে দেখতে আর তোমার বাকি আছে”?

এগরোলের একটা গ্রাস কেবল সীমন্তিনী মুখে পুরেছিল। নবনীতার কথা শুনে মুখের মধ্যে গ্রাসটা রেখেই সে হাঁ করে নীতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল অবাক চোখে। নবনীতা সীমন্তিনীকে অবাক হতে দেখে ভাবল তার দিদি হয়ত তার কথায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে। এভাবে হুট করেই অর্চনার নামটা বলে ফেলা হয়ত তার উচিৎ হয়নি। একটু রয়ে সয়ে কথাটা বলা তার উচিৎ ছিল। কিন্তু প্রসঙ্গটা কথায় কথায় এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছিল যে সে আর অর্চুর নামটা না বলে থাকতে পারেনি। নইলে অর্চুর সাথে পরির বিয়ে দেবার কথাটা তো বেশ কিছুদিন আগেই তার মাথায় এসেছে। অর্চুর রূপ, মিষ্টি স্বভাব, সুন্দর মনের পরিচয় পেয়ে সে ভেবেছিল সীমন্তিনীর মনোভাবটা বুঝে ধীরে সুস্থে কথাটা তার কাছে পাড়বে। কিন্তু সীমন্তিনী এরই মধ্যে অন্য আরেকটা মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছে শুনেই সে নিজেই বিচলিত হয়ে অর্চনার নামটা এভাবে বলে ফেলল। এ’সব কথা ভেবে সে মাথা নুইয়ে খুব আস্তে করে বলল, “সরি দিদি, আমি জানি, আমি হয়ত ......”

কিন্তু তার কথার শুরুতেই সীমন্তিনী কিছু বলবার জন্য ভেতরে শ্বাস টানতেই খেল প্রচণ্ড বিষম। তাকে বিষম খেতে দেখে নবনীতা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে সীমন্তিনীর পিঠে আস্তে আস্তে চাপড় দিতে দিতে বলল, “দিদি, জল খাও একটু। এই নাও” বলে সীমন্তিনীর মুখের কাছে জলের গ্লাস তুলে ধরল।
 

কিন্তু সীমন্তিনীর কাশির ধাক্কা যেন কমছিলই না। কাশতে কাশতে তার মুখ চোখ লাল হয়ে উঠল। নাকের জল চোখের জল মাখামাখি হতে শুরু করল। সীমন্তিনী নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করবার চেষ্টা করেও কাশির দমকে সেটাও ঠিক করে করে উঠতে পারছিল না। নবনীতা নিজের ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে সীমন্তিনীর হাতে ধরিয়ে দিল। রেস্টুরেন্টের কয়েকজন কর্মচারী আর আশে পাশের টেবিলে বসে থাকা কয়েকজন গ্রাহকও তাদের টেবিলের চারপাশে এসে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল “ম্যাডাম, জলটা খান একটু”, কেউ কেউ নবনীতাকে বলল, “দিদি আপনি ম্যাডামের পিঠে আর কাঁধের পেছনে একটু জোরে জোড়ে চাপড়ে দিন”। কিন্তু কাশির দমক এমন উপর্যুপরি ভাবে আসছিল যে সীমন্তিনীর মুখে জলের গ্লাসটা চেপে ধরতেও নবনীতার ভয় হচ্ছিল। প্রায় মিনিট খানেক ধরে কাশবার পর কাশির দমকটা একটু কমতেই নবনীতা আবার জলের গ্লাসটা সীমন্তিনীর মুখের কাছে নিয়ে বলল, “নাও দিদি, একটু কষ্ট করে এক ঢোঁক জল খাও তো দেখি” বলে সীমন্তিনীর নাক থেকে বেড়িয়ে আসা জল তার রুমাল দিয়ে মুছতে শুরু করল। সীমন্তিনী অনেক কষ্টে একটুখানি জল খেতে পারল। তাতে সামান্য স্বস্তি পেতে আরও দু’ঢোক জল খেল।

সীমন্তিনীর কাশির দমক থামবার পর তার চোখ মুখের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে রেস্টুরেন্টের এক কর্মী বলল, “ম্যাডাম, আপনি এদিকে আসুন। বেসিনে গিয়ে মুখটা একটু ধুয়ে নিন। বড় সাংঘাতিক রকমের একটা বিষম খেয়েছেন আপনি। আসুন এদিকে আসুন”।

নবনীতা সীমন্তিনীকে ধরে চেয়ার থেকে ওঠাবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যাঁ দিদি, চলো”।

সীমন্তিনী হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “ঠিক আছে। তুই বোস। আমি একাই যেতে পারব” বলে নিজেই চেয়ার ছেড়ে উঠে বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল।
 

নবনীতা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সীমন্তিনীর ওপর নজর রাখছিল। এভাবে সীমন্তিনীর বিষম খাওয়া দেখে সে মনে মনে নিজেকেই দোষী ভাবতে শুরু করল। সীমন্তিনী মুখে চোখে জল দিয়ে ফিরে আসবার সময়েই তার পকেটের মোবাইল আবার বেজে উঠল। তাদের সীটের কাছে এসে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে অর্চনার ফোন। সীমন্তিনীর শ্বাস প্রশ্বাস তখনও স্বাভাবিক হয়নি। মোবাইলটা সে নবনীতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে শুধু বলল, “অর্চুর সাথে কথা বল”।

নবনীতা কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ অর্চু, বলো”।

ওদিক থেকে অর্চনা উদ্বিঘ্ন গলায় বলল, “ও নীতাদি? দিদিভাই কোথায় গো? আর তোমরা এখনও আসছ না কেন? কোথায় আছ তোমরা”?

নবনীতা নিজের অস্থিরতাকে যথাসম্ভব সামলাবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “আমরা এখনও বাজারেই আছি গো অর্চু। আমি এখন দিদির সাথেই আছি। আসলে দিদির কাজটা এখনও সারা হয়নি বলেই আমাদের ফিরতে দেরী হচ্ছে”।

অর্চনা আবার জিজ্ঞেস করল, “ও, তার মানে দিদিভাই কাজে ব্যস্ত বলেই বুঝি তোমাকে কথা বলতে বললেন আমার সাথে? কিন্তু তোমাদের দেরী দেখে আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল, তাই ফোনটা না করে থাকতে পারলুম না”।

নবনীতা বলল, “হ্যাঁ অর্চু, তুমি ঠিকই ধরেছ। দিদি কাজে ব্যস্ত বলেই ফোনটা আমি ধরলুম। তবে তুমি দুশ্চিন্তা করো না। আমরা ঠিক আছি। দিদির কাজ বোধহয় আর অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই শেষ হয়ে যাবে, আর তারপর আমরা সোজা বাড়িই যাচ্ছি। তোমরা একদম ভেবো না। আচ্ছা বৌদি কি তোমার ফোনে ফোন করেছিল নাকি গো”?

অর্চনা বলল, “কে রচু? নাহ, সেও আজ এখন অব্দি ফোন করেনি। রোজ তো আটটা সাড়ে আটটার দিকে নিয়ম করে ফোন করে ও। আজ যে কেন ফোন করল না বুঝতে পারছি না। আমি একবার একটু আগে ওর নাম্বারে ফোন করেছিলাম। ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল। কেন যে ধরল না সেটাও বুঝতে পারছি না। দিদিভাই হয়ত কিছু জানতে পারে। তাই দিদিভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলুম আমি”।

নবনীতা বলল, “তুমি অহেতুক চিন্তা করো না অর্চু। বৌদি হয়ত কোন কাজে ব্যস্ত আছে বলেই তোমার ফোনটা ধরতে পারেনি। হয়ত ফোনটা তার হাতের কাছে নেই। কিংবা সে হয়ত ফোনের রিংটোনটা শুনতে পায়নি। তবে সে যে ঠিক আছে সেটা ধরেই নিতে পার। বৌদির তেমন কিছু হলে দিদি আর এখানে এই মূহুর্তে এভাবে কাজে ব্যস্ত থাকতো? তার সব কাজের থেকেও বৌদি অনেক বেশী ইমপর্ট্যান্ট। তা তো তুমি জানোই। সুতরাং বৌদির জন্যেও কোন দুশ্চিন্তা করো না। সে নিশ্চয়ই ঠিক আছে। আর আমরাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসছি। কেমন”?

অর্চনা শান্ত গলায় বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লীজ” বলতে নবনীতা ফোন কেটে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমরা ঘরে ফিরছি না, ওদিকে বৌদিকে ফোন করেও নাকি পায়নি, তাই অর্চু চিন্তা করছে। আচ্ছা, এখন তুমি ঠিক আছ তো দিদি”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ রে এখন ঠিক আছি। চল এবার তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরি। কিন্তু সত্যি বলছি রে নীতা এমন বিষম আমি সারা জীবনেও খাইনি রে। একেবারে দম বন্ধ হয়ে আসছিল, বাবা! শ্বাস নিতেই পারছিলুম না”।

নবনীতাও খাওয়া শুরু করে বলল, “সব আমার দোষ, আমি ওভাবে অর্চুর নামটা না তুললে তো তুমি এভাবে বিষম খেতে না। তবে, তাড়াহুড়ো করোনা দিদি। এখন একটু ধীরে সুস্থে খাও। কিন্তু আমরা বরং চায়ের অর্ডারটা ক্যানসেল করে দিই কি বলো? অর্চুটা একা আছে। খুব চিন্তা করছে”।

সীমন্তিনীও খেতে খেতে বলল, “না, চাটা খেয়েই যাই। ততক্ষণে আমাদের কথাটা নিয়েও আলোচনাটা শেষ করতে পারব। আচ্ছা তুই যে পরির জন্য অর্চুর কথা বললি, তার কারনটা কি বল তো? না, আমি মানছি অর্চু খুবই ভাল মেয়ে। যেমন রূপে তেমনি গুনে। কিন্তু অমন একটা বিধবা মেয়েকে পরি বিয়ে করতে রাজি হবে বলে মনে হয় তোর”?

নবনীতা সাথে সাথে বলল, “কিসের বিধবা? ওকে দেখে কেউ বলতে পারবে যে ও বিধবা? তাছাড়া তুমিই তো বলেছ ও শারীরিক ভাবে এখনও পুরোপুরি কূমারী। পরিতোষের পাশে ওকে মানাবেও খুব সুন্দর। আর ওর মত মেয়ে যে ঘরে যাবে সে’ ঘর তো একটা স্বর্গ হয়ে উঠবে গো দিদি। রূপে গুনে ও যে সত্যিই মা লক্ষ্মী। ওই তোমার কোন আচার্যি না ফাচার্যি পরিবার, ওই বদমাশ পরিবারের কথা আর তুলো না তুমি”।

সীমন্তিনী তবু নবনীতাকে আরও একটু বাজিয়ে দেখবার উদ্দেশ্যে বলল, “কিন্তু অর্চু যে মোটে মাধ্যমিক পাশ রে। তাছাড়া, মাসি মেসোরা তো বিয়েতে যৌতুক টৌতুকও কিছু দিতে পারবেন না। তাদের আর্থিক অবস্থা যে কি, তা তো তুই জানিসই। অমন গরীব পরিবারের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে পরি কি সত্যি রাজি হবে বলে ভাবিস”?

নবনীতা একটু অবাক হয়েই বলল, “তুমি কী বলছ দিদি? আমি মানছি অর্চু অল্প শিক্ষিতা, মাধ্যমিক পাশ। কিন্তু আমিই বা কোন স্কলার গো? আমিও তো মাধ্যমিক পাশই। হ্যাঁ হায়ার সেকেন্ডারিতে ভর্তি হয়েছিলাম তা ঠিক। কিন্তু বারো ক্লাস তো পেরোতেই পারিনি আমি। পরি তো তখনই আমাকে ভালবেসেছিল। আর এখনও সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী আছে। তাহলে অর্চু মাধ্যমিক পাশ বলে অসুবিধে হবে কেন। আর তুমি মাসি মেসোদের আর্থিক অবস্থার কথা বলছ, যৌতুকের কথা বলছ? এটাও কি ভাববার মত কোন বিষয় হল? পরির জন্য আমরা কোন মেয়ের বাড়ির কাছে যৌতুকের দাবী করব? আর পরি নিজেও কি যৌতুক নিয়ে কোনও মেয়েকে বিয়ে করবে বলে ভাবছ তুমি? আমার বাবাও কোন লাখপতি কোটিপতি ছিলেন না। পরি কিন্তু বিয়ে ঠিক করবার সময় যৌতুকের কথা বলেনি আমার বাবা দাদাকে। পরির বাবাও যখন আমাকে তার হবু পুত্রবধূ হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন তখনও কিন্তু কোনরকম যৌতুকের কথা তিনিও তোলেন নি। হ্যাঁ, মানছি, এর মাঝে সাতটা বছর কেটে গেছে। কিন্তু পরির স্বভাব তো পাল্টায়নি দিদি। আর ওর আর্থিক অবস্থারও এমন কোন অবনতি হয়নি যে ওকে মেয়েপক্ষের কাছ থেকে যৌতুক চাইতে হবে। নাহ, একেবারেই না। আর তুমিও তো পরিকে কিছু কম চেনো না দিদি। কী করে তুমি এমন কথা বলছ? আর সবচেয়ে বড় কথা পরিতোষ তো আমাদের হাতেই সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে। ও তো পরিষ্কার ভাবে বলেছে যে আমরা দু’জনে মিলে যাকে পছন্দ করব, তাকেই ও নির্দ্বিধায় নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে। আর তোমার কি মনে হয় না যে অর্চু পরিতোষের ভবিষ্যৎ জীবনটাকে সুখী করে তুলতে পারবে? আমার তো মনে হয় অর্চু সবদিক থেকে পরিতোষের উপযুক্ত। আর শুধু তাই নয়, আমার মনে হয় ও-ই পরিতোষের সবচেয়ে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী হয়ে উঠবে। তোমার কি এমনটা মনে হয় না দিদি? তোমার মনে হয়না যে অর্চু পরিকে সুখী করে তুলতে পারবে”?

সীমন্তিনী আস্তে করে বলল, “হ্যাঁ তা হয়ত পারবে। কিন্তু আমিও যে মেয়েটাকে মনে মনে পছন্দ করেছি, সে মেয়েটাও কিন্তু কম কিছু নয়রে নীতা”?
 

নবনীতা শুকনো মুখে বলল, “ও, তা তোমার সেই মেয়েটি কে, একটু বলো তার ব্যাপারে। যদি আমার মনে হয় সে অর্চুর চাইতেও পাত্রী হিসেবে বেশী লোভনীয়, তাহলে হয়তো আমিও তাকে মেনে নেব”।
 

সীমন্তিনী এবার একটু কৌতুক ভরা গলায় বলল, “নারে নীতা, বেশী হবে না বোধহয়।তবে সমান সমান”।

নবনীতা সীমন্তিনীর কথার মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “সমান সমান মানে বুঝলুম না”।

ততক্ষণে চা এসে গেছে। সীমন্তিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল, “সমান সমান মানে সমান সমান। এটা না বোঝার কি হল? ওই মেয়েটা আর আমাদের অর্চু সোনা, সবদিক দিয়েই একেবারে সমান সমান। কেউ কারো থেকে একচুল বেশী নয়, কেউ একচুল কমও নয়। তাই দু’জনেই পরির স্ত্রী হবার যোগ্যতাতেও একেবারে সমান সমান”।
 

নবনীতা এবারেও কিছু বুঝতে না পেরে বলল, “কি বলছ তুমি দিদি, আমি তোমার কথার মাথামুন্ডু সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না। দুটো লোক সবদিক দিয়ে পুরোপুরি ভাবে কিকরে একেবারে একরকম, একেবারে সমান সমান হতে পারে”?

সীমন্তিনী বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আরেক চুমুক চা খেয়ে বলল, “এতকিছু বলার পরেও যদি তুই বুঝতে না পারিস, তাহলে আমি আর কি বলব বল তো। আরে পাগলী আমি যে মেয়েটাকে পছন্দ করেছি তার নামও যে অর্চুই রে” বলে মিটিমিটি হাসতে লাগল।

এবার বিষম খাবার পালা নবনীতার। তবে নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে সে বিস্ফারিত চোখে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “তুমি সত্যি বলছ দিদি? তুমিও অর্চুকেই পছন্দ করেছ? না না, আমার মনে হয় তুমি আমার মন রাখবার জন্যেই শুধু এখন এ’কথা বলছ তাই না দিদি”?

সীমন্তিনীও একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে মিষ্টি হেসে বলল, “হ্যাঁরে পাগলী। অর্চুর মত মেয়ে আমরা আর কাউকে খুঁজে পাব নাকি? তোকে সত্যি বলছি, কলকাতায় সেদিন যখন পরি তোর আর আমার ওপর নিজের পাত্রী পছন্দের দায়িত্ব দিয়েছিল, সেই মূহুর্ত থেকেই তো অর্চুর কথা আমার মনে এসেছিল। কিন্তু অর্চুকে নিয়ে আমি আরও একজনের সম্পর্কের কথাও ভাবছিলুম। কিন্তু সেটা হয়নি। আর পরির ব্যাপারে তোর পছন্দটাও হওয়া দরকার ছিল, তাই ওই মূহুর্তে আমি তোদের কাউকে কিছু বলিনি। আর সে জন্যেই তুই এখানে আসবার পর আমি অর্চুকে এখানে নিয়ে এসেছি। যাতে তুই ওকে ভাল মত বুঝতে চিনতে পারিস। তুই কি ভাবছিস, অর্চু এখানে এসে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে, শুধু এই ভেবেই আমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি? না রে। হ্যাঁ সবাইকে সে’কথা বললেও মনে মনে আমার উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে অর্চুকে যেন তোর পছন্দ হয়। আর তোর হাবেভাবে আমিও বুঝে গিয়েছিলুম যে অর্চুকে তোর অপছন্দ হবে না। কিন্তু তুইও যে মনে মনে ওকেই পছন্দ করেছিস সেটা তো আমাকে আগে বলিস নি। তাই এখন আমিও খুব খুশী”।
 

নবনীতার চোখ মুখে খুশীতে জ্বলজ্বল করছে। সে সীমন্তিনীর কথা জবাবে বলল, “বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই আমি তোমাকে কথাটা বলব বলব বলে ভাবছিলুম গো দিদি। কিন্তু যতক্ষণ আমি আর তুমি একসঙ্গে থাকি ততক্ষণ তো অর্চুও আমাদের সাথে বা কাছাকাছি থাকে। তাই তো বলে উঠতে পারিনি। কিন্তু দিদি, আমার না খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু এই রেস্টুরেন্টে সেটা করলে অন্য রকম ব্যাপার হতে পারে। তাড়াতাড়ি চল দিদি, বাড়ি গিয়ে তোমাকে আজ অনেকগুলো চুমু খাব আমি”।

সীমন্তিনী হাসি হাসি মুখে বলল, “সে ঠিক আছে। কিন্তু সাবধান, অর্চুর চোখের আড়ালে সেটা করবি কিন্তু। আর ঘরে আলাপটা করতে পারছিলুম না বলেই তো আজ তোর সাথে আলোচনা করব বলেই আমি এসেছি। মার্কেটিং তো দু’দিন বাদে করলেও চলতো। আর শোন, এখনই অর্চুর কাছে এ ব্যাপারটা খোলসা করতে চাইনে আমি। তুইও প্লীজ অমনটা করিস নে। তার আগে আমাদের পরির সাথে কথা বলে ওর মতামতটা জানা দরকার। অর্চু যদি এখনই ব্যাপারটা জেনে ফেলে, আর পরি যদি পরে নিজের অসম্মতি জানায়, তাহলে অর্চু কতটা দুঃখ পাবে, সেটা বুঝতে পারছিস”?

নবনীতা একটু ভেবে বলল, “হ্যাঁ দিদি, সেটা একদম ঠিক বলেছ তুমি। কিন্তু দিদি, পরি তো গোটা ব্যাপারটাই আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তাহলে আবার ওর অসম্মতির কথা উঠছে কেন”?


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 21-03-2020, 07:11 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)