21-03-2020, 10:52 AM
ভাঙ্গা ধানের শীষ (#02)
তিস্তা দেবব্রতকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এমএসসি’র পরে কি করবি?”
দেবব্রত মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “এখন কিছু ঠিক করে ভেবে উঠিনি কিন্তু লেকচারার হওয়ার শখ আছে বা দেখি কিছু নিয়ে রিচারচ করব হয়ত।”
তিস্তাকে পালটা জিজ্ঞেস করে, “তুই কি করবি?”
তিস্তা হেসে বলে, “আমি পড়াশুনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি রে, আমি এমএসসি পড়া শেষে বিয়ে করে ঘর সংসার করব।”
আমার দিকে ফিরে তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “মিতা তুমি কি করবে এর পরে?”
আমি ওর প্রশ্নের উত্তরে বলি, “আমি টিচার হতে চাই, কিন্তু ভবিতব্যের কথা কে বলতে পারে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়, সবসময়ে আমরা যা চাই তাই ত আমরা পাইনা।”
আমার কথা শুনে দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই চাহনির সামনে নিজেকে কেমন ব্যাথিত মনে হয় আমার, যা চায় আমার কাছে সেটা আমি ওকে কি করে দেই। আমাকে জিজ্ঞেস করে দেবব্রত, “তোমার কি হয়েছে একটু বলতে পারো? আজকাল কেমন করে যেন কথা বলো তুমি, কেমন উদাস হয়ে থাক?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি, “কই কিছু না ত।”
আমরা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তিস্তা দেবব্রতর কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি লক্ষ্য করে দেখি যে তিস্তার হাথ, দেবব্রত হাথের কাছে, মাঝে মাঝে আঙুল দিয়ে ছুঁতে চেষ্টা করে দেবব্রতকে। আমি বুঝতে পারি তিস্তার মনে বাসনা, পুনরায় দেবব্রত প্রেমের ভাষা একবার শুনতে ওর মন আখাঙ্কিত। আমার বুকের মাঝে কেমন একটা ফাঁকা সুর বেজে ওঠে। বেশ কিছু পরে ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম আমরা। আমি ট্যাক্সিতে চেপে যাই, ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি। তিস্তা হাঁ করে দেবব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, আর দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পরে আমার দিকে এগিয়ে আসে দেবব্রত। আমার হাথে একটা ছোটো উপহারের বাক্স দিয়ে বলে এটা, “আমার মতন ক্ষুদ্র একটা বন্ধুর তরফ থেকে তোমার জন্মদিনের উপহার।”
আমি হেসে ওকে বলি, “তুই যদি আমার মৌন বন্ধু, তাহলে সারা পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।”
তিস্তা ওর দিকে চেয়ে মজা করে বলে, “আমার উপহার কোথায়?”
দেবব্রত মাথা চুলকে বলে, “আরে বাবা, তোকে উপহার দেবার মতন শক্তি কি আমার আছে?”
তিস্তা আমার পেছন পেছন ট্যাক্সিতে চেপে যায়। ট্যাক্সি ছাড়ার আগে দেবব্রতর দিকে ছোটো একটি বাক্য ছুঁড়ে দেয়, “তোর উপহারের জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকব।”
ট্যাক্সি বৃষ্টি ভেজা কোলকাতার রাস্তা ধরে এগিয়ে চলে। আমার মনের মধ্যে এক অন্য চিন্তা ভাবনা ভর করে, ওদিকে তিস্তার মনে অন্য ভাবনা। আমি ভাবতে থাকি, আমার চারপাশে শেষ পর্যন্ত এই হতে শুরু করেছে? সারা রাস্তা তিস্তা বেশ চুপ করে থাকে। তিস্তা নিজের ভালোবাসার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আর আমি আমার ভালোবাসার অতীত নিয়ে স্বপ্ন দেখি। লেকটাওন এসে যায়, তিস্তার নামার সময় এসে যায়। তিস্তা ট্যাক্সি থেকে নামার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ট্যাক্সি থেকে নেমে আমার ট্রিটের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে যায়।
ওদিকে সূর্য ডুবে গেছে অনেখন আগেই, বৃষ্টি আর ধরে না। আমি বাড়ি ফিরে আসি। বাবু ছোটমা আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অন্যদিন ছোটমা দেরিতে বাড়ি ফেরেন, কিন্তু সেদিন সময়ের আগেই ছোটমাকে বাড়িতে দেখে আমি একটু অবাক হয়ে যাই। আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন ছোটমা আর মিষ্টি হাসেন।
আমি জিজ্ঞেস করি, “কি হয়েছে তোমাদের?”
ছোটমা আমাকে বলেন, “আমি কথা দিয়েছিলাম তোর জন্য মিয়ুসিক সিস্টেম কিনে দেব, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে নে, দোকান যেতে হবে।”
আমি ওদের বলি, “ছোটমা, আমি আগেই বলেছি যে আমার মিয়ুসিক সিস্টেম চাই না।”
ছোটমা আমার কাছে এসে স্নেহ ভরা সুরে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোর?”
আমার সেই স্বর শুনে কান্না পেয়ে যায়, কেন তুমি এক পরের মেয়ের জন্য এত কর ছোটমা? আমার জীবন তোমার কাছে চিরকালের জন্য ঋণী। এত ঋণ হয়ত আমি মাথা কেটে তোমার পায়ের তলায় রেখে দিলেও শোধ করতে পারবোনা। কিছু বলতে পারিনি আমি, কাপড় বদলে ছোটমা বাবুর সাথে বাজারে গিয়েছিলাম ডেক কেনার জন্য। আমি গান শুনতে গান গাইতে ভালবাসতাম ঠিকই, কিন্তু আমার জীবনের গান ওর সাথে চলে গেছে। আমি মিয়ুসিক সিস্টেমটা আমার পড়ার টেবিলের ওপরে রেখে দিয়েছিলাম, মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগলে গান শুনতাম তবে গান শুনতে আর ভালো লাগত না।
সেইরাতে আমি দেবব্রতর দেওয়া উপহারের ছোটো বাক্স খুলে দেখি, কি দিয়েছে। ছোটো বাক্সের মধ্যে একটা গোল কাঁচের বল, তাঁর মধ্যে জল ভরা আর তাঁর মধ্যে ছোটো দুটি পুতুল হাত ধরে রয়েছে এক ওপরের। একটা ছেলের পুতুল একটা মেয়ের পুতুল। উপহার দেখে আমি ওর মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে হেসে ফেলি। দেবব্রত, তুই যা চাইছিস তাই আমি তোকে দিতে পারব নারে। আমি যে আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি, আর যা আমি হারিয়ে ফেলেছি সেই মন তোকে আমি দেই কি করে। আমি ওর দেওয়া সেই উপহার আবার বাক্স বন্দি করে বইয়ের তাকের এককোনায় তুলে রেখে দেই, দ্বিতীয় কোনদিন সেই উপহার সেই জায়গা থেকে বের করে দেখিনি আমি।
পুজোর ছুটির সময়ে ছোটমা আর বাবু আমাকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেন। আমি ওদের কথা মেনে নিয়েছিলাম, আমি কোনদিন কোলকাতার দুর্গাপুজো দেখিনি। পুজোর আগে ছোটমা আর বাবু আমাকে নিয়ে বউবাজার গিয়েছিলেন আমার জন্য গয়না কেনার জন্য। আমি সেবারে আর তাদের অনুরোধ প্রত্যাখান করতে পারিনা।
অষ্টমীর দিন সকালে দেবব্রত আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে যে আমি ওদের সাথে ঠাকুর দেখতে বের হতে চাই নাকি। আমি ওদের জিজ্ঞেস করি, যে কেকে যাচ্ছে সেই জেনে আমি যেতে পারি। দেবব্রত আমাকে জানায় যে সব বন্ধুরা মিলে ঠাকুর দেখতে যাবে, আমি সেই কথা শুনে আনন্দে ওদের হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম।
আমি, “একটা গাড়ি না আলাদা আলাদা গাড়ি।”
দেবব্রত, “কেন আমার সাথে যেতে তোমার কোন অসুবিধে আছে নাকি?”
আমি হেসে জবাব দেই, “না মানে, সবাই একটা গাড়িতে গেলে বেশ মজা হবে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
দেবব্রত, “ঠিক আছে আমি একটা বড় গাড়ির ব্যাবস্থা করব যাতে আমরা সব বন্ধু বান্ধবী মিলে ঠাকুর দেখতে যেতে পারি।”
আমি, “তিস্তা আমাদের সাথে যাচ্ছে কি?”
দেবব্রত, “হ্যাঁ বাবা, এই সব প্লান ওই করেছে।”
ছোটমা আমাকে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন, কিন্তু সাথে সাথে একটু সাবধানে চলাফেরা করতে বলে দিলেন। ও যখন নেই আমার পাশে তখন অত সেজে গুঁজে কি হবে সেই ভেবে আমি সেদিন সাধারন একটা সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। ছোটমা আমার সাজ দেখে একটু অভিমান করে বলেন, “পরী, এটা কি রকমের সাজ? আজ অষ্টমী পুজো আর তুই এই রকম সাদামাটা সেজে বের হবি? আমি যে একটা সাউথ সিল্ক কিনে দিয়েছি সেটা কেন পড়লি না।”
আমি ম্লান হেসে উত্তর দেই, “এটাই ভালো, ছোটমা।”
আমাকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন, “এই রকম সাদা মাটা সেজে যেতে হবে না, জীবন একটু রংচঙে কর মা।”
আমি সেই সাউথ সিল্ক পরে নিলাম। সবুজ রঙের ঝলমলে খুব সুন্দর শাড়ি, সোনালি রঙের পাড়, আমার ফর্সা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছিল। ছোটমা নিজের গয়নার বাক্স খুলে একটা মোটা গলার হার আমার গলায় পড়িয়ে দেয়। আমি ছোটমাকে বলি, “এটার কি দরকার?”
ছোটমা, “কিছুনা, আমি শুধু দেখছি আমার মেয়েটাকে কত সুন্দর দেখতে। যা নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ঘুরে আয়, আর হ্যাঁ মোবাইল অন রাখিস, কল করলে যেন জানতে পারি যে তুই কোথায় আছিস।”
আমি মাথা দুলিয়ে ছোটমাকে আশস্ত করে বলি, “অহ ছোটমা, আমি আর ছোটো মেয়ে নেই।”
সেই সবুজ রঙের সাউথ সিল্কের শাড়িতে নিজেকে দেখতে মন্দ লাগছিল না, তাঁর সাথে মিলিয়ে ছোটো হাথার সবুজ ব্লাউস ছিল গায়ে। মাথার চুল বেনুনি করে বেঁধেছিলাম, পিঠের ওপরে সাপের মতন দুলছিল। হাথে কয়েক গাছা সোনার চুড়ি, কানে সোনার দুল, নিজেকে আয়নায় দেখে নিজের লজ্জা লেগে যায়। নিজেই নিজেকে বলে ফেলি, পরী তুই কোলকাতার পুজোতে আগুন ধরিয়ে দিবি। ঠিক সেই সময়ে কেউ যেন আমার কাঁধে হাত রাখে, ভারি নরম ভালোবাসার স্পর্শ। আমি আয়নায় চেয়ে দেখি, কেউ নেই পেছনে কিন্তু আমার মন জানে যে সত্যি আমার কাঁধে কারুর হাত স্পর্শ করেছিল।
কানেকানে ফিসফিস করে ওর গলার আওয়াজ শুনি আমি, “হৃদয় নন্দিনী তোমাকে আজ দারুন দেখতে লাগছে।”
কানের ভেতরে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে আমার মন কেমন করে ওঠে, বুক কেঁপে ওঠে। নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ লাল হয়ে যায়, কান্না ভেঙ্গে আসে বুকের মাঝে। আমি নিজের বুক চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করে নিয়েছিলাম। আমি জানি তুমি আমার আসেপাসেই আছো কিন্তু একবারের জন্য দেখা দাও। আমি কাঁধে ঠিক যেখানে ওর হাতের পরশ পেয়েছিলাম, সেখানে ছুঁয়ে নিজের ঠোঁটে মেখে নিয়েছিলাম।
ঠিক সেই সময়ে আমার মোবাইল বেজে ওঠে। তিস্তা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, “কি গো তুমি, এতক্ষণ ধরে আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি আর তোমার দেখা নেই কেন? তাড়াতাড়ি সেজে এস, আমরা সবাই আমাদের রানীর জন্য অপেক্ষা করে আছি।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি, চোখের কোনের জল মুছে হেসে বলি, “দাঁড়া একটু, আমি এখুনি আসছি।”
ঘর থেকে বের হতেই দেখি ছোটমা সামনে দাঁড়িয়ে, আমাকে দেখে কপালে ছোট্ট চুমু খেয়ে আদর করে বলেন, “সাবধানে যাস আর মন ভরে বন্ধুদের সাথে মজা করিস।”
আমি আমার বাদামি রঙের ক্লাচ হাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরি।
বাসস্টান্ডে এসে দেখি তিস্তা আর দেবব্রত আমার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তিস্তা একটা খুব সুন্দর হাল্কা গোলাপি রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে, সঙ্গে ছোটো হাথার ব্লাউস। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ ত্বকের সাথে বেশ মানিয়েছে শাড়ির রঙ। কানে ক্রিস্টালের দুল ঝকমক করছে। গলায় পাতলা সোনার চেন। সেইদিন প্রথম আমি তিস্তাকে শাড়ি পড়তে দেখেছিলাম। আমাকে দেখে আমার দিকে দৌড়ে আসে তিস্তা, জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে, “আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে তোমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করতাম।”
আমি ওকে জড়িয়ে বলি, “তুই কম যাচ্ছিস না কিন্তু, তোকে দেখে কোলকাতা জ্বলে যাবে রে।”
আমি দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে দেখি ও একটা কালো পাঞ্জাবী পড়েছে, পাঞ্জাবির ওপরে সোনালি সুতোর কাজ, বেশ সুদর্শন দেখাচ্ছে দেবব্রতকে। আমি ওদের একসাথে দেখে নিজেকে বলি, ভগবান যেন ওদের মিলিয়ে দেওয়ার জন্য এঁকে ওপরের জন্য বানিয়েছে।
দেবব্রত আমার কাছে এসে বলে, “আজ আমার কপালে দুঃখ আছে, সাথে এত সুন্দরী দুই মেয়ে।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি, দেবব্রত, দুটি নয়, একটি তোর আর তুই আমার কাছে যা চাস তা তোকে দিতে পারছিনা। একবারের জন্য চোখ মেলে তাকা দেবব্রত, তিস্তার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা উপচে পড়ছে, তুই যে তিস্তা কে চিনতিস সেই তিস্তা আর নেই রে, সে অনেক বদলে গেছে, শুধু তোর জন্য নিজেকে অনেক বদলে নিয়েছে রে।
না আমি কিছুই ওকে বলিনি, বরং ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলি, “আমার দিকে একদম দেখবি না, তোর চোখ গেলে দেব।” আমি আসেপাসে তাকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করি, “বাকিরা কোথায়?”
তিস্তা আমাকে চোখ টিপে বলে, “আমাদের সাথে আর কেউ নেই। শুধু আমরা তিনজনে ঘুরতে যাবো।”
আমি প্রায় চেঁচিয়ে বলি ওকে, “কি?”
দেবব্রত আমাকে বলে, “কেন, আমার সাথে যেতে তোমার আপত্তি আছে নাকি?”
মনে মনে একটু বিরক্ত বোধ করি। আমার চোখের সামনে ওদের মতলব পরিষ্কার ফুটে ওঠে। চোখের সামনে তিস্তার হাসি হাসি মুখ দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে এই মতলব আসলে তিস্তার, তিস্তা চেয়েছিল দেবব্রতকে নিয়ে পুজোতে ঘুরতে যেতে কিন্তু সাহস করেনি হয়ত, দেবব্রতকে হয়ত বলেছিল নিজের অভিপ্রায় আর দেবব্রত যেহেতু আমার প্রতি একটু ঝুঁকে সেইজন্য দেবব্রত তিস্তাকে বলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে। আমি ওদের কার্যকলাপ বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে ফেলি। অনেকদিন পরে মনে হল যেন একটু খোলা বাতাস আমার জমাট বাঁধা বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলে গেল, না নিজের জন্য নয়, তিস্তার হাসি মুখ দেখে সেই জমাট বাঁধা বুক আনন্দে ভরে ওঠে।
তিস্তা দেবব্রতকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এমএসসি’র পরে কি করবি?”
দেবব্রত মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “এখন কিছু ঠিক করে ভেবে উঠিনি কিন্তু লেকচারার হওয়ার শখ আছে বা দেখি কিছু নিয়ে রিচারচ করব হয়ত।”
তিস্তাকে পালটা জিজ্ঞেস করে, “তুই কি করবি?”
তিস্তা হেসে বলে, “আমি পড়াশুনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি রে, আমি এমএসসি পড়া শেষে বিয়ে করে ঘর সংসার করব।”
আমার দিকে ফিরে তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “মিতা তুমি কি করবে এর পরে?”
আমি ওর প্রশ্নের উত্তরে বলি, “আমি টিচার হতে চাই, কিন্তু ভবিতব্যের কথা কে বলতে পারে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়, সবসময়ে আমরা যা চাই তাই ত আমরা পাইনা।”
আমার কথা শুনে দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই চাহনির সামনে নিজেকে কেমন ব্যাথিত মনে হয় আমার, যা চায় আমার কাছে সেটা আমি ওকে কি করে দেই। আমাকে জিজ্ঞেস করে দেবব্রত, “তোমার কি হয়েছে একটু বলতে পারো? আজকাল কেমন করে যেন কথা বলো তুমি, কেমন উদাস হয়ে থাক?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি, “কই কিছু না ত।”
আমরা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তিস্তা দেবব্রতর কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি লক্ষ্য করে দেখি যে তিস্তার হাথ, দেবব্রত হাথের কাছে, মাঝে মাঝে আঙুল দিয়ে ছুঁতে চেষ্টা করে দেবব্রতকে। আমি বুঝতে পারি তিস্তার মনে বাসনা, পুনরায় দেবব্রত প্রেমের ভাষা একবার শুনতে ওর মন আখাঙ্কিত। আমার বুকের মাঝে কেমন একটা ফাঁকা সুর বেজে ওঠে। বেশ কিছু পরে ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম আমরা। আমি ট্যাক্সিতে চেপে যাই, ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি। তিস্তা হাঁ করে দেবব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, আর দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পরে আমার দিকে এগিয়ে আসে দেবব্রত। আমার হাথে একটা ছোটো উপহারের বাক্স দিয়ে বলে এটা, “আমার মতন ক্ষুদ্র একটা বন্ধুর তরফ থেকে তোমার জন্মদিনের উপহার।”
আমি হেসে ওকে বলি, “তুই যদি আমার মৌন বন্ধু, তাহলে সারা পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।”
তিস্তা ওর দিকে চেয়ে মজা করে বলে, “আমার উপহার কোথায়?”
দেবব্রত মাথা চুলকে বলে, “আরে বাবা, তোকে উপহার দেবার মতন শক্তি কি আমার আছে?”
তিস্তা আমার পেছন পেছন ট্যাক্সিতে চেপে যায়। ট্যাক্সি ছাড়ার আগে দেবব্রতর দিকে ছোটো একটি বাক্য ছুঁড়ে দেয়, “তোর উপহারের জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকব।”
ট্যাক্সি বৃষ্টি ভেজা কোলকাতার রাস্তা ধরে এগিয়ে চলে। আমার মনের মধ্যে এক অন্য চিন্তা ভাবনা ভর করে, ওদিকে তিস্তার মনে অন্য ভাবনা। আমি ভাবতে থাকি, আমার চারপাশে শেষ পর্যন্ত এই হতে শুরু করেছে? সারা রাস্তা তিস্তা বেশ চুপ করে থাকে। তিস্তা নিজের ভালোবাসার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আর আমি আমার ভালোবাসার অতীত নিয়ে স্বপ্ন দেখি। লেকটাওন এসে যায়, তিস্তার নামার সময় এসে যায়। তিস্তা ট্যাক্সি থেকে নামার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ট্যাক্সি থেকে নেমে আমার ট্রিটের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে যায়।
ওদিকে সূর্য ডুবে গেছে অনেখন আগেই, বৃষ্টি আর ধরে না। আমি বাড়ি ফিরে আসি। বাবু ছোটমা আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অন্যদিন ছোটমা দেরিতে বাড়ি ফেরেন, কিন্তু সেদিন সময়ের আগেই ছোটমাকে বাড়িতে দেখে আমি একটু অবাক হয়ে যাই। আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন ছোটমা আর মিষ্টি হাসেন।
আমি জিজ্ঞেস করি, “কি হয়েছে তোমাদের?”
ছোটমা আমাকে বলেন, “আমি কথা দিয়েছিলাম তোর জন্য মিয়ুসিক সিস্টেম কিনে দেব, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে নে, দোকান যেতে হবে।”
আমি ওদের বলি, “ছোটমা, আমি আগেই বলেছি যে আমার মিয়ুসিক সিস্টেম চাই না।”
ছোটমা আমার কাছে এসে স্নেহ ভরা সুরে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোর?”
আমার সেই স্বর শুনে কান্না পেয়ে যায়, কেন তুমি এক পরের মেয়ের জন্য এত কর ছোটমা? আমার জীবন তোমার কাছে চিরকালের জন্য ঋণী। এত ঋণ হয়ত আমি মাথা কেটে তোমার পায়ের তলায় রেখে দিলেও শোধ করতে পারবোনা। কিছু বলতে পারিনি আমি, কাপড় বদলে ছোটমা বাবুর সাথে বাজারে গিয়েছিলাম ডেক কেনার জন্য। আমি গান শুনতে গান গাইতে ভালবাসতাম ঠিকই, কিন্তু আমার জীবনের গান ওর সাথে চলে গেছে। আমি মিয়ুসিক সিস্টেমটা আমার পড়ার টেবিলের ওপরে রেখে দিয়েছিলাম, মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগলে গান শুনতাম তবে গান শুনতে আর ভালো লাগত না।
সেইরাতে আমি দেবব্রতর দেওয়া উপহারের ছোটো বাক্স খুলে দেখি, কি দিয়েছে। ছোটো বাক্সের মধ্যে একটা গোল কাঁচের বল, তাঁর মধ্যে জল ভরা আর তাঁর মধ্যে ছোটো দুটি পুতুল হাত ধরে রয়েছে এক ওপরের। একটা ছেলের পুতুল একটা মেয়ের পুতুল। উপহার দেখে আমি ওর মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে হেসে ফেলি। দেবব্রত, তুই যা চাইছিস তাই আমি তোকে দিতে পারব নারে। আমি যে আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি, আর যা আমি হারিয়ে ফেলেছি সেই মন তোকে আমি দেই কি করে। আমি ওর দেওয়া সেই উপহার আবার বাক্স বন্দি করে বইয়ের তাকের এককোনায় তুলে রেখে দেই, দ্বিতীয় কোনদিন সেই উপহার সেই জায়গা থেকে বের করে দেখিনি আমি।
পুজোর ছুটির সময়ে ছোটমা আর বাবু আমাকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেন। আমি ওদের কথা মেনে নিয়েছিলাম, আমি কোনদিন কোলকাতার দুর্গাপুজো দেখিনি। পুজোর আগে ছোটমা আর বাবু আমাকে নিয়ে বউবাজার গিয়েছিলেন আমার জন্য গয়না কেনার জন্য। আমি সেবারে আর তাদের অনুরোধ প্রত্যাখান করতে পারিনা।
অষ্টমীর দিন সকালে দেবব্রত আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে যে আমি ওদের সাথে ঠাকুর দেখতে বের হতে চাই নাকি। আমি ওদের জিজ্ঞেস করি, যে কেকে যাচ্ছে সেই জেনে আমি যেতে পারি। দেবব্রত আমাকে জানায় যে সব বন্ধুরা মিলে ঠাকুর দেখতে যাবে, আমি সেই কথা শুনে আনন্দে ওদের হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম।
আমি, “একটা গাড়ি না আলাদা আলাদা গাড়ি।”
দেবব্রত, “কেন আমার সাথে যেতে তোমার কোন অসুবিধে আছে নাকি?”
আমি হেসে জবাব দেই, “না মানে, সবাই একটা গাড়িতে গেলে বেশ মজা হবে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
দেবব্রত, “ঠিক আছে আমি একটা বড় গাড়ির ব্যাবস্থা করব যাতে আমরা সব বন্ধু বান্ধবী মিলে ঠাকুর দেখতে যেতে পারি।”
আমি, “তিস্তা আমাদের সাথে যাচ্ছে কি?”
দেবব্রত, “হ্যাঁ বাবা, এই সব প্লান ওই করেছে।”
ছোটমা আমাকে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন, কিন্তু সাথে সাথে একটু সাবধানে চলাফেরা করতে বলে দিলেন। ও যখন নেই আমার পাশে তখন অত সেজে গুঁজে কি হবে সেই ভেবে আমি সেদিন সাধারন একটা সবুজ পাড়ের ঘিয়ে রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। ছোটমা আমার সাজ দেখে একটু অভিমান করে বলেন, “পরী, এটা কি রকমের সাজ? আজ অষ্টমী পুজো আর তুই এই রকম সাদামাটা সেজে বের হবি? আমি যে একটা সাউথ সিল্ক কিনে দিয়েছি সেটা কেন পড়লি না।”
আমি ম্লান হেসে উত্তর দেই, “এটাই ভালো, ছোটমা।”
আমাকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন, “এই রকম সাদা মাটা সেজে যেতে হবে না, জীবন একটু রংচঙে কর মা।”
আমি সেই সাউথ সিল্ক পরে নিলাম। সবুজ রঙের ঝলমলে খুব সুন্দর শাড়ি, সোনালি রঙের পাড়, আমার ফর্সা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছিল। ছোটমা নিজের গয়নার বাক্স খুলে একটা মোটা গলার হার আমার গলায় পড়িয়ে দেয়। আমি ছোটমাকে বলি, “এটার কি দরকার?”
ছোটমা, “কিছুনা, আমি শুধু দেখছি আমার মেয়েটাকে কত সুন্দর দেখতে। যা নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ঘুরে আয়, আর হ্যাঁ মোবাইল অন রাখিস, কল করলে যেন জানতে পারি যে তুই কোথায় আছিস।”
আমি মাথা দুলিয়ে ছোটমাকে আশস্ত করে বলি, “অহ ছোটমা, আমি আর ছোটো মেয়ে নেই।”
সেই সবুজ রঙের সাউথ সিল্কের শাড়িতে নিজেকে দেখতে মন্দ লাগছিল না, তাঁর সাথে মিলিয়ে ছোটো হাথার সবুজ ব্লাউস ছিল গায়ে। মাথার চুল বেনুনি করে বেঁধেছিলাম, পিঠের ওপরে সাপের মতন দুলছিল। হাথে কয়েক গাছা সোনার চুড়ি, কানে সোনার দুল, নিজেকে আয়নায় দেখে নিজের লজ্জা লেগে যায়। নিজেই নিজেকে বলে ফেলি, পরী তুই কোলকাতার পুজোতে আগুন ধরিয়ে দিবি। ঠিক সেই সময়ে কেউ যেন আমার কাঁধে হাত রাখে, ভারি নরম ভালোবাসার স্পর্শ। আমি আয়নায় চেয়ে দেখি, কেউ নেই পেছনে কিন্তু আমার মন জানে যে সত্যি আমার কাঁধে কারুর হাত স্পর্শ করেছিল।
কানেকানে ফিসফিস করে ওর গলার আওয়াজ শুনি আমি, “হৃদয় নন্দিনী তোমাকে আজ দারুন দেখতে লাগছে।”
কানের ভেতরে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে আমার মন কেমন করে ওঠে, বুক কেঁপে ওঠে। নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ লাল হয়ে যায়, কান্না ভেঙ্গে আসে বুকের মাঝে। আমি নিজের বুক চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করে নিয়েছিলাম। আমি জানি তুমি আমার আসেপাসেই আছো কিন্তু একবারের জন্য দেখা দাও। আমি কাঁধে ঠিক যেখানে ওর হাতের পরশ পেয়েছিলাম, সেখানে ছুঁয়ে নিজের ঠোঁটে মেখে নিয়েছিলাম।
ঠিক সেই সময়ে আমার মোবাইল বেজে ওঠে। তিস্তা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, “কি গো তুমি, এতক্ষণ ধরে আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি আর তোমার দেখা নেই কেন? তাড়াতাড়ি সেজে এস, আমরা সবাই আমাদের রানীর জন্য অপেক্ষা করে আছি।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি, চোখের কোনের জল মুছে হেসে বলি, “দাঁড়া একটু, আমি এখুনি আসছি।”
ঘর থেকে বের হতেই দেখি ছোটমা সামনে দাঁড়িয়ে, আমাকে দেখে কপালে ছোট্ট চুমু খেয়ে আদর করে বলেন, “সাবধানে যাস আর মন ভরে বন্ধুদের সাথে মজা করিস।”
আমি আমার বাদামি রঙের ক্লাচ হাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরি।
বাসস্টান্ডে এসে দেখি তিস্তা আর দেবব্রত আমার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তিস্তা একটা খুব সুন্দর হাল্কা গোলাপি রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে, সঙ্গে ছোটো হাথার ব্লাউস। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ ত্বকের সাথে বেশ মানিয়েছে শাড়ির রঙ। কানে ক্রিস্টালের দুল ঝকমক করছে। গলায় পাতলা সোনার চেন। সেইদিন প্রথম আমি তিস্তাকে শাড়ি পড়তে দেখেছিলাম। আমাকে দেখে আমার দিকে দৌড়ে আসে তিস্তা, জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে, “আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে তোমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করতাম।”
আমি ওকে জড়িয়ে বলি, “তুই কম যাচ্ছিস না কিন্তু, তোকে দেখে কোলকাতা জ্বলে যাবে রে।”
আমি দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে দেখি ও একটা কালো পাঞ্জাবী পড়েছে, পাঞ্জাবির ওপরে সোনালি সুতোর কাজ, বেশ সুদর্শন দেখাচ্ছে দেবব্রতকে। আমি ওদের একসাথে দেখে নিজেকে বলি, ভগবান যেন ওদের মিলিয়ে দেওয়ার জন্য এঁকে ওপরের জন্য বানিয়েছে।
দেবব্রত আমার কাছে এসে বলে, “আজ আমার কপালে দুঃখ আছে, সাথে এত সুন্দরী দুই মেয়ে।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি, দেবব্রত, দুটি নয়, একটি তোর আর তুই আমার কাছে যা চাস তা তোকে দিতে পারছিনা। একবারের জন্য চোখ মেলে তাকা দেবব্রত, তিস্তার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা উপচে পড়ছে, তুই যে তিস্তা কে চিনতিস সেই তিস্তা আর নেই রে, সে অনেক বদলে গেছে, শুধু তোর জন্য নিজেকে অনেক বদলে নিয়েছে রে।
না আমি কিছুই ওকে বলিনি, বরং ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলি, “আমার দিকে একদম দেখবি না, তোর চোখ গেলে দেব।” আমি আসেপাসে তাকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করি, “বাকিরা কোথায়?”
তিস্তা আমাকে চোখ টিপে বলে, “আমাদের সাথে আর কেউ নেই। শুধু আমরা তিনজনে ঘুরতে যাবো।”
আমি প্রায় চেঁচিয়ে বলি ওকে, “কি?”
দেবব্রত আমাকে বলে, “কেন, আমার সাথে যেতে তোমার আপত্তি আছে নাকি?”
মনে মনে একটু বিরক্ত বোধ করি। আমার চোখের সামনে ওদের মতলব পরিষ্কার ফুটে ওঠে। চোখের সামনে তিস্তার হাসি হাসি মুখ দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে এই মতলব আসলে তিস্তার, তিস্তা চেয়েছিল দেবব্রতকে নিয়ে পুজোতে ঘুরতে যেতে কিন্তু সাহস করেনি হয়ত, দেবব্রতকে হয়ত বলেছিল নিজের অভিপ্রায় আর দেবব্রত যেহেতু আমার প্রতি একটু ঝুঁকে সেইজন্য দেবব্রত তিস্তাকে বলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে। আমি ওদের কার্যকলাপ বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে ফেলি। অনেকদিন পরে মনে হল যেন একটু খোলা বাতাস আমার জমাট বাঁধা বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলে গেল, না নিজের জন্য নয়, তিস্তার হাসি মুখ দেখে সেই জমাট বাঁধা বুক আনন্দে ভরে ওঠে।