Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram
#42
ভাঙ্গা ধানের শীষ (#01)

গরমের ছুটির পরে ছোটমা আমাকে দমদমের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসেন। বিদায় বেলায় মায়ের চোখে জল ছিল। প্রতিবারের মতন বাবু গাড়ি পাঠিয়েছিলেন আমাকে আর ছোটমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাড়ি ফেরার সময়ে ছোটমা আমাকে ছুটি কেমন কেটেছে সেই সব কথা জিজ্ঞেস করেন। আমি ছোটমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে আমি যখন বাড়ি ছিলাম না তখন ছোটমায়ের কেমন লেগেছে।

ছোটমা আমার গালে হাথ বুলিয়ে উত্তর দেন, “তুই না থাকাতে ঘর অনেক খালি খালি লাগছিল রে।” আমি ছোটমাকে জড়িয়ে ধরি, ছোটমা আমার পিঠে হাথ দিয়ে আদর করে জিজ্ঞেস করেন, “কি হল রে?”

আমি উত্তর দিলাম, “তোমার কথা খুব মনে পড়ত, তাই।”

ছোটমা, “সামনে কিন্তু ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা এবারে কিন্তু ঠিক ভাবে পড়াশুনা করতে হবে।”

কলেজ শুরু হয়ে যায়, দিনের পর দিন কেটে যায়। ওর কোন খবর আসে না, যতদিন যায় আমি তত বেশি বিচলিত হয়ে উঠি। অশান্ত হৃদয়কে নিজেই শান্তনা দিতাম, আসবে হয়ত একদিন ওর খবর। সেই চিন্তা থেকে দুরে পালাবার জন্য ডুবে গেছিলাম বইয়ের মধ্যে। 

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা। আমার প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল এসে গেছে, আমি ভালো অঙ্কে উত্তীর্ণ হয়েছি। বাবু ছোটমা দুজনেই বেশ খুশি আমার ভালো ফলাফল দেখে। সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছিল। ঠিক এক বছর আগে, এইরকম একদিনে সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। বাবু আর ছোটমায়ের আচরন বদলে যায় সেদিনে। আমি বুঝতে পারি যে তাদের একমাত্র সন্তানের কথা মনে পড়ছে। আমার মন খুব ভারাক্রান্ত ছিল সেদিন। আমি সেদিন বুঝতে পারি যে আমি তাদের ঔরস জাত সন্তান নই, একটি পোষ্যপুত্রী মাত্র। সেদিন কলজে থেকে ফেরার পরে বাবু আমার মোবাইল দেখতে চান, আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি তার কারন। কিন্তু পরে বুঝলাম যে বাবু আমার কল লগ দেখার জন্য আমার ফোন চেয়েছিলেন, দেখতে চেয়েছিলেন যে ও আমাকে ফোন করেছে কি না। 

আমি বাবুর হাথে ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়লাম। বৃষ্টি অবিরাম ধারায় ঝরে, আকাশ বাতাস বারেবারে বজ্র বিদ্যুতের কম্পনে কেঁপে উঠে। কিছু পরে ছোটমা কলেজ থেকে ফিরে আসেন। আমি রান্না ঘরে রান্না করছিলাম। ছোটমা রান্না ঘরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কেমন আছি। আমি মাথা নেড়ে জানাই যে আমি ঠিক আছি। আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছোটমা পেয়াজ কাটতে শুরু করেন। পেয়াজের ঝাজে না বুকের কান্না আমি জানিনা, কিন্তু ছোটমায়ের চোখে জল চলে আসে। আমি বুঝতে পারি একসময়ে যে ছোটমা তাঁর ছেলের কথা মনে করে কাদছেন, আমি ও সেই রাতে অনেক কেঁদেছিলাম। 

আমাকে নিচু গলায় ছোটমা বলেন, “পরী, জীবনে অনেক কিছু ঘটে যায় যার মানে আমরা বুঝতে পারিনা।”

আমি ছোটমায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি ছোটো বাচ্চা নই যে ছোটমায়ের মনের দুঃখ বুঝতে আমার কষ্ট হবে। 

সেই রাতে ছোটমা আর বাবু খুব চুপচাপ ছিলেন। রাতে খাওয়ার সময়ে শুধু মাত্র আমার কলেজের কথা ছাড়া আর কোন কথা হয়না। তাদের চিন্তিত মুখ আমাকে বড় অশান্ত করে তোলে। সেই রাতে আমি ওর “অপ্টিক্স নোটবুকে” অনেক ব্যাথা আর বেদনার কথা লিখে ফেলি। 

আমি সেই রাজকন্যে যার হাতের ছোঁয়ায় যে কোন বহুমুল্য বস্তু সোনার বদলে ছাইয়ে পরিনত হয়ে যায়। আমার জন্মের পরেই আমার বাবা দেহ রক্ষা করেন। আমার উচ্চ বিদ্যালাভের কারনে, ছোটমা আমাদের বাড়ি আসেন আর সেই সুত্রে অভিমন্যু আমার কাছে আসে। আমাকে ভালোবাসার ফল স্বরুপ বিতাড়িত হতে হয় এই বাড়ি থেকে, বিশাল পৃথিবীতে একা একা ঘুরে বেড়ায়। ছোটমা আর বাবু তাদের রক্ত মাংসের একমাত্র ছেলেকে হারায় আমার জন্য। আমার কি করা উচিত? আমি কোথায় যাবো? যে আট মাস আমার পাশে পাশে ছিল, আমার জীবনের সব থেকে আনন্দের সময় সেইদিন গুলি। সেই স্মৃতি সযত্নে রাখা হৃদয়ের এক কোনে। সেই সময়ে আমি ভেবেছিলাম যে ও পাশে থাকলে আমি পৃথিবী জয় করে নিতে পারি। কিন্তু এখন আমার পাশে নেই। এক শুচিস্মিতা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আসে, পরী হয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করে। সময়ের সাথে আর বিধির লিখনে সেই পরী পরিবর্তিত হয়ে যায় এক নতুন মিতা। আর কি বাকি আছে আমার জীবনে, ভবিষ্যতে বিধি আর কি লিখে গেছেন আমার কপালে?

সেই দিন থেকে ছোটমা আর বাবুর সাথে আমার সম্পর্কে একটু চিড় ধরে। ধিরে ধিরে তাদের আচরনে বিরূপতা প্রকাশ পায়। দিন কেটে যায়, মাস চলে যায় কিন্তু ও আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনা। ধিরে ধিরে ওর স্মৃতি আমার মন থেকে মুছে যায়। সেই “অপটিক্স নোটবুক” খুব কম বের হত বইয়ের তাক থেকে। জীবনের পাঁকে নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম, আশার আলো ধিরে ধিরে ম্লান হয়ে আসে চোখের সামনে। পড়াশুনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে মনের বেদনা ভুলে যেতে চেষ্টা করি। আমি চাইনি আমার জীবনের সাথে আর কারো জীবন প্রবাহ এসে মিশে যাক। প্রতি পদে পদে নিজেকে পাপী মনে হত। 

সেইদিন আমার জন্মদিন, রোজকার মতন সেদিন সকালে উঠে পরি। মা ফোন করে আমাকে জন্মদিনের আশীর্বাদ জানায়। আমি মায়ের গলার আওয়াজ শুনে কেঁদে ফেলি প্রায়। সেদিন নিজেকে খুব একা মনে হয়েছিল এই বিশাল পৃথিবীতে।

মা জিজ্ঞেস করেন, “তুই ভালো আছিস?”

আমি, “হ্যাঁ আছি এই একরকম, মা তোমার কথা খুব মনে পরে মা।”

ছোটমা আমার কাছে এসে দাঁড়ান, আমি মাকে বলি, “মা আমি তোমাকে পরে ফোন করব, আমাকে এখন কলেজ যেতে হবে।”

স্নান সেরে নিজের ঘরে ঢুকে দেখি বিছানার ওপরে একটা সুন্দর বাক্স রাখা। আমি বাক্স খুলে দেখি তাঁর মধ্যে একটা সুন্দর আকাশী নীল রঙের চুরিদার। ছোটমা পেছন পেছন ঘরে ঢোকেন, আমি ছোটমায়ের পা ছুঁয়ে প্রনাম করলাম।

ছোটমা আমার মাথায় হাথ রেখে জিজ্ঞেস করেন, “চুরিদার পছন্দ হয়েছে তোর?”

আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।

ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমি আমার বান্ধবীদের নিয়ে কোথাও যেতে চাই কিনা।

আমি, “ঠিক জানিনা।”

ছোটমা, “তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসিস, তোর বাবু তোকে নিয়ে দোকান যাবে, তোর জন্য ডেক কিনে দেবে।”

আমি ছোটমাকে বললাম, “মিউসিক সিস্টেম কিসের জন্য দরকার? আমার চাইনা।”

গালে হাত দিয়ে আদর করে বলেন, “তুই মন খারাপ করে আছিস?”

সত্যি সেদিন আমার মন খুব খারাপ ছিল, আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করতে চেষ্টা করি। আমি ছোটমাকে বললাম, “মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।” 

ছোটমা আমার চোখের জল দেখেনি কিন্তু মনের ব্যাথা বুঝতে পেরেছিলেন। ছোটমা আমার হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বললেন, “মন খারাপ করিস না, আজ তোর জন্মদিন, বান্ধবীদের সাথে নিয়ে বাইরে যা দেখবি ভালো লাগবে। তবে সন্ধের আগে বাড়ি ফিরে আসিস যেন।”

কলেজে পৌঁছে মন কেমন করে ওঠে, কিছুটা ভালো কিছুটা ফাঁকা। সেদিন প্রথম আমি তিস্তাকে লক্ষ্য করে দেখি যে তিস্তা একটা লাল হলুদ রঙ মেশানো সুন্দর একটি চুরিদার পরে কলেজে এসেছে। আমি ওকে দেখে একটু হাসি। আমার হাসি দেখে প্রত্তুতরে আমাকে হাসি দেয়। আমার পাশে এসে বসে পরে তিস্তা। অনেক দিন পরে আমার কাঁধে হাথ রাখে।

তিস্তা আমাকে জন্মদিনের অভিবাদন জানায়, আমি ওর দিকে পালটা হেসে জিজ্ঞেস করি, “তুই জানলি কি করে?”

তিস্তা আমাকে বলে, “তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে তাই মনে আছে।” 

আমি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি, “তুই আজ চুরিদার পরে, কি ব্যাপার?”

তিস্তা নিচু স্বরে উত্তর দেয়, “ভাবলাম নিজেকে বদলানোর দরকার, তাই।”

ঠিক সেইসময়ে দেবব্রত ক্লাসে ঢুকে সোজা আমার পাশে এসে আমাকে জন্মদিনের অভিবাদন জানায়। আমাকে দেখে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলে, “যা দেখতে লাগছে না তোমাকে মনে হয় তুমি আজ ক্লাসে আগুন ধরিয়ে দেবে।”

ওর কথা শুনে সারা ক্লাস হেসে ফেলে, আমি লজ্জায় লাল হয়ে উঠি। দেলিসা আর পুষ্পাঞ্জলি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি ওদের কোথায় নিয়ে যাবো, জন্মদিনের পার্টি দিতে? 

দেবব্রত তিস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তিস্তার কানে কানে কিছু একটা বলে, আমি তিস্তার পাশেই বসেছিলাম, আমি ওদের কথা শুনতে পাই। দেবব্রত তিস্তাকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে তোকে আজ অনেক আলাদা দেখাচ্ছে, কি ব্যাপার তোর?”

তিস্তা ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “এই কয়েক বছরে মনে হল নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, তাই একটু নিজেকে খুঁজে নিতে চেষ্টা করছি।”

তিস্তার সেই কথা শুনে আমার মনে হল, যে তিস্তাকে দেখেছি সেই তিস্তা আমার পাশে বসে নেই। আমার পাশে বসে এক নতুন তিস্তা, হয়ত সেই তিস্তা হারিয়ে গেছে অথবা কোথাও লুকিয়ে রয়েছে। দেবব্রত মজা করে ওর চুল টেনে নিজের সিটে বসে পরে।

কলেজ শেষে সবাই আমাকে ঘিরে ধরে, ওদের জন্মদিনের ট্রিট চাই। রজত, পুষ্পাঞ্জলি জেদ ধরে যে পিটারক্যাট নিয়ে যেতে হবে। আমার হাথে মাত্র হাজার টাকা, আমি জানতাম না, পিটারক্যাটে খাওয়ালে কত টাকা লাগবে। আমি ওদের বলি, আমার কাছে যে অত টাকা নেই। তিস্তা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বলে, “তুমি এত চিন্তা করো না মিতা, তিস্তা আছে তোমার সাথে।”

দেবব্রত আমাদের বলে, “এবারে কিন্তু কোন জামাই আদর নয়, দানিস বা তির্থাঙ্কর নয়। শুধু আমরা বন্ধু বান্ধবীরা যাবো।”

তিস্তা ম্লান হেসে দেবব্রতকে বলে, “তির্থাঙ্কর অতীত।”

ম্লান হেসে দেলিসার দিকে তাকিয়ে বলে, “দানিস কে সাথে নিতে আমার আপত্তি নেই।”

দেবব্রত তিস্তার সাথে মজা করে বলে, “উম্ম, তুই সত্যি কথা বলছিস? আমি কতদিন ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম, যেই তোকে একলা পাবো ওমনি প্রোপস করে দেব, সেক্সি।” 

তিস্তা একটু রেগে গিয়ে দেবব্রত কে মারতে শুরু করে দেয়, ওদের দেখে আমার মনে হল যেন এক নতুন দুষ্টু মিষ্টি তিস্তা আমার সামনে। কলেজ থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসে দেখি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমরা সব মিলে সাত বন্ধু বান্ধবী, সবাই একসাথে যাবার জন্য জেদ ধরে। কিন্তু একটা ট্যাক্সিতে সবাই যেতে পারবেনা।

দেবব্রত আমাদের বলে, “একটা উপায় আছে, যদি মেয়েরা আমাদের কোলে বসে তাহলে আমরা সবাই এক গাড়িতে এস্প্লানেড যেতে পারি।”

আমি ওদের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে মাথা নাড়াই।

বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা খুলতে চেষ্টা করি, কিন্তু ছাতা আটকে যায়। দেবব্রত আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর ছাতা আমার মাথার ওপরে মেলে ধরে। আমি ওর দিকে কৃতজ্ঞতা সুলভ চোখে তাকালাম। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আমার জামার হাথা ভিজে যায়, গলায় জড়ানো ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করলাম। ঠিক সেইসময়ে দেবব্রত আমার বাম কাঁধে হাথ রাখে। ওর উষ্ণ হাতের পরশে যেন বিদুত্য বয়ে যায় শরীরে, আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কিন্তু সেই স্পর্শে কোন কামনা বাসনার লেশ ছিলনা, ছিল শুধু বন্ধু সুলভ আলতো ছোঁয়া। আমি আসেপাসে তাকিয়ে দেখি দেলিসা আর তিস্তা আমার দিকে তাকিয়ে ফিকফিক করে হাসছে। আমার ডানদিকের খালি বাজু ওর বুকের ওপরে আলতো করে ছুঁয়ে যায়। আমাদের চারপাশে বৃষ্টি ভেজা ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে চলে। আমি ওর হাথের তালুর উষ্ণতা নিজের কাঁধের ওপরে শুষে নিতে চাই। মনের মধ্যে এক ঝড় ওঠে, ক্ষণিকের জন্যে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, আমি মাটির দিকে তাকিয়ে থাকি নিজেকে সামলানোর জন্য। 

সঙ্খ দুটি ট্যাক্সি ডেকে আনে। একটা ট্যাক্সিতে আমি, দেলিসা তিস্তা আর দেবব্রত চেপে গেলাম, দেবব্রত সামনে বসে। আমি আর দেবব্রত বেশ চুপচাপ। আমার কাঁধে ওর হাতের ছোঁয়ায় আমার মনে প্রানে যেন এক নতুন জীবনের আলো দেখায়। আমার চঞ্চল মন আনমনা হয়ে ওঠে, আমি ট্যাক্সির জানালার বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকি। 

আমাকে অস্বাভাবিক রকম চুপ থাকতে দেখে তিস্তা জিজ্ঞেস করে, “মিতা, কি হল, জন্মদিনের দিন এত চুপ করে কেন?”

আমি মনের চাঞ্চল্য লুকিয়ে উত্তর দিলাম, “মাকে খুব মনে পড়ছে তাই মন একটু খারাপ।” 

সত্যি কি ও ফিরে আসবে আমার কাছে? কি ভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করবে? কেন এখন কোন খবর পাইনা? আমি দিনেদিনে অশান্ত হয়ে উঠি। দিগন্তে একটা ছোটো জাহাজের মাস্তুল দেখা দেয়, যতদিন যায় সেই জাহাজের মাস্তুল দিগন্তের কোলে হারিয়ে যেতে থাকে। আমি শত চেষ্টা করেও সেই জাহাজটাকে ধরতে পারিনা।

দেবব্রত অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল, আমি বুঝতে পারি যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে, আমার শরীরের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে ওর মন হারিয়ে গেছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে দেবব্রতর মাথার পেছনে চাঁটি মেরে জিজ্ঞেস করি, “এই তুই এত চুপচাপ কেন রে?”

ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে, “নাগো কিছু না এমনি চুপ।”

তারপরে হেসে মজা করে বলে, “আমার সাথে তিন তিন খানা সুন্দরী, আজ আবার সবাই চুরিদার পরে এসেছে। আমাকে দেখে ত সব ছেলেরা জ্বলে পুরে খাক হয়ে যাবে।”

তিস্তা ওকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “অন্তত দেলিসাকে ত ছেড়ে দে।”

রেস্টুরেন্টে দেবব্রত আমার আর তিস্তার মাঝে বসে। আমি লক্ষ্য করি যে তিস্তা দেবব্রতর প্রতি অন্য দিনের থেকে একটু বেশি সহানুভুতি দেখায়। আগ বাড়িয়ে দেবব্রতকে সব জায়গায় আগলে আগলে রাখে। মনে মনে হেসে ফেলি আমি তিস্তার কার্যকলাপ দেখে। দেবব্রত যে আমার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে সেটা ভেবে মন আনমনা হয়ে যায়। 

আমি ওদের সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি অর্ডার করা হবে?”

তিস্তা, “ছেলো কাবাব, দেবু তোর কি মত?”

দেবব্রত তিস্তার মুখে ওর ছোটোনাম শুনে একটু থমকে যায়, আমি মনে মনে হেসে ফেলি, পাখি ধরা পরে গেছে খাচায়। দেবব্রত ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে, সেই চাহনি দেখে প্রথম বার তিস্তা লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলে।

তিস্তা লাজুক হেসে দেবব্রতকে বলে নিচু গলায় বলে, “এই ওইরকম ভাবে আমার দিকে তাকাস না, প্লিস।”

বেশ মজা হয় সেদিন। অনেকক্ষণ ধরে গল্প গুজব করে আমরা ছেলোকাবাব শেষ করে রেস্টুরেন্টের বাইরে বেড়িয়ে আসি। বৃষ্টি থামেনি তখন। ছাতা খুলে আমি আর তিস্তা বড় রাস্তার দিকে হাটা লাগাই, আমরা দুজনে একদিকে যাবো। আমাদের সাথে সাথে দেবব্রত হাঁটতে থাকে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram - by Nefertiti - 21-03-2020, 10:51 AM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)