19-03-2020, 04:10 PM
[৭৫]
দিন পনেরোর মধ্যে পল্টু পাকাপাকি ভাবে তার পুরানো পাড়ায় চলে আসে।ইকবালের পক্ষে এতদূরে এসে চাকরি করা সম্ভব হয়না, সে স্থানীয় একজন ড্রাইভার মোহনলালকে ঠিক করে দিয়েছে,লোকটি বিহারী।মোহন লাল এখন পল্টূর গাড়ী চালায়। কদিন আগে সন্ধ্যেবেলা ট্রাকে করে যশবিন্দারের গাড়ী পৌছে দিয়ে গেছে।এখানে একটা মুষ্কিল পাড়ার পুরানো লোকজন আলাপ করতে আসে।কিন্তু পল্টুর পক্ষে তাদের সময় দেওয়া সব সময় হয়ে ওঠেনা।এজন্য তারা ভুল বোঝে।একমাত্র দিলীপের সঙ্গে এক্টূ-আধটু কথাবার্তা হয়।যশের গাড়ী বাড়িতেই থাকে পল্টুর গাড়ী মোহনলালের জিম্মায় গ্যারাজে থাকে।জেসমিনের মুখে আধো-আধো কথা ফুটেছে।মা কথাটা বেশ পরিস্কার বলে।
পল্টূ খাওয়া-দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে যায় রাতে ফেরে।লেক ভিউয়ের সঙ্গে এরকম ব্যবস্থা হয়েছে।পিছনে যশ বিন্দারের সাজেশন ছিল। লেকভিউ ছাড়া কয়েকটা নার্সিং হোমের সঙ্গে কথা হয়েছে সেখানে ডাক পড়লে আরো আগে বেরিয়ে যায়। এতে স্থানীয় লোকজন আর আড্ডা জমাতে আসতে পারেনা।পাড়ার সঙ্গে অঙ্গনের দুরত্ব বাড়ে আর পাঞ্জাবী মেয়ে যশ বিন্দারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।সব কিছুর একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।কেউ কেউ যশের চালচলন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনা,বিশেষকরে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ।বলা বাহুল্য এর মধ্যে দেবব্রতবাবুর অবদান কম নয়।
যশবিন্দার টেবিলে খাবার সাজিয়ে খেতে ডাকল অঙ্গনকে।জেসমিন ঘুমে কাদা,এক নজর দেখে পল্টু খেতে বসল।মিতামাসী রান্না করে রেখে গেছে।
-- ইকবাল লোকটা ভালো ছিল?যশ বলল।
--মোহনলাল খারাপ কি?
পল্টু লক্ষ্য করে যশ চেয়ারে বসে এদিক-ওদিক করছে।জিজ্ঞেস করল,তোমার অসুবিধে হচ্ছে?
--ডাইনিং টেবলটা চেঞ্জ করতে হবে,চেয়ারগুলো ছোটো আরাম সে বসা যায়না।
পল্টু হেসে বলল,তোমার হিপটা বড়।
যশ লাজুক হেসে বলে,সারারাত হচ্ছে?তারপর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,তোমার পছন্দ নয়?
--মজা করলাম।
--আউরত লোকের হিপ থোড়া বড় হয় কেন কি তারা বাচ্চা ক্যারি করে।
পল্টু প্রসঙ্গ বদলাতে বলল,যশ বাড়ীতে একা একা বোর লাগেনা?তুমি কোনো একটা নার্সিং হোমে জয়েন করতে পারো।
--জেসমিনকে রেখে আমি যাবো? আর ইয়ু ম্যাড? বিস্মিত হয়ে বলল যশ।
পল্টূ কথা না বলে চুপ করে খেতে থাকে।অবাক হয়ে ভাবে,একটা আনম্যারেড মেয়ের মধ্যে এত মমতা কি করে সম্ভব?শুনেছে সৎ মায়েরা নাকি সন্তানের প্রতি সুবিচার করে না।একটু ইতস্তত করে পল্টূ বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো,কিছু মনে করবে না?
যশ খেতে খেতে চোখ তুলে তাকাল।পল্টু বলল,সিরিয়াস কিছু নয় জাষ্ট কৌতূহল।
--ধরো জেসমিন যখন বড় হবে তখন সত্যিট চাপা থাকবে না।জানবে তুমি ওর আসল মা নও, তোমার খারাপ লাগবে না?
যশবিন্দার কোনো উত্তর দেয়না,পল্টু লক্ষ্য করল চোখ ছলছল করছে।পল্টূ উঠে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,স্যরি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।
যশবিন্দার ওড়না দিয়ে চোখ মুছে হেসে বলল,ইটস অল রাইট।তারপর আবার খেতে শুরু করে।কিছুক্ষন পর উদাসভাবে বলল,অঙ্গন আমি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে কিছু করিনা।আমি জন্ম দিইনি শুধু সেটাই জানবে,আর বাকি সব কি মিথ্যে?
পল্টূ কি বলতে যাচ্ছিল বাধা দিয়ে বলল, নেও তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও আমাকে টেবিল সাফ করতে হবে।
বেসিনে হাত-মুখে ধুয়ে ঘরে ঢূকে দেখল ঘুমে কাদা জেসমিন।এক্টু পরেই যশবিন্দার এল বোতল গেলাস নিয়ে।
পল্টু অবাক জিজ্ঞেস করে,এতসব কখন করলে?
--খাওয়া-দাওয়ার পর একটু সিপ করলে নিদ ভালো হবে।
পল্টুর ভালো লাগে,কেমন একটা বিস্বাদ-বিস্বাদ লাগছিল।যশবিন্দার দুটো গেলাসে পানীয় ঢেলে একটা এগিয়ে দিল।মুগ্ধ চোখে যশকে দেখতে দেখতে পল্টু হাত বাড়িয়ে গেলাস নিল।এক চুমুক দিয়ে বলল,যশ তুমি আমার পাশে এসে বোসো।
যশবিন্দার এই আহবানের অপেক্ষা করছিল উঠে অঙ্গনের পাশে বসতেই বা-হাতে যশের গলা জড়িয়ে ধরে।যশ মাথাটা অঙ্গনের দিকে হেলিয়ে দিল।বাপির কথা মনে পড়ল।লেকভিউ হতে ফিরে মায়ের পাশে বসে ড্রিঙ্ক করতো।মম অবশ্য পান করত না,কেবল সঙ্গ দিতো।শেষ করে পল্টূ বোতলের দিকে হাত বাড়ায়।যশ হাত চেপে ধরে মুখ তুলে আকুল ভাবে বলল,নো মোর ডার্লিং।
পল্টু মুগ্ধ হয়ে যশের দিকে তাকিয়ে থাকে।তির তির করে কাপছে যশের ঠোট।মাথা নীচু করে যশের ঠোটে ঠোট রাখলো।
--কাল তোমাকে বেরোতে হবে।মিতামৌসি এলে ভোর বেলা বাজারে যাবো।
গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে এইসব করে।মিতা মাসী বলছিল জেসমিনকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতে দেখল জেসমিন ঘুমিয়ে কিন্তু যশ নেই।রান্না ঘরে শব্দ নেই, মিতামাসী আসেনি এত বেলা হল?
এত ভোরে কোথায় গেল যশ,মিতামাসীরও পাত্তা নেই।কাল বলছিল বাজার যাবে,বাজারে যায়নি তো? পল্টূ আবার শুয়ে পড়ল জেসমিনের পাশে।আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে হয়,মিতামাসীর ডাকে চোখ মেলে তাকায়,হাতে গরম চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতামাসী।
--যশবিন্দার কোথায়?চা নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে পল্টূ।
--মেডোম রান্না করতিছে।বলল আজ উনি কি একটা রান্না করবেন।
পল্টুর মুখে হাসি খেলে গেল।যশবিন্দার রান্না করতে পারে?কি জানি আজ কপালে কি আছে।মিতামাসীকে বলল,তুমি একটু দেখিয়ে দাও,ওর অভ্যেস নেই--।
--অন্য রকম কি রান্না করছে আমি ঐরকম জানি না।ঐটা হয়ে গেলে আমি ভাত রান্না করব।
অন্যরকম রান্না? সর্বনাশ পল্টুর মজা লাগে।কে জানে কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে তার জন্য।মনে মনে প্রস্তুত করে নিজেকে সখ করে রান্না করছে যেমনই হোক প্রশংসা করতেই হবে।মুঘলাই খানা শুনেছে পাঞ্জাবিদের রান্নার ব্যাপারে কিছু জানা নেই।পল্টু হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,মাসী তোমরা কোথাও গেছিলে?
--ম্যাডাম গাড়ী নিয়ে বাজার করতি গেছিল।আমারে বলল উঠতি।বাজারে গিয়ে খালি দরদাম করে।এককাড়ী বাজার করে আনিছে,ফ্রিজে ধরতিছেনা। মিতামাসী হেসে ফেলল।
পল্টূ মনে মনে হাসে যা ইচ্ছে হয় করুক ওর ইচ্ছেতে কোনো বাধা দেবে না।পাঞ্জাবের কোথায় না কোথায় থাকে অঞ্জনার মৃত্যুর পর দিশাহারা অবস্থা অথৈ জলে যেন হাবুডূবু খাচ্ছে সেই সময় লাইফবোটের মতো যশ পাশে এসে দাড়ায়।মিতামাসীর দিকে তাকিয়ে মনে হল কিছু বলতে চায় জিজ্ঞেস করে কিছু বলবে?
--ছোড়দা বাজারে দিলীপের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এমন ভাবী-ভাবী করতেছিল--তাই মনে হল--।
দুধের বোতল নিয়ে ঘেমে নেয়ে ঢূকতে গিয়ে কথাটা কানে যেতে যশবিন্দার থমকে দাড়ায়,অঙ্গন কি বলে?
পল্টূ হেসে বলল,কি মনে হল?
--ম্যাডম তোমার বউ।
--বউ হতে পারেনা?
কি বলবে মিতামাসী ভেবে পায় না তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,ললিতা বলতেছিল মেডোম বুইনরে খুব ভালবাসে।কথাগুলো ঠিক আমাদের মত না।
--উনি পাঞ্জাবী,আমার বউ।
গলার কাছে আটকে থাকা শ্বাস বেরিয়ে স্বস্তি পায় যশবিন্দার। ভিতরে ঢুকতে ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে যায়। মিতামাসী আড়চোখে এক পলক দেখে রান্না ঘরে চলে গেল।পল্টূ গম্ভীর মুখ করে থাকে।জেসমিনকে কোলে নিয়ে মুখে দুধের বোতল গুজে দিয়ে বলল,দিলীপ জিজ্ঞেস করছিল,অঙ্গন কখন বাড়ীতে থাকে?
--তুমি কোথায় গেছিলে এত সকালে?
--কেন তোমাকে বলিনি বাজারে যাবো।সাতদিনের বাজার করে আনলম।
--টাকা কোথায় পেলে?
যশবিন্দার বিস্মিত দৃষ্টি মেলে তাকায়,কি বলছে অঙ্গন বুঝতে পারে না।কিছুক্ষন পর বলল,সমঝ গিয়া।
পল্টু দেখল যশের মুখটা কালো হয়ে গেল,জেসমিনকে দুধ খাওয়ানোর ছলে মাথা নীচু করে থাকে।অঞ্জু তো কত রকমের খরচ করতো আজ কেন অমন বলতে গেল ভেবে পল্টুর খুব খারাপ লাগে।সন্তর্পণে পিছন থকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,যশ ডার্লিং স্যরি।
--আমি ফ্যামিলি মেম্বার নাই?
--বলছি তো ভুল হয়ে গেছে--।
ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেসে বলল,যাও স্নান করে এসো।কটায় বেরোবে?
--তিন সাড়ে-তিনটের সময় বেরোবো।পল্টু ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খেলো।
পল্টূ স্নান করতে গেল।যশ জেসমিনকে বলে,আউরত কো দিল মিট্টি যেইসা থোড়া প্যার কি পানি পড়লে একেবারে কাদা হয়ে যায়,বেটি জেন তুমার ড্যাড ভাল নাই।
জেসমিন কি বুঝলো কে জানে ফিক হেসে হাত দিয়ে যশের নাক ধরতে যায়।যশ তুলে তার কপালে চুমু খেল।মনটা আজ বেশ খুশী খুশী।একটা কথা মনে হল অঙ্গন তার শরীর নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কিস করে মগর কভি সঙ্গম করেনি।দিল্লীতে জোর করে করেছিল আর সেরকম কিছু করবে না।অঙ্গন আপনা মর্জিতে করে কিনা তার জন্য ইন্তেজার করবে।জোর করে এসব হয়না।মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে গা টিপে দেয় এতাই ভালো আছে তার কোনো কষ্ট হয়না।
খেতে বসে পল্টুর মনে পড়ে যশ কি যেন রান্না করেছে।খেতে খেতে ভাবে সেই পদটা কি?খাওয়া প্রায় শেষ পল্টূ জিজ্ঞেস করল,এসব কে রান্না করেছে?
যশ খেতে খেতে বলল,মৌসী করেছে,কেন?
--শুনলাম তুমি কি রান্না করেছো?
--রাতে রুটির সঙ্গে খাবে।
-- রাতে তো খাবো,এখন একটু দাও টেস্ট করে দেখি।
যশ মিতামাসীকে বলল,একটা প্লেটে থোড়া--।
মিতামাসী জিজ্ঞেস করে,আপনারে দেবো?
--না না আমাকে দিতে হবে অঙ্গনকে থোড়া দাও।
মিতা মাসী একটা প্লেটে করে পল্টূকে দিল।সাদা সাদা সবুজ একটা পদ পল্টু জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
--আমার দেশে বলে মুর্গ ভর্তা,এখানে কি বলে জানি না।
গন্ধটা ভালই লাগছে ,ভাল ভাল মশলা দিলে গন্ধ ভালই বেরোয় খেতে কেমন হবে কে জানে।পল্টুই চেয়ে নিয়েছে এখন খেতেই হবে।যশ অধীর আগ্রহে অঙ্গনের দিকে তাকিয়ে থাকে।দু-আঙ্গুলে একটা টুকরো মুখে দিয়ে অবাক হয় পল্টু,দারুণ হয়েছে। যশের দিকে তাকিয়ে বলল,ডেলিশাস।কি দিয়ে বানিয়েছো?
--চিকেন দহি তুমার ভাল লেগেছে?
--ভাল কি তুমি ডাক্তার না হয়ে হোটেল খুলতে পারতে।
যশের মুখে হাসি ফোটে।মিতামাসী স্বস্তি বোধ করে,কেননা আপত্তি সত্বেও মেডাম তার জন্য একটা টীফিন ক্যারিয়ারে ভরে দিয়েছে।মেডামের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিতামাসীর চোখের পাতা ভারী হয়ে এল।মানুষটার মন খুব ভাল।ছোড়দা জন্য আর চিন্তা রইল না।আগের বউটার সঙ্গে বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।
ইজি চেয়ারে বসে মেডিক্যাল জার্নালে চোখ বোলাচ্ছিল।দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই।
আগে এসময় অঞ্জু কলেজ চলে যেত।যশকে মনে হল চেঞ্জ করছিল,কোথায় গেল? রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে মনে হল।এখন আবার রান্না ঘরে আবার কি করছে?
চেয়ার ছেড়ে পা টিপে টিপে রান্না ঘরের দিকে গেল।যশবিন্দার কি যেন করছে,পিছন থেকে পল্টু জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,কি করছো ডার্লিং?
--আহা নিজে তো খেয়ে নিশ্চিন্ত জেনের এখনো খাওয়া হয়নি।কি করছো ছাড়ো দুধ পড়ে যাবে।
পল্টু গালে গলায় চুমু খেতে লাগল,আপত্তি করলেও যশের এই উপদ্রব ভাল লাগে।
--রাতে তো ভুষ ভুষ করে ঘুমোচ্ছিলে এখন আবার কি হল?
পল্টূ বুঝতে পারে অভিমানের কারণ বলল,একরাত গেলেও সামনে পড়ে আছে অনেক রাত।শেষে তুমিই বিরক্ত হবে।
যশের দুধ তৈরী হয়ে গেছে, হেসে লাজুক গলায় বলল, ট্রাই করে তো দেখো।
খাটে এসে জেনকে ঘুম থেকে টেনে তুলে দুধ খাওয়াতে থাকে যশ।পল্টুর মায়ের কথা মনে পড়ল।সংসারের কাজে ডুবে থাকলেও সতর্ক নজর থাকত পল্টুর দিকে।পান থেকে চুন খসার যো ছিল না।মুখের দিকে তাকিয়ে ভিতরটা দেখতে পেতো।একদিন কলেজে দুষ্টুমি শাস্তি পেয়েছিল,বাসায় ফিরে চুপ করে শুয়ে ছিল।মা জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার শুয়ে পড়লি? পল্টু বলল,এমনি।মা সারা গায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,কলেজে কি হয়েছে আজ?চমকে ওঠে পল্টূ, মা কি করে জানলো?
--অঙ্গন কি ভাবছো?মুখ না ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে যশ।
পল্টূ হেসে ফেলে।যশ বলল,তুমি আমার কথা ভাবছিলে আয় এ্যাম রাইট?
--যশ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে বলবে?
--ঝুট কেন বলবো?যশ হাসল।
--তুমি শিখ পরিবারের মেয়ে একটা অন্য পরিবেশে তোমার খারাপ লাগছে না?
--ওহ এইবাত?যশবিন্দার জেনকে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে পল্টুর দিকে ঘুরে বসে বলল,অঙ্গন আমি কোনো মজবুরি থেকে আসিনি।দিল্লীতে তুমি যখন রাস্তায় কলেজের পতা জিজ্ঞেস করলে আমি জানতাম না তুমি বাঙালি কি বিহারি লেকিন সেইদিনই মনে হয়েছিল দিস ইজ দা ম্যান হুম আই সার্চড।
--তুমি তো জানতে না আমি বিবাহিত?মানুষ হিসেবে আমি কেমন?
--সো হোয়াট?দুনিয়ায় কত কিছুই তো পেতে ইচ্ছে হয় সব কি পাওয়া যায়?যশ পল্টূকে জড়িয়ে ধরে বলল,অঙ্গন ইউ আর ভেরি লাভলি।
পল্টু মন মনে ভাবে কিযেন ভদ্রমহিলার নাম রেজিষ্ট্রি পেপারে লেখা আছে--ভদ্র মহিলাকে খবর দিয়ে রেজস্ট্রিটা সেরে ফেলা দরকার।যশের এই ব্যাপারে কোনো গরজ নেই।কিন্তু সমাজ বলে একটা কথা আছে।
নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল।মনে হচ্ছে ইকবাল এসে গেছে।যশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
যশ বলল, কাজ হয়ে গেলেই চলে আসবে,মনে রাখবে জেন আছে বাড়িতে।
--আর কেউ নেই?পল্টু পোশাক বদলাতে বদলাতে বলল।
--সে তুমি জানে।যশ বলল।
পল্টু বেরিয়ে যাবার পর যশবিন্দার দরজা বন্ধ করে জেনের পাশে শুয়ে পড়ল।একা হলেই বাড়ীর কথা মনে পড়ে।কতদিন ফোন করা হয়নি।পরমিতের ব্যাপার নিয়ে দাদী খুব চিন্তায় আছে।অঙ্গনের কথা পুরা জানে না।দাদীকে সব জানাতে হবে।
মিতামাসীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই, দ্রুত উঠে বসে দরজা খুলে দিল।
--চা বানাই?মিতা মাসী জিজ্ঞেস করে।
--হ্যা।জেনের জন্য দুধ বানাতে হবে।
মিতামাসী রান্না ঘরে চলে গেল।একটু ঘুমিয়ে নিয়েছে ভালই হল যশ ভাবে।চোখ মুখে জল দিল।অঙ্গন নেই বহুৎ বোর মেহশুস হচ্ছে।চুপচাপ ঘরে বসে থাকার পাত্রী নয় যশবিন্দার।খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল জেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ঘরের লাইট জ্বেলে দিল।মিতামাসী দুধের বোতল দিয়ে গেল।তালুর উল্টোদিকে দু-ফোটা দুধ ফেলে পরীক্ষা করল।বোতল রেখে জেনের উপর ঝুকে বলল,জেন মেরি জান,এখোন উঠো।
ঠেলাঠেলিতে জেন চোখ মেলে তাকাল।
--মেডাম চা।মিতামাসী চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে যশবিন্দার বলল,তুমার চা নিয়ে এখানে বোসো।
মিতামাসী অবাক মেডাম কি রান্নার ব্যাপারে কিছু বলতে চায়?রান্না ঘরে গিয়ে চা নিয়ে ফিরে এল।চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,মেডাম আপনে যে খাবার করছিলেন সবাই সুখ্যেত করতেছিল।
যশবিন্দার হেসে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা মাসী পহেলে তুমার দাদার বহুকে তুমি কি বলে ডাকতে ম্যাডাম?
--আজ্ঞে তেনারে মোটে একবার দেখেছিলাম খুব ম্যাজাজি ছিলেন।
যশবিন্দারের ভ্রু কুচকে যায় জিজ্ঞেস করে,তূমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন?
মিতামাসী জিভ কেটে বলল,মানুষটা খুব ভাল ছিল। মিতামাসী কাছে এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল,নীচে ছোড়দার মামা থাকে বাড়ীটা দখল করে নিয়েছিল।পুলিশ এসে বাড়ি থেকে বের করে দিলি উনি এসে আবার ঢুকোয় দিয়ে গেল।
--দাদার বহুকে তুমরা কি বলো?
--বৌঠান বলে বৌদি বলে--।
--শুনো মৌসী তুমি আমাকে ম্যাডাম বলবে না বলবে বৌদি।
--আচ্ছা মেডাম।
কলিং বেল বেজে ঊঠতে যশ বলল,দেখো আবার কে এল?
মিতা মাসী চলে যেতে দেখল তার কোলে জেন ড্যাবডেবিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিতামাসী এসে খবর দিল,ছোড়দার বন্ধু দিলীপ এসেছে।যশবিন্দারের ভাল লাগে একা একা হাপিয়ে উঠেছিল,মিতামাসীকে বলল,বৈঠক খানার ঘর খুলে বসতে দাও।আর শোনো সকালে যে ভর্তা করেছি কিছুটা মাইক্রোভেনে গরম করে একটা প্লেটে দিও।
--দুইজন আসছে।
--ঠিক আছে অল্প করে দু-জায়গায় দিলেই হবে।যাও ওদের বসাও।
যশবিন্দার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করে নিল।দিলীপ আবার কাকে নিয়ে এল? ভেবেছিল দিলীপের সঙ্গে খোলামেলা একটু গল্প করবে।জেনকে কোলে নিয়ে নীচে নামল।
দিন পনেরোর মধ্যে পল্টু পাকাপাকি ভাবে তার পুরানো পাড়ায় চলে আসে।ইকবালের পক্ষে এতদূরে এসে চাকরি করা সম্ভব হয়না, সে স্থানীয় একজন ড্রাইভার মোহনলালকে ঠিক করে দিয়েছে,লোকটি বিহারী।মোহন লাল এখন পল্টূর গাড়ী চালায়। কদিন আগে সন্ধ্যেবেলা ট্রাকে করে যশবিন্দারের গাড়ী পৌছে দিয়ে গেছে।এখানে একটা মুষ্কিল পাড়ার পুরানো লোকজন আলাপ করতে আসে।কিন্তু পল্টুর পক্ষে তাদের সময় দেওয়া সব সময় হয়ে ওঠেনা।এজন্য তারা ভুল বোঝে।একমাত্র দিলীপের সঙ্গে এক্টূ-আধটু কথাবার্তা হয়।যশের গাড়ী বাড়িতেই থাকে পল্টুর গাড়ী মোহনলালের জিম্মায় গ্যারাজে থাকে।জেসমিনের মুখে আধো-আধো কথা ফুটেছে।মা কথাটা বেশ পরিস্কার বলে।
পল্টূ খাওয়া-দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে যায় রাতে ফেরে।লেক ভিউয়ের সঙ্গে এরকম ব্যবস্থা হয়েছে।পিছনে যশ বিন্দারের সাজেশন ছিল। লেকভিউ ছাড়া কয়েকটা নার্সিং হোমের সঙ্গে কথা হয়েছে সেখানে ডাক পড়লে আরো আগে বেরিয়ে যায়। এতে স্থানীয় লোকজন আর আড্ডা জমাতে আসতে পারেনা।পাড়ার সঙ্গে অঙ্গনের দুরত্ব বাড়ে আর পাঞ্জাবী মেয়ে যশ বিন্দারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।সব কিছুর একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।কেউ কেউ যশের চালচলন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনা,বিশেষকরে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ।বলা বাহুল্য এর মধ্যে দেবব্রতবাবুর অবদান কম নয়।
যশবিন্দার টেবিলে খাবার সাজিয়ে খেতে ডাকল অঙ্গনকে।জেসমিন ঘুমে কাদা,এক নজর দেখে পল্টু খেতে বসল।মিতামাসী রান্না করে রেখে গেছে।
-- ইকবাল লোকটা ভালো ছিল?যশ বলল।
--মোহনলাল খারাপ কি?
পল্টু লক্ষ্য করে যশ চেয়ারে বসে এদিক-ওদিক করছে।জিজ্ঞেস করল,তোমার অসুবিধে হচ্ছে?
--ডাইনিং টেবলটা চেঞ্জ করতে হবে,চেয়ারগুলো ছোটো আরাম সে বসা যায়না।
পল্টু হেসে বলল,তোমার হিপটা বড়।
যশ লাজুক হেসে বলে,সারারাত হচ্ছে?তারপর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,তোমার পছন্দ নয়?
--মজা করলাম।
--আউরত লোকের হিপ থোড়া বড় হয় কেন কি তারা বাচ্চা ক্যারি করে।
পল্টু প্রসঙ্গ বদলাতে বলল,যশ বাড়ীতে একা একা বোর লাগেনা?তুমি কোনো একটা নার্সিং হোমে জয়েন করতে পারো।
--জেসমিনকে রেখে আমি যাবো? আর ইয়ু ম্যাড? বিস্মিত হয়ে বলল যশ।
পল্টূ কথা না বলে চুপ করে খেতে থাকে।অবাক হয়ে ভাবে,একটা আনম্যারেড মেয়ের মধ্যে এত মমতা কি করে সম্ভব?শুনেছে সৎ মায়েরা নাকি সন্তানের প্রতি সুবিচার করে না।একটু ইতস্তত করে পল্টূ বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো,কিছু মনে করবে না?
যশ খেতে খেতে চোখ তুলে তাকাল।পল্টু বলল,সিরিয়াস কিছু নয় জাষ্ট কৌতূহল।
--ধরো জেসমিন যখন বড় হবে তখন সত্যিট চাপা থাকবে না।জানবে তুমি ওর আসল মা নও, তোমার খারাপ লাগবে না?
যশবিন্দার কোনো উত্তর দেয়না,পল্টু লক্ষ্য করল চোখ ছলছল করছে।পল্টূ উঠে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,স্যরি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।
যশবিন্দার ওড়না দিয়ে চোখ মুছে হেসে বলল,ইটস অল রাইট।তারপর আবার খেতে শুরু করে।কিছুক্ষন পর উদাসভাবে বলল,অঙ্গন আমি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে কিছু করিনা।আমি জন্ম দিইনি শুধু সেটাই জানবে,আর বাকি সব কি মিথ্যে?
পল্টূ কি বলতে যাচ্ছিল বাধা দিয়ে বলল, নেও তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও আমাকে টেবিল সাফ করতে হবে।
বেসিনে হাত-মুখে ধুয়ে ঘরে ঢূকে দেখল ঘুমে কাদা জেসমিন।এক্টু পরেই যশবিন্দার এল বোতল গেলাস নিয়ে।
পল্টু অবাক জিজ্ঞেস করে,এতসব কখন করলে?
--খাওয়া-দাওয়ার পর একটু সিপ করলে নিদ ভালো হবে।
পল্টুর ভালো লাগে,কেমন একটা বিস্বাদ-বিস্বাদ লাগছিল।যশবিন্দার দুটো গেলাসে পানীয় ঢেলে একটা এগিয়ে দিল।মুগ্ধ চোখে যশকে দেখতে দেখতে পল্টু হাত বাড়িয়ে গেলাস নিল।এক চুমুক দিয়ে বলল,যশ তুমি আমার পাশে এসে বোসো।
যশবিন্দার এই আহবানের অপেক্ষা করছিল উঠে অঙ্গনের পাশে বসতেই বা-হাতে যশের গলা জড়িয়ে ধরে।যশ মাথাটা অঙ্গনের দিকে হেলিয়ে দিল।বাপির কথা মনে পড়ল।লেকভিউ হতে ফিরে মায়ের পাশে বসে ড্রিঙ্ক করতো।মম অবশ্য পান করত না,কেবল সঙ্গ দিতো।শেষ করে পল্টূ বোতলের দিকে হাত বাড়ায়।যশ হাত চেপে ধরে মুখ তুলে আকুল ভাবে বলল,নো মোর ডার্লিং।
পল্টু মুগ্ধ হয়ে যশের দিকে তাকিয়ে থাকে।তির তির করে কাপছে যশের ঠোট।মাথা নীচু করে যশের ঠোটে ঠোট রাখলো।
--কাল তোমাকে বেরোতে হবে।মিতামৌসি এলে ভোর বেলা বাজারে যাবো।
গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে এইসব করে।মিতা মাসী বলছিল জেসমিনকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতে দেখল জেসমিন ঘুমিয়ে কিন্তু যশ নেই।রান্না ঘরে শব্দ নেই, মিতামাসী আসেনি এত বেলা হল?
এত ভোরে কোথায় গেল যশ,মিতামাসীরও পাত্তা নেই।কাল বলছিল বাজার যাবে,বাজারে যায়নি তো? পল্টূ আবার শুয়ে পড়ল জেসমিনের পাশে।আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে হয়,মিতামাসীর ডাকে চোখ মেলে তাকায়,হাতে গরম চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতামাসী।
--যশবিন্দার কোথায়?চা নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে পল্টূ।
--মেডোম রান্না করতিছে।বলল আজ উনি কি একটা রান্না করবেন।
পল্টুর মুখে হাসি খেলে গেল।যশবিন্দার রান্না করতে পারে?কি জানি আজ কপালে কি আছে।মিতামাসীকে বলল,তুমি একটু দেখিয়ে দাও,ওর অভ্যেস নেই--।
--অন্য রকম কি রান্না করছে আমি ঐরকম জানি না।ঐটা হয়ে গেলে আমি ভাত রান্না করব।
অন্যরকম রান্না? সর্বনাশ পল্টুর মজা লাগে।কে জানে কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে তার জন্য।মনে মনে প্রস্তুত করে নিজেকে সখ করে রান্না করছে যেমনই হোক প্রশংসা করতেই হবে।মুঘলাই খানা শুনেছে পাঞ্জাবিদের রান্নার ব্যাপারে কিছু জানা নেই।পল্টু হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,মাসী তোমরা কোথাও গেছিলে?
--ম্যাডাম গাড়ী নিয়ে বাজার করতি গেছিল।আমারে বলল উঠতি।বাজারে গিয়ে খালি দরদাম করে।এককাড়ী বাজার করে আনিছে,ফ্রিজে ধরতিছেনা। মিতামাসী হেসে ফেলল।
পল্টূ মনে মনে হাসে যা ইচ্ছে হয় করুক ওর ইচ্ছেতে কোনো বাধা দেবে না।পাঞ্জাবের কোথায় না কোথায় থাকে অঞ্জনার মৃত্যুর পর দিশাহারা অবস্থা অথৈ জলে যেন হাবুডূবু খাচ্ছে সেই সময় লাইফবোটের মতো যশ পাশে এসে দাড়ায়।মিতামাসীর দিকে তাকিয়ে মনে হল কিছু বলতে চায় জিজ্ঞেস করে কিছু বলবে?
--ছোড়দা বাজারে দিলীপের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এমন ভাবী-ভাবী করতেছিল--তাই মনে হল--।
দুধের বোতল নিয়ে ঘেমে নেয়ে ঢূকতে গিয়ে কথাটা কানে যেতে যশবিন্দার থমকে দাড়ায়,অঙ্গন কি বলে?
পল্টূ হেসে বলল,কি মনে হল?
--ম্যাডম তোমার বউ।
--বউ হতে পারেনা?
কি বলবে মিতামাসী ভেবে পায় না তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,ললিতা বলতেছিল মেডোম বুইনরে খুব ভালবাসে।কথাগুলো ঠিক আমাদের মত না।
--উনি পাঞ্জাবী,আমার বউ।
গলার কাছে আটকে থাকা শ্বাস বেরিয়ে স্বস্তি পায় যশবিন্দার। ভিতরে ঢুকতে ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে যায়। মিতামাসী আড়চোখে এক পলক দেখে রান্না ঘরে চলে গেল।পল্টূ গম্ভীর মুখ করে থাকে।জেসমিনকে কোলে নিয়ে মুখে দুধের বোতল গুজে দিয়ে বলল,দিলীপ জিজ্ঞেস করছিল,অঙ্গন কখন বাড়ীতে থাকে?
--তুমি কোথায় গেছিলে এত সকালে?
--কেন তোমাকে বলিনি বাজারে যাবো।সাতদিনের বাজার করে আনলম।
--টাকা কোথায় পেলে?
যশবিন্দার বিস্মিত দৃষ্টি মেলে তাকায়,কি বলছে অঙ্গন বুঝতে পারে না।কিছুক্ষন পর বলল,সমঝ গিয়া।
পল্টু দেখল যশের মুখটা কালো হয়ে গেল,জেসমিনকে দুধ খাওয়ানোর ছলে মাথা নীচু করে থাকে।অঞ্জু তো কত রকমের খরচ করতো আজ কেন অমন বলতে গেল ভেবে পল্টুর খুব খারাপ লাগে।সন্তর্পণে পিছন থকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,যশ ডার্লিং স্যরি।
--আমি ফ্যামিলি মেম্বার নাই?
--বলছি তো ভুল হয়ে গেছে--।
ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেসে বলল,যাও স্নান করে এসো।কটায় বেরোবে?
--তিন সাড়ে-তিনটের সময় বেরোবো।পল্টু ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খেলো।
পল্টূ স্নান করতে গেল।যশ জেসমিনকে বলে,আউরত কো দিল মিট্টি যেইসা থোড়া প্যার কি পানি পড়লে একেবারে কাদা হয়ে যায়,বেটি জেন তুমার ড্যাড ভাল নাই।
জেসমিন কি বুঝলো কে জানে ফিক হেসে হাত দিয়ে যশের নাক ধরতে যায়।যশ তুলে তার কপালে চুমু খেল।মনটা আজ বেশ খুশী খুশী।একটা কথা মনে হল অঙ্গন তার শরীর নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কিস করে মগর কভি সঙ্গম করেনি।দিল্লীতে জোর করে করেছিল আর সেরকম কিছু করবে না।অঙ্গন আপনা মর্জিতে করে কিনা তার জন্য ইন্তেজার করবে।জোর করে এসব হয়না।মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে গা টিপে দেয় এতাই ভালো আছে তার কোনো কষ্ট হয়না।
খেতে বসে পল্টুর মনে পড়ে যশ কি যেন রান্না করেছে।খেতে খেতে ভাবে সেই পদটা কি?খাওয়া প্রায় শেষ পল্টূ জিজ্ঞেস করল,এসব কে রান্না করেছে?
যশ খেতে খেতে বলল,মৌসী করেছে,কেন?
--শুনলাম তুমি কি রান্না করেছো?
--রাতে রুটির সঙ্গে খাবে।
-- রাতে তো খাবো,এখন একটু দাও টেস্ট করে দেখি।
যশ মিতামাসীকে বলল,একটা প্লেটে থোড়া--।
মিতামাসী জিজ্ঞেস করে,আপনারে দেবো?
--না না আমাকে দিতে হবে অঙ্গনকে থোড়া দাও।
মিতা মাসী একটা প্লেটে করে পল্টূকে দিল।সাদা সাদা সবুজ একটা পদ পল্টু জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
--আমার দেশে বলে মুর্গ ভর্তা,এখানে কি বলে জানি না।
গন্ধটা ভালই লাগছে ,ভাল ভাল মশলা দিলে গন্ধ ভালই বেরোয় খেতে কেমন হবে কে জানে।পল্টুই চেয়ে নিয়েছে এখন খেতেই হবে।যশ অধীর আগ্রহে অঙ্গনের দিকে তাকিয়ে থাকে।দু-আঙ্গুলে একটা টুকরো মুখে দিয়ে অবাক হয় পল্টু,দারুণ হয়েছে। যশের দিকে তাকিয়ে বলল,ডেলিশাস।কি দিয়ে বানিয়েছো?
--চিকেন দহি তুমার ভাল লেগেছে?
--ভাল কি তুমি ডাক্তার না হয়ে হোটেল খুলতে পারতে।
যশের মুখে হাসি ফোটে।মিতামাসী স্বস্তি বোধ করে,কেননা আপত্তি সত্বেও মেডাম তার জন্য একটা টীফিন ক্যারিয়ারে ভরে দিয়েছে।মেডামের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিতামাসীর চোখের পাতা ভারী হয়ে এল।মানুষটার মন খুব ভাল।ছোড়দা জন্য আর চিন্তা রইল না।আগের বউটার সঙ্গে বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।
ইজি চেয়ারে বসে মেডিক্যাল জার্নালে চোখ বোলাচ্ছিল।দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই।
আগে এসময় অঞ্জু কলেজ চলে যেত।যশকে মনে হল চেঞ্জ করছিল,কোথায় গেল? রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে মনে হল।এখন আবার রান্না ঘরে আবার কি করছে?
চেয়ার ছেড়ে পা টিপে টিপে রান্না ঘরের দিকে গেল।যশবিন্দার কি যেন করছে,পিছন থেকে পল্টু জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,কি করছো ডার্লিং?
--আহা নিজে তো খেয়ে নিশ্চিন্ত জেনের এখনো খাওয়া হয়নি।কি করছো ছাড়ো দুধ পড়ে যাবে।
পল্টু গালে গলায় চুমু খেতে লাগল,আপত্তি করলেও যশের এই উপদ্রব ভাল লাগে।
--রাতে তো ভুষ ভুষ করে ঘুমোচ্ছিলে এখন আবার কি হল?
পল্টূ বুঝতে পারে অভিমানের কারণ বলল,একরাত গেলেও সামনে পড়ে আছে অনেক রাত।শেষে তুমিই বিরক্ত হবে।
যশের দুধ তৈরী হয়ে গেছে, হেসে লাজুক গলায় বলল, ট্রাই করে তো দেখো।
খাটে এসে জেনকে ঘুম থেকে টেনে তুলে দুধ খাওয়াতে থাকে যশ।পল্টুর মায়ের কথা মনে পড়ল।সংসারের কাজে ডুবে থাকলেও সতর্ক নজর থাকত পল্টুর দিকে।পান থেকে চুন খসার যো ছিল না।মুখের দিকে তাকিয়ে ভিতরটা দেখতে পেতো।একদিন কলেজে দুষ্টুমি শাস্তি পেয়েছিল,বাসায় ফিরে চুপ করে শুয়ে ছিল।মা জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার শুয়ে পড়লি? পল্টু বলল,এমনি।মা সারা গায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,কলেজে কি হয়েছে আজ?চমকে ওঠে পল্টূ, মা কি করে জানলো?
--অঙ্গন কি ভাবছো?মুখ না ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে যশ।
পল্টূ হেসে ফেলে।যশ বলল,তুমি আমার কথা ভাবছিলে আয় এ্যাম রাইট?
--যশ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে বলবে?
--ঝুট কেন বলবো?যশ হাসল।
--তুমি শিখ পরিবারের মেয়ে একটা অন্য পরিবেশে তোমার খারাপ লাগছে না?
--ওহ এইবাত?যশবিন্দার জেনকে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে পল্টুর দিকে ঘুরে বসে বলল,অঙ্গন আমি কোনো মজবুরি থেকে আসিনি।দিল্লীতে তুমি যখন রাস্তায় কলেজের পতা জিজ্ঞেস করলে আমি জানতাম না তুমি বাঙালি কি বিহারি লেকিন সেইদিনই মনে হয়েছিল দিস ইজ দা ম্যান হুম আই সার্চড।
--তুমি তো জানতে না আমি বিবাহিত?মানুষ হিসেবে আমি কেমন?
--সো হোয়াট?দুনিয়ায় কত কিছুই তো পেতে ইচ্ছে হয় সব কি পাওয়া যায়?যশ পল্টূকে জড়িয়ে ধরে বলল,অঙ্গন ইউ আর ভেরি লাভলি।
পল্টু মন মনে ভাবে কিযেন ভদ্রমহিলার নাম রেজিষ্ট্রি পেপারে লেখা আছে--ভদ্র মহিলাকে খবর দিয়ে রেজস্ট্রিটা সেরে ফেলা দরকার।যশের এই ব্যাপারে কোনো গরজ নেই।কিন্তু সমাজ বলে একটা কথা আছে।
নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল।মনে হচ্ছে ইকবাল এসে গেছে।যশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
যশ বলল, কাজ হয়ে গেলেই চলে আসবে,মনে রাখবে জেন আছে বাড়িতে।
--আর কেউ নেই?পল্টু পোশাক বদলাতে বদলাতে বলল।
--সে তুমি জানে।যশ বলল।
পল্টু বেরিয়ে যাবার পর যশবিন্দার দরজা বন্ধ করে জেনের পাশে শুয়ে পড়ল।একা হলেই বাড়ীর কথা মনে পড়ে।কতদিন ফোন করা হয়নি।পরমিতের ব্যাপার নিয়ে দাদী খুব চিন্তায় আছে।অঙ্গনের কথা পুরা জানে না।দাদীকে সব জানাতে হবে।
মিতামাসীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই, দ্রুত উঠে বসে দরজা খুলে দিল।
--চা বানাই?মিতা মাসী জিজ্ঞেস করে।
--হ্যা।জেনের জন্য দুধ বানাতে হবে।
মিতামাসী রান্না ঘরে চলে গেল।একটু ঘুমিয়ে নিয়েছে ভালই হল যশ ভাবে।চোখ মুখে জল দিল।অঙ্গন নেই বহুৎ বোর মেহশুস হচ্ছে।চুপচাপ ঘরে বসে থাকার পাত্রী নয় যশবিন্দার।খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল জেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ঘরের লাইট জ্বেলে দিল।মিতামাসী দুধের বোতল দিয়ে গেল।তালুর উল্টোদিকে দু-ফোটা দুধ ফেলে পরীক্ষা করল।বোতল রেখে জেনের উপর ঝুকে বলল,জেন মেরি জান,এখোন উঠো।
ঠেলাঠেলিতে জেন চোখ মেলে তাকাল।
--মেডাম চা।মিতামাসী চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে যশবিন্দার বলল,তুমার চা নিয়ে এখানে বোসো।
মিতামাসী অবাক মেডাম কি রান্নার ব্যাপারে কিছু বলতে চায়?রান্না ঘরে গিয়ে চা নিয়ে ফিরে এল।চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,মেডাম আপনে যে খাবার করছিলেন সবাই সুখ্যেত করতেছিল।
যশবিন্দার হেসে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা মাসী পহেলে তুমার দাদার বহুকে তুমি কি বলে ডাকতে ম্যাডাম?
--আজ্ঞে তেনারে মোটে একবার দেখেছিলাম খুব ম্যাজাজি ছিলেন।
যশবিন্দারের ভ্রু কুচকে যায় জিজ্ঞেস করে,তূমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন?
মিতামাসী জিভ কেটে বলল,মানুষটা খুব ভাল ছিল। মিতামাসী কাছে এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল,নীচে ছোড়দার মামা থাকে বাড়ীটা দখল করে নিয়েছিল।পুলিশ এসে বাড়ি থেকে বের করে দিলি উনি এসে আবার ঢুকোয় দিয়ে গেল।
--দাদার বহুকে তুমরা কি বলো?
--বৌঠান বলে বৌদি বলে--।
--শুনো মৌসী তুমি আমাকে ম্যাডাম বলবে না বলবে বৌদি।
--আচ্ছা মেডাম।
কলিং বেল বেজে ঊঠতে যশ বলল,দেখো আবার কে এল?
মিতা মাসী চলে যেতে দেখল তার কোলে জেন ড্যাবডেবিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিতামাসী এসে খবর দিল,ছোড়দার বন্ধু দিলীপ এসেছে।যশবিন্দারের ভাল লাগে একা একা হাপিয়ে উঠেছিল,মিতামাসীকে বলল,বৈঠক খানার ঘর খুলে বসতে দাও।আর শোনো সকালে যে ভর্তা করেছি কিছুটা মাইক্রোভেনে গরম করে একটা প্লেটে দিও।
--দুইজন আসছে।
--ঠিক আছে অল্প করে দু-জায়গায় দিলেই হবে।যাও ওদের বসাও।
যশবিন্দার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করে নিল।দিলীপ আবার কাকে নিয়ে এল? ভেবেছিল দিলীপের সঙ্গে খোলামেলা একটু গল্প করবে।জেনকে কোলে নিয়ে নীচে নামল।