19-03-2020, 03:17 PM
(Update No. 180)
পরিতোষ কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “আপনি যেমনটা ভাবছেন, তেমনটা নয় ডক্টর। আপনার কথা বৌদির কথা আর বিশেষ করে আকাঙ্ক্ষা মামনির কথা আমি কোনদিন ভুলিনি। আপনাদের সাথে দেখা করার ইচ্ছেও যে কখনও হত না এমনও নয়। কিন্তু আপনাদের সাথে যোগাযোগ না রাখবার পেছনে দুটো বড় কারন ছিল। প্রথম কারনটা হচ্ছে, আপনারা সেদিন যেমন একটা গ্যাঙের খপ্পরে পড়েছিলেন, ওই সব গ্যাংগুলোর ছড়ানো ছিটানো অনেক শাখা প্রশাখা থেকে থাকে। গ্যাঙের কেউ কারো হাতে মার খেলে, বা কারও হাতে যদি গ্যাঙের কোন লোক মারা যায়, তাহলে তাকে বা তাদেরকে খুঁজে বের করে মেরে না ফেলা পর্যন্ত তারা শান্ত হয় না। আমি ভেবেছিলাম, ওই গ্যাংটাও তেমনি হবে। তাই ওই ঘটণার পর তাদের গ্যাঙের বাকি সদস্যরা আমাকে বা আপনাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করবেই। আমার নিজের ব্যাপারে আমি তো সবসময়ই এলার্ট থাকি। আমার ওপর চট করে কেউ হামলা করতে চাইবে না। কিন্তু আপনাদের হদিশ পেয়ে গেলে আপনারা আবার বিপদের মুখোমুখি হতেন। আমার সাথে আপনাদের যোগাযোগ থাকলে বা আমাদের মধ্যে পরস্পরের বাড়িতে যাতায়াত থাকলে ওরা খুব সহজেই আবার আপনাদের হদিশ পেয়ে যেত। তাতে করে আবার বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিত। এসব ভেবেই আপনাকে অমন অনুরোধ করেছিলাম। আসলে আমি এমনই একটা কাজের সাথে যুক্ত আর নৈতিক কিংবা অনৈতিক এমন সব কাজ করি যে আমাকে যে কোনও কাজের প্রতিকূল পরিণতির কথাই বেশী করে ভাবতে হয়। ওই একটা কথা আছে না? হোপ ফর দা বেস্ট বাট প্রিপেয়ার ফর দা ওয়ার্স্ট। আর খারাপ সম্ভাবনা এড়িয়ে যেতেই আমাকে এভাবে প্রিয়জনদের অনেক আদর আহ্বান উপেক্ষা করতে হয়। আজ আপনাকে একটা কথা বলছি স্যার। যে গ্যাঙের লোকেরা সেদিন আপনাদের ওপর হামলা করেছিল, সে গ্যাঙের সবকটা ক্রিমিন্যালকে জেলে ঢোকাতে প্রায় একটা বছর সময় লেগেছে। ওদের সব ক’টাকে জেলে না পোড়া অব্দি আপনাদের পুরোপুরি সুরক্ষিত করতে পারতাম না আমি। এখন আর চট করেই আপনাদের ওপর ওদিক থেকে আর কোনও বিপদ নেমে আসবার সম্ভাবনা নেই। অন্ততঃ ছ’টা বছর এখন নিশ্চিন্ত। আপনাকে যে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছিলাম তার মূল কারন কিন্তু এটাই ছিল। আর দ্বিতীয় কারনটা নেহাতই আমার কর্মব্যস্ততা। আর কিছুই নয়। তবে এবারে আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারটা আপনি নোট করে রাখুন। এখন মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন”।
পরিতোষ একটু থেমেই আবার বলল, “এক মিনিট ডক্টর, আমি একটা ফোন করে নিই একটু” বলে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে বলল, “হ্যাঁ শোন, ওদিকে কোন গন্ডগোল নেই তো”?
অপর প্রান্তের কথা শুনে বলল। “ঠিক আছে। তবে শোন, আমাদের এখান থেকে বেরোতে দেরী হবে। রাত দশটা সাড়ে দশটা হয়ে যেতে পারে। বা তার বেশীও হতে পারে। তোদের যদি ডিনার করতে হয় তাহলে এদিকেই সেরে নিস। তবে একজন একজন করে। একজন ডিনার করতে গেলে বাকিরা সজাগ থাকবি, বুঝেছিস তো”?
আবার কয়েক সেকেন্ড ওদিকের কথা শুনে বলল, “ওকে, সেভাবেই করিস তাহলে। রাখছি”।
ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখতেই ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “ওদের খাবারের বন্দোবস্ত তো আমরাই করতে পারতাম স্যার”।
পরিতোষ একটু হেসে জবাব দিল, “আপনি ক্ষেপেছেন স্যার? ওদের খাবার বন্দোবস্ত এখানে করলে খুব গড়বড় হয়ে যাবে। বৌদি, রচনা রতীশ এরা সবাই জেনে যাবে যে ওদের ওপর নজর রাখবার জন্যে আমি লোক লাগিয়ে রেখেছি। আচ্ছা, ও’কথা ছাড়ুন। ওদের আমি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। ওরা নিজেরা নিজেদের মত করে ডিনার সেরে নেবে। কিন্তু আপনি এবার আমাকে বলুন, আপনার কাছে আমি যেমন সাহায্য চাইছি, সেটা আপনার পক্ষে করা সম্ভব হবে তো? মানে সোজা কথায়, আপনার ডাক্তারি এথিক্সের বাইরে গিয়ে কাজটা করতে আপনার মন সায় দিচ্ছে তো? আসলে আমি যেমন আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার তেমনি এটাও চাইনা যে বিবেকের বিরূদ্ধে গিয়ে কেউ আমার কথায় কোন কাজ করুক। কারো কাছ থেকে জোর করে কোন ফেভার নিই না আমি”।
ডক্টর দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “সত্যি বলছি স্যার, আপনারা আজ আমাদের ঘরে আসবার সময় পর্যন্তও আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলুম না। আপনি ও ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি যে কী জবাব দেব তা যেন বুঝতেই পাচ্ছিলাম না। কিন্তু রচনাকে দেখে, আর আপনার মুখে ওর বিপদের যে সম্ভাবনার কথা শুনলুম তার গম্ভীরতা বুঝতে পেরে আমি মোটামুটি মনস্থির করে ফেলতে পেরেছি। হোক এথিক্সের বাইরে। কিন্তু একটা নিষ্পাপ মেয়েকে বিপদমুক্ত করতে, এটা আমি করব, নিশ্চয়ই করব। আর আশা করি আমার বিবেকও আমাকে পিছু টানবে না। কিন্তু স্যার। বুঝতেই তো পারছেন, দীপার সাথে এ ঘটণাটা আমি তো কিছুতেই শেয়ার করতে পারব না। তাই স্যার, আপনাকেও আমি অনুরোধ করছি, দীপা বা আকাঙ্ক্ষা ওরা কেউ যেন ব্যাপারটা ঘূণাক্ষরেও জানতে বা বুঝতে না পারে”।
পরিতোষ উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টর বড়ুয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর। থ্যাঙ্ক ইউ এ লট”। তারপর আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “তবে ডক্টর আরো একটা ব্যাপার কিন্তু আপনাকে জানাবার আছে আমার। আপনি তো জানেনই এ কাজটা তিনটে ফেজে করবার প্ল্যান করেছি। আপনার কাজটা লাস্ট স্টেজে। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম যে প্রথম দুটো ফেজের কাজ হতে হতে তিরিশ পঁয়ত্রিশ দিন লেগে যাবে। তাই ভেবেছিলাম আপনার কাজটা শুরু বা শেষ হতে এখনও দেরী আছে। কিন্তু আমার প্রথম স্টেজের কাজটা অবিশ্বাস্য রকম কম সময়ে শেষ হয়ে যাওয়াতে পরের সিডিউল গুলো বাধ্য হয়েই এগিয়ে আনতে হয়েছে। তাই আপনার কাজের সিডিউলটা ফিক্স করা হয়েছে সামনের সতের তারিখে। আপনার কাজটা কিন্তু সেদিন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকেই শুরু করতে হবে। দিনটা কাকতালীয় ভাবে বিশ্বকর্মা পূজোর দিন। আপনার হয়ত তাতে একটু অসুবিধে হতে পারে। তবে ডক্টর কাজটা কিন্তু আর রিসিডিউল করা যাচ্ছে না, তাই ওই দিনই অপারেশনটা করতে হবে। আর সময়ও হাতে বেশী নেই একেবারেই। মাঝে মাত্র আর ছ’টা দিন। এই ছ’দিনের ভেতরেই কিন্তু আপনাকে সবরকম প্রিপারেশন নিতে হবে”।
ডক্টর বড়ুয়া এক মূহুর্ত চিন্তা করে বলল, “আমি নিজে তো যে কোনদিনই সেটা করে ফেলতে পারব স্যার। কিন্তু এ কাজে অ্যাসিস্ট করবার জন্য একজন নার্স আর একজন এনেস্থেসিস্ট আমার সঙ্গে থাকা খুবই দরকার। এনেস্থেসিস্ট সঙ্গে নিতে হলে ব্যাপারটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে। তাই এমন একজন সিনিয়র আর এফিসিয়েন্ট নার্স, যে কিনা এনেস্থেসিস্টের কাজও জানে, এমন কাউকে পেলেই খুব ভাল হয়। শুধু সেটা নিয়েই একটু ভাবতে হবে, আর তাতে দু’ একটা দিন লাগতেই পারে”।
পরিতোষ তখন বলল, “আচ্ছা ডক্টর অপারেশনটা করতে কতটা সময় লাগতে পারে আর অপারেশনের কতক্ষণ পর তার সেন্স ফিরে আসবে? বা তাকে কতক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হবে”?
ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “আসল কাজটা করতে ম্যাক্সিমাম আধঘণ্টা লাগবে। তবে তাকে কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে, এটা তো আগে থেকেই বলা সম্ভব নয় স্যার। এটা ডিপেন্ড করবে, কতটা ইনজুরি হয় তার ওপর। খুব বেশী ইনজুরি না হলে হয়তো পরের দিনই রিলিজ করে দেওয়া যাবে”।
পরিতোষ বলল, “হাসপাতালে সে এক মাস পড়ে থাকলেও কোন সমস্যা নেই ডক্টর। আর হাসপাতালের নিয়ম মোতাবেক আপনি সব ফরমালিটিই যথাযথ ভাবে করবেন। যাতে হাসপাতালের নিয়ম পূরণে কোন রকম ফাঁক না থাকে। আপনার ওপর কেউ যেন কোনরকম সন্দেহ করতে না পারে। আর হাসপাতালের বিলও যথাযথ পেমেন্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাবছি, সেটা হল, তাকে যতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে ততদিন তার নার্সিংএর জন্য বিশেষ দুই বা তিন জন নার্সের বন্দোবস্ত করতে হবে। কারন তার শরীরের কোথায় অপারেশন করা হয়েছে, আর কী ধরণের অপারেশন করা হয়েছে, সেটা অন্যান্য নার্স বা ডক্টররা জেনে ফেলুক, এটা আমি চাই না। তাই সিলেক্টেড তিন বা চার জন নার্সকে শিফটিং করে তার নার্সিংএ রাখতে চাই। এতে করে আপনার ঝুঁকিটাও অনেক কমে যাবে। আর আমার পারপাসও ফুলফিল হবে। আপনি যদি তেমন কয়েকজন নার্সের বন্দোবস্ত করতে পারেন, তাহলে খুবই ভাল হয়। তবে তার জন্যে তাদের যদি এক্সট্রা পারিশ্রমিক দিতে হয় তার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। আর আপনার পক্ষে সেটা করা সম্ভব না হলে এখনই আমাকে সেটা পরিষ্কার ভাবে বলে দিন। আমি সেটা অন্যভাবে ডিল করব”।
ডক্টর বড়ুয়া একটু ভেবে বলল, “আপনার সাজেশানটা সত্যি খুব ভাল। কিন্তু স্যার, আমি যদি সেটা করতে যাই, তাহলে হাসপাতালের অন্য কেউ হয়ত ভাবতে পারে যে এর পেছনে আমার কোনও রকম দুরভিসন্ধি বা স্বার্থ আছে”।
পরিতোষ বলল, “বেশ, তাহলে ও ব্যাপারটা আমি অন্যভাবে সামলে নেব। সেটা নিয়ে তাহলে আপনাকে আর টেনশন করতে হবে না। তবে হাসপাতালে পুলিশ না আসা পর্যন্ত ব্যাপারটা কিন্তু আপনাকেই ট্যাকেল করতে হবে। মানে পুলিশ না আসা অব্দি তার নার্সিংএ শুধু বিশেষ একজন নার্সকে রাখবার চেষ্টা করবেন। সেটা সম্ভব হবে তো আপনার পক্ষে”?
ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “হ্যাঁ সেটুকু আমি অবশ্যই করতে পারব স্যার। পেশেন্টের সিরিয়াসনেসের কথা ভেবে আমরা বিশেষ কোন নার্সকে পেশেন্টের সেবায় রাখতেই পারি, অন্ততঃ কিছু সময়ের জন্য”।
পরিতোষ বলল, “ব্যস তাহলেই হবে। বাকিটা আমি সামলে নেব। তবে ডক্টর সিডিউলটা মনে রাখবেন প্লীজ। সতের তারিখ, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে আপনার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সটা গিয়ে পৌঁছবে। তারপরই ব্যাপারটা আপনি টেক আপ করবেন প্লীজ। তবে আমার মনে হয়, আপনি আরও আধঘণ্টা আগে থেকেই হাসপাতালে থাকলে ভাল হয়। কারন অ্যাক্সিডেন্ট কেস বলে কথা। আর সেদিন বিশ্বকর্মা পূজো বলে রাস্তায় ট্র্যাফিক কম থাকলে অ্যাম্বুলেন্স হয়ত সময়ের কিছু আগেই গিয়ে পৌঁছতে পারে। তাই আগে থেকে আমাদের প্রিপেয়ার্ড থাকা উচিৎ, তাই না ডক্টর”?
ডক্টর দিব্যেন্দু বললেন, “হু, ঠিক বলেছেন স্যার। আমি সন্ধ্যা সাতটা থেকেই হাসপাতালে থাকব। আর পেশেন্টকে কিভাবে কী করব, অপারেশনের জন্য একজন বিশ্বস্ত নার্স রাখা, সবটাই আমি সামলে নেব। আপনি চিন্তা করবেন না”।
পরিতোষ একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, “আপনার কথায় আশ্বস্ত হলাম ডক্টর। তবু আরেকবার আপনাকে বলছি, আমাদের দু’তরফেই সিক্রেসীটা যেন বজায় থাকে। সেদিকে যেন আমাদের কোন তরফ থেকেই কোনও গাফিলতি না হয়”।
ডক্টর দিব্যেন্দুও সায় দিয়ে বললেন, “অবশ্যই স্যার। সেটা আপনার ও আমার দু’জনের পক্ষেই জরুরী” বলে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বললেন, “তাহলে চলুন, এবার আমরা গিয়ে বরং ওদের সকলের সাথে গল্প করি”।
রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ যখন আকাঙ্ক্ষা, দীপা আর ডক্টর বড়ুয়া, রচনাদের সবাইকে গুড নাইট বলে বিদায় দিল তখন তাদের দেখে কেউই বিশ্বাস করবে না যে আজই রচনা আর রতীশের সাথে তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছে।
**************
__________________________________
ss_sexy
পরিতোষ কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “আপনি যেমনটা ভাবছেন, তেমনটা নয় ডক্টর। আপনার কথা বৌদির কথা আর বিশেষ করে আকাঙ্ক্ষা মামনির কথা আমি কোনদিন ভুলিনি। আপনাদের সাথে দেখা করার ইচ্ছেও যে কখনও হত না এমনও নয়। কিন্তু আপনাদের সাথে যোগাযোগ না রাখবার পেছনে দুটো বড় কারন ছিল। প্রথম কারনটা হচ্ছে, আপনারা সেদিন যেমন একটা গ্যাঙের খপ্পরে পড়েছিলেন, ওই সব গ্যাংগুলোর ছড়ানো ছিটানো অনেক শাখা প্রশাখা থেকে থাকে। গ্যাঙের কেউ কারো হাতে মার খেলে, বা কারও হাতে যদি গ্যাঙের কোন লোক মারা যায়, তাহলে তাকে বা তাদেরকে খুঁজে বের করে মেরে না ফেলা পর্যন্ত তারা শান্ত হয় না। আমি ভেবেছিলাম, ওই গ্যাংটাও তেমনি হবে। তাই ওই ঘটণার পর তাদের গ্যাঙের বাকি সদস্যরা আমাকে বা আপনাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করবেই। আমার নিজের ব্যাপারে আমি তো সবসময়ই এলার্ট থাকি। আমার ওপর চট করে কেউ হামলা করতে চাইবে না। কিন্তু আপনাদের হদিশ পেয়ে গেলে আপনারা আবার বিপদের মুখোমুখি হতেন। আমার সাথে আপনাদের যোগাযোগ থাকলে বা আমাদের মধ্যে পরস্পরের বাড়িতে যাতায়াত থাকলে ওরা খুব সহজেই আবার আপনাদের হদিশ পেয়ে যেত। তাতে করে আবার বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিত। এসব ভেবেই আপনাকে অমন অনুরোধ করেছিলাম। আসলে আমি এমনই একটা কাজের সাথে যুক্ত আর নৈতিক কিংবা অনৈতিক এমন সব কাজ করি যে আমাকে যে কোনও কাজের প্রতিকূল পরিণতির কথাই বেশী করে ভাবতে হয়। ওই একটা কথা আছে না? হোপ ফর দা বেস্ট বাট প্রিপেয়ার ফর দা ওয়ার্স্ট। আর খারাপ সম্ভাবনা এড়িয়ে যেতেই আমাকে এভাবে প্রিয়জনদের অনেক আদর আহ্বান উপেক্ষা করতে হয়। আজ আপনাকে একটা কথা বলছি স্যার। যে গ্যাঙের লোকেরা সেদিন আপনাদের ওপর হামলা করেছিল, সে গ্যাঙের সবকটা ক্রিমিন্যালকে জেলে ঢোকাতে প্রায় একটা বছর সময় লেগেছে। ওদের সব ক’টাকে জেলে না পোড়া অব্দি আপনাদের পুরোপুরি সুরক্ষিত করতে পারতাম না আমি। এখন আর চট করেই আপনাদের ওপর ওদিক থেকে আর কোনও বিপদ নেমে আসবার সম্ভাবনা নেই। অন্ততঃ ছ’টা বছর এখন নিশ্চিন্ত। আপনাকে যে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছিলাম তার মূল কারন কিন্তু এটাই ছিল। আর দ্বিতীয় কারনটা নেহাতই আমার কর্মব্যস্ততা। আর কিছুই নয়। তবে এবারে আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারটা আপনি নোট করে রাখুন। এখন মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন”।
পরিতোষ একটু থেমেই আবার বলল, “এক মিনিট ডক্টর, আমি একটা ফোন করে নিই একটু” বলে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে বলল, “হ্যাঁ শোন, ওদিকে কোন গন্ডগোল নেই তো”?
অপর প্রান্তের কথা শুনে বলল। “ঠিক আছে। তবে শোন, আমাদের এখান থেকে বেরোতে দেরী হবে। রাত দশটা সাড়ে দশটা হয়ে যেতে পারে। বা তার বেশীও হতে পারে। তোদের যদি ডিনার করতে হয় তাহলে এদিকেই সেরে নিস। তবে একজন একজন করে। একজন ডিনার করতে গেলে বাকিরা সজাগ থাকবি, বুঝেছিস তো”?
আবার কয়েক সেকেন্ড ওদিকের কথা শুনে বলল, “ওকে, সেভাবেই করিস তাহলে। রাখছি”।
ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখতেই ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “ওদের খাবারের বন্দোবস্ত তো আমরাই করতে পারতাম স্যার”।
পরিতোষ একটু হেসে জবাব দিল, “আপনি ক্ষেপেছেন স্যার? ওদের খাবার বন্দোবস্ত এখানে করলে খুব গড়বড় হয়ে যাবে। বৌদি, রচনা রতীশ এরা সবাই জেনে যাবে যে ওদের ওপর নজর রাখবার জন্যে আমি লোক লাগিয়ে রেখেছি। আচ্ছা, ও’কথা ছাড়ুন। ওদের আমি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। ওরা নিজেরা নিজেদের মত করে ডিনার সেরে নেবে। কিন্তু আপনি এবার আমাকে বলুন, আপনার কাছে আমি যেমন সাহায্য চাইছি, সেটা আপনার পক্ষে করা সম্ভব হবে তো? মানে সোজা কথায়, আপনার ডাক্তারি এথিক্সের বাইরে গিয়ে কাজটা করতে আপনার মন সায় দিচ্ছে তো? আসলে আমি যেমন আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার তেমনি এটাও চাইনা যে বিবেকের বিরূদ্ধে গিয়ে কেউ আমার কথায় কোন কাজ করুক। কারো কাছ থেকে জোর করে কোন ফেভার নিই না আমি”।
ডক্টর দিব্যেন্দু জবাব দিলেন, “সত্যি বলছি স্যার, আপনারা আজ আমাদের ঘরে আসবার সময় পর্যন্তও আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলুম না। আপনি ও ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি যে কী জবাব দেব তা যেন বুঝতেই পাচ্ছিলাম না। কিন্তু রচনাকে দেখে, আর আপনার মুখে ওর বিপদের যে সম্ভাবনার কথা শুনলুম তার গম্ভীরতা বুঝতে পেরে আমি মোটামুটি মনস্থির করে ফেলতে পেরেছি। হোক এথিক্সের বাইরে। কিন্তু একটা নিষ্পাপ মেয়েকে বিপদমুক্ত করতে, এটা আমি করব, নিশ্চয়ই করব। আর আশা করি আমার বিবেকও আমাকে পিছু টানবে না। কিন্তু স্যার। বুঝতেই তো পারছেন, দীপার সাথে এ ঘটণাটা আমি তো কিছুতেই শেয়ার করতে পারব না। তাই স্যার, আপনাকেও আমি অনুরোধ করছি, দীপা বা আকাঙ্ক্ষা ওরা কেউ যেন ব্যাপারটা ঘূণাক্ষরেও জানতে বা বুঝতে না পারে”।
পরিতোষ উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টর বড়ুয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর। থ্যাঙ্ক ইউ এ লট”। তারপর আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “তবে ডক্টর আরো একটা ব্যাপার কিন্তু আপনাকে জানাবার আছে আমার। আপনি তো জানেনই এ কাজটা তিনটে ফেজে করবার প্ল্যান করেছি। আপনার কাজটা লাস্ট স্টেজে। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম যে প্রথম দুটো ফেজের কাজ হতে হতে তিরিশ পঁয়ত্রিশ দিন লেগে যাবে। তাই ভেবেছিলাম আপনার কাজটা শুরু বা শেষ হতে এখনও দেরী আছে। কিন্তু আমার প্রথম স্টেজের কাজটা অবিশ্বাস্য রকম কম সময়ে শেষ হয়ে যাওয়াতে পরের সিডিউল গুলো বাধ্য হয়েই এগিয়ে আনতে হয়েছে। তাই আপনার কাজের সিডিউলটা ফিক্স করা হয়েছে সামনের সতের তারিখে। আপনার কাজটা কিন্তু সেদিন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকেই শুরু করতে হবে। দিনটা কাকতালীয় ভাবে বিশ্বকর্মা পূজোর দিন। আপনার হয়ত তাতে একটু অসুবিধে হতে পারে। তবে ডক্টর কাজটা কিন্তু আর রিসিডিউল করা যাচ্ছে না, তাই ওই দিনই অপারেশনটা করতে হবে। আর সময়ও হাতে বেশী নেই একেবারেই। মাঝে মাত্র আর ছ’টা দিন। এই ছ’দিনের ভেতরেই কিন্তু আপনাকে সবরকম প্রিপারেশন নিতে হবে”।
ডক্টর বড়ুয়া এক মূহুর্ত চিন্তা করে বলল, “আমি নিজে তো যে কোনদিনই সেটা করে ফেলতে পারব স্যার। কিন্তু এ কাজে অ্যাসিস্ট করবার জন্য একজন নার্স আর একজন এনেস্থেসিস্ট আমার সঙ্গে থাকা খুবই দরকার। এনেস্থেসিস্ট সঙ্গে নিতে হলে ব্যাপারটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে। তাই এমন একজন সিনিয়র আর এফিসিয়েন্ট নার্স, যে কিনা এনেস্থেসিস্টের কাজও জানে, এমন কাউকে পেলেই খুব ভাল হয়। শুধু সেটা নিয়েই একটু ভাবতে হবে, আর তাতে দু’ একটা দিন লাগতেই পারে”।
পরিতোষ তখন বলল, “আচ্ছা ডক্টর অপারেশনটা করতে কতটা সময় লাগতে পারে আর অপারেশনের কতক্ষণ পর তার সেন্স ফিরে আসবে? বা তাকে কতক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হবে”?
ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “আসল কাজটা করতে ম্যাক্সিমাম আধঘণ্টা লাগবে। তবে তাকে কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে, এটা তো আগে থেকেই বলা সম্ভব নয় স্যার। এটা ডিপেন্ড করবে, কতটা ইনজুরি হয় তার ওপর। খুব বেশী ইনজুরি না হলে হয়তো পরের দিনই রিলিজ করে দেওয়া যাবে”।
পরিতোষ বলল, “হাসপাতালে সে এক মাস পড়ে থাকলেও কোন সমস্যা নেই ডক্টর। আর হাসপাতালের নিয়ম মোতাবেক আপনি সব ফরমালিটিই যথাযথ ভাবে করবেন। যাতে হাসপাতালের নিয়ম পূরণে কোন রকম ফাঁক না থাকে। আপনার ওপর কেউ যেন কোনরকম সন্দেহ করতে না পারে। আর হাসপাতালের বিলও যথাযথ পেমেন্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাবছি, সেটা হল, তাকে যতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে ততদিন তার নার্সিংএর জন্য বিশেষ দুই বা তিন জন নার্সের বন্দোবস্ত করতে হবে। কারন তার শরীরের কোথায় অপারেশন করা হয়েছে, আর কী ধরণের অপারেশন করা হয়েছে, সেটা অন্যান্য নার্স বা ডক্টররা জেনে ফেলুক, এটা আমি চাই না। তাই সিলেক্টেড তিন বা চার জন নার্সকে শিফটিং করে তার নার্সিংএ রাখতে চাই। এতে করে আপনার ঝুঁকিটাও অনেক কমে যাবে। আর আমার পারপাসও ফুলফিল হবে। আপনি যদি তেমন কয়েকজন নার্সের বন্দোবস্ত করতে পারেন, তাহলে খুবই ভাল হয়। তবে তার জন্যে তাদের যদি এক্সট্রা পারিশ্রমিক দিতে হয় তার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। আর আপনার পক্ষে সেটা করা সম্ভব না হলে এখনই আমাকে সেটা পরিষ্কার ভাবে বলে দিন। আমি সেটা অন্যভাবে ডিল করব”।
ডক্টর বড়ুয়া একটু ভেবে বলল, “আপনার সাজেশানটা সত্যি খুব ভাল। কিন্তু স্যার, আমি যদি সেটা করতে যাই, তাহলে হাসপাতালের অন্য কেউ হয়ত ভাবতে পারে যে এর পেছনে আমার কোনও রকম দুরভিসন্ধি বা স্বার্থ আছে”।
পরিতোষ বলল, “বেশ, তাহলে ও ব্যাপারটা আমি অন্যভাবে সামলে নেব। সেটা নিয়ে তাহলে আপনাকে আর টেনশন করতে হবে না। তবে হাসপাতালে পুলিশ না আসা পর্যন্ত ব্যাপারটা কিন্তু আপনাকেই ট্যাকেল করতে হবে। মানে পুলিশ না আসা অব্দি তার নার্সিংএ শুধু বিশেষ একজন নার্সকে রাখবার চেষ্টা করবেন। সেটা সম্ভব হবে তো আপনার পক্ষে”?
ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “হ্যাঁ সেটুকু আমি অবশ্যই করতে পারব স্যার। পেশেন্টের সিরিয়াসনেসের কথা ভেবে আমরা বিশেষ কোন নার্সকে পেশেন্টের সেবায় রাখতেই পারি, অন্ততঃ কিছু সময়ের জন্য”।
পরিতোষ বলল, “ব্যস তাহলেই হবে। বাকিটা আমি সামলে নেব। তবে ডক্টর সিডিউলটা মনে রাখবেন প্লীজ। সতের তারিখ, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে আপনার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সটা গিয়ে পৌঁছবে। তারপরই ব্যাপারটা আপনি টেক আপ করবেন প্লীজ। তবে আমার মনে হয়, আপনি আরও আধঘণ্টা আগে থেকেই হাসপাতালে থাকলে ভাল হয়। কারন অ্যাক্সিডেন্ট কেস বলে কথা। আর সেদিন বিশ্বকর্মা পূজো বলে রাস্তায় ট্র্যাফিক কম থাকলে অ্যাম্বুলেন্স হয়ত সময়ের কিছু আগেই গিয়ে পৌঁছতে পারে। তাই আগে থেকে আমাদের প্রিপেয়ার্ড থাকা উচিৎ, তাই না ডক্টর”?
ডক্টর দিব্যেন্দু বললেন, “হু, ঠিক বলেছেন স্যার। আমি সন্ধ্যা সাতটা থেকেই হাসপাতালে থাকব। আর পেশেন্টকে কিভাবে কী করব, অপারেশনের জন্য একজন বিশ্বস্ত নার্স রাখা, সবটাই আমি সামলে নেব। আপনি চিন্তা করবেন না”।
পরিতোষ একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, “আপনার কথায় আশ্বস্ত হলাম ডক্টর। তবু আরেকবার আপনাকে বলছি, আমাদের দু’তরফেই সিক্রেসীটা যেন বজায় থাকে। সেদিকে যেন আমাদের কোন তরফ থেকেই কোনও গাফিলতি না হয়”।
ডক্টর দিব্যেন্দুও সায় দিয়ে বললেন, “অবশ্যই স্যার। সেটা আপনার ও আমার দু’জনের পক্ষেই জরুরী” বলে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বললেন, “তাহলে চলুন, এবার আমরা গিয়ে বরং ওদের সকলের সাথে গল্প করি”।
রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ যখন আকাঙ্ক্ষা, দীপা আর ডক্টর বড়ুয়া, রচনাদের সবাইকে গুড নাইট বলে বিদায় দিল তখন তাদের দেখে কেউই বিশ্বাস করবে না যে আজই রচনা আর রতীশের সাথে তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছে।
**************
__________________________________
ss_sexy