Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 179)

রচনা জবাব দিল, “আমার দিদি। সাত বছর ধরে ওর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা ওর ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে। শেষ অব্দি মেরে ধরে অজ্ঞান করে রেল লাইনে ফেলে দিয়ে এসেছিল রাতের অন্ধকারে। অবধারিত মৃতুর হাত থেকে সে কোনরকমে রক্ষা পেয়েছিল। আর তাকে সুস্থ করে তুলেছেন তো তোমার সেই দাদাই, মানে ওই ডক্টর সোম”।
 

দীপা হঠাৎ বলে উঠল, “এই দাঁড়াও দাঁড়াও। এমন একটা ঘটণা আমি বড়দার মুখে শুনেছিলুম বটে। আচ্ছা তোমার দিদির পুরো নাম কি অর্চনা আচার্যি নাকি”?
 

রচনাও প্রায় লাফিয়ে উঠে বলল, “হ্যাঁ তো! ওর শ্বশুর বাড়ির উপাধি আচার্যিই। আর ওর নাম অর্চনাই। আমরা বাড়ির লোকেরা ছোট করে অর্চু বলে ডাকি। আমি যেমন রচনা আর রচু, তেমনি”।

দীপা বলল, “দেখেছ, কার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ হয়ে যায়। বড়দার মুখে ওই মেয়েটার কথা শুনে আমরাও খুব দুঃখ পেয়েছিলুম। আচ্ছা, শোনো রচু। আমরা বরং ভেতরের ঘরে গিয়ে বসি। জমিয়ে গল্প করব। ওরা বরং এখানে বসে কথা বলুক। এসো ভাই” বলে রতীশ রচনা আর আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ে ভেতরের ঘরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াতেই পরিতোষ আকাঙ্ক্ষাকে বলল, “মামনি, একটু এদিকে এস”।

আকাঙ্ক্ষা তার কাছে যেতেই পরিতোষ পকেট থেকে একটা সুন্দর কলমের প্যাকেট আর একটা বড় চকলেটের প্যাকেট বের করে আকাঙ্ক্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আর কিছুদিনে মধ্যেই তো তোমার এক্সাম, তাই না? এবারের এক্সামে এই পেনটা দিয়ে লেখবে, কেমন? আর এই চকলেটটাও তোমার জন্য, নাও”।
 

আকাঙ্ক্ষা খুব খুশী হয়ে পরিতোষের গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কল”।

পরিতোষ দুষ্টুমি করে বলল, “উহু, এটা তো চলবে না মামনি। ওরা তোমার বাঙালী মামা মামী হয়ে গেল আর আমি ইংরেজীর সাহেব আঙ্কলই থাকব, এটা কি ঠিক হল”?
 

আকাঙ্ক্ষা হি হি করে হেসে বলল, “আচ্ছা, আজ থেকে তুমি তাহলে আমার কাকু, ঠিক আছে তো”?
 

ভেতরের ঘরে যেতে যেতে রতীশ রচনার কানে কানে বলল, “মন্তির অফিসিয়াল আইডেন্টিটিটা বলে ফেল না যেন মুখ ফস্কে”।

রচনা ঈশারায় সম্মতি জানিয়ে দীপার পেছন পেছন ভেতরের ঘরে গিয়ে ঢুকল। ডক্টর বড়ুয়া পরিতোষের উদ্দেশ্যে বললেন, “স্যার, আপনি কি সেদিনের ওই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলবেন? তাহলে আমরা বরং ওদিকের ঘরে গিয়ে বসি। কারণ আমার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অন্য সকলের কাছেই সিক্রেট আছে এখনও”।

পরিতোষ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার, আমিও আপনাকে সে কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। চলুন তাহলে”।

দীপা ওরা যে ঘরে ঢুকেছে সে ঘরের দড়জার কাছে দাঁড়িয়ে ডক্টর বড়ুয়া গলা তুলে বললেন, “দীপা আমরা ও’দিকের ঘরে যাচ্ছি”।

ভেতরে তখন একটা বিছানার ওপর দীপা, রচনা আর আকাঙ্ক্ষা জমিয়ে বসেছে, আর রতীশ একটা চেয়ারে বসা। অন্য ঘরে এসে বসতেই ডক্টর বড়ুয়া পরিতোষকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা স্যার, সেদিন আপনি যার বিপদের কথা বলছিলেন সে কি এই মেয়েটাই”?

পরিতোষ ঠাণ্ডা গলায় বলল, “হ্যাঁ স্যার, দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি কথা। তবে প্লীজ স্যার। এ ব্যাপারে ওরা যেন কোনরকম হিন্টস না পায়, এ ব্যাপারে একটু সাবধান থাকবেন। ওরা এ’সব ব্যাপারে কিছুই জানে না। আমরা যারা জানি, তারা ওদের কাছে গোটা ব্যাপারটাই এখনও লুকিয়ে রেখেছি। কারণ ওরা জানতে পারলেই দুশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করবে। তাই আমি চাই না ....”

পরিতোষের মাঝপথেই ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “বুঝেছি স্যার, বুঝেছি। এ ব্যাপারে আপনাকে আর দ্বিতীয়বার কিছু বলতে হবে না। আর দীপাকেও এ ব্যাপারে আমি এখনও কিছু বলিনি। আর ভবিষ্যতেও বলব না। আসলে যে কাজটা করতে যাচ্ছি, সেটা তো একজন ডাক্তারের পক্ষে সত্যি নিন্দনীয় কাজ। তাই দীপাকে আমি কখনোই এ ব্যাপারে কিছু জানাব না। কিন্তু ওরা কালচিনির যে ঘটণাটা নিয়ে আলাপ করছিল, সেটাও সত্যি খুব স্যাড। ঘটণাটা আমরা মোটামুটি জানতাম। আসলে ওই অর্চনা আচার্যির কেসটা এতটাই সিরিয়াস ছিল যে অমন ছোট একটা হাসপাতালে বড়দা যে তাকে সুস্থ করে তুলেছেন, সেটা আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে মেয়েটা যতদিন হাসপাতালে ছিল বড়দা আমার সাথে রোজই কেসটা নিয়ে আলোচনা করতেন। আমার কাছ থেকে রেগুলার সাজেশান নিতেন। কিন্তু ওই সময়ে কালচিনি থানার ওসি ছাড়াও আরও এক লেডি আইপিএস অফিসারের কথা আমি শুনেছিলাম। সেই অফিসার নাকি মেয়েটার এক আত্মীয়। সে তাহলে কে ছিল”?

পরিতোষ বুঝতে পারল যে ডঃ দিব্যেন্দু সীমন্তিনীর কথা বলছেন। কিন্তু তার পুলিশী মন সাথে সাথেই তাকে সতর্ক করে দিল। তাই একটু হেসে জবাব দিল, “আসলে স্যার, কালচিনির ওই ঘটণাটার ব্যাপারে আমি আগে কিছুই শুনিনি। আজই প্রথম বৌদি আর রচুর মুখে কথাটা শুনছি। তাই ওই লেডি আইপিএস অফিসারের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। হতে পারে, সেও হয়তো আশেপাশের কোন জায়গায় পোস্টেড ছিল, বা কোনভাবে ওই কেসের সাথে জড়িত ছিল। আমি শুধু এটুকুই জানি, রচনার দিদি একটা মারাত্মক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। তার নাকি প্রাণ সংশয় হয়ে পড়েছিল একেবারে। বাঁচবার আশা নাকি প্রায় ছিলই না। আর কালচিনির মত ছোট একটা পাহাড়ি হেলথ সেন্টারের এক ডাক্তার নিজের অসাধারণ বিদ্যা বুদ্ধি আর চিকিৎসায় তাকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন”।
 

ডক্টর দিব্যেন্দু বললেন, “আচ্ছা, বেশ ও নিয়ে আলোচনা করে তো এখন আর কোন লাভ নেই। যা হবার ছিল, সেটা হয়েই গেছে। আমরা বরং বর্তমানের ঘটণা নিয়েই কথা বলি। তা স্যার, আপনি বলছেন এই রচনাই অমন বিপদে পড়েছে”?
 

পরিতোষ জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার। রচনাকে তো নিজের চোখেই দেখলেন আপনি। এমন ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়ের ওপর কেউ অমন কূনজর দিলে, আর বিশেষ করে সে যদি আমার খুব কাছের কেউ হয় তাহলে কি নিজেকে সংযত রাখা যায় বলুন? আসলে রতীশ রচনা ওরা এখানে আসবার আগে থেকেই ওদের ওপর ওই বিমল আগরওয়ালার নজর পড়েছিল। যার ওপর ভরসা করে রতীশ এখানে ইনস্টিটিউট খোলবার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল সে লোকটাই তার টাকা পয়সা লুঠ করে পালিয়েছিল। যার ফলে রতীশ এখন অন্য একজনের ইন্সটিটিউটে ট্রেনার হিসেবে কাজ করছে। আর সেই লোকটাই এই বিমল আগরওয়ালার সাথে চুক্তি করেছিল যে রচনাকে তার হাতে তুলে দেবে। কিন্তু সেই লোকটা অন্য একটা কেসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় বিমল আগরওয়ালার স্বপ্ন সফল হয়নি। ওই লোকটার কাছ থেকেই বিমল রচনার ছবি পেয়েছিল। আর ওরা বরানগরে যেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে, সেখানকার ঠিকানাও যোগাড় করে ফেলেছে। তাই সে এখন আরেকজন আনসোশ্যাল দালালের সাথে যোগাযোগ করেছে রচনাকে ভোগ করবার উদ্দেশ্যে। এদিকে কাকতালীয় ভাবেই রতীশের বোন মন্তি কথাটা জানতে পেরেছে। মন্তি এখানে থাকেনা। সেও ডুয়ার্সের একটা জায়গায় সরকারি চাকুরিতে পোস্টেড। তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে যে আমি যেন ওর দাদাভাই আর তার স্ত্রীকে সবরকম বিপদ থেকে দুরে রাখতে পারি”।

এতটা বলে একটু থেমে আবার বলল, “স্যার, আর একটা কথা আমি সকলের কাছে গোপন রেখেছি। কিন্তু আপনাকে না বললে আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন না আমি রচনাকে নিয়ে কেন এতটা সিরিয়াস। আসলে ডক্টর, এই মন্তিকে আমি এক সময় ভাল বেসেছিলাম। ওকে বিয়েও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মন্তি খুব ছোটবেলা থেকেই একজনকে ভালবাসত। তাকেই মনে মনে নিজের স্বামী হিসেবে মানতে শুরু করেছিল। এ’কথাটা প্লীজ আপনি কিন্তু অন্য কারো সাথে এমনকি বৌদির সাথেও শেয়ার করবেন না স্যার। মন্তি যদিও ছোটবেলা থেকেই জানত যে ওর প্রেমিককে ও কখনোই নিজের স্বামী হিসেবে পাবে না, কারন ছেলেটা ওর খুব নিকটাত্মীয়। তবু তাকেই সে মনে মনে নিজের স্বামী বলে মানে। নিজের ছোট্ট বেলার ভালবাসাকে এভাবে বুকে আঁকড়ে ধরে থাকতে আমি আর কাউকে দেখিনি। তাই ওর ভালবাসাকে সম্মান জানিয়ে আমি বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর থেকে আজ অব্দি আমরা একে অপরের পরম বন্ধু, পরম হিতৈষী হয়ে আছি। তাই মন্তির কোন অনুরোধই আমি কখনও ফেলতে পারি না। রতীশ মন্তির দাদা। আর রতীশের সাথে বিয়ে হবার অনেক আগে থেকেই মন্তি রচনাকে নিজের বোন বলে ভাবে। তাই রচনা একদিকে যেমন মন্তির বৌদি, অন্যদিকে সে মন্তির বান্ধবী এবং বোনও। তাই বুঝতেই পারছেন আন্তরিক ভাবে ওরা একে অপরের কত কাছাকাছি। আর সেজন্যেই রচনার এমন কথা শুনে বন্ধু হিসেবে আমার ওপরেই রচনার সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে ও। আর বিমল আগরওয়ালা লোকটার এতোটাই প্রভাব প্রতিপত্তি যে ব্ল্যাকমানির কুমীর হওয়া সত্বেও, গত দশ বছর ধরে অনেকবার ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট, এনফোর্সমেন্ট, অ্যান্টিকরাপশন বুরো, থানা পুলিশ তার পেছনে লেগেও তার কেশাগ্রও ছুঁতে পারে নি। উল্টে তারাই বিপদে পড়েছে নানাভাবে। আর লোকটা নিজের পয়সা প্রতিপত্তির জোরেই এমনভাবে স্টেট গভঃমেন্ট আর সেন্ট্রাল গভঃমেন্টের মেশিনারিগুলোকে কব্জা করে ফেলেছে, যে সে সবরকম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। এক দালালের খপ্পর থেকে রচনাকে রক্ষা করতে পারলেও বিমল আবার কোন না কোন ভাবে রচনার ক্ষতি করতে চাইবেই। লোকটার ঘরে মোটামুটি সুন্দরী স্ত্রী আছে, উঠতি বয়সের একটা যুবক ছেলেও আছে। তা সত্বেও সে রোজ কোন না কোন মেয়ের শরীর ভোগ না করে থাকতে পারে না। তার অফিসের কর্মাচারী মেয়েরা ছাড়াও আরও অনেক মেয়ে মহিলা এই বিমলের লোভের শিকার হয়েছে। আর প্রতিনিয়ত হয়ে যাচ্ছে। তারা কেউ মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারে না। দু’একজন দুঃসাহসী হয়ে পুলিশের সাহায্যও চেয়েছিল। কিন্তু নিজে পুলিশ হয়ে নিজেরই বলতে লজ্জা করছে স্যার, পুলিশের লোকেরাই ওই মেয়েগুলোকে ভোগ করে তাদের ওপর অবিচার করেছে। আবার উল্টোদিকে বিমলের কাছ থেকেও পয়সা খেয়েছে, তাকে বিপদমুক্ত করেছে বলে। তাই এ লোকটাকে শায়েস্তা করার আর অন্য কোন উপায় নেই। আইনি ভাবে সব কিছু করেও একে আটকানো যাবে না। দু’ঘন্টাতেই আইনের পথ ধরেই লকআপ থেকে বেড়িয়ে আসবে সে। আর বেড়িয়ে এসে আমাকেই সে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। তাই নিরূপায় হয়ে আমাকে এমন একটা পথ বেছে নিতে হচ্ছে। আড়াই বছর আগে আপনাদের কেসে যেভাবে এনকাউন্টার করে বদমাশগুলোকে গুলি করে মেরেছিলাম, তেমনটা করতে পারলে আর আপনার কাছে আমায় আসতে হত না। আসলে লোকটা পয়সার জোরেই নিজেকে এমন একটা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছে, যে তাকে শুট করলে রাজনৈতিক মহলে সাংঘাতিক রকমের হূলুস্থুল পড়ে যাবে। সেটা সামাল দেওয়া হয়ত খুব কঠিণ ব্যাপার হবে। তাই বাধ্য হয়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আমি লোকটাকে মেরে ফেলতে চাইছি না। আমি শুধু এটুকু করব যে ও বেঁচে থাকলেও আর অন্য কোন মেয়ের সর্বনাশ করতে পারবে না। তাহলেই আমি রচনাকেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারব”।

এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে দীপার গলা শোনা গেল, “এই তোমাদের চা কি ওখানে পাঠিয়ে দেব না তোমরা এখানে একসাথে বসে খাবে আমাদের সাথে”।
 

ডক্টর দিব্যেন্দু জবাব দিল, “এখানেই পাঠিয়ে দাও গো। আমরা একটু আলোচনায় ব্যস্ত আছি” বলে পরিতোষের উদ্দেশ্যে বলল, “স্যার, আমি জানি, আপনি সমাজের অনেক নির্দোষকে বাঁচাবার জন্য এমন অনেক কিছুই আইন বহির্ভূত কাজ করে থাকেন। সেজন্যে আমি মনে মনে আপনাকে খুবই শ্রদ্ধা করি। আর এবারেও যে তেমনই কিছু একটা করবার উদ্দেশ্যে আমার সাহায্য চেয়েছেন, সেটাও বুঝতে পেরেছিলাম আমি। কিন্তু নিজের মনকে কিছুতেই প্রবোধ দিতে পারছিলাম না। আজ রচনাকে দেখে আর আপনাদের ভেতর এমন একটা সম্পর্ক আছে দেখে, আমি নিজেও জীবনে প্রথমবার কোন একটা অনৈতিক কাজ করতে হয়ত রাজী হয়েই যাব। কিন্তু স্যার, আপনাকে একটা কথা কিন্তু দিতে হবে”।

পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই বলল, “হ্যাঁ বলুন ডক্টর কী চান আপনি। তবে আমি আপনাকে আগেই বলে রাখছি, আপনার কাজের যথাযথ পারিশ্রমিক কিন্তু আমি দেব”।
 

ডক্টর বড়ুয়া পরিতোষের কথা শুনে নির্বাক হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই রচনা আর দীপা দুটো ট্রেতে করে অনেক কিছু খাবার দাবার আর কফি নিয়ে ঢুকল। দীপা একটা ছোট টেবিলের ওপর জিনিসগুলো নামাতে নামাতে তার স্বামীকে বলল, “এই কফিটা কিন্তু তোমার এই নতুন শালার বৌ বানিয়েছে। খেয়ে দেখ কেমন বানিয়েছে” বলে পরিতোষের দিকে চেয়ে বলল, “স্যার, আপনারা কিন্তু আজ এখানে ডিনার করে তবে যাবেন”।
 

পরিতোষ হা হা করে উঠে বলল, “না না বৌদি, এ কী বলছেন আপনি? ওদের দু’জনকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবে তো আমাকে বাড়ি যেতে হবে। খুব দেরী হয়ে যাবে তো”।

দীপার পাশে রচনা মুচকি মুচকি হাসছে। দীপা পরিতোষের কথার জবাবে বলল, “হোক দেরী। তবু আমি আজ আপনাদের সকলকে না খাইয়ে কিছুতেই ছাড়ব না। আমার নিজের কোন ছোট বোন নেই। আজ রচু আর রতুর সাথে সুন্দর একটা সম্পর্কের শুরু হল। মনে হচ্ছে আমি একটা মিষ্টি বোন পেলাম। তাই আজ আমি কারো কোন কথা শুনছি না” বলতে বলতে রচনার হাত ধরে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।

কফির কাপ হাতে তুলে পরিতোষ ডক্টর বড়ুয়াকে কিছু একটা বলতে যেতেই তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে অ্যাপীল করে কোন ফল পাবেন না স্যার। তাই ও’সব নিয়ে ভাবা বাদ দিন। আমরা বরং আমাদের আলোচনাই করি”।
 

পরিতোষ একটু অসহায়ভাবে বলল, “কিন্তু স্যার, একটা বড় মুস্কিল আছে। কথাটা বলতে চাইছিলাম না। কিন্তু এখন না বলে আর উপায় নেই। আসলে স্যার, রচনা আর রতুর ওপর আমি চব্বিশ ঘন্টা নজর রেখে যাচ্ছি কিছু স্পেশ্যাল সিকিউইরিটির মাধ্যমে। আমরা যে আপনার এখানে এসেছি, এখানেও একটা টিম আমাদের ওপর আর আমরা যে গাড়িতে এসেছি তার ওপর একটানা নজর রাখছে। ওই শয়তান বিমল আগরওয়ালার ক্ষমতার কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে। লোকটা চাইলে যে কোনও সময় রচনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু রচনা বা রতীশ কেউ এ’কথা জানে না। তারা এর বিন্দু বিসর্গ টের পেলেই মনে মনে ঘাবড়ে যাবে, তাই তাদের কাছে ব্যাপারটা পুরোপুরি অজানা। কিন্তু আমরা যতক্ষণ বাইরে থাকব ততক্ষণ তো ওই টিমের লোকগুলোকেও ডিউটি করে যেতে হবে”।

ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “তারা যদি চব্বিশ ঘন্টাই ডিউটিতে থাকে তাহলে আপনারা এখান থেকে চলে গেলেই তো তারা ছুটি পাচ্ছে না স্যার। আপনি রতীশ আর রচনাকে তাদের ঘরে রেখে চলে যাবার পরেও তো তাদের ডিউটি চালু থাকবেই। তবে হ্যাঁ, তারা হয়ত সময় মত তাদের ডিনারটা সারতে পারবে না। তবে আপনি যদি বলেন আমি তাদের জন্যেও খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু দীপা আপনাকে যে’কথা বলে গেল সে কথার বিরোধিতা করবার সাধ্য বা ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। গত আড়াইটে বছরে দীপা অনেকবার আমাকে বলেছে আপনাকে একদিন আমাদের এখানে নিয়ে আসতে। আমারও খুব সাধ ছিল। আজ আমি যে বেঁচে আছি, আমাদের পরিবারটা যে বেঁচে আছে, সেটা তো স্যার আপনার দয়াতেই। সেদিন ভাইজ্যাগের ওই লেকের ধারে ভগবানের মত আপনি যদি আমাদের পাশে এসে না দাড়াতেন, তাহলে যে কী হত সেটা ভাবতেও তো ভয়ে বুক শুকিয়ে যায়। আমার ছোট্ট মেয়েটাও ওই আড়াই বছর আগের ওই দিনটার পর থেকেই আপনাকে ভগবান ভাবতে শুরু করেছে। ও তো আমাকে খুব বেশী সময় কাছে পায় না স্যার। শুধু এই সোমবারের দিনটাই। এমন একটা সোমবারও যায়নি যেদিন ও আপনাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবার কথা বলেনি। সেদিনটার পর থেকে আপনার সাথে দেখা করবার বা আপনাকে আমাদের এখানে আনবার কথাও বহুবার ভেবেছি। কিন্তু সেটা পারিনি স্যার। কারন আপনি নিজেই সে পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আজ যখন ঘটণাচক্রে আমাদের ঘরে এসেই পড়েছেন, তখন যদি আমাদের বাড়িতে দুটো খাবার খেয়ে যান, তাহলে আমরা সত্যি খুব খুশী হব”।

পরিতোষ হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গীতে কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “এমন করে বলবেন না ডক্টর প্লীজ। দেখুন স্যার, সেদিন আমি কিন্তু যতটুকু করেছি তা নেহাতই আমার বিবেকের তাগিদে। আমার বিবেক যেটাকে ঠিক বিবেচনা করে, বেআইনী হলেও আমি তা করতে দ্বিধা বোধ করি না। সেদিনও আমি যা করেছি তা আইন বিরুদ্ধ। তবে এমন আইন বিরুদ্ধ কাজ করতে আমাকে আগুপিছু অনেক কিছু আগে থেকে ভেবে নিতে হয়। যাতে আমি নিজে কোন বিপাকে না পড়ি। যেমনটা এই রচনার কেসে করছি। তবে সেদিন আপনাদের ওই ঘটণার সময় আমার পক্ষে আগে থেকে কোনও প্ল্যানিং করা সম্ভব হয়নি। আর তার আগে আপনাদের কাউকেই আমি চিনতাম না। তাই ওই মূহুর্তে স্পটে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবার অবকাশও ছিল না। এক মূহুর্ত দেরী হলেও আপনাদের চরম বিপদ হয়ে যেত। আর সে আশঙ্কার কথা ভেবেই সেদিন সরাসরি এনকাউন্টার করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। নইলে আপনাদের বাঁচাতে পারতাম না”।

ডক্টর বড়ুয়া বললেন, “জানি স্যার। তবে সেদিন জানতুম না, কিন্তু আজ জানি কেন লোকে আপনাকে পুলিশ রবিনহুড বলে ডাকে। কিন্তু স্যার, একটা কথা আমি কিন্তু এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না স্যার। তবে আপনি আমায় আপনার সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখতে কেন বারণ করেছিলেন? আপনি কি অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত কারো সাথে কোন রকম ঘণিষ্ঠতা রাখতে চান না? না কি এর পেছনে অন্য কোনও কারন আছে”?


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 19-03-2020, 03:16 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)