19-03-2020, 03:14 PM
(Update No. 175)
আব্দুলের গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে পরিতোষ অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরপথে চলল। কিছুটা দুর এসে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সীমন্তিনীকে ফোন করল। রাত তখন প্রায় এগারোটা। সীমন্তিনী কল রিসিভ করতেই বলল, “সরি ডার্লিং। একটু আগে তোমার কলটা রিজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছিলাম। একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই। ডোন্ট মাইন্ড। বলো কি জন্যে ফোন করেছিলে? এনিথিং সিরিয়াস”?
ও’পাশ থেকে অভিমানী গলায় সীমন্তিনী জবাব দিল, “বারে সিরিয়াস ব্যাপার ছাড়া আমি বুঝি তোমাকে ফোন করতে পারি না”?
পরিতোষ হেসে বলল, “আরে না না, তা কেন। তুমি তো আমার প্রেয়সী। চব্বিশ ঘন্টা আমার দ্বার আমার ফোন তোমার জন্যে খোলা। সে তো তুমি জানো ডার্লিং। আসলে খুব চাপে পড়ে গেছি গো। অনেকগুলো কাজ একসাথে এভাবে সামনে এসে পড়েছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা করি ভেবেই পাচ্ছি না। কিন্তু সবগুলোই সাত দিনের ভেতর কমপ্লিট করতে হবে। তাই অন্যদিকে মন সংযোগ করাটা আর হয়ে উঠছে না। আচ্ছা তোমার কথা শোনবার আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও তো ডার্লিং। কালচিনির বাড়ি তৈরীর এস্টিমেটটা কি হয়ে গেছে। কত পড়ছে খরচ তাতে”?
সীমন্তিনী একটু আমতা আমতা করে বলল, “না মানে, আমি যে ইঞ্জিনিয়ারকে সাইট দেখে এস্টিমেট বানাতে বলেছি উনি কালচিনির বাড়ির সাইটটা দেখবার পরের দিনই কলকাতা চলে গেছেন ব্যবসার কাজে। তেরো চৌদ্দ তারিখ নাগাদ হয়তো ফিরবেন। তারপর তার সাথে আমার মিটিং হবার কথা”।
পরিতোষ বলল, “ও নো। আচ্ছা উনি কি আনুমানিক আন্দাজেও কিছু বলেন নি”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যাঁ যেদিন সাইট দেখে এলেন সেদিন ফোনে তার সাথে আমার কথা হয়েছিল। তখন একটা আনুমানিক আন্দাজ করেই বলেছিলেন যে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখের মত লাগতে পারে। কিন্তু এতোটা কি তোমার পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব পরি? সরি, আমি জানি পরি, আমি হয়তো তোমার ওপর বড্ড বেশী চাপ দিয়ে ফেলছি। কিন্তু আর যে কোন অল্টারনেটিভ আমার কাছেও খোলা নেই”।
পরিতোষ এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “ও’সব ছেদো কথা ছাড় তো ডার্লিং। আচ্ছা এবার তুমি বল তো কি জন্যে ফোন করেছিলে আমায়”।
সীমন্তিনী একটু চুপ করে থেকে বলল, “দুটো কথা জানবার ছিল তোমার কাছ থেকে”।
পরিতোষ একটা বাঁক নিতে নিতে বলল, “তাড়াতাড়ি প্রথম কথাটা বলে ফ্যালো”।
সীমন্তিনী প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “তুমি কি যোগা ইনস্টিটিউটের মালিক মহিমা মালহোত্রা সেনের কাছে যাবে বলে ঠিক করেছ”?
পরিতোষ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই জবাব দিল, “আগে ভেবেছিলাম, হয়ত প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু যেসব টিমকে আমি কাজে লাগিয়েছি, তারা এমনভাবে কাজটা করেছে যে আপাততঃ আর ওই মহিমা মালহোত্রা সেনের সাথে দেখা না করলেও চলবে আমার। তবে মহিলাকে চাক্ষুষ দেখবার ইচ্ছে একটু আছেই মনে। এবার দ্বিতীয় কথাটা বলে ফ্যালো প্লীজ”।
সীমন্তিনী এবার কৌতুক ভরা গলায় বলল, “সেটা তোমাকে আগেই জানিয়েছিলাম। অবশ্য তুমি আমাকে এ ব্যাপারে ব্লাইন্ড সাপোর্ট আগেই দিয়েছ। তাই সে ব্যাপারে পরবর্তী আপডেটটা তোমায় জানাচ্ছি। একটু বাদেই তোমার কাছে একটা ছবি পাঠাচ্ছি। পছন্দ হয় কি না জানিও। আর সেটা তাড়াতাড়ি জানাবে প্লীজ”।
পরিতোষ প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “প্লীজ প্লীজ প্লীজ ডার্লিং। নট নাউ, নট নাউ”।
সীমন্তিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এ কী বলছ তুমি পরি? আমি আর নীতা দু’জনেই মেয়েটাকে পছন্দ করেছি। এখন তুমি তোমার কথা পাল্টে ফেলতে চাইছ”?
পরিতোষ এবারেও প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “না না মন্তি, তুমি আমায় ভুল বুঝছ। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছিনা একেবারেই। কিন্তু প্লীজ একটু বোঝার চেষ্টা করো ডার্লিং। সতেরো তারিখ অব্দি আমি নতুন অন্য কোন বিষয়েই মাথা ঘামাতে চাইছি না। আমি খুব বাজে ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি অনেকগুলো কাজ নিয়ে। কথাটা তো তোমাকে আগেও বললাম। তোমাকে দেওয়া কথা কি আমি ফিরিয়ে নিতে পারি কখনও? এই তুমি চিনলে এতদিনে”?
সীমন্তিনী এবার কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থাকবার পর বেশ সিরিয়াস গলায় জিজ্ঞেস করল, “পরি, কি হয়েছে বলো তো? তোমাকে এত টেনসড আমি কোনদিন দেখিনি। কি হয়েছে বলো না প্লীজ”।
পরিতোষ বলল, “ওকে ওকে, বলছি। কিন্তু তোমার টেনশন নেবার মত কিছু নেই। রিল্যাক্স। আসলে বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে যে ব্লু প্রিন্টটা বানিয়েছিলাম সে হিসেবে আশা করেছিলাম যে কাজটা শেষ হতে হতে ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিন লেগে যাবে। মোট তিনটে ফেজ ছিল সেই প্ল্যানে। প্রথম ফেজেই সময় লাগবার কথা ছিল কুড়ি থেকে পঁচিশ দিন। কিন্তু প্রথম ফেজের এই কাজটা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আমার বাকি দুটো ফেজের কাজের সময়সীমা রেখেছিলাম বারো থেকে পনেরো দিন। কিন্তু আমার নিজস্ব তিনটে ফেজ ছাড়াও প্ল্যানে একটা ফোর্থ স্টেজ ছিল। তাতে কয়েকটা সেন্ট্রাল গভঃমেন্ট এজেন্সী ইনভল্ভড আছে। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে আমার ফার্স্ট স্টেজ কমপ্লিট হবার সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনীয় এমন সব জিনিস আমার হাতে এসে পড়েছে যা ইডি, এসিবি, ক্রাইম ব্রাঞ্চ, আইটি ডিপার্টমেন্টের লোকেরা গত দশ বছর আগরওয়ালার পেছনে লেগে থেকেও নিজেদের আয়ত্বে আনতে পারেনি। তাই গত দশ বছরে পাঁচ বার হানা দিয়েও তারা বিমল আগরওয়ালার টিকিটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। এবার আমার হাতে তার মৃত্যুবান এসে গেছে। আর অমন মূল্যবান একটা জিনিস আমি নিজের কাস্টডিতে রাখবার সাহস সত্যি জুটিয়ে উঠতে পারিনি। আমি বাধ্য হয়েছিলাম এসিবির সাথে কন্টাক্ট করতে। ডকুমেন্টস গুলো তাদের হাতে দেবার সাথে সাথে কলকাতা থেকে দিল্লী পর্যন্ত হুলুস্থুল শুরু পড়ে গেছে। এখন এসএস আর সিবিআইও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে নিশ্চয়ই আরো কিছু ব্যাপার আছে, নইলে সিবিআই, ইন্টেলিজেন্স বা সিক্রেট সার্ভিস এতে নিশ্চয়ই জড়াত না। তবে ও নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে এই মাত্র ঘন্টা খানেক আগে আমি তাদের সাথেই এক জায়গায় সিক্রেট মিটিং করে এলাম। বিভিন্ন এজেন্সীর একত্রিশ জন সেখানে উপস্থিত ছিল। আগরওয়ালার মৃত্যুবানটা হাতে পেয়েই তারা সব প্ল্যান করে ফেলেছেন। তারা চাইছিলেন কাল পরশুর ভেতরেই বিমলের বাড়ি, অফিস আর ফার্ম হাউসে একসাথে রেড করতে। আমি যেহেতু তাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যটা করেছি, আর তারা একটা ছোট্ট জিনিস এখনো তাদের হাতে পায়নি তাই হয়তো আমাকেও সে মিটিংএ ডেকেছিলেন। ওহ মাই গড! ইট ওয়াজ এ লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স। আনবিলিভেবল। কিন্তু সে কথা যাক, মোদ্দা কথা হল তারা ভাবছেন যে বিমলের বাড়িতেও অমন কোনও সিক্রেট চেম্বার বা সেফ থাকতে পারে যেখানে আরো কিছু বেআইনী ডকুমেন্টস থাকতে পারে। কিন্তু আমি জানি চতুর বিমল নিজের বাড়িতে তেমন কিছু করে নি। কিন্তু তারা যদি কাল পরশুর ভেতরেই অ্যাকশনে নেমে পড়ে তাহলে আমার বাকি দুটো ফেজের কাজ আর করা যাবে না। আর বলাই বাহুল্য, তখন আমাদের প্ল্যান মাঠে মারা পড়বে। তাই আমি তাদের সাথে একটু ফাউল প্লে করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের কাছ থেকে সাতদিন সময় চেয়ে নিয়েছি। বলেছি যে সাতদিনের মধ্যে আমি তাদের কাছে বিমলের বাড়ির ব্যাপারে ফাইনাল রিপোর্ট দেব। তারা তাতে রাজী হয়েছেন। তাই সতেরো তারিখে বিমল আগরওয়ালা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে। তারা সবাই জানে যে এই সাতদিন আমি বিমলের ঘরের ভেতরের খবর যোগাড় করব। কিন্তু আসলে এই সাত দিনের মধ্যে আমার পরের প্ল্যান গুলো সেরে ফেলাই আমার মূল উদ্দেশ্য। এখন সতেরো তারিখের আগেই আমার বাকি দুটো ফেজের কাজ গুটিয়ে ফেলতে হবে। আর সতেরো তারিখ সন্ধ্যের মধ্যেই আমার অপারেশন শেষ করতে বাধ্য হচ্ছি। তাই খুব তাড়াতাড়ি আমাকে এখন অনেকগুলো কাজ সারতে হচ্ছে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমি কতটা প্রেসারে আছি। এখন আমি রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করছি। আরও দু’ তিনটে জায়গায় আজই যেতে হবে। জানিনা, আজ সারা রাত হয়ত ঘুমোতেই পারব না। তাই বলছি ওই ছবি টবির ব্যাপারে আমাকে এই সাতটা দিন প্লীজ ইনভল্ভ কোর না। আর তাছাড়া আমাকে ছবি টবি পাঠাবার দরকারই বা কি আছে বলো তো? আমি তো আগেই তোমাকে বলেছি যে তুমি আর বনি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেটাই মেনে নেব। কেন তাহলে আর আমাকে আবার এইসব উটকো ঝামেলায় ফেলতে চাইছ বলো তো”?
সীমন্তিনী এবার পরিতোষের ব্যস্ততার ধরণ আর গম্ভীরতা বুঝতে পেরে বলে উঠল, “সরি পরি। আমাকে মাফ করো। আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি এতোটা ব্যস্ত আছ। সেইসাথে আরেকবার সরি বলছি, আমার জন্যেই তুমি এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছ বলে। আই এম এক্সট্রিমলি সরি। আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে নাহয় তোমার সাথে পরে কথা বলব। কিন্তু পরি, তুমি প্লীজ সাবধানে থেক। আর রোজ তোমার ফুরসৎ মত একবার করে ফোন করো প্লীজ। নইলে আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় ভুগবো। আমি তোমার এত ব্যস্ততার মধ্যে তোমাকে ফোন করে আর বিব্রত করতে চাই না। সতেরো তারিখ পেরিয়ে যাবার পরেই আমি তোমাকে ফোন করব। ভালো থেকো পরি। আচ্ছা তুমি ডিনার করেছ তো”?
পরিতোষ সংক্ষেপে জবাব দিল, “হ্যাঁ করেছি। প্রীতিদির বাড়িতে খেয়েছি”।
সীমন্তিনী একটা নতুন নাম শুনে জিজ্ঞেস করল, “কোন প্রীতিদি”?
পরিতোষ তখন বলল, “সেটা পরে বলব ডার্লিং। আজ সময় নেই। গুড নাইট”।
পরিতোষ গুড নাইট বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন পকেটে পুরে রাখল। অনেকক্ষণ পর এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সে আবার কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে। এখন আমি তোমার বাড়ির খুব কাছেই আছি। তুমি ফ্রি আছ”?
ও’পাশের কথা শুনেই সে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি লক করে একদিকে হেঁটে চলল। প্রায় তিরিশ পঁয়ত্রিশ মিটার হেঁটে যাবার পর সে একটা বাড়িতে ঢুকে গেল। প্রায় মিনিট চল্লিশেক পর সে সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসেই আবার শেখরকে ফোন করে বলল, “শোন, আগামী পরশু মানে এগারো তারিখ আমার সাথে তোরা দু’জন ডিনার করবি। আমি কোথায় ডিনার করি তা তো জানিসই। রাত ঠিক ন’টায় চলে আসবি সেখানে। কাউন্টারে আমার নাম করে বলবি। ওরা তোকে দোতলায় একটা রুমে নিয়ে যাবে। সেখানে আমার জন্য ওয়েট করিস। আমি সময়মত সেখানে চলে যাব। আর ডকুমেন্ট গুলো ভালো করে একটা গিফট প্যাকে নিয়ে আসবি। অবশ্য তার আগে পুরোপুরি ভাবে ভেরিফাই করে নিবি সিডি গুলো। কারন ওগুলো ভেরিফাই করবার মত সময় আর আমার হাতে থাকবে না। আর প্রত্যেকটা সিডির ওপর মার্কার পেন দিয়ে এক একটা কোড লিখে দিবি। আর একটা সাদা কাগজে কোন কোডের কি মিনিং সেটা লিখে সে কাগজটাকেও গিফট প্যাকের ভেতরে ঢুকিয়ে দিবি। খেয়াল রাখিস আব্দুলের যেন বুঝতে অসুবিধে না হয়। আর পরশু রাত ঠিক ন’টা। মনে রাখবি, ঠিক আছে”?
কথা শেষ করে ঘড়িতে সময় দেখল, রাত বারোটা পঁচিশ। চুপ করে আরও মিনিট দুয়েক ভেবে সে গাড়ি স্টার্ট করে ইউ টার্ন নিল। কিন্তু না, তার বাড়ির উদ্দেশ্যে নয়। তার গাড়িটাকে যখন তার বাড়ির সামনে দেখা গেল রাত তখন প্রায় তিনটে। ঘরে ঢুকে ড্রেস বদলে ঢকঢক করে দু’গ্লাস জল খেয়ে অগোছালো বিছানার ওপরেই শুয়ে পড়ল সে।
*******************
ss_sexy
আব্দুলের গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে পরিতোষ অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরপথে চলল। কিছুটা দুর এসে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সীমন্তিনীকে ফোন করল। রাত তখন প্রায় এগারোটা। সীমন্তিনী কল রিসিভ করতেই বলল, “সরি ডার্লিং। একটু আগে তোমার কলটা রিজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছিলাম। একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই। ডোন্ট মাইন্ড। বলো কি জন্যে ফোন করেছিলে? এনিথিং সিরিয়াস”?
ও’পাশ থেকে অভিমানী গলায় সীমন্তিনী জবাব দিল, “বারে সিরিয়াস ব্যাপার ছাড়া আমি বুঝি তোমাকে ফোন করতে পারি না”?
পরিতোষ হেসে বলল, “আরে না না, তা কেন। তুমি তো আমার প্রেয়সী। চব্বিশ ঘন্টা আমার দ্বার আমার ফোন তোমার জন্যে খোলা। সে তো তুমি জানো ডার্লিং। আসলে খুব চাপে পড়ে গেছি গো। অনেকগুলো কাজ একসাথে এভাবে সামনে এসে পড়েছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা করি ভেবেই পাচ্ছি না। কিন্তু সবগুলোই সাত দিনের ভেতর কমপ্লিট করতে হবে। তাই অন্যদিকে মন সংযোগ করাটা আর হয়ে উঠছে না। আচ্ছা তোমার কথা শোনবার আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও তো ডার্লিং। কালচিনির বাড়ি তৈরীর এস্টিমেটটা কি হয়ে গেছে। কত পড়ছে খরচ তাতে”?
সীমন্তিনী একটু আমতা আমতা করে বলল, “না মানে, আমি যে ইঞ্জিনিয়ারকে সাইট দেখে এস্টিমেট বানাতে বলেছি উনি কালচিনির বাড়ির সাইটটা দেখবার পরের দিনই কলকাতা চলে গেছেন ব্যবসার কাজে। তেরো চৌদ্দ তারিখ নাগাদ হয়তো ফিরবেন। তারপর তার সাথে আমার মিটিং হবার কথা”।
পরিতোষ বলল, “ও নো। আচ্ছা উনি কি আনুমানিক আন্দাজেও কিছু বলেন নি”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যাঁ যেদিন সাইট দেখে এলেন সেদিন ফোনে তার সাথে আমার কথা হয়েছিল। তখন একটা আনুমানিক আন্দাজ করেই বলেছিলেন যে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখের মত লাগতে পারে। কিন্তু এতোটা কি তোমার পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব পরি? সরি, আমি জানি পরি, আমি হয়তো তোমার ওপর বড্ড বেশী চাপ দিয়ে ফেলছি। কিন্তু আর যে কোন অল্টারনেটিভ আমার কাছেও খোলা নেই”।
পরিতোষ এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “ও’সব ছেদো কথা ছাড় তো ডার্লিং। আচ্ছা এবার তুমি বল তো কি জন্যে ফোন করেছিলে আমায়”।
সীমন্তিনী একটু চুপ করে থেকে বলল, “দুটো কথা জানবার ছিল তোমার কাছ থেকে”।
পরিতোষ একটা বাঁক নিতে নিতে বলল, “তাড়াতাড়ি প্রথম কথাটা বলে ফ্যালো”।
সীমন্তিনী প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “তুমি কি যোগা ইনস্টিটিউটের মালিক মহিমা মালহোত্রা সেনের কাছে যাবে বলে ঠিক করেছ”?
পরিতোষ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই জবাব দিল, “আগে ভেবেছিলাম, হয়ত প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু যেসব টিমকে আমি কাজে লাগিয়েছি, তারা এমনভাবে কাজটা করেছে যে আপাততঃ আর ওই মহিমা মালহোত্রা সেনের সাথে দেখা না করলেও চলবে আমার। তবে মহিলাকে চাক্ষুষ দেখবার ইচ্ছে একটু আছেই মনে। এবার দ্বিতীয় কথাটা বলে ফ্যালো প্লীজ”।
সীমন্তিনী এবার কৌতুক ভরা গলায় বলল, “সেটা তোমাকে আগেই জানিয়েছিলাম। অবশ্য তুমি আমাকে এ ব্যাপারে ব্লাইন্ড সাপোর্ট আগেই দিয়েছ। তাই সে ব্যাপারে পরবর্তী আপডেটটা তোমায় জানাচ্ছি। একটু বাদেই তোমার কাছে একটা ছবি পাঠাচ্ছি। পছন্দ হয় কি না জানিও। আর সেটা তাড়াতাড়ি জানাবে প্লীজ”।
পরিতোষ প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “প্লীজ প্লীজ প্লীজ ডার্লিং। নট নাউ, নট নাউ”।
সীমন্তিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এ কী বলছ তুমি পরি? আমি আর নীতা দু’জনেই মেয়েটাকে পছন্দ করেছি। এখন তুমি তোমার কথা পাল্টে ফেলতে চাইছ”?
পরিতোষ এবারেও প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “না না মন্তি, তুমি আমায় ভুল বুঝছ। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছিনা একেবারেই। কিন্তু প্লীজ একটু বোঝার চেষ্টা করো ডার্লিং। সতেরো তারিখ অব্দি আমি নতুন অন্য কোন বিষয়েই মাথা ঘামাতে চাইছি না। আমি খুব বাজে ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি অনেকগুলো কাজ নিয়ে। কথাটা তো তোমাকে আগেও বললাম। তোমাকে দেওয়া কথা কি আমি ফিরিয়ে নিতে পারি কখনও? এই তুমি চিনলে এতদিনে”?
সীমন্তিনী এবার কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থাকবার পর বেশ সিরিয়াস গলায় জিজ্ঞেস করল, “পরি, কি হয়েছে বলো তো? তোমাকে এত টেনসড আমি কোনদিন দেখিনি। কি হয়েছে বলো না প্লীজ”।
পরিতোষ বলল, “ওকে ওকে, বলছি। কিন্তু তোমার টেনশন নেবার মত কিছু নেই। রিল্যাক্স। আসলে বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে যে ব্লু প্রিন্টটা বানিয়েছিলাম সে হিসেবে আশা করেছিলাম যে কাজটা শেষ হতে হতে ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিন লেগে যাবে। মোট তিনটে ফেজ ছিল সেই প্ল্যানে। প্রথম ফেজেই সময় লাগবার কথা ছিল কুড়ি থেকে পঁচিশ দিন। কিন্তু প্রথম ফেজের এই কাজটা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আমার বাকি দুটো ফেজের কাজের সময়সীমা রেখেছিলাম বারো থেকে পনেরো দিন। কিন্তু আমার নিজস্ব তিনটে ফেজ ছাড়াও প্ল্যানে একটা ফোর্থ স্টেজ ছিল। তাতে কয়েকটা সেন্ট্রাল গভঃমেন্ট এজেন্সী ইনভল্ভড আছে। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে আমার ফার্স্ট স্টেজ কমপ্লিট হবার সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনীয় এমন সব জিনিস আমার হাতে এসে পড়েছে যা ইডি, এসিবি, ক্রাইম ব্রাঞ্চ, আইটি ডিপার্টমেন্টের লোকেরা গত দশ বছর আগরওয়ালার পেছনে লেগে থেকেও নিজেদের আয়ত্বে আনতে পারেনি। তাই গত দশ বছরে পাঁচ বার হানা দিয়েও তারা বিমল আগরওয়ালার টিকিটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। এবার আমার হাতে তার মৃত্যুবান এসে গেছে। আর অমন মূল্যবান একটা জিনিস আমি নিজের কাস্টডিতে রাখবার সাহস সত্যি জুটিয়ে উঠতে পারিনি। আমি বাধ্য হয়েছিলাম এসিবির সাথে কন্টাক্ট করতে। ডকুমেন্টস গুলো তাদের হাতে দেবার সাথে সাথে কলকাতা থেকে দিল্লী পর্যন্ত হুলুস্থুল শুরু পড়ে গেছে। এখন এসএস আর সিবিআইও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে নিশ্চয়ই আরো কিছু ব্যাপার আছে, নইলে সিবিআই, ইন্টেলিজেন্স বা সিক্রেট সার্ভিস এতে নিশ্চয়ই জড়াত না। তবে ও নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে এই মাত্র ঘন্টা খানেক আগে আমি তাদের সাথেই এক জায়গায় সিক্রেট মিটিং করে এলাম। বিভিন্ন এজেন্সীর একত্রিশ জন সেখানে উপস্থিত ছিল। আগরওয়ালার মৃত্যুবানটা হাতে পেয়েই তারা সব প্ল্যান করে ফেলেছেন। তারা চাইছিলেন কাল পরশুর ভেতরেই বিমলের বাড়ি, অফিস আর ফার্ম হাউসে একসাথে রেড করতে। আমি যেহেতু তাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যটা করেছি, আর তারা একটা ছোট্ট জিনিস এখনো তাদের হাতে পায়নি তাই হয়তো আমাকেও সে মিটিংএ ডেকেছিলেন। ওহ মাই গড! ইট ওয়াজ এ লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স। আনবিলিভেবল। কিন্তু সে কথা যাক, মোদ্দা কথা হল তারা ভাবছেন যে বিমলের বাড়িতেও অমন কোনও সিক্রেট চেম্বার বা সেফ থাকতে পারে যেখানে আরো কিছু বেআইনী ডকুমেন্টস থাকতে পারে। কিন্তু আমি জানি চতুর বিমল নিজের বাড়িতে তেমন কিছু করে নি। কিন্তু তারা যদি কাল পরশুর ভেতরেই অ্যাকশনে নেমে পড়ে তাহলে আমার বাকি দুটো ফেজের কাজ আর করা যাবে না। আর বলাই বাহুল্য, তখন আমাদের প্ল্যান মাঠে মারা পড়বে। তাই আমি তাদের সাথে একটু ফাউল প্লে করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের কাছ থেকে সাতদিন সময় চেয়ে নিয়েছি। বলেছি যে সাতদিনের মধ্যে আমি তাদের কাছে বিমলের বাড়ির ব্যাপারে ফাইনাল রিপোর্ট দেব। তারা তাতে রাজী হয়েছেন। তাই সতেরো তারিখে বিমল আগরওয়ালা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে। তারা সবাই জানে যে এই সাতদিন আমি বিমলের ঘরের ভেতরের খবর যোগাড় করব। কিন্তু আসলে এই সাত দিনের মধ্যে আমার পরের প্ল্যান গুলো সেরে ফেলাই আমার মূল উদ্দেশ্য। এখন সতেরো তারিখের আগেই আমার বাকি দুটো ফেজের কাজ গুটিয়ে ফেলতে হবে। আর সতেরো তারিখ সন্ধ্যের মধ্যেই আমার অপারেশন শেষ করতে বাধ্য হচ্ছি। তাই খুব তাড়াতাড়ি আমাকে এখন অনেকগুলো কাজ সারতে হচ্ছে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমি কতটা প্রেসারে আছি। এখন আমি রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করছি। আরও দু’ তিনটে জায়গায় আজই যেতে হবে। জানিনা, আজ সারা রাত হয়ত ঘুমোতেই পারব না। তাই বলছি ওই ছবি টবির ব্যাপারে আমাকে এই সাতটা দিন প্লীজ ইনভল্ভ কোর না। আর তাছাড়া আমাকে ছবি টবি পাঠাবার দরকারই বা কি আছে বলো তো? আমি তো আগেই তোমাকে বলেছি যে তুমি আর বনি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেটাই মেনে নেব। কেন তাহলে আর আমাকে আবার এইসব উটকো ঝামেলায় ফেলতে চাইছ বলো তো”?
সীমন্তিনী এবার পরিতোষের ব্যস্ততার ধরণ আর গম্ভীরতা বুঝতে পেরে বলে উঠল, “সরি পরি। আমাকে মাফ করো। আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি এতোটা ব্যস্ত আছ। সেইসাথে আরেকবার সরি বলছি, আমার জন্যেই তুমি এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছ বলে। আই এম এক্সট্রিমলি সরি। আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে নাহয় তোমার সাথে পরে কথা বলব। কিন্তু পরি, তুমি প্লীজ সাবধানে থেক। আর রোজ তোমার ফুরসৎ মত একবার করে ফোন করো প্লীজ। নইলে আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তায় ভুগবো। আমি তোমার এত ব্যস্ততার মধ্যে তোমাকে ফোন করে আর বিব্রত করতে চাই না। সতেরো তারিখ পেরিয়ে যাবার পরেই আমি তোমাকে ফোন করব। ভালো থেকো পরি। আচ্ছা তুমি ডিনার করেছ তো”?
পরিতোষ সংক্ষেপে জবাব দিল, “হ্যাঁ করেছি। প্রীতিদির বাড়িতে খেয়েছি”।
সীমন্তিনী একটা নতুন নাম শুনে জিজ্ঞেস করল, “কোন প্রীতিদি”?
পরিতোষ তখন বলল, “সেটা পরে বলব ডার্লিং। আজ সময় নেই। গুড নাইট”।
পরিতোষ গুড নাইট বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন পকেটে পুরে রাখল। অনেকক্ষণ পর এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সে আবার কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে। এখন আমি তোমার বাড়ির খুব কাছেই আছি। তুমি ফ্রি আছ”?
ও’পাশের কথা শুনেই সে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি লক করে একদিকে হেঁটে চলল। প্রায় তিরিশ পঁয়ত্রিশ মিটার হেঁটে যাবার পর সে একটা বাড়িতে ঢুকে গেল। প্রায় মিনিট চল্লিশেক পর সে সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসেই আবার শেখরকে ফোন করে বলল, “শোন, আগামী পরশু মানে এগারো তারিখ আমার সাথে তোরা দু’জন ডিনার করবি। আমি কোথায় ডিনার করি তা তো জানিসই। রাত ঠিক ন’টায় চলে আসবি সেখানে। কাউন্টারে আমার নাম করে বলবি। ওরা তোকে দোতলায় একটা রুমে নিয়ে যাবে। সেখানে আমার জন্য ওয়েট করিস। আমি সময়মত সেখানে চলে যাব। আর ডকুমেন্ট গুলো ভালো করে একটা গিফট প্যাকে নিয়ে আসবি। অবশ্য তার আগে পুরোপুরি ভাবে ভেরিফাই করে নিবি সিডি গুলো। কারন ওগুলো ভেরিফাই করবার মত সময় আর আমার হাতে থাকবে না। আর প্রত্যেকটা সিডির ওপর মার্কার পেন দিয়ে এক একটা কোড লিখে দিবি। আর একটা সাদা কাগজে কোন কোডের কি মিনিং সেটা লিখে সে কাগজটাকেও গিফট প্যাকের ভেতরে ঢুকিয়ে দিবি। খেয়াল রাখিস আব্দুলের যেন বুঝতে অসুবিধে না হয়। আর পরশু রাত ঠিক ন’টা। মনে রাখবি, ঠিক আছে”?
কথা শেষ করে ঘড়িতে সময় দেখল, রাত বারোটা পঁচিশ। চুপ করে আরও মিনিট দুয়েক ভেবে সে গাড়ি স্টার্ট করে ইউ টার্ন নিল। কিন্তু না, তার বাড়ির উদ্দেশ্যে নয়। তার গাড়িটাকে যখন তার বাড়ির সামনে দেখা গেল রাত তখন প্রায় তিনটে। ঘরে ঢুকে ড্রেস বদলে ঢকঢক করে দু’গ্লাস জল খেয়ে অগোছালো বিছানার ওপরেই শুয়ে পড়ল সে।
*******************
(To be cont'd ......)
______________________________ss_sexy