19-03-2020, 03:13 PM
(Update No. 174)
প্রায় ঘন্টা খানেক সবাই মিলে নানা ধরণের আলোচনা করবার পর কনভেনার বললেন, “মিঃ সান্যাল, ফার্ম হাউসের সিক্রেট চেম্বার খুলবার চাবিকাঠি হাতে এনে আপনি এমন একটা অসাধ্য সাধন করেছেন যেটা আমাদের দেশের সরকার বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও গত দশ বছরেও কিচ্ছুটি করতে পারেনি। লোকটা অসম্ভব রকমের চালাক বলেই আমাদের আগের অপারেশনগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এমন একটা চেম্বার যে আছেই সেখানে এটা আমরা অনেক আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারিনি। এবার আপনার সাহায্যে আমরা মনে হয় সে অসাধ্য সাধনটা করতে পারব। আর অপারেশনটা সাকসেসফুলি কমপ্লিট করতে পারলে আপনি যে একটা বিশাল প্রমোশন পাবেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আমি আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত বড় বড় শহরের এফিসিয়েন্ট পুলিশ অফিসারদের সাথে কাজ করেছি। আপনার ব্যাপারেও অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে। আপনি একটা বিশেষ মহলে পুলিশ রবিনহুড নামে খুব বিখ্যাত। কেন? সেটাও কিছু কিছু আমরা জানি। না না, আমরা আপনার কাজের কোনও সমালোচনা করতে এখানে আসিনি। বা আপনার কোর্ট মার্শাল করতেও বসিনি। আর তাছাড়া আপনার বিরূদ্ধে কোন প্রমাণ তো কোথাও অবশিষ্ট রাখেনই না আপনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি আপনার মত স্মার্ট একজন পারসোনালকে মামুলী পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফেলে রাখাটা আমাদের দেশের পক্ষে খুবই লজ্জার কথা। আপনার মত এফিসিয়েন্ট অফিসারের স্থান অ্যাট লিস্ট ইন্টেলিজেন্সে তো হতেই পারে। তবে সেটা তো আমাদের কারুর হাতে নেই। তাই সে’কথা বরং থাক। আমি এ সভাকক্ষে যতজন হাজির আছেন, তাদের সকলের পক্ষ থেকে আপনার কাজের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের ধারণা আগরওয়ালার বাড়িতেও এমনই কোনও সিক্রেট সেফ বা চেম্বার থাকতে পারে। যদিও আমরা এ ব্যাপারে হানড্রেড পার্সেন্ট সিওর নই। তবে ওই ফার্ম হাউসের চেম্বার থেকেই আমরা এতকিছুই পাব বলে আশা রাখছি যাতে ওই ক্রিমিনালটাকে লম্বা সময়ের জন্য জেলে পুড়তে পারব আমরা। আর তার সাথে অনেক নামী দামী আমলা নেতাও জালে ফাঁসবে। প্রচুর পরিমানে ব্ল্যাকমানিও যে পাব তাতেও কোন সন্দেহ নেই। তাই আমরা আর সময় নষ্ট না করে আগামী একসপ্তাহের ভেতরেই দক্ষিণেশ্বরের ওই ফার্ম হাউসের অপারেশনটা শেষ করে ফেলতে চাই। এ ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য”।
পরিতোষ একটুক্ষণ মনে মনে ভেবে বলল, “স্যার, আগরওয়ালার বাড়িতেও যে এমনই কোন সিক্রেট চেম্বার বা সেফ থাকতে পারে এমন একটা সম্ভাবনার কথা আমার মাথাতেও এসেছে। ওর বাড়ির ভেতরেও আমি অলরেডি আমার লোক ঢুকিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কোনও পজিটিভ রিপোর্ট পাইনি এখনও। আমার লোক এখনও সেটার পেছনে লেগে আছে। কিন্তু ফার্ম হাউসের অপারেশনটা আমরা যদি আগেই করে ফেলি তাহলে ওই বাড়িতে আমার লোকের এন্ট্রি তো বন্ধ হয়ে যাবে স্যার। তখন তো আর কোন ইনভেস্টিগেশন করবার রাস্তাই থাকবে না আমার হাতে”।
অনেকেই পরিতোষের কথার সমর্থন করল। কনভেনার তখন বললেন, “আই আন্ডারস্ট্যান্ড মিঃ সান্যাল। তাহলে আমি আর মাক্সিমাম এক সপ্তাহ সময় আপনাকে দিতে পারি সেটা খুঁজে বের করবার জন্য। বাট নট মোর দ্যান দ্যাট। এর মধ্যে যদি আপনি সেটার হদিশ বের করে ফেলতে পারেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা হবেই। আর একান্তই যদি সেটা না পারেন তাহলে আই এম সরি, ফার্ম হাউসের অপারেশনটা কিন্তু আর পেছনো যাবে না। আজ ন’ তারিখ। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা সতের তারিখে ফাইনাল করা হচ্ছে। এরমধ্যে যা পারেন করুন। বাড়িতে চেম্বারের হদিশ পেলে ওয়েল এন্ড গুড না পেলেও ফার্ম হাউসে যা পাওয়া যাবে সেটাই ওকে লম্বা সময়ের জন্য জেলে ঢোকাবে, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা হবে ঠিক রাত আটটায়। কিন্তু আমরা তখন আপনাকে সাথে নিতে চাই না মিঃ সান্যাল। এটা আপনারই সেফটির কথা ভেবে বলছি আমি। আপনাকে আমি পুরোপুরি পিকচারের বাইরেই রাখতে চাই। এ’কথা অবশ্য আমি আগেই আপনাকে জানিয়েছি। অপারেশনটা লিড করবে দত্ত। তাই সিক্রেট চেম্বারে অ্যাকসেস পাবার আর ভেতরের সেফটা খোলার মোডাস অপারান্ডিটা আপনি ওকে নিখুঁত ভাবে বুঝিয়ে দেবেন প্লীজ। আর সেটা আজই। কারন দত্তর সাথে এটাই আপনার প্রথম ও শেষ দেখা। দত্ত, তুমি প্লীজ মিঃ সান্যালের কাছ থেকে ডিটেইলস গুলো খুব ভাল ভাবে বুঝে নাও। মনে রেখো আমাদের আগের পাঁচটা অপারেশন যে ব্যর্থ হয়েছে তা কিন্তু শুধু এই ব্যাপারটার জন্যই। ইউ মেক ইয়োরসেলফ ফুললি ক্লিয়ার এবাউট দা সিস্টেম অ্যান্ড প্রোসিডিওর। আমরা ওই নব গুলোর হদিশ আগেও পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজের কাজটা হয়নি। এবারে আমরা সিক্রেট চেম্বারের দরজার হদিশ পেয়ে গেছি, তার লকের চাবি পেয়েছি। এমনকি সেফের চাবিটা পর্যন্ত মিঃ সান্যাল আমার হাতে দিয়েছেন। আমি চাই না এত সমস্ত লিড পাবার পরেও আমাদের অপারেশন এবারেও ব্যর্থ হোক। তবে সব থেকে ক্রিটিকাল পয়েন্টটা হচ্ছে ওই স্পেশাল সিকোয়েন্সটা ফলো করা। সেটা এতদিন আমাদের ধারণার বাইরেই ছিল। তবে এমন ধরণের কোন টেকনিকই যে সেখানে করা আছে সেটা আমরা সন্দেহ করতে পারলেও সেটা বুঝতে বা খুঁজে বের করতে পারিনি। এবারে মিঃ সান্যালের মাধ্যমে সে জিনিসটা আমরা জানতে পেরেছি। সেই সিকোয়েন্স মেইন্টেন করাটাই কিন্তু আসল কাজ। বাকি যা কিছু তা খুব সহজেই হয়ে যাবে। এখন তো সাতদিন আরও এক্সট্রা সময় পাচ্ছ। আজ তুমি মিঃ সান্যালের কাছ থেকে পুরো সিস্টেমটা খুব ভাল করে বুঝে নাও। আর কিপ ইট ইন ইয়োর মেমোরি। তুমি চাইলে সিস্টেমটা এক্সটারনাল কোনও ডিভাইসেও নোট করে রাখতে পার। তবে সেক্ষেত্রে তোমাকে কিছু এক্সট্রা প্রিকশান নিতেই হবে, এন্ড ইউ নো দ্যাট। তবে ইভরিথিং ইস আপটু ইউ অনলি। তোমার যেভাবে সুবিধে হবে তুমি সেটাই করতে পার। তবে এবারে যেন আর কোনও মিস্টেক আমরা না করে ফেলি। এবার ফুল রেসপনসিবিলিটি কিন্তু তোমারই। আর মিঃ সান্যাল আপনাকে বলছি, সতের তারিখেই কিন্তু অপারেশনটা হচ্ছে। ইটস ফাইনাল। সেভেনটিন্থ সেপ্টেম্বের শার্প এট এইট পিএম। ওই সময়টায় মানে সেদিন সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা থেকে রাত সাড়ে ন’টা অব্দি, আমি সাজেস্ট করব, আপনাকে ওই ফার্ম হাউসের লোকেশান থেকে অন্ততঃ দশ কিলোমিটার দুরে থাকতে। অবশ্য আমি জানি এ’কথা আপনাকে না বললেও আপনি আপনার সমস্ত অপারেশনে যেমন করেন এবারেও নিজেকে সমস্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রাখবেন। আমি আর এক মিনিটও এক্সটেন্ড করব না। কারন আগরওয়ালা তার অফিসের চেম্বার থেকে চাবিগুলো যে হাওয়া হয়ে গেছে সেটা যে কোনও সময় সে বুঝে যেতে পারে। তাহলেই আমাদের সব পরিশ্রম মাঠে মারা যাবে। অন্যান্য বারের মত এবারেও আমরা বিফল হব। আমি সেটা কোনভাবেই বরদাস্ত করতে পারব না”।
পরিতোষ এবার একটু মুচকি হেসে বলল, “সেটা কি করে হবে স্যার? চাবিগুলো তো তার অফিসের সিক্রেট লকারে যথাস্থানেই আছে। আগরওয়ালা তো সেটা জানে। আজ দুপুরেও তো সে ওই চাবিগুলো নিয়ে তার ফার্ম হাউসে গিয়েছিল। আর তার স্ট্রং রুমে ঢুকে ওই সেফটাও খুলেছিল। আমার কাছে সে খবরও আছে। আর আগামী সতেরো তারিখেও সে আবার ওই সেফ খুলবে। এ খবরও একেবারে পাকা। কোন ভুল নেই তাতে। চাবিগুলো এই মূহুর্তেও আগরওয়ালার অফিসের লকারেই আছে”।
কনভেনার এবার হতাশ আর সাথে সাথে অবাক হয়েই প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, “ও মাই গড। আই এম ফিনিশড। তাহলে আর অপারেশন কী করে সাকসেসফুল হবে? কিন্তু তাহলে আপনি আমাকে কোন চাবিগুলো দিয়েছেন। আর কেনই বা দিয়েছেন? ওগুলো কি আমি ভাজা করে খাব”?
পরিতোষ শান্ত গলায় বলল, “ঘাবড়াবেন না স্যার। এত কাঁচা খেলা আমি খেলিনা। আসলে আপনার হাতে যে চাবিগুলো আছে সেগুলোই অরিজিনাল চাবি। আর এখন আগরওয়ালার অফিসের লকারে যে চাবিগুলো আছে সেগুলো এ চাবিগুলোরই ডুপ্লিকেট। লকার থেকে আমি যেদিন চাবিগুলো আমার হাতে পেয়েছিলাম তার পরের দিনই ডুপ্লিকেট চাবিগুলো আবার ওই লকারে রেখে দিয়েছি। সাত দিন তো দুর, আগরওয়ালা সাত জনমেও বুঝতে পারবে না যে তার ফার্ম হাউসের সিক্রেট চেম্বারের অরিজিনাল চাবি গুলো এখন আমাদের হাতে।“
ঘরের ভেতর প্রায় সকলেই যেন দমবন্ধ করে বসে ছিল এতক্ষণ। পরিতোষের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই যেন সকলে শ্বাস নিতে শুরু করল। কনভেনার নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে পরিতোষকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “মাই গড! আই কান্ট বিলিভ ইট! ইউ আর রিয়েলি এ জিনিয়াস মিঃ সান্যাল। আপনার মত এমন এফিসিয়েন্ট কাউকে আমি আমার তিরিশ বছরের সার্ভিস লাইফে দেখিনি। আই এম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ। ইস আপনার মত একজনকে যদি আমার সমস্ত অপারেশনে সাথে পেতাম, তাহলে আমি বোধহয় দেশের টপমোস্ট সিক্রেট এজেন্ট হয়ে যেতাম। আই এম রিয়েলি রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ” বলে পরিতোষের পিঠ চাপড়াতে লাগলেন।
এমন সময় একজন একটু বিচলিত ভাবে বলে উঠলেন, “স্যার, বাইরে রাস্তায় কিছু গন্ডগোল হচ্ছে। একটা ব্লাস্ট হয়েছে। তবে সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল”।
কনভেনার পরিতোষকে ছেড়ে নিজের চেয়ারের দিকে যেতে যেতে বললেন, “হতে দাও গিরি, হতে দাও। আই ডোন্ট কেয়ার এনিমোর। ওরা তো বিল্ডিংটাকে আগে থেকেই চেনে। মাঝে মধ্যে চারপাশে ঘোরাফেরা করে খবরাখবর নেয় এ তো আমরা জানিই। আজও যে এমন হতে পারে তা তো আমরা এক্সপেক্ট করেই ছিলাম। যা হচ্ছে হতে দাও। ও’সব টেক কেয়ার করবার লোক বাইরেই আছে। শুধু খবর নাও মিঃ সান্যাল বিনা ঝামেলায় তার বাইক নিয়ে চলে যেতে পারবেন কি না। আর হ্যাঁ, মিঃ সান্যাল যে রাস্তায় ফিরে যাবে, সে রাস্তায় আমাদের পেট্রোলিং বাড়িয়ে দাও। আমি চাই না এখন তার ওপর কোন ধরণের হামলা হোক”।
পরের আধঘন্টা অনির্বান দত্ত পরিতোষের সাথে একান্তে বসে ফার্ম হাউসের ব্যাপারটা নিখুঁত ভাবে বুঝে নিল। অন্যান্য সকলে আসন্ন অপারেশনের সাফল্য কামনায় ড্রিঙ্ক নিয়ে বসল। পরিতোষের জন্য স্পেশাল কফির বন্দোবস্ত করা হল। পরিতোষ যে মদ খায় না এ তথ্য এখানকার সকলেই জানে দেখা গেল।
আধঘণ্টা বাদে অনির্বানের কাছ থেকে ছুটি পেয়ে তারা কনভেনারের কাছে আসতেই কনভেনার নিজের চেয়ার থেকে উঠে পরিতোষের সাথে হ্যান্ডসেক করে বললেন, “থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ সান্যাল। আপনার সাথে আমার আর বোধহয় দেখা হবে না। তবে অপারেশনটা সাকসেসফুলি শেষ করবার পর সম্ভব হলে একদিন আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করব। তখন আপনাকে আমি আমার প্রাইভেট কন্টাক্ট নাম্বারটা দেব। মাঝে মাঝে কথা বলবেন আমার সাথে প্লীজ। আই উইল বি হ্যাপি। আর এ সাতদিনের মধ্যে যদি বাড়ির ব্যাপারে কোনও ক্লু বা ডকুমেন্টস খুঁজে পান তাহলে আপনাকে দেওয়া ওই নতুন মোবাইলটা থেকে দত্তকে ওভার ফোন কন্টাক্ট করবেন। পারসোনালি মিট করবার চেষ্টা করবেন না প্লীজ। আমাদের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় কোনও নির্দেশ থাকলে সেটা আপনাকে আমরা সঠিক সময়ে জানিয়ে দেব। আর ভাল থাকবেন। আপনার মত এমন একজনকে আরও অনেক অনেক দিন দেশের সেবা করতে হবে”।
পরিতোষও তার হাতে ঝাঁকি দিয়ে বলল, “সো কাইন্ড অফ ইউ স্যার। তা এবার কি আমি যেতে পারি”?
কনভেনারও আবার হাত ঝাঁকি দিয়ে বললেন, “ওঃ, শিওর। ইউ আর ফ্রি নাউ। যান, আপনার বোন আপনার খাবার রেডি করে বসে আছে আপনার প্রতীক্ষায়। আর শুনুন, বাইরে গিয়ে এদিক ওদিক দেখাদেখি করবার দরকার নেই। আপনাকে যারা এসকর্ট করে এখানে এনেছিল তারা ছাড়াও এখন আরও কয়েকজন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় আপনার সিকিউরিটির জন্য মোতায়েন করা আছে। তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই। ইটস অনলি এ সিকিউরিটি মেজার। আর আমি জানি ইউ ও’ন্ট মাইন্ড ইট। থ্যাংক্স এগেইন অ্যান্ড গুড নাইট”।
পরিতোষও তাকে “গুড নাইট স্যার” আর বাকি সকলকে “গুড নাইট এভরিবডি” বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। অনির্বান দত্তও পরিতোষের সাথে বেরোল। লিফটে চড়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসবার পর অনির্বান বলল, “স্যার, এবার আপনার ব্লুটুথটা আবার কানে লাগিয়ে নিন, আর আমার কন্টাক্ট নাম্বারটা নিয়ে নিন”।
পরিতোষ প্রথমে অনির্বানের নাম্বারটা তার প্রাইভেট মোবাইলে সেভ করে নিয়ে পকেট থেকে ব্লুটুথটা বের করে নিজের কানে লাগিয়ে নিতেই অনির্বান মেইন দরজাটা খুলে বলল, “গুড নাইট স্যার”।
পরিতোষও গুড নাইট বলে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এল। বাইরে রাস্তায় এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে নিজের বাইকের দিকে এগিয়ে গেল। বাইকে বসে হেলমেট পড়ে বাইকে স্টার্ট দেবার পরেই মনে হল আশে পাশেই কোথাও আরও কয়েকটা গাড়ি বাইক চলতে শুরু করেছে। সেও নিজের বাইক হাঁকিয়ে দিল ফেরার রাস্তায়। হেডলাইটের আলোয় দেখল দু’তিনটে ছোট আর মাঝারি গাড়ী রাস্তার একপাশে উল্টে পড়ে আছে। দেখেই বোঝা গেল হাল্কা বা মাঝারি ধরণের বম্ব ব্লাস্ট হয়েছে।
আব্দুলের গ্যারেজের ভাঙা ঘরেই পোশাক পাল্টে নিজের ইউনিফর্ম পড়ে সে আব্দুলের সাথেই তাদের ঘরে গিয়ে যখন পৌছলো রাত তখন প্রায় সাড়ে ন’টা। প্রীতি পরিতোষকে কাছে পেয়ে ছোট্ট কিশোরীর মত খুশী আর চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। রাতের ডিনার সেরে প্রীতিকে প্রণাম করে আর ছোট্ট আপ্রীতকে অনেক অনেক আদর করে পরিতোষ আব্দুলের সাথে বেরিয়ে এল। নিজের গাড়িতে ড্রাইভিং সীটে বসে আব্দুলকেও পাশের সীটে বসিয়ে পরিতোষ বলল, “আব্দুল, সময় কাছে এসে গেছে। তোর সেকেন্ড অপারেশনটা সামনের সতের তারিখেই করতে হবে। আর সেটা করতে হবে সন্ধ্যে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার ভেতর। তোর টিম রেডি আছে তো”?
আব্দুল বলল, “স্যার আমি আর আমার দুটো টিমের প্রত্যেকেই রেডি আছে। আমি তো শুধু আপনার ফাইনাল নোটিসের অপেক্ষাতেই ছিলাম”।
পরিতোষ একটু ভেবে নিয়ে বলল, “তোর প্রথম ভাগের কাজটা কিন্তু তার দু’তিনদিন আগেই করতে হবে। তার মানে হচ্ছে সেটা তোকে করতে হবে তেরো থেকে ষোলো তারিখের ভেতর। সুতরাং হাতে আর মোটে তিনটে দিন আছে। তুই বারো তারিখ সকালে আমার গাড়ী সারাই করবার অজুহাত নিয়ে আমার বাড়ি চলে আসবি। তখন তোকে জিনিসগুলো দিয়ে দেব। পরদিন থেকেই তোর এ টিমের কাজ শুরু করে দিবি। ফান্ডটা আদায় করবি সতের তারিখে। বিকেল বা সন্ধ্যের দিকে সেটা করতে পারলে ভাল হয়। আর ফান্ডটা হাতে আসবার আধঘন্টার মধ্যেই তোর সেকেন্ড অ্যাকশনটা করবি। রাত আটটার ভেতরই যেন ডাঃ বড়ুয়ার হাতে চলে যায় কেসটা। আর সেখানেই স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশেরা এসে তাদের কাজটা করবে”।
আব্দুল খুব মন দিয়ে পরিতোষের কথাগুলো শুনে বলল, “কিন্তু স্যার, ওই হারামজাদার কাছ থেকে কি এক কোটিই আদায় করব না কম বেশী কিছু”?
পরিতোষ মনে মনে ভাবল, আজ রাতেই মন্তির সাথে কথা বলতে হবে। কালচিনীর বাড়ি তৈরী করতে কত টাকার এস্টিমেট বানানো হয়েছে সেটা এখনও সে জানতে পারেনি। তাই আব্দুলের কথার জবাবে সে বলল, “সেটা আমি বারো তারিখ সকালে যখন তুই আমার বাড়ি যাবি তখনই বলে দেব। আর ক্যাশটা সতের তারিখে তোর হেপাজতেই রাখবি। আঠেরো তারিখে আমি তোকে ফোন করে জানিয়ে দেব সেটা কখন কোথায় নিয়ে যেতে হবে”।
কথা শেষ হতেই পরিতোষের মোবাইল বেজে উঠল পকেটের ভেতর। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখল “মুন ডার্লিং কলিং”। মানে সীমন্তিনীর ফোন। কিন্তু কলটা রিসিভ না করে সে রিজেক্ট করে দিয়ে ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল, “হ্যাঁ, বল, আর কিছু বলবি”?
আব্দুল একটু মাথা নিচু করে ভেবে বলল, “স্যার বলছিলাম যে সতেরো তারিখে ক্যাশটা না হয় আমার হিফাজতেই রাখব। আর পরদিন সেটা আপনার ডেরাতেও পৌঁছে দিতে পারব। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু স্যার, এমাউন্টের ব্যাপারটা যদি বারো তারিখের আগেই আমাকে জানিয়ে দিতে পারতেন তাহলে আমার পক্ষে একটু সুবিধে হত। মানে অপারেশনটার ফাইনাল শেপ দিতে একটু সুবিধে হত”।
পরিতোষ একটু চিন্তিত ভাবে বলল, “বুঝতে পেরেছি বুঝতে পেরেছি রে। কিন্তু আসলে হয়েছে কি জানিস, আমি তো ভেবেছিলাম ফার্স্ট স্টেজের কাজটা করতে অন্ততঃ মাস খানেক সময় লেগে যাবে। তাই ধীরে সুস্থে সব কিছুর ফাইনাল শেপ বানাতে পারব। কিন্তু কাজটা যে শেখরের টিম এত তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে পারবে সেটা একেবারেই ভাবিনি। আর ওদের কাজটা শেষ হয়ে গেছে বলেই সিক্রেট সার্ভিসের অফিসারেরা আর দেরী করতে চাইছেন না। তারা তো কাল পরশুর মধ্যেই তাদের অপারেশনটা করতে চাইছিলেন। আমার অনুরোধে তবু সাতদিন দেরীতে করতে রাজী হয়েছে। তাই আমার সবগুলো অপারেশন তাদের অপারেশন শুরু করবার আগেই শেষ করতে হবে। নইলে আমার উদ্দেশ্যটা পূর্ণ হবে না। তাই তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে আমাকেও। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করছি তোকে যত তাড়াতাড়ি সেটা জানিয়ে দিতে পারি। আচ্ছা এবার তুই ঘরে যা। আমিও রওনা দিই আর দেরী না করে। আজ রাতেই আমাকে আরও কয়েকটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ সারতে হবে”।
______________________________
প্রায় ঘন্টা খানেক সবাই মিলে নানা ধরণের আলোচনা করবার পর কনভেনার বললেন, “মিঃ সান্যাল, ফার্ম হাউসের সিক্রেট চেম্বার খুলবার চাবিকাঠি হাতে এনে আপনি এমন একটা অসাধ্য সাধন করেছেন যেটা আমাদের দেশের সরকার বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও গত দশ বছরেও কিচ্ছুটি করতে পারেনি। লোকটা অসম্ভব রকমের চালাক বলেই আমাদের আগের অপারেশনগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এমন একটা চেম্বার যে আছেই সেখানে এটা আমরা অনেক আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারিনি। এবার আপনার সাহায্যে আমরা মনে হয় সে অসাধ্য সাধনটা করতে পারব। আর অপারেশনটা সাকসেসফুলি কমপ্লিট করতে পারলে আপনি যে একটা বিশাল প্রমোশন পাবেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আমি আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত বড় বড় শহরের এফিসিয়েন্ট পুলিশ অফিসারদের সাথে কাজ করেছি। আপনার ব্যাপারেও অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে। আপনি একটা বিশেষ মহলে পুলিশ রবিনহুড নামে খুব বিখ্যাত। কেন? সেটাও কিছু কিছু আমরা জানি। না না, আমরা আপনার কাজের কোনও সমালোচনা করতে এখানে আসিনি। বা আপনার কোর্ট মার্শাল করতেও বসিনি। আর তাছাড়া আপনার বিরূদ্ধে কোন প্রমাণ তো কোথাও অবশিষ্ট রাখেনই না আপনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি আপনার মত স্মার্ট একজন পারসোনালকে মামুলী পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফেলে রাখাটা আমাদের দেশের পক্ষে খুবই লজ্জার কথা। আপনার মত এফিসিয়েন্ট অফিসারের স্থান অ্যাট লিস্ট ইন্টেলিজেন্সে তো হতেই পারে। তবে সেটা তো আমাদের কারুর হাতে নেই। তাই সে’কথা বরং থাক। আমি এ সভাকক্ষে যতজন হাজির আছেন, তাদের সকলের পক্ষ থেকে আপনার কাজের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের ধারণা আগরওয়ালার বাড়িতেও এমনই কোনও সিক্রেট সেফ বা চেম্বার থাকতে পারে। যদিও আমরা এ ব্যাপারে হানড্রেড পার্সেন্ট সিওর নই। তবে ওই ফার্ম হাউসের চেম্বার থেকেই আমরা এতকিছুই পাব বলে আশা রাখছি যাতে ওই ক্রিমিনালটাকে লম্বা সময়ের জন্য জেলে পুড়তে পারব আমরা। আর তার সাথে অনেক নামী দামী আমলা নেতাও জালে ফাঁসবে। প্রচুর পরিমানে ব্ল্যাকমানিও যে পাব তাতেও কোন সন্দেহ নেই। তাই আমরা আর সময় নষ্ট না করে আগামী একসপ্তাহের ভেতরেই দক্ষিণেশ্বরের ওই ফার্ম হাউসের অপারেশনটা শেষ করে ফেলতে চাই। এ ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য”।
পরিতোষ একটুক্ষণ মনে মনে ভেবে বলল, “স্যার, আগরওয়ালার বাড়িতেও যে এমনই কোন সিক্রেট চেম্বার বা সেফ থাকতে পারে এমন একটা সম্ভাবনার কথা আমার মাথাতেও এসেছে। ওর বাড়ির ভেতরেও আমি অলরেডি আমার লোক ঢুকিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কোনও পজিটিভ রিপোর্ট পাইনি এখনও। আমার লোক এখনও সেটার পেছনে লেগে আছে। কিন্তু ফার্ম হাউসের অপারেশনটা আমরা যদি আগেই করে ফেলি তাহলে ওই বাড়িতে আমার লোকের এন্ট্রি তো বন্ধ হয়ে যাবে স্যার। তখন তো আর কোন ইনভেস্টিগেশন করবার রাস্তাই থাকবে না আমার হাতে”।
অনেকেই পরিতোষের কথার সমর্থন করল। কনভেনার তখন বললেন, “আই আন্ডারস্ট্যান্ড মিঃ সান্যাল। তাহলে আমি আর মাক্সিমাম এক সপ্তাহ সময় আপনাকে দিতে পারি সেটা খুঁজে বের করবার জন্য। বাট নট মোর দ্যান দ্যাট। এর মধ্যে যদি আপনি সেটার হদিশ বের করে ফেলতে পারেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা হবেই। আর একান্তই যদি সেটা না পারেন তাহলে আই এম সরি, ফার্ম হাউসের অপারেশনটা কিন্তু আর পেছনো যাবে না। আজ ন’ তারিখ। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা সতের তারিখে ফাইনাল করা হচ্ছে। এরমধ্যে যা পারেন করুন। বাড়িতে চেম্বারের হদিশ পেলে ওয়েল এন্ড গুড না পেলেও ফার্ম হাউসে যা পাওয়া যাবে সেটাই ওকে লম্বা সময়ের জন্য জেলে ঢোকাবে, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। ফার্ম হাউসের অপারেশনটা হবে ঠিক রাত আটটায়। কিন্তু আমরা তখন আপনাকে সাথে নিতে চাই না মিঃ সান্যাল। এটা আপনারই সেফটির কথা ভেবে বলছি আমি। আপনাকে আমি পুরোপুরি পিকচারের বাইরেই রাখতে চাই। এ’কথা অবশ্য আমি আগেই আপনাকে জানিয়েছি। অপারেশনটা লিড করবে দত্ত। তাই সিক্রেট চেম্বারে অ্যাকসেস পাবার আর ভেতরের সেফটা খোলার মোডাস অপারান্ডিটা আপনি ওকে নিখুঁত ভাবে বুঝিয়ে দেবেন প্লীজ। আর সেটা আজই। কারন দত্তর সাথে এটাই আপনার প্রথম ও শেষ দেখা। দত্ত, তুমি প্লীজ মিঃ সান্যালের কাছ থেকে ডিটেইলস গুলো খুব ভাল ভাবে বুঝে নাও। মনে রেখো আমাদের আগের পাঁচটা অপারেশন যে ব্যর্থ হয়েছে তা কিন্তু শুধু এই ব্যাপারটার জন্যই। ইউ মেক ইয়োরসেলফ ফুললি ক্লিয়ার এবাউট দা সিস্টেম অ্যান্ড প্রোসিডিওর। আমরা ওই নব গুলোর হদিশ আগেও পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজের কাজটা হয়নি। এবারে আমরা সিক্রেট চেম্বারের দরজার হদিশ পেয়ে গেছি, তার লকের চাবি পেয়েছি। এমনকি সেফের চাবিটা পর্যন্ত মিঃ সান্যাল আমার হাতে দিয়েছেন। আমি চাই না এত সমস্ত লিড পাবার পরেও আমাদের অপারেশন এবারেও ব্যর্থ হোক। তবে সব থেকে ক্রিটিকাল পয়েন্টটা হচ্ছে ওই স্পেশাল সিকোয়েন্সটা ফলো করা। সেটা এতদিন আমাদের ধারণার বাইরেই ছিল। তবে এমন ধরণের কোন টেকনিকই যে সেখানে করা আছে সেটা আমরা সন্দেহ করতে পারলেও সেটা বুঝতে বা খুঁজে বের করতে পারিনি। এবারে মিঃ সান্যালের মাধ্যমে সে জিনিসটা আমরা জানতে পেরেছি। সেই সিকোয়েন্স মেইন্টেন করাটাই কিন্তু আসল কাজ। বাকি যা কিছু তা খুব সহজেই হয়ে যাবে। এখন তো সাতদিন আরও এক্সট্রা সময় পাচ্ছ। আজ তুমি মিঃ সান্যালের কাছ থেকে পুরো সিস্টেমটা খুব ভাল করে বুঝে নাও। আর কিপ ইট ইন ইয়োর মেমোরি। তুমি চাইলে সিস্টেমটা এক্সটারনাল কোনও ডিভাইসেও নোট করে রাখতে পার। তবে সেক্ষেত্রে তোমাকে কিছু এক্সট্রা প্রিকশান নিতেই হবে, এন্ড ইউ নো দ্যাট। তবে ইভরিথিং ইস আপটু ইউ অনলি। তোমার যেভাবে সুবিধে হবে তুমি সেটাই করতে পার। তবে এবারে যেন আর কোনও মিস্টেক আমরা না করে ফেলি। এবার ফুল রেসপনসিবিলিটি কিন্তু তোমারই। আর মিঃ সান্যাল আপনাকে বলছি, সতের তারিখেই কিন্তু অপারেশনটা হচ্ছে। ইটস ফাইনাল। সেভেনটিন্থ সেপ্টেম্বের শার্প এট এইট পিএম। ওই সময়টায় মানে সেদিন সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা থেকে রাত সাড়ে ন’টা অব্দি, আমি সাজেস্ট করব, আপনাকে ওই ফার্ম হাউসের লোকেশান থেকে অন্ততঃ দশ কিলোমিটার দুরে থাকতে। অবশ্য আমি জানি এ’কথা আপনাকে না বললেও আপনি আপনার সমস্ত অপারেশনে যেমন করেন এবারেও নিজেকে সমস্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রাখবেন। আমি আর এক মিনিটও এক্সটেন্ড করব না। কারন আগরওয়ালা তার অফিসের চেম্বার থেকে চাবিগুলো যে হাওয়া হয়ে গেছে সেটা যে কোনও সময় সে বুঝে যেতে পারে। তাহলেই আমাদের সব পরিশ্রম মাঠে মারা যাবে। অন্যান্য বারের মত এবারেও আমরা বিফল হব। আমি সেটা কোনভাবেই বরদাস্ত করতে পারব না”।
পরিতোষ এবার একটু মুচকি হেসে বলল, “সেটা কি করে হবে স্যার? চাবিগুলো তো তার অফিসের সিক্রেট লকারে যথাস্থানেই আছে। আগরওয়ালা তো সেটা জানে। আজ দুপুরেও তো সে ওই চাবিগুলো নিয়ে তার ফার্ম হাউসে গিয়েছিল। আর তার স্ট্রং রুমে ঢুকে ওই সেফটাও খুলেছিল। আমার কাছে সে খবরও আছে। আর আগামী সতেরো তারিখেও সে আবার ওই সেফ খুলবে। এ খবরও একেবারে পাকা। কোন ভুল নেই তাতে। চাবিগুলো এই মূহুর্তেও আগরওয়ালার অফিসের লকারেই আছে”।
কনভেনার এবার হতাশ আর সাথে সাথে অবাক হয়েই প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, “ও মাই গড। আই এম ফিনিশড। তাহলে আর অপারেশন কী করে সাকসেসফুল হবে? কিন্তু তাহলে আপনি আমাকে কোন চাবিগুলো দিয়েছেন। আর কেনই বা দিয়েছেন? ওগুলো কি আমি ভাজা করে খাব”?
পরিতোষ শান্ত গলায় বলল, “ঘাবড়াবেন না স্যার। এত কাঁচা খেলা আমি খেলিনা। আসলে আপনার হাতে যে চাবিগুলো আছে সেগুলোই অরিজিনাল চাবি। আর এখন আগরওয়ালার অফিসের লকারে যে চাবিগুলো আছে সেগুলো এ চাবিগুলোরই ডুপ্লিকেট। লকার থেকে আমি যেদিন চাবিগুলো আমার হাতে পেয়েছিলাম তার পরের দিনই ডুপ্লিকেট চাবিগুলো আবার ওই লকারে রেখে দিয়েছি। সাত দিন তো দুর, আগরওয়ালা সাত জনমেও বুঝতে পারবে না যে তার ফার্ম হাউসের সিক্রেট চেম্বারের অরিজিনাল চাবি গুলো এখন আমাদের হাতে।“
ঘরের ভেতর প্রায় সকলেই যেন দমবন্ধ করে বসে ছিল এতক্ষণ। পরিতোষের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই যেন সকলে শ্বাস নিতে শুরু করল। কনভেনার নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে পরিতোষকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “মাই গড! আই কান্ট বিলিভ ইট! ইউ আর রিয়েলি এ জিনিয়াস মিঃ সান্যাল। আপনার মত এমন এফিসিয়েন্ট কাউকে আমি আমার তিরিশ বছরের সার্ভিস লাইফে দেখিনি। আই এম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ। ইস আপনার মত একজনকে যদি আমার সমস্ত অপারেশনে সাথে পেতাম, তাহলে আমি বোধহয় দেশের টপমোস্ট সিক্রেট এজেন্ট হয়ে যেতাম। আই এম রিয়েলি রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ” বলে পরিতোষের পিঠ চাপড়াতে লাগলেন।
এমন সময় একজন একটু বিচলিত ভাবে বলে উঠলেন, “স্যার, বাইরে রাস্তায় কিছু গন্ডগোল হচ্ছে। একটা ব্লাস্ট হয়েছে। তবে সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল”।
কনভেনার পরিতোষকে ছেড়ে নিজের চেয়ারের দিকে যেতে যেতে বললেন, “হতে দাও গিরি, হতে দাও। আই ডোন্ট কেয়ার এনিমোর। ওরা তো বিল্ডিংটাকে আগে থেকেই চেনে। মাঝে মধ্যে চারপাশে ঘোরাফেরা করে খবরাখবর নেয় এ তো আমরা জানিই। আজও যে এমন হতে পারে তা তো আমরা এক্সপেক্ট করেই ছিলাম। যা হচ্ছে হতে দাও। ও’সব টেক কেয়ার করবার লোক বাইরেই আছে। শুধু খবর নাও মিঃ সান্যাল বিনা ঝামেলায় তার বাইক নিয়ে চলে যেতে পারবেন কি না। আর হ্যাঁ, মিঃ সান্যাল যে রাস্তায় ফিরে যাবে, সে রাস্তায় আমাদের পেট্রোলিং বাড়িয়ে দাও। আমি চাই না এখন তার ওপর কোন ধরণের হামলা হোক”।
পরের আধঘন্টা অনির্বান দত্ত পরিতোষের সাথে একান্তে বসে ফার্ম হাউসের ব্যাপারটা নিখুঁত ভাবে বুঝে নিল। অন্যান্য সকলে আসন্ন অপারেশনের সাফল্য কামনায় ড্রিঙ্ক নিয়ে বসল। পরিতোষের জন্য স্পেশাল কফির বন্দোবস্ত করা হল। পরিতোষ যে মদ খায় না এ তথ্য এখানকার সকলেই জানে দেখা গেল।
আধঘণ্টা বাদে অনির্বানের কাছ থেকে ছুটি পেয়ে তারা কনভেনারের কাছে আসতেই কনভেনার নিজের চেয়ার থেকে উঠে পরিতোষের সাথে হ্যান্ডসেক করে বললেন, “থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ সান্যাল। আপনার সাথে আমার আর বোধহয় দেখা হবে না। তবে অপারেশনটা সাকসেসফুলি শেষ করবার পর সম্ভব হলে একদিন আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করব। তখন আপনাকে আমি আমার প্রাইভেট কন্টাক্ট নাম্বারটা দেব। মাঝে মাঝে কথা বলবেন আমার সাথে প্লীজ। আই উইল বি হ্যাপি। আর এ সাতদিনের মধ্যে যদি বাড়ির ব্যাপারে কোনও ক্লু বা ডকুমেন্টস খুঁজে পান তাহলে আপনাকে দেওয়া ওই নতুন মোবাইলটা থেকে দত্তকে ওভার ফোন কন্টাক্ট করবেন। পারসোনালি মিট করবার চেষ্টা করবেন না প্লীজ। আমাদের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় কোনও নির্দেশ থাকলে সেটা আপনাকে আমরা সঠিক সময়ে জানিয়ে দেব। আর ভাল থাকবেন। আপনার মত এমন একজনকে আরও অনেক অনেক দিন দেশের সেবা করতে হবে”।
পরিতোষও তার হাতে ঝাঁকি দিয়ে বলল, “সো কাইন্ড অফ ইউ স্যার। তা এবার কি আমি যেতে পারি”?
কনভেনারও আবার হাত ঝাঁকি দিয়ে বললেন, “ওঃ, শিওর। ইউ আর ফ্রি নাউ। যান, আপনার বোন আপনার খাবার রেডি করে বসে আছে আপনার প্রতীক্ষায়। আর শুনুন, বাইরে গিয়ে এদিক ওদিক দেখাদেখি করবার দরকার নেই। আপনাকে যারা এসকর্ট করে এখানে এনেছিল তারা ছাড়াও এখন আরও কয়েকজন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় আপনার সিকিউরিটির জন্য মোতায়েন করা আছে। তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই। ইটস অনলি এ সিকিউরিটি মেজার। আর আমি জানি ইউ ও’ন্ট মাইন্ড ইট। থ্যাংক্স এগেইন অ্যান্ড গুড নাইট”।
পরিতোষও তাকে “গুড নাইট স্যার” আর বাকি সকলকে “গুড নাইট এভরিবডি” বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। অনির্বান দত্তও পরিতোষের সাথে বেরোল। লিফটে চড়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসবার পর অনির্বান বলল, “স্যার, এবার আপনার ব্লুটুথটা আবার কানে লাগিয়ে নিন, আর আমার কন্টাক্ট নাম্বারটা নিয়ে নিন”।
পরিতোষ প্রথমে অনির্বানের নাম্বারটা তার প্রাইভেট মোবাইলে সেভ করে নিয়ে পকেট থেকে ব্লুটুথটা বের করে নিজের কানে লাগিয়ে নিতেই অনির্বান মেইন দরজাটা খুলে বলল, “গুড নাইট স্যার”।
পরিতোষও গুড নাইট বলে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এল। বাইরে রাস্তায় এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে নিজের বাইকের দিকে এগিয়ে গেল। বাইকে বসে হেলমেট পড়ে বাইকে স্টার্ট দেবার পরেই মনে হল আশে পাশেই কোথাও আরও কয়েকটা গাড়ি বাইক চলতে শুরু করেছে। সেও নিজের বাইক হাঁকিয়ে দিল ফেরার রাস্তায়। হেডলাইটের আলোয় দেখল দু’তিনটে ছোট আর মাঝারি গাড়ী রাস্তার একপাশে উল্টে পড়ে আছে। দেখেই বোঝা গেল হাল্কা বা মাঝারি ধরণের বম্ব ব্লাস্ট হয়েছে।
আব্দুলের গ্যারেজের ভাঙা ঘরেই পোশাক পাল্টে নিজের ইউনিফর্ম পড়ে সে আব্দুলের সাথেই তাদের ঘরে গিয়ে যখন পৌছলো রাত তখন প্রায় সাড়ে ন’টা। প্রীতি পরিতোষকে কাছে পেয়ে ছোট্ট কিশোরীর মত খুশী আর চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। রাতের ডিনার সেরে প্রীতিকে প্রণাম করে আর ছোট্ট আপ্রীতকে অনেক অনেক আদর করে পরিতোষ আব্দুলের সাথে বেরিয়ে এল। নিজের গাড়িতে ড্রাইভিং সীটে বসে আব্দুলকেও পাশের সীটে বসিয়ে পরিতোষ বলল, “আব্দুল, সময় কাছে এসে গেছে। তোর সেকেন্ড অপারেশনটা সামনের সতের তারিখেই করতে হবে। আর সেটা করতে হবে সন্ধ্যে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার ভেতর। তোর টিম রেডি আছে তো”?
আব্দুল বলল, “স্যার আমি আর আমার দুটো টিমের প্রত্যেকেই রেডি আছে। আমি তো শুধু আপনার ফাইনাল নোটিসের অপেক্ষাতেই ছিলাম”।
পরিতোষ একটু ভেবে নিয়ে বলল, “তোর প্রথম ভাগের কাজটা কিন্তু তার দু’তিনদিন আগেই করতে হবে। তার মানে হচ্ছে সেটা তোকে করতে হবে তেরো থেকে ষোলো তারিখের ভেতর। সুতরাং হাতে আর মোটে তিনটে দিন আছে। তুই বারো তারিখ সকালে আমার গাড়ী সারাই করবার অজুহাত নিয়ে আমার বাড়ি চলে আসবি। তখন তোকে জিনিসগুলো দিয়ে দেব। পরদিন থেকেই তোর এ টিমের কাজ শুরু করে দিবি। ফান্ডটা আদায় করবি সতের তারিখে। বিকেল বা সন্ধ্যের দিকে সেটা করতে পারলে ভাল হয়। আর ফান্ডটা হাতে আসবার আধঘন্টার মধ্যেই তোর সেকেন্ড অ্যাকশনটা করবি। রাত আটটার ভেতরই যেন ডাঃ বড়ুয়ার হাতে চলে যায় কেসটা। আর সেখানেই স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশেরা এসে তাদের কাজটা করবে”।
আব্দুল খুব মন দিয়ে পরিতোষের কথাগুলো শুনে বলল, “কিন্তু স্যার, ওই হারামজাদার কাছ থেকে কি এক কোটিই আদায় করব না কম বেশী কিছু”?
পরিতোষ মনে মনে ভাবল, আজ রাতেই মন্তির সাথে কথা বলতে হবে। কালচিনীর বাড়ি তৈরী করতে কত টাকার এস্টিমেট বানানো হয়েছে সেটা এখনও সে জানতে পারেনি। তাই আব্দুলের কথার জবাবে সে বলল, “সেটা আমি বারো তারিখ সকালে যখন তুই আমার বাড়ি যাবি তখনই বলে দেব। আর ক্যাশটা সতের তারিখে তোর হেপাজতেই রাখবি। আঠেরো তারিখে আমি তোকে ফোন করে জানিয়ে দেব সেটা কখন কোথায় নিয়ে যেতে হবে”।
কথা শেষ হতেই পরিতোষের মোবাইল বেজে উঠল পকেটের ভেতর। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখল “মুন ডার্লিং কলিং”। মানে সীমন্তিনীর ফোন। কিন্তু কলটা রিসিভ না করে সে রিজেক্ট করে দিয়ে ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল, “হ্যাঁ, বল, আর কিছু বলবি”?
আব্দুল একটু মাথা নিচু করে ভেবে বলল, “স্যার বলছিলাম যে সতেরো তারিখে ক্যাশটা না হয় আমার হিফাজতেই রাখব। আর পরদিন সেটা আপনার ডেরাতেও পৌঁছে দিতে পারব। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু স্যার, এমাউন্টের ব্যাপারটা যদি বারো তারিখের আগেই আমাকে জানিয়ে দিতে পারতেন তাহলে আমার পক্ষে একটু সুবিধে হত। মানে অপারেশনটার ফাইনাল শেপ দিতে একটু সুবিধে হত”।
পরিতোষ একটু চিন্তিত ভাবে বলল, “বুঝতে পেরেছি বুঝতে পেরেছি রে। কিন্তু আসলে হয়েছে কি জানিস, আমি তো ভেবেছিলাম ফার্স্ট স্টেজের কাজটা করতে অন্ততঃ মাস খানেক সময় লেগে যাবে। তাই ধীরে সুস্থে সব কিছুর ফাইনাল শেপ বানাতে পারব। কিন্তু কাজটা যে শেখরের টিম এত তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে পারবে সেটা একেবারেই ভাবিনি। আর ওদের কাজটা শেষ হয়ে গেছে বলেই সিক্রেট সার্ভিসের অফিসারেরা আর দেরী করতে চাইছেন না। তারা তো কাল পরশুর মধ্যেই তাদের অপারেশনটা করতে চাইছিলেন। আমার অনুরোধে তবু সাতদিন দেরীতে করতে রাজী হয়েছে। তাই আমার সবগুলো অপারেশন তাদের অপারেশন শুরু করবার আগেই শেষ করতে হবে। নইলে আমার উদ্দেশ্যটা পূর্ণ হবে না। তাই তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে আমাকেও। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করছি তোকে যত তাড়াতাড়ি সেটা জানিয়ে দিতে পারি। আচ্ছা এবার তুই ঘরে যা। আমিও রওনা দিই আর দেরী না করে। আজ রাতেই আমাকে আরও কয়েকটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ সারতে হবে”।
______________________________