Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 173)

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই তুই তো অভিমানীর মত কথা বলছিস রে। দ্যাখ বাড়ির কেউ তো এখনো এ ব্যাপারে কিচ্ছুটি জানে না। সতু তো কাউকেই কিছু জানায়নি। মেয়ের বাড়ির লোকেরাও ওদের ব্যাপারটা জানে কি না তাও আমি জানিনা। কিন্তু আমি যখন জানতে পেরেছি, মানে সতু নিজেই যখন আমাকে কথাটা জানিয়েছে, তখন কাউকে কিছু না বললেও আমাকে তো আমার ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ খবর করা উচিৎ। আর আমাদের বাড়ির লোকেরা আমার পরামর্শ যে কেন যেচে চাইতে যাবে না, এর কারন আর কেউ জানুক বা না জানুক তুই তো খুব ভাল করেই জানিস দাদাভাই। কিন্তু এতে তাদের তো কোনও দোষ নেই রে। দোষ যে পুরোটাই আমার। আর অপরাধী যে আমিই এটা বুঝেই তো আমি নিজেকে শাস্তি দিয়ে যাচ্ছি রে বছরের পর বছর। তুই ও নিয়ে কেন অভিমান করছিস তাদের ওপর। বাড়ির সকলেই যে তোকে কতটা ভালবাসে তা কি আজ আমায় নতুন করে তোকে বলতে হবে রে? আর রচু তো ওবাড়ির সকলের চোখের মণি। তোরা দু’জন নেই বলে বাড়ির সবাই হাসতে ভুলে গেছে। আচ্ছা, ও সব কথা থাক এখন। সতুর ব্যাপারটাও আপাততঃ তোরা সবাই ভুলে থাক। আমার পক্ষে কতটুকু কি করা সম্ভব সেটা আমি দেখব। তুই শুধু এ ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলিস নে। আর শোন দাদাভাই, আমার অন্য ফোনে আরেকটা কল এসেছে রে ছাড়ছি এখন। রাতে কথা বলব। তবে অর্চু আর পরির ব্যাপারটা নিয়ে তোরা কিন্তু এখন আর কাউকে কিছু জানাস না প্লীজ। আচ্ছা ছাড়ছি রে এখন, বাই” বলে লাইন কেটে দিল।

ইচ্ছে করেই সীমন্তিনী ফোনটা কেটে দিল। কারন কথায় কথায় রতীশ এমন একটা প্রসঙ্গ তুলে ফেলেছিল, আর আবেগের ঘোরে সে নিজেও সে প্রসঙ্গ টেনেই কথা বলতে বলতে ভুলে গিয়েছিল প্রসঙ্গটা তার মনের গভীরতম স্থানে সমাধিস্থ করে রেখেছে সে বহু বছর আগে। সে প্রসঙ্গটা এখন সে নিজেই চিরতরে ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু যে ব্যাপারটাকে সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে সে তার মনের মণিকোঠায় সাজিয়ে তুলেছিল সে স্মৃতি যে আমৃত্যু সে ভুলতে পারবে না, এটাও সে ভালভাবেই জানে। তবু ভুলে থাকবার চেষ্টা তো তাকে করতেই হবে। সে বছরের পর বছর ধরে সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। নইলে অনেক ক’টা জীবনের সুখ শান্তি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সবার আগে এমন দুটো জীবন ছাড়খাড় হয়ে যাবে, যে দুটো জীবনই এখন সীমন্তিনীর প্রাণ ভোমরা।
 

********************

অফিস থেকে বেরোবে বেরোবে ভাবতেই পরিতোষের পার্সোনাল নাম্বারে ফোন এল। তার চেম্বারে আর কেউ নেই বলে সে কলটা রিসিভ করল। ও’পাশ থেকে বিপ্লবের কথা শোনা গেল, “স্যার একটা ইনফরমেশন দেবার ছিল”।

পরিতোষ উঠে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে বলল, “হু, বল”।

বিপ্লব চাপা গলায় বলল, “টার্গেট থ্রির বাড়ির অপারেশনটা ওভার হয়ে গেছে। ডকুমেন্টগুলো আমার হাতে চলে এসেছে। কবে কখন দেব আপনাকে”?

পরিতোষ মনে মনে খুব খুশী হয়ে বলল, “গুড জব। আচ্ছা শোন, রাত ঠিক ন’টায় তুই ডকুমেন্টসগুলো সহ রেস্টুরেন্টের বাইরে কার পার্কিংএ আমার জন্য ওয়েট করবি। আমি ডিনার সেরে বেরিয়ে তোকে আমার গাড়িতে তুলে নেব। ওকে”?

বিপ্লব বলল, “ওকে স্যার। তাই হবে”।

পরিতোষ সাথে সাথেই আবার কিছু একটা ভেবে বলল, “আচ্ছা শোন। কিছুক্ষণ বাদে আমি শেখরকে ফোন করছি। তখন যা বলব তাই করিস। বাই” বলে ফোন কেটে দিল। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি হাকিয়ে দিল আব্দুলের গ্যারেজ অভিমুখে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবল, শেখর আর বিপ্লব কাজটা অবিশ্বাস্য কম সময়ে কমপ্লিট করে ফেলেছে। অবশ্য এতে সবচেয়ে বেশী ক্রেডিট কামিনীদির। কামিনীদের মত মেয়ে মহিলারা নিজেদের ইজ্জত আবরু সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে নিজেদের কলঙ্কের পাকে ডুবিয়ে দিয়ে পরিতোষের কথায় সমাজকে কলঙ্ক মুক্ত করতে কত কিই না করছে। অথচ এরাও আইনের চোখে অপরাধী। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সমাজকে কলুষিত করবার অপরাধে এদের বছরের পর বছর জেল হাজত বাস করতে হবে। এবার এ মহিলাকে খুব ভাল একটা উপহার দিতে হবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই নিজের গোপন ফোন থেকে সে শেখরকে ফোন করে বলল, “তোর ওই ফার্ম হাউসের অপারেশনের খবর কি রে? কদ্দুর এগোল ব্যাপারটা”?

শেখর বলল, “প্রোগ্রেস বেশ ভাল স্যার। ইনস্ট্রুমেন্টগুলো প্লান্ট করবার পর গত পাঁচদিনে খুব ভাল কাজ হয়েছে। দুটো এপিসোড রেকর্ডেড হয়েছে। মনে হয় সেটাই সাফিসিয়েন্ট হবে। তবে আপনি চাইলে সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আরও দু’ একটা এপিসোড নিশ্চয়ই রেকর্ড করা যাবে। কিন্তু স্যার, ওই সিক্রেট চেম্বারের হদিশটা এখনও ঠিক যোগার করে উঠতে পাচ্ছি না। তবে সে চেম্বারেও যে গত পাঁচদিনের মধ্যে দু’বার অ্যাকেসেস হয়েছে সেটা বুঝতে পারলেও, আর আমাদের সবগুলো ইনস্ট্রুমেন্টই খুব ভাল ফাংশন করা সত্বেও চেম্বারে ঢোকবার সিস্টেমটা কিছুতেই ধরা পড়ছে না। ওটা নিয়েই চিন্তায় আছি”।
 

পরিতোষ একটু স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলল, “আচ্ছা শোন, দুটো এপিসোড যখন রেকর্ড করতে পেরেছিস, তখন আর সময় নষ্ট না করে ইনস্ট্রুমেন্টগুলো এবারে খুলে নিয়ে আয়। আর দরকার নেই। আর আমার হাতে সময়ও বেশী নেই। চেম্বারের ব্যাপারে একটা সলিড লিড আমার হাতে এসে গেছে। তাই ওখানে সেকেন্ড অপারেশনে কোনও অসুবিধে হবে না। আর এ ব্যাপারে এসিবি আর ইডির অফিসারদের সাথেও আমার কয়েকটা বৈঠক হয়ে গেছে। তারাও আমার রিপোর্টে খুব খুশী হয়েছেন। আর এবারে তাদের অপারেশন সাকসেসফুল হবেই, এ ব্যাপারে তারা যথেষ্ট আশাবাদী। তাই তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ফার্ম হাউসের এপিসোড গুলোর সিডি রেডি করে ফ্যাল”।

শেখর বলল, “সেটা তো স্যার দু’ তিনদিনের মধ্যেই রেডি করে আপনার হাতে তুলে দিতে পারব। কোন প্রব্লেম হবে না”।

পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে, তবে সেটাই কর। আর ব্যাপারটা পুরোপুরি সিক্রেট আছে তো? টার্গেট কোন কিছু আঁচ করতে পারেনি তো”?

শেখর জোর গলায় বলল, “একদম নিশ্চিন্ত থাকুন স্যার। আপনার প্ল্যানে কোনদিন কি কোনও ত্রুটি থাকে? আর ইমপ্লিমেন্টেশনেও পুরোপুরি সিক্রেসী মেইন্টেন করা হয়েছে। কাক পক্ষীটিও টের পায়নি। আপনার কাছেই তো সব শিখেছি স্যার। ও ব্যাপারে আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন স্যার। আমাদের ওপর আপনার যে ভরসা আছে, সেটা আমরা কিছুতেই নষ্ট হতে দেব না”।
 

পরিতোষ বলল, “বেশ। তাহলে অফিসের আর ফার্ম হাউসের কাজটা তো সারা হয়ে গেল। তা হেল্পারদের পেমেন্টের ব্যাপারে কি বলেছিস”?

শেখর বলল, “সেটা নিয়েও ভাববার কিছু নেই স্যার। যারা আমাদের পার্মানেন্ট নেটওয়ার্কের বাইরের, অমন তিনজনকে পেমেন্ট করে দিতে পারব আমি। আর আমার গ্রুপে যারা আছে তারা তো আমাদের লোকই। এদের পেমেন্ট ফাইনাল অপারেশনের পরে দিলেই চলবে। কোনও তাড়া নেই এ ব্যাপারে। আপনি মিছে টেনশন নেবেন না”।
 

পরিতোষ বলল, “হু ঠিক আছে। তোদের কাছ থেকে এমন সাপোর্ট না পেলে আমি একা কি এসব কিছু করতে পারতাম রে? আচ্ছা শোন, আমি বিপ্লবকে একটু আগেই বলছিলাম যে ও যেন আমার সাথে রাত ন’টায় দেখা করে। লোকেশানও বলে দিয়েছিলাম। তুই বরং ওকে এখনই জানিয়ে দে যে আজ আমার সাথে দেখা করবার দরকার নেই। অফিসের ডকুমেন্টস তো আমার হাতে আগেই এসে গেছে। বাড়ির ডকুমেন্টস গুলো তো তোদের কাছে রেডিই আছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে তোরা ফার্ম হাউসের সিডিগুলো রেডি করে ফ্যাল। তাহলেই তোদের কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে। পরশু আমার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিস। ইন দা মিন টাইম, অহেতুক সময় নষ্ট না করে আমি সেকেন্ড ফেজের অপারেশনের শিডিউলটা বানিয়ে ফেলি। বুঝেছিস”?
 

শেখর বলল, “ঠিক আছে স্যার, বেস্ট অফ লাক এন্ড গুড নাইট”।

পরিতোষও “গুড নাইট” বলে ফোন কেটে দিল। আব্দুলের গ্যারেজ সামনে দেখেই পরিতোষ গাড়ির গতি কমিয়ে গাড়িটাকে গ্যারেজের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। একটা ঘরের ভেতর থেকে আব্দুল প্রায় ছুটে বেরিয়ে এল। পরিতোষ গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই আব্দুল উচ্ছ্বসিত কিন্তু চাপা গলায় বলল, “স্যার এদিকে আসুন” বলে পরিতোষের গাড়ির সীটের ওপর রাখা দুটো বড় বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে পরিতোষকে একদিকে নিয়ে চলল। একটা নোংড়া দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আব্দুল আমতা আমতা করে বলল, “স্যার কেন যে আপনি ঘরে যেতে চাইছেন না ... এ ঘরটা তো খুবই নোংড়া। আপনি খবর দেবার পর তড়িঘড়ি কিছুটা পরিষ্কার করেছি, কিন্তু তবুও...... তবে পেছনে বেরিয়ে যাবার রাস্তাটা ঠিক আছে”।

পরিতোষ নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল, “ও নিয়ে ভাবিস না। সাবধানের মার নেই, জানিস তো”? বলে আব্দুলের হাত থেকে একটা প্যকেট নিজের হাতে নিয়ে বলল, “আমি বেরিয়ে যাবার পর প্রীতিদিকে এ প্যাকেটটা দিবি। আর বলিস আমি ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার ভেতর তোদের এখানে আসছি। আর যেটা বলেছিলাম সেটা রেডি আছে তো”?
 

আব্দুল চাপা গলায় বলল, “সব রেডি আছে স্যার। আপনি এ ঘরের পেছনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। গলি ধরে বাঁদিকে আশি ফুটের মত যাবার পর গলির পাশেই একটা বড় পাথর দেখতে পাবেন। সেখানে দু’মিনিট দাঁড়াবেন। তারপর হেলমেট পড়া দু’জন আপনাকে নিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে যাবে। ওরা কিন্তু বাংলা বোঝে না স্যার। ওদের সাথে হিন্দিতে কথা বলবেন। আমি ওদেরকে ভালভাবে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি। ওদের সাথে এগিয়ে গেলে তিন মিনিটেই ও’দিকের বড় রাস্তায় পৌঁছে যাবেন। সেখানেই আপনার জন্য বাইক রাখা আছে। ওই দু’জন আপনাকে গার্ড দেবে। ওরা সব রকম ভাবে তৈরী হয়ে আছে। আর ফেরবার পথে এ রাস্তাতেই ফিরে আসবেন। আমি একঘন্টা বাদেই এ ঘরে এসে বসে আপনার অপেক্ষায় থাকব”।

পরিতোষ আব্দুলের কাঁধে থপথপিয়ে বলল, “প্রীতিদি যেন তার হাতের ওই স্পেশাল ডালটা অবশ্যই বানায়, বলে দিস। আমি আসছি” বলে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। আর আব্দুলও পরিতোষের দেওয়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে উল্টোদিকে এগিয়ে গেল।
 

গ্যারেজের অফিস ঘরে এসে আব্দুল তার এক হেল্পারকে ডেকে বলল, “স্যারের গাড়িটা ভাল করে চেক করে দ্যাখ কোনও গড়বড় আছে কিনা। চাবি ওখানেই আছে। আর ভাল করে পরিষ্কার করে রাখ। আমি একটু ঘর থেকে আসছি” বলে পরিতোষের দেওয়া ব্যাগটা হাতে নিয়ে তার অফিস ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

নিজের ঘরে এসে আব্দুল স্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাক দিয়ে বলল, “কোথায় গেলিরে মেরে মুন্নে কি মা”?

ভেতরের একটা ঘর থেকে বছর পঁয়ত্রিশের মাঝারি গড়নের মহিলা বেরিয়ে আসতেই আব্দুল হাতের প্যাকেটটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে, স্যার তোর জন্যে কি পাঠিয়েছে দ্যাখ। আর সে রাত ন’টার দিকে আসছে। তোর হাতের ওই স্পেশাল মসুরি ডালটা বানাতে বলেছেন”।

এ’কথা শুনেই মহিলার চোখ মুখ আনন্দে যেন ঝলমল করে উঠল। আব্দুলের হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, “সত্যি বলছ তুমি? ভাই এসেছে? ইশ কতদিন পর ওকে দেখব! গত বছর সেই রাখী পুর্ণিমার পর ওকে আর দেখিনি। ইশ, আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু হাতে তো বেশী সময় নেই গো। ভাই তো আর ঘন্টা দেড়েক বাদেই এসে পড়বে। না না, আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে রান্না শুরু করি গিয়ে। এই শোনো, খোকা এখন ঘুমুচ্ছে। সারাটা বিকেল সন্ধ্যে ছুটোছুটি করেছে। একটু আগে অনেক চেষ্টা করে ঘুম পাড়ালাম। নইলে ওর মামা যখন আসবে তখন ঘুমিয়ে পড়ত। তাই তুমি কিন্তু অন্য দিনের মত ওকে এখন আর জাগিও না। একটু ঘুমোতে দাও। ন’টার দিকে ওকে ওঠাব। তুমি বরং তোমার অফিসে গিয়েই বস এখন। আমি রান্নাটা সেরে ফেলি ততক্ষণে”।

আব্দুল স্ত্রীকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “আরে পাগলী, তোর ভাই তোর জন্যে কি পাঠিয়েছে সেটা তো একটু দেখে যা”।
 

প্রীতি নিজেকে স্বামীর হাতের বাঁধন থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “ও’সব পরেও দেখা যাবে। পালিয়ে তো আর যাচ্ছে না। ভাইয়ের উপহারের ওপর আমার কোন লোভ নেই। লোভ আছে শুধু তাকে দুচোখ ভরে দেখার। আমি আগে ভাইয়ের খাবার আয়োজনটা সেরে ফেলি। খোকার ঘুম ভেঙে গেলে আবার ঝামেলা হবে” বলেই হঠাৎ ভাবুক গলায় বলল, “নিজের মায়ের পেটের ভাইটা তো আমার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মরল। প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাকে হাসপাতাল অব্দিও নিয়ে যেতে পারিনি। ভগবানের অশেষ দয়ায় সেদিনই এ ভাইটাকে পেয়েছিলাম। নইলে তো আমার মরে যাওয়া ভাইটার সৎকারও করতে পারতাম না আমি। তারপর থেকে তো ওকেই আমার ভাই বলে মেনে আসছি। আর আমাকে রক্ষা করবার জন্যে ভাই কত কিছুই না করেছে। নোংড়া নর্দমা থেকে আমাকে উদ্ধার করেছে। তারপর তার দয়াতেই তো আমি তোমাকে পেয়েছি। তোমাকেও তো সে কোন জায়গা থেকে কোথায় উঠিয়ে এনেছে। আজ আমরা এই যে সুখের দিনটা দেখছি, ভাই আমাদের জীবনে না এলে এসব কি আমাদের কপালে জুটত”? বলতে বলতে প্রীতির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জলের ধারা বইতে লাগল।

আব্দুল প্রীতির চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “আরে পাগলী, স্যার যে তোর ভগবান আর আমার আল্লা রে। কিন্তু এখন এভাবে কাঁদলে তোর ভাইকে খাওয়াবি কি? তোর চোখের জলের শরবৎ”?

প্রীতি হঠাৎ সাবলীল হয়ে বলল, “ধ্যাত অসভ্য কোথাকার। আচ্ছা ছাড়ো এবার। আমি কিচেনে যাচ্ছি। আর শোনো, খোকা উঠে পড়লে কিন্তু এখন তুমি সামলাবে। রান্না শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিন্তু আর ওকে নিতে পারব না” বলতে বলতে ভেতরের একটা দরজার দিকে এগিয়ে গেল। আব্দুল পাশের একটা দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল খাটের ওপর বাচ্চাটা ঘুমোচ্ছে। পা টিপে টিপে সে ঘরের ভেতর ঢুকে খাটের ওপর হাতের প্যাকেটটা রেখে আবার নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে তার গ্যারেজের দিকে এগিয়ে গেল।
 

আর ওদিকে পরিতোষ ওই নোংড়া ঘরে ঢোকবার মিনিট পনের বাদে এক পাঞ্জাবীকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল ওই ঘরটার পেছনের দরজা দিয়ে। ট্রাডিশনাল পাঞ্জাবী পোশাকে কেউই তাকে চিনতে পারবে না এক আইপিএস অফিসার হিসেবে। পেছনের গলি বরাবর হাঁটতে হাঁটতেই কোমড়ে হাত দিয়ে রিভলবারের পজিশনটা দেখে নিল। আব্দুলের কথা মতই একসময় বড় পাথরটার কাছে এসে দাঁড়াল। ঠিক দু’মিনিট পরেই হেলমেট পড়া দু’জন লোক এসে তাকে ঈশারা করতেই সে তাদের অনুসরন করে এগিয়ে গেল। বড় রাস্তায় পৌঁছতেই সঙ্গের হেলমেট পরা লোকদুটোর একজন একটা চাবি পরিতোষের হাতে দিয়ে একটা বাইক দেখিয়ে বলল, “আপ ইস বাইক সে চলে যাইয়ে। হম দোনো পচাশ মিটারকি দুরি রখকর আপকো ফলো করেঙ্গে” বলে পকেট থেকে একটা ব্লুটুথ ডিভাইস পরিতোষের হাতে দিয়ে বলল, “আপকা ফোনকে সাথ ইয়ে জুড় লিজিয়ে। হমসে কন্টাক্ট বনা রহেগা”।
 

পরিতোষ নিজের পকেটের একটা নতুন মোবাইলের সাথে ব্লুটুথ সিঙ্ক্রোনাইজ করে ডিভাইসটাকে নিজের কানে ভাল করে সেট করে হাত ঘড়িতে সময় দেখল রাত সাতটা বেজে দশ। পকেটের বাকি দুটো মোবাইল সুইচ অফ করে বাইক স্টার্ট করে একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখবার চেষ্টা করেও তেমন কাউকে দেখতে পেল না। ঠিক তখনই তার কানে লাগানো ডিভাইসে শুনতে পেল, “পিছে মুঢ়কে দেখনে কা জরুরত নহী হ্যায়। হম আপকে পিছে তৈয়ার বৈঠে হ্যায়। আপ নিশ্চিন্ত হোকর আগে বঢ়িয়ে”।
 

প্রায় আধঘণ্টা হাইওয়ে দিয়ে বাইক চালিয়ে আসবার পর বড় রাস্তা ছেড়ে একটা গলির ভেতর ঢুকে একশ মিটার যাবার পর পরিতোষ এক জায়গায় বাইক থামাল। সে বাইকটা রাস্তার পাশে ভাল মত পার্ক করতে করতে দেখল তাকে ফলো করে আসা দুটোর ভেতর একটা বাইক প্রায় পঞ্চাশ মিটার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্য বাইকটা পরিতোষকে ছাড়িয়ে আরও পঞ্চাশ মিটার এগিয়ে গিয়ে থামল। পরিতোষ মনে মনেই এদের তারিফ না করে পারল না। এমন সময় আবার কানের ব্লুটুথে শোনা গেল, “আপ নিশ্চিন্ত হোকর অপনা কাম খতম করকে আইয়ে। হম ইয়েহি আপকা ইন্তেজার করেঙ্গে। ঔর বিল্কুল টেনশন মত লিজিয়ে। অভি তক সব ঠিক হ্যায়। আগে অগর কুছ হোগা ভি তো হম সম্ভাল লেঙ্গে। সির্ফ ইতনা ইয়াদ রখিয়ে কি অগর বাহার কিসি তরহ কি শোর শরাবা ধমাকা ইয়া ফায়ারিং কা আওয়াজ সুনাই দে তো কোই ভি বিল্ডিং সে বাহার মত নিকলিয়েগা। বাহার হম সব কুছ সম্ভাল লেঙ্গে। ঔর সব কুছ কা মতলব সব কুছ। আপকো জরুরত কে মোতেবিক ইনফরমেশন দে দিয়া জায়েগা। ওকে? অব আপ অন্দর চলে যাইয়ে। ঔর হাঁ, বিল্ডিং কে অন্দর ঘুসনে কে বাদ কান সে ব্লুটুথ হটা লিজিয়েগা ঔর ফোন সুইচ অফ কর লিজিয়েগা”।

পরিতোষ নিশ্চিন্ত হয়ে আধো অন্ধকার বিল্ডিঙের ভেতর ঢুকে গেল। অনেক ক’টা প্যাসেজের অলি গলি পেরিয়ে সে একটা দরজায় ঠক ঠক ... ঠক ঠক ঠক করে বিশেষ ভাবে টোকা দিল। প্রায় সাথে সাথেই ঘরের দরজাটা খুলে গেল। হাল্কা নীলাভ আবছা আলোয় ভরা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়তেই দরজাটা আবার কেউ বন্ধ করে দিল। আবছা আলোয় চোখটা সয়ে যেতেই পাশে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখতে পেল। সে লোকটা প্রায় ফিসফিস করে বলল, “এখানে আলো জ্বালানো বারণ আছে স্যার। আপনি আমার পেছন পেছন আসুন। আর কান থেকে ব্লুটুথ ডিভাইসটা খুলে পকেটে রেখে দিন, বেরিয়ে যাবার সময় আবার এখানে এসে ওটা লাগিয়ে নেবেন”।

পরিতোষ ব্লুটুথ ডিভাইসটা খুলে পাঞ্জাবীর পকেটে রেখে লোকটার পেছন পেছন এগোতে লাগল। একসময় একটা লিফটে ঢুকে তারা দুজন নীচের দিকে নামতে লাগল। বোঝাই যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে যাচ্ছে তারা। প্রায় মিনিট দুয়েক বাদে লিফট থামতে পরিতোষ আন্দাজ করল তারা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে কম পক্ষেও পঞ্চাশ ষাট মিটার নিচে নেমে এসেছে। লিফট থেকে বেরিয়েই ঝকঝকে আলোয় ভরা একটা করিডোর দেখতে পেল। এবার পাশের লোকটার মুখের দিকে চাইতেই ঝকঝকে সিভিলিয়ান পোশাক পরিহিত এক যুবককে দেখতে পেল সে। প্রায় তারই বয়সী। যুবকটি পরিতোষের সাথে হ্যান্ডসেক করে বলল, “স্যার আমি অনির্বান দত্ত। এই কেসটা আমাকেই ফ্রন্টফুটে থেকে লিড করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনি আমার অফিসিয়াল ডেজিগনেশনটা প্লীজ জানতে চাইবেন না। সেটা ডিসক্লোজ করা আমাদের সার্ভিস রুলের বাইরে। আর এটাও জানিয়ে রাখি, অনির্বান দত্ত আমার আসল নাম নয়। বিভিন্ন কেসে আমাদের বিভিন্ন নামে পরিচিতি দিতে হয়। আপনার কাছে আমি তাই অনির্বান দত্তই। এবার আমি আপনাকে কনফারেন্স রুমে নিয়ে যাব। সেখানে অন্যান্য সবাই এসে গেছেন। তাদের সংগে পরিচিত হবার সময়েও এটা মনে রাখবেন যে তাদের আসল নাম পরিচয় আপনি জানতে পারবেন না। এ কেসটা শেষ হবার পরেই তাদের সকলের নাম আবার পাল্টে যাবে। আমারও তাই। এবারে চলুন। আমাদের মিটিং শুরু করা যাক। আসুন” বলে তাকে একটা বড় কনফারেন্স রুমের মধ্যে নিয়ে গেল।

প্রায় জনা তিরিশেক লোক সেখানে পরিতোষের জন্যই অপেক্ষা করছিল। বেশ কয়েকজনের কানেই ব্লুটুথ ডিভাইস লাগানো দেখা গেল। কয়েকজনের হাতে ওয়াকিটকিও দেখা গেল। তাদের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর কনভেনারের ঈশারায় মিটিং শুরু হল।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 19-03-2020, 03:12 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)