Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 169)

মহিমা একটু হেসে বলল, “মানুষের জীবন খুবই বিচিত্র জিনিস মন্তি। তোমার মত সহজ সরল একটা মেয়ে এ’সব হয়ত ভাবতেও পারবে না। কিন্তু সারা পৃথিবীতেই এমন স্ত্রী বা গৃহবধূর অভাব নেই, যাদের দেহের যৌবন বা শরীরের ক্ষিদে এখনও ফুরিয়ে যায়নি, কিন্তু তাদের স্বামীদের শরীরে বয়সের প্রভাবেই হোক বা অন্য যে কোন কারনেই হোক, তেমন যৌন ক্ষুধা থাকে না। তাই তারা আর আগের মত নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি সেক্সুয়ালি এট্রাক্টেড থাকে না। ক্ষেত্র বিশেষে কারন আলাদা আলাদা হলেও, সন্তানরা বড় হয়ে গেলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সেক্স রিলেশান আর আগের মত থাকে না। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় নাইনটি পার্সেন্ট মহিলার মধ্যেই শারিরীক ক্ষুধা থেকেই যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে তো এ ক্ষুধা আগের চেয়েও বেশী হয়ে থাকে। তখন এমন পয়সাওয়ালা মহিলারা অনেকেই তাদের পছন্দের নানা বয়সের ছেলে ছোকড়া বা পুরুষের সাহায্যে নিজেদের যৌনক্ষুধা মেটাতে চায়। এখন ধরো এমনই একজন মহিলা, যার বয়স ধরো পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের ভেতর, সে আমার কাছে একজন মেল এসকর্ট চাইল, যার শরীর স্বাস্থ্য ভাল হবে, অবিবাহিত, আর বয়স হবে কুড়ি থেকে পঁচিশের মধ্যে। আর তার জন্যে সে আমাকে ধরো কুড়ি হাজার টাকা দেবে। আবার আরেকদিকে একটা বাইশ তেইশ বছর বয়সী ভাল স্বাস্থ্যের এক অবিবাহিত পুরুষ আমার কাছে এমন একজন ফিমেল এসকর্ট চাইল, যার বয়স হতে হবে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। আর অন্যান্য স্পেসিফিকেশনগুলোও আমাকে বুঝিয়ে দিল যে অমন একজন মহিলাকে পেলে সে আমাকে কুড়ি হাজার দেবে। তখন আমি যদি দেখি ওই ছেলেটি যা চাইছে তা ওই মহিলার মধ্যে আছে। আবার মহিলাটিও যেমনটি চাইছে, ছেলেটি সে রকমেরই, তাহলে আমি তাদের দু’জনের মধ্যেই ডিলটা করে ফেলি। তখন এক ডীলেই আমি দু’তরফ থেকে মোট চল্লিশ হাজার টাকা পেয়ে যাচ্ছি। আর আমার এজন্সীর এসকর্টদের আমাকে যে কমিশন বা শেয়ার দিতে হয়, সেটাও আমাকে দিতে হয় না। তাই এমন ক্ষেত্রে আমার ইনকাম দ্বিগুণের চেয়েও বেশী হয় কখনো কখনো। ডাবল ইনকাম মানে এটাই। তবে ব্যবসা ছেড়ে দিলে এদের কাউকে নিয়ে আমাকে আলাদা ভাবে কিছু ভাববার দরকার নেই। তারা তাদের প্রয়োজন আগের মতই মিটিয়ে যেতে পারবে। শুধু মেডিয়েটর হিসেবে আমিই তাদের ডিলটায় থাকব না। তারা অন্য এজেন্সীর মাধ্যমেই সেটা করতে পারবে। আমার চিন্তা শুধু ওই আটচল্লিশ জন অসহায় নিরুপায় মেয়েগুলোকে নিয়েই”।

সীমন্তিনী এবার বলল, “এবার ব্যাপারটা বুঝলুম। কিন্তু বৌদি, তুমি যদি এ ব্যবসাটা ছেড়ে দেবার ব্যাপারে সত্যিই সিরিয়াস হও, তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি”।

মহিমা বেশ ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, “কী পরামর্শ মন্তি? বলো বলো”।

সীমন্তিনী ধীরে সুস্থে বলল, “দ্যাখো বৌদি, তুমি যদি ব্যবসাটা সত্যিই ছেড়ে দিতে চাও, আর তার পাশাপাশি অসৎ ব্যবসায় কামানো তোমার ব্যাঙ্কে জমানো টাকা গুলোও ভাল কাজে খরচ করতে চাও, তাহলে একটা ভাল পরামর্শ তোমাকে আমি দিতে পারি”।

মহিমা খুব খুশী আর আগ্রহের সাথে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ মন্তি, আমি তো তোমাকে আগেই বললাম যে ওই টাকাগুলো নিয়ে আমি কী করব, সেটাও বুঝতে পাচ্ছি না। আমি ব্যবসার সাথে সাথে ওই টাকাগুলোও ছেড়ে দিতে রাজি আছি। কিচ্ছু চাই না আমার। শুধু আমার মেয়েগুলোকে যদি কোন বিপদের মুখে ফেলতে না হয় তাহলেই আমি খুশী। তুমি প্লীজ বলো না, কী তোমার সাজেশান”?
 

সীমন্তিনী শান্ত ভাবেই বলল, “বৌদি শোনো। তুমি তো ওই আটচল্লিশ জন মেয়ে মহিলার কথা ভেবেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না, তাই না? আমি তোমার কথাই মেনে নিচ্ছি যে ওরা কেউ সৎপথে থেকে পয়সা উপার্জন করতে পারেনি, তাই তোমার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল। আর আমার মনে হয় চাকরি বাকরি না পেলেও ওদের হাতে যদি তখন টাকাপয়সা থাকত, তাহলে নিজেরাই ছোটখাটো ব্যবসা ট্যবসা করে সৎপথে উপার্জন করতে পারত। হ্যাঁ, এটা মানছি যে, তাদের যতটুকু প্রয়োজন ছিল, ততটুকু উপার্জন হয়ত তারা করতে পারত না। কিন্তু এখন তুমি তো তাদের পরামর্শ দিতে পার, যে তারা এ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভাল পথে নিজেরাই কোন ব্যবসা শুরু করুক। যে যেটা করতে চায়, তাই করুক। আর মেয়েরা তো খুব বেশী পড়াশোনা না জানলেও ডিজাইনিং, টেলারিং, বুটিক, বিউটি পার্লার, কসমেটিক্সের ব্যবসা, বিভিন্ন ধরণের কুটীরশিল্প, গারমেন্টসের ব্যবসা, আর্ট কলেজ, ঘরোয়া পদ্ধতিতে রান্নার মশলা বানানো এবং আরও কত কত কাজ করছে। আর যারা কিছুটা বেশী লেখাপড়া করেছে তারাও নানা ধরণের কাজ করতে পারে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা আর সুযোগের। আর সুযোগ হচ্ছে ব্যবসা শুরু করবার একটা জায়গা আর মূলধন। কিন্তু সবার আগে দরকার তাদের নিজেদের মনে ভাল ভাবে ভাল কাজ করে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা। সেটা থাকলে আর সব বাঁধাই তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে তোমার সাহায্যে”।

মহিমা সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিকই বলেছ তুমি মন্তি। আজকাল মেয়েরা তো সব ক্ষেত্রেই কাজে নামছে। এদেরকেও একটু সাপোর্ট দিলে মনে হয় এরাও সকলেও কিছু না কিছু করে খেতে পারবে। তবে মনে মনে ভালভাবে থাকতে পারার ইচ্ছে কিংবা সৎপথে বাঁচবার ইচ্ছে কিন্তু এদের সবার মনেই আছে। কিন্তু মন্তি, ব্যবসা শুরু করবার মূলধন তারা কোথায় পাবে? ওরা একেকজন মাসে প্রায় একলাখের মত উপার্জন করে। তা থেকে নিজেদের এবং সংসারের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে কেউ কেউ হয়ত কিছুটা সেভিংসও করতে পারে। তবু নতুন একটা ব্যবসা খুলতে গেলে যত টাকার প্রয়োজন হতে পারে তত টাকা ওরা নিশ্চয়ই সঞ্চয় করতে পারে নি। অবশ্য সব ব্যবসাতেই যে শুরুতেই কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়, তাও তো নয়। কম মূলধন নিয়েও অনেক ধরণের ছোটখাটো কাজ শুরু করাই যায়। তবে নতুন একটা ব্যবসা খুলে বসলেই যে তারা সাকসেসফুল হবে সেটাও তো ধরে নেওয়া যায় না। ব্যবসা করতে হলে ব্যবসার টেকনিকের সাথে সাথে নিজেদের স্কিল আর পরিশ্রমেরও প্রয়োজন হয়। তবে মনের ভেতর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে স্কিল আর টেকনিকও তারা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে বা শিখে উঠতে পারবে। আর নতুন একটা ব্যবসা খুললেই যে শুরু থেকেই সংসারের খরচ তারা মেটাতে পারবে, তাও নয়। একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। অন্ততঃ ছ’টা মাস সময় তো লাগতেই পারে। এই ছ’টা মাস তারা যদি সংসারের খরচ জুগিয়ে উঠতে পারে, তবে পরের দিনগুলোর জন্যে আর ভাবতে হবে না। কিন্তু প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে তাদের মূলধন”।

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “না বৌদি, আমি মনে করি, প্রথম ব্যাপারটা হচ্ছে সৎপথে থেকে ভাল কোন কাজ করবার মনের ইচ্ছা। নিজেদের মনের ভেতর সে তাগিদটা থাকতে হবে। আর মূলধন নিয়ে তাদের যে ভাবনা হবে, সে ভাবনার সমাধান তো তুমিই করে দিতে পার। তোমার ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা টাকা থেকেই তুমি নাহয় তাদের মূলধনের যোগান দেবে। এতে করে একদিকে তোমার অসৎ উপায়ে কামানো টাকার যেমন সদ্ব্যবহার হবে, তেমনি অন্যদিকে মেয়েগুলো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সমাজের সেবাও করতে পারবে। সমাজে মুখ উঁচু করে তারা চলতে ফিরতে পারবে। তবে তোমাকেও কিন্তু মনটাকে একটু শক্ত করতে হবে। শুধু ইমোশনালি সব কিছু ভাবলে হবে না”।

মহিমা বলল, “হ্যাঁ, তাই তো! এটা তো তুমি খুব সুন্দর একটা কথা বলেছ মন্তি! ব্যবসা শুরু করবার জন্য তাদের প্রত্যেককে দু’চার লাখ করে টাকা আমি দিতেই পারি। যাদের মূলধন একটু বেশী দরকার পড়বে, তাদেরকেও হয়ত আমি সাহায্য করতে পারব। আর সে টাকা তাদেরকে নয় সাহায্য হিসেবেই দেব আমি। কারো কাছ থেকে আমি সে টাকা আর ফিরিয়ে নিতে চাইব না কোনদিন। এভাবে আমি তো কখনও ভাবিই নি। ওদের ব্যবসার মূলধন যোগাবার মত যথেষ্ট টাকা তো আমার হাতেই আছে। যে টাকাগুলো ডিসপোজ করবার ব্যাপারে আমি কোন রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, সে রাস্তাও পাওয়া গেল। কিন্তু আবার আমাকে মানসিক ভাবে শক্ত হবার কথা কেন বলছ তুমি বোন”?

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “বৌদি, পৃথিবীতে যত লোক আছে, তাদের সকলেরই মানসিকতা এক রকমের হয় না তো? একেক জনের চিন্তা ভাবনা, ধ্যান ধারণা একেক রকমের হয়। তুমিই তো বললে, যে তারা একেকজন তোমার ব্যবসায় নেমে মাসে মাসে একলক্ষের মত টাকা কামায়। কিন্তু সৎপথে ছোটখাটো ব্যবসা করে তারা তো আর একলক্ষ টাকা মাসে উপার্জন করতে পারবে না। তাদের মাসিক আর্থিক আয় হয়ত দশ হাজার থেকে পনের হাজারের মধ্যে থাকবে। এ আয়েও কলকাতা শহরে একটা ছোট পরিবারের দিন সংকুলান হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাদের আয় তো অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এটা তারা সবাই মেনে নিতে পারবে না হয়ত। তাই তোমার প্রস্তাবে তারা হয়ত অনেকেই রাজি হতে চাইবে না। তুমি তাদের সৎপথে চলার উপদেশ দিলেও তারা সকলেই যে তোমার উপদেশ মেনে নেবে, এতোটা কিন্তু আশা করো না তুমি। তুমি মনে মনে শুধু এ ভাবনা নিয়েই খুশী থাকতে চেষ্টা করবে যে ওই আটচল্লিশজন মেয়েকে তুমি সৎপথে চালাবার প্রয়াস করেছিলে। তোমার প্রয়াসকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে কেউ যদি সত্যিই এভাবে ভাল পথে চলতে পারে, তবে তোমার প্রয়াস সার্থক হবার পাশাপাশি তারা নিজেরাও সমাজে ভালভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে। আর এটা পুরোপুরি নির্ভর করবে তাদের ওপরেই। অন্ধকার জগত ছেড়ে আলোয় ফিরে আসবার মরিয়া ইচ্ছে তাদের মধ্যে থাকলে, তারা নিশ্চয়ই তাতে সফল হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ যদি তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তোমার কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিয়েও ভালভাবে চলতে না চায়, বা না পারে, তাহলে তুমি মনে দুঃখ পাবে। আর সেজন্যেই তোমার মনকে শক্ত করবার কথা বলছি। তোমাকে শুধু এ সান্ত্বনা নিয়েই থাকতে হবে যে তুমি তাদের ভাল পথে ফিরিয়ে আনবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলে। তারা কেউ সত্যি সৎপথে ফিরে এল কি এলনা, তা নিয়ে তুমি কখনও ভাববে না। জানো তো, গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কী বলেছেন। তিনি বলেছেন “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন, মা কর্মফলহেতুর্ভুর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মিণি”। এর মানেটা জানো? এর মানে হচ্ছে, স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু বলে ভেবো না এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না। সোজা কথায় বলা যায়, কোন কাজের ফলের কথা না ভেবে সকলকে নিজের ধর্ম অনুসরন করে কাজ করে চলা উচিৎ। কাজটা করার দায়িত্ব যার যার, কিন্তু সে কাজের ফল কারুর ভোগ করতে চাওয়া উচিৎ নয়। কাজটা যে সে করেছে, এই তৃপ্তি নিয়েই সবাইকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই বলছি, কেউ যদি তোমার এতটা সাহায্যের পরেও এমন দেহব্যবসা করেই যেতে চায় বা করে যায়, তাহলে তখন তোমাকে ভেবে নিতে হবে যে তাদের মনে সদিচ্ছার অভাব ছিল। তখন তারা তাদের জীবন নিয়ে কী করবে না করবে সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বেশী টাকা উপার্জনের লোভে তারা অন্য কোন প্রোভাইডারের কাছেও যেতে পারে, বা নিজেরাই আলাদা ভাবে এ পাপ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। সেটা তো আর তুমি আটকাতে পারবে না। তবে সে’সব কথা জানতে পারলে তুমি দুঃখ পাবে। তাই তোমার মনকে শক্ত করে তুলতেই হবে। তুমি যে একটা ভাল প্রয়াস করেছিলে সেটা ভেবেই তোমাকে খুশী থাকতে হবে। বাকিটা নির্ভর করবে তাদের সদিচ্ছা আর প্রয়াসের ওপর”।

মহিমা সীমন্তিনীর কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরে বলল, “হ্যাঁ, এটাও তো তুমি ঠিকই বলেছ মন্তি। এতদিন তারা আমার কথামত চলেছে, তার কারন তারা জানত যে আমার কথামত চললেই তাদের আর্থিক লাভ হবে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ করে তাদেরকে আমার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিলে, প্রাথমিক অর্থ সাহায্যটা নিতে কেউই হয়ত আপত্তি করবে না। কিন্তু সৎপথে থেকে মাসে মাসে এক দেড় লাখ টাকা কামানো তো একেবারেই সম্ভব হবে না। তাই আমার দেওয়া টাকাটা তারা অন্য কোনভাবে ইনভেস্ট করে বা খরচ করে উড়িয়ে দিয়ে আগের মতই তারা আবার এমন ব্যবসায় নামতেই পারে। তখন কি আর তাদের আমি কোন বাঁধা দিতে পারব? না একেবারেই না। তুমি ঠিক বলছ মন্তি। আমাকে শুধু আমি কী করতে চেয়েছিলাম, বা কী করেছি, সেটা নিয়েই শুধু সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ওরা সকলেই যদি আমরা যেভাবে চাইছি সেভাবে ভবিষ্যৎটা কাটিয়ে দিতে পারে, তাহলে আমার খুশীর সীমা থাকবে না। তবে কেউ যদি তা না করে আবার ওই অসামাজিক পথেই ফিরে যেতে চায়, তখন কষ্ট তো আমার হবেই। কিন্তু আমার তো আর কিছু করার থাকবে না। যারা ভালভাবে বাঁচতে চেষ্টা করবে তাদের ব্যবসার মূলধন কোনভাবে কমে গেলেও, আমি পরেও হয়ত তাদের কিছু আর্থিক সাহায্য করতে পারব। কিন্তু যারা মন থেকে সেটা চাইবেই না, তাদের আমি কী করে সৎপথে ফিরিয়ে আনব। তাই তোমার কথা মানা ছাড়া আমার সামনে আর দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। আমি তোমার সাজেশন মতই কাজ করব মন্তি। এ পাপের ব্যবসা করতে করতে আমি সত্যি এখন হাঁপিয়ে উঠেছি গো। আর ভাল লাগছে না। এবার আমাকে ওই নোংড়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। তুমি সত্যি আমার বড় উপকার করলে গো ভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “আমি শুধু তোমাকে একটা পরামর্শ দিলুম বৌদি। তুমি এতদিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও, এখন তুমি মনে মনে কিছুটা অনুতপ্ত। ভাল পথে ফিরে আসতে চাইছ বলেই তোমাকে এমন পরামর্শ আমি দিচ্ছি। এখন তুমি ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথাগুলো ভাল করে ভেবে দেখ। তারপর সিদ্ধান্ত নিও”।

এমন সময় মহিমা প্রায় হঠাতই বলল, “আচ্ছা মন্তি, ভাইও তো একটা স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিল। কিন্তু সেটা পূরণ হবার আগেই বলতে গেলে ভেঙে গিয়েছিল। আজ ওর হাতে আর যোগা ইনস্টিটিউট তৈরী করবার মত ফান্ড নেই। একটা ভাল দেখে কমপ্লেক্স ভাড়া নিতেই তো তিন চার লাখ টাকা লেগে যাবে। তারপর সেন্টারটা ভালভাবে সেটআপ করতে গেলে আরও লাখ দুয়েকের মত খরচা পড়বে। তাই কম করেও পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন তো পড়বেই ওর। আচ্ছা আমি যদি ওকে সাহায্য করি? মানে, আমার হাতে তো প্রচুর টাকা আছে। ওর সেন্টারটা পুরোপুরিভাবে সেটআপ করতে যত টাকার দরকার হয়, তার সবটাই যদি আমি ওকে দিয়ে দিই”?

সীমন্তিনী মনে মনে একটু চমকে উঠলেও স্বর শান্ত রেখেই জবাব দিল, “তুমি তোমার ইনস্টিটিউট থেকে দাদাভাইকে ছেড়ে দেবে বৌদি”?

মহিমা যেন একটু কষ্টের হাসির সাথে বলল, “ওকে আর রচনাকে তো আমি সারা জীবন আমার পাশে পেতে চাই বোন। রতীশ আমার ইনস্টিটিউটে জয়েন করবার পর থেকে আমার এখানে ট্রেনী সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর সেই সাথে সাথে বেড়েছে আমার আয়ও। এখন তো আমার তিনটে সেকশনে আর কোন জায়গাই নেই নতুন ট্রেনী নেবার। এ সপ্তাহেই দু’ তিন জনকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আর এটাও জানি যে রতীশ আমার ইনস্টিটিউট ছেড়ে দিলে আমাদের ট্রেনীর সংখ্যাও কমে যাবে। আর্থিক ক্ষতিও হবে। তবু আমি চাই, ওর স্বপ্নটা পূরণ হোক। আর ওর স্বপ্নপূরণে আমি যতভাবে সম্ভব সাহায্য করব”।

সীমন্তিনী এবার আরও মিষ্টি করে বলল, “বৌদি, দাদাভাইকে নিয়ে এখনই তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না। আর শোনো, দাদাভাইয়ের দু’লাখ টাকা লুট হয়ে গেলেও, পুলিশ ওই লোকগুলোকে ধরতে পেরেছে। আর তাদের কাছ থেকে টাকাটাও উদ্ধার করেছে। তবে বৌদি, দাদাভাইকে আমিই বলেছি যে সে যেন এখনই তোমার ইনস্টিটিউট ছেড়ে না দেয়। অন্ততঃ আরও দু’তিন মাস যেন ও তোমার ওখানেই কাজ করে। ওর চরম দুঃসময়ে তুমি যেভাবে ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলে, তাতে করে এখনই যদি ও তোমার ওখান থেকে সরে আসে, তাহলে সেটা খুবই স্বার্থপরতা দেখানো হয়ে যাবে। তবে আমি তো আমার দাদাভাইকে নিজের চাইতেও বেশী চিনি। তাই আমি জানি দাদাভাই এমন কিছু করবার আগে তোমার সাথে কথা বলে তোমার পরামর্শ আর আশীর্বাদ নিয়েই তার নিজের যোগা সেন্টার খুলবার ব্যাপারে ভাববে। তুমি দাদাভাইকে আর রচুকে এত ভালবাস। রচুর বিপদের কথা জানতে পেরেই ছটফট করছ। তোমার মত হিতৈষী কলকাতায় আর কে আছে ওদের? তাই আমি চাই, ও তোমার ওখানে আরও দু’তিন মাস কাজ করুক। আর ওর নতুন সেন্টার শুরু করতে যে টাকার দরকার তা তো আমাদের হাতেই আছে। তবে তোমার কাছ থেকে এ ব্যাপারে টাকা না নিলেও, আমি চাইব, তুমি তোমার অভিজ্ঞতা দিয়ে ওকে সবরকম ভাবে সাহায্য করো। যোগা সেন্টারটা শুরু করতে কি কি করা দরকার তার সবকিছু ভালভাবে বুঝিয়ে দিও। তাহলেই আমি খুশী হব। আর ততদিনে আশা করি রচনার বিপদটাও কেটে যাবে। আর তুমিও তোমার মনের গ্লানি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে খুশী মনে থাকতে শুরু করবে। কে জানে, ভগবান চাইলে ওই বিমলের হাত থেকেও মুক্তি পেয়ে যেতে পার। তবে তোমার ভালবাসা থেকে দাদাভাই আর রচুকে বঞ্চিত করো না। সবসময় পরম হিতৈষীর মত তুমি ওদের পাশে থেক। আমি এতদুরে থেকেও মনে মনে এ সান্ত্বনা নিয়ে খুশী থাকব যে আমার দাদাভাই আর রচু ওখানে একেবারে নিঃসঙ্গ নয়। তুমি দিদি হয়ে, বৌদি হয়ে আছ ওদের পাশে সব সময়। এ’টুকু সাহায্য করো তুমি ওদের”।

মহিমা এবার ভারী গলায় বলল, “মন্তি বোন আমার। তোমার সব কথা আমি রাখব ভাই। কথা দিচ্ছি তোমাকে। কিন্তু আমাকে এমন একটা পাপের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনতে তুমি যেভাবে আমাকে পরামর্শ দিলে, সেভাবে যদি সত্যিই আমি এ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি, তাহলে তার জন্য আমি সারাজীবন তোমার কাছেও কৃতজ্ঞ থাকব ভাই। তবে একটা কথা আমি তোমাকে আজ দিচ্ছি। আমার চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না। কিন্তু জানো মন্তি? এই মূহুর্তে একবার তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে গো আমার। কিন্তু রচনার ওপর থেকে বিপদটা সরে না যাওয়া অব্দি আমি কিছুতেই যে কলকাতা থেকে বেরোতে পারব না ভাই। তাই বলছি, তুমি আর একবার এখানে এসো না ভাই। একবার তোমার মুখটা আমাকে দেখতে দাও”।

সীমন্তিনী মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আসব বৌদি, নিশ্চয়ই আসব। রচুর মুখে শুনেছি তুমি খুব সুন্দরী দেখতে। এমন সুন্দরী বৌদিকে দেখার লোভ যে আমার মনেও আছে গো। তবে বৌদি, অফিস থেকে ছুটি পাওয়াটাই খুব সমস্যার ব্যাপার গো। তবে দেখি, সময় সুযোগ হলেই আমি একবার কলকাতা যাব। তবে আমি চাই যে তোমার সাথে আমার দেখা হবার আগেই তুমি যেন ওই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পার পুরোপুরি। আমার কাছ থেকে এ ব্যাপারে বা অন্য যে কোন ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে বা কথা বলতে চাইলে, যে কোনদিন রাত এগারোটার পর আমাকে ফোন করো। তবে তোমার এজেন্সী ভেঙে দেবার ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে পার ততই মঙ্গল”।

মহিমা এবার আরও ভারী গলায় বলল, “জানো মন্তি। বলতে গেলে খুব ছোটবেলা থেকেই আমি বিপথে চলে গিয়েছিলাম। আমার পরিবারের লোকেরাও সে’সব কথা জানত। কিন্তু আমাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে তারা কেউ কখনো চেষ্টা করেনি। তবে অরিন্দমের ভালবাসাতেই আমি সেই সময় নিজেকে বিপথ থেকে সরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। কলকাতা আসবার পর কয়েকটা বছর সুখেই ছিলাম। কিন্তু নতুন করে বিপথে গেলাম ছেলেমেয়ে বড় হয়ে ওঠার পর। স্বামীর কাছে সম্পূর্ণভাবে গোপন রেখে আমি আবার নতুন করে দেহব্যবসায় নেমেছিলাম। কিন্তু রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে সতী স্ত্রীর অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আজ জীবনে প্রথমবার আমার জীবনে এমন কেউ এল যে আমাকে সৎপথে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তোমার পরামর্শ সত্যিই খুব ভাল। আমি তোমার কথামতই সবকিছু করবার চেষ্টা করব। নিজে পাপপথ থেকে বেরিয়ে আসবার পাশাপাশি আমার সঙ্গের মেয়েগুলোকেও সে’পথ থেকে সরিয়ে আনবার চেষ্টা করব। কিন্তু তুমি যেমন আমাকে অনুরোধ করলে রতীশ আর রচনার পাশে থাকতে, তেমনি আমিও তোমাকে সারাটা জীবন আমার পাশে আমার একজন হিতৈষী হয়ে থাকতে অনুরোধ করব। আমার এ অনুরোধটা রেখো ভাই, প্লীজ”।

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “অবশ্যই থাকব বৌদি। তবে তোমাকে কিন্তু ওই পথ থেকে সরে আসতেই হবে। আর যতদিন না তুমি ও’পথ থেকে সরে আসছ, ততদিন কিন্তু আমাদের দেখা হবে না। এ’কথাটা মাথায় রেখেই যেভাবে যা করবার করো, কেমন? আচ্ছা বৌদি, কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল গো। আজ রাখছি, কেমন? ভাল থেক। আর ভাল চিন্তা করো। গুডনাইট”।
 

পরের দিন সকালেই অফিসে গিয়েই সীমন্তিনী পরিতোষকে ফোন করে বিমলের ফার্ম হাউসের চেম্বার আর মহিমার কাছ থেকে গত রাতে যা যা জানতে পেরেছে, তার সব কিছু খুলে বলল। বিমলের ফার্ম হাউসের ওই গোপন চেম্বার আর সেফ খোলার পদ্ধতি শুনে পরিতোষ ঠাট্টা করার ভঙ্গীমায় বলল, “মুন ডার্লিং, আমি যদি আজ এ দেশের রাষ্ট্রপতি হতাম, তাহলে তুমি অবশ্যই একটা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে”।
 

******************
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 17-03-2020, 07:13 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)